খুনের নেশায়, খুনে লেখক

খুনের নেশায়, খুনে লেখক

খুন করা শুরু হয় প্রথম একটা বিড়ালকে মারার মাধ্যমে।চাকরী না পাওয়ায় বেকারত্বদোষে সেদিন মা অনেক কথা শুনিয়েছিল।মাথার মধ্যে কিলবিল করা রাগ ছিল সহ্যের বাইরে,তারপর রাস্তায় একটা ছোট্ট বিড়ালের বাচ্চা দেখতে পাই। ঠিক ভাবে হাঁটতেও পারছিল না।ওকে আদর করতে করতে কোলে নিয়ে যাই একটা গাছের আড়ালে। গিয়ে একটা ইট নেই।একেবারে মেরে ফেললেই পারতাম। কিন্ত আমি সেটা না করে প্রথমে বিড়ালটার পা গুল ইট দিয়ে থেঁতলাতে থাকি, বিড়াল টার ভয়ানক কষ্ট আর আত্মচিৎকার আমাকে অনেক আনন্দের জোগান দেয়। এক পর্যায়ে সামনের দু পা ধরে গায়ের সর্ব শক্তি দিয়ে দু দিকে টান দেই।

বিড়ালটার বুকের মাঝ বরাবর দুই দিকে ছিড়ে ফেড়ে কলিজা,ভুড়ি, বের হয়ে আসে রক্ত ছিটে আমার নাকে মুখে পড়ে।তারপর একটু দূরে ছুড়ে ফেলি মৃতদেহ টা। তখনও যেন বিড়াল ছানা টা আমার দিকে মায়াময় দৃষ্টি তে চোখ মেলে তাকিয়ে ছিল। বাসায় এসে এই খুন টার বর্ননা খুব সুন্দর করে গল্প আকারে লিখি,এবং একটা প্রকাশনীরর ঠিকানায় পাঠিয়ে দেই।গল্পের নিচে নাম দেই খুনে লেখক।

আমি স্বপ্নেও ভাবি নি আমার বই টা প্রকাশ পাবে।প্রথম ২০ পৃষ্ঠার এই বই তা এত বেশি সেল হয় যে প্রকাশক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়,এরকম আরো ভয়ানক খুনের গল্প লিখে দিতে। বিনিময়ে আমাকে নাকি অনেক টাকা দিবে। ততক্ষনে আমার মাথায় অনেক বড় প্লান ঢুকে গিয়েছে। আমার টাকার দরকার নেই। আমি অনেক জনপ্রিয় একজন মানুষ হব। আর এ জন্য চাই আরো বেশি খুনের গল্প লেখা।আমি জানি আমার লেখার স্কিল অনেক খারাপ।

তাই আমাকে ভাল গল্প লিখতে হলে আরো অনেক খুন করতে হবে। তারপর সেগুল রসিয়ে কসিয়ে লিখে দিলেই ব্যাস,আমার জনপ্রিয়তা ঠেকায় কে!! অন্তত এই শহরের মানুষ জানবে, খুনে লেখক নামের একজন অদ্ভুত লেখক আছে, নিছক গল্প লেখার জন্যই আমি প্লান করি,আমার এক বন্ধুকে খুন করব। কিন্তু এমন ভাবে খুন করতে হবে,যেন কেউ না বুঝে,আমি খুন করেছি,যেই ভাবা সেই কাজ।

অপেক্ষায় ছিলাম। সফল হয়েছি। একদিন আমার এক বন্ধুকে দেখলাম আত্মীয় বাড়ি থেকে ঢাকা ফিরেছে। আমি জানি ও নিঁখোজ হলে আমার দিকে কেউ আংগুল তুলবেনা। সবাই ওর আত্মীয়বাড়িতেই খোঁজ নিবে। যা ঝামেলা সব সেখানে হবে। আমি মুচকি হেসে ওকে বাসায় এসে চা খাওয়ার দাওয়াত দিলে ও সাদরে গ্রহন করে। এরপর ওকে প্লান মত বাসায় এনে চা এর সাথে এটিভেন ২ খাইয়ে ১২ ঘন্টার জন্য ঘুম পাড়িয়ে দিতে আমার কষ্ট হয়নি।

ঠিক ১২ ঘন্টা পর,আমার বন্ধু নিজেকে আবিষ্কার করে একটা বন্ধ রুমে।মুখে মোজা ঢুকানো, বাকরূদ্ধ ,হাত পা খুব শক্ত করে আটকানো, বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে।আমি হাসতে হাসতে বলি,আমি তোকে আগেই মেরে ফেলতে পারতাম।শুধু মারি নি তোর ছটফটানি আর কষ্ট উপভোগ করা দেখার লোভে।তুই না একটা মেয়েকে ধর্ষন এর পর মার্ডার করছিলি!! মনে আছে!! নে এবার দেখ,ঐদিন ঐ মেয়ের কেমন কষ্ট হয়েছিল!! এটা বলে আমি আমার সাথে আনা হাতুড়ি দিয়ে ওর মাথায় টোকা দিতে লাগলাম।ও বার বার মাথা এদিক ওদিক নাড়াচ্ছিল।তারপর হুপ করে সজোরে মাথার বাম পাশ বরাবর একটা আঘাত লাগিয়ে দেই।চড়চড় আওয়াজ করে মাথার উপরের শক্ত হাড় ভেঙে যায়।সাথে সাথে ও গলা কাটা মুরগীর মত লাফাতে শুরু করে।

আমি খুব ভাল ভাবে পর্যবেক্ষণ করি ওর প্রতিক্রিয়া গুল,আহ.. অসাধারণ, কত শান্তি!! হঠাৎ খেয়াল করলাম ওর নাক দিয়ে বমি বেরিয়ে আসছে।মুখ আটকানো তাই নাক দিয়েই বের হয়েছে।মাথায় জোরে আঘাত লাগলে হয়ত ভিক্টিম এর বমি হয়।বাহ কত সুন্দর দৃশ্য।ওর যাতে শ্বাসরোধ না হয় তাই ওর নাক পরিষ্কার করে দেই।এবার ওর বডি টাকে শক্ত খুঁটির সাথে বেঁধে আস্তে আস্তে ওর পেট ব্লেড দিয়ে কাটতে থাকি,একের পর পোঁচ দিচ্ছিলাম আর চামড়া কেটে সাদা সাদা মাংস দেখা যাচ্ছিল, ওর শরীর তখন জোরে নাড়াচাড়া হওয়ায় এদিক সেদিক পোঁচ লাগছিল,রক্ত বের হচ্ছিল,অনেক কষ্টের পর পেট ফেরে যখন পেটের ভিতরের নাড়িভুঁড়ি কলিজা সহ,এক টান দিয়ে ছিড়ে আনলাম, তখন হঠাৎ ই ছটফট করতে থাকা মানব দেহ থেমে গেল একদমে।সব শেষ।

মারা গিয়েছে আমার প্রিয় বন্ধু।লাশটা কে বটি দিয়ে টুকরা টুকরা করে ফ্রিজে রাখি,তারপর, কাটা মাথা ও নাড়িভুঁড়ি বুড়িগঙ্গার কালো পানিতে ই বেশি শোভা পাবে ভেবে গাড়িতে করে নিয়ে গিয়ে সেখানে ছুড়ে ফেলে আসি।

কয়েকদিন শুধু মাংশ খেয়েই কাটিয়ে দেয়া যাবে,কথাটা ভেবেই ভাল লাগে।খাতা কলম নিয়ে এই খুনের কাহিনী লিখতে বসে যাই।এবার একটা জিনিস খেয়াল করলাম,প্রিয় মানুষকে কষ্ট দিয়ে খুন করার মজাই তো আলাদা,কেমন যেন অদ্ভুত ফিলিংস আছে,আমাকে যেন একটা খুন করার নেশায় পেয়ে বসেছে।সব রসালো ভাবে,সুন্দর নেশায়িত করে লিখে ফেলি।

এবারের গল্পটা প্রকাশ হওয়ার পর শুধু জনপ্রিয়তা ই পায় নি,দেশ ব্যাপি আলোচনায় চলে এসেছে খুনে লেখক এর নাম।চারদিকে শুরু হয়েছে,নিজের প্রিয় পোষা কুকুর বিড়াল খুন করার ঘটনা।

আড়ালে থেকে আমিও অনেক আনন্দ পাই,যখন রাস্তা ঘাট এ আমাকে নিয়ে আলোচনা করা হয়,কিন্তু কেউ ই জানে না,এই যে লেখক তার সামনেই দাঁড়িয়ে। ক দিন ধরে মায়ের শরীর টা খারাপ,মায়ের কাশির কষ্ট মা সহ্য করতে পারছে না।আর আমি কাশির শব্দ সহ্য করতে পারছি না।বাসায় আমি আর মা ই থাকি,বাবা ছোটবেলায় ফেলে গেলেও এই মা ই আমাকে বড় করেছে,ততদিনে চাকরী হয়ে গেলেও মায়ের চিকিৎসায় অনেক টাকা যেত,হাতে খরচ করার মত কিছুই বাকি থাকত না।আমি ভাবছিলাম মাকে মুক্তি দিয়ে দেয়ার কথা এই দুনিয়া থেকে।

মা হয় আমার সে,মা।তাকে আমি কষ্ট দিয়ে মারতে পারব না।তাই খুব সাধারণ ভাবেই গলা টিপে শেষ করি তাকে।কবর দেয়ার আগে মায়ের শেষ স্মৃতি হিসেবে গোটা কয়েক আংগুল কেটে রেখে দেই।এরপর আর কি!! কাগজে লিখে ফেলি তা!! এরপর রিতীমত শুরু হয় আলোড়ন, আমাকে অনেকেই ভালবাসে অনেকেই ঘৃনা করে আমার এমন টাইপ লেখার জন্য।যদি ভুলেও জানত আমি সত্যি এই খুন গুল করেছি,তাহকে নেহাত ই আরো আলোচনা হত।কেউ জানে না আমার লেখার প্রতিটা অক্ষর সত্য,যাই হোক!! এরপর বিয়ে করলাম।

মজার ব্যাপার হল আমি লেখালেখি থামাই নি।হত্যা ও থামাই নি।এর মধ্যে খুনে লেখক সারা দেশে পরিচিত থ্রিলার লেখক।লাস্ট বই মেলায় শুধু খুনে লেখক এর বই এত বেশি চলেছে যে প্রকাশক আমার নামে গরু জবাই দিয়ে এতিম খানায় খাবার হিসেবে দান করেছে। আমার স্ত্রী,সেও বই মেলা থেকেই খুনে লেখক এর সব কয়টি বই সংগ্রহ করে।আমি সেদিন মুচকি হেসেছিলাম।মনে মনে বলেছিলাম,প্রিয়তম আমি তোমাকে নিয়ে আমার একটা বই লিখব।

তবে আমি চাই আমার বই এর লেখাগুল তুমি পড়ে শেষ কর।তারপর তোমাকে খুন করে তোমার খুনের বর্ননা দিয়ে একটা বই লিখে ফেলব। প্লান অনুযায়ী যেদিন রাতে ওর আমার লেখা বইগুল পড়া শেষ হল,তারপর দিন ওকে খুন করার সিদ্ধান্ত নিলাম।মাঝখানের একটা দিন ওকে খুব ভালবাসা দিলাম।মন প্রান উজাড় করে ভালবাসলাম।প্রেমের কথা শুনালাম।স্বপ্ন দেখালাম।এই মানুষটা যখন দেখবে আমি ই ওর বিশ্বাস নিশ্বাস সব শেষ করে দিতে ওর সামনেই দাঁড়িয়ে আছি,তখন ওর ফেস কেমন থাকবে!! ভাবতে ভাবতে আমার বুকে ওর জন্য ভালবাসা টা আরো বেড়ে যাচ্ছিল,

চা খেতে খেতে ওকে কোলে নিয়ে বসিয়ে কানে কানে একবার বললাম,তুমি অনেক সুন্দর বউ, আমার বউ ও আমার কানে কানে বলল,আজ শেষবারের মতই তো আমাকে দেখছ,তাইনা!! আমি খানিকটা অবাক হলাম।বউ বলল, “অবাক হচ্ছ?? সরি ফাহাদ,আমি আসলে তোমার চায়ে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দিয়েছি।খুনে লেখক এর বই পড়ে,আমার অনেক নেশা লেগেছে,খুনের নেশা,আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে খুন করব আজকে।আমাকে মাফ করে দিও।

ওর কথা শেষ হতে না হতেই টের পেলাম আমার চোখে ঘুম চলে আসছে অনেক।আমি জানি,আমি এই ঘুম থেকে উঠে দেখব আমার হাত পা বাঁধা, আর তারপর…..

তারপর আমিও………খুব নিষ্ঠুরভাবে খুন হব।এবার আমার পালা!!

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত