পৃথিবীর বিশাল একটা জায়গা জুড়ে আছে সমুদ্র। বিশাল সমুদ্রের বুকে লুকিয়ে রয়েছে অনেক রহস্য। সাগরের বুকের এক
রহস্যের নাম “দ্য ফাইং ডাচম্যান” নামের একটি জাহাজ। অসীম সমুদ্রের বুকে ঘুরে বেড়ানো এক উদ্দেশ্যহীন জাহাজ। এটি
আসলে এক ভুতূড়ে জাহাজ। এই জাহাজটি নিয়ে অনেক লোকশ্রুতি প্রচলিত আছে।
জাহাজটি কবে কোথায় তৈরী হয়েছিল তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। তবে বিভিন্ন পর্তুগিজ নথিপত্র অনুসারে এই জাহাজটি
ষোড়শ শতকের কোন এক বছরে যাত্রা শুরু করেছিল।এটি ওলন্দাজদের তৈরি ছিল।ওই সময়ে ওলন্দাজরা সমুদ্রাযাত্রায় সবচেয়ে
বেশি পারদর্শী ছিল। ফ্লাইং ডাচম্যান জাহাজের নেতৃত্বে যে ছিল তার নাম নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
তবে অনেকের মতে এই লোকটির নাম ড্রিক ভ্যান্ডারডেকেন। হেনরিক তার জাহাজের কর্মীদের ব্যাপারে খুবই চিন্তা করতেন।
কোন এক অশুভ দিনে ভয়াবহ ঝড়ের কবলে পড়ে জাহাজটি ডুবে ধ্বংস হয়ে যায়। জাহাজটি কেন ভুতুড়ে জাহাজে পরিণত হল,
তা নিয়ে নানান কাহিনী প্রচলিত আছে।
তবে প্রাচীন নথি পত্র থেকে যতটুকু জানা যায়, ১৭২৯ সালে একজন ফ্লাইং ডাচম্যান ১ নামে একটি ওলন্দাজ জাহাজ যার
ক্যাপ্টেন ছিলেন হেনড্রিক ভ্যান্ডারডেকেন। জাহাজটি কেপ টাউনের দিকে যাচ্ছিল। যাত্রা পথে জাহাজটি ঝড়ের কবলে পড়ে।
ভয়ে জাহাজের ক্রুরা ক্যাপ্টেনকে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। কিন্ত ক্যাপ্টেন জাহাজ ফিরিয়ে নিতে রাজী হননি। এক
পর্যায়ে নাবিকদের কিছু অংশ বিদ্রোহ করে। কিন্তু ক্যাপ্টেন বিদ্রোহীদের গুলি করে হত্যা করেন ও লাশ সাগরে ভাসিয়ে দেন।
এরপর জাহাজটি ঝড়ের কবলে পড়ে সমুদ্রে চিরতরে হারিয়ে যায়।
জাহজটির ক্যপ্টেন কিংবা ক্রুদের ভাগ্যে কি হয়েছিল তা আর কখনোই জানা যায়নি। তবে এরপর জাহাজটিকে প্রায়ই সমুদ্রে
ভেসে বেড়াতে দেখা গেছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নাবিক বা জাহাজের ক্রুদের এই জাহাজ দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে।
১৮৩৫ সালের একটি ব্রিটিশ জাহাজের ক্যাপ্টেন এই জাহাজটিকে দেখতে পেয়েছিলেন। তার লগবুকে লেখা ছিল যে তারা
সমুদ্রের মাঝখানে ঝড়ের মধ্যে আবৃত একটি জাহাজ দেখতে পেয়েছিলেন যেটা সোজা তাদের জাহাজের দিকে ঝড়সহ এগিয়ে
আসছিল। এক পর্যায়ে এত কাছে এসে পড়েছিল সেই ঝড়-আবৃত জাহাজটি যে তারা ভয় পেয়ে যান যে এখনই জাহাজ দুটিতে
সংঘর্ষ হবে। কিন্তু হঠাৎ করেই ঝড়সহ ভুতুড়ে জাহাজটি গায়েব হয়ে যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে নিকোলাস মোন্সার্ট নামের এক নাবিক প্যাসিফিক সাগরে ফ্লাইং ডাচম্যান নামের জাহাজটিকে
দেখেছিলেন বলে দাবি করেন।
১৯৩৯ সালের মার্চ মাস। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন সমুদ্রতীরে একটি জাহাজকে তীব্র গতিতে ভেসে আসতে দেখা যায়।
সমুদ্রতীরের মানুষগুলো অবাক হয়ে জাহাজটির দিকে তাকিয়ে ছিল। তীরে হঠাৎ করেই পৌছানোর আগেই হঠাৎ করেই
জাহাজটি অদৃশ্য হয়ে যায়।
জাহাজটিকে ঘিরে একইরকম আরো বেশ কিছু ঘটনার কথা শোনা যায়। এর কতটা সত্যি আর কতটাই বা মিথ্যা তাও জানা যায়
না। যদিও বিজ্ঞানষ্করা দাবি করেন, এগুলো মানুষের হ্যালুসিলেশন ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে এত জন মানুষ কিভাবে একই
রকম হ্যালুসিলেশনে আক্রান্ত হতে পারেন সেটাও রহস্যের ব্যাপার!
ফ্লাইং ডাচম্যান জাহাজকে নিয়ে সিনেমাও তৈরি হয়েছে হলিউডে। ১৯৫১ সালে জেমস ম্যাসন “প্যান্ডোরা এন্ড দ্য ফ্লাইং
ডাচম্যান” নামের সিনেমা পরিচালনা করেন। চলচ্চিত্রটিতে নাবিক হেনরিক ভ্যান্ডারডেকেন চরিত্রে পরিচালক নিজেই অভিনয়
করেন।
এছাড়া বিখ্যাত কার্টুন “স্কুবি ডু” এর একটি এপিসোড তৈরি হয়েছে এই ফ্লাইং ডাচম্যানকে ঘিরে।