রহস্যময় হলুদ পাখি

রহস্যময় হলুদ পাখি

“বেশ কয়েকদিন থেকে কোথাও যাওয়া হয়না! এবার কোথাও ঘুরে আসা যাক।” “ইশানের” কথায় ফাহিম, যারিন আর দীপুর টনক নড়ে।

এতক্ষণ কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছিল, ফাহিম,যারিন আর দীপু। ইশান বেশ কয়েকদিন থেকে উদাও হয়ে গিয়েছিল। কোথায় গিয়েছিল কেউ জানে না। আজ তার আগমনে ফাহিম আর দীপু দুজনেই বেশ অবাক!!

তবে “ইশানের” হঠাৎ করে এমন আগমনে তারা যতটা অবাক হয়েছে তার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছে।ইশানকে ছাড়া ফাহিম আর দীপুর দিন গুলো কাটতে চাইছিল না। ইশান,,, জানায় যে সে এতদিন তার মামার বাড়িতে ছিল।সে কলেজে আসতেই আবার গ্রামে ফিরে যাবার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে…..

তার কোন কারণ ও জানায়নি ফাহিমদের।তাদেরকে ছোট্ট একটা রহস্যের সন্ধান দিয়েছিল মাত্র। তাতেই কাজ হয়েগেছে। “রহস্য” শব্দটা শোনার সাথে সাথেই “ফাহিম” রাজি হয়ে যায়। কিন্তু ব্যাঘাত ঘটে “দীপুর” বেলায়।তাকে অনেক বুঝানো হলেও সে বুঝতে চায় না। এরকম গ্যঞ্জামের মধ্যে সে আর থাকবে না। আগের বারও রহস্যের পিছে ছুটতে গিয়ে নিজেদের জীবন ও হারাতে হয়েছিল কিন্তু মরতে গিয়েও বেঁচে গেছিলো তারা। তাই এবার আর কোনো রিস্ক নিতে রাজি নয় সে…..

তবে দীপুকে কিভাবে রাজি করাতে হয় সেটা খুব ভালো করেই জানে,, ফাহিম। নতুন নতুন জায়গা ভ্রমণ করার অনেক শখ দীপুর। আর সেগুলো যদি ভৌতিক স্থান হয় তাতেও কোনো সমস্যা নেই। এবার ইশান মামা বাড়ির কয়েকটা ভৌতিক স্থানের নাম বলতেই, দীপু রাজি হয়ে যায়। অবশেষে সবাই ইশানের মামা বাড়িতে যাবার জন্য তৈরি হয়ে যায়….

আট ঘন্টা ট্রেন জার্নি করে অবশেষে একটি ছোটখাটো রেলওয়ে স্টেশনে এসে ট্রেন থামে। ফাহিম,যারিন আর দীপুকে নিয়ে ইশান ট্রেন থেকে নেমে আসে। রেলওয়ে স্টেশনটা যতটা ছোট তার চেয়ে বেশি নির্জন।আশেপাশে একটা মানুষের দেখা নেই। শুধুমাত্র একটা ছোটখাটো ইটের তৈরী ঘরের বাইরে ভাঙা চেয়ারে বসে একজন বৃদ্ধ মনের সুখে বিড়ি টানছেন।চারদিকে কি হচ্ছে না হচ্ছে এ ব্যাপারে তার কোন নজর নেই।বৃদ্ধের পাশে যেতেই একটু দূরে এক টুকরো কাটের দিকে নজর যায়,, যারিনের। সেখানে ছোট্ট করে লিখা আছে, “হলুদ পাখি গ্রাম রেলওয়ে স্টেশন।”

তার মানে এই গ্রামের নাম “হলুদ পাখি” আর চেয়ারে বসা লোকটি স্টেশনমাস্টার!! বলেই একটা ছোট্ট করে কাশি দেয়,, ফাহিম।সবকিছু ঠিকই আছে কিন্তু “ইশান” বলেছিল তার মামা বাড়ির গ্রামের নাম অন্যকিছু। কিন্তু কি বলেছিল সেটা এখন “দীপু”র মনে নেই।নতুন করে জানার জন্য ইশান কে প্রশ্ন করতে যাবে এমন সময় ইশান নিজ থেকেই বলে উঠে,, এই গ্রামের অন্য একটা নাম আছে যা তোদের পরে বলবো। ইশানের কথা শুনে দীপুর আর প্রশ্ন করা হয়না। স্টেশন থেকে অনেক দূরে একটা নিশান দেখিয়ে “ইশান” জানিয়ে দেয় যে ওইটা তার মামা বাড়ি…..

ঠিক তখনি তাদের কথাবার্তা শুনে স্টেশনমাস্টার এর নজর তাদের দিকে পড়ে।অনেকটা অবাক হয়েই তিনি তিনজনের দিকে থাকিয়ে থাকেন।”দীপুর” কেমন জানি মনে হচ্ছিল স্টেশনমাস্টার এই প্রথম কোন মানুষ দেখছেন।অনেকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ফাহিম,, স্টেশনমাস্টার কে প্রশ্নকরে,

-কি চাচা মিয়া? এভাবে থাকিয়ে আছেন কেনো?

– না, বাবা। এই স্টেশনে তেমন কোন লোক আসেনা। আজ এই প্রথম তোমাদের দেখলাম!!

-আমাদের প্রথম মানে? এখানে কেউ আসেনা?

-আসে তবে ফিরে যায়না..(কথাটি বলেই বৃদ্ধ লোকটা অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন।

বৃদ্ধের কথায় ফাহিমের মনে একটা সন্দেহের উদয় হয়। তবে তার আগেই ভয়ে “দীপুর” বেহাল অবস্থা।দীপুর অবস্থা আরো খারাপ হবার আগেই ফাহিম,যারিন আর ইশান,, দীপুকে নিয়ে মামা বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঠা শুরু করে।অবাক হবার ব্যাপার হলেও সত্যি এই জনমানব শূণ্য গ্রামে চলাফেরা করার জন্য একটা যানবাহন ও নেই….

বেশ কিছুক্ষণ হাঠার পরে একটা ছোট্ট কুটিরের সামনে এসে,, ইশান থেমে যায়। ফাহিম,, বুঝতে পারে যে “ইশান” বেশ ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া এতক্ষণ হাঠার পরে সে এবং দীপুও বেশ ক্লান্ত!! তাই বাধ্যে হয়ে তারা আর সামনের দিকে এগোয় না। এই কুটিরেই থেকে যায়।তাছাড়া এই কুটিরটাও তাদের বেশ ভালো লেগে যায়….

কুটির টাও অনেকটা অন্যরকম। বাহির থেকে দেখতে বেশ ছোট কিন্তু ভিতরে যেতেই সবাই অবাক হয়ে যায়। বাহিরে থেকে সবাই মনে করেছিল এটা একটা সামান্য কুটির কিন্তু এরর ভিতরটা অনেক বড়। অনেকটা বড় প্রাসাদ এর মত।তাছাড়া এর ভিতরটাও বেশ সাজানো এবং রাজকীয় রকমের।যে কেউ এটা দেখে ভয় পাবে নয়তো আনন্দে কিছু একটা করে বসবে।

ফাহিম আর দীপু দুজনেই বেশ অবাক! এত ছোট একটা কুটিরের ভিতর এত্ত বড় কিভাবে হয়?এত কিছু ভাবার সময় নেই কারো। তবে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। চারিদিকে বেশ অন্ধকার। কিন্তু কুটিরের ভিতরে কোথাও অন্ধকার নেই!!এই ছোট্ট কুটিরের ভিতরেও ইলেক্ট্রিসিটি আছে? ভাবতেই অবাক লাগে… দীপুর।

তাছাড়া এখানে ফাহিম, যারিন, দীপু ও ইশান ছাড়া আর কেউই নেই।চারজন গল্প করতে করতে কখন যে রাত ১০.০০ টা হয়ে গেলো কেউই খেয়াল করেনি। এত রাত!! সঙে সামান্য জলখাবার ছাড়া কিছুই নেই।ইশান,,, বাকিদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাহিরে খাবারের খোঁজে বের হয়।”যারিনের” ঘুম পেয়েছে অনেক। সে কুটিরের ভিতরেই একটা সাজানো-গোছানো বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ে।

সেই সুযোগে ফাহিম আর দীপু বাহিরে বেরিয়ে এসে কুটিরটা ভালো করে দেখতে থাকে।কুটিরের চারপাশ ঘুরে তেমন কিছুই দেখা গেলো না। মনে হলো ১০/১২ হাত জায়গার মধ্যে একটা ছোট্ট ঘর দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ভিতরে যখন ঢুকা হয় তখন ভিতর টা অনেক বড় হয়ে যায়। যা বাহিরে থেকে বুঝা যায় না। ফাহিম আর দীপু বারবার ব্যাপারটা পরখ করে দেখতে থাকে। বাহিরে বের হলে এটা সামান্য একটা কুটির ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু ভিতরে ঢুকলেই আস্ত একটা প্রাসাদে রুপ নেয় কুটিরটা। এই কুটিরের রহস্যে কিছুই বুঝতে পারে না ফাহিম আর দীপু। তবে এর পিছনে নিশ্চয় কোন কারণ আছে সেটা তারা অস্বীকার করছে না।

কুটিরের বাহিরে একটা ছোট্ট “হলদে পাখি” দেখা গেলো।প্রথমে ফাহিম আর দীপু পাখিটিকে স্বাভাবিক মনে করছিল কিন্তু পরে যখন “দীপু” না দেখে কুটিরের বাহিরে একটা গর্তে পা রাখতে যাবে এমন সময় পাখিটি তার সামনে এসে কিচিরমিচির শুরু করে। যার কারণেই “দীপু” একটুর জন্য রক্ষা পায়। ফাহিম আর দীপু দুজনেই কুটিরের ভিতরে চলে আসে। ততক্ষণে “ইশান” ফিরে এসেছে। সাথে একগাদা সুস্বাদু খাবার। কিন্তু এই খাবার গুলা সে কোথা থেকে আনলো সেটা কেউ জানে না।কিন্তু সবার ক্ষুধাও পেয়েছে অনেক। এতকিছু না ভেবেই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে সবাই।

খাওয়াদাওয়া শেষে সবাই ঘুমিয়ে গেছে। অদ্ভুত এই কুটিরে সবাই বেশ ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছে।মাঝরাতে ঘুম ভাঙে, দীপুর। সবাই ঘুমে থাকলেও “ইশান”কুটিরের ভিতরে নেই।কুটিরের ভিতরের সব রুম গুলো ভালোভাবে খোঁজেও সে কোথাও “ইশান”কে পেলো না। ফাহিম আর যারিন দুজনেই ঘুমুচ্ছে। তাদের কে না ডেকেই দীপু,, ইশানের খোঁজে কুটিরের বাহিরে চলে আসে।

কুটিরের চারপাশ ভালো করে দেখতে থাকে। কিন্তু সেখানেও “ইশান”নেই। তাহলে সে গেলো কোথায়?? এ খবরটাও জানে না,, দীপু। তবে ইশানের জন্য তার খুব চিন্তা হচ্ছে। এত রাতে ছেলেটা একা একা কোথায় গেলো??ইশান কে কোথাও খুঁজে না পেয়ে দীপু কুটিরের ভিতরে এসে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালে ঘুম ভাঙে ফাহিমের চিৎকারে। তারা যে বিছানায় ঘুমিয়েছিল সেখানে প্রচুর রক্তের ছড়াছড়ি।এত রক্ত কোথা থেকে এলো সেটাও কেউ জানে না। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে আসে,,ইশান। বিছানায় রক্ত দেখে তার তেমন কোন আক্ষেপ নেই।রক্ত দেখে একরকম না দেখার ভান করেই সবাইকে নিয়ে সকালের নাস্তা খেতে পাশের একটা রুমে চলে যায়…..

আজকের নাস্তা একটু রাজকীয় মনে হচ্ছে।ইশান,, এত কম সময়ে হঠাৎ এত খাবারের যোগাড় কোথা থেকে করলো? “যারিনের” এই কথায় ইশান প্রথমে একটু ঘাবড়ে গেলেও শেষে অতি সহজে জানায়,, এটা তার মামা বাড়ির এলাকা। এখানেরর সব কিছুই তার চেনা আর কোথায় কি পাওয়া যায় সেটা তার জানা আছে। “ইশানের” এরকম উত্তরে ফাহিম আর দীপুর একটু সন্দেহ হলেও সামনে এত খাবার দেখে সন্দহকে তেমন দাম না দিয়ে দুজনেই খাবার খেতে শুরু করে।

বেশ কয়েকদিন পরে ফাহিম নিজের ইচ্ছেমত খাবার খেয়েছে।খেয়েদেয়ে বেরিয়ে পড়ার আগেই আরেকটা ঘুম দেবার ইচ্ছা করতেছে ফাহিমের।বাকিরা বেরিয়ে পড়ার জন্য অস্থির হয়েগেছে কিন্তু তার কোন মাথা ব্যথা নেই। বিছানার দিকে এগিয়ে গেলো সে। একটু আগে যে বিছানায় রক্ত ছিল এখন সেই বিছানা বেশ চমৎকার করে সাজানো। ফাহিম নিজে একটু অবাক হয়! সবাই খাওয়াদাওয়ায় ব্যস্ত ছিল এর মধ্যে বিছানা কে ঠিক করলো?

এত কিছু ভাবার সময় নেই কারো। আজকের দিনের ভিতরেই ইশানের মামা বাড়ি যেতে হবে।কুটিরের ভিতর থেকে সবাই বেরিয়ে আসে।ইশান, সবাইকে রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তার পিছনে ফাহিম,যারিন ও দীপুও যাচ্ছে।সকলের পিছনে, দীপু। দীপুর পিছে পিছে আসছে একটা হলুদ পাখি।সবাই পাখিটিকে খেয়াল না করলেও দীপু অনেকক্ষণ থেকে পাখিটির পিছু নেয়া দেখছে। প্রথমে স্বাভাবিক মনে হলেও পরে দীপুর মনে কিছুটা সন্দেহের দেখা দেয়। সামনে ফিরে ফাহিমদের কথাটা জানাতে যাবে এমন সময় “ইশানের” মুখ থেকে শোনা যায় যে তার মামা বাড়ি এসে গেছে সবাই।সবাই থেমে গেছে।

তারা যেখানে থেমে গিয়েছে সেখান থেকে কিছুটা দূরেই একটা বড়সড় বাড়ি দেখা যাচ্ছে।ভাবতেই অবাক লাগে একটা নির্জন অঞ্চলে কেউ এতবড় বাড়ি বানায়?”তোমরা বাড়িতে যাও, আমি আসছি “। বলে ইশান কোথায় যেনো চলে যায়।যারিন ও দীপুকে নিয়ে ফাহিম বাড়িটার দিকে এগিয়ে যায়।

আশেপাশে আর কোন বাড়িঘর নেই। তাছাড়া এই বাড়িটাও কেমন জানি একটু অন্যরকম।ফাহিম বাকিদের উঠোনে রেখে বাড়িটির ভিতরে প্রবেশ করে।সব কয়টি রুম ঘুরে আসে সে কিন্তু কোথাও কোন মানুষজনের দেখা নেই।

বিশাল বাড়ি! কোথাও কোন মানুষ নেই! তাছাড়া ইশান ও কোথায় যেনো গেছে সে খবর ও কেউ জানে না। ইশানের এরকম ব্যবহারে বেশ অবাক হয় সবাই!!! পুরো বাড়িটা ও প্রত্যেকটা রুম ভালো করে দেখে আবার উঠোনে ফিরে আসে,, ফাহিম।এসেই যখন পুরো বাড়িতে কেউ নেই, সে খবর জানায় তখন দীপু ও যারিন বেশ অবাক হয়! কথাটা শুনেই “দীপু”র চোখেমুখে ভয় চলে আসে। তবে যারিনের বেশ উৎফুল্ল ভাব।এরকম জায়গা তার বেশ ভালোই লাগে।দীপু ভিতরে যেতে রাজি না হলেও ফাহিম আর যারিন তাকে প্রায় জোর করেই ভিতরে নিয়ে যায়।

সবাই মিলে আবারো পুরো বাড়িটার প্রত্যেকটা রুম ঘুরে দেখে। বাড়িতে কেউ নেই এটা সকলেই নিশ্চিত তবে কয়েকবছর ধরে যে এখানে কেউ থাকে না সেটা ভেবেই সকলে অবাক!! কারণ, প্রত্যেকটা রুমের আসবাবপত্রের যা অবস্থা একেবারে ধুলোবালিতে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। ইশান,, এখনো ফিরে আসেনি।ব্যাপারটা একটু ভয়ের। ইশানের কি হলো? তার চেয়ে বেশি ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে এখন সন্ধ্যা নেমে আসছে।কোথায় থাকবে তারা??

“দীপু” মনে হয় একটু বেশিই ভয় পেয়ে গিয়েছে। চোখেমুখে কান্নার ছাপ দেখা যাচ্ছে। তবে ফাহিম, তাকে আশ্বাস দিচ্ছে ভয় না পাবার জন্য। এখানে সে একা নয় তার সাথে সে এবং যারিন ও আছে। ফাহিমের কথায় দীপুর কান্না থামে।কাল কি হবে সেটা পরে ভাবা যাবে।আপাতত একটা বড়সড় রুম দেখে ফাহিম,যারিন আর দীপু সেটা পরিষ্কার করে নেয়। রুমটাতে দুটো খাট আছে সেহেতু ঘুমুতেও সমস্যা হবে না। রাত নেমে আসায়,, যারিন ব্যাগে রাখা খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। দীপু আর ফাহিম বসে বসে গল্প করছে আর বিস্কিট চিবুচ্ছে।

হঠাৎ পাশের রুম থেকে একটা করুণ সুরে কান্নার শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। ফাহিম আর দীপু প্রথমে না শোনার ভান করে থাকলেও পরে যখন কান্নার সুরটা বড় হতে থাকে তখন “যারিন” জেগে উঠে।সবাই মিলে কান্নার সুরটা ভালো করে পরখ করতে থাকে মনে হচ্ছে পাশের রুমেই কেউ বসে বসে কাঁদতেছে। তিনজন মিলে আস্তে আস্তে পাশের রুমের দিকে পা বাড়ায়।অব্ধকার রাত!! মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট টাই আলো দিচ্ছে।পাশের রুমে যেতেই সবাই চমকে উঠে!! একটা আধাভাঙা চেয়ারে বাধা অবস্থায় আছে, ইশান।আশেপাশে কেউই নেই। একটু আগে যখন সবাই এই রুমটা দেখছিল তখন এই রুমে কেউ ছিলোনা। কিন্তু হঠাৎ এই রুমে “ইশান” এলো কি করে? তাও বাধা অবস্থায়!!

এত কিছু ভাবার সময় নেই কারো কাছে।ফাহিম আর দীপু দুজনে মিলে ইশানকে নিজেদের রুমে নিয়ে আসে।ইশানকে বেশ ক্লান্ত লাগছে। ব্যাগ থেকে বিস্কিট পানি বের করে ইশানকে খেতে দেয়, যারিন। কিছুক্ষণ পর কিছুটা স্বাভাবিক হয় ইশান। ফাহিম, যারিন আর দীপুকে দেখে বেশ অবাক হয়,, ইশান!!

হঠাৎ সে প্রশ্ন করে বসে,, “তোমরা এখানে কিভাবে এলে?” ইশানের এরকম প্রশ্নে অনেকটা ভ্যাবাচ্যাকা লেগে যায় ফাহিম,যারিন আর দীপু। ইশান কি বলে এসব? সেই তো তাদের এখানে নিয়ে এসেছিল!!!!ইশানের শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে বাকি তাকে আর কোন প্রশ্ন করে না। তাকে ঘুমিয়ে যেতে বলে সবাই। রুমের দরজা লাগিয়ে ফাহিম ও ঘুমিয়ে যাবার জন্য বিছানায় গা’ ফেলে। ঠিক তখনি দরজায় কেউ একজন ঠকঠক করতে থাকে।ইশান, ঘুমিয়ে গিয়েছে হয়তো।যারিন, ফাহিম আর দীপু জেগে আছে। দরজায় ঠকঠক শুনে ফাহিম দরজা খুলতে যায়। ঠিক তখনি দীপু দরজা খোলার জন্য নিষেধ দেয়। কারণ বাহিরে কে? সেটা না জেনে দরজা খুললে কোন অঘটন ঘটতে পারে। দীপু বিছানা থেকে আওয়াজ, দেয় কে ওখানে??

রুমের বাহিরে থেকে আওয়াজ আসে আমি “ইশান”। দরজা খুল্ , ফাহিম। ইশানের,, কন্ঠ শুনেই,, ফাহিম দরজা খুলে দেয়।পিছন থেকে দীপু বাধা দিতে চাইলেও ফাহিম তার আগেই দরজা খুলে ফেলে। ফাহিম দরজা খুলে দিলে ভিতরে আসে ,, ইশান।তারপর ফাহিম দরজা লাগিয়ে বিছানায় চলে আসে।

মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ফাহিম,যারিন আর দীপু তিনজনই একসাথে চিৎকার দিয়ে উঠে। একই রুমে দুটো “ইশান” কেমনে?ইশান তো বিছানায় শুয়ে আছে। তাহলে এইমাত্র রুমে যে এলো সে কে???সে যদি ইশান হয় তাহলে ঘুমিয়ে আছে

একসাথে দুটো ইশান দেখে সবার মাথা ঘুরছে। সকলেই বেশ অবাক এবং সেই সাথে বেশ ভয় পেতেও শুরু করেছে। দীপু দুটো ইশান দেখেই বেহুঁশ হয়ে গিয়েছে। ততক্ষণে ঘুমন্ত ইশান জেগে উঠে। তার সামনে আরেকটা ইশান দেখেই সেও বেশ অবাক হয়।ফাহিম,যারিন,দীপু সবাই বেশ ঘাবড়ে গিয়েছে।আসল “ইশান” কোনটা? যে এইমাত্র রুমে এলো নাকি রুমে আগে থেকে যে ঘুমিয়ে ছিলো? কারো মুখে কোন কথা নেই। সবাই চুপচাপ বসে আছে।

সকলের নিরবতা ভেঙে বাহির থেকে আসা ইশান সবার আগে কথা শুরু করে। “আমি আসল ইশান নই,আমি শুধু দেখতে ইশানের মত, কথাও বলি ইশানের মত ঠিকই কিন্তু আমি ইশান নই। তোমাদের বন্ধু “ইশান”কে বাঁচানোর জন্য আমাকে ওর রুপ নিতে হয়েছে।” বলেই বেশ জোরে স্বস্তির নিশ্বাস নেয়,, আগন্তুক, ইশান।

ফাহিমদের ভয় এবার কিছুটা কমলো। তবে ব্যাপার টা তাদের মধ্যে কেমন জানি অবাক অন্যরকম লাগছিল।ইশানকে বাঁচাতে হবে কেনো? ইশানের আবার কি হয়েছিল?

***

যখন ইশান,, তার মামা বাড়িতে ছিল.. তখন সে খুব ভালো দিন কাটাচ্ছিল।মামাতো ভাই-বোনদের সাথে তার প্রতিটা দিন খুব ভালো কাটছিল।বিকেলে খেলাধুলোরর জন্য তাদের প্রায়ই গ্রামের মাঠে যেতো এবং বাকিদের সাথে খেলাধুলা করতো। একদিন খেলার মাঠে যখন তারা খেলছিল তখন মাঠের পাশেই একটা হলুদ পাখি অর্ধমৃত অবস্থায় দেখা গেলো।ইশানের মামাতো ভাইয়েরা পাখিটিকে জবাই করতে চাইলো। তাদের মতে পাখিটি যখন মরেই যাচ্ছে তখন জবাই করলে গোশত খাওয়া যাবে অন্তত।কিন্তু ইশান পাখিটিকে জবাই করতে দেয়নি। সে নিজে পাখিটিকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সেবা যত্ন করে সুস্থ্য করে তুলে। কিছুদিনের মধ্যেই পাখিটি ভালো হয়ে যায়।

ইশান পাখিটিকে তার মামাতো ভাইয়ের রুমেই রাখতো। হঠাৎ একদিন সে রুমে এসে দেখে পাখিটি নেই।তবে রুমে একজন অতীব সুন্দরী মেয়ে বসে আছে। প্রথমে ইশান বেশ অবাক হয়।পরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন করে,,” আপনি কি এ রুমে একটি হলুদ পাখি দেখেছেন?”

ইশানের কথায় মেয়েটি উত্তর দেয়… “আমিই সেই হলুদ পাখি, আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।আমাকে বাঁচানোর জন্য, থ্যাংকস। ”

মেয়েটির কথায় ইশান বেশ অবাক হয়! প্রথমে ফাজলামি মনে করলেও পরে যখন ইশানের মামাতো ভাই তার রুমে আসছিল ঠিক তখনি মেয়েটি আবার হলুদ পাখিতে পরিণত হয়ে যায়।চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখে ইশানের মাথা ঘুরছিল। তবে ইশানের মামাতো ভাই আরেকটা নতুন খবর নিয়ে এসেছিল। তাদের বাড়িতে নাকি আরেকটা হলুদ পাখি দেখা গেছে। ছাদেই আছে পাখিটা। ইশান সাথেসাথেই পাখিটা দেখতে ছাদে চলে যায়। ছাদে কোন পাখি দেখতে পায়না ইশান। তবে ছাদের এককোণে একজন সুদর্শন ছেলে বসে থাকতে দেখে সে।ছেলে টাকে আগে কখনো দেখেনি সে। এই প্রথম দেখছে।

“ভাইয়া, আপনি কি এখানে কোন হলুদ পাখি দেখেছেন?” ছেলেটিকে প্রশ্ন করে, ইশান।

রুমে বসে থাকা মেয়েটির মতই ছেলেটি উত্তর দেয়, “আমিই সে হলুদ পাখি”।

ছেলেটির কথা শুনে “ইশানে”র মাথা ঘুরতে থাকে।ছেলেটি ইশানের দিকে এগিয়ে আসে।তার কাছে এসে আলতো করে ইশানের মাথা ছুঁয়ে দেয়। সাথেসাথে ইশানের মাথাধরা কমে যায়।

এবার ছেলেটি,,, ইশানকে পুরো কাহিনী খুলে বলে। সে নিজে একটি হলুদ পাখি এবং রুমে যে হলুদ পাখিটি আছে সে পাখিটা হচ্ছে তার, প্রেমিকা।তারা স্বাভাবিক মানুষ নয়। অনেকটা মানুষের কাল্পনিকতা অর্থাৎ রুপকথার দেশের মানুষের মতন।তারা দুজন তাদের নিজেদের স্বজাতিদের কাছ থেকে পালিয়ে এসেছে বিয়ে করার জন্য। কিন্তু এখানেও তাদের স্বজাতিরা পিছু নিয়েছে এবং মেয়ে হলুদ পাখিটিকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। কিন্তু “ইশান” তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

ইশান,, ছেলে হলুদ পাখিটির কথায় বেশ! অবাক হয়। সে জানতো যে প্রেম-ভালোবাসা, পালিয়ে বিয়ে করা এগুলো শুধু পৃথিবীতে ঘটে কিন্তু এখন দেখছে যে এগুলো রুপকথার রাজ্যেও ঘটে!!! নিজের অজান্তেই হেসে ফেলে ইশান,,,, তার হাসিতে ছেলে পাখিটা একটু দুঃখ পেয়েছে হয়তো তবে বেচারা কিছুই বলেনি।

ইশান,, ছাদ থেকে নেমে এসে মামাতো ভাইয়ের রুম থেকে মেয়ে হলুদ পাখিটাকে নিয়ে ছাদে চলে আসে। ছাদে এসেই হলুদ পাখি দুটোকে ছেড়ে দেয় সে। পাখি দুটো অনেক দিন পরে হয়তো একেঅপরকে দেখছে তাই তারাও বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাখি দুটো একসাথে মানুষের রুপে ফিরে আসে এবং ইশানকে ধন্যবাদ জানিয়ে দুজনেই বিদায় নেয়।

তার সাথে এসব কি হচ্ছে। নাকি সে এসব স্বপ্ন দেখছে? অনিচ্ছাসত্ত্বে নিজের হাতে চিমটি কাটে ইশান। না যা হচ্ছে সবকিছুই বাস্তবে হচ্ছে।তবুও কেনো জানি ইশানের বারবার মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে।মামাতো ভাই-বোনদের সাথে গল্প করে, একটা সুন্দর স্বপ্ন ও সুন্দর সকালের আশা নিয়ে রাতে ঘুমুতে যায়, ইশান।

কিন্তু পরের দিন সকালে সে নিজেকে অন্য কোথাও আবিষ্কার করে। সে তার মামা বাড়িতে নেই। তার আশেপাশে কোথাও কোন মানুষজন নেই।বেশ ভয় লাগছিল ইশানের।একটা ছোট্ট রুমে সে বাধা অবস্থায় আছে।ঠিক তখনি ইশানের সামনে আসে একটি হলুদ পাখি। আস্তে আস্তে সে পাখিটি একটি মানুষে রুপান্তরিত হয়ে যায়।

ইশান,, চিনতে পারে এটাই সেই ছেলে পাখিটা যেটা গতদিন ছাদে ছিল। সে এসেই ইশানকে বলে দেয়,, ইশান মাঠের পাশ থেকে সে হলুদ পাখিটাকে বাঁচানোর অপরাধে তাদের রাজ্যের বাকিরা ইশানকে তুলে নিয়ে এসেছে।এখন তারা ইশানকে শাস্তি দিবে।আর এই শাস্তিটা হবে বেশ ভয়ানক।তবে এর থেকে মুক্তির কোন রাস্তা নেই!!হলুদ পাখি দুটোও এখানে তাকে কোন সাহায্য করতে পারবে না।তবে কোন মানুষ ছাড়া তাকে কেউ সাহায্যেও করতে পারবে না। ইশান,,, এর অনেক বন্ধুই আছে তবে তারা তাকে সাহায্যের জন্য এখানে আসবে কিভাবে?

হলুদ,, পাখিটি ইশানকে শুধু বন্ধুদের নাম বলার জন্য বলে এবং বন্ধুদের এখানে নিয়ে আসার দায়িত্ব হলুদ পাখির নিজের…ইশান সাথে সাথেই ফাহিম, যারিন আর দীপুর নাম বলে দেয়।এর পর ইশানের সাথে কি হয়েছিল এর কিছুই জানে না সে!!!

এতটুকু বলেই “ইশান” থেমে যায়।

ফাহিম,যারিন আর দীপুর কাছে ব্যাপারটা বেশ খটকা লাগে।তাদের বিশ্বাস হয়না ব্যাপার টা। কিন্তু আগন্তুক ইশান,,, জানায় সেই সে ছেলে হলুদ পাখি এবং সেই ইশান সেজে তাদের এখানে নিয়ে এসেছে। বলেই সাথে সাথে সে একটি হলুদ পাখিতে রুপান্তরিত হয়ে যায়। ততক্ষণে বাহিরে থাকা হলুদ পাখিটাও রুমে চলে আসে। একসাথে দুটো হলুদ পাখি দেখে পুরো ব্যাপার টা ফাহিম,যারিন আর দীপুর বিশ্বাস হয়।তাছাড়া সেদিন নকল ইশানকে গর্তে পড়া থেকে হলুদ পাখিটাই বাঁচিয়েছিল কারণ এই নকল ইশানই ছিলো তার প্রেমিক ছেলে হলুদ পাখি। সেই সাথে রাজকীয় খাবারগুলোর রহস্যও সবাই বুঝতে পারে।

তবে হলুদ পাখি দুটো জানায় এখানে তারা সকলেই খুব সহজে এসে গেছে ঠিকই কিন্তু কেউই ফিরে যেতে পারবে না এবং ফিরে যারার জন্য তারাও ফাহিমদের কোন সাহায্য করতে পারবে না।যা করার নিজেদেরই করতে হবে বলে হলুদ পাখি দুটো চলে যায় এবং তাদের কে স্মরণ করলে তারা আসবে সে আশ্বাস ও দিয়ে যায়।

পাখি দুটো চলে গেলে ফাহিম,যারিন আর দীপু মিলে ইশানের উপিরে বেশ রাগ দেখায়!! এই পৃথিবীতে আর কোন নাম নেই? যে তাদের নাম বলতে হলো।দীপুর, স্টেশন মাস্টারের সেই কথা মনে পড়ে যায়.. এখানে অনেকেই কেউ আসে কিন্তু ফিরে যায় না।

চার বন্ধুই ভেবে পায়না যে তারা এখন কোথায় আছে। তাছাড়া ইশানের হলুদ পাখি রহস্যটাই কি?তবে এখন এখান থেকে বের হয়ে যাওয়াই তাদের মূল লক্ষ্য!!

হলুদ পাখি দুটো চলে যাবার পরে ফাহিম,যারিন,ইশান,দীপু সবাই ঘুমিয়ে যায়। সকলের চোখে ঘুম আসলেও ফাহিম ঘুমায় নি। শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতেছে সে। তাদের সাথে এসব কি হচ্ছে? কেমন জানি ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে ব্যাপার টা। ইশানের প্রতি বেশ রাগ হয় তার। ইশানের পাখি প্রেমের জন্যই আজ এ অবস্থা তাদের।এসব ভাবতে ভাবতেই ফাহিম ও ঘুমিয়ে যায়।

সকালে ঘুম থেকে উঠে সকলেই একটি নতুন দিনের জন্য তৈরী হয়ে নেয়।না জানি নতুন দিনে তাদের সাথে কি হতে যাচ্ছে? ঘুম থেকে উঠে ইশানের বেশ ক্ষুধা পায়। কয়েকদিন থেকে সে কিছুই খায় নি হয়তো।তাছাড়া সেদিনের পর তার সাথে কি কি হয়েছে? তাও বলতে পারছে না সে….

বাড়িটি থেকে বেরিয়ে সকলেই খাবারের খোঁজ করতে লাগলো কিন্তু কোথাও কোন খাবার কেউই পেলো না।”এখানে খাবার কিছুই নেই? এই এলাকার মানুষরা কি খেয়ে বাঁচে??ইশানের এই কথা শুনে সবাই ভাবতে থাকে আসলেই এই এলাকার মানুষ কি খেয়ে বাঁচে???

“এখানে কোন মানুষ থাকলে তো বাঁচবে?”, যারিনের,এই কথায় সবাই উপলব্ধি করতে পারে যে এখানে তারা ছাড়া আর কোন মানুষ নেই!!!

সবাই ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে নিলেও,, দীপু ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারেনি। এখানে তারা ছাড়া আর কোন মানুষ নেই? তাহলে এখানে কারা থাকে? আত্না-প্রেতাত্মা?নাকি তারা নিজেরাই এখন মানুষ নয়??

দীপুর, এসব চিন্তা ভাবনা শুনে বাকিরা সবাই এত বিপদের মধ্যেও হেসে উঠে। মাঝেমধ্যে “দীপু” এত আজগুবি চিন্তা করে বাকিরা সবাই না হেসে পারেনা।তার সব চিন্তা গুলোই আজব!!! এতে কান দেবার মত সময় বাকিদের কাছে থাকে না।এখন সকেলেরই প্রচুর ক্ষুধা পেয়েছে।কোথাও খাবার না পেয়ে কি করতে হবে এটাও সবাই ভুলে গেছে। তবে ফাহিমের গতরাতের কথা স্পষ্ট মনে আছে… হলুদ পাখি গুলো বলেছিল,, কোন সমস্যায় পড়লে তাদের স্মরণ করতে এবং সাথেসাথে তারা সেখানে চলে আসবে।

বেশি কিছু না ভেবেই ফাহিম মনে মনে হলুদ পাখি দুটোকে ডাকার চেষ্টা করে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে তাদের সামনেই পাখি দুটো হাজির হয়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তারা তাদের রুপ পরিবর্তন করে মানুষে পরিবর্তিত হয়ে যায়।ফাহিম,, খাবার চাইলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেলে হলুদ পাখিটি অনেকগুলা খাবার নিয়ে আসে। কোথা থেকে নিয়ে আসছে? জানতে চাইলে সে বলে,, এটা তাদের রাজ্য তারা যা খেতে চায় তাই পেয়ে যায়।

ফাহিমের মনে একটু আক্ষেপ জাগে.. আহারে!! আমাদের পৃথিবীতে যদি এভাবে এমন খাবার পাওয়া যেতো তবে কতই না ভালো হত!! যাইহোক এসব চিন্তা না করে খেতে মন দেয় সে।কিছুক্ষণের মধ্যেই পাখি গুলো চলে যায়।তবে যাবার আগে এখান থেকে বের বের হবার একটা ক্লু দিয়ে যায়।

” এই এলাকায় একটা বিশাল দৈত্য থাকে।একমাত্র সেই এখান থেকে বের করতে পারবে তোমাদেরকে। কারণ সে আর ছাড়া এখান থেকে বের হবার রাস্তা কেউ জানে না।এমনকি আমরা হলুদ পাখিরাও তার কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে তোমাদের পৃথিবীতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সে এখানে আসার রাস্তা দেখিয়েছিল যাবার রাস্তা দেখায় নি,, সে নিজেই আমাদের পৃথিবীতে নিয়ে গিয়েছিল। তবে সাবধান!! দৈত্য টি ভয়ানক কিন্তু একটু বোকা টাইপের।” কথাগুলো বলেই হলুদ পাখি দুটো চলে যায়।

পাখি দুটো চলে যাবার পরে সবাই রুমে ফিরে আসে।রুমে এসেই গতদিনের মত আজকেও বিছানায় প্রচুর রক্ত পাওয়া যায়। বিছানার পাশেই একটা বেশ বড়সড় হলুদ পাখি দেখতে পাওয়া যায়। পাখিটি জীবিত নাকি মৃত সেটাও দূর থেকে বুঝা যাচ্ছে না।তবে পাখিটি মুখ নিচু করে আছে। পাশে গিয়েই ফাহিম যখন পাখিটিকে স্পর্শ করলো তখন সাথে সাথেই পাখিটি মাটিতে লুটে যায়।”পাখিটি মৃত, বলেই ফাহিম সহ বাকি সবাই চিৎকার দিয়ে উঠে!!! এটা অই হলুদ পাখি দুটোর মধ্যে একটি পাখি নয়তো?

ফাহিমেরা কিছুই বুঝতে পারতেছেনা। তারা কোন মতে পাখিটিকে বাহিরে নিয়ে এসে মাটিতে পুঁতে দেয়।কোন কিছু না ভেবে ফাহিম,যারিন, ইশান, দীপু সবাই বাড়িটি থেকে বের হয়ে আসে।কোথায় যাবে তারা? এর কিছুই জানে না। তবে তাদেরকে এখন দৈত্যটাকে খুঁজতে হবে। কারণ একমাত্র দৈত্যটিই তাদের এখান থেকে বের হতে সাহায্য করতে পারবে।

পুরো এলাকা টা খুঁজে দৈত্য তো পাওয়াই যায়নি এমনকি অন্য কোনো প্রাণীও পাওয়া যায়নি।ফাহিমের মাথায় এখন অন্য একটা বুদ্ধি ঘুরপাক খাচ্ছে। আচ্ছা আমরা যে স্টেশনে নেমেছিলাম অই স্টেশনে গেলে কেমন হয়?

তার মুখ থেকে কথাটা বের হবার আগেই দীপু, লুফে নেয়। কেমন হবে মানে? এটা তো অনেক ভালো আইডিয়া। বলেই বাকিদের নিয়ে সে পিছন দিকে হাঠা শুরু করে।

এই সময়ে আশেপাশে কোন প্রাণের দেখা নেই। তারা মাত্র চারজন! তাই বাধ্য হয়েই সকলে “দীপুর” পিছে পিছে হাঠতে শুরু করে। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো পিছনে ফিরে তারা না কোন বাড়িঘর, কুটির এমনকি রেলওয়ে স্টেশন কিছুই খুঁজে পেলো না। সবার মনে একটা অন্যরকম ভয় কাজ করছে। বার বার খুঁজেও কোন বাড়িঘর,কুটির,রেলওয়ে স্টেশন কিছুই পাওয়া গেলো না। সবাই বেশ হতাশ! যারিনের,, কেমন জানি মনে হচ্ছে তারা কেবল ছোট্ট একটা গোলাকার এলাকার মধ্যে বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে। এত ঘুরানোর পরেও তারা কেমন জানি বার বার একই জায়গায় ফিরে আসছে।তাও পূর্বের কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না।

ফাহিমের মনে ভয়ের জন্ম নিতে শুরু করেছে। কোন কিছু না ভেবেই সে হলুদ পাখিদের স্মরণ করতে শুরু
করে সে।সাথে সাথেই তারা হাজির! একসাথে দুজনকে দেখে ফাহিম নিশ্চিত হয় যে অই মৃত হলুদ পাখি তাদের কেউ না। পাখিদের কাছে পূর্বের সব কিছু খুঁজে না পাবার কারণ জানতে চাইলে তারা বলে দেয়,,, এটা পৃথিবী না! এখানে যা দেখা যায় তা অনেক সময় দ্বিতীয় বার দেখা যায় না ,, প্রাণী গুলো ছাড়া।বলেই তারা আবার চলে যায়।

ফাহিম,যারিন,ইশান আর দীপুর মনে বেশ সন্দেহের জন্ম হয়! এ কেমন আজব দেশ? এখানে তাদের সাথে আজব আজব ব্যাপার ঘটে চলছে। তাদের কারো মাথায় কিছুই ঢুকছে না। তারা এখন কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। এখানে আসলেই তাদের কি করতে হবে??

কোন কিছু বুঝতে পেরে সবাই দৈত্য টিকে খুঁজতে পা বাড়ায়। কিন্তু এবারো অনেক খোঁজাখুঁজিরর পর কোথাও কোন দৈত্য দেখা গেলো না। এমন কি একটি মশা- মাছিও দেখা গেলো না।

দীপুর,,, ভাবতেও বেশ অবাক লাগে যে এখানে তারা এবং পাখি দুটো ছাড়া আর কোন প্রাণীই নেই। ভাবতেই বারবার অবাক হয় সবাই।তবে হাঠা থামায়নি তারা সামনের দিকে হেঠে যাচ্ছিল কয়েক ঘন্টা থেকে। হঠাৎ, সামনে একটা বড়সড় খাদ দেখা গেলো। কাছে যেতেই বুঝা গেলো যে খাদ টা বেশ গভীর। এক রকম কুয়ার মত। আর ভিতর থেকে আজব আজব আওয়াজ আসছে।

সকলেই বুঝতে পারে এখানে নিশ্চয়ই কেউ আটকা পড়েছে। তবে কে আটকা পড়েছে এটা ভাবার আগেই সকলে বেশ খুশি! কারণ তারা ছাড়াও এখানে আরেকটি প্রাণের খোঁজ পেলো সবাই। আর খাদ থেকে অই প্রাণীটিকে বাঁচানোর জন্য সবাই মরিয়া হয়ে উঠে।

ব্যাগে রাখা কয়েকহাত লম্বা রশি বের করে,, ফাহিম।কোন একদিন কলেজ থেকে বাসায় আসার সময় কাপড় শুকানোর জন্য কিনেছিল কিন্তু ব্যাগ থেকে বের করা হয়নি।

রশিটা খাদের নিচে দিয়ে একটু জোরে রশিটা ধরার জন্য আওয়াজ দিয়ে কিছুক্ষণ পরে সবাই রশিটা টানতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যে রশি ধরে উপরে উঠে আসে আজব এক প্রাণী যার নাক/মুখ/চোখ কিছুই নেই। কিন্তু তার চেহারা ধীরেধীরে পরিবর্তন হতে শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যে..

এই অদ্ভুত প্রাণীটির চেহারা আস্তে আস্তে পরিবর্তিত হয়ে নাক,মুখ,চোখ সব কিছুই বাহিরে বেরিয়ে আসছে।কি হচ্ছে কেউই বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রাণীটি একটা বড়সড় দৈত্যতে রুপান্তরিত হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই এটা আরো বড় হতে শুরু করে। একসময় দৈত্যটি বিশাল রুপ নেয়। মনে হচ্ছে যেনো পুরো একটা গ্রাম জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে দৈত্যটি।

সকলের মনে একই প্রশ্ন! হলুদ পাখিরা যে দৈত্যের কথা বলেছিল এটাই কি সেই দৈত্য?? কোন কিছু ভাবার আগেই সবাই একটা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে যায়। তবে বাকি ঝুপের আড়ালে নিজেদের লুকালেও “দীপু” লুকোতে পারে নি। সে দৈত্যটির পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিল। দৈত্যটি পিছনে ফিরতেই, দীপুকে দেখে ফেলে।দৈত্যটির বিশাল চেহারা, নাক-মুখ দেখে, দীপু সেখানেই বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলো। আস্তে আস্তে করে দৈত্যটি দীপুর কাছে আসতে লাগলো।তার কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ কি জানি ভাবলো আর তার পরেই সেখান থেকে চলে গেলো।

বাকিরা ঝুপের আড়াল থেকে বের হয়ে, দীপুর কাছে চলে আসে। কিছুক্ষণ দীপুর মুখে পানি ছিটানোর পরে তার জ্ঞান ফিরে আসে। কিন্তু সে কিছুই মনে করতে পারছে না।তাছাড়া যেখানে খাদ ছিল সেখানে এখন কিছুই নেই! সব কিছু মুহুর্তের মধ্যেই সমতল হয়ে গিয়েছে। বাকিরা দীপুকে নিয়ে সামনের দিকে চলতে থাকে। তবে ভালই হয়েছে দীপু কিছু মনে করতে পারছে না। তা না হলে আরো কত কি প্রশ্ন করতো।

দৈত্যটি যেদিকে চলে গিয়েছে, ফাহিম,যারিন,ইশান,দীপুরাও সেদিকে যেতে লাগলো। কিছক্ষণ হাঠার পরেই তার বেশ বড়সড় একটা গুহা দেখতে পেলো। ফাহিম কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো এটা নিশ্চয় অই দৈত্য টার গুহা। দৈত্যটা নিশ্চয় এখানে থাকে। তা না হলে এত বড় গুহার কিসের জন্য এখানে.??

কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে একটা বিকট আওয়াজ পাওয়া গেলো! সকলের কান ফেটে যাবার মত অবস্থা। কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না কেউই। সবাই একটু আড়ালে গিয়ে লুকিয়ে থাকে।ঠিক তখনি গুহার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে সেই দৈত্যটা।তার পুরো শরীরে রক্তের মাখামাখি। দীপু এটা দেখেই বেশ শব্দ করেই বলে দেয়,, ” আরে! এটাতো সেই দৈত্য টা।”দীপুর মুখ থেকে কথাটি বের হবার আগেই ফাহিম তার মুখ চেপে ধরে।দীপুর আওয়াজ টা বেশি দূর যায়নি। তার আগেই সবাই থামিয়ে দিয়েছে।

দৈত্যটা এবার বাহিরে এসে হাত দিয়ে মাটিতে বেশ বড় করে একটা বৃত্ত আঁকলো। সাথে সাথেই সেখানে একটা খাদ তৈরী হয়ে গেলো।সে খুব যত্ন করে হাতে-মুখে ও পুরো শরীরে থাকা রক্ত গুলো খাদের পানিতে ধুয়ে নিলো। মুখটা দ্বিতীয় বার ধুতে যাবে এমন সময় ঘটলো অঘটন!!

বিশাল দৈত্য টা পা পিছলে আবারো খাদে পড়ে গেলো।পূর্বের ন্যায় এবারো খাদের ভিতর থেকে অদ্ভুত অদ্ভুত আওয়াজ আসতে শুরু করেছে। নিজেদের চোখের সামনে একটা বিশাল দৈত্যের পতন দেখে সবাই বেশ অবাক! তাদের কি করতে হবে কিছুই বুঝতে পারে না কেউ। তবে সবাই এটা জানে যে এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে তাদের অবশ্যই দৈত্যকে বাঁচাতে হবে। কারণ দৈত্য ছাড়া আর কেউই তাদের কে এখান থেকে বের হতে সাহায্য করবে না।

তবে ফাহিমের মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে? এত বড় দৈত্যকে তারা টেনে তুলবে কি ভাবে?আগের বার না হয় দৈত্যটি ছোট আকৃতির ছিল তাই টেনে তুলা সহজ ছিল! যাইহোক ফাহিমের সন্দেহে কেউ কান না দিয়ে আগের রশিটা খাদের মধ্যে ফেললো।কিছুক্ষণের মধ্যেই রশিতে টান অনুভব করা গেলো।ফাহিম,যারিন,ইশান আর দীপু সবাই মিলে কোনরকম টানতে টানতে দৈত্যটিকে উপরে তুললো। অবাক হবার ব্যাপার হচ্ছে তারা যখন দৈত্যটিকে টেনে উপরে তুলছিল তখন কোন কষ্টই হচ্ছিল না । রশিটি উপরে আসতেই দেখা যায় রশির শেষ প্রান্ত একটি হলুদ পাখি আঁকড়ে ধরে আছে।

কারো বুঝতে অসুবিধা হলো না যে এই পাখিটাই দৈত্য।হয়তো সে তার রুপ বদলে ফেলেছে। কিন্তু দীপুর মাথায় অন্য প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে? আচ্ছা দৈত্য টা পাখির রুপ নিলে তো খাদ থেকে উড়েই আসতে পারতো। কিন্তু সেটা করলো না কেনো?

দীপুর প্রশ্নের কোন জবাব নেই কারো কাছে। সবাই শুধু এটাই জানে, “দৈত্যটা যতটা বিশাল ততটা বোকা”।

পূর্বের ন্যায় আবারো দৈত্যটি তার রুপ বদলাতে শুরু করে।ফাহিম, যারিন,ইশান সবাই দৈত্যের রুপ বদলানো দেখছে কিন্তু ফাহিমের আর ইশানের হাত দীপুর চোখে দেয়া। কারণ, দৈত্যটির আসল রুপ দেখলে দীপু আবার ভয় পাবে, আবার বেহুঁশ হবে”! তারপর থাকে নিয়ে আবার আরেক কান্ড হয়ে যাবে….

ততক্ষণে দৈত্যটি হলুদ পাখির রুপ থেকে তার পূর্বের রুপে ফিরে এসেছে।তাদেরকে দেখেই দৈত্যটির মুখে একটু অন্যরকম অনুভূতি প্রকাশ পেলো। অনেকটা টেবিলে খাবার রেখে ভোজনের সময় চেয়ারে বসা ব্যক্তিটির মুখের ভাব প্রকাশ পাচ্ছে দৈত্যটির মুখে।

ফাহিম,যারিন,ইশান আর দীপু সবাই বেশ ঘাবড়ে গেলো। দৈত্যটি তাদের দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতে লাগলো। ততক্ষণে ভয়ে দীপুর চোখ থেকে ফাহিম আর ইশানের হাত সরে গিয়েছে।চোখ খুলতেই সামনে লোভাতুর দৈত্যের চাহনি দেখেই আগের বারের মত এবারো দীপু বেহুঁশ হয়ে যায়।বাকিরা ততক্ষণে অনেকটা দূরে সরে গিয়েছে। দীপুর অবস্থা দেখে দৈত্যটির ভাবভঙ্গি পরিবর্তন হতে শুরু করে।এবার তার মুখে সরল ভাব চলে আসে। লোভাতুর দৃষ্টি মুছে গিয়েছে তার মুখ থেকে।

দীপুর মুখে সে খাদ থেকে পানি এনে ছিটিয়ে দেয়। ততক্ষণে দীপুর জ্ঞান ফিরে আসে।তবে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে দীপুর জ্ঞান ফিরার আগেই দৈত্যটি তার চেহারা বদলে ফেলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দৈত্যটি একটি সুদর্শন যুবকে রুপান্তরিত হয়ে যায়।দীপুর সাথে কি যেনো কথা বলতে থাকে। বাকিরা দূর থেকে শুধু দেখছে কিন্তু কিছুই শুনতে পাচ্ছেনা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ফাহিম, যারিন আর ইশানকে ডাক দেয়, দীপু। সকলে চলে আসে যুবক রুপী দৈত্যের কাছে। সকলে আসার আগেই দীপু তাদের সব কাহিনী যুবকটির কাছে বলে দেয়। ততক্ষণে সবাই কাছে আসলে যুবকটি একটু মুচকি হাসি দেয়।

“তাহলে,, তোমরা আমাদের রাজ্য এসে ফেঁসে গেছো। এখানে যে কেউ আসে তারা সচরাচর কেউই ফিরে যায় না। সবাইকে আমি খেয়ে নেই। সবাই কে আমি এরকম পরীক্ষায় ফেলি। আমি নিজে খাদে পড়ে গিয়ে সাহায্য চাই! আজ পর্যন্ত কেউই আমাকে বাঁচাতে আসেনি। তাই আমি নিজেই খাদ থেকে উঠে সবাইকে খেয়ে ফেলি।কিন্তু তোমরা আমাকে দু’বার বাঁচিয়েছো। তাই তোমাদের খেতে আমার কেমন জানি ইচ্ছা করছিল না। আর এই বেহুঁশ হয়ে যাওয়া ছেলেটাও বেশ সাধারণ!!! আমি তোমাদেরকে পৃথিবীতে পৌঁছে দিবো।”বলে দৈত্যটি সবাইকে সান্ত্বনা দেয়!!!

কিন্তু,, ইশানের মনে অন্য কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। তাহলে হলুদ পাখি দুটোর কি হবে? তাদের কেউ আমাদের পৃথিবীতে নিয়ে যাবো… যেনো আর কেউ তাদেরকে জ্বালাতে না পারে। ইশানের, কথা শুনে দৈত্য টা হেসে উঠে..! যেখানে নিজেদের জীবন বাঁচাতে পারছো না সেখানে পাখিদের বাঁচাবার চিন্তাও করতেছো..???এত উদারতা??

যারিন, দীপু, ফাহিম আর ইশানের কথায় দৈত্যটাও রাজি হয়ে যায়। পাখি দুটো সহ তাদের কে সে পৃথিবীতে পৌঁছে দেয়।

পরের দিন সকালে সবার ঘুম ভাঙে ইশানের রুমে। ফাহিম,দীপু, ইশান সোফায়, টেবিলে শুয়ে আছে। যারিন, বিছানায় আরামে ঘুমাচ্ছে। আন্টির ডাকে সবার ঘুম ভাঙে। ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে, ইশান। আন্টি ভিতরে আসতেই বেশ অবাক!! ইশানের রুমে ফাহিম, যারিন,দীপু কিভাবে এলো??? তার মাথা ঘুরুচ্ছে। ইশান ততক্ষণে আন্টিকে সারপ্রাইজ সারপ্রাইজ বলে চমকে দেয়। সাথে সাথে বাকিরাও সারপ্রাইজ সারপ্রাইজ বলে চিল্লাতে শুরু করে। এত চিৎকারে বেশিক্ষণ ঠিকতে পারেন নি,, আন্টি।কিছুক্ষণ পরেই তিনি সবার জন্য নাস্তা নিয়ে আসেন।

আন্টির হাতের বাহারি নাস্তা দেখে ফাহিম, দীপু আর যারিনের হলুদপাখি রাজ্যের খাবারের কথা মনে পড়ে যায়। সাথেসাথেই সবাই ছাদের দিকে দৌঁড় দেয়। ছাদেই উঠেই দেখতে পায় আম গাছের লম্বা ডালে দুটো হলুদ পাখি তাদের দিকে চেয়ে বসে আছে……

নিজেদের অদ্ভুত ভ্রমণে সবাই বেশ অবাক! তাদের সাথে আসলেই কি হয়েছিল? তবে সবাই ভালো করে জানে যে, দুটো হলুদ পাখিকে তারা মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছে!!!

…………………………………….(সমাপ্ত)………………………………..

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত