** বোবাভুত **
যে কিনা স্বপ্নে দেখা দেয়।
হ্যাঁ সুমনা, হ্যাঁ মলয় বলছিলাম। আমি কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি তুমি আর একটু অপেক্ষা করো।এই অটো, অটো, ধুস….! চলে গেলো,
হ্যাঁ সুমনা, বলছি কি অটো, ট্যাক্সি, কিছুই পাচ্ছিনা। সামনে একটা টোটো দাঁড়িয়ে আছে। দেখি যায় কিনা। আমি ফোন-টা রাখছি।
সুমনা – তাড়াতাড়ি আসো, একটা ভৌতিক কান্ড হয়ে গেছে এদিকে।
আমি – আচ্ছা আমি আসছি, তুমি একটু অপেক্ষা করো।
মনে মনে ( যা বাবা, টোটোওয়ালা কোথায় গেলো ) এদিকওদিক তাকিয়ে ডাক দিলাম, টোটোর চালক কোথায়..
এইতো এইখানে, আরে দাদা, রাতের খাবার সারছিলাম। তা কোথায় যাবেন?
আমি – স্টেশন….
টোটোওয়ালা – বসে পড়ুন,
টোটোওয়ালা সাথেসাথে টোটো স্টার্ট দিয়ে দিলো,
দ্রুত টোটো চালাচ্ছিলো….
কোথায় যাচ্ছেন দাদা?
বিয়েবাড়িতে নাকি।
আমি – হ্যাঁ ওই বউয়ের বোনের কাল বিয়ে আছে, আমি কাজের চাপে যেতে পারিনি এতদিন আজ তো আমার বউ মাথার চুল ছিঁড়ে দিচ্ছিলো, আমার তো যেতে যেতে দেরী হলো, তাই ওকে বলেছি তুমি স্টেশনে দাঁড়াও, আমি আসছি।
টোটোওয়ালা – অহ, তাহলে তো আপনার খুব তাড়া। এক কাজ করুন আপনাকে আমি শর্টকাট দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আপনার যখন তাড়া,
আমিও ভাবলাম হ্যাঁ এতে আমারি সুবিধা। তারপর রাণাঘাট লোকাল না পেলে অনেক মুস্কিলে পড়ে যাবো।
আমি বললাম – হ্যাঁ, তাহলে তো ভালোই হয়।
টোটোওয়ালা আমাকে বললেন – উপরের হাতল-টা ধরুন। আমি গাড়ির গতি বাড়াচ্ছি।
আমি শক্ত করে ধরলাম হাতল-টা, টোটোওয়ালা আরও দ্রুত টোটোচালাতে লাগলো,
জায়গা-টা কোথায়, আমি নিজেই চিনতে পারছিনা। একটা অদ্ভুত অন্ধকার গলি দিয়ে আমরা যাচ্ছিলাম। আমি এতক্ষণ ফোনে মুখ গুঁজে ছিলাম। এইবার যেই টোটো ওয়ালার দিকে তাকালাম দেখি টোটোওয়ালা টোটো থামিয়ে দিয়েছে।
আমি বললাম – দাদা স্টেশন কোথায়, এটা কোন জায়গা।
টোটোওয়ালা – এইতো এটাই তো স্টেশন।
আমি – মজা করছেন।
টোটোওয়ালা – মজা করা যায় নাকি তোর সাথে, তুই কেন বিয়ে করেছিস সুমনা-কে। আমি ওকে ভালোবাসতাম। তুই আমাদের মাঝে এসে পুরো সংসার গড়ার স্বপ্ন-টা ভেঙে দিলি।
আমি – কে তুমি। তোমাকে তো চিন-তে পাচ্ছিনা।
টোটোওয়ালা – ” অনুগ্রহ করে শুনবেন, তিন নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে একটা থ্রু ট্রেন যাবে, যাত্রীদের কাছে অনুরোধ তারা যেন নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখে ” এই কথা-টা ওই টোটোওয়ালা জোরে চেঁচিয়ে তিন-তিনবার বললো। তারপর বললো। বিদায়।
আমি – মানে..আমি তখনো হাতল-টা ধরে ছিলাম। কিন্তু একি হচ্ছে আমার হাত কেন হাতল দিয়ে সরছেনা। প্রচুর চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু হাত আর ছাড়াতে পাচ্ছিনা।
টোটোওয়ালা নাচতে লাগলো, আর জোরে চেঁচিয়ে বললো – কি মজা, কি মজা, আজ হবে তোর সর্বনাশা। আমি শত চেষ্টা করেও হাত আর সরাতে পারছিলাম না। হাতলের থেকে। তারপর আমি আমার চারপাশ -টা ভালোভাবে তাকালাম। অন্ধকারে যেটুকু বুঝলাম আমি একটা রেললাইনের মাঝে আছি। একি..এটাতো ট্রেনের আওয়াজ। কোথা থেকে আসছে এই আওয়াজ। একটা ট্রেন প্রচণ্ড জোরে হর্ণ বাজাতে বাজাতে এগিয়ে আসছিলো। আমার দিকে। কিন্তু আমি টোটোর হাতল থেকে কিছুতেই হাত সরাতে পাচ্ছিলাম না।
তারপর একটা জোরালো ধাক্কার আওয়াজ।
এই..কি গো জল খাবে।
আমি চোখ মেলে দেখি আমি আমার বউয়ের পাশে বসে আছি। এ….কি আমিতো রেললাইনে ছিলাম, কিন্তু এখানে কি করে এলাম।
বউয়ের হাত থেকে জলের বোতল-টা নিয়ে ধকধক করে জল খেয়ে নিলাম।
আমি তখনো বুঝতে পারছিলাম না ব্যাপার – টা কি হচ্ছিলো।
আমার বউ বললো – ঘুমিয়ে পড়ো, এখনো একঘন্টার আগে আমরা পৌঁছাচ্ছিনা।
আমি শুতে যাবো ঠিক সেইসময় জানলা-টায় টোকা পড়লো
আমার বউ জানলা খুলেই দেখলো একজন ভদ্রলোক যার গলায় একটা ব্যাগ ঝোলানো।
আমার বউ প্রথমে ভেবেছিলো ওটা কোনো হকার, তাই ওকে বললো আমাদের কিছু লাগবেনা।
এইবলে আমার বউ জানলা-টা বন্ধ করে দিলো।
তখনি ওই লোক-টা জানলার বাইরে দিয়ে বলে উঠে – আজ তোর স্বামী বেঁচে গেলো, তুই ডেকে ওর ঘুম-টা না ভাঙালে ওকে নিয়েই যেতাম।
আমার বউ সাথেসাথে জানলা-টা আবার খুলে ফেললো – কিন্তু কোথায় কে? আশেপাশে তো চারিদিকে কেউ নেই, আর তার চেয়েও আশ্চর্যের জিনিস, ট্রেন তখন প্রচণ্ড গতি-তে ছুটছে।
তাহলে জানলার বাইরে থেকে আমি আর আমার বউ কার গলার আওয়াজ পেলাম
গল্পের বিষয়:
রহস্য