সাদা রঙের হেয়ার বেন

সাদা রঙের হেয়ার বেন

ভাই….
ওই দেখ সাদা হেয়ার বেন পরা মেয়েটা তোর দিকে তাকাচ্ছে। যা ভাই এই সুযোগ গিয়ে আই লাভ ইউ বলে দে।
কথাটা বলে বিস্ফোরিত চোখে সুজন সোমের দিকে তাকালো।

সোম – হুর। তাকালেই কি প্রেম হয়ে যায় নাকি?

সুজন – তাহলে কি তুই সারাজীবন প্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করে যাবি? যে তোকে নিজের বান্ধবীদের সামনে বয়ফ্রেন্ড না বলে বন্ধু বলে সম্বোধন করে। যেই মেয়েটাকে ফোন করলে সবসময় Busy Busy বলে। যে মেয়েটা কলেজে গেলে অন্য ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করে।

সোম – হ্যাঁ দরকার পড়লে তাই করবো। কিন্তু ওকে ছাড়া আর কারুর সাথে প্রেম-ট্রেমের কথা আমি চিন্তাও করতে পারিনা।

সুজন – আমি চললাম। কাল কলেজে দেখা করিস। ট্রেন – টা প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়ালো। সুজন নেমে গেলো। প্রতিদিন কলেজ থেকে ট্রেন ধরে বাড়ি আসার পথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় সুজন ও সোমের। আজকেও বাদ যায়নি।

সোম কলেজের সেই প্রথম দিন থেকে প্রিয়া কে ভালোবেসে ফেলে। তবে সেই কথা এসে জানায় সেকেন্ড ইয়ারে এসে। আর কয়েকদিন পর তাদের থার্ড ইয়ারের ফাইনাল পরিক্ষা। একটু গোলমেলে প্রেম। সোম ও প্রিয়ার সম্পর্ক – টা ইদানীং সেমন একটা ভালো যাচ্ছিলো না। ফোন কেটে দেওয়া, মিথ্যা কথার জট এসে তাদের সম্পর্ক গুলোকে একেবারে ধ্বংসের মুখে নিয়ে গেছে। সোম পুরনো দিনের কথাগুলো একটু মনে করে মিচকে মিচকে হাসছিলো।

এইযে শুনছেন। এরপরের স্টেশন – টা কি পায়রাডাঙা।

মধুমাখানো গলার স্বরে সোমের দিবাস্বপ্ন ভেঙে গেলো। সোম তাকিয়ে দেখে সেই সাদা হেয়ার বেন পরা মেয়েটি। কাজলে মাখা দুই চোখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

সোম কি বলবে বুঝতে পারছিলোনা। তড়িঘড়ি করে বললো না এরপরের স্টেশন। সোমের গালে শীতের দুপুরে ঘামের ছাপ।

মেয়েটি – ওহ। থ্যাংকইউ। আসলে আমি আজ নতুন যাচ্ছি এইখানে। চিনিনা। তাই জিজ্ঞেস করলাম।

সোম – পায়রা ডাঙার কোথায় যাবেন?

ওই মেয়েটি বললো – আরামঘাটা। আসলে ট্রেন পাইনি। একজন বললো পায়রাডাঙা থেকে ট্রেন পাওয়া যায়। গেদে লোকাল। ওই ট্রেনে করে যাবো।

সোম একগাল হাসি হেসে নিয়ে বললো।
কি বললেন আপনি আড়ংঘাটা যাবেন।পায়রা ডাঙা দিয়ে। খ্যাঁক খ্যাঁক খ্যাঁক খ্যাঁক।

আপনি এক কাজ করুন আমার সাথে পরের স্টেশনে নামুন। আমি আপনাকে ট্রেনে তুলে দেবো। ভয় পাবেন না। আপনার ভালোর জন্য বলছি। না আপনি ভুল কিছু বলেন – নি আপনি শুধু পায়রা ডাঙা দিয়েই যে গেদে লোকাল পাবেন তার কোনো মানে নেই। আপনি শেয়াল দা থেকে রাণাঘাট অবধি যে কোনো প্ল্যাটফর্ম থেকে গেদে লোকাল ধরতে পারেন। রাণাঘাটের পর আর গেদে লোকাল ধরতে পাবেন না। কারণ গেদের লাইন রাণাঘাটের পর দিয়েই ভাগ হয়ে যায়।

এইতো এসে গেছে স্টেশন। নিন নেমে পড়ুন।
আমি আপনাকে ট্রেনে তুলে দেবো। মেয়েটার চোখে অদ্ভুত এক জিজ্ঞাসা করার খিদে। অবিশ্বাসের খিদে। কিন্তু মেয়েটা নেমে গেলো। বোধহয় সোম কে সে একটু হলেও বিশ্বাস করেছে এইটুকু সময়ে।

সোম ওই মেয়েটার সাথে প্ল্যাটফর্ম দিয়ে হেঁটে আসছিলো। আর প্ল্যাটফর্মের কয়েকজন সোমের দিকে তাকিয়ে আছে।

সোমের দুইজন বন্ধু তো অবাক। এটা কে সোমের সাথে। সকলের মনে একটাই প্রশ্ন।

সোম – আপনি আর আধাঘন্টা অপেক্ষা করুন। ট্রেন পেয়ে যাবেন। আর ঠিক বলতে না বলতেই।

মাইকে ট্রেনের ঘোষণা করলো।

সোম – আপনি হেব্বী লাকি। ট্রেন থেকে নামার পর আবার ট্রেন পেয়ে গেলেন।

মেয়েটা – হাসছে।

গেদে যাবার ট্রেন প্ল্যাটফর্মে আসামাত্র। সোম ওই মেয়েটাকে ট্রেনে তুলে দেয়। ভীড় ছিলোনা ট্রেন – টায়।

এইযা আপনার তো নামটাই জানা হলোনা।

মেয়েটা বললো – আমার নাম রুপালী..

ট্রেন তখন প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়বে ছাড়বে করছে। সোমের বুকে হাল্কা ভয়। এতো সুন্দর মেয়েটা ঠিকভাবে যেতে পারবে তো।

সোম চেঁচিয়ে বলে ওঠে – আর চারটে স্টেশন পর আড়ংঘাটা।

ইতিমধ্যে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে প্ল্যাটফর্ম দিয়ে। সোম ধীরেধীরে ট্রেনের সাথে গতি বজায় রেখে প্ল্যাটফর্মের উপর দৌঁড়ানো শুরু করে দেয়। ধীরেধীরে হাঁটতে হাঁটতে দৌঁড়ানো চালু করে সোম।

ইতিমধ্যে ট্রেনের গতি বেড়ে যায়। সোম ও নিজের দৌঁড়ানোর গতি বাড়িয়ে দেয়।

সোম – আবার আসবেন রুপালী।
সোমের চোখ থেকে জলের স্বচ্ছ বিন্দু মাটিতে নেমে আসে।

একি কেন কাঁদছি আমি। আমিতো প্রিয়াকে ভালোবাসি। না না। আর কাঁদবো না। নিজের চোখের জল মুছে সোম বাড়ির দিকে রওনা দেয়।

কয়েকদিন পর

** দুই **

এটা প্রিয়া না। এইখানে কি করছে। সোম প্রিয়ার পেছন পেছন প্রিয়াকে অনুসরণ করে প্রিয়া যেদিকে যাচ্ছিলো সেদিকে যেতে থাকে।
কয়েকদিন ধরে প্রিয়া ফোন,মেসেজ এসব কিছুর রিপ্লাই টিপ্লাই দিচ্ছে না। ব্যাপার – টা কি।

প্রিয়া একটা কফি শপের সামনে এসে দাঁড়ায়। ভেতর থেকে একটা ছেলে আসে। প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে। প্রিয়া ওই ছেলেটার গালে একটা চুমু খেয়ে ওরা দুজনেই ভেতরে চলে গেলো।

সোম আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলোনা। সোমের মনে হচ্ছিলো ওর কাছে গিয়ে ওর গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ বসিয়ে দিতে।
কিন্তু সোম সেটা ভাবেনি। এক দৌড় দিয়ে সোম রেল লাইনে চলে যায়।

না..আজ আর সোম পারছেনা। বহুত কষ্ট হচ্ছে সোমের। আজ সে নিজের জান দিয়ে কষ্ট-টা মিটিয়ে নিতে চায়।

এক নম্বর লাইন দিয়ে একটা লোকাল ট্রেন আসছে। সোম ওই লাইনে পা দিতে গিয়েও পা রাখতে পারলো না।

ট্রেন-টা বহুত জোরে আসছিলো। ওই ট্রেনের সামনে দাঁড়ালে অনেক ভয়াবহ মৃত্যু হত। তাইজন্য সোম দাঁড়িয়ে যায়। লাইনে পা রাখেনা। দুপুর – টা বেশ জমিয়ে পড়েনি। সোম ভাবলো আর না। একটা একটা করে অনেক গুলো ট্রেন মিস করেছি। এবার সামনে যা ট্রেন দেখবো তার সামনে দাঁড়িয়ে পরবো।

সোমের চোখ পড়লো তিন নম্বর লাইনের দিকে। একটা মালগাড়ি আসছে। মালগাড়ি তো অনেক আস্তে আস্তে আসে। ওই ট্রেনের সামনে দাঁড়ালে আমি অনেক আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাবো। আর আমার ব্যথাও করবেনা।

একি এই মেয়েটা কে। তিন নম্বর লাইন বরাবর সোজা এগিয়ে যাচ্ছে।

এইযে শুনছেন। ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন।
দৌড়ে গিয়ে মেয়েটাকে রেল লাইনের ওপর থেকে হাত ধরে সরিয়ে আনে।

একি আপনি।
রুপালী সোম কে দেখে বলে আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আর বাঁচতে চাইনা।

সোম – কেন?

রুপালী – দুবছর ধরে প্রেম করার পর আমি জানলাম অজয় ( আমার বয়ফ্রেন্ড) আমাকে ভালোবাসেনা। ও অন্য মেয়েকে ভালোবাসে।

সোম – ভালোবাসার জন্য মরতে যাচ্ছেন। আপনার ভাগ্যে হয়তো অজয়ের থেকেও আরও ভালো কেউ অপেক্ষা করছে। আপনার চলে যাবার পর আপনার বাবা – মার কি হতো বলুন তো।

রুপালী – বাবা – মার কথা যখন তুললেন। তখন আপনি কেন সুইসাইড করতে যাচ্ছিলেন। সেই সকাল থেকে আপনাকে দেখে যাচ্ছি।

সোম – না মানে।
সোম কি বলবে বুঝতে পারছিলোনা।
আপনি অনেক সুন্দর..

সোমের বুক লাফাচ্ছে। সোম বুঝতে পারছিলো না। এরপর কি হতে চলেছে।

রুপালী – শুধু সুন্দর।

সোম – যদি আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনার আপত্তি নেইতো।

রুপালী – বড্ড দেরী করে ফেললেন যে,

সোম – মানে??

রুপালী বললো – আচ্ছা সামনে এতো লোক কেন ভীড় করে আছে দেখে আসি চলুন।

সোম – চলুন।

সোম ওই ভীড়ের মধ্যে এক পা, দুই পা করে এগিয়ে যায়।

সোম – একজন লোক-কে জিজ্ঞেস করলো
আচ্ছা এইখানে এতো ভীড় কেন?

ভদ্রলোক বললেন – আজকের দুপুর বেলায় ডাউন গেদে লোকাল এখান থেকে যাওয়ার সময় থেকে একটা মেয়ে সেই ট্রেন থেকে পড়ে যায়।

সোম ধীরেধীরে এগিয়ে যায়। ওই ভীড়ের দিকে মাটিতে শুয়ে থাকা একটা লাল চুড়িদার পরা রক্তাক্ত মেয়ের দেহর দিকে চোখ পড়লো সোমের।

ওই মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে যায় সোম। ওটাযে আর কারুর নয়

যেই রুপালী এতক্ষণ সোমের সাথে গল্প করছিলো ওই মৃতদেহটা সেই রুপালীর ছিলো।

সোমের চোখ থেকে জল গড়িয়ে মাটিতে পড়তে লাগলো সোম পেছন ফিরে আশেপাশের কোথাও রুপালী কে দেখতে পেলোনা। তবে ওই দূরে একটা হেয়ার বেন পরে আছে। যেটা কিনা রুপালীর ছিলো।

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত