গল্পটা সম্পুর্ণ কাল্পনিক। গল্পের সাথে বাস্তবের কোনো স্থান-কাল-পাত্রের মিল নেই।
গল্পটি আধুনিক চিরাচরিত যন্ত্রাংশ কে অসম্মান করবার উদ্দেশ্য লেখা হয়নি। আমরা গল্প লিখি শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য।
আমি কলকাতার আশেপাশে কোনো এক কলেজে পড়াশোনা করি। আবার টিউশন ও পড়ি ওইখানেই। আমার বাড়ি কালিনারায়ণ পুর, নদীয়া জেলায়। আমি সেই সকাল বেলায় কলেজ যাই। আর ফিরি ৫ টা। কোনোকোনো দিন ৬ টাও বেজে যায়। আবার যেদিন টিউশন থাকে। সেদিন ফিরতে ফিরতে ৭.৩০, ৮.০০ টাও বেজে যায়।
দিন-টা ছিলো বুধবার। ওইদিন আমার কলেজ টিউশন দুটোই থাকে। শেষ ক্লাস – টা করে আমি দৌড় দিলাম। বাস ধরে আমার পড়ার টিউশন স্যারের বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। বাসে একটু সময় লাগে। ৪.৩০ নাগাদ স্যারের বাড়ি এসে জানতে পারলাম স্যার আজ রাত ৮.০০ টা দিয়ে পড়াবে। স্যার এক জায়গা-ই গেছে। আমি আর তখন কি করবো। সপ্তাহে দুই দিন পড়াই। কার-ই বা ভালো লাগে পড়া কামাই করতে। আমি তখন আশেপাশে ঘুরতে লাগলাম।
সন্ধ্যে ৬.০০ টা বাজে বোধহয় তখন। আমি একটা ঘুগনির দোকান থেকে ঘুগনি কিনে খাচ্ছি। সারাদিন না খাওয়া। সেই দুপুরে ক্যান্টিন থেকে লুচি,তরকারি খেয়েছি। সেই লুচি কতক্ষণ – ই বা পেটে থাকে। খাচ্ছি খেতে খেতে এপাশ ওপাশ তাকাচ্ছি। রাস্তা দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে সেগুলো দেখছি। আর এক চামচ করে ঘুগনি মুখে দিচ্ছি।
ঠিক তখনি আমার পেছন থেকে কে যেন বলে উঠলো??
এই তুমি.. সেই ভুতের পেজের লেখক তাইনা??
আমি ঘুগনি খাওয়া থামিয়ে পেছন ফিরে দেখি। নীল চুড়িদার পড়া একটা মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার চোখ দুটো কালো কাজলে রাঙা। আমার গায়ে দিয়ে তখন শীতল একটা স্রোত বয়ে গেলো।
আমি তখন এদিকে ঘুগনি খাচ্ছি সারাদিন পর। আমার খাওয়া তখন মাথায় উঠে গেলো।
আমি কাঁপা গলায় বললাম – হ্যাঁ কেন?
মেয়েটা তখন তার থেকে কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছেলেকে ইশারা করে ডাকলো।
মেয়েটা বললো – ও আমার বর। আমরা নতুন বিয়ে করেছি।
আমি – ওই মেয়েটার বর কে নমস্কার জানালাম।
মেয়েটার বর বললো – আমার নাম অনিকেত। ও আমার বউ পল্লবী।
আমি ওদের দুইজন কেই নমস্কার জানালাম। আমার হাতের ঘুগনির বাটি-টা ফেলে দিয়ে।
যদিও ওরা দুইজনে বলেছিলো আপনি খান খান। কিন্তু আমি খাইনি।
আমি – আরে ঠিক আছে সে নয় খাবো ক্ষণ। এবার বলুন কিছু বলার থাকলে।
পল্লবী বলে উঠলো – আসলে অনেকদিন ধরেই তোমার সাথে আলাপ করার অনেক ইচ্ছে ছিলো। আজ আলাপ – টা সেরে নিলাম। এই তোমাকে খুব ডিস্টার্ব করলাম নাকি।
আমি – লাজুক হয়ে বললাম। এমা ছিঃ ছিঃ ডিস্টার্ব করবো কেন? বলুন কিছু বলবেন।
অনিকেত ( মেয়েটার বর) তখন বললো – তুমি তো পাঠকের গল্প ও তোমার পেজে দাও। আমাদের কাছে একটা গল্প আছে তোমার পেজে দেবে।
আমি – হ্যাঁ অবশ্যই। বলুন। আমি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললাম।
অনিকেত বললো – আমরা অতো সাজিয়ে গুছিয়ে বলতে পারবো না। তবে যা বলবো সেটা শুনে তোমার ভালোই লাগবে।
আজ থেকে ৬ মাস আগে বিয়ে করেছিলাম আমরা। পালিয়ে গিয়ে। বাড়ির লোক যদিও পড়ে মেনে নিয়েছিলো এই ব্যাপার – টা। আমরা খুব শান্তিরে সংসার জীবন শুরু করলাম। তো আমি কলকাতার এক হোটেলে সার্ভিস বয়ের কাজ করতাম। যা মাইনে পেতাম। তাতে আমাদের ভালো ভাবে চলে যেতো দুইজনের পেট।
উফফফফফ…. এইখানে ভীষণ শব্দ এক কাজ করবে লেখক। ওই সামনে ফাঁকা মাঠ আছে ওখানে যাবে।
আমি বললাম – এখানেই কষ্ট করে বললে ভালো হয়না। আমার আবার পড়া আছে। আপনি ছোটো করে যতো – টা পারেন বলুন।
অনিকেত – বলা শুরু করলো..পল্লবী-কে এর আগে একটা ছেলে ভালোবাস তো। কিন্তু পল্লবী কোনোদিন ওকে ভালোবাসেনি। শেষমেশ ও এতো জ্বালাতে শুরু করলো। তা বলার মতন না। তাই বাধ্যহয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম। খুব ভালো ছিলাম আমরা। ওইযে,সামনে দেখছো মাঠের দিকে তাকাও। অনিকেত আমাকে সামনের দিকে ইশারা করে দেখতে বলছিলো।
আমি তাকালাম দেখলাম একটা ফাঁকা মাঠ। ওই মাঠের দিকে। ওই মাঠের ওপর প্রান্তে একটা রেলগেট আছে। তবে সেটা মাঠের ডানদিকের শেষপ্রান্তে। আর পুরো মাঠ-টা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। আর ওই মাঠেরি। বাম দিকে ছোটো একটা গলি আছে। শিমুলগাছ আছে বেশ কয়েক-টা। আমরা ওই গলি-টা দিয়ে রেললাইন পারাপার করতাম। শুধু আমি কেন অনেকেই করে।
ওই জায়গা-টা যেহেতু রেলগেটের পাশে তাই ওই জায়গার নাম দিয়েছিলাম। শিমুলতলা রেলগেট। কারণ সামনেই রেলগেট। এইজন্য। যদিও ওই জায়গার নাম শিমুল তলা। এই বলে হা..হা করে হাসলো।
এবার পল্লবী রেগে গিয়ে বললো – আহাঃ, ইয়ার্কি করোনা। ওকে বলো ঠিক ভাবে।
অনিকেত বলা শুরু করলো – আমরা গত ১০ এই ডিসেম্বর ওইখান দিয়ে পার হচ্ছিলাম। তখন অনেক রাত হয়ে গেছিলো। আমরা দুইজনে একটু কেনাকাটা করতে বেড়িয়ে ছিলাম। একটু দেরী হয়ে যায়। যাইহোক আমরা যখন রেললাইন পার হচ্ছিলাম তখন আমার বউ পল্লবী পেছন থেকে চিৎকার করে উঠে। আমি যেই পেছনে ফিরি তখন। আমার মাথায় অত্যন্ত ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে।
যখন জ্ঞান ফেরে তখন দেখি আমাদের দুইজনের দেহ শ্মশানে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
সেই দিন-টা কিভাবে ভুলি আমি। ২০১৪, ১০-ই ডিসেম্বর। আজপ্রায় তিন বছর হয়ে গেলো। কিন্তু দেখো আমরা তোমাকে এইভাবে কাহিনী – টা বললাম। যেন কাহিনী-টা ২০১৭ সাল থেকে ছ-মাস আগে। হয়েছে। কিন্তু ব্যাপার-টা তিন বছর পুরনো।
এই তিনবছরে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে শুধু পরিবর্তন হলো না। ওই শিমুলগাছের থেকে দু থেকে তিন হাত ভেতরের জঙ্গলে আমার বউয়ের পড়ে থাকা নেকলেস- টা। ওই নেকলেস – টা আমি অনেক আগে থেকে বোনাস জমিয়ে জমিয়ে কিনেছিলাম। যেটা কেউ তুলতে এলো না। তুমি একটা সাহায্য করতে পারবে লেখক।
তুমি যতো তাড়াতাড়ি পারো ওই নেকলেস – টা গঙ্গা জলে ভাসিয়ে দিও।
কিরে উঠ..
কলেজে যাবিনা।
আমার তখন চেতন ফিরলো তখন দেখি বিছানায় শুয়ে আছি আমি।
তাড়াতাড়ি উঠ..আজ আবার তোর কলেজ আছে পড়া আছে। কখন কি করবি। মা বলে উঠলো।
আমি তখন তড়িঘড়ি করে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল – টা খুলে দেখলাম আজ বুধবার তাহলে এতক্ষণ কি আমি স্বপ্ন দেখছিলাম।
আমি সাতপাঁচ না ভেবে কলেজে চলে গেলাম। কলেজে গিয়ে ক্লাস করে যখন পড়তে যাই তখন দেখি স্যার আসেনি। একি এই ব্যাপার-টা তো আমি আজ স্বপ্নে দেখেছি। আমি তখন একটু না দাঁড়িয়ে দৌড় মারলাম কালকের সেই ঘুগনির দোকানের পাশের মাঠ-টায়।
এক দৌড়ে চলে গেলাম বাম দিকের পাঁচিলের শেষপ্রান্তের দিকে। ৩-৪ মিনিট খোঁজাখুঁজি করার পর আমি একটা ধুলো জড়ানো গলার হার খুঁজে পেলাম। না আর এক মিনিট ও দেরী করিনি। সেদিন আর পড়তে যাইনি আমি। বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। কালিনারায়ণপুর চুর্ণী নদিতে ভাসিয়ে দিয়েছিলাম সেই হার-টা। তখন রাত ৮.০০ টার বেশি বাজে।
একটা অদ্ভুত হাওয়া আমার পাশ থেকে তখন বয়ে গেলো। যেই হাওয়া শুধু শীতের ঝলকানি দেয়না। মুখ ফুটে বলেও উঠে – ধন্যবাদ লেখক।