রিমি – ওই ছেলেটাকে দেখছিস?
এক নম্বরের ফালতু ছেলে। ও যদি কোনোদিন যেচে কথা বলতে আসে তোর সাথে একেবারে পাত্তা দিবি না।
টিনা – ওইতো কালো পেন্ট, পড়ে আছে যেই ছেলেটা ওর কথা বলছিস তো? কি যেন নাম ওর
রিমি – হ্যাঁ, রাতুল ওর নাম কি বিচ্ছিরি বিচ্ছিরি ভাষায় গালাগালি করে তুই ভাবতেও পারবিনা। আবার নেশা করে।
টিনা – হ্যাঁ রে। আমারো মনে হয় ও বিশাল বাজে। দেখ দেখ চেহারা দেখ একেবারে নোংরা। যতো সব বস্তি পাড়া থেকে উঠে আসে।
রিমি – আরে বস্তি বললে ভুল হবে। ওরা তো এই কলেজে পড়ার-ই যোগ্য না।
এই কথাটা শেষ করে দুইজনেই খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে উঠলো।
এই বেল পড়ে গেছে। তাড়াতাড়ি চল ক্লাসে চল নাহলে M.B স্যার আজ বিশাল ঝাড় দেবে।
টিনা – এই M.B র ক্লাস এখন?
রিমি – হ্যাঁ চল,চল।
স্যার ধুকছি?
M.B স্যার – হ্যাঁ আসো।
** কিছুক্ষণ পর **
সবাই চুপ করো। আজ তোমাদের নতুন প্রজেক্ট দিলাম। সেটা হচ্ছে পরিবেশের উপর যেকোনো টপিক নিয়ে লিখে। তাতে ছবি লাগিয়ে এক সপ্তাহের ভেতর জমা দিয়ে দেবে। আজ আর তোমাদের ক্লাস নিলাম না। এমনি তেই বেশী স্টুডেন্টস নেই আজ। তোমরা সকল-কে বলে দিও।
আচ্ছা স্যার, বলে দেবো। সকলে বলে উঠলো?
** ক্লাস শেষে কলেজের ক্যাম্পাসে **
এই টিনা, স্যার কি প্রজেক্ট দিয়েছে একটু বলবি?
কথাটা শুনে টিনা পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো রাতুল দাঁড়িয়ে আছে।
টিনা কোনো কথা না বলে দৌড় দিলো।
রাতুল ওর পেছন ধীরেধীরে যেতে লাগলো।
কি রে বল..
টিনা আরও জোড়ে দৌঁড়াতে লাগলো..
এই,এই রিমি..
** রিমি তখন ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে **
হ্যাঁ বল..
রিমি বললো।
টিনা – এই দেখনা। রাতুল আমাকে ডিস্টার্ব করছে।
রিমি – উফ আর পারা যাচ্ছেনা। ওর জ্বালায় ক্লাসে যেতে পারিনা। হাঁ করে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
এই জানু তুমি কিছু করো না গো ওর..
বড্ড বার বেড়েছে।
দাঁড়ায় আজ ওর ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এই বলে রিমির বয়ফ্রেন্ড ওর দিকে এগিয়ে গেলো।
এই কে বে তুই।
মেয়ে দেখলে চলকায়।
জানিস আমার বাবা কে..
এই বলে এক ধাক্কা দিলো রাতুল – কে।
রাতুল মাটিতে পড়ে গেলো। এই বেবি। তোমরা যাও। আমি ওকে দেখে নিচ্ছি।
যা..এখানে তোকে কিছু বললাম না।
বাইরে বেড়ো। তারপর দেখাচ্ছি।
এই বলে রিমির বয়ফ্রেন্ড রিমির কাছে দৌড়ে গেলো।
ভালো মতন টাইট দিয়েছি।
আর ডিস্টার্ব করবেনা ও। জাস্ট আর একটু খানি কাজ বাকি আছে। ওটা করতে পারলেই। ব্যস।
এই কি যেন বলছিলে। তুমি নাকি প্রজেক্ট বানাবে পরিবেশের উপর। আমার চেনা একটা গ্রাম আছে। ওখানে আমি আমার ক্যামেরা-টা নিয়ে যাবো। গিয়ে তোমার আর তোমার প্রজেক্টের কিছু সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি করে দেবো। আপত্তি নেইতো।
রিমি – জানু আপত্তি কোথায়। বরং ভালো হবে। আচ্ছা টিনা আমাদের সাথে গেলে কোনো আপত্তি নেইতো।
রিমির বয়ফ্রেন্ড – আরে না না। বরং ভালো হবে। ওকে তাহলে ওই কথাই ফাইনাল রহিলো। এই রবিবার দেখা করো। সকাল ১০.০০ টার ট্রেন। মিস যেন না হয়। আমি কলেজ চললাম। একটু কাজ আছে।
** দুই **
আজকে আমি নিজের প্রাণ শেষ করে দেবো।
চাকরী পাইনি আমি। লেখালেখি করে পেট চালাই। কিন্তু আমার বই বিক্রি হতেই চাইনা।
আজ সন্ধ্যাবেলা খালে ডুব দিয়ে নিজের দেহ ত্যাগ করবো। যাই এখন খালের দিকে এগিয়ে যাই।
এইভেবে সোম বাবু এগিয়ে গেলেন খালের দিকে। ঠিক তখনি। একটা বাতাসের ঢেউ সোম বাবুর কানের পাশ দিয়ে চলে গেলো। যেই বাতাস সোম বাবুকে বলে গেলেন – আপনার আর মরা হবেনা। আজ একটা জব্বর গল্প পাবেন।
এদিকওদিক তাকিয়ে সোম বাবু কাউকে দেখতে পেলেন না।
মনের ভুল ভেবে সামনে ওইযে খালপাড়ের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন।
শীতকাল…সন্ধ্যাবেলা। এদিকে তেমন কেউ খুব একটা আসেনা। আর এই জায়গা-তে অনেক অদ্ভুতুড়ে কাণ্ডকারখানা হয়া।
ওইযে দূরে কারা বোধহয় এদিকে আসছে।
তিনজন আছে বোধহয়। ঠিক তখনি সোম বাবুর পাশ থেকে একজন লোক, পুরো শরীরে চাঁদর জড়ানো, তাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন।
সোম বাবু চমকে উঠেন। একি লোকটার গা থেকে এতো উত্তাপ কিভাবে আসছে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য মনে হচ্ছিলো সোম বাবু জ্বলন্ত আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
** তিন **
বুঝলে মি. রায় আর চারদিন পর চাকরী থেকে অবসর নেবো। পুলিশের চাকরী করে জীবনের এই কটা বছরে অনেক রকম অভিজ্ঞতা, স্মৃতির সম্মুখীন হয়েছি। জীবনে অনেক তাগড়াই তাগড়াই মস্তান দের ধরেছি।
কিন্তু একটা আপসোস থেকে গেলো। আমার আর সেঞ্চুরি করা হলোনা।
প্রায় ৯৯ খানা খুনীকে ধরেছি।
আর একজন – কে ধরতে পেলে পুরো সেঞ্চুরি হয়ে যেতো।
মি.রায় – চলুন, স্যার চা খেয়ে আসি।
সন্ধ্যাবেলা-তে বেশ শীতশীত পড়েছে। দুদিন বাদে আপনি আমাদের অফিস ছেড়ে চলে যাবেন। তার আগে চলুন আজ একটু জমিয়ে চা খেয়ে আসি খালপাড়ের সেই বাবুলের চায়ের দোকান দিয়ে।
ওকে মি.রায়..চলো।
** চার **
রবিবার ঘুরতে যাবার দিন।
ভালোই লাগছেরে গ্রাম-টা।
টিনা বললো।
রিমি – ভালো না লেগে যাবে কোথায়। আমার হবু বরের চয়েজ বলে কথা।
পেছন থেকে রিমিকে রিমির বয়ফ্রেন্ড জরিয়ে ধরে বললো। আরও কত জায়গাই নিয়ে যাবো। তার আগে একটু খেলা করি আসো।
এই ছাড়ো। টিনা দেখছে।
রিমির বয়ফ্রেন্ড – তুমি আমার আদর খাবে। আর ও খাবেনা তা বললে চলে নাকি। এই বলে রিমির বয়ফ্রেন্ড টিনার সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে দেয়। টিনা তখন চিৎকার করে। কিন্তু কেইবা শুনবে এই খালপাড়ে তাদের চিৎকার। চুপ কর শালী। তোর পরে আমার বহুদিন ধরে লোভ ছিলো। আজ বাগে পেয়েছি। এতো সহজে ছাড়ি কি করে??
হঠাৎ পেছন থেকে রিমির বয়ফ্রেন্ডের গলা টিপে ধরে টিনার উপর থেকে সরিয়ে নিয়ে আসে।
কে..কে কার এতো বড়ো সাহস।
রিমির বয়ফ্রেন্ড পেছনে ফিরে দেখে রাতুল ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।
তুই..তোকে তো আমি খুন করে ফেলেছিলাম। তুই কিভাবে বেঁচে গেলি।
রাতুল – আমার কি দোষ ছিলো। আমি তো কলেজে কারুর সাথে কথাই বলতাম না। নিজের মতন নিজে থাকি। কিন্তু তুই। আমি অনেক আগে থেকে তোকে চিনি। তুই এই গ্রামে এর আগে বহুবার এসেছিলিস ভিন্ন ভিন্ন মেয়ের সাথে। আমি রিমিকে দেখে বারবার এই একটা কথাই ভাবতাম। কোন-দিন তুই রিমির এইভাবে সর্বনাশ করবিনা তো।
কিন্তু আজ দেখি তুই টিনার সাথে জবরদস্তি করছিস। তোর কি শুধরাতে ইচ্ছে করেনা।
রিমির বয়ফ্রেন্ড – তোকে তো আমি মেরে ফেলেছিলাম। তুই বাঁচলি কিভাবে।
রাতুল – সে জানিনা। হয়তো প্রতিশোধের টানে ফিরে এসেছি। তোর মতন ছেলেকে তো ক্ষমা করা যায়না।
ওকে শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। দোহাই আপনি কোনো ভুল পদক্ষেপ নিতে যাবেন না।
মি.রায় – স্যার আপনার সেঞ্চুরি এবার কে আটকায়।
মি.রায় ও বড়োবাবু দুইজনে এগিয়ে এলো। রিমির বয়ফ্রেন্ডের কাছে।
মি.রায় – ওকে জেলে নিয়ে গিয়ে জামাই আদর দিলে সব ভালো করে বুঝে যাবে ও।
মি.রায় – হাতকড়া – টা পড়িয়ে দিলো রিমির বয়ফ্রেন্ডের হাতে।
আমার মায়ের থেকে আমাকে আলাদা করে দিলো ও। ঘরে অসুস্থ মা-কে এখন কে সামলাবে। তোর কি বিবেকে বাঁধলো না একবার আমাকে হত্যা করার আগে।
বললাম তো ওকে আজ আমি আর বড়োবাবু মিলে জামাই আদর দেবো। আর তুমি চিন্তা করোনা। আমরা ঠিক তোমার মায়ের সাহায্যর ব্যবস্থা করে দেবো।
চল..ওদিকে কোথায় যাচ্ছিস।
জেল তো ওদিকে।
বড়োবাবু ও মি.রায় সোজা থানার দিকে যেতে লাগলো। বড়োবাবুর সেঞ্চুরি হয়ে গেলো। লেখক তার পরের গল্পের আইডিয়া পেয়ে গেলো। রিমি ও টিনা লজ্জা,ক্ষোভ নিয়ে রাতুলের কাছে ক্ষমা চাইলো।
সব মোটামুটি শেষের পাতায়।
কিন্তু রাতুলের মা আর রাতুল কে ফিরে পেলোনা। তার কোল সারাজীবনের জন্য ফাঁকা হয়ে থাকলো।