রেল রহস্য

রেল রহস্য

রণজয় কে আমি প্রচণ্ড ভালোবাসি। আমাদের ভালোবাসার মাঝে যে আসবে তাকে সরিয়ে দেবো আমি। এই নিন এতে ৩০ হাজার আছে। লাগলে আরও দেবো আজরাতের মধ্যে মেয়েটাকে শেষ করতে হবে। এই বলে রিমি ভাড়া করা গুণ্ডাটার হাতে টাকা তুলে দিলো।

আবারো রিমি বললো – মনে থাকবে তো আমি যাকে সরানোর কথা বলছি তার নাম রুপা। সে রাত্রের শেষ ট্রেন-টা ধরে। বাড়ি ফেরে। ওকে যে ভাবে হোক আজ রাতের মধ্যে সরিয়ে ফেলতে হবে। আগের দিনের মতন যেন ভুল না করে অন্য কাউকে মার্ডার করে ফেলবেন না আবার।

ভাড়া করা গুণ্ডা – আপনি চিন্তা করবেননা নিশ্চিত হয়ে বাড়ি যান কালকের মধ্যে সু-খবর পেয়ে যাবেন।
রিমি চশমা-টা চোখে দিয়ে বেড়িয়ে পড়লো বাড়ির উদ্দেশ্য।

** দুই **

ইন্সপেক্টর সোম – আচ্ছা মি.সেন তোমার ওই গতমাসের ২০ তারিখের সুইসাইড এর কেস-টা মনে আছে।

মি.সেন – কোন-টা ওইযে তিনতলার ছাদ থেকে একটা মেয়ে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলো সেই কেস-টার কথা বলছেন তো? কি যেন নাম ওই মেয়েটার..হুম সুপর্ণা।

ইন্সপেক্টর সোম -হুম..হুম.. হুম..ওই কেস-টা।

মি.সেন – হ্যাঁ কি হয়েছে?

ইন্সপেক্টর সোম – না সেমন কিছুই নয় আমি গত কয়েক দিন ধরেই স্বপ্ন দেখছি ওটা সুইসাইড না মার্ডার। শুধু এটাই না সাথে আমি দেখছি একটা ট্রেন যাতে করে আমি তুমি, বেশ কয়েকটা গুণ্ডা আর একজন মেয়ে। আর সেইযে তিনতলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলো মেয়েটা সে ও ছিলো ওই ট্রেনে। মেয়েটা হেসে হেসে আমাকে বলছে আমি সুইসাইড করিনি আমাকে মার্ডার করা হয়েছে। আর একজন মেয়ে আছে যার উপর গুণ্ডা গুলো আক্রমণ করার চেষ্টা করছিলো। ব্যস। এর যে কি রহস্য আমি কিছুতেই সমাধান করতে পারছিনা। এই স্বপ্ন টা দেখেই কয়েকদিন ঘুম ভাঙছে আমার।

মি.সেন – বুঝেছি স্যার ও কিছু নয়। আসলে কয়েক দিন ধরে একনাগাড়ে কাজ করে চলেছেন তো এইজন্য এইরকম স্বপ্ন দেখছেন। চলুন লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে। আজ বাইরে দিয়ে খেয়ে আসি।

ইন্সপেক্টর সোম – না..না আমি একেবারে ভুল বলছি না। আমি ঠিক-ই বলছি।

মি.সেন – আরে স্যার ওসব পরে শুনবো আগে চলুন খেয়ে আসি। বিশাল খিদে পেয়ে গেছে বিশাল।

ইন্সপেক্টর সোম – হুম..তাই চলো।

** তিন **

গল্পের মুখ্য চরিত্র রুপা ও রণজয় একটু ঘুরতে বেড়িয়ে ছিলো। এখন আবার সিনেমা দেখতে যাবে। স্টেশন থেকে নেমেই রণজয় রুপাকে বললো – একটা টোটো দাকি?

রুপা – কোনো দরকার নেই। চলো হেটে হেটে যাই।

রণজয় – তুমি যা বলবে। দুইজনে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে চললো।

রুপা কলকাতার এক কলেজে পড়াশোনা করে। তার বাড়ি নদীয়া জেলার কোনো এক স্থানে। আজ কলেজে সেমন কোনো ক্লাস নেই। তাই ওরা দুইজনে একটু ঘুরতে বেড়িয়ে ছিলো এখন সিনেমা দেখতে যাবে।

এদিকে মি.সেন ও ইন্সপেক্টর সোম। হোটেল থেকে খেয়ে সবে বেড়িয়েছে। ওপাশ থেকে রুপা ও রণজয় আসছে। ঠিক এমন সময় একজন বয়স্ক করে ভদ্রলোক রুপাকে বলে উঠলো – মা..রে তুইতো খুব লক্ষি মেয়ে। এদিকে পড়াশোনা ও করিস আমার কাজও করিস।

রুপা – একটু অবাক হলেও মিষ্টি একটা হাসি দিলো।

ওই বয়স্ক করে ভদ্রলোক-টা আবারো বলে উঠলো – তুইতো রোজ রাতের শেষ রাণাঘাট লোকাল – টা ধরিস। তাইনা। আজ ওটা ধরিস না। তোর বিপদ আছে।

মি.সেন আমি তোমাকে যে স্বপ্ন টার কথা বলেছিলাম। ওই স্বপ্নের আরেকজন মেয়ে যাকে আমি চিনিনা। এই মেয়েটা আমার স্বপ্নে দেখা সেই মেয়েটার মতন পুরোপুরি অবিকল এক-ই দেখতে।

মি.সেন – একটা জোড়ে হেসে ওঠে। আর এদিক থেকে মি.সেন এর হাসি দেখার জন্য রুপা ও রণজয় রাস্তার এপারে দাঁড়িয়ে থাকা মি.সেন ও ইন্সপেক্টর এর দিকে একঝলক তাকালো। তারপর আবার ওই বয়স্ক ভদ্রলোকটার দিকে তাকালো। কিন্তু একি উনি কই গেলেন। ইন্সপেক্টর সোম ও অবাক হয়ে গেলেন। সত্যি তো ওরা যার সাথে কথা বলছিলেন তিনি কোথায়। এদিকে রাস্তা দিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো বাস আসেনি, অটো ও আসেনি। প্রাইভেট কার ও কয়েক – টা ছোটোহাতি পাশ করছে। আশেপাশে কোথায় বাড়িঘর নেই। ওদের ওইপাশে একটা মাঠ। তাহলে ওই ভদ্রলোক-টি গেলেন কোথায়।

রুপা ও রণজয় অবাকের সাথে আবারো রাস্তা ধরে চলা শুরু করলো।

ইন্সপেক্টর সোম – মি.সেন আজ রাতে আমাদের নাইট ডিউটি করতে হবে। তৈরী থেকো। আজ রাতে একটা মজাদার কিছু একটা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

মি.সেন – আপনি যখন বলছেন তখন নিশ্চয় মজাদার কিছুর সম্মুখীন হতে চলেছি আমরা।

** চার **

জি.আর.পি সুজয় – আজ রাতের শেষট্রেন টা-তে ডিউটি আছে। বুঝলে আকাশ।

জি.আর.পি আকাশ – কোয়াটার থেকে বেড়োবেন কখন। আমারো ওই এক-ই ট্রেনে ডিউটি আছে। একসাথে অফিসে যাবক্ষণ।

জি.আর.পি সুজয় – হ্যাঁ আজ আগেভাগেই বেড়োবো অফিসে কিছু কাজও আছে। ওগুলো মিটিয়ে তারপর ডিউটি।

জি.আর.পি আকাশ – আচ্ছা স্যার আমাকে ডাকবেন অবশ্যই আমি দুপুরের ঘুম-টা সেরে ফেলি। আজ আবার নাইট ডিউটি আছে।

জি.আর.পি সুজয় – হুম আমিও ঘুমাতে চললাম। সন্ধ্যাবেলাতে দেখা হবে।

** পাঁচ **

রাত তখন বারোটার কাছাকাছি। রুপা কাজ শেরে প্রতিদিন কার মতন রাতের শেষ ট্রেন-টা আরামে পেয়ে গেলো। উঠে পড়লো লেডিস কামরাতে। পুরো ফাঁকাই ছিলো। এদিকে ট্রেন ও ছেড়েছে। তবে প্রচণ্ড ধীর গতিতে।

ইন্সপেক্টর সোম ও তার সহকারী মি.সেন কে নিয়ে তৈরী ছিলেন। এমন সময় তারা দেখলেন বেশ কয়েকজন ওই লেডিস কামরা দৌঁড়ে উঠে গেলেন।

ইন্সপেক্টর সোম – মি. সেন তাড়াতাড়ি ভেতরে চলো তবে অন্যদিক দিয়ে যাতে ভেতরের লোকেদের মধ্যে কেউ বুঝতে না পারে আমরা ও ওই বগি-তে যাচ্ছি।

মি.সেন ও ইন্সপেক্টর সোম বগিতে উঠে পড়লেন। তারা দুইজনে ধীরেধীরে একেবারে বগির শেষপ্রান্তে দেখার চেষ্টা করলেন। তারা দেখলেন ওই লোকগুলো ওই মেয়েটার সাথে অসভ্য তামি করছে যেটা কিনা ধীরেধীরে একেবারে চরম আকার ধারণ করছিলো।

মি.সেন ও ইন্সপেক্টর সোম দুইজনেই বলে উঠলো। রেডী। চলো যাওয়া যাক। বন্ধুক টা বের করে যেই ওরা দুইজন উঠে দাঁড়ালো ঠিক তখনি। ট্রেনের সব দরজা, জানলা বন্ধ হয়ে গেলো। সাদা টিউব লাইট-টা বন্ধ হয়ে হলুদ লাইট-টা জ্বলে উঠলো।

এমন সময় ঠিক ওই বগির মাঝামাঝি একটা আবছা নারীমূর্তি ভেসে উঠলো। যা কিনা ধীরেধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠলো।

ওই নারীমূর্তি – টাকে দেখে ইন্সপেক্টর সোম ও মি.সেন দুইজনেই চমকে উঠলো। কারণ ওই মেয়েটা সেই ছিলো যে কিনা মাসখানেক আগে সুইসাইড করেছিলো।

ওই মেয়েটা ওই গুণ্ডা গুলোর সামনে গিয়ে রুপার হাত-টা ধরে বললো – আমার সাথে এদিকে আই।

এই বলে মেয়েটা রুপাকে ধরে দূরের একটা সীটে বসিয়ে দিলো। তারপর ওই চারজন গুণ্ডা গুলোর সামনে গিয়ে দুইজন কে সজোরে ঠ্যালা দিলো। আর বাকি দুইজন কে গলা ধরে টানতে টানতে ইন্সপেক্টর সোম ও মি.সেনের সামনে নিয়ে এলো।

তারপর বললো – স্যার। আমি সুইসাইড করিনি। এরা আমাকে তিন তলার ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে। এদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো আমার বান্ধবী রুপা-কে মারার। কিন্তু রুপার বদলে এরা আমাকেই ওই ছাদের উপর থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।

স্যার, রুপা কলকাতায় পড়াশোনা ও কাজ দুটোই করে। এইজন্য আমি যেই বাড়িতে ভাড়া থাকি সেই বাড়িতে ও বিশ্রাম করতে আসে। আমিই বলেছিলাম ওকে আমার সাথে থাকার জন্য।

কিন্তু এরা ওকে মার্ডার করতে এসেছিলো। তার বিনিময়ে আমাকে মেরে ফেলে এরা। স্যার এদের ছাড়বেন না। এদের একেবারে কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। এইবলে ওই নারীমূর্তি – টা অদৃশ্য হয়ে যায়।

এদিকে ট্রেন সবে স্টেশনে এসে থেমেছে। কোন স্টেশন এটা তা ঠিক মনে নেই। তবে জংশন ছিলো। মি.রায় ও ইন্সপেক্টর সোম ওই গুণ্ডা গুলো কে ট্রেন থেকে নামায়। রুপাও ট্রেন থেকে নামে। এদিকে লেডিস কামরা দিয়ে এতো জন পুরুষ-কে নামতে দেখে জি.আর.পি সুজয় ও আকাশ দৌঁড়ে আসে।

ইন্সপেক্টর সোম – ওই জি.আর.পি দের সবটা খুলে বলে।

সব শুনে জি.আর.পি সুজয় বলে – এদের এখন কি করবেন?

ইন্সপেক্টর সোম বলে –
ভেতরেও দুইজন আছে ওদের কে মি.সেন আনতে গেছে। আপনারা আপাতত একটা ফোনের ব্যবস্থা করে দিন। আমাদের দুইজনের কেউই ফোন আনিনি। আগে থানায় একটা ফোন করবো। বাকিটা কোর্ট বলবে এদের কি হবে।

কোর্টে ওই গুণ্ডাগুলো স্বীকার করে নেইযে রিমি-ই ওদের কাছে এসেছিলো টাকার লোভ দেখিয়ে রুপা-কে মার্ডার জন্য। কোর্ট যথাযথ করা ব্যাবস্থা নেয়।
রিমির জেল হয়। আর ওই গুণ্ডাগুলোর ফাঁসির সাজা ঘোষণা হয়।

আজ অনেকদিন পার হয়ে গেছে। রুপা ও রণজয় দুইজন দুইজনে বিয়ের সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছে। তবে রুপা ও রণজয়ের জীবনে তাদের প্রিয় বান্ধবী সুপর্ণা চিরতরে হারিয়ে গেছে। এই একটা খাদ গল্পে রয়েই গেলো।

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত