সবার ভিতর ভালোবাসা থাকাটা খুব জরুরী কিন্তু এতটা থাকা ভালো না যেমনটা ছিল আমাদের তাশরিফের । ও বলে রাখা দরকার তাশরিফ হলো ১৮ বছরের একজন মাদ্রাসায় পড়া ছাত্র। বরাবরই সে পড়াশুনায় মধ্যম । অবশ্য মানুষের সাথে তার ব্যবহার খুব ভালো…। এই সেদিনের কথা………………।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি ৮:৩০ বাজে। কিন্তু বাইরে গিয়ে দেখি অন্ধকার .।আসলে এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক, কারণ সময়টা ছিল বর্ষাকাল। মেঘে যেন পূরো আকাশটা ছেয়ে আছে…।যাই হোক আমি ভাবলাম একটু বৃষ্টি নামার আগে একটু ঘুরে আসি…।ব্যাপারটাকি বৃষ্টি নামলে তো আর বাইরে যেতে পারবো না। মাঝে মাঝে তো সাড়াদিন ঘরে শুয়ে থাকতে হয়। যাইহোক,বাইরে ঘুরতে গিয়ে দেখি তাশরিফ ও হাতে ছাতা নিয়ে বের হয়েছে।
আমাকে দেখে ও থেমে গেল । ও আমাকে বলল কিরে MTS যাবি আমার সাথে ?
আমি বললামঃ কোথায় যাবো?
ফুলবাগানের ওই দিকে (আমাদের বাড়ির পশ্চিম দিকের একটা বাগান)
আমিঃ এখন এই অসময় ঐ দিকে যাবি কেন?
আমার সাথে গেলেই বুঝতে পারবি কেন যাব।
আমিঃ ঠিক আছে চল তাহলে।
আমি ওর সাথে সাথে যেতে লাগলাম।আমরা দুজন খুব ভালো বন্ধু আমাদের বাড়ি পাশেই ওদের বাড়ি।আমরা দুজন একে অপরের ব্যপারে কথা বলতে বলতে বাগানে পৌছে গেলাম। ও আমাকে একটা গাছের কাছে নিয়ে গেল। আমাকে নিচে রেখে একলাফে একটা আম গাছে চরে বসলো । আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে অবাক করে দিয়ে ও একটা পাখির বাসার ওপর পলিথিন দিয়ে ছাদ বানিয়ে দিতে লাগলো।আমি বললাম আমাকে তুই এটা দেখানোর জন্য নিয়ে এসেছিস?
তাশরিফ বললঃ তুই কি বুঝবি ওদের কি কষ্ট ।কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি নামলে যে ওরা ভিজে যাবে তখন যে ওদের দুঃখ দেখবে কে?
আমিঃ তাই বলে তুই এতদূর এসে এই কাজ করবি? আমাদের বাড়িতেও তো ঘুঘু পাখির বাসা আছে।
ও বললঃ আসলে ওদের প্রতি এত ভালোবাসার ব্যাপারটা বিশেষ একটা ঘটনাকে ঈঙ্গিত করে।;;;;;;;;;;
‘এই তো সেদিন আমি একটা কাজের জন্য এদিকের মাঠে এসেছিলাম।আমি কাজ করতে ক্লান্ত হয়ে এই গাছের নিচে বিশ্রাম নিতে বসেছিলাম।হঠাৎ করে দেখি ওপর থেকে একটা ঘুঘুর ছানা নিচে পড়লো।উপরে তাকাতেই দেখি একটা কাঁক ঘুঘু পাখির বাসায় হাঁনা দিয়েছে।আমি তখন একটা ঢিল ছুরে কাঁকটাকে তাড়িয়ে দিলাম।তারপর ঘুঘু ছানাটাকে যথা স্থানে রেখে দিলাম.।মা ঘুঘুটার আচরণে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পেল।আমি যথারিতি বিশ্রাম শেষে কাজে ফিরলাম …।কাজ করে বাড়ি ফেরার সময় খেয়াল করলাম ঘুঘুপাখিটা আমাকে অনুশরণ করছে।বাড়ি ফেরার পথে আমি পড়লাম একটা মহা বিপদে।আমার সামনে বিশাল আকারের একটা গোখরা সাপ ফনা তুলে বসে আছে ।আমি ভাবছিলাম সাপটাকে মারার কথা কিন্তু আমি লাঠি খুজে পাচ্ছিলাম না।ইতস্থতা করতে করতে তখন বৃষ্টি নামলো।আমি আর সাপটাকে খুজে পেলাম না পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছিলো তখন পায়ের নিচে। আমি হঠাৎ করে একটু ব্যাথা অনুভব করলাম।নিচে তাকিয়ে দেখি সাপে কেটে দিয়েছে।আমি তারাতারি শিরা বন্ধ করার চেষ্টা করছিলাম ।কিন্তু দরি পাই কোথায়।দেখি উপর থেকে একটা পাটের দরি পড়লো তাকিয়ে দেখি ওই ঘুঘু পাখিটা বৃষ্টি ভিজেই কোথা থেকে যেন এটা নিয়ে এসেছে ।যাই হোক ওটা দিয়েই আমি পা বেধে বাড়ির দিকে ফিরলাম।অবশ্য ততটা টেনশন হচ্ছিল না কারণ রক্ত অনেকটাই বের হয়েছিল।তারপরেও ইনজেকশন নিলাম।আর আমি তখন এই পাখিটার কথা ভাবছিলাম যে,কিছু কিছু সময় পাখিও মানুষকে ঋণি করতে পারে।‘’
এই ঘটনার পর থেকেই আমি এখানে মাঝে মাঝে আসি আর কিছু শস্য দানা বাসায় রেখে দেই…।পাখিটাও আমাকে চেনে।
আমি ঘটনাটা শোনার পর পাখিটাকে দেখার ইচ্ছে হলো তাই গাছে উঠলাম, গাছে উঠে দেখলাম ওখানে দুটো বাচ্চা পাখি আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম মা ঘুঘু কোথায়?
ও বললঃ এখানেই তো ও আমাকে ঋণি করেছে রে। আমাকে দরি ফেলে দেওয়ার পর ,আমি যখন ওটা বাধছিলা তখন পাখিটা একটা ছোট গাছের ওপর বসেছিল।হঠাৎ করেই একটা সাপ পাখিটা ধরে নিয়ে যায়। আমি পাখিটাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু এখানে অনেক জঙ্গল থাকায় আর সম্ভব হলো না।কথাটা শেষ করতে না করতেই আমার চোখে পানি চলে এল তাকিয়ে দেখি ওর চোখেও পানি …।আমি তখন ওকে সান্তনা দিতে দিতে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম।কিছু কিছুটা পথ ফিরতে না ফিরতেই সাপটাকে একটা খোলা যায়গায় চোখে পড়লো।এবার সাপের ওপর আমার ও রাগ হলো, আমি একটা মেহগনির ডাল ভেঙ্গে সাপটাকে জোরে একটা আঘাত করলাম।কিন্তু অবাক করা ব্যাপার সাপটাকে আঘাত করার পর আর কোথাও খুজে পেলাম না।জায়গাটাও খুব পরিস্কার ছিল সাপটাতো পালানোর কথা না।তারপরেও অনেক খোজা খুজির পর অগত্যা বাড়ির দিকে হাটতে লাগলাম……………………………………………সাপটাকে আমার অজানা একটা ইতিহাস বলেই মনে হোলও।
