স্লাভিক কল্পকাহিনী: রুজাল্কা ভডিনয় ও বাবা ইয়াগা

স্লাভিক কল্পকাহিনী: রুজাল্কা ভডিনয় ও বাবা ইয়াগা

রুজাল্কা

স্লাভিক মেথলজির কল্পকাহিনী অনুসারে রুজাল্কা হচ্ছে নারীর আত্মা। রাশিয়া,চেক রিপাবলিক,বুলগেরিয়া, ইউক্রেন এবং বেলারুশের কিছু কিছু জায়গায় এ মেথলজিতে বিশ্বাসী। প্রাক-খ্রিষ্টীয় ধর্মের সময় এই রুজাল্কার কাহিনী প্রথম শুনা যায় স্লাভিক পেগানদের কাছে। তখন ধারণা করা হত,রুজাল্কা হচ্ছে অনেকটা মৎস্যকন্যার অনুরূপ। পরবর্তীতে জানা যায়,রুজাল্কা মৎস্যকন্যার ন্যায় পানিতে বসবাস করে। তবে তার দেহের আকৃতি নারীর মত। তার পা আছে। দেখতে ফ্যাঁকাসে সাদা রঙয়ের। মাথায় লম্বা খয়েরী চুল।

স্লাভিক-কল্পকাহিনী

স্লাভিক পেগান ট্র্যাডিশন মতে, রুজাল্কাকে উর্বরতার প্রতীক হিসেবে ধরা হত। তাদের বসবাস ছিল লেকে, নদীতে এবং নদীর তীরবর্তী এলাকায়। সেখানে তারা শান্তিতে বসবাস করত। বসবাসের স্থানে মানুষের চলাচল পছন্দ করত না। বছরে একবার তারা গভীর জল থেকে বেরিয়ে আসত। বন এবং জমির ফসলকে আর্দ্রতা প্রদান করত। তাই রুজাল্কাদের উর্বরতার প্রতীক হিসেবে ধরা হত। একারণে তারা স্লাভিক পেগানদের দ্বারা বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু ১৯ শতকের দিকে এই ধারণা বদলে যেতে থাকে। রুজাল্কারা খুবই ভয়ংকর এবং বিপজ্জনক বলে নতুন ধারণার উদ্ভব ঘটে। রুজাল্কা এক দূষিত আত্মা বলে বিবেচনা করা হতে থাকে।

স্লাভিক-কল্পকাহিনী

ধারণা করা হয় যে, সামাজিকভাবে অবহেলিত কিংবা কোন অত্যাচারের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করা নারীরা রুজাল্কায় পরিণত হয়ে থাকে। তারপর তারা প্রতিশোধ হিসেবে অন্যায়কারীদের শাস্তি দিয়ে থাকে।

ইউক্রেনে তাদের চারিত্রিক বর্ণনা রাশিয়া এবং বেলারুশের তুলনায় কোমল বলে মনে হয়েছে। বর্তমানে রাশিয়া, ইউক্রেন, রোমানিয়া, বেলারুশের বিভিন্ন জায়গায় রুজাল্কা সপ্তাহ পালন করে। রুজাল্কা সপ্তাহ জুন মাসে পালন করা হয়। ধারণা করা হয়, তারা সেই সময়ে গভীর জল থেকে উঠে এসে উইলো নামক একটি গাছে বসবাস করে। সেই এলাকার মানুষেরা সেই গাছের ধারে বিভিন্ন উপহার প্রদান করতেন তাদের জন্য।

 

স্লাভিক-কল্পকাহিনী

ভডিনয়

পূর্ব স্ল্যাভিক মেথলজি অনুসারে ভডিনয় ছিল এক প্রকার প্রাণী। এটি পুকুর, নদীনালা,খালবিলে বসবাস করত। ভডিনয় দেখতে ছিল অনেকটা ব্যাঙের মতো। তার ছিল সবুজ লম্বা চুল, পা পর্যন্ত লম্বা সবুজ দাঁড়ি এবং  মাছের ন্যায় কালো রঙয়ের গোলাকৃতি শরীর ।

স্লাভিক-কল্পকাহিনী

তাকে জলের অপদেবতা বলে মনে করা হত। ভডিনয় সাধারণত পানির নিচে নিজেকে লুকিয়ে রাখত। তার মাথার উপরে সুন্দর ফুল ফুটিয়ে এর নিচে লুকিয়ে থাকত। গ্রামের সুন্দর মেয়েদেরকে ফুলের লোভ দেখিয়ে আকৃষ্ট করত। যখন কেউ ফুলটি আনতে যেত, তখন ভডিনয় তাকে পানির নিচে টেনে নিয়ে যেত।

স্লাভিক-কল্পকাহিনী

ধারণা করা হয়, গ্রামবাসীকে কিডন্যাপ করে ভডিনয় হয়ত তাকে মেরে ফেলতো। নয়তো তাকে পানির নিচে তাদের রাজ্যে নিয়ে যেত। এরপর তাকে বিয়ে করে বন্দি বানিয়ে রাখত। গ্রামের জেলেরা মাছ ধরতে নদীতে যাওয়ার সময় তার জন্য তামাক নিয়ে যেত। যার বিনিময়ে ভডিনয় জেলে কে ভাল মাছ দিতেন।

বাবা ইয়াগা

বাবা ইয়াগা স্লাভিক মেথলজির অন্যতম বিখ্যাত কাহিনী। যখন আমরা কোন ডায়নির গল্প শুনি খুব স্বভাবতঃ আমাদের সামনে ভেসে উঠে একটি বুড়ো মহিলা যার পরনে কালো লম্বা টুপি, হাতে বড় ঝাড়ু এবং তার সাথে একটি কালো বিড়াল। সে তার বড় ঝাড়ুর উপর বসে উড়ে বেড়াচ্ছে। আমাদের কল্পনার ডায়েনির সাথে পুরোপুরি না মিললেও খানিকটা মিল আছে তার। তার ছিল বিশাল লম্বা একটা নাক। স্টিলের মত ধারালো দাঁত। চিকন চিকন পা। বাবা ইয়াগার ঝাড়ু ছিল, তবে সে একটি বড় স্টিলের পাতিলের ভেতরে চড়ে উড়ে বেড়াত।

স্লাভিক-কল্পকাহিনী

বাবা ইয়াগা জঙ্গলে বাস করতেন। সেই জঙ্গলে তার একটি ঘর ছিল। ঘরের নিচে মুরগীর মত দুটি পা ছিল। ঘরটি তার মন মতো চলাচল করতে পারত। ঘরের চারিপাশে মানুষের হাড় এবং কঙ্গালের বেড়া দেয়া থাকত। যেন কেউ সেখানে না ঢুকে।

স্লাভিক-কল্পকাহিনী

তার শিকার মূলত শিশুরা ছিল বলে জানা গেলেও সে বিভিন্ন অপরিচিত লোকজনদেরও শিকার করতেন। তার জঙ্গলে কেউ হারিয়ে গেলে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। কেউ কেউ যদি ভাগ্যক্রমে জান নিয়ে ফিরেও যেত তবে তারা এই বিষয়ে কাউকে কিছু বলতেন না। ধারণা করা হয়, সে তার জঙ্গলের পরিদর্শকদের জিজ্ঞেস করতেন, সে কি নিজের ইচ্ছায় এসেছে নাকি তাকে কেউ পাঠিয়েছে? ধারণা করা হত, প্রতিটি প্রশ্ন তার বয়স এক বছর করে বাড়িয়ে দিত। তবে সে নীল গোলাপের তৈরি জাদুর মিশ্রণ খেয়ে বয়স ফিরিয়ে আনতে পারতেন।

রাশিয়ার শিশুদের বাবা ইয়াগার ভয় দেখনো হত। এই বলে যে, সে যদি খারাপ আচরণ করে তবে তাকে বাবা ইয়াগা এসে খেয়ে ফেলবে। আবার এটাও বলা হত, তুমি যদি ভাল আচরণ কর তবে বাবা ইয়াগা বিপদে তোমাকে সাহায্য করবে। স্লাভিক ইতিহাসে বাবা ইয়াগাকে তার জ্ঞান এবং গাইডেন্সের জন্য স্মরণ করা হত।

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত