পৃথিবীর সপ্তাশ্চার্যের একটি হচ্ছে নীল নদের তীরে অবস্থিত মিশরীয় পিরামিড। পিরামিড কে ঘিরে সেই আদিকাল থেকে নানা রহস্য রয়েছে। আজকের বিজ্ঞানের যুগেও একে নিয়ে পর্যটক, গণিতবিদ এবং প্রত্নতাত্ত্বিকদের মধ্যে বেশ উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়।
পিরামিড নির্মাণের কারণ
পিরামিড হচ্ছে রাজা এবং তাদের পত্নীদের সমাধিসৌধ। ফারাও রাজাদের শাসনামলে এই পিরামিডের উৎপত্তি। এই পর্যন্ত মিশরে প্রায় ১৩৮ টি পিরামিড আবিষ্কৃত হয়েছে। মিশরের গিজা শহরে সবচেয়ে বেশি পিরামিডের অবস্থান।
ফারাওদের রাজত্বকালে ধারণা করা হত মৃত্যুর পর তার আত্মা জীবিত থাকে। সেই আত্মাকে ভাল রাখার প্রচেষ্টায় মূলত পিরামিডের উদ্ভব। মিশরীয়রা আরো বিশ্বাস করত, মৃত্যুর পর মরদেহ ভাল থাকলে আত্মা ভাল থাকে। তাই তারা মরদেহ সংরক্ষণের জন্য মমি তৈরি করে। মরদেহের সাথে আত্মার জন্য পিরামিডের ভেতরে বিভিন্ন খাবার, ধন দৌলত ইত্যাদি দিয়ে দেয়া হত। একটি আজব ঘটনা হচ্ছে, অনেক দাস দাসীরেও হত্যা করা হত। যেন পরকালে সেবার অভাব না হয়।
পিরামিড হচ্ছে রাজা এবং তাদের পত্নীদের সমাধিসৌধ। ফারাও রাজাদের শাসনামলে এই পিরামিডের উৎপত্তি
প্রথম দিকে মিশরীয় রাজবংশের মানুষদের সমাধি দেয়া হত বেঞ্চের কাঠামো নির্মাণ করে। যাকে বলা হত মাস্তাবা। মাস্তাবাগুলো বেশ উঁচু বানানো সম্ভব হত না। ২৭৮০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে রাজা জোসারের পিরামিডের স্থপতি ইমহোটেপ প্রথম ৬টি মাস্তাবা দিয়ে একটি পিরামিড নির্মাণ করেন মাস্তাবাগুলো একটি আরেকটির উপর রেখে নির্মিত হয় পিরামিড। যাকে বলা হত স্টেপ পিরামিড। যথাক্রমে আকারে বড় থেকে ছোট করে সাজানো হয় পিরামিডটি। যার অবস্থান মেমফিসের উত্তর-পশ্চিমে সাক্কারায়।
প্রথম দিকের স্টেপ পিরামিড গুলো অমসৃণ হত
পরবর্তীতে নির্মিত পিরামিডগুলোর মতোই এ পিরামিডটিতে রাজার সমাধি কক্ষ সহ অন্যান্য কয়েকটি কক্ষ ছিল। প্রথম দিকের স্টেপ পিরামিড গুলো অমসৃণ হত। আনুমানিক ২৬৮০ থেকে ২৫৬০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে চতুর্থ রাজা স্নেফুর সময় থেকে নির্মাণ করা শুরু হল প্রকৃত আকারের পিরামিড।
গিজার গ্রেট পিরামিড
মিশরের রাজধানী কায়রোর অদূরে অবস্থিত গিজা নগরী। গিজায় অবস্থিত স্নেফুর পুত্র খুফুর পিরামিড সবচেয়ে বৃহত্তম। তাই এটি গিজার গ্রেট পিরামিড নামেও পরিচিত। ২৫৬০ থেকে ২৫৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে এটি নির্মিত হয়। যার প্রকৃত উচ্চতা ৪৮১ ফুট হলেও বর্তমান উচ্চতা ৪৫৫ ফুট। টানা ২০ বছর সময় লাগে এটি নির্মাণে। আনুমানিক ১ লাখ শ্রমিক এটি তৈরিতে কাজ করেছিল।
পিরামিডটি তৈরি করা হয়েছিল বিশাল বিশাল পাথর খন্ড দিয়ে। পাথর খন্ডের এক একটির ওজন ছিল প্রায় ৬০ টন, আর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ থেকে ৪০ ফুটের মত। এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল দূর দুরান্তের পাহাড় থেকে। পাথরের সাথে পাথর জোড়া দিয়ে পিরামিড তৈরি হয়েছিল। পাথর খণ্ডগুলো বেশির ভাগই ছিল লাইমস্টোনের। এই লাইমস্টোনগুলো আনা হত তুরা অঞ্চল থেকে। নীল নদের পূর্ব তীর থেকে জলপথে নিয়ে আসা হত এগুলো।
পাথর খণ্ডগুলো বেশির ভাগই ছিল লাইমস্টোনের
গবেষকদের কাছে আজ ও এর নির্মাণ পদ্ধতি এক বিস্ময়ের ব্যাপার। তিন কক্ষ বিশিষ্ট এই পিরামিডের একটি বেইসমেন্ট, আরেকটি রাজা ও রানীর সমাধি কক্ষ।
এ পিরামিডটি বেশ চিত্রায়িত ছিল। পিরামিডের গায়ের লেখন থেকে মিশরীয় ধর্মের সম্পর্কে জানা যায়। গিজায় আরো দু’টি বড় পিরামিডের মধ্যে রয়েছে ফারাও খুফুর পুত্র খাফ্রে এবং তার পুত্র মেনকাউরের পিরামিড। এছাড়াও ফারাও খাফ্রের সময়কালে গিজায় স্ফিংস নামক এক পিরামিড নির্মাণ করা হয়। যার আকৃতি সিংহের মত হলেও মাথা মানুষের মত।
এছাড়াও ফারাও খাফ্রের সময়কালে গিজায় স্ফিংস নামক এক পিরামিড নির্মাণ করা হয়। যার আকৃতি সিংহের মত হলেও মাথা মানুষের মত।
গিজা নগরীতে পিরামিডের পাশাপাশি পাওয়া গিয়েছ বিভিন্ন ধর্মমন্দির, চ্যাপেল, অন্যান্য সমাধি সৌধ এবং বিশাল বিশাল দেয়ালের ধ্বংসাবশেষ। অনুমান করা হয় এসকল স্থাপনা পিরামিডে সমাধি দেয়ার পূর্বে ব্যবহৃত হত। ধারণা করা হয় যে, রাজাকে নৌকা করে নীল নদ দিয়ে নিয়ে আসা হত মন্দিরে। সেখানে তার মমি বানানো হত। এরপর পিরামিডে তাকে সমাধি দেয়া হত।
অনুমান করা হয় এসকল স্থাপনা পিরামিডে সমাধি দেয়ার পূর্বে ব্যবহৃত হত
ডাকাতদের উতপাতের জন্য সার্বক্ষণিক পাহাড়া দিত দেহরক্ষীরা। তবুও বেশি লাভ হয় নি। অনেক লাইমস্টোনসহ মূল্যবান সম্পদ চুরি হয়ে গেছে। নানা চোরাই রাস্তারও সন্ধান পাওয়া যায়।