রহস্যময় বোতল

রহস্যময় বোতল
গতকাল রাত প্রায় দেড়টার সময় আমার গার্লফ্রেন্ড তিথি আমাকে ফোন দিয়ে ফট করে বলে, আশিক তোমার সাথে আর রিলেশন রাখবো না, ব্রেকাপ! আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন? সে উত্তরে বললো, তোমার বন্ধু রনি আমাকে প্রপোজ করেছে। আমি হ্যা বলে দিয়েছি। কথাটা শোনার পর মাথাটা কেমন জানি একটা চক্কোর দিয়ে উঠলো। মাথা থেকে গরমের হলকা বের হতে লাগলো। ব্রেন স্টোক করছিনাতো? ঠিক তখুনি ঠুস করে পাশে থাকা পানির বোতলের মুখ খুলে গেলো। বোতলটা হাতে নিয়ে মাথায় অল্পকরে পানি দিলাম। একটু পানি খাওয়ার কিছুক্ষণ পর মনে হলো, যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। ঐরকম সুযোগ সন্ধানী গার্লফ্রেন্ড না থাকাই ভালো। আমি কিছুদিন থেকে লক্ষ্য করছি আমার পানির বোতলটা মোটেও কোন স্বাভাবিক বোতল না। যখুনি আমার পানি খাওয়ার প্রয়োজন হয় অথবা যখন আমার পানি খাওয়া উচিত তখনি মৃদু শব্দ করে বোতলের মুখ খুলে যায়। অদ্ভুত ব্যাপার না!
সকালবেলা মাত্র ঘুম থেকে উঠেছি। কিছু বুঝে উঠার আগেই ঠাস করে প্রচন্ড একটা চড় খেলাম। বাবা সিগারেটের ফেলে দেওয়া অংশ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে বাকি রইলোনা। কাল রাতে সিগারেট খেয়ে বারান্দাতে ফেলেছি। বাবা সেটা বুঝতে পেরেছে। কিছুক্ষণ রাগি চোখে তাকিয়ে বাবা বের হয়ে গেলো। এদিকে বাবার থাপ্পড়ে গালের একপাশ জ্বালা করতে লাগলো। আবার তখুনি ঠুস শব্দ করে বোতলের মুখ খুলে গেলো। বোতল থেকে হালকা পানি বের করে মুখে দিয়ে দুইটা কুলি করে রুমের জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দিলাম। কুলির পানিটা একদম গিয়ে দারোয়ানের মাথায় পড়লো। কোন জানোয়ারের বাচ্চা রে! দারোয়ান গালি দিয়ে উপরে তাকানোর আগেই মাথা সরিয়ে নিলাম। একদম ঠিক হয়েছে ব্যাটা বের হওয়ার সময় আমাকে সালাম দেয় না। কত্তবড়ো সাহস আমাকে সম্মান দেয় না।
বিকেলে রনি ফোন করলো। রনি জানতো না তিথি আমার গার্লফ্রেন্ড। তিথিও কাউকে আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে বলতে দেয় নি। রনি ফোন দিয়ে বললো, দোস্ত হেব্বি একটা মেয়ে পটাইছি। সেইরকম কিউট! আমি বললাম, তো কি হইসে? আমারে ফোন দিছিস কেন?রনি বেশ আহত হয়ে বললো, এমনে বলিস কেন? ভাবলাম তোরে সাথে নিয়ে দেখা করতে যাবো। বুঝিস না এতো সুন্দর মেয়ে একা যেতে ভয় লাগে। আমি কইলাম, এই ব্যাপার। আগে বলবি না। আমি এখুনি রেডি হয়ে আসতেছি। রনির থেকে ঠিকানা নিয়ে ঘর থেকে বের হলাম। বের হওয়ার সময় কি মনে করে ব্যাগে পানির বোতলটা নিয়ে নিলাম। রেস্টুরেন্ট এ যেতেই দেখি রনি আর তিথি সামনা সামনি বসে আছে। তাদের টেবিলের কাছে গিয়ে দাড়ালাম। তিথি আমাকে দেখতে পেয়েই রাগি চোখে তাকালো। কিছু বলবে তার আগেই আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম। কারন তখুনি আমার ব্যাগের সাইড পকেটে ঠুস করে পানির বোতলের মুখ খুলে গিয়েছিলো।
আমার ততদিনে দৃড় বিশ্বাস হয়ে গিয়েছিলো হঠাৎ বোতলের মুখ খুলে যাওয়ার অর্থ হলো আমার এখন পানি খেতে হবে। পানির বোতলটা হাত দিয়ে বের করতে যাবো তখুনি হাত ফসকে পানির বোতলটা টেবিলে গিয়ে পড়লো। এদিকে বোতলের মুখ খোলা ছিলো, টেবিলের ধাক্কায় বোতল থেকে অনেকখানি পানি ছিটে তিথির মুখে পড়লো। ঘটনা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হওয়াতে তিথি আমাকে কিছু বলার সুযোগও পেলো না। পানি শুধু মুখে না তিথির জামাতেও পড়লো। তিথি কিছু না বলে রেগে উঠে হনহন করে রেস্টুরেন্ট এর বাথরুমের দিকে গেলো। আর এদিকে রনি পিঠে ছাপ্পড় মেরে বললো, তুই একটা কাজ করলি! এতো কষ্টে এতো সুন্দর একটা মেয়েকে পটাইছি। আর তুই এসেই কি ফালতু কাজটা করলি।
আমি ঐখানে হাবার মতো দাঁড়িয়ে আছি। পরিস্থিতি এমন না আমি কিছু বলতে পারছি না নড়তে পারছি। কিছুক্ষণ পর মোটামুটি চেহারার একটা মেয়ে ঠিক তিথির মতো পোশাশে আমাদের সামনে এসে বসলো। যখন মেয়েটা বললো, আশিক তুমি একদম ঠিক কাজ করোনি। কথা শোনার সাথে সাথে বুঝতে পারলাম এই মেয়েটাই তিথি।
যাকে দেখে আমি ক্রাশ খেয়ে প্রেমে পড়েছি, যাকে দেখে আমার বন্ধু ক্রাশ খেয়ে প্রপোজ করেছে এই মেয়ে এইভাবে মেকাপ দিয়ে জরিনা থেকে এঞ্জেল জেরিন হয়ে আমাদের বোকা বানিয়েছে। আমি রনির মুখের দিকে তাকালাম। ওর অবস্থা ছিলো সাপের মুখের সামনে থাকা ব্যাঙের মতো। কোনরকম জানে বাঁচলে হয়। তখুনি বোতলের কথা মনে পড়লো। কেন বোতল সাথে এনেছিলাম ব্যাপারটা ততক্ষনে বুঝে ফেলেছি। ঐ ঘটনার পর যখনি রনির সাথে দেখা হয় রনি আমার পানির বোতল থেকে দুই ঢোক পানি খায়। আমার দিকে তাকিয়ে একটা হ্যাবলা মার্কা হাসি দিয়ে চলে যায়। যার অর্থ, সেদিনকার ঘটনার জন্য ধন্যবাদ দোস্ত। তোর বোতল আসলেই অদ্ভুত।
ঐদিন কি হয়েছিলো ভাবছেন? তেমন কিছু হয়নি। রনি কিছুক্ষন হ্যাবলার মতো তিথির দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়। আমার হাত ধরে রেস্টুরেন্ট থেকে বের করে নিয়ে আসে। বের হওয়ার পর ছোট্ট করে আমাকে ধন্যবাদ দোস্ত বলে বাসায় চলে যায়। এদিকে তিথি বের হওয়ার আগে আমিও ঐখান থেকে কেটে পড়ি। তারপর তিথি গালি দেওয়ার জন্যও কোনদিন ফোন করেনি। আর আমার অদ্ভুত বোতল! এখন সবসময় বোতলটা সাথে নিয়ে ঘুরি বলা তো যায় না কখন বোতলটা কোন দৈব ঘটনা ঘটিয়ে আমার উপকার করবে।
গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত