সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে শোনা যাচ্ছে যে, বেশকিছু রাজনৈতিক নেতা খুন হয়ে যাচ্ছে। এই যে খুনগুলি হচ্ছে তা একটা সিকোয়েন্স মেনে হচ্ছে। খুনের দিন মাস বছর সমস্ত কিছুই একটা নির্দিষ্ট সিরিজ অনুযায়ী ঘটছে। আর এই খুন গুলো তারাই হচ্ছে যারা গর্হিত কোনো অপরাধের সাথে যুক্ত। রাজনৈতিক নেতাদের অধিকাংশই কোনো না কোনো অপরাধের সাথে যুক্ত।
এদের মধ্যে কেউ কাউন্সিলর কেউ আবার রাষ্ট্র সচিব। খুব কমই নেতার দেখা মেলে যাদের স্বচ্ছ অতীত। খুনগুলো যে ভীষণ নৃশংসভাবে করা হচ্ছে তা নয়। আর কোনো সিরিয়াল কিলারের যে কাজ তাও নয়। সিরিয়াল কিলাররা যে অভিনব পদ্ধতিতে খুন করে তাতে একটা ছন্দ থাকে। কিন্তু এই খুনগুলো এক্কেবারে এলোপাথারি রকমের। যাকে যেমনভাবে পেরেছে মেরেছে। এখন এই খুনগুলো যে একই ব্যক্তির কারুকার্য তা হলফ করে বলা যায়। কারণ খুনের আগে প্রত্যেকেই বেনামী সিমকার্ড থেকে এস এম এস মারফত খুনের হুমকি পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত এরকম সাতটা কেস ঘটে গেছে।
দীপ্ত বাড়িতে বসে খবরের কাগজ পড়ছিল। এমন সময় ফ্ল্যাটের কলিং বেলটা বেজে উঠল। দরজা খুলে দেখল জয় এসেছে। এই জয় ছেলেটা আজ বছর দুয়েক হল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোতে জয়েন করেছে। দীপ্ত’র জুনিয়র। বয়স বেশী না এই ছাব্বিশ সাতাশ বছর হবে। গায়ের রং শ্যামলা, লম্বা গড়ন জিম করা পেটানো শরীর। কিন্তু কথাবার্তা একেবার শান্তশিষ্ট ভদ্রলোকদের মতো। দীপ্তকে ভীষণ সম্মান করে। দাদা বলে ডাকে। দীপ্ত নিজেই বারণ করেছে ‘স্যার’ বলে ডাকতে। বলেছে—‘ওসব ইংরাজি ফরম্যালিটি পোষাবে না ভাই আমার।’ জয় ঢুকতেই সে বলল—“বসো জয়, চা খাবে?” সে বলল—“হলে মন্দ হয় না দীপ্ত দা।” দীপ্ত কিচেনে গেল কড়া করে চা বানাতে। ভেতর থেকে জয়কে বলল—“আদা দিয়ে করি কি বলো? বেশ ভালো লাগবে।”
—“দীপ্তদা আর কতদিন নিজের হাতে চা বানাবেন। এবার তো বিয়েথা করুন।” দীপ্ত হেসে বলল—“জীবনটা নরক করে ফেলতে বলছ হে!”
—“কি সব বলছেন। নরক কেন হবে? এত মানুষ যে বিয়ে করছে তাদের সবার জীবন কি নরক হয়ে যাচ্ছে!”
—“ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখো কটা পাবলিক সুখে আছে!”
—“তা হলেও বিয়ে করাটা প্রয়োজন।” দীপ্ত উত্তর না দিয়ে বলল—“বিস্কুট খাবে।”
—“না দীপ্তদা থাক।”
দীপ্ত বিস্কু্টের একখানা কৌটো কিচেন থেকে এনে তার সামনে রেখে বলল—“খাও, খাও। সকালে বেকারির থেকে আনিয়ে রেখেছি। এই বিস্কুটটা খেয়ে দেখো।” জয় একখানা বিস্কুট তুলে খেতে খেতে বলল—“আচ্ছা দীপ্তদা একটা খবর শুনেছেন? ইদানীং এক এক করে পার্টি’র বড় বড় নেতাগুলোকে মার্ডার করে দেওয়া হচ্ছে!” দীপ্ত চায়ের ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকে বলল—“শুনেছি। আর এই জন্যই তোমায় ডেকেছি।”
—“মানে?”
দীপ্ত বলল—“মানেটা আর কিছুই না। আজ সাত সকালে ডেপুটি ইন্টেলিজেন্স অফিসার কল করেছিলেন। উনি বললেন যে করে হোক এর তদন্ত হওয়া দরকার। অনেক দিন থেকেই পুলিশের হাতে কেসটা ছিল। কিন্তু কোনো লাভের লাভ হচ্ছে না। সেন্ট্রাল থেকে অর্ডার আছে। তাই একজন স্পেশাল অফিসারকে নিয়োগ করতে চাইছে।”
—“তবে যে শুনলাম তিন চারজনকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে।” মুছকি হেসে সে বলল—“হ্যাঁ, চারটে ফুটো মস্তান আর দুটো মার্ডারারকে তুলে নিলেই কেস সর্ট আউট হয় না জয়। মস্তানগুলোকে কোর্টে চালান করছে। আর তারই মধ্যে আরও একজন খুন হয়ে যাচ্ছে। এভাবে হবে না। এটা কোনো যে সে ক্রিমিনাল না।” এমন সময় দীপ্ত’র মোবাইলটা বেজে উঠল। কলটা রিসিভ করে খানিকক্ষণ কথা চলল। ফোনটা কেটে যেতেই জয়কে বলল—“চলো তৈরী হয়ে নাও বেরোতে হবে।”
—“কে কল করেছিল দীপ্তদা?”
—“ডেপুটি।”
—“কিছু হল নাকি?”
দীপ্ত বলল—“আবার ওই এস এম এস! চন্দননগরের বামপন্থী কমিউনিস্ট নেতা দুলাল মাহাতোর ফোনে এসেছে। অফিসারের ইনস্ট্রাকশন আছে যে করে হোক ওনার প্রোটেকশনের ব্যবস্থা করতে হবে।”
—“আমরা প্রোটেকশন দেব?”
সে বলল—“হুম। ক্রাইম করবে ওরা। আর প্রোটেকশন দেব আমরা। পুলিস প্রোটেকশন অবশ্য আছে। যাইহোক অফিস থেকে যখন কেসটা আমায় দিয়েছে তখন তো দেখতেই হচ্ছে। তুমি তো রেডি হয়েই আছো, আমি বরং শার্টটা পাল্টে নিই।” এই বলে দীপ্ত একখানা আকাশী রংয়ের শার্ট পরে মোবাইল, মানিব্যাগ আর পিস্তলখানা সঙ্গে নিল। জয়কে বলল
—“তোমার ডায়রীটা এনেছো তো?”
—“ব্যাগে আছে।”
—“চলো যাওয়া যাক।”
এইবলে ফ্ল্যাটে তালা দিয়ে তারা বেরিয়ে পড়ল। চন্দননগরে একটু ভেতর দিক করে দুলাল মাহাতোর নিবাস। একেবারে নতুন তিনতলা বাড়ি। বাড়ির নিচে পার্টি অফিস। দীপ্তরা পৌঁছোতেই দেখল পার্টি অফিসের সামনে পুলিশে পুলিশ। দীপ্তদের ঢুকতে দেখেই একজন কনস্টেবেল জিজ্ঞেস করল—“কি চাই?” সে পকেট থেকে আইকার্ডটা বার করে দেখাতে ভেতরে ঢোকার অনুমতি পেল। দেখল পার্টি অফিসে তিন চারজন পার্টির লোক চেয়ারে বসে আছে। দুলালবাবুর চেয়ারটা খালি। দীপ্ত বলল—“আচ্ছা ওনার সাথে দেখা করা যাবে?” ওদের মধ্যে একজন বলল—“আপনি কে?”
—“সে কথায় আপনার কাজ নেই। উনি কোথায় জানেন কি?” এরপর একজন পুলিশ অফিসারকে ডেকে দীপ্ত বলল—“উনি কোথায় আছেন?”
—“দোতলায় চলে যান স্যার।”
—“ধন্যবাদ।”
সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় দীপ্ত লক্ষ করল প্রচুর টাকা খরচ করে নেতা মহাশয় ডেকরেশন করেছেন। সিঁড়ির একপাশে চওড়া উঠে গেছে রঙিন মাছের সৌখিন অ্যাকোরিয়াম। সিঁড়ির দামী মার্বেলগুলো এক্কেবারে চকচক করছে। দোতলায় যেতেই সে দেখল প্রায় চল্লিশ বাই চল্লিশ ফুট বিশাল বড় হলঘর। হলঘরের চারিদিকে সৌখিন কারুকার্য করা ওয়াল ডেকরেশন। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বানানো। জয় বলল—“ভদ্রলোকের সখ আছে বলতে হবে।”
—“থাকবে নাই বা কেন। সবই তো পাবলিকের টাকায় ফুটানি।”
—“সে তো বটেই।”
দীপ্ত দেখল চেয়ারে বসে এক ভদ্রলোক কি যেন লেখালিখি করছেন। ওদের দেখেই বললেন—“আপনারা কি পুলিশের লোক?”
—“নাঃ ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর।”
—“ও আচ্ছা। আসুন, বসুন।”
তারপর একজন বেয়ারাকে ডেকে খাবার নিয়ে আসতে বললেন। দীপ্ত বুঝতে পারলো ইনিই শ্রীযুক্ত দুলাল মাহাতো। কিছুক্ষণ পর একটা বড় থালায় ভর্তি পাকা হিমসাগরের ফালি নিয়ে হাজির হল সে। তিনি বললেন—“খান।” দীপ্ত জয়কে বলল—“খাচ্ছি। তার আগে ডাইরীটা বার করো জয়। কাজের কথাটা হয়ে যাক।” এরপর দুলালবাবুকে বলল
—“এস এম এস টা কবে এসেছে?” —“কাল সকালে।”
—“পুলিশ পোস্টিং কি কাল থেকেই?”
—“হুম।”
—“এস এম এস টা দেখাতে পারবেন?”
—“এক মিনিট দাঁড়ান।” এই বলে তিনি মোবাইল ঘেঁটে এস এম এস টা বার করে দেখালেন। তাতে লেখা— “Your time is over. Date of death- 25 th june 2019.”
যে নম্বর থেকে এস এম এস টা এসেছে সেটা বাইরের নম্বর না। অর্থাৎ সিমকার্ডটা এখানকারই। দীপ্ত ওনাকে বললেন
—“আপনার কেসটার দ্বায়িত্ব যে পুলিশ অফিসারের হাতে ওনাকে একবার ডাকাবার ব্যবস্থা করতে পারবেন?”
—“হুম এক্ষুণি ডাকছি।”
এই বলে তিনি পুলিশ অফিসারকে কল করলেন। দীপ্ত থালা থেকে একখানা আম মুখে দিয়ে বলল—“দারুণ টেস্ট। জয় খেয়ে দেখো ভীষণ ভালো খেতে।” দুলালবাবু বলল—“আপনার কি মনে হয়? এ ধরনের কাজ কে বা কারা করতে পারে?”
—“এটা যে কোন আতি পাতি লোকের কাজ না সেটা বুঝতেই পারছেন। এখন কে বা কারা করছে সেটা বলাটা ভীষণ শক্ত। তবে আপনার আগে অনেকগুলো একই ঘটনা ঘটে গেছে।” তিনি বললেন—“আচ্ছা কোনো সাইকো কিলারের কাজ নয় তো?” দীপ্ত কিছুক্ষণ ভেবে বলল—“নাঃ কিলার সাইকো নয়। মানসিকভাবে সুস্থ এবং ঠান্ডা মাথায় খুনগুলো করেছে।”
—“কি করে বলছেন?” দীপ্ত যুক্তি দিয়ে বলল—“বলছি তার কারণটা হল সাইকো কিলারের খুনের কোনো সক্রিয় মোটিভ হয় না। আর ভেবে দেখুন যতজন খুন হয়েছেন ততজনই রাজনৈতিক নেতা। আচ্ছা এমন তো হতে পারে, খুনের মোটিভ একটাই সামনে ইলেকশন। আর নমিনেশন পেপার জমা দেবার আগেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া। কেন না শুধু আপনাদের পার্টির না বিরোধীপক্ষের অনেকেই ওর লিস্টে ছিল।”
—“কিন্তু তাদের যে একই ব্যক্তি খুন করেছে তার কি প্রমাণ? এটা তো রাজনৈতিক ইস্যুও হতে পারে।” দীপ্ত বলল—“না হতে পারে না। প্রমাণ তো আছে। এস এম এস। সাইবার ডিপার্টমেন্টের কাছে এটাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ। কিন্তু সমস্যা একটাই সাইবার ডিপার্টমেন্টের কাছে সিমকার্ডগুলোর ব্যাপারে তেমন কোনো তথ্য নেই।” কথা বলতে বলতে পুলিশ অফিসার এসে উপস্থিত হলেন। দুলালবাবু বললেন—“উনিই এই কেসটার তদন্ত করছেন।” দীপ্ত পরিচয় দিয়ে বলল—“আমি দীপ্ত বোস। আর ও হল আমার অ্যাসিস্টান্ট জয় বাগচি।” অফিসার বললেন
—“আচ্ছা, বলুন কি জানতে চান?” দীপ্ত বলল—“এই যে খুনগুলো হয়েছে তার সমস্ত ফাইল গুলো কি অ্যাসেম্বল করে পাওয়া যাবে?”
—“তাহলে বিভিন্ন থানা থেকে ওগুলো কালেক্ট করতে হবে। আচ্ছা আমায় বিকেল পর্যন্ত সময় দিন। আমি সমস্তটা আপনাকে জোগাড় করে দিচ্ছি।” দীপ্ত বলল—“আচ্ছা সাইবার ডিপার্টমেন্ট থেকে সিমগুলোর ব্যাপারে কিছু জানা গেল? কার নামে কিম্বা কোথাকার সিম?”
—“হুম স্যার, সিমগুলো এখানকারই কিন্তু কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। সব কটা বেনামী। তবে আশ্চর্য এটাই যে একটা সিমকার্ডকে দুবার ব্যবহার করা হয়নি, সেটা থেকে ফোন কল হয়নি। শুধুমাত্র এস এম এস হয়েছে। আর সেটা একবারই।” দীপ্ত জয়কে বলল—“এটা নোট করে আন্ডারলাইন করে রাখো।” জয় বলল—“আচ্ছা এই যে এস এম এস গুলো যদি অ্যাসেম্বল করে পাওয়া যেত। তাহলে সুবিধা হত।”অফিসার বললেন—“দেখুন সেটা অনেকটা সময় সাপেক্ষ হবে। তবে কেস ফাইলে আপনি এস এম এস গুলোর ডিটেলস পেয়ে যাবেন।” দীপ্ত বলল—“ধন্যবাদ। আমার মোবাইল নাম আর ই মেল আইডিটা আপনাকে লিখে দিচ্ছি। এতে সমস্ত ডকুমেন্ট কালেক্ট করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেল করে দেবেন।” এই বলে দীপ্ত একটা কাগজে সমস্ত কিছু লিখে দিল। অফিসার চলে গেলে দীপ্ত’র মোবাইলটা বেজে উঠল। ডেপুটির কল। রিসিভ করতেই ওপার থেকে বললেন—“তুমি তোমার মতো করে ইনভেস্টিগেট করো। প্রোটেকশনের ব্যাপারটা পুলিশের ওপর ছেড়ে দাও।”
—“ও কে স্যার।”
—“রিপোর্টগুলো মেল কোরো।” বলে ফোনটা কেটে উনি দিলেন।
দীপ্ত দুলালবাবুকে বলল—“আপনার প্রোটেকশনটা পুলিশের ওপর দেওয়া হয়েছে। চিন্তা নেই সমস্ত তদন্তের ভার আমার হাতেই রইল। আজ তবে উঠি।” এই বলে দীপ্ত বেরিয়ে এল। তারপর জয়কে বলল—“এই কটা দিন বাড়িতে অনুমতি নিয়ে আমার ফ্ল্যাটে থেকে যাও।”
—“সে ঠিক আছে। কিন্তু সকালের জিম কি হবে?”
—“কেন সকালে আমার বাড়ি থেকে জিমে যাবে। আর না হলে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করে নেবে। এসব নিয়ে ভেবো না।” জয় কি যেন ভেবে বলল—“এত টাইট পুলিশ প্রোটেকশনের মধ্যে দিয়েও কি খুন করা সম্ভব?” দীপ্ত হেসে বলল
—“হুম সম্ভব। তুমি দেখছ বাইরে প্রোটেকশন অথচ ভেতরে খুন হয়ে গেল। একি সিকিউরিটি! এর চেয়ে ঢের টাইট সিকিউরিটি ভেঙে খুন করে সিরিয়াল কিলাররা। আমরা সবাই ওনাকে প্রোটেকশন দিচ্ছি অথচ দেখা গেল খুনটা অন্য কোথাও হয়ে গেল। তাহলে পুলিশ কোথায় যাবে?কতদিন পাহারা দেবে!”
জয় বলল—“তাহলে এখন উপায়?” দীপ্ত বলল—“বিকেল পর্যন্ত ওয়েট করো। কেস ফাইলের কপিগুলো আসুক। আসল গল্পটা ওখান থেকেই শুরু হবে।” বাড়িতে ফিরে দীপ্ত পুরোনো খবরের কাগজগুলো বাঙ্কার থেকে টেনে নামিয়ে একটা জায়গায় জড়ো করে রাখল। তারপর দুজনে একটা একটা করে খবরের কাগজ ভালো করে চেক করতে শুরু করল। এইভাবে দরকারী কাগজগুলোকে একটা জায়গায় আলাদা করে রাখল। তারপর জয়কে বলল
—“ইন্টারনেটে দেখো তো খুনগুলোর ব্যাপারে কি কি তথ্য পাওয়া যায়। আমি ততক্ষণ নন্দদাকে ভাত বসাতে বলি। ডিমের ঝোল আর ভাত। কি বলো।” এই বলে সে নন্দদাকে ডাকতে নিচে চলে। কেউ না থাকলে চায়ের দোকানে গিয়ে আড্ডা মারে সে। পাড়ার সমস্ত খবরাখবর নন্দ’র কাছে পাওয়া যায়।
চায়ের দোকান থেকে নন্দকে নিয়ে ফিরে আসতেই জয় বলল—“দীপ্তদা ইন্টারনেটে একটা জিনিস দেখে অবাক লাগল। খুনগুলো প্রত্যেকটাই আলাদা আলাদা জেলায় হয়েছে। মানে একটা দার্জিলিং এ তো অন্যটা বীরভূমে। কলকাতায় এখনও কোন ঘটনা ঘটেনি।” দীপ্ত বলল—“কোন কোন জেলায় হয়েছে তার লিস্ট বার করো, একজ্যাক্ট লোকাশন বার করো।” জয় বলল—“আমি লিখে রেখেছি দীপ্তদা। বাঁকুড়া, বীরভূম,দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার, দক্ষিণ দিনাজপুর,কোচবিহার আর হাওড়া এই সাতটা জেলায় হয়েছে।” দীপ্ত বলল—“আচ্ছা দাঁড়াও। এখন এই কেসটা কোথায় হবে—চন্দননগরে। মানে হুগলীতে। তাহলে রহস্যটা এখান থেকেই শুরু। আচ্ছা নেটে এস এম এস এর ব্যাপারে কিছু পেলে?” সে বলল—“না।” দীপ্ত একখানা সিগারেট জ্বালিয়ে বলল—“এই কেসটায় সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট কি জানো?”
—“কি?”
—“সিকোয়েন্স।”
দুপুরের দিকে চন্দননগর থানার ওসি’র কল এল। ওপার থেকে তিনি বললেন—“স্যার বিভিন্ন ডিস্ট্রিক্টের লোকাল থানা থেকে টোটাল সাতখানা মেল এসেছে। আর এই সাতখানা ই-মেল আপনার এই কেস সংক্রান্ত। আমি সাতটা পি ডি ফাইল আপনাকে মেল করে দিচ্ছি।
—“থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। আর হ্যাঁ কটা দিন আপনারা দুলালবাবুর বাড়িতে কড়া নিরাপত্তা রাখুন। সেন্ট্রালের অর্ডার বুঝতেই তো পারছেন। রাখছি।” মোবাইলটা রেখে দীপ্ত ল্যাপটপ খুলে সাতটা কেসের পি ডি এফ এক এক ওপেন করে দেখা শুরু করল। প্রথম খুনটা হয়েছে 30th Sept 2018 এ আলিপুরদুয়ারে। যে ভদ্রলোক খুন হয়েছেন ওনার নাম তিমির বিশ্বাস। একসময় আলিপুরদুয়ারের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। কিন্তু এখন তার কোনো ক্ষমতাই নেই। দীপ্ত’র কপালে ভাঁজ পড়ল।
জয় বলল—“আচ্ছা দীপ্তদা এনার তো ইলেকশনে দাঁড়ানোর কথাই ছিল না। ইলেকশনের অনেক আগে এনাকে খুন করা হয়েছে। আর খুনটা করা হয়েছে শ্বাসরোধ করে।” দীপ্ত বলল—“হুম। আচ্ছা পরেরটা দেখি।” পরের খুনটা হয়েছে 28th Oct 2018 এ। এটা হয়েছে বাঁকুড়ায়। যিনি খুন হয়েছেন তিনি ছিলেন বাঁকুড়া সোনামুখী সাব ডিভিশনের একজন বর্ষীয়ান নেতা নাম অখিলেশ প্রামাণিক। যিনি একসময় ওখানকার দাপুটে লোক ছিলেন। ওনাকে গলায় দড়ি দিয়ে পাখার সাথে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরের খুনটা হয়েছে 26th Nov 2018 এ বীরভূমে। ভদ্রলোকের নাম—যতীন নিয়োগী। সাঁইথিয়ার কোনো এক ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। এবারে দলের হয়ে দাঁড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাকে বিষ খাইয়ে খুন করা হয়।
এর পরের খুনটা হয়েছে 24th Dec 2018 এ কোচবিহারে। যিনি খুন হন তিনি মহিলা। কোচবিহারের একজন জনপ্রিয় দলনেত্রী। এবারের ইলেকশনে নমিনেশন পেপার জমা দেবার কথা ছিল। একটা বিষয় দেখে দীপ্ত অবাক হল। জয়কে বলল—“দ্যাখো জয়, জানুয়ারী-ফেব্রয়ারীতে কোনো এই ধরণের খুনের ঘটনা নেই। আবার মার্চ থেকে শুরু।” সে বলল—“এই সময়টা হয়তো খুনি গা ঢাকা দিয়ে ছিল।” দীপ্ত বলল—“আচ্ছা পরেরটা দেখা যাক।” পরের খুনটা হয়েছে 31th March 2019 এ দার্জিলিং এর পুলবাজার ব্লকের একজন পঞ্চায়েত প্রধান। ভদ্রলোককে পাহাড় থেকে ঠেলে ফেলা দেওয়া হয়। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার এটাই যে এনার লাশটাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুলিশ সুইসাইড বলেই চালিয়ে দিত। শুধু এস এম এস এর জন্য এটা খুন বলেই নথিভুক্ত হয়েছে। এর পরেরটা হয়েছে 29th April 2019 এ দক্ষিণ দিনাজপুরে। বর্ষীয়ান প্রবীন নেতা খুন। মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
পরের খুনটা রিসেন্ট হয়েছে 27th May 2019 এ। খুনের স্থান হাওড়া শিবপুর এলাকা। একজন কাউন্সিলর খুন হয়েছেন। ভদ্রলোককে বিষ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। জয় বলল—“আচ্ছা দীপ্তদা এই খুনগুলো এরকম খাপছাড়াভাবে কেন করেছে?” দীপ্ত এবার একখানা সিগারেট ধরালো। তারপর তাতে একটা দীর্ঘটান দিয়ে বলল—“নাঃ কোনো কিছু খাপছাড়া নয়। এটাতে নিশ্চয় কিছু ব্যাপার লুকিয়ে আছে। যেটা থেকে মোটামুটি একটা আইডিয়া করা যেতে পারে। কিন্তু পাজেলটা উদ্ধার না করলে কিস্যু হবে না।” জয় বলল—“সাতটা এরকম খাপছাড়া খুনের মধ্যে কি এমন পাজেল থাকতে পারে? আচ্ছা ধরুন যদি খুনগুলো প্রতিমাসে হচ্ছে ধরে নিই। জানুয়ারী ফেব্রুয়ারিরটা কোনভাবে পুলিশ ট্রেস করতে পারেনি।” দীপ্ত বলল—“ তাহলে একটা সমস্যা আছে। মনে করে দেখো খুন হচ্ছে রাজনৈতিক নেতা কোনো আম পাবলিক না। সুতরাং এদের খুনের খবর চাপা থাকে না।” জয় বলল—“আচ্ছা খুনি কি প্রত্যেক জেলায় একটা করে খুন করতে চাইছে?”
—“তাতে লাভ?”
—“সাইকো যদি হয়।”
—“আচ্ছা জয় কোন সাইকো কিলারকে দেখেছ যে বেছে বেছে পলিটিক্যাল লিডারদের মার্ডার করে?এরকম হয় না।”
এমন সময় দীপ্ত মোবাইলটা বেজে উঠল। দুলালবাবুর ফোন, ওপার থেকে তিনি বললেন—“হ্যালো শুনছেন আমি দুলাল মাহাতো বলছি—”
—“বলুন।”
—“স্যার সরকারের নির্দেশে পুলিশ প্রোটেকশন তুলে নেওয়া হচ্ছে। কিছু একটা করুন।”
—“ঠিক আছে আমি হায়ার অথরিটিকে জানাচ্ছি যাতে নিদেনপক্ষে গোটা পাঁচেক পুলিশ আপনার বাড়ির সামনে পাহারায় রাখা হয়।”
—“থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।”
দীপ্ত সঙ্গে সঙ্গে ডেপুটিকে ফোন করে বিষয়টা জানাতে যাবে,এমনসময় তিনি বললেন—“হ্যালো, দীপ্ত, একজন অন্য এলাকার লোককে হঠাৎ দুলাল মাহাতোর বাড়ির আশেপাশে ঘুরতে দেখা গেছে। ভদ্রলোকের পকেট থেকে বে আইনি পিস্তল পাওয়া গেছে। পুলিস সন্দেহবশত তুলে নিয়ে গেছে। তুমি থানায় গিয়ে কেসটা ইনভেস্টিগেট করো।”
—“ওকে স্যার” বলতে উনি ফোন কেটে দিলেন। দীপ্তরা সঙ্গে সঙ্গে উঠে চন্দননগর থানায় গিয়ে হাজির হল। সেখানে যেতেই দেখল একজন চ্যাংরা গোছের ছেলেকে পুলিশ অ্যারেস্ট করেছে। দীপ্ত থানার ওসিকে বলল—“আমি একবার ওকে আলাদাভাবে কিছু প্রশ্ন করতে করতে চাই।” তিনি বললেন—“হুম, করুন। কিন্তু ও মুখ খোলেনি।”
—“আচ্ছা দেখছি।”
এরপর জয়কে নিয়ে লক আপে ঢুকল। দীপ্ত ছেলেটাকে ভালো করে দেখল। অল্প বয়স, রোগা পটকা চেহারা। দীপ্ত’র প্রথম প্রশ্ন—“বে আইনি পিস্তল কোথায় পেলে?” কোনো জবাব নেই। দীপ্ত দেখল সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না। বল—“যে কেসে ফেঁসেছ তাতে ফাঁসি কেউ আটকাতে পারবে না। টোটাল সাতটা মার্ডার। এখন তুমি যে মার্ডারগুলো করোনি এটা সিওর। তাই বলছি বলো বে আইনি পিস্তল কেন রেখেছিলে? সত্যিটা বললে কয়েক মাসের জেল আর জরিমানা। ভালো উকিল ধরলে বেল পেয়ে যাবে। কিন্তু মিথ্যে বললে কারোর বাপের সাধ্য নেই বাঁচাবে। এবার তোমার ইচ্ছে।” সে এতক্ষণে মুখ খুলল—“স্যার, আমি হাতকাটা দিলীপের হয়ে কাজ করি। দাদা ওনার বাড়িতে নজর রাখতে বলেছিল। কেউ নাকি খুনের হুমকি দিয়েছে। আর দেখুন ঝুটমুট ফেঁসে গেলাম।”
—“বুঝেছি।”
দীপ্ত বেরিয়ে এল। তারপর ওসিকে বলল—“ছেলেটাকে খুনের চার্জ করবেন না। ছিঁচকে মস্তান। পুলিশ প্রোটেকশন তুলে দিচ্ছেন বলে ভয়ে দুলালবাবু ওকে রেখেছিলেন পাহারা দিতে। আর এদের কাছে বে আইনি অস্ত্র থাকবেই।”
ওসি বললেন—“সে কি । সত্যিই স্যার এই সমস্ত নেতা মন্ত্রীদের জন্য টেকা দায় হয়ে যাচ্ছে। আপনিই বলুন না পুলিশের কি এদের প্রোটেকশন দেওয়া ছাড়া আর কাজ নেই!”
—“হুম সে তো আছেই। আচ্ছা এই খুনগুলোর মোটিভ কিছু জানা যাচ্ছে?”
—“না স্যার।”
—“আজ 23rd june। যাইহোক পরশুদিন ওনার বাড়িতে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখবেন। কারণ এস এম এস অনুযায়ী ঐ দিনই—বুঝতেই পারছেন।”
—“ওকে স্যার।”
—“ঠিক আছে আজ তবে উঠি।”
এই বলে দীপ্ত বেরিয়ে এল। জয় বলল—“তাহলে এই খুনগুলো কেমনভাবে হচ্ছে? মাথায় আসছে না। এত জটিল কেস। উফফ্।” দীপ্ত হেসে বলল—“যত জটিল তত মজা।” দীপ্ত বাড়িতে ফিরে জয়কে বলল—“বুঝলে এই সাতখানা খুনের কোনো না কোনো কানেকশন আছে। আচ্ছা সাতটা কেসের পি ডি এফ এর প্রিন্ট আউট বার করে পরপর সাজাও।”
—“ঠিক আছে দীপ্তদা।”
এই বলে জয় প্রতিটা কেসের কপির প্রিন্ট নিল। তারপর এক এক করে বিছানার ওপর সাজিয়ে রাখল। দীপ্ত একটা সিগারেট জ্বালিয়ে অনেকক্ষণ প্রিন্ট আউটগুলোকে ভালো করে দেখল। তারপর বলল—“এর মধ্যে কমন ফ্যাক্টর কি?”
—“কি?”
—“প্রথমত, সবাই রাজনৈতিক নেতা। কিন্তু সকলের পদমর্যাদা এক না। কোনো ঘটনা এর সাথে জড়িত।
এটা রাজনৈতিক হতে পারে অথবা অন্য কিছু। দ্বিতীয়ত, একই জেলায় দুটো খুন হয় নি। তৃতীয়ত, সেপ্টম্বরে আলিপুরদুয়ার তো অক্টোবরে বাঁকুড়া ফলে পুলিশের চোখে সহজেই ধুলো দিয়েছে খুনী। চার নম্বর, একটা বিশেষ ব্যাপার খেয়াল করেছ কি? এদের সব কটা নেতা কোরাপ্টেড। আর সকলেই নিজের এলাকায় এক সময় পাওয়ারফুল ছিল। পাঁচ নম্বর, এদের কিন্তু সুযোগ বুঝে খুন করা হয়েছে এমনটা নয়। তিন চার দিন আগে থেকে এস এম এস এ খুনের হুমকি দিয়ে তবেই খুন করা হয়েছে। এখন কথা হচ্ছে কেন খুনগুলো করা হল। আর এমন এমন ভাবে করা হচ্ছে যার সাথে ফরেনসিক রিপোর্ট কিম্বা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখে কাউকে ঠিকঠাক ভাবে সাসপেক্ট করা যাচ্ছে না।” এমন সময় জয় বলল—“আচ্ছা দীপ্তদা এটা তো সিরিয়াল কিলারও হতে পারে। আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়
—সমস্তটা সিরিয়াল কিলারের মতো করে যদি মিলিয়ে দেখা হয়।” প্রবলেমগুলো দেখে সমস্তটা পাজেলের মতো মনে হচ্ছে দীপ্ত’র এমন সময় ওসির কল এল। তিনি বললেন—“হ্যালো স্যার, দুলাল মাহাতোকে বাড়িতে পাওয়া যাচ্ছে না।” দীপ্ত চমকে উঠে বলল—“কি বলছেন কি?” ওসি বললেন—“তিনতলার ঠাকুরঘরে পুজো করতে গিয়েছিলেন। তার পর থেকেই উনি মিসিং।” দীপ্ত বলল—“ঠিক আছে, রাখুন। আমি যাচ্ছি।” এই বলে জয়কে নিয়ে ঘন্টাখানেকের মধ্যে চন্দননগরে দুলাল মাহাতোর বাড়িতে গিয়ে হাজির হল দীপ্ত। বাইরে পুলিশের ভ্যান দাঁড়িয়ে। একজন কনস্টেবলকে সরাসরি দীপ্ত নিজের পরিচয় দিয়ে জিজ্ঞেস করল—“আচ্ছা কাকে কাকে ভেতরে ঢুকতে দিয়েছিলেন?”
সে বলল—“স্যার মিডিয়ার লোক আর দু চারজন পার্টির লোক ছাড়া আর কেউ তো ভেতরে ঢোকেনি। তাও ওনার অনুমতি নিয়ে যেতে দিয়েছি। আর পার্টির লোকেরা লোকাল।” দীপ্ত আর কিছু জিজ্ঞাসা না করে ভেতরে ঢুকল। দুলালবাবুর বাড়িতে ওনার স্ত্রী আর দুই মেয়ে আর কয়েকজন চাকর-বাকর ছাড়া আর কেউ নেই।দুলাল মাহাতোর বাড়িটা ভালো করে ঘুরে দেখে নিল দীপ্ত। তিনতলায় গিয়ে দেখল বাড়ির ছাদ থেকে নিচে নামার একখানা সিঁড়ি রয়েছে যেটা পিছনের দিকে অন্য একটা লেনে গিয়ে মিশেছে। তবে সেদিকে পুলিশ পোস্টিং মোতায়েন করা আছে। অর্থাৎ বাইরে থেকে ঢুকলেও বেরোনোর রাস্তা নেই। দীপ্ত জয়কে বলল—“ভালো করে ঘরগুলোকে সার্চ করে দেখো যদি কোনো এভিডেন্স পাও।” তারপর ওনার স্ত্রীকে বলল—“একটু কো অপারেট করুন ম্যাডাম। প্লিজ আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিন।” তিনি বললেন—“বলুন।”
—“ওনাকে নিখোঁজ হবার আগে লাস্ট কটায় দেখেছেন?”
—“সকালের দিকে। আচ্ছা আপনার কি মনে হয় কেন ওনাকে টার্গেট করা হল?”
—“হয়তো কোনো বড়সড় কোরাপসনের সাথে জড়িত ছিলেন।”
তিনি বললেন—“কি যা তা বলছেন!” দীপ্ত বলল—“দেখুন শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। আচ্ছা ওনার ব্যাপারে আপনি কি জানেন? সত্যি কথা বলবেন।” তিনি বললেন—“দেখুন উনি রাজনীতির লোক সব সত্যি আমার বলাটাও উচিত নয়। এমন প্রচুর পার্সোনাল ব্যাপার আছে যা বললে হয়তো আমাদের নিজেদের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।”
—“বেশ আপনি যতটা পারেন কো অপারেট করুন। এখন বলুন তো ওনার এমন কোনো অতীত আছে যেটা বড় কোন ক্রাইমের সাথে যুক্ত।” তিনি বললেন—“একটা নেতা দেখান তো যার ক্রাইম নেই!” দীপ্ত বলল—“কেন ডঃ বিধান চন্দ্র রায়, এ পি জে আব্দুল কালাম এদের কি কোনো ক্রাইম রেকর্ড ছিল? দেখুন আপনি সত্যিটা বললে আপনারই মঙ্গল।” তিনি বললেন—“উনি আমায় সব কথা বলতেন না।” দীপ্ত বলল—“বুঝেছি। আপনি গোপন করতে চাইছেন। যাইহোক নমস্কার আমি চলি। তবে এটুকু বলে রাখি সত্যিটা আমি ঠিকই খুঁজে বার করে নেব। ” এই বলে সে নিচে চলে এল। জয় বলল—“আচ্ছা যাবার সময় একবার ওনার সেক্রেটারির সাথে দেখা করে গেলে কিছু জানা যেত।”
—“কারেক্ট।”
দুলাল মাহাতো’র সেক্রেটারী বিজন দত্ত। ধুতি পাঞ্জাবী পরা ভদ্রলোক। দীপ্ত যেতেই উনি বললেন—“বসুন স্যার। বলুন কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?” দীপ্ত বলল—“আচ্ছা বলতে পারেন ওনার চরিত্র ঠিক কেমন ছিল?”
—“বাইরে থেকে খারাপ না। তবে বুঝতেই পারছেন নেতা মানুষ। ওই সব ব্যাপার তো একটু থাকবেই।” দীপ্ত ভ্রু কুঁচকে বলল—“বিশেষ কেউ?” তিনি বললেন—“এতটা কনফিডেন্সিয়াল কথা আমার বলাটা ঠিক হবে কি?” দীপ্ত বলল—“বললে ওনারই ভালো। অ্যাটলিস্ট প্রাণে বাঁচতে পারেন।” তিনি বললেন—“শ্রাবণী। আসল নাম বলতে পারবনা স্যার।” দীপ্ত বলল—“কোনো নম্বর আছে?”
তিনি বললেন—“না স্যার। তবে কলকাতার বি কে পাল অ্যাভিনিউতে ওর নিজস্ব ফ্ল্যাট আছে। স্যার প্রায়শই ওখানে যেতেন। আমাকেও মাঝেমধ্যে যেতে হত। স্যার পাঠাতেন চেকবুক দিয়ে। ফ্ল্যাটের অ্যাড্রেস আছে।” এই বলে একটা কাগজে উনি অ্যাড্রেসটা লিখে দিলেন। দীপ্ত ওটা নিয়ে যত্ন করে পকেটে রাখল। তারপর ওখান থেকে বেরিয়ে জয়কে বলল—“তুমি আমার ফ্ল্যাটে গিয়ে কেসটা স্টাডি করো। দেখো কোনো ক্লু পাও কিনা। আমি ততক্ষণ শ্রাবণীর খোঁজ করে আসি।” বি কে পাল অ্যাভিনিউ-এর ঠিকানাটায় এসে উপস্থিত হল দীপ্ত। কলিংবেল দিতেই একজন মাঝবয়সী ভদ্রমহিলা দরজা খুললেন। বছর পঁয়তাল্লিশ বয়স। ফর্সা, গ্ল্যামারাস। পরনে একটা নীল সাদার সিন্থটিক নাইটড্রেস। বললেন
—“কি ব্যাপার?”
—“কিছু কথা ছিল। আপনার নাম কি শ্রাবণী?””
—“না।”
দীপ্ত জানে সত্যিকারের নাম নয় বলে স্বীকার করছে না। এবার সে একটু ঘুরিয়ে বলল—“চন্দননগরের বিজনবাবু পাঠালেন।”
—“আসুন। ভেতরে আসুন।”
—“দুলালবাবুর সাথে আপনার সম্পর্ক কতদিনের?” ভদ্রমহিলা বললেন—“সে সব কথা আপনাকে কেন বলব? বিজনবাবু কি জন্য পাঠালেন সেটা বলুন।”
—“ দুলালবাবুকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। আপনি কি জানেন উনি আজ সকাল থেকে নিখোঁজ! আর খুব সম্ভবত আপনার ফ্ল্যাটেই গা ঢাকা দিয়ে আছেন। ফোনটা সুইচ অফ।” তিনি বললেন—“ভুল করছেন, আমি করে জানবো? তাছাড়া আপনি কে বলুন তো?” দীপ্ত বলল—“গোয়েন্দা বিভাগের লোক।” তিনি কেমন যেন ভয় পেয়ে গেলেন। দীপ্ত একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসল। তারপর ওনাকে সরাসরি বলল
—“আপনার সাথে ওনার কতদিনের সম্পর্ক?” তিনি বললেন—“বেশীদিনের না।” দীপ্ত বলল—“যদি বলি দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। ওনার অনেক কোরাপসন আপনি জানেন। বলুন।”
—“কি সব বলছেন! আমি কি করে জানব?”
—“দেখুন মিথ্যে বলে লাভ হবে না। দুলালবাবু তো মারা পড়বেন তার সাথে আপনিও যে সেফ থাকবেন এমনটা কিন্তু না।” শ্রাবণী দেবী চুপ করে রইল। দীপ্ত বুঝল কিছুতেই চট করে সত্যিটা বলবেন না। সে ঠান্ডা মাথায় বলল—“খবরে নিশ্চয়ই দেখেছেন। এখনও পর্যন্ত মোট সাতখানা খুন হয়ে গেছে। আট নম্বরটা কিন্তু দুলালবাবু হতে চলেছেন। এখন উনি খুন হলে পুলিশ কিন্তু আপনাকে জেরা করবে। তাই বলছি ভালোয় ভালোয় বলুন।” ভদ্রমহিলা মুখ খুললেন। বললেন—“উনি আমার ক্লায়েন্ট ছিলেন। ব্যস এর চেয়ে বেশী কিছু না।” দীপ্ত বলল
—“আপনার এখানে শেষবারের মতো কবে এসেছিলেন?”
—“গত সপ্তাহে।”
—“উনি এমন কোন বড়সড় কোরাপসনের সাথে জড়িত ছিলেন বলুন তো?”
—“আপনারা গোয়েন্দার লোক, আপনাদের জানার কথা। আমি কি করে জানব?”
দীপ্ত বলল—“বেশ তাহলে বলবেন না। আচ্ছা আপনার আসল নাম তো গায়েত্রী সামন্ত, বাড়ি নদীয়ার রানাঘাট। আজ থেকে বছর কুড়ি আগে স্বামীকে খুন করে পালিয়ে আসেন। এই দুলালবাবুই তখন গোটা ঘটনাটা সুইসাইড বলে চালিয়ে দিলেন। আর এখন ওনার এতবড় বিপদে আপনি স্বার্থপরের মতো মুখ লুকোচ্ছেন!” তিনি হকচকিয়ে বললেন—“আপনি কি করে জানলেন?” দীপ্ত বলল—“এখনও বলছি বলুন সত্যি করে, কি এমন বড়সড় ঘটনার সাথে উনি জড়িত ছিলেন?”
—“আমি সত্যিই কিছু জানি না। অত বড় একজন নেতা আমায় কেন সব কথা বলবেন?”
—“আপনি ওনার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তাই।”
—“কে বলেছে ওই সেক্রেটারিটা?”
দীপ্ত একটু উঠে দাঁড়িয়ে বলল—“মিথ্যে বলেছে কি? এই এত বড় ফ্ল্যাট তো একটা সময় উনিই আপনাকে দিয়েছিলেন।” ভদ্রমহিলা বললেন—“দেখুন আমায় বেরোতে হবে। আপনি এখন আসতে পারেন।” দীপ্ত বলল—“ওনার জীবনের থেকে আপনার সময়ের দামটা বেশী?” তিনি বললেন—“উনি একজন নেতা মানুষ। কতরকম ঘোটালা আছে। আমায় সবকিছু থোড়িই বলবেন। যেটুকু বলার বলে দিয়েছি। আমি সত্যিই কিছু জানি না।”
—“আচ্ছা, ঠিক আছে। চলি।”
এই বলে দীপ্ত ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে এল। একটা বিষয় বুঝতে পারল যে সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না। এমন কিছু ঘটনা আছে যেটা বললে সকলের ফেঁসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কলিংবেল দিতেই জয় দরজা খুলল। বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে জয়কে বলল—“খাবার খেয়েছ জয়?”
—“নন্দদা অনেকক্ষণ ধরেই খেতে বলছিল।আপনার জন্যই ওয়েট করছি।”
দীপ্ত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল—“দুলাল মাহাতো শ্রাবণী দেবীর বাড়িতেই লুকিয়ে আছে। বোকামো করছে। যাইহোক ছাড়ো কোনো ক্লু পেলে?” জয় বলল—“দীপ্তদা একটা এই সাতটা কেসের একটা সামঞ্জস্য পাওয়া গেছে।”
—“কি?” জয় বিছানায় সাজানো সমস্ত কেসের পি ডি এফ ফাইলের কপি গুলোকে দেখিয়ে বলল—“দীপ্তদা দেখো, যে যে জেলায় খুন হয়েছে তাদের নামের একটা সিরিজ আছে।”
—“কিরকম।?”
—“ইংরাজী নাম অনুযায়ী জেলাগুলোকে সাজানো হোক এই বলে একটা পেপারে লিখল—
1st murder……..Alipurduar (A)
2nd murder…….Bankura (Ba)
3rd murder…….Birbhum (Bi)
4th murder…….Coochbihar (C)
5th murder…….Darjeeling (Da)
6th murder…….Dakshin Dinajpur(Dd)
7th murder…….Howrah (H)
“সবকটাই English dictionary অনুযায়ী সিরিজের মতো একের পর এক করা হয়েছে। তার মানে এটা হল আট নম্বর চন্দননগর। জেলা— Hooghly (H).” দীপ্ত বলল—“সাবাস জয়। এখন বলতো এই যে নেতারা খুন হয়েছে এরা কোনো বড়সড় ক্রাইমের সাথে যুক্ত কি। নেটে কিছু পাওয়া যাবে? এদের কোনো ডিটেলশ্।?”
—“না তেমন কিছু নেই।” দীপ্ত ফাইলগুলোকে ভালো করে দেখে মোবাইলের ক্যালকুলেটর খুলে কি সব হিসেব করল। তারপর বলল—“আর একটা সিরিজ আছে খেয়াল করেছো কি? সেটা হল খুনের তারিখ। দেখো।” এই বলে কাগজে লিখল—
dd + mm + yy
1) 30 + 09 + 18 = 57
2) 28 + 10 + 18 = 56
3) 26 + 11 + 18 = 55
4) 24 + 12 + 18 = 54
5) 31 + 03 + 19 = 53
6) 29 + 04 + 19 = 52
7) 27 + 05 + 19 = 51
“দুলালবাবুর এস এম এস এ আছে— 25 june 2019। তার মানে…… 25 + 06 + 19 =50 পুরোটা একটা সিরিজে করা।” জয় বলল—“আচ্ছা এর থেকে লাভ কি হতে পারে?”
দীপ্ত বলল—“যদি দুলালবাবুর খুন হয়েও যায় তাহলে পরের খুনটার ডেটটা আগে থেকে আন্দাজ করতে পারব। বুঝলে তোমার সলভ করা ম্যাটারটা দেখে কোন জেলায় খুনটা হতে পারে সেটাও আন্দাজ করতে পারা যাবে।”
জয় বলল—“তাহলে তো একে সিরিয়াল কিলার বলা যেতে পারে।” সে বলল—“সিরিয়ালি করেছে মানেই যে সিরিয়াল কিলার সেটা হলফ করে বলা যাচ্ছে না।সিরিয়াল কিলাররা সাইকো হয়। তারা আসলে অন্যের মনের ভয়টা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে। নিজেকে বড় খুনী বলে দেখানোর প্রবণতা থাকে। বাচ্ছাদের, কিম্বা মেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করে। এ কিন্তু এরকমটা নয়। এই খুনির নির্দিষ্ট একটা উদ্দেশ্য আছে সেটা জানতে পারলেই সবটা জলের মতো পরিষ্কার।”
জয় বলল—“আচ্ছা দীপ্তদা এরকম তো হতেই পারে এই যে লোকগুলো খুন হল এরা একসাথে কোথাও মিট করেছিল। আর কোন অপরাধমূলক কিছু হয়েছিল। যেমন রেপ।” সে বলল—“না জয়। তার কারণ এখানে একজন মহিলাও কিন্তু খুন হয়েছে। রিপোর্ট দেখো কোচবিহারে যিনি খুন হয়েছেন তিনি মহিলা। রেপ হলে মহিলা খুন হবে —উঁহু, এই অ্যাসামশনটা ঠিক যাচ্ছেনা।” দীপ্ত এবার একটা সিগারেট ধরালো। তারপর বলল—“টাকাপয়সার ব্যাপার হতে পারে। নয়তো কোনো খুনের রহস্য গোপন হতে পারে।” জয় বলল—“খুনি কিন্তু শিক্ষিত এবং হিসেবে পাক্কা।” এমন সময় ওসি ফোন করে জানালেন—“হ্যালো স্যার, দুলালবাবু ফিরে এসেছেন। উনি পিছনের দরজা দিয়ে পুলিশের চোখ এড়িয়ে পালিয়ে ছিলেন।” দীপ্ত বলল—“আচ্ছা। কিছু বললেন?”
—“না স্যার।” দীপ্ত বলল—“ঠিক আছে রাখুন।” কেটে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে দীপ্ত দুলালবাবুর ফোনে কল করলেন। ফোনটা ধরে উনি বললেন—“হ্যাঁ বলুন।” দীপ্ত হেসে বলল—“শ্রাবণী দেবীর বাড়িতে প্রোটেকশন পাবেন না। নিজের বাড়িতে থাকুন। আর এভাবে বেরোলে হিতে বিপরীত হবে।” তিনি বললেন—“আপনি কি করে বুঝলেন আমি ওখানে ছিলাম।”
—“গোয়েন্দার চোখ মশাই। আচ্ছা, পঁচিশ তারিখ আমি আপনার ওখানে যাচ্ছি।”
—“অবশ্যই।”
ফোনটা কাটার পর জয় দীপ্তকে বলল—“পঁচিশ তারিখ যদি এ বেঁচেও যায়। অন্য কোনোদিন ওকে মেরে দেওয়ার চেষ্টা করবে খুনি।” দীপ্ত একটু চিন্তা করে বলল—“কথাটা খুব একটা ভুল বলো নি। এভিডেন্স মেটাতে যে করেই হোক মেরে দেবে। তাতে হয়তো খুনের সিরিজটা ভেঙে যাবে। এইটাই বোঝাতে চাইছি। সাইকো হলে এটার উল্টোটা হয়। এরা ভিকটিমের ওপর অনেকদিন নজর রাখে। সুযোগ বুঝে খুন করে। কিন্তু এর ব্যাপারটা আলাদা রকম।” 25th june দীপ্ত সকালে ঘুম থেকে খবরের কাগজটা পড়তে যাবে এমন সময় তার ফোনটা বেজে উঠল। মোবাইলে দেখল ওসির কল। ফোন তুলতেই তিনি বললেন—“হ্যালো স্যার, শুনছেন, দুলালবাবু খুন হয়েছেন! খুব সম্ভবত মাঝরাতে ওনাকে খুন করা হয়েছে।”
—“কি বলছেন কি?”
—“হ্যাঁ স্যার ঠিকই বলছি। আপনি আসুন স্যার।”
—“ওকে, আমি এক্ষুণি যাচ্ছি।”
ফোনটা রেখেই জয়কে ডেকে দীপ্ত বলল—“তাড়াতড়ি রেডি হয়ে নাও বেরোতে হবে।” জয় অবাক হয়ে বলল—“কি হয়েছে দীপ্তদা?”
—“দুলাল মাহাতোকে মার্ডার করা হয়েছে।”
—“ঘটনাটা কি রাতে ঘটেছে?”
—“হুম।”
দুলাল মাহাতোর বাড়িতে এসে দেখল, ডেডবডি শোয়ানো আছে। গলার নলিটা যেন কেউ ধারালো কোনো অস্ত্র দিয়ে টেনে দিয়েছে। দীপ্ত কয়েকটা ছবি তুলে নিল। ওনার স্ত্রী, মেয়েরা পাশে বসে হাউহাউ করে কাঁদছিল। দীপ্ত পুলিশ কনস্টেবলকে বলল—“রাতে ভেতরে কেউ ঢুকেছিল?”
—“না স্যার কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।”
—“পার্টির কেউ এসেছিল কি?”
—“না স্যার শুধু মিডিয়ার লোক আর পুলিশের লোক ছাড়া ভেতরে কেউ ঢোকেনি। তাও মিডিয়ার লোক কাল সন্ধ্যে সাতটার মধ্যে চলে গিয়েছিল।” দীপ্ত বলল—“আচ্ছা বাড়িতে সিসিটিভি আছে দেখলাম। ফুটেজ পাওয়া যাবে।”
—“খুনি এতটাই চালাক আগেই সিসিটিভির কানেকশন কেটে দিয়েছে। আর সিসিটিভির মনিটর ওনার মেয়ের ঘরে ছিল।” দীপ্ত এবার একটু রেগে গিয়ে বলল—“আপনাদের কারোর ওখানে থাকা উচিত ছিল।” এরপর দুলাল মাহাতো’র মেয়েকে ডেকে দীপ্ত বলল—“আচ্ছা সিসিটিভিতে কাল নজর রেখেছিলে?” মেয়েটি এমনিতেই ভীষণ কাঁদছিল। দীপ্ত দেখল এখন কিছু জিজ্ঞাসা করা মানে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরী হওয়া। জয়কে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে এল দীপ্ত। জয় বলল—“আচ্ছা দীপ্তদা এই যে সাতটা মার্ডার হল এই সাতজনের বাড়িতেই কি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি।”
—“দ্যাখো জয় সকলে বাড়িতে সিসিটিভি রাখে না। আর এদের অনেকেই কাউন্সিলর কিম্বা পঞ্চায়েত প্রধান। অত হাই ফাই না। তাই হয়তো রাখেনি। আবার হয়তো এরকম হতে পারে যে খুনি আগে সিসিটিভিটাকেই বিকল করে দিচ্ছে। যেমনটা এখানে হল।” জয় বলল—“এত সিকিউরিটি থাকা সত্ত্বেও দিনের দিনই কিন্তু মার্ডারটা হল।” সেদিন বাড়ি ফিরে দীপ্ত বলল—“জয় কি এমন কেলেঙ্কারি থাকতে পারে বলোতো যার সাথে এই সবকটা নেতা নেত্রী জড়িত ছিল।” জয় বলল—“পলিটিক্যাল কিছু?”
—“না না এটা পলিটিক্যাল না।”
—“তবে কি কোনো টাকা পয়সার ঘাবলা ছিল।” কথাটা শুনেই দীপ্ত’র মাথায় যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। সে তাড়াতাড়ি করে ল্যাপটপ খানা বার করে ইন্টারনেটে অনেকক্ষণ কি সব ঘাঁটাঘাটি করল। তারপর জয়কে সে বলল
—“ইউরেকা!”
—“কিছু পেলে দীপ্তদা।” দীপ্ত’র ঠোটের কোণে অদ্ভূত একটা হাসি। সে বলল—“জয় তখন তুমি হয়তো ফাইভ সিক্সে পড়ো। তাই হয়তো জানার কথা নয়। আজ থেকে প্রায় পনেরো বছর আগে বীমা কেলেঙ্কারি হয়েছিল। নাম ছিল—I.P.scheme। মানে Insurance for Poor scheme. প্রাইভেট ইনস্যুরেন্স ছিল। ভালো সুদ দিত। প্রচুর লোকে এখানে টাকা রাখত। ইনস্যুরেন্সটা সমস্ত জেলায় ছড়িয়ে পড়েছিল। এর কর্ণধার ছিল—প্রদ্যুৎ রায়চৌধুরী। নাম শুনে থাকবে।”
—“কিন্তু ওর তো জেল হয়ে গিয়েছিল।”
—“ইয়েস। আর সেই সময় এই যারা খুন হয়েছে তারা ছিল পাওয়ারফুল।
তাদের সক্কলে এই স্কিমের টাকাগুলোকে আত্মসাৎ করে প্রদ্যুৎ রায়চৌধুরীকে ফাঁসিয়ে দেয়। আর লোকে ভাবে প্রদ্যুৎ পাবলিকের টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। বুঝলে।” জয় বলল—“তাহলে ওই কি জেল থেকে বেরিয়ে সকলকে খুন করছে?”
—“সেটা হতেও পারে নাও হতে পারে কেসটা কিন্তু এটাই।” জয় বলল—“আমার প্রশ্ন এটাই এত নিরাপত্তার মধ্যে কে দুলাল মাহাতোর বাড়িতে ঢুকল?”
—“পুলিশ অার মিডিয়া ছাড়া কেউ ঢোকেনি। এটাই আমায় ভাবাচ্ছে জয়।”
—“তাহলে এখন কিভাবে এগোবো?”
দীপ্ত বলল—“একবার আলিপুর সেন্ট্রাল জেল হয়ে শ্রাবণী দেবীর বাড়িতে যেতে হবে। তৈরী হয়ে নাও। একটু দৌড়াদৌড়ি তো হবেই।” আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে গিয়ে খবর নিয়ে দেখা গেল যে প্রদ্যুৎ রায়চৌধুরী গত বছর ছাড়া পেয়ে গেছে। দীপ্ত তার ঠিকানাটা পেল না। পুলিশসূত্রে জানা গেল জেল থেকে বেরোনোর পর তার ব্যাপারে বিশেষ কিছু জানা যায় নি। ওনার স্ত্রী কিম্বা ছেলেমেয়েরা কোনো যোগাযোগ রাখেনি। তাও মেয়ে বছর পাঁচেক আগে শেষবারের মতো বাবার সাথে দেখা করে যায়। তারপর কেউ আর খোঁজখবর রাখত না। দীপ্ত পুলিশের কাছে প্রদ্যুতের বাড়ির লোকের অ্যাড্রেস চাইতে তারা দিতে পারল না। অগত্যা বেরিয়ে আসতে হল। জয় বলল—“দীপ্তদা একটা অদ্ভূত ব্যাপার দেখো, লোকটার ঠিকানা পেল না মানলাম। কিন্তু বাড়ির লোকও বেপাত্তা। কেমন একটা সন্দেহ হচ্ছে না?” দীপ্ত বলল—“সেটাই তো। এখন কথা হচ্ছে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে যদি এতগুলো খুন করে তাহলেও তো ধরা পড়ে যাবে। কারণ এদের প্রত্যেকের ব্যাপারে এত খোঁজখবর নেওয়া একটা নিরুদ্দেশ জেল ফেরত আসামীর পক্ষে কি সম্ভব?”
—“তাহলে উপায়?”
—“শ্রাবণী দেবীর বাড়ি যেতে হবে।”
এই বলে দোকান থেকে একখানা সিগারেটেরপ্যাকেট কিনে দীপ্ত উবের বুক করল। শ্রাবণী দেবীর ফ্ল্যাটে যেতেই তিনি বললেন—“টিভিতে দেখেছি। এখন সমস্ত কিছুর জন্যে আমায় দায়ী করবেন তো?” দীপ্ত বলল—“আমি কি আপনাকে অ্যাকিউস করেছি। দেখুন ম্যাডাম আমার শুধু কয়েকটা প্রশ্ন আছে।”
—“সেই থেকে তো শুধু প্রশ্নই করছেন। দেখুন আর ভালো লাগছে না।”
—“এটা বললে হবে না ম্যাডাম। আমার কাজে আপনাকে সাহায্য করতেই হবে।”
—“বেশ বলুন কি জানতে চান?”
—“আচ্ছা আপনি I.P. scheme এর ব্যাপারে কি জানেন?”
—“কেন বলুন তো?”
—“দরকার আছে। দুলাল মাহাতো ওই সময় লক্ষ লক্ষ টাকা আপনার কাছেই গচ্ছিত রেখেছিল।
পাবলিকের সেই টাকা আপনারা তছরুপ করেছেন। এর প্রমাণ না থাকলেও এটাই সত্যি। আজ এত ঐশ্বর্য সবই তো পাবলিকের কষ্টের টাকায়।” তিনি বললেন—“আমায় জড়াবেন না। ওনার টাকা রাখতে দিয়েছিলেন কিন্তু I.P. scheme এর মালিক ধরা পড়তেই সমস্ত টাকা নিয়ে চলে যান। আমি আর কিছু জানিনা।” দীপ্ত একখানা সিগারেট ধরালো। তারপর ঠোঁটের কোণে সিগারেটা নিয়ে বলল
—“তাহলে স্বীকার করছেন যে আপনি জানেন।দেখুন শ্রাবণী দেবী থুড়ি গায়েত্রী দেবী, এই স্কিমের মালিক প্রদ্যুৎ রায়চৌধুরী কিন্তু জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। সুতরাং আপনিও নিরাপদ নন। তাই বলছি সাবধানে থাকবেন। চলি।”
—“দাঁড়ান, শুধু এটা বলুন খুনটা উনিই করেছেন?”
শ্রাবণী দেবী প্রশ্নে দীপ্ত হেসে বলল—“সেটা এখনও প্রমাণ হয়নি। তবে উনি যে জড়িত সেটা একশো ভাগ সত্যি। চিন্তা নেই আপনার কিছু হবে না। তবে সাবধানের মার নেই।” সেদিন বাড়ি ফিরে জয় কেস ফাইল গুলো নিয়ে বসল। দীপ্ত’র মনের মধ্যে শুধু একটাই চিন্তা খুনি কি করে অত পুলিশের নজর এড়িয়ে ভেতরে ঢুকল। আর বেরোলোই বা কিভাবে? চুপচাপ বসে একমনে চিন্তা করতে লাগল কেমন করে একজন বাইরের লোকের পক্ষে ভেতরে ঢোকা সম্ভব! জয় বলল—“দীপ্তদা আমার মনে হয় আবার একবার পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।”
—“হুমম। আমিও সেটাই ভাবছি। এখানে কোনো ব্যাপার আছে বুঝলে। আজই একবার চন্দননগর থানায় গিয়ে খোঁজখবর নিতে হবে।” জয় বলল—“তুমি ঠিক কোন বিষয়টা আঁচ করছ?”
—“কোনো ফাঁক রয়ে যাচ্ছে যেটা আমরা ভাবতে পারছি না। আচ্ছা সিরিজ মিলিয়ে দ্যাখো তো পরের টার্গেটটা কোন জেলায় হতে পারে?” জয় এদিকে ভীষণ বুদ্ধিমান। সে সময় না নিয়ে বলল—“Jalpaiguri (J).আচ্ছা জলপাইগুড়ির কোন নেতা বা মন্ত্রী এই স্ক্যামে জড়িত ছিল?” দীপ্তকে ল্যাপটপ ঘাঁটতে হল না। সে সঙ্গে সঙ্গে বলল—“এবারের শিকার প্রলয় বসাক। জলপাইগুড়ির নামকরা পলিটিক্যাল ফিগার। দীপ্ত এটাই লাস্ট চান্স খুনীকে হাতেনাতে ধরার।”
—“তাহলে একমাস অপেক্ষা করতে হবে। তারিখের সিরিজ অনুসারে নেক্সট ডেট—23th july 2019”
—“একজ্যাক্টলি। তার আগে পুলিশের কাছে অনেক কিছু ইনফরমেশন নেবার আছে।”
পরের দিন দীপ্ত জয়কে নিয়ে চন্দননগর থানায় গেল। থানার ওসি দীপ্তকে বললেন—“বসুন স্যার। একটা ঘটনা ঘটে গেছে।” দীপ্ত বলল—“বলুন কি ঘটেছে? ওসি বললেন—“দুলাল মাহাতোর একজন চাকরকে জেরা করতে সে বলছে সে নাকি খুনৈর দিন ছিলোই না।”
—“তারপর?”
—“এখন পুলিশ বলছে রাতে নাকি সেই চাকর বাড়িতে ছিল। ওরা ঢুকতে বেরোতে দেখেছে।”
দীপ্ত বলল—“সেকি! স্ট্রেঞ্জ! ওনাকে থানায় আনার ব্যবস্থা করুন।” বেশ কিছু সময় পর লোকটা থানায় এল। দীপ্ত ভালো করে দেখে বলল—“যেদিন আমি তোমার দাদাবাবুর বডি দেখতে গেলাম। তোমায় তো দেখলাম না!” লোকটা কাঁচুমাচু হয়ে বলল—“আমি ছিলুম নি স্যার।”
—“সত্যি করে বলো।”
—“বিশ্বাস না হয় আমার গিন্নীকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমার পাড়ার লোকে তো মিথ্যে বলবেনি।”
দীপ্ত বুঝল লোকটা মিথ্যে বলছে না। অথচ পুলিশের চোখ ভুল জিনিস দেখে না। দীপ্ত থানা থেকে বেরোতেই জয় বলল—“দীপ্তদা ব্যাপারটা কেমন গোলমেলে লাগছে না?”
—“হুমম। তুমি অনেকদিন হলো বাড়ি যাও নি জয়। আজ বাড়ি যাও। যদি ডেপুটির কাছ থেকে কোনো খবর আসে আমি তোমায় ইনফর্ম করব।” জয় চলে যেতেই দীপ্ত সোজা টালিগঞ্জে গেল। এরপর প্রায় তিন সপ্তাহ কেটে গেছে। জয় এই কদিন বাড়িতেই ছিল। ডেপুটির নির্দেশে ওয়ার্ক ফ্রম হোম কাজ করতে হচ্ছে। হঠাৎ দীপ্ত কল করে বলল
—“জয় তাড়াতাড়ি জামাকাপড় গুছিয়ে নাও জলপাইগুড়ি যেতে হবে।”
—“আবার সেই এস এম এস স্যার?”
—“হ্যাঁ, তুমি ফ্ল্যাটে একঘন্টার মধ্যে চলে এসো।”
জয় সমস্ত জামাকাপড় গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। দীপ্ত ফ্ল্যাটের সামনে ল্যাগেজ নিয়ে ওর জন্যই অপেক্ষা করছিল। জয় আসতেই সে বলল—“দিন দশেকের ব্যাপার।”
—“প্রলয় বসাকের বাড়ি?”
—“হুমম। যা ভেবেছি তাই। তবে এবার কোনো ব্লান্ডার হলেই মুশকিল।”
—“আচ্ছা দীপ্তদা, ডেটটা মিলেছে?”
—“ফোনে তো তাই বলল। 23 july 2019.”
এরপর দুজনে জলপাইগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হল। সন্ধ্যে সাতটার উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসে শিয়ালদা থেকে তারা যাত্রা শুরু করে সকাল ছটায় নিউ জলপাইগুড়ি এসে থামল। সেখান থেকে ট্রেকারে করে সোজা শিলিগুড়ির গান্ধীচকে এসে নামল। ট্রেনে যেতে যেতে জয়কে তেমন কোনো ইনফরমেশন বলেনি দীপ্ত। সব জায়গায় সবকিছু বলা চলে না। জয়ের মনের মধ্যে কৌতূহলের পাহাড় জমে আছে। যাইহোক গান্ধীচকে একটা লজে এসে উঠল তারা। ল্যাগেজ রেখে ফ্রেশ হয়ে দীপ্ত জয়কে বলল—“এইবার বলো কি জানতে চাও?”
—“অনেককিছু।” সে হেসে বলল—“এক এক করে বলো তোমার কৌতূহল চরিতার্থ করি। ”
—“আচ্ছা দীপ্তদা এই যে প্রদ্যুৎ রায়চৌধুরী এর ব্যাপারে কিছু জানা গেল?”
—“নাহ্।”
—“আর দুলাল মাহাতোর চাকরের ব্যাপারটা?”
—“সেটার জন্যই আরও জটিল হয়ে গেছে কেসটা।”
—“তাহলে এতগুলো খুন কি চাকর বাকররাই টাকাপয়সা খেয়ে করছে নাকি বলো তো?”
—“ধুস্। কি যে বলো।”
বলে দীপ্ত একটা সিগারেট বার করে ধরালো। তারপর ধোঁয়া ওপর দিকে ছেড়ে বলল—“সমস্ত কিছু এখনও পরিষ্কার না জয়। তবে যেমনভাবে এগিয়েছি তাতে এবারেরটা মিসটেক না হলে খুনি ধরা পড়বেই।”
—“শ্রাবণী দেবীর সাথে কি প্রদ্যুৎ রায়চৌধুরীর কোনো যোগসূত্র আছে?”
—“যদি থাকেও তাতে লাভ?”
—“হয়তো শ্রাবণী দেবীকেই নিয়োগ করেছিলেন। না না না এটা কি করে হয়।”
—“জয়, দুলাল মাহাতোকে নিয়ে মোট আটটা খুন। তার মানে ভাবো খুনি কিন্তু এদের সকলের ব্যাপারে সব জানে তবেই না ফাটাফাট মার্ডার করছে। কতটা চালাক ভাবো। একটা ভুলের জন্য দুলাল মাহাতো মার্ডার হয়ে গেল।”
জয় বলল—“প্রদ্যুৎ রায়চৌধুরীই কি লোক লাগিয়ে খুনগুলো করাচ্ছে?”
—“একটা জেল ফেরত আসামীর পক্ষে এটা সম্ভব কি? তবে এসব নিয়ে পরে ভাববো। আগে ব্রেকফাস্ট করি চলো। সকাল থেকে কিস্যু পেটে পড়েনি।” এরপর বাইরে বেরিয়ে গরম গরম খাস্তা কচুরি আর ঝালঝাল তরকারী দিয়ে সকালের ব্রেকফাস্ট হল। জয়ের উচ্চতা দেখে কচুরীর দোকানের লোকটা হাঁ করে তাকিয়ে ছিল। ছ- ফুট দু- ইঞ্চি লম্বা মাঝারি গায়ের রং, পরনে টাইট ফিটিংস টি-শার্ট আর জিন্স এসব দেখে লোকটা বলল—“দাদা আপনি কি ফিলিম টিলিম করেন?” দীপ্ত হো হো করে হেসে ফেলল। তারপর বলল—“হ্যাঁ জয় তুমি ফিল্মে নাম লেখাও।” জয়ের সাথে এই নিয়ে প্রায়ই মজা করে দীপ্ত। জয় ছেলেটা ভালো কোনোদিন কিছু মনে করে না। উল্টে দীপ্তকে বলে
—“আপনি তো নামতে পারতেন।” সে হেসে বলে—“আমি ফিল্মে নামলে হিরোগুলোর ভাত মারা যেত জয়।”
—“না দীপ্তদা আপনার যদি গোঁফ থাকত অনেকটা সাউথের হিরোদের মতো দেখতে লাগত।”
—“তাই বুঝি। তাহলে গোঁফ রাখব বলছো?”
—“নাহ্। আপনি হিরো হয়ে গেলে আমার কি হবে?”
—“তুমি হবে সাইড হিরো।”
মজা করতে করতে লজে ফিরে এল তারা। তারপর ল্যাগেজ ট্যাগেজ গুছিয়ে স্নান সেরে নিল। জয় টিভিটা চালিয়ে দেখছিল। দীপ্ত বলল—“দুপুরে খেয়েদেয়ে প্রলয় বসাকের বাড়ি যেতে হবে জয়। আর মাত্র তিনদিন।”
—“হ্যাঁ দীপ্তদা। আর তাছাড়া এখন থেকেই ওনার কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে।” দুপুরের দিকে দীপ্তকে কল করে প্রলয় বসাক নিজেই এলেন তাদের লজে। ভদ্রলোকের ষাটের কাছাকাছি বয়স। মোটাসোটা চেহারা, ভুঁড়িটা যেন সামনের দিকে এগিয়ে আছে। একটা আদ্যির গিলে করা পাঞ্জাবী আর পাজামা পরে এসেছেন। চোখেমুখে দুলাল মাহাতোর চেয়েও বেশী ভয়। দীপ্ত বলল—“বসুন। এখন বলুন আপনার ফোনে কবে এস এম এস টা এসেছে।” তিনি বার করে দেখিয়ে বললেন—“দেখুন না স্যার পরশুদিন এসেছে।” একই এস এম এস।
“Your time is over.
Date of death- 23 th july 2019.”
দীপ্ত বলল—“বাড়িতে কতজন পুলিশ দিয়েছে তাও?” প্রলয়বাবু বললেন—“জনা দশেক।”
—“সিসিটিভি আছে বাড়িতে?”
—“না।”
—“এটাই তো মুশকিল।”
জয় বলল—“আচ্ছা এখন একটা সিসিটিভির ব্যবস্থা করা যাবে?” দীপ্ত বলল—“না থাক। তাতে আরও ফ্যাচাং। দেখুন প্রলয়বাবু এই সময় বাইরের কাউকে অ্যালাও করবেন না। তবে হ্যাঁ, ভয় পাবেন না।” তিনি বেশ ভয়ে ভয়েই বললেন—“হঠাৎ আমায় কেন পাঠালো বলুন তো?” দীপ্ত দেখল এটাই মোক্ষম সময়। সে বলল—“আচ্ছা আপনি I.P.scheme এর ব্যাপারে কি জানেন?” তিনি আরও ভয় পেয়ে বললেন
—“কেন বলুন তো?”
—“কারণ আছে। বলুন।”
তিনি বলতে শুরু করলেন—“সেই সময় এই স্কিমটা প্রচুর মানুষ করেছিল। প্রদ্যুৎ রায়চৌধুরী তখন গরীব মানুষের জন্য এই স্কিমটা এনেছিল। কিন্তু ওর আসল লক্ষ্যই ছিল যেনতেন প্রকারেণ টাকা লুঠ করা। তাই শেষ অবধি গণেশ উল্টে গেল—” কথাটা শেষ করতে না দিয়ে দীপ্ত বলল—“আপনি এতে জড়িত ছিলেন তো?” তিনি মাথানিচু করে বললেন—“হুমম।”
—“সেই টাকাগুলো পরে ব্ল্যাক হয়ে মার্কেটে খেটেছে। কত বড় ঘটনা!” তিনি বললেন—“তার সাথে এর কি কানেকশন?” দীপ্ত বলল—“আছে। যতগুলো খুন হয়েছে সবকটা মানুষ এই I.P.scheme -র সাথে জড়িত ছিলেন!”
—“তবে কি সেই লোক জেল থেকে ফিরেছে?”
—“হ্যাঁ প্রলয়বাবু। তবে সেই যে খুনগুলো করছে তার কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই।”
—“তাহলে উপায়?”
দীপ্ত বলল—“আমরা কাল সকালে আপনার বাড়িতে যাব। আপনি কিন্তু আমাদের পরিচয় গোপন রাখবেন। বলবেন পার্টির লোক। কেমন? এখনও তিনদিন হাতে আছে। সেই বুঝে যা বলছি তাই বলবেন।”
—“ঠিক আছে, আজ তবে উঠি।”
—“হ্যাঁ সাবধানে যাবেন।”
তিনি চলে গেলে দীপ্ত বলল—“দেখলে তো জয়। এইসব লোক গরীব মানুষের অভিশাপে খুন হয়। কত লোকের কষ্টের টাকা এরা আত্মসাৎ করেছে জানো। এখন নিজেরাই নিজেদের শত্রু।” জয় বলল—“তাও কতটাকার স্ক্যাম ছিল এটা?”
—“সাতান্ন কোটি! তখনকার দিনে ভাবো শুধু।”
হঠাৎ করে দীপ্ত’র মনে পড়ে গেল সেই ক্যালকুলেশনটার কথা। প্রথমে তো 57 ই ছিল। সে বলল—“জয় মনে আছে ডেটের সিরিজের ঐ হিসাবটা—57..56..55..54..53..” জয় বলল—“হ্যাঁ। তাই তো ছিল।” দীপ্ত বলল—“তাহলে এখন পুরোপুরি সিওর। কিন্তু এত টাইট সিকিউরিটির মধ্যে কেই ঢুকছে, কিভাবেই বা ঢুকছে? আন্দাজে ঢিল মারলে সবটা হবে না।” যাইহোক পরেরদিন সকালবেলা দীপ্তরা গেল প্রলয় বসাকের বাড়ি। নেতা মহাশয়ের এক মেয়ে আর স্ত্রী ছাড়া এক ভাই আর বৃদ্ধা মা রয়েছেন বাড়ীতে। দু চারজন চাকর বাকর আছে। বাইরে থেকে দেখে মনে হয় ছাপোশা লোক কিন্তু বাস্তবে প্রচুর টাকার মালিক। আর সবকিছুই হয়েছিল একসময় I.P.scheme এর দৌলতে। দীপ্ত দেখল বাইরে বসার ঘরে পুলিশরা আড্ডা দিচ্ছে। সে নিজের নাম বলতেই তারা ওপরে পাঠিয়ে দিল। প্রলয় বসাকের স্ত্রী’র অমায়িক ব্যবহার। রীতিমতো ওদের যত্ন আত্তি করতে শুরু করলেন। বললেন—“আপনারা আমার অতিথি। কতদূর থেকে এসেছেন। বসুন আপনাদের জল খাবারের ব্যবস্থা করি।”
দীপ্ত বলল—“ব্যস্ত হবেন না।”
—“তা কি হয়। আপনারা বসুন, আপনারা বসুন ওকে ডেকে দিচ্ছি।”
কিছুক্ষণ পরে প্রলয় বসাক ভেতর থেকে এলেন। চোখমুখ যেন বসে গেছে। দেখেই মনে হচ্ছে রাতে ভালো ঘুম হয়নি। দীপ্তকে দেখে বললেন—“আপনি এসে গেছেন। উফফ্ আমি সেই থেকে ভাবছি আপনি কখন আসবেন!”
—“আপনাকে যে বললাম, আমার পরিচয়টা গোপন রাখবেন, আপনি বলে দিয়েছেন! আশ্চর্য লোক আপনি!”
—“কই নাতো!”
—“এই তো পুলিশকে নাম বলতেই তারা এনক্যোয়ারি না করেই তো ভেতরে ঢুকতে দিল।”
প্রলয়বাবু একটা ঢোঁক গিলে বললেন—“ওদের তো বলতে হবে।” দীপ্ত কিছু বলল না। জয় শান্তভাবে বলল—“দেখুন আর কাউকে কিছু বলবেন না।” তিনি চুপ করে রইলেন। ওনার স্ত্রী ভেতর থেকে থালা ভর্তি লুচি, তরকারি, মিষ্টি নিয়ে এসে বললেন—“একটু কিছু খেয়ে নিন।”দীপ্ত বলল—“দেখুন 22 তারিখ থেকে রাতে এখানেই থাকব। তাই দয়া করে কাউকে এ ব্যাপারে কিচ্ছু জানাবেন না প্লিজ। যা বলার 22 তারিখ সন্ধ্যেবেলা বলব।” খাওয়া দাওয়া সেরে দীপ্ত একবার পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখে নিল। প্রতিটা চাকর বাকর থেকে শুরু করে বাড়ির সকলের মুখ দেখে নিল। তারপর প্রলয়বাবুকে ডেকে চুপিচুপি বলল—“আপনার বাড়ির চাকররা কি এখানেই থাকে?”
—“হ্যাঁ স্যার, সবাই তো দেশ থেকে এসেছে।” প্রলয়বাবু একবার ভেতরে যেতে দীপ্ত জয়কে বলল—“বাড়ির প্রত্যেকটা লোককে ঠিকঠাক চিনে রাখবে কিন্তু।”
—“হুমম। দেখলাম তো ওই কটা চাকর বাকর আর বাড়ির লোকজন।”
—“আচ্ছা ওনার ভাইকে খেয়াল করেছ?”
—“না তো।”
—“এলে দেখে চিনে রেখো। 22 তারিখ কিন্তু রাত্তির জাগতে হবে। বুঝলে জয়, প্রলয়বাবুকে কড়া পাহারায় রাখতে হবে সারাটা ক্ষণ।”
যথারীতি 22 তারিখ সন্ধ্যের দিক করে দীপ্ত আর জয় এসে হাজির হল প্রলয়বাবুর বাড়িতে। বাইরে পুলিশের কড়া পাহারা। ভেতরে একটা ঘরের মধ্যে চুপচাপ বসে প্রহর গুনছেন প্রলয়বাবু। ওনার স্ত্রী, মেয়ে,বাড়ির লোকেরা প্রত্যেকেই ভয়ে ভয়ে আছেন। দীপ্ত ভেতরে এসে বলল—“বাড়ির যত লোক আছেন প্রত্যেকে হলঘরে আসুন। প্রলয়বাবু, আপনার বাড়ির চাকর থেকে শুরু করে সবাইকে কিন্তু এখানে ডাকবেন। শুধু নিচে পুলিশদের ডাকার দরকার নেই।” বাড়ির সমস্ত লোক হলঘরে এসে উপস্থিত হল। দীপ্ত গুনে দেখল সব মিলিয়ে দশ জন লোক রয়েছে। প্রত্যেকের মুখ ভালো করে দেখে নিল তারা।
দীপ্ত এবার কড়া গলায় বলল—“যা বলছি এখন মন দিয়ে শুনুন। আজ রাত দশটার মধ্যে প্রত্যেকে খাওয়া দাওয়া সেরে এই হলঘরে চলে আসবেন। প্রলয়বাবু, আপনি আজ সকলের শোবার ব্যবস্থা হলঘরেই করে রাখবেন।”
প্রলয় বসাক বলল—“বেশ তাই হবে।” দীপ্ত বলল—“আর হ্যাঁ,রাত নটার মধ্যে যে যার বাইরের কাজ সেরে ঘরে চলে আসবেন। জয়, তুমি এই ঘরে প্রলয়বাবুর পাশে থাকবে।” বাড়ির চারজন চাকরের নাম জিজ্ঞেস করল দীপ্ত। বিহারী, বলাই, পাঁচু আর চৌরাসিয়া। তার মধ্যে চৌরাসিয়া দারোয়ান। তবে অনেক ফাই ফরমাশ কাজও করতে হয় ওকে। বিহারী একটু মোটাসোটা, পাঁচু বয়স্ক লোক, কুঁজো হয়ে চলে। ওকে দিয়ে প্রলয় বসাক দোকান বাজারের কাজ করিয়ে নেয়। বলাই ঘরের কাজকর্মই করে। প্রত্যেককে নির্দেশ দিয়ে দীপ্ত নিচে গেল পুলিশের সাথে কথা বলে আসতে।
প্রলয়বাবুকে জয় বলল—“টেনশন নেবেন না। আমরা আছি তো।” কিন্তু যার মৃত্যুভয় আছে তার মনে যে কি চলে সেই জানে। প্রলয় বসাক এক জায়গাতে স্থির হয়ে বসতে পারছেন না। শুধু পায়চারি করছেন। এক একটা প্রহর যেন বুকে হাতুড়ির মতো বাজছে। চাকররা দু চারবার বাইরে বেরিয়ে নিজেদের কাজকর্ম সেরে ফিরে এল। চৌরাসিয়া বাইরে পুলিশদের সাথে পাহারায় রইল। যথারীতি প্রত্যেকে যে যার খাওয়া দাওয়া সেরে রাত দশটার মধ্যে হলঘরে এসে উপস্থিত হল। বলাই বলে চাকরটা আগে থেকেই বিছানা করে রেখে দিয়েছিল। সকলে শুয়ে পড়ল। শুধু জেগে রইলেন প্রলয়বাবু, ওনার মা আর স্ত্রী। চাকররা চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছে। দীপ্ত চেয়ারে বসে রইল। পকেটে লোডেড পিস্তল আর ছোট্ট একখানা টর্চ। চোখ যেন অর্জুনের মতো লক্ষ্যভেদ করে বসে আছে। দেখতে দেখতে রাত নেমে ঘড়ির বড় কাঁটা বারোর ঘরে এল। এস এম এস এর মৃত্যুর তারিখ দরজায় কড়া নাড়ছে ! চাকররা ঘুমিয়ে নাক ডাকছে। পাঁচু একবার ঘুম থেকে উঠল। তারপর দীপ্তকে বলল—“বাবু একবার বাথরুমে যাবো?”
—“হুম যাও।”
পাঁচু বাথরুমে যেতেই জয় দরজার দিকে নজর রাখতে লাগল। দু মিনিট হয়ে গেছে পাঁচু আসেনি। এমন সময় হঠাৎ বাড়ির সব আলো লোডশেডিং এর মতো নিভে গেল। সঙ্গে সঙ্গে হলঘরের চারদিকটা ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে গেল।প্রলয়বাবু ভয়ে চিৎকার করে উঠলেন। জয় ওনাকে চেপে ধরে বসে রইল। দীপ্ত সঙ্গে সঙ্গে পকেটে থেকে ছোট্ট টর্চটা বের করে সুইচ মেরে জ্বালতে যাবে। এমন সময় কেউ একজন দরজা থেকে দেওয়াল ঘেঁষে দৌড়াতে দৌড়াতে ভেতরে ঢুকল। দীপ্ত’র টর্চ ততক্ষণে জ্বলে উঠেছে, অন্য হাতে লোডেড পিস্তল। টর্চের আলোয় দেখল কেউ একজন বুড়ো গোছের লোক হাতে একটা ধারালো ছুরি নিয়ে প্রলয়বাবুর দিকে এগোচ্ছে।
ওই আলো অন্ধকার মতো পরিবেশে দীপ্ত সঙ্গে সঙ্গে লোকটার পা লক্ষ্য করে গুলি করল। একটা প্রচন্ড আর্তনাদ। মুখ দিয়ে গোঙানির আওয়াজ বেরিয়ে এল তার। গুলির আওয়াজে ঘরের মধ্যে হুড়োমুড়ি লেগে গেল। পুলিশরা নিচে থেকে দৌড়ে ওপরে চলে এসেছে। দীপ্ত অন্ধকারে বলল—“আমার টার্গেট মিস হয় না। অন্ধকারেও আমি দেখতে পাই। জয় একতলার সিঁড়ির দিকে মেন সুইচটা তাড়াতাড়ি অন করো।” জয় সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে নিচে গিয়ে মেন সুইচটা অন করে দিল। আলো জ্বলে উঠতে দীপ্ত কাছে গিয়ে দেখলো পাঁচুর পায়ে গুলি লেগেছে। সে মাটিতে পায়ে হাত গিয়ে চেপে ধরেছে। তার চেঁচাচ্ছে। কিন্তু কন্ঠস্বর পাঁচুর না। দেখতে হুবহু পাঁচুর মতো। দীপ্ত সামনে গিয়ে ওর থুতনিটা তুলে দেখলো। একেবারে চেনার উপায় নেই। দীপ্ত পাঁচুর ঘাড়ের কাছে হাত দিয়ে একটানে চামড়ার মতো মুখোশটা খুলে ফেলল।
দীপ্ত বলল—“প্রদ্যুৎ রায়চৌধুরী তোমার খেলা শেষ!”
জয় অবাক হয়ে বলল—“এতো প্রস্থেটিক মাস্ক!”
—“এগজ্যাক্টলি।”
হলঘরের সবাক অবাক। পুলিশ বন্দুক তাক করে রেখেছে। প্রদ্যুৎ রায়চৌধুরী যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে। দীপ্ত বলল—“এই প্রস্থেটিক মেকাপ ইনি কোথা থেকে করে জানো জয়?” সে বলল—“কোথা থেকে?”
দীপ্ত বলল—“আমি টালিগঞ্জে স্টুডিও পাড়ায় খোঁজ নিয়ে দেখেছি। সবচাইতে ভালো প্রস্থেটিক মেকাপ যে করে, তার কাছে ওনার মেয়ে দশ বছর কোর্স করেছিল। অসাধারণ ছাত্রী—নিখুঁত হাতের কাজ, কেউ আসল নকল ধরতে পারত না। তারপর হঠাৎ নাকি মুম্বাই চলে যায়। এরপর আর কেউ তার খোঁজ পায়নি। এই সমস্ত খুনের নেপথ্যে রয়েছে ওর মেয়ের প্রস্থেটিক মেকাপ। অনেকটা মুখোশের মতো মুখে সেঁটে বসে থাকে। এই জন্যই চেনার উপায় থাকে না।”
একজন পুলিশ বলল—“আপনার মেয়ের ঠিকানা বলুন।” দীপ্ত বলল—“ওয়েট অফিসার উনি মরে গেলেও মেয়ের ঠিকানা বলবেন না। আমার কাছ থেকে নিন।” কলকাতার শ্যামবাজারের একটা ঠিকানা পুলিশকে সে বলল—“তবে এখন ওখানে ওর মেয়েকে পাবেন না। ও এখন জলপাইগুড়িতেই আছে। কারণ হল এখান থেকে ওই মেয়ে কয়েক ঘন্টার মধ্যে পাঁচুদার প্রস্থেটিক মেকাপ তৈরী করে প্রদ্যুৎবাবুকে রেডি করেছে।”
দীপ্তর ঠোঁটের কোণে অদ্ভূত হাসি,সে বলল—“উনি সবকটা খুনের সময় আগে চাকরদের লুকিয়ে ছবি তুলে নিতেন। যাতে সন্দেহ না হয়। তারপর মেয়েকে দিয়ে প্রস্থেটিক মুখোশ তৈরী করে সময় বুঝে নেতাদেরকে ঘরে ঢুকে খুন করে দিতেন। কি ঠিক বলছি তো প্রদ্যুৎবাবু?” জয় বলল—“তাহলে আসল পাঁচুদা কোথায়?” দীপ্ত বলল—“পাঁচুদাকে এরা মারবে না। সকালবেলাই তাকে বাইরে থেকে বাবা মেয়ে মিলে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছে। আমাদের ডিপার্টমেন্টের লোককে বলেছিলাম নজর রাখতে। সব খবর ছিল। হাতেনাতে ধরব বলে ওত পেতে বসেছিলাম। এতক্ষণে হয়তো ওর মেয়ে ধরাও পড়ে গেছে।” আহত প্রদ্যুৎ রায়চৌধুরী বলে ওঠে—“আমার মেয়ের কোনো ক্ষতি করবেন না।” দীপ্ত বলে—“সে তো আইন বুঝবে প্রদ্যুৎবাবু। এখন বলুন তো, এতগুলো খুন কেন করলেন?”
—“কেন করব না। সব কটা চিটিংবাজ! আমায় ফাঁসালো। জীবনের চোদ্দটা বছর জেলের অন্ধকারে কাটলো। আমি কেন প্রতিশোধ তুলব না বলতে পারেন?” দীপ্ত বলল—“আপনার প্রতিশোধের আগুনে যে আপনার প্রতিভাশালী মেয়েটার ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিলেন! কি লাভ হল?” মাথানিচু করে বসে রইল প্রদ্যুৎ রায়চৌধুরী ওরফে I.P. Scheme এর কর্ণধার।
সমাপ্ত