মাঝরাতের গল্প

মাঝরাতের গল্প

-একটা গল্প বলবেন?
-গল্প বলতে পারি না।
-লিখতে পারেন অথচ বলতে পারেন না এটা কেমন কথা।
-জানি না তবে গল্প পড়তে আর শুনতে বেশ ভালো লাগে।
-তাহলে একটা গল্প শুনাবো সময় হবে কি আপনার।
-হ্যা অনেক সময় আছে, বলতে পারেন।
-রাত তো এখন তিনটা বাজে, ঘুমাবেন না।
-না, বাকি রাত টা ভেবে ছিলাম উপন্যাস পড়ে কাটিয়ে
দিব কিন্তু এখন আপনার গল্প শুনে পার করব।
-আচ্ছা তাহলে বলা শুরু করি কেমন?
-হ্যা বলুন কিন্তু তার আগে আপনার নাম টা বলা যাবে।
-হ্যা! বলব কিন্তু গল্পের শেষে।
-আচ্ছা বলা শুরু করুন।
-তাহলে শুনুন।
সময় টা ২০১১ সাল। সবে মাত্র এসএসছি শেষ করছি।
নিজের মধ্যে তখনো ছেলে মানুষি টা যায় নি। খুব বেশি
চঞ্চল ছিলাম। খুব খুব! পরীক্ষা শেষ তাই আম্মু সহ কারে
দাদুর বাসায় বেড়াতে আসলাম।
-তারপর
-দাদুর বাসাটা ছিল খুব সুন্দর। আমার পছন্দের জায়গার
মধ্যে ছিল অন্যতম। আব্বুর মুখে শুনেছিলাম দাদুর এই
গ্রামে নাকি ভূতের বসবাস রয়েছে। যদিও আমি ভূত
প্রেতদেরকে বিশ্বাস করি না। আচ্ছা আপনি কি এই সবে
বিশ্বাস করেন?
-না আমিও ভূত প্রেতকে বিশ্বাস করি না তবে জ্বীন
আছে বলে আমাদের ধর্ম গ্রন্থে বলা হয়েছে।
-আমিও বিশ্বাস করি জ্বীন আছে।
-আচ্ছা তারপর কি হল।
-তারপর আমাকে বাসা থেকে কোথাও একা যেতে দিতো
না কিন্তু আমিও নাছোড় বান্ধা আমি বাহিরে যাব।
আম্মুর চোখ ফাকি দিয়েই বাহিরে যেতাম। একদিন
সাইকেল চালাতে গিয়ে একটা এক্সিডেন্ট করে ফেলি
-এই মেয়ে দাঁড়াও
-দেখেন আমি ইচ্ছা করে বাবুটাকে লাগাই নি।
-দেখে চালাতে পারেন না।
-বেল তো দিয়েছি কিন্তু বাবুটা হঠাৎ রাস্তা পার হবে
বুঝতে পারি নি। (চোখে জ্বল নিয়ে)
– এই এলাকায় নতুন মনে হচ্ছে।
-হ্যা নতুন, দাদু বাসায় বেড়াতে এসেছি।
-কোন বাড়িতে।
-মুন্সি বাড়ি। আব্দুল্লাহ মুন্সির নাতিন হই।
-ওমর আংকেলের মেয়ে নাকি তুমি।
-হ্যা। আপনি বাচ্চাটাকে একটু চুপ করাবেন প্লিজ।
-তুমি যাও আমি বিষয় টা দেখছি।
– আচ্ছা।
,
-এই যে শুনো
-হ্যা বলুন।
-আমাকে চিনতে পারো নি মনে হয়।
-না মানে, এই গ্রামে এসেছিলাম সেই ক্লাস ফাইবে
থাকতে তাই চিনতে পারছি না।
-আমি শিহাব, তোমাকে কদম ফুল পাড়িয়ে দিয়েছিলাম
মনে আছে। এক সাথে সাইকেল চালাতাম।
-শিহাব ভাই আপনি।
দুইজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কারো সাথে
কথা বলছে না। শিহাব মাথায় হাত দিয়ে চুল নাড়ছে আর
মেয়েটা মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছে।
-তুমি কিন্তু আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়েছো।
-ধন্যবাদ ভাইয়া।
-আগে কত মোটা ছিলে আর এখন তো ছোট খাটো একটা
পরী।
-আপনিও কিন্তু অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছেন।
-হ্যা তা তো হয়েছি।
-চলেন বাসার দিকে যাই।
-চল।
যাওয়ার সময় দুই জন ফোন নাম্বার আদান প্রদান করে
নেয়। তারপর শুরু হয়। রাত ভর ম্যাসেজ দেয়া নেয়া আর
দিনে এলাকার বিভিন্ন যায়গায় ঘুরে বেড়ানো। এই
কয়দিনে মেয়েটা ভুলেই গিয়েছে সে শহর থেকে এসেছে।
-শিহাব ধন্যবাদ তোমাকে।
-কেনো।
-এই সুন্দর কিছু মূহুর্ত উপভোগ করে দেয়ার জন্যে। জানো
শিহাব ভুলেই গিয়েছিলাম আমি শহরের মেয়ে। আর
তোমার সাথে কাটানো সময় গুলা কখনো ভুলতে পারব না।
-আমিও ভুলতে পারব না। তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।
-হ্যা বল।
-আসলে কিভাবে যে বলি বুঝতে পারছি না।
-আরে বলই না কি বলবে।
-আচ্ছা এই নাও চিঠিটা বাসায় গিয়ে খুলবে।
-এখন খুলি না।
-না বাসায় গিয়ে খুলবে। এখন যাও প্রায় সন্ধ্যা হয়ে
এসেছে।
-আচ্ছা। আসি তাহলে
-আচ্ছা।
-আচ্ছা চিঠিতে কি লেখা ছিল।
-কি লেখা ছিল তা তো অবশ্যই বলব।
-আচ্ছা বলেন।
-তার আগে একটা প্রশ্নের উত্তর দিন তো।
-আপনি কখনো প্রেম করেছেন।
-আমার গল্পটা না হয় আরেকদিন শুনবেন। আজ এই গল্পটা
শেষ করুন।
– তাহলে শুনুন।
চিরকুট টা ছিল একটা প্রেম পত্র। শিহাব ওই মেয়েটাকে
প্রোপোজ করেছিল। তাদের প্রথম দেখা আর পরিচয় হয়
শিহাব যখন ক্লাস সেভেনে পড়ে আর মেয়েটা ক্লাস
ফাইভে।
-আমি জানতাম তুমি আসবে।
-তুমি বলেছো আর না এসে পাড়ি।
-তোমার হাতটা ধরতে পারি।
-যদি না কখনো ছেড়ে না দাও তাহলে ধরতে পারো।
-কথা দিলাম কখনো হাতটা ছেড়ে দিবো না।
নতুন ফুলের সুভাসে যেমন ভোমরের আগম হয় তেমনি
তাদের দুই জনের নতুন ভালোবাসার ফুলের সুভাস
ছড়িয়েছে আর ভোমর রুপে এসেছে অনাবিল সুখ। অল্প
কয়দিন পর মেয়েটা ঢাকায় চলে আসে। আর শিহাব তার
পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুতি নিতে থাকে। যেদিন মেয়েটা
ঢাকায় চলে আসে সেদিন দুই জনে অনেক কান্না
করেছিল। ঢাকায় আসার পরেও তাদের দিন কাল ভালই
চলছিল। পরীক্ষার পর শিহাব ঢাকায় চলে আসে তারপর
তাদের সম্পর্ক আরো গভীরে প্রেবেশ করে। দেখা
সাক্ষাৎ, শেয়ারিং কেয়ারিং আর খুনশুটি ঝগড়ার মধ্যে
চলতে থাকে তাদের সম্পর্ক। খুব সুখের মধ্যে তাদের দিন
কাল চলতে থাকল। সুখের সময় গুলা খুবই ক্ষীণস্থায়ী হয়।
আর এর মধ্যে মেয়েটা ইন্টার পেরিয়ে অনার্স প্রথম
বর্ষরে পদার্পণ করেছে। ঝগড়া , মান অভিমান নিয়ে
তাদের দিন গুলা খুব ভালই চলছিল। তাদের সম্পর্কের
মধ্যে অভিমান ছিল বেশি। তাই হয়ত তাদের সম্পর্কের
গভিরতা টা একটু বেশিই। এর মধ্যেই মেয়ের বাবা জেনে
যায় তাদের সম্পর্কের কথা। মে টা তার বাবাকে সব খুলে
বললেও ওনি রাজি হয় নি।
-তোকে আগামী কাল দেখতে আসবে, কোথাও যেন না
যাওয়া হয়। আর আমার বন্ধুর ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় থাকে।
তার সাথেই তোর বিয়ে হবে।
-বাবা
-চুপ কোন কথা হবে। না এখানেই তোর বিয়ে হবে। আর তুই
রাজি না হলে আমি খারাপ কিছু একটা করে ফেলব।
,
-মেয়েটা কি রাজি হয়েছিল। ওপ্স মেয়ের নামটা বলছেন
না যে?
-হ্যা মেয়েটা রাজি হয়েছিল। না হয়ে আর উপায় ছিল না।
বাবা ছিল হার্টের রুগি। একবার স্টক করেছিল। আবার
যদি হয় তাই।
-মেয়েটার নাম বলব শেষে।
-আচ্ছা মেয়েটা কি আপনার পরিচিত। আর চিঠিতে কি
লেখা ছিল সেটা কি আপনি জানেন।
-হ্যা মেয়েটা আমার খুব খুব খুব পরিচিত আর চিঠিতে
লেখা ছিল, যদি ভালোবাস আমায় আজ রাত ৮ টায় চলে
এসে বাগান বাড়িতে।
-তারপর কি হল।
-তারপর মেয়েটা বিয়ের পর শশুড় বাড়ি চলে যায়। স্বামী
বিশাল ব্যবসায়ী, সারাদিন ব্যবসা নিয়েই পড়ে থাকে।
-আর শিহাবের কি হিয়েছিল পরে?
-শিহাব সেদিন অনেক কান্না করেছিল। মেয়েটার বাবা
তাকে খুব বেশি অপমান করেছিল। আর মেয়েটাও রাগ
করে বলেছিল তার চেহারা আর দেখতে চায় না। তাই আর
কখনো সামনে আসেনি।
-শিহাব এখন থাকে কোথায়।
-শুনে ছি লন্ডনে থাকে।
-তারপর কি হয়েছে?
-তারপর মেয়েটা এখনো সেই ছেলেটাকেই ভালোবাসে
আর ভালোবেসে যাবে।
-তাহলে মেয়েটা তার স্বামীকে ঠকাচ্ছে না।
-না তার স্বামীকে ঠকাবে কেনো। তার স্বামী তো সব
কিছু ব্যবসায়ীক ভাবে দেখেন হোক সেটা বাহির আর
ভিতর।
-আচ্ছা একটা প্রশ্ন করব। মাইন্ড করবেন না তো।
-না করুন।
-গল্পের মেয়েটা কি আপনি?
-আপনাকে যতটা বুদ্ধিমান মনে করেছিলাম ঠিক তার
থেকেও বেশি। হ্যা মেয়েটা আমি। আর আমার নাম
তিথী।। কিভাবে বুঝলেন এটাই আমি?
-ওই যে বলেছিলেন ১ম ক্লাস ফাইভে থাকতে গ্রামে
এসেছিলেন সেখান থেকে। আর আপনি যেভাবে ঘঠনা টা
বললে তাই মনে হল।
-আপনার বুদ্ধি মাত্রা খুব ভাল।
-ধন্যবাদ। আযান দিয়েছে নামায পড়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।
-আর আপনি।
-নামায পড়ে প্রত্যেক দিনের মত বাহিরে হাটতে বের হব।
একা একা হাটার মজা অন্য রকম।
-আপনার গল্পটা শুনা হল না ।
– সেটা না হয় আরেকদিন শুনবেন।

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত