অজানা দীপ

অজানা দীপ

ফাহিমের অনেক দিনের শখ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যাবে। কিন্তু প্রচুর লেখাপড়ার চাপ আর বেড়াতে যাবার জন্য বন্ধুরা রাজি না হওয়ায় তার আর

কক্সবাজার যাওয়া হয়নি। এবার,, পরীক্ষা শেষে সব বন্ধুরা মিলে কক্সবাজার যাবে বলে ঠিক করলো কিন্তু কক্সবাজারে কারো পরিচিত কেউ নেই। তবে ফাহিমের

ফেইসবুক ফ্রেন্ড “ইশান”-এর বাড়ি কক্সবাজার। ইশানের সাথে সরাসরি দেখা না হলেও ইশান,,,ফাহিমের অনেক ভালো বন্ধু।তাই ঠিক করা হলো সবাই কক্সবাজার গেলে

ইশানের বাসায় উঠবে। তানভির,,রিদয়,,হাসনাত,, সবাই তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে অনুমতি পেলেও “দীপু”র মা তাকে কোন ভাবেই কক্সবাজার যাবার অনুমতি

দেননি। ফাহিম’ সহ সবাই অনুরোধ করলেও তিনি দীপুকে যেতে দিবেন না। কারণ, গত কয়েকদিন আগে “অর্ণবের” গ্রামে গিয়ে দীপু আহত হয়ে ফিরেছে। তার সেই

চোট এখনো শরীরে আছে। এদিকে ইশান,,, কক্সবাজার থেকে জানিয়ে দিয়েছে যে,,, এখানে আসলে সমুদ্র দেখা হবে আর সাথে অন্য আরেকটা রহস্যের সমাধানও

হবে। “রহস্য” শব্দটা শুনতেই সবাই এক পায়ে রাজি কক্সবাজার যাবার জন্য। দীপু তার মা”কে না জানিয়েই বন্ধুদের সাথে কক্সবাজার যাবার সিদ্ধান্ত নিলো। যাবার দিন

ছোট্ট একখানা চিরকুট লিখে মায়ের রুমে রেখে গেলো। কক্সবাজার পৌঁছে সবাই “ইশানের” বাসায় উঠলো। ইশান,,সকলের খুব ভালো করে খাতির যত্ন করলো আর

জানিয়ে দিলো পরের দিন সে সবাইকে নিয়ে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যাবে। তবে তানভির,,, চুপ থাকলোনা,,, সে জানতে চাইলো ইশান যে রহস্যের কথা বলছিলো সেই

রহস্যটা কি? ইশান বলে দেয়,,, আসলে রহস্যের ব্যাপারটা মিথ্যা,,, সে সবাইকে এখানে আনার জন্যই এই মিথ্যা কথাটা বলেছে। ইশানের এই রসিকতায় তানভিরের

কিছুটা রাগ হলো আর সেই সাথে ইশানকে কেমন জানি সন্দেহজনক মনে হলো। একটা ছেলের সাথে ফেইসবুকে পরিচয় আর সেই ছেলে তার নিজের বাসায় এনে

তাদেরকে এমন খাতির যত্ন করতেছে,,,, এর পিছনে নিশ্চয়ই কোন স্বার্থ আছে ইশানের। তা না হলে সে সামান্য একজন ফেইসবুক ফ্রেন্ডের জন্য এত কিছু করবে

কেনো?? সবাই রাতে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু,, তানভিরের তখনো ঘুম আসছে না। সে শুনতে পেলো রুমে ইশান কার সাথে যেনো আস্তে আস্তে কথা বলছে।

ইশান,, কথা বলতেছে এটা আন্দাজ করা যাচ্ছে কিন্তু কি কথা বলতেছে সেটা বুঝা যাচ্ছে না। এই ঘটনার জন্য ইশানের প্রতি তানভিরের সন্দেহটা আরেকটু বাড়লো।

পরেরদিন সবাই যথারীতি ঘুম থেকে উঠলো। কিন্তু তানভির বিছানায় নেই। ইশানের “মা” সবার জন্য নাস্তা রেডি করে সবাইকে ডাকতেছেন। সবাই নাস্তা খেয়ে রুমে

গিয়ে দেখে তানভির বসে আছে। তানভিরকে কোথায় গিয়েছিলি এই প্রশ্ন করার আগেই সে বলতে শুরু করে,,আমার কাছে ইশানকে কেমন জানি সন্দেহজনক মনে

হয়েছিলো তাই তার ব্যাপারে জানতে ইশানের প্রতিবেশি এক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করি,,,, আর জানতে পারি যে,,, ইশানের ছোট দুটো ভাই ছিলো,,,, গত কয়েকদিন আগে

দুজনেই কিডনাপ হয়ে গিয়েছে। কে বা কারা করেছে এর কোন খোজ খবর পাওয়া যায়নি। সবাই বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে। এবার ইশানের কাছে তার ভাইদের হারানোর

কথা বললে সে কোন জবাব দিতে চায়নি কিন্তু সবাই জোর করায় ইশান বলে দেয় যে,,, ” কিছুদিন আগে তার পুরো ফ্যামিলি সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গিয়েছিল। বাবা-মা

আর ভাই-বোনদের নিয়ে অনেক আনন্দ হয়েছিল সেদিন। কিন্তু বিকেলবেলা হঠাৎ করে ইশানের ছোট দুই ভাই “অভি” ও “জাবেদ” হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির

পরেও তাদের পাওয়া যায়নি। বাবা থানায় জিডি করিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি। ইশানের বাবা ছিলেন,,, পীর,, তান্ত্রিক এদের ভক্ত। তাই তার পরিচিত

এক পীরের কাছে গেলে তিনি জবাব দেন যে ইশানের ভাই দুটো হারিয়ে যায়নি তবে সমুদ্রের পাশে অনেক বড় একজন বাবা”র মাজার রয়েছে আর সেই বাবার ইচ্ছায়

ইশানের ভাই দুটো গায়েব হয়ে আছে। পীর সাহেবের এই জবাবে ইশানের বাবা-মা সন্তুষ্ট ছিলেন না। তারা এলাকার সব থেকে বড়মাপের তান্ত্রিকের কাছে গেলেন।

তান্রিক জবাব দিল,,, ছেলে দুটো হারিয়ে যায়নি,,,, সাগর দেবতা তাদের কেড়ে নিয়েছেন। এভাবে আরোও দুএকজন তান্ত্রিক ও পীরের কাছে গেলেও তারা এরকমই

জবাব দিলেন। যার জন্য ইশানের বাবা-মায়ের বিশ্বাস হয়ে গিয়েছিলো যে,,, তাদের ছেলে দুটো হারিয়ে যায়নি বরং বিশেষ উদ্দেশ্য তাদের তুলে নেওয়া বা গায়েব করা

হয়েছে। এর পর থেকে ছেলে হারানোর জন্য তাদের কোন আফসোস নেই। তবে ইশান এখনো ভাইদের জন্য লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে। আর তার ভাইদের খুঁজে বের করার

জন্যই ফাহিমদের মিছেমিছি রহস্যের কথা বলে এখানে নিয়ে এসেছে। তবে ইশানের মা তার ছেলেদের খুজতে নারাজ। কারণ তার ছেলেরা গায়েব এমনি এমনি হয়নি

এর পিছনে নিশ্চয় কোন পীর বাবা অথবা সাগর দেবতার হাত রয়েছে। এজন্যই ইশান এই কথাগুলো ফাহিমদের সাথে শেয়ার করেনি। ইশানের,, ভাইদের নিখোঁজ হবার

কথা শুনে,,, সককেরই মন খারাপ। তবে,,, ফাহিম ঠিক করলো তারা সবাই মিলে ইশানের ভাইদের খুঁজে বের করবেই।তবে ইশান চাইছিলো সবাই লুকিয়ে লুকিয়েই তার

ভাইদের খুঁজুক,,,, তার “বাবা- মা” শুনলে মানা করবেন। তানভিরের,, মাথায় নানা প্রশ্নে জট বেঁধে আছে। নিজের ছেলেদের খুঁজতে যেতে মানা করবেন,,, এ কেমন

বাবা-মা?? এই প্রশ্নের কোন জবাব নেই তার কাছে। হয়তো পীর-তান্ত্রিকদের উপর অন্ধ বিশ্বাসের জন্যই তারা এমন করছেন নয়তো অন্য কোন রহস্য লুকিয়ে আছে এর

মধ্যে। বিকেলেই সবাই সমুদ্র দেখতে এসেছে। অনেক ভালই লাগছে সবার। কিন্তু ইশানকে কেমন জানি উদাস লাগতেছে। হয়তো ভাই হারানোর বেদনায় এমন দেখাচ্ছে

তাকে।

ঘুরাঘুরি শেষে সবাই যখন বাসায় ফিরতে যাবে ঠিক তখনি শুনা গেলো সমুদ্র সৈকত থেকে আজও দুটো ছেলে নিখোঁজ। কিভাবে? কেনো? কে? এর কোন উত্তর নেই

কারো কাছে,,,,

ছেলে দুটো হারিয়ে যাওয়ায় তাদের বাবা-মা অনেক কান্নাকাটি করতেছেন ঠিকই কিন্তু কোন সমাধান বা কি করবেন এমন কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না। কারণ,,, তারা স্থানীয়

মানুষ না। অনেক দূর থেকে এসেছেন। এখানের কাউকে জানেন না চিনেন না। তারাও স্থানীয় থানায় জিডি করালেন। কিন্তু ২ দিন পরেও ছেলে দুটোর কোন খোঁজ

নেই। খবর পাওয়া গেলো এই ছেলে দুটোও ইশানের ভাইদের মতো সাগর দেবতা অথবা অন্য কোন মহৎ উদ্দেশ্যে গায়েব হয়ে গেছে। এই খবর শুনে ছেলে দুটোর বাবা

মা ইশানের বাবা-মায়ের মতো চুপ থাকেনি। তারা দুজনেই উচ্চ শিক্ষিত। এসব এই সব সাগর দেবতা আর অন্য কোন কু-সংস্কার এর ওপর তাদের কোন বিশ্বাস নেই

কিন্তু কিছু করার ও ছিলো না কারণ এখানকার প্রায় সব মানুষই এইসব কু-সংস্কারে বিশ্বাস করে। ছেলেহারা বাবা-মায়ের জন্য ফাহিমদের অনেক দুঃখ হয়। কিন্তু,, তারাও

এই প্রথমবার কক্সবাজার এসেছে তারাও এখানকার কোন কিছুই জানে না। ইশান কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা হলেও একটু মদন টাইপের সেও কোন কাজের  নাহ।

এই ঘটনার পর এখনো আর কোন নিখোঁজ হবার কথা শুনা যায়নি। আজ ফাহিম ও তার বন্ধুরা মিলে আবার সমুদ্রতটে ঘুরতে বেরিয়েছে। সব বন্ধুরা ফুর্তি করলেও

দীপুর মন খারাপ,,, সে ভাবতে আছে এভাবে মা-বাবার অনিচ্ছায় তার এতদূর আসা ঠিক হয়নি। না জানি তার জন্য তার বাব-মা কত চিন্তা/দুশ্চিন্তা করতেছেন!! এসব

ভাবতে ভাবতে দীপু সবার থেকে আলাদা হয়ে যায়। অনেক দূরে চলে আসে সে। নিজেকে একা একা মনে হচ্ছে তার,,,, আশেপাশে পরিচিত কেউ নেই,,,, অনেক দূরে

ফাহিমদের দেখা যাচ্ছে,,, এবার হঠাৎ করে তার মাথায় চিন চিন করে ব্যথা আরম্ভ হয়েছে,,,,, কিছুক্ষণের মধ্যে তার চারপাশের সবকিছু কেমন জানি বদলে যেতে

থাকে,,,,,কিছুই দেখা যাচ্ছেনা,, সবকিছু কেমন জানি ঘোলাটে দেখা যাচ্ছে,,, কিছুক্ষণের মধ্যে দীপু অজ্ঞান হয়ে যায়।এর পর কি হয় সে বুঝে উঠতে পারে না। এদিকে

ফাহিমেরা সমুদ্র কিনারায় হাঠতে হাঠতে অনেক দূরে চলে আসে। ফাহিম পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখে সবাই আছে কিন্তু দীপু নেই,,,, দীপুর কি হলো?? কোথায়

গেলো?? কেনো গেলো??? কেউই দীপুর কোন খোঁজ জানে না। দীপুকে খোঁজে না পেয়ে সবাই অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। এখন দীপুর বাবা-মা কে তারা কি জবাব

দিবে??? সবাই বুঝে গেলো যে আগের ঘটনা গুলোর মতো আজ দীপুও নিখোঁজ হয়েছে। অনেকেই তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছে চিন্তা না করতে। কিন্তু ফাহিমেরা সবাই অবেক

ঘাবড়ে গেছে। দীপু ছোট ছেলে না যে তাকে যে কেউ ধরে নিয়ে যাবে অথবা কিডন্যাপ করবে। এর পিছনে নিশ্চয় কারো হাত আছে। হয়তো সাগর দেবতা অথবা অন্য

কোন কিছু দীপুকেও গায়েব করে নিয়েছে। কিন্তু এসব কু- সংস্কারে তো তারা বিশ্বাসী না। রাতে সবাই রুমে শুয়ে আছে,,,, কিন্তু কারো চোখে কোন ঘুম নেই। হঠাৎ করে

তানভিরের মোবাইলে একটা অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এলো,,, ” আমি দীপু,,,, আমি এখন নাকিকেল জিঞ্জিরায় বন্ধী আছি।” এই মেসেজটা পড়ে সবাই ভাবলো

তাইলে দীপু ঠিক আছে। তাকে অবশ্যই খুঁজে পাওয়া যাবে। আমাদের নারিকেল জিঞ্জিরায় যেতে হবে। কিন্তু, কেউ জানে না নারিকেল জিঞ্জিরা কি?? ফাহিম কিছুক্ষণ

ভাবলো,,, তারপর সবাইকে জানিয়ে দিলো যে নারিকেল জিঞ্জিরা হচ্ছে ” সেন্টমার্টিন দ্বীপের ” আরেক নাম।সকলের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এলো,, সবাই ভাবছিলো

“নারিকেল জিঞ্জিরা ” মানে কিনা কি হবে। কক্সবাজার থেকে একটা ছোট ট্রলার ভাড়া করে পরের দিন সবাই রওয়ানা দিলো নারিকেল জিঞ্জিরা তথা সেন্ট মার্টিন দ্বীপের

উদ্দেশ্য। সবাই খুশি,,,,, দীপুকে খুঁজে পাওয়া যাবে আর সেন্ট- মার্টিন দ্বীপ ও দেখা হয়ে যাবে।কিন্তু কেউই জানতো না যে,,তাদের জন্য কি বিপদ অপেক্ষা করছে,,,,

কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেলো যে,,, একটা ছোট ঘূর্ণিঝড় তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। এটা দেখেই ট্রলার চালক ঘূর্ণিঝড়ের সাথে টক্কর এড়াতে ট্রলার টিকে ডানে ঘুরিয়ে

অন্যদিকে নিয়ে গেলেন। প্রচুর গতিতেই চলছে ট্রলার,,,,, সবার চোখেমুখে ভয়। আজকের আবহাওয়াতো ঠিকই ছিলো। ঘূর্ণিঝড়ের কোন সম্ভাবনাই ছিলোনা আজ।

তাহলে কোথা থেকে এলো এই ঝড়?? কেউ কোন উত্তর খুঁজে পায়না। এদিকে হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ে ট্রলার চালক “গউস আহমেদ ” সেন্ট-মার্টিন দ্বীপের রাস্তা ভুলে অন্য দিকে

চলে এসেছেন। তিনি নিজেও জানেন না তারা কোথায় এসেছেন বা কোথায় যাবেন এখন। সকলেই নিশ্চুপ। দূরে একটা দ্বীপ দেখা যাচ্ছে কিন্তু সকলেই জানে এই

এলাকায় সেন্ট-মার্টিন দ্বীপ ছাড়া অন্য কোন দ্বীপ নেই। তাইলে কি এটাই সেন্ট-মার্টিন দ্বীপ??? এর আগে তারা কেউ আসেনি এখানে তাই চিনতেও পারছেনা ঠিক

মতো। গউস আহমেদ জানিয়ে দিলেন যে,,, এটা সেন্ট-মার্টিন দ্বীপ না। তাছাড়া সেন্ট-মার্টিন দ্বীপ তো নারিকেল গাছে ভরপুর কিন্তু এই দ্বীপে নারিকেল গাছ দূরে থাক

একটা  কচু গাছও নেই। যেই গাছপালা আছে সব গুলোই অজানা অচেনা,,,,, এমনকি পুরো দ্বীপের সবকিছুই অজানা। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। কি করবে সবাই

কিছুই  চিন্তা করতে পারছে না। দ্বীপের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। ভিতরে কেউই যাচ্ছে না ভয়ে।সবাই নিরব। তানভির,,,, নিরবতা ভেঙে দিয়ে বললো,, চলো সবাই

ভিতরে যাই যা হবার হবে এখন সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে,,,,,, তানভিরের কথায় সবাই নিজেদের ব্যাগ গুলো নিয়ে ভিতরের দিকে রওয়ানা দিলো। দ্বীপের ভিতরে ঢুকতেই

অদ্ভুত অদ্ভুত আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। কিসের আওয়াজ বুঝা মুশকিল। সকলেই দ্বীপের ভিতরে প্রবেশ করলো। ভিতরটা স্যাঁতস্যঁতে আর অন্ধকার।তবে আবছা

আলোয় সব কিছু দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া সকলেই নিজেদের টর্চ লাইট নিয়ে এসেছে তাই দেখতে সমস্যা হচ্ছেনা। রিদয় সিগারেট খেতো এটা সবাই জানতো।তাই তার

ব্যাগ থেকে মেছের কাটি বের করে সহজেই আগুন ধরানো হলো। এবার সকলে মিলে দীপুর কথা চিন্তা করতে লাগলো। তানভিরের মোবাইলে মেসেজটা কি আসলেই

দীপু দিয়েছিলো নাকি অন্যকেউ দিয়েছিলো সে নিয়েই ভাবছে সবাই,,,,,, হঠাৎ পিছন থেকে অদ্ভুত কোন কিছুর শব্দ শুনা গেলো,,,,,, পিছনে তাকাতেই তানভির ভয়ে

চিৎকার দিয়ে উঠলো,,,,,, বাকি সবাই যতক্ষণে পিছনে ফিরে তাকালো ততক্ষণে তানভিরের দেহ মাটিতে পড়ে গিয়েছে আর তার মাথা দিয়ে রক্ত ঝরছে,,,,,,, তানভিরের

কি হয়েছে?? কেন হয়েছ?? কেউ বুঝে উঠতে পারছে না,,,,,,,,,

তানভিরের মাথায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। দীপু নেই তাদের সাথে নয়তো তার ফাস্ট-এইড বক্সটা এখন অনেক কাজে আসতো। ইশান পানি দিয়ে তানভিরের মাথা ধুয়ে

দিয়ে,,, নিজের শার্ট ছিড়ে কোনরকম পট্টি বেঁধে দেয়। এতে তানভিরের মাথায় রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়। তবে তার মাথায় তখনো প্রচুর বেদনা হচ্ছে,,,,, তানভিরের সাথে

ঠিক কি ঘটেছিলো তার কিছুই বুঝা যায়নি। রাতে সবাই না ঘুমিয়েই থাকলো,,, পরের দিন সকালে সবাই নিজেদের ব্যাগে রাখা খাবার থেকে সামান্য কিছু খেয়ে দ্বীপের

বাহিরে বেরিয়ে আসে। দ্বীপের বাহিরে এসে সবাই যা দেখলো তার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলো না। একটা ছোট ট্রলার দ্বীপের পাড়েই পড়ে আছে,,,, ট্রলারটিতে তাজা

রক্তের দাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কিসের রক্ত তা কেউ জানেনা। হতে পারে কোন বন্য জীবজন্তুর রক্ত। কিন্তু,, ট্রলারটা কোথা থেকে এলো??? সবাই একবার

আশেপাশে চেয়ে দেখলো,,, কিন্তু কিছুই দেখা যাচ্ছে না। অনেকটা দূরে দুটো মানুষের মাথা দেখা যাচ্ছে। দূর থেকে দেখে বুঝতে পারা গেলো যে মানুষ দুটো শুয়ে আছে।

কিন্তু কাছে গিয়ে যা দেখা গেলো তা দেখে সকলেরই মাথা ঘুরছে,,,, কারো মুখে কোন কথা নেই,,,,,, দূর থেকে দেখা গিয়েছিলো দুজন শুয়ে আছে কিন্তু কাছে এসে দেখা

গেলো যে,,,, এখানে শুধু দুটো মুন্ডু পড়ে রয়েছে,,, মানুষ তো দূরের কথা মানুষের শরীরের অন্য কোন অংশও নেই এখানে,,,, এমনকি হাড় গুলোও নেই। সবাই কি

করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে। মুন্ডু গুলো,,, এখানে রেখেই সবাই সরে আসলো,,,, এবার সবাই ঠিক করলো,,, এখান থেকে চলে যাবে,,, কিন্তু দীপু আর ইশানের ভাই

এর কথা চিন্তা করে সবাই যাবার চিন্তা বাদ দিয়ে দিলো। সারা দিন সবাই দ্বীপের বাইরে ঘুরাঘুরি করে আর তেমন সন্দেহজনক কিছুই দেখতে পেলো না। এদিকে আস্তে

আস্তে সন্ধ্যা হয়ে আসছে,,,, সবাই দ্বীপের ভিতরে যাবার জন্য পা বাড়ালো,,,, কিন্তু দ্বীপের ভিতরে যাবার আগেই ভিতর থেকে কান্নার আওয়াজ শুনা গেলো,,,,, বাচ্চাদের

কান্না,,, এই অজানা দ্বীপে বাচ্চা এলো কোথা থেকে??? ভিতরে গিয়ে দেখা গেলো,,, একটা ছোট্ট বাচ্চা বসে কাঁদতেছে,,,,বাচ্চাটির আশেপাশে কেউ নেই,,,, রিদয়

আস্তে আস্তে বাচ্চাটির দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো,,,, বাকি সবাই পিছনে পিছনে যাচ্ছে,,,, বাচ্চাটির কাছে যেতেই সে কান্না ছেড়ে দিয়ে এবার হাসতে শুরু করেছে।

রিদয়,, বাচ্চাটির চোখের দিকে তাকিয়েই চমকে উঠে,,, এই বাচ্চার চোখে আগুনের ফুল্কি দেখা যাচ্চে,,, বাচ্চাটার হাসি আস্তে আস্তে বাড়তেই থাকলো আর সাথে সাথে

তার অগ্নি চক্ষুটার আকারও বাড়তে থাকে,,,,,তার চোখ দুটো বাহিরে বেরিয়ে যাবার উপক্রম। রিদয় বাচ্চাটির থেকে ৪হাত দূরে, বাকি সবাই বাচ্চাটির থেকে নিরাপদ

দূরত্বে আছে। এবার বাচ্চাটি রিদয়ের দিকে এগিয়ে আসছে,,, কাছে এসেই যেই রিদয়ের শরীরে হাত রাখলো অমনি রিদয় সহ বাচ্চাটি গায়েব হয়ে গেলো। বাকি সবাই

ভয়ে জড়সড়ভাবে বসে আছে। কেউই বুঝতে পারছে না তাদের সাথে কি হচ্ছে। সকলের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট কিন্তু এতকিছুর মাঝে ট্রলার চালক “গউস”

মিটিমিটি হাসতেছে। তার হাসি বাকি সবার কাছে বিভ্রান্তিকর লাগে। তাদের এই বিপদের সময় ট্রলার চালকের এত হাসি আসছে কেনো?? ট্রলার চালককে সন্দেহজনক

মনে হয় ফাহিমের,,, এদিকে অনেকটা অন্ধকার হয়ে গেছে,,,, প্রায় রাত ১১ টা বাজে। গতরাতে “রিদয়” এর ব্যাগ থেকে মেসের কাটি বের করে কোন রকমে আগুন

রাতটা পার করতে পেরেছিলো সবাই,,,, কিন্তু আজ রিদয় নেই,,, তাই কোন রকমেই আগুন ধরানো গেলো না। অন্ধকারে সবাই একজন অন্যজনকে জড়িয়ে ধরে

আছে। কেউ কোন শব্দ করছে না। সকলেরই পেঠে ক্ষুধা আছে,,,  কিন্তু ব্যাগ থেকে বের করে কোন কিছু খাবে তার সাহস টুকু হয়না কারো। একটু শব্দ করলেই যেনো

তাদের মধ্যে যে কেউ গায়েব হয়ে যাবে এমন একটা ভয় কাজ করছে সকলের মধ্যে। রাতে কারোরই ঘুম হয়নি। সকালের সামান্য আলোয় সবাই জেগে উঠে,,,, সবাই

আছে একসাথে। কিন্তু,, ট্রলার চালক “গউস” তাদের মাঝে নেই। সকলের ভয় আরেকটু বেড়ে গেলো। রিদয়,, গত রাতেই হারালো,,, দীপু তার আগেই হারিয়ে গিয়েছে,,,

এখন ট্রলার চালক “গউস”ও হারিয়ে গেছে। এখন বাকি রয়েছে,, ফাহিম,,তানভির,, হাসনাত আর ইশান। তারা চারজন ই এখন এই অজানা দ্বীপে একা আছে। আর কেউ

নেই এখানে। সবাই দ্বীপের বাহিরে যাবার জন্য বেরিয়ে পড়লো। কিন্তু কিছুদূর যেতেই ট্রলার চালক “গউসের” লাশ পাওয়া গেলো। “গউসের” এক হাত, এক পা, শরীরে

নেই। মাথার মাঝখানে ছিদ্র করা। মাথার ভিতরের অংশ টা খালি। সেখনে মস্তিষ্কটা নেই। আস্তে করে তার শার্টটা সরাতেই সবাই ভয়ে আৎকে উঠলো,,,, পেঠের

নাড়িভুড়িও নেই। এবার চার বন্ধুই ভয় পেয়ে গেলো। সবাই একটু থেমেই এক দৌড়ে চলে আসে দ্বীপের বাহিরে। দ্বীপের বাহিরে এসেও তাদের ভয় কমলো না। দ্বীপের

বাহিরেও ছড়িয়ে আছে ৪/৫ টা মানুষের দেহ । সব গুলা দেহের কোন না কোন অংশ গায়েব। কারো হাত নেই,, কারো পা নেই,,,কারো মাথা নেই অথবা কারো মস্তিষ্ক ও

নেই। এসব কিছু দেখেই সবার অজ্ঞান হবার মতো অবস্থা। তার মানে দীপু ও রিদয়ের সাথেও কি এমন কিছু হয়েছে?? সবাই এই কথা ভাবতেই শিহরে উঠে। অনেক দূরে

একটা ছোট্ট নৌকা জাতীয় কিছু দেখা যাচ্ছে। তাতে একজন মানুষ ও দেখা যাচ্ছে। একটু সাহায্যে পাবার আশায় সবাই নৌকাটির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। কাছে

যেতেই সবাই চমকে উঠে। এতো ট্রলার চালক “গউস আহমদ” যার লাশ সবাই এইমাত্র দ্বীপের ভিতরে দেখে এসেছে। গউস আহমদ,,, সবার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে

থাকিয়ে আছে। কিন্তু,, যার লাশ দ্বীপের ভিতরে একটু আগেই দেখে এসেছে সবাই সে এখনও জীবিত থাকে কেমনে??

 

“গউস আহমদ”কে জীবিত দেখে সবাই ভয় পেয়ে যায়। কারোর মুখে কোন কথা নেই। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না কেউই। চারজনই একে ওপরের হাত ধরাধরি

করে দাঁড়িয়ে আছে। কোন কিছু ভাবার আগেই” গউস আহমদ ” তাদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। সকলেই প্রচন্ড রকমের ভয় পেয়ে গেলো। ফাহিম বাকিদের হাত

ধরে পিছনে ফিরেই দৌঁড় শুরু করলো। অনেকক্ষণ দৌঁড়ানোর পরে তারা সবাই নিরাপদ দূরত্বে চলে আসে। ফাহিম,,তানভির,,ইশান চলে আসলেও হাসনাত আসতে

পারেনি। দৌঁড় দিতে গিয়ে হাসনাত আছাড় খেয়ে পড়ে গিয়েছিলো,,, সেদিকে কারোরই নজর ছিলো। পড়ে গিয়ে হাসনাত প্রচণ্ড ব্যাথা পেয়েছে যার জন্য উঠতেও

পারেনি। এদিকে “গউস আহমদের ” চেহারা আস্তে আস্তে বদলে যেতে শুরু করলো। ফাহিম,,ইশান আর তানভির দূর থেকেই তার বদলে যাবার দৃশ্য দেখতেছে ,,,

পলকের মধ্যেই গউস আহমদের চেহারা বদলে একটা ছোট্ট বাচ্চার চেহারায় পরিণত হয়ে গেলো। ভয়ে আর আতংকে কারো মুখে কোন কথা নেই। একটা ছোট্ট বাচ্চা

দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তার সামনেই পড়ে আছে ”হাসনাত”। হয়তো পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে সে। কিন্তু ছোট্ট বাচ্চাটি আস্তে আস্তে হাসনাতের পাশেই

চলে আসে। হাসনাতের শরীরে স্পর্শ করলেই বাচ্চাটি হাসনাত সহ উদাও হয়ে গেলো। কোথায় গেলো কেউই জানে না। ফাহিমের মনে পড়ে গেলো,,, এতো সেই বাচ্চা

গতকাল রিদয়কে নিয়ে উদাও হয়ে গিয়েছিলো। আর আজ হাসনাতকে নিয়ে গেছে। এই অজানা দ্বীপে কেউই নেই এখন। ফাহিম,,ইশান,, তানভির আর সেই ছোট্ট

বাচ্চাটিই এই দ্বীপে জীবন্ত আছে। আর আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আশে মাথা বিহীন,, হাত-পা বিহীন অসংখ্য লাশ। তিন বন্ধুর এই মূহুর্তে কি করা উচিত কেউই বুঝে

উঠতে পারেনা। এখান থেকে ফিরে যাবার কোন উপায় কারোর জানা নেই। তাইলে কি সবাই এই ছোট্ট বাচ্চাটির শিকার হয়ে লাশ হিসেবে এই দ্বীপেই পড়ে থাকবে?? না

কিছুতেই হতে দেয়া যায় না। তাদের তিনজনকেই এই বাচ্চাটির হাত থেকে বাঁচতে হবে। কিন্তু কিভাবে বাঁচতে হবে সেটা কেউই জানে না?? তিনজন মিলে এবার দ্বীপের

পিছন দিকে যেতে লাগলো। তারা যতই পিছনে যাচ্ছে ততই বেশি বেশি লাশ দেখতে পাচ্ছে। এইসব লাশের দেহ পঁচে গন্ধ বের হচ্ছে। পঁচা লাশের গন্ধে সকলের

নাড়িভুঁড়ি বের হবার উপক্রম। কিন্তু কিছুই করার নেই। বাঁচতে হলে গন্ধ সহ্য করতে হবে। আরো কিছু সামনে এগুতেই দুটো বাচ্চার লাশ দেখা গেলো। দেহ থেকে মাথা

ছিন্ন করা। কাদের লাশ?? বুঝা মুশকিল। এই লাশ দুটো দেখতেই ইশানের চোখের কোণে জল চলে আসলো,,,, চিৎকার করে কাঁদতে চাইলেও ভয়ে তার কান্নার আওয়াজ

মুখের বাইরে বের হলোনা। লাশের মাথা দেখে ছেলে দুটোকে কেউ চিনতে না পারলেও,, “ইশান “বাচ্চা দুটোর পরনের কাপড় দেখে ঠিকই চিনতে পারলো যে,,, এই

ছেলে দুটোই তার হারিয়ে যাওয়া ভাই ” অভি ও জাভেদ”। ইশানের মুখ থেকে এই কথা শুনেই সবাই অবাক। তাদের সকলের ভয় আরোও বেড়ে যায়। তাহলে কি এই

দ্বীপেই,,, দীপু,,রিদয় ও হাসনাতের লাশ এভাবেই পড়ে রয়েছে?? এই ভাবতেই সবাই চমকে উঠে।আরেকটু সামনে যেতেই চোখে পড়ে আরোও দুটো ছোট বাচ্চার লাশ।

কারোর বুঝতে বাকি রইলো না যে এই লাশ দুটো কার?? এই বাচ্চা দুটো নিশ্চয় সেই দম্পতীর বাচ্চা যারা সমুদ্র সৈকতে হারিয়ে গিয়েছিলো। এখন তারা দ্বীপের প্রায়

পিছনে চলে এসেছে। তানভিরের মাথায় আবার রক্ত পড়া শুরু হয়েছে। সেদিন রাতের আঘাতটা এখনো সেরে উঠেনি। তার রক্তের রঙ টাও কেমন জানি বদলে গেছে।

তার লাল রঙের রক্ত এখন আস্তে আস্তে হলুদে পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে । তানভিরের হলুদ রক্ত দেখে ফাহিম ভয় পেলেও ইশান কেনো জানি ভয় পায়না।ইশান কেনো

হলুদ রক্ত দেখে ভয় পায়নি সেটা কিছুতেই বুঝতে পারেনি ফাহিম। হলুদ রক্ত দেখে ইশানের চরিত্রে কেমন জানি উৎফুল্লতা ফুঠে উঠে। আংগুলের ডগায় সামান্য রক্ত

নিয়ে ইশান রক্তের স্বাদ নেয়। তার মুখের কোণায় কিঞ্চিত হাসি দেখা যায়। ইশানের এই ব্যতিক্রমী হাসিতে ফাহিম অনেকটা অবাক হয়। একটু আগে যেই ছেলে ভাইয়ের গলে যাওয়া লাশ দেখে কেঁদেছিলো সেই ছেলে নাকি এখন রক্তের স্বাদ নিয়ে হাসে?? তানভিরের প্রচুর রক্তক্ষরণের জন্য সে এখন ক্লান্ত হয়ে মাটিতে শুয়ে আছে,,, তার

চোখ দুটো বন্ধ। এদিকে ইশানের অদ্ভুত আচরণ গুলা শুধুমাত্র ফাহিম’ই দেখতেছে। আশেপাশে কেউ নেই। জায়গাটাও নির্জন। কোন পশুপাখির আওয়াজ ও নেই।

“ইশান ” এবার তার পুরো হাত দিয়ে তানভিরের মাথা বুলিয়ে দেয়। তার পুরো হাতে তানভিরের হলুদ রক্তের স্পর্শ লেগে আছে। ইশান আস্তে আস্তে তার হাতটা চুষতে

শুরু করে। ফাহিম ভয় পেয়ে কিছুটা সরে আসে। ফাহিম নিরাপদ দূরত্বে চলে আসলেই,, কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই ছোট্ট ছেলেটা চলে আসে তানভির আর ইশানের

কাছে। দূর থেকে ফাহিম দেখতে পায় ইশান আর সেই পিচ্ছি ছেলেটা তানভিরের হলুদ রক্তের স্বাদ নিচ্ছে আর হাসছে,,,, এদিকে তানভির অজ্ঞান থাকায় সে এর

কিছুই টের পাচ্ছেনা। ফাহিম” কিছুতেই বুঝতে পারছেনা তাদের সাথে এসব কি হয়েছিলো আর কি হচ্ছে এখন??? সে শুধু সেই ছোট্ট ছেলেটার রক্তমাখা চোখের দিকে

থাকিয়ে আছে আর ইশানের সাথে ছেলেটার রহস্যময় হাসি দেখে ভয়ে কাঁপতেছে,,,,,

ইশান আর পিচ্ছি ছেলেটার অদ্ভুত আচরণে ফাহিম ভয় পেয়ে নিরব হয়ে বসে আছে দ্বীপের এক কোণে।তাদের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে সে। দূর

থেকে তাদের অদ্ভুত অদ্ভুত আচরণ গুলো দেখতেছে। তানভির তখনো অজ্ঞান। কিছুক্ষণের মধ্যেই তানভিরকে নিয়ে ইশান আর পিচ্ছি ছেলেটা উদাও হয়ে যায়।

কোথায় আর কিভাবে গেলো?? এর কিছুই বুঝতে পারে না ফাহিম।তবে এই দ্বীপে এখন ফাহিম একা। সে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না ।

একা একা ভাবতেছে কেনো বন্ধুদের নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে এলো আর কেনোই বা সবাইকে হারাতে হলো। এসব ভাবতে ভাবতেই সন্ধ্যা হয়ে আসে। আজ কেউ নেই

তার সাথে। তাই নিজেকে একা একা মনে হচ্ছে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারতেছে না ।

আস্তে আস্তে “ফাহিম” দ্বীপের ভিতরের দিকে যেতে থাকলো। আগের দিনের মতোই দ্বীপের ভিতরে ছোট বাচ্চার কান্না শুনা যাচ্ছে। একা ভিতরে যাবার সাহস হয়না

ফাহিমের। ঠিক করলো আজকের রাত সে বাহিরেই কাঠিয়ে দিবে।

ব্যাগের ভিতরে থাকা সব কয়টি শার্ট-প্যান্ট বের করে মাটিতে চাদরের মতো বিছিয়ে দেয়। সারা দিন ধরে কিচ্ছু খাওয়া হয়নি তার। ব্যাগ থেকে সামান্য বিস্কুট আর পানি

খেয়ে নেয় সে। দ্বীপের বাহিরে থাকায় চাঁদের আলোয় স্পষ্ট সবকিছু দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া আজ এমনিতেই চাঁদের আলো একটু বেশি। হয়তো আজ পূর্ণিমারাত।

একা থাকায় ভয়ে আর আতংকে ফাহিমের ঘুম আসেনা কিছুতেই।আনমনে বসে কি করা যায় সেই চিন্তা করতেছে সে। কিছুক্ষণ পর দ্বীপে কারো অট্টহাসির শব্দে

ফাহিমের টনক নড়ে।

ফাহিম যেখানে বসে আছে এর অনেকটা দূরে বসে আছে আরো দুজন ব্যাক্তি। সে দুজন ব্যাক্তি কে? সেটা বুঝতে ফাহিমের দেরি হলোনা। এদের একজন তারই বন্ধু

ইশান আর আরেকজন দ্বীপের সেই পিচ্ছি ছেলেটা।

তাদের হাসির কারণ টা বুঝতে পারেনা “ফাহিম”।কিন্তু এটা বুঝতে পারে যে,, এই দুজনের হাসি মানেই খারাপ কিছুর পূর্বাভাস। আস্তে আস্তে হাসির আওয়াজ আরেকটু

প্রখর ও তীব্র হতে থাকে। এক সময় তাদের হাসিটা পুরো দ্বীপে ছড়িয়ে যায়। সেই চিৎকার করে হাসাহাসিতে পুরো দ্বীপ হেলে যাবে মনে হচ্ছে।

ফাহিম,,, আরেকটু খেয়াল করে দেখে যে ইশান আর পিচ্ছি ছেলেটার পাশেই রয়েছে একটা ছোট নৌকা। আর সেই নৌকায় রয়েছে ৩/৪ টা মানুষের লাশ। ইশান আর

পিচ্ছি ছেলেটা লাশ গুলোর দেহ থেকে বিভিন্ন অংশ ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে।

এবার ফাহিমের বুঝতে বাকি রইলো না যে এই দ্বীপে এত মানুষের লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কেনো? সামনে দুটো পিশাচ বসে আছে আর এদের থেকে কিছু দূরেই বসে

আছে ফাহিম,,, কথাটি ভাবতেই ভয়ে ফাহিমের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।

নৌকায় থাকা লাশগুলো ভক্ষণ শেষে ইশান আর পিচ্ছি ছেলেটা হাসতে হাসতে দ্বীপের ভিতরে চলে যায়।

ফাহিম,,, এবার না বসে থেকে সাহস করে নৌকার পাশে চলে আসে। নৌকায় থাকা লাশগুলো থেকে বিদঘুটে গন্ধ বের হচ্ছে। কিন্তু,, ফাহিম সেই গন্ধ সহ্য করে লাশ

গুলো নৌকা থেকে নিচে নামিয়ে নেয়। নৌকাটি আস্তে আস্তে জলে নামিয়ে আনে।

ফহিমের বুঝতে দেরি হয়না যে,,, তাকে যা করার আজ রাতেই করতে হবে নইলে কাল সকালে সেও এই পিশাচের খাদ্য হবে।

নিজের ব্যাগটা নিয়ে নৌকায় উঠে বসে ফাহিম। হাতে ছোট একটা লাটি আছে। আস্তে আস্তে এই অজানা আর ভূতুড়ে দ্বীপ থেকে সে সরে আসে। এবার অনেকটা দূরে

এসে গেছে। মনে হচ্ছে সমুদ্রের মাঝখানে আছে। অনেক ক্লান্ত সে। কোন কিছু না ভেবেই নৌকায় ঘুমিয়ে পড়ে সে।

পরের দিন দুপুরে ঘুম ভাঙে তার। নিজেকে একটা ট্রলারে আবিষ্কার করে সে। ট্রলারের মানুষজন জানিয়ে দিলেন যে আজ সকালেই তারা সেন্ট-মার্টিন দ্বীপ থেকে

কক্সবাজার ফেরার পথে একটা ছোট নৌকায় অজ্ঞান পেয়েছেন,,, ফাহিমকে।ট্রলারে করেই ফাহিম কক্সবাজার চলে আসে।

ফাহিম,,, কাউকে কিছুই জানায় না। নিজের বাড়িতে চলে আসে সে। “অজানা দ্বীপের” রহস্য সকলের অজানাই থেকে যায়। কিন্তু,, শুধু ফাহিম নিজে জানে সে কিভাবে

তার বন্ধুদের হারিয়েছিলো। এখনো “অজানা দ্বীপের” রহস্যের জন্য ফাহিম অনুশোচনায় ভোগে।
***

এতটুকু গল্প লিখে “দীপু “থেমে যায়। চেয়ারে বসে দেহ সামনে পিছনে আনা- নেওয়া করে। “ইশান “তার খুব ভালো বন্ধু ছিলো। ফেইসবুকেই পরিচয় তাদের। তবে ইশান

এখন আর বেঁচে নেই। কিছুদিন আগেই সড়ক দূর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়ে। মৃত্যুর পূর্বে “ইশান “চাইতো যে,, দীপু তাকে নিয়ে গল্প লিখবে তবে তাকে একটা ভিলেনের চরিত্র

দিতে হবে।

ইশানের সেই আশা পূর্ণ করতেই “দীপু ” এই আজগুবি গল্পটা লিখেছে। এতক্ষণে দীপু গল্প লিখে ক্লান্ত। রুমের লাইটটা অফ করে বিছানায় দেহ হেলিয়ে দেয় সে। হাল্কা

ঘুমুবার চেষ্টা করলেও ঘুমুতে পারেনা সে।

হঠাৎ,,, রুমে অদ্ভুত হাসির শব্দ শুনতে পায় দীপু। বিছানায় শুয়ে শুয়ে দেখতে পায় পড়ার টেবিলে বসে আসে “ইশান ও সেই পিচ্ছি”ছেলেটা। তারাই দীপুর দিকে

থাকিয়ে অদ্ভুত রকমের হাসি হাসছে।

………………………………………(সমাপ্ত)…………………………………

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত