আবির সাহেব:-তা আপনার নামটা আর ঠিকানাটা ডিটেইলস্ বলুন।
আমি:-জ্বি আমি আরিয়ান মাহাবুব রাজ।বাসা:-কুষ্টিয়াতে আর এখন আপনাদের ঢাকাতে একটি কম্পিউটার ফার্মে চাকুরী করি।
আবির সাহেব:-তা রাজ সাহেব জানেন তো ফ্লাট এর জন্য ৩ মাসের ভাড়া অগ্রীম দিতে হবে।
আমি:-জ্বি এই নিন টাকা।
আবির সাহেব:-এই নিন চাবি।দারোয়ান চাচা ইনাকে ওই বাড়িটাতে নিয়ে যাও।
দারোয়ান চাচা:-জ্বি স্যার আসুন। নিয়ে গেলো একটা পুরোনো ফ্লাট এর সামনে।আশেপাশে বাড়ি একটু দূরে দূরেই।
দারোয়ান চাচা:-এই নিন এটায় আপনার ফ্লাট।আর আমি সবসময় এখানে আছি।
আমি:-ওকে চাচা।
চাবি নিয়ে ফ্লাট এর কাছে আসলাম। ফ্ল্যাটের দরজাটা খুলতেই কেমন দমবন্ধ করা একটা পোড়া গন্ধে আমার শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো। কোন রকমে ব্যাগটা মাটিতে রেখে নাক মুখ চিপে হাঁচি-কাশি দিতে শুরু করলাম। প্রায় ৪-৫ মিনিট পরে গন্ধটা কোথায় যেন উধাও হয়ে যায়। আমি মাথা ঝাড়া দিতে দিতে উঠে দাড়াই।
ঘরে ঢুকে বিছানার উপরে ব্যাগটা রাখতেই ধুলায় ঘরটা অন্ধকার হয়ে যায়। কি একটা অবস্থা মনে হয় কয় বছর ধরে এই ঘরে কেউ ঢুকে না। কিন্তু এই পাঁচ তলায় এতো ধুলা কোথা থেকে আসল। ধুত রাস্তার পাশের ঘর আসতেই তো পারে। আর এতো দিন কেউ ঘরে না ঢুকলে ঘরতো এমন হবেই। দেয়ালে কাপড় রাখার জন্য কয়েকটা ক্লিপ আছে আমি একটা পুরাতন কাপড় দিয়ে সেটা পরিষ্কার করে দিই। তারপর ব্যাগ থেকে কাপড় গুলো বের করে আটকে দিতে থাকি৷ ব্যাগের মধ্যে থাকলে আবার গন্ধ হয়ে যাবে। তাই সব গুলো পান্জাবীই নেড়ে দিছি৷ হটাৎ পানি পরার টিপটিপ শব্দ কানে আসতে থাকে৷ আমি পান্জাবীটা হাত থেকে রেখে গোসল খানার কাছে যেতেই শব্দটা বন্ধ হয়ে যায়। অনেক দিন ধরে ব্যবহার নেই তাই হয়তো কলটা নষ্ট হয়ে আসছে।
এখানে এসেছিলাম সেই বিকাল বেলা এখন সন্ধ্যা হয়ে এলো প্রায়। ঘরে কারেন্ট আছে ঠিকই কিন্তু লাইটা কিছুতে ধরাতে পারছি না। হয়তো অনেক দিনের পুরোনো তাই নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আমি দোকানে চলে যাই একটা লাইট(বাল্ব) আনতে৷ বাল্ব কিনে নিয়ে আসতে আমার সন্ধ্যা হয়ে যায়। তাই একবারে নামায পরে তার পরই বাসায় যাই। দড়জা খুলতেই ক্যায়.. করে একটা চিকন শব্দ হয়।কিন্তু শব্দটা খুবই প্রখর যার ফলে আমার কানের পর্দা যেন ফেটে যাওয়ার অবস্থা। আহ বাবা কয় বছর ধরে গ্রীজ এর কোন ব্যবহার নেই তাই হয়তো দড়জায় কব্জা গুলো নষ্ট হয়ে এমন আওয়াজ হয়েছে।
দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে বাল্বটা লাগালাম মোবাইলের ফ্লাশ জ্বালিয়ে। রাতের খাবার বাড়ি থেকেই নিয়ে এসেছি তাই রান্না ঘরে গেলাম সেগুলো গরম করতে। চুলার সুইচ গুলোর উপরে প্লাস্টিকের প্রলেপ দেয়া সত্ত্বেও ভিতরে জং ধরে গেছে। কোন রকমে চুলা জ্বালিয়ে রান্না বসালাম। একটু পরেই কেমন জানি একটা পোড়া পোড়া গন্ধ আসছে। কিন্তু আমি তো চুলার সামনেই। কিছু পুড়লে তো আমি নিজে দেখতাম।হয়তো বাইরে থেকে আসতেছে। কিন্তু জানালা তো সব বন্ধ তবুও কোথা থেকে আসছে। আমি জানালা গুলো খুলে যাতে গন্ধ কোন ভাবে আসলেও তা চলে যায়৷
একটু পরেই আবার একটা গন্ধ লাগছে নাকে। কিন্তু গন্ধ টা বেশ ভালো। আতরের মতো গন্ধ। আস্তে আস্তে তিব্র আকার ধারন করছে।
কিন্তু আমার রুমে আতরের গন্ধ আসবে কি করে৷ আমিতো আতর দেইনি৷ আতরের গন্ধ তো ব্যাপন হয়। আর ব্যাপন হলে বাইরে থেকে ঘরে আসবে কি করে৷ ধুর ঘরের কোন জিনিস ই ভালো লাগছে কিছু ই বুঝতে পারছিনা কি হচ্ছে। তাই ওই সব চিন্তা বাদ দিয়ে আমি কোরআন তেলওয়াত করতে থাকি আপন মনে। গান টা আমি শুনি না। অধিকাংশ সময় অবসরে কোরআন তেলওয়াত শুনি তাই মুখে কোরআন তেলওয়াত ই চলে আসে একটু পর পর। আপন মনে কোরআন তেলওয়াত করতেছিলাম। যখনই সুরা নাস তেলওয়াত শুরু করি আস্তে আস্তে গন্ধ টা কমতে থাকে সুরাটা ৪ লাইন পড়া শেষ হতেই গন্ধ টা শেষ হয়ে যায়। আমি তেলওয়াত করতে করতেই জানালাটা লাগিয়ে দেই যেন আর কোন গন্ধ না আসে। রাতে নামাজ পড়ার জন্য আর মসজিদে যাইনি। ঘরেই পরে নিব তাই ভাবলাম খাওয়া দাওয়া শেষ করে একবারে শোয়ার আগেই ফ্রেস হয়ে ওজু করে নামাজ পরে ঘুমাবো এতে ওজু অবস্থায় ঘুমটাও হবে। আর ঘুমটাও ভালো হবে।
খাওয়াদাওয়া শেষ করতে করতে সময় প্রায় ১০ টা বাজে। ওয়াশরুমের দরজা খোলা রেখেই কাজ সারছিলাম। তখনই একটা বাতাশে দরজাটা ধাক্কা খায়। একটু পরেই ঘরে কেমন যেন কারো হাঁটার আওয়াজ পাচ্ছি। কাজ সেরে ওজু করে বের হব তখন দেখি দরজাটা খুলিতেছে না৷ এটা কি দরজা কে লাগাবে৷ ঘরে কি চোর আসল নাকি? কিন্তু চোর আসবে কি করে বাথরুমের দরজায় জোরে একটা লাথি মারতেই দরজাটা খুলে আমি বাইরে ফ্লোরে এসে পরি। শরীর ঝাড়া দিয়ে দাঁড়াই। হয়তোবা অনেক দিন ব্যবহার না করার ফলে বাতাসে লেগে যাওয়ার পর খুলতে ছিল না। কিন্তু এতো জোড়ে কি করে লাগবে যে ধাক্কায় খুলে নি। ফ্ল্যাট টাতে ঢুকার পর থেকেই কেমন অসাভাবিক কর্মকান্ড হচ্ছে। ব্যপার টা ভালো লাগছে না। নামাজ শেষ করে ঘুমিয়ে পরলাম।
রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। রান্না ঘর থেকে পাতিল নাড়াচাড়া করার শব্দ আসতেছে। কিন্তু এতো রাতে তাও আমার রুমের রান্না ঘর থেকে শব্দ আসবে কি করে এই রুমে তো আমি একাই থাকি। উঠে রান্না ঘরে যেতেই শব্দ বন্ধ হয়ে যায়। আবার এসে শুয়ে পরি৷ কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না৷ খালি মাথায় একটা চিন্তাই ঘুরতে লাগল। বাড়ি ওয়ালা এতো কম টাকায় বাসাটা ভাড়া দিল কেন? আর রুমে এতো অসাভাবিক কর্মকান্ড ই বা হচ্ছে কেন? কোথাও এমন টা নয়তো,যে এসবের কারনেই বাসাটা কম টাকায় ভাড়া দিয়েছে!
এবার চিন্তাটা প্রখর হচ্ছে কোন ভাবেই মাথা থেকে সরাতে পারছি না। কিন্তু ঘরটা পরিষ্কার করতে গিয়ে অনেক শক্তি খরচ হওয়ায় শরীরটা খুবই ক্লান্ত।আর বেশী কিছু ভাবতে পারলাম না। চোখটা জোর করে বন্ধ করে রাখতেই ঘুমিয়ে গেলাম। একটু পরে আবার ও ঘুমটা ভেঙে গেল একটা বিকট শব্দে লাফ দিয়ে উঠে বসে রইলাম৷ শব্দের উৎস খুজতে চেষ্টা করছি। ঠিক তখনই বারান্দা থেকে নুপুর এর ঝুনঝুন শব্দ ভেসে আসছে। আমার চোখ বারবার চরকির মতো ঘুরতে লাগল৷ এবার অবশ্য কিছু টা ভয় লাগছে।
এতো রাতে আমার ফ্ল্যাটে নুপুরের আওয়াজ কি করে আসবে৷ এই ফ্ল্যাটে তো কেবল আমি একাই থাকি। ভয় হওয়া সত্ত্বেও দরজা খুলে বেড়িয়ে পরলাম। শব্দের উৎস খুজতে থাকি। বারান্দা দিয়ে একটা কালো অবয়ব এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত জুড়ে হাঁটছে। আমার সারা শরীর একটা ঝাঁকুনি দিয়ে প্রতিটা লোম দাঁড়িয়ে যায়। হঠাৎ ই একটা প্রচন্ড বাতাসের সাথে সাথে অবয়ব টা মিশে যায়৷ আর দেখতে পাইনা আমি। ব্যাপারটা আমার কাছে খটকা লাগতে শুরু করে। রুমে চলে আসি ঘুমাব বলে৷ কিন্তু কিছুতেই আর চোখের পাতা এক করতে পারছিনা৷ বার বার শুধু ঘটনা গুলো মনে পরছে। তবু সকালে অফিসে যেতে হবে তাই সব চিন্তা ছেড়ে ঘুম দিলাম।
কেউ একজন বার বার আমাকে বলছে, “চলে যা এখান থেকে যা বলছি তাই শোন বেশী বাড়াবাড়ি করলে পস্তাতে হবে।যা এখান থেকে” বলেই একটা চিৎকার করে৷ সাথে সাথে আমিও চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে উঠে পরি৷ পুরোটা বুক সজোরে উঠানামা করছে৷বুক চেপে ধরে বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে সাভাবিক করে আবার ও ঘুমিয়ে পরলাম৷
সকালে ফজরের আজানেই ঘুম ভেঙে যায়।রাতে ঘুম ভালো হয়নি তাই শরীরটা বেশ ব্যাথা করছে। তবুও ওযু করে মসজিদে চলে গেলাম৷ নামায পরে এসে ঘুমানোর বেশী সময় নেই। তাই একটা চায়ের দোকানে গিয়ে এক কাপ চা খেয়েই আবার বাসায় ফিরছিলাম। বাড়ির গেইট পেরোতেই দারওয়ান কেমন করে যেন তাকাচ্ছে আমার দিকে। হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম……..
আমি:-চাচা কিছু বলবেন”?
চাচা:- না বাজান কিছু না,ঘুম ঠিক মতো হইছেতো? কোন ঝামেলা হয়তাছে না তো রাজ বাবা?
আমি:- না চাচা কোন সমস্যা নাই, তবে ঘরের জিনিসপত্র অনেক গুলো নষ্ট। কিন্তু আমি ঠিক করে নিছি এখন সমস্যা নাই”।
অতপর ঘরে এসে অফিসের জিনিসপত্র গুছিয়ে রান্না করতে গেলাম। হঠাৎ ই মনে পরল কালকে রাতে না কতো কিছু ঘটে গেল।দারওয়ান চাচাকে তো বিষয় টা বলার দরকার ছিল৷ ধুত একটুও মনে ছিল না আবার দেখা হলে জিজ্ঞেস করব নে। আবার রান্নায় মনোযোগ দিলাম৷ খাওয়া দাওয়া করে যখনই অফিসে রওনা হলাম৷ কিন্তু নিচে গিয়ে দারওয়ান চাচাকে আর দেখলাম না তাই বিষয় টা বলাও হয়নি৷ অফিস থেকে ফিরতে প্রায় রাত ৮ টা বেজে গেল। এবার ও আর দারওয়ান এর দেখা পেলাম না। কোন রকম রান্নাটা শেষ করে খেয়ে নিলাম। তারপর অফিস এর কিছু কাজ করলাম ল্যাপটপে৷ কখন যে রাত ১২ টা বেজে গেল বুঝতেই পারলাম না৷ কাজ রেখে ওযু করে নামাজ টা শেষ করলাম৷ আরেকটু কাজ রয়েছে সেগুলো শেষ করতে বসলাম আবার। হঠাৎ ই লাইট টা বারবার জ্বলা নিভা করতে লাগল। এক পর্যায়ে একদম ই অফ হয়ে গেল।
বাল্ব লাইটটা LED চার্জ বাল্ব এমন ভাবে লাফালাফি করে নষ্ট হওয়ার কথা না৷ তাই খুলে একটু ঘসামাজা করে আবার লাগালাম। কিন্তু না লাইট টা নষ্ট ই হয়ে গেছে একবারে। এখন আবার এই বাল্ব পাব কোথায়। হ্যা মনে পরেছে৷ বাড়ি থেকে আসার সময় বাইরে থেকে একটা এনার্জি বাল্ব কিনেছিলাম৷ কিন্তু বেশী ভালো হবেনা ভেবে আর ইউজ করা হয়নি৷ ওটা দিয়ে আপাতত কাজ চালিয়ে দিই৷ বাল্ব টা জ্বলাতে খুশিই হলাম৷ আলো একটু কম কম৷ কিন্তু এখন তো আর লিখব না। ল্যাপটপ এই কাজ করব। তাই আর সাতপাঁচ না ভেবে কাজে মন দিলাম।
ঘুমে চোখ ঢুলুঢুলু করছে৷ আর বেশি খন জেগে থাকতে পারলাম না৷ কাজ খান্ত নিয়ে শুয়ে পরি৷ ঘুমানোর দোয়া সহ অন্যন্ন সেফটি সুরা গুলো পড়ে ঘুম দিলাম একটা। কোন একটা কাঁচের ব্রাস্ট হওয়ার প্রকট শব্দে লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে পরি। পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে ফ্ল্যাশ জ্বলালাম দেখি বাল্বটা ব্রাস্ট হয়ে গেছে। যাহ ভাবছিলাম তাই হলো৷ ফুটপাতের বাতি আর কত লাস্টিং করবে। বলে মনকে সান্ত্বনা দিলাম। কিন্তু হঠাৎ ফ্লোরে নজর পরতেই হতভম্ব হয়ে গেলাম। বাল্বটা তো দেয়ালে হোল্ডার এর সাথে লাগানো ছিল৷ ওটা ফাটলে গ্লাস গুলো ত সারা ঘরে ছিটিয়ে যাওয়ার কথা৷ আর নয়ত কেবল দেয়াল ঘেঁষে পরার কথা। কিন্তু বাল্বটার কাচ গুলো একদম ঘরের মাঝখানে একজায়গায় জড়ো হয়ে আছে৷ যেন কেউ গুড়ো করে ওখানে রেখে দিছে।
বিষয়টা আমাকে বেশ ভাবাতে লাগল। কিন্তু বেশী ভাবতে পারলাম না আর। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল৷ মোবাইল টা কোন রকমে রেখে আবার ঘুম দিলাম। হঠাৎই কোন ভাবে শ্বাস নিতে পারছিনা৷ বুকটা ভারি হয়ে গেছে। কেউ একজন আমার বুকের উপরে বসে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আর দু’হাতে প্রচন্ড জোরে চেপে ধরেছে। যতই ধাকাচ্ছি কোন ভাবেই সরাতে পারছিলাম না৷ যতই আয়তুল কুরসি পড়ার চেষ্টা করছি৷ দোয়া পড়ার চেষ্টা করছি৷ কোন ভাবেই গলা দিয়ে বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আর বেশি খন বাঁচব না৷ আমার শ্বাস ফুরিয়ে আসছে। জিহ্বা গলা ছেড়ে বাইরে বেড়িয়ে আসতে চাইছে৷ বাতাস থেকে আওয়াজ আসছে, “কতোদিন বাঁচবি তুই আমার থেকে।এবার তো সুযোগ পেয়েছি এখন কে বাঁচাবে তোকে।এই ঘর আমার শুধুই আমার৷ এঘরে কেবল আমার থাকার অধিকার আছে৷ আর কারও না। আর কারও না। হাহাহাহা।”
আমি আর কোন ভাবেই চোখ খুলতে পারছি না৷ জিহ্বা সহ বুকের ভিতরের সব জিনিস যেন আমার গলা দিয়ে বের হয়ে আসতে চাইছে৷ শ্বাস নেয়ার কোনই সুযোগ নেই৷ হঠাৎ ই বাতাসের সাথে ভেসে আসতে লাগল সেই চিরচেনা বাক্য। আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার। আর সাথে সাথে আমার গলা ও বাধন মুক্ত হতে লাগল। বুকের উপর থেকে ভারটা কমে গেল৷ এতো জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলাম যে আমার পেট পিঠের সাথে ঠেকে যাচ্ছিল বলে মনে হয়। পাঁজরের নিচের দিকটা শ্বাস নেওয়ার তালে তালে ভিতরে গেঁথে যাচ্ছিল। শ্বাসটা সাভাবিক হতেই কোন রকমে পান্জাবীটা গায়ে জড়িয়ে নামাজের জন্য চলে গেলাম৷ নামাজের শেষ ইমাম সাহেবকে বিষয় টা খুলে বল্লাম। উনি বললেন, “
ইমাম সাহেব:-আচ্ছা আরিয়ান রাজ সাহেব আপনি কি ২য় বার ঘুম থেকে উঠার পরে আর দোয়া পড়েন নি”?
আমি খেয়াল করে দেখলাম যে হ্যা আসলেই আমি ২য় বার ঘুম ভাঙার পরে আর দোয়া পড়িনি।
আমি:-না পড়ি নি।
ইমাম সাহেব:-ওটাই সমস্যা হয়েছে। আপনি ২য় বার ঘুম ভাঙার পরে যদি সব দোয়া গুলো ঠিক মতো পড়ে নিতেন তবে মনে হয় আর এত সমস্যা হতো না৷ তবে আপনি এক কাজ করেন এই বাসাটা ছেড়ে দিন৷ কয়েকজন এর কাছে শুনেছি ওই বাড়িতে নাকি কি একটা ঝামেলা হয়েছিল।”
আমি:-আচ্ছা ধন্যবাদ ইমাম সাহেব।
আমি বাড়ির পথে রওনা দিলাম৷ গেইটের কাছে আসতেই দারওয়ান চাচার দেখা পেলাম। বিষয় টা জিজ্ঞেস করলে তিনি এড়িয়ে যেতে চাইলেন। কিন্তু আবার জোর করার পর বললেন৷ দারোয়ান চাচা:-কয় বছর আগে৷ ওই রুমটায় একটা দম্পতি থাকত৷ নতুন বিবাহিত। কিন্তু কোন এক ঝামেলায় তাদের মাঝে প্রায়ই ঝগড়া হতো৷ একদিন স্বামী তার স্ত্রীকে মেরে ফেলেন। কিন্তু এখান থেকে লাশ পাচার করাটার ব্যবস্থা না পেয়ে মৃত্যুকে নাটক সাজাতে ঘরে আগুন লাগিয়ে দেন এবং বলেন যে তার স্ত্রী আগুন লেগে মারা গেছে। কিন্তু পরে ধরা পরে যে আসলে আগে খুন হয় তারপর আগুনে পোড়ে৷ এরপর থেকে ওই রুম ২ বার ভাড়া দেয়া হয়। কিন্তু সবাই ই ১ম দিনেই চলে যায়৷
আমি:-ওকে চাচা।
আমার আর বিষয় টা বুঝতে বাকি থাকলো না। আমি আমার জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে বের হয়ে যাই ওই রুম থেকে। বের হওয়ার সময়ে ঘটনাটা মনে পরে চোখের কোনে একটুখানি পানি প্রবাহ দেখা দেয়। স্ত্রীকে ও খুন করা যায় বুঝি?
নিজেকে চরিত্র। দৈনন্দিন চলাফেরা সব ঠিক রাখার পিছনে যে নারী টার অবদান সবচেয়ে বেশি সে হলো স্ত্রী। আর ওই স্ত্রীকেই খুন? নিজের চাহিদার সময় বুকে টেনে নেওয়া আবার চাহিদা শেষে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়াটা কতই না জঘন্য কাজ৷
গল্পের বিষয়:
রহস্য