জ্ঞান ফিরেই দেখলাম চোখের সামনে একটা মেয়ে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। বললাম,,
-কে মা আপনি? পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নার্স বলে উঠলো
-উনি তো আপনার প্রেমিকা! আমি বললাম,,,,
– আমি আবার প্রেম করলাম কবে? নার্স সাথে সাথে বলে উঠলো,,,,
-রোগীর অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে রোগী স্মৃতিশক্তি হারিয়েছে।
এই কথা শুনে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি হাতের লাঠি দিয়ে আমার মাথায় দিলো একটা বারি। চোখে জোনাকিপোকা দেখলাম, তারপর আর কিছু মনে নেই। কিছুদিন আগের কথা!!! ফেসবুকে ফ্রেন্ডলিস্টের অপরিচিত একজন মেয়ে একটা ছবি পাঠিয়েছে ইনবক্সে। চেক করে দেখলাম মেয়েটা বেশ সুন্দরী। মুখে তেমন আটা ময়দা নেই বললেই চলে। সাথে সাথে মেয়েটি মেসেজ দিলো,,,
-স্যরি ভাইয়া, ভুলে আপনাকে ছবি পাঠিয়েছি। যদি কিছু মনে না করেন তাহলে ছবিটা ডিলিট দিলে খুশি হবো ।
আমিও সাথে সাথে রিপ্লাই দিলাম,,
-আচ্ছা আপু ঠিকাছে। আমি ছবিটা ডিলিট করে দিয়েছি”। দুনিয়াতে গার্লফ্রেন্ডের মতন দজ্জাল আর কেউ নেই। বয়ফ্রেন্ড কোথায় লাইক, কমেন্ট করছে সেইসব এদের গোয়েন্দাগিরির প্রধান বিষয় গুলোর একটি। সন্দেহ জিনিষ টা মনে হয়ে এদের রক্তে। কিসব বিদঘুটে টিভি প্রোগ্রাম সিআইডি,আদালত, ক্রাইম প্যাট্রোল, দেখে দেখ এদের মাথা এক্কেবারে বখে গেছে। অপরিচিত কোনো মেয়েকে লাইক,কমেন্ট দিলে এক্কেবারে খবর করে ছাড়ে।
এইসব ভেবে মেয়েটার মেসেজ কনভারসেশন ডিলিট দিয়ে দিলাম। পাছে প্রেমিকা দেখে যদি আমাকে সন্দেহ করে নাহ বসে। আমি হচ্ছি গিয়ে ভালো মানুষ তো। ঐ যে আছে না, প্রেমিকার কথায় উঠবস করে অনেকে, ঠিক তেমনি একজন ছেলে। ভালো ছেলেরাই নাকি ফেসবুকের পাসওয়ার্ড গার্লফ্রেন্ড কে দিয়ে রাখে। উঁহু এটা আমার কথা নয়।নারী সমাজের কথা। এরমধ্যে গার্লফ্রেন্ডের সাথে বিশাল ঝগড়া। একে অন্যকে ব্লক করে বসে আছি। রিলেশন নেই বললেই চলে। গার্লফ্রেন্ড বলেছে আমার চেয়ে নাকি ভালো ছেলের সাথে প্রেম করে আমাকে দেখিয়ে দিবে। মন খারাপ করে রাতে ফেসবুকে ঘুরাঘুরি করছিলাম। এমন সময় সেই মেয়েটি হঠাৎ করে মেসেজ দিলো,,,
-ভাইয়া কেমন আছেন? বেশ অবাক হয়েই রিপ্লাই দিলাম,,,
-ভালো আছি আপু। আপনি কেমন আছেন? মেয়েটি বলল,,,
-আমিও ভালো আছি ভাইয়া। সেইদিনের জন্য স্যরি। আসলে কিভাবে যে ছবিটা হঠাৎ আপনার কাছে চলে গেছে। আমি বললাম,,,
-না না ঠিক আছে।
মানুষের ভুল হতেই পারে। তারপর থেকে শুরু হয়ে গেলো আমাদের মেসেজ আদানপ্রদান। মেয়েটা এর মধ্যে বেশ কয়েটি ছবিও দিয়েছে। মেসেঞ্জারে কল দিয়ে বেশ কয়েকবার কথাও হয়েছে। আহা! কি গলার সুর। মাঝেমধ্যেই কল দিয়ে মেয়েটির গান শুনতাম। গার্লফ্রেন্ডকে আমিও দেখিয়ে দিবো। ওর থেকে সুন্দরী মেয়ের সাথে আমি প্রেম করছি। এইভাবে বেশ কয়েকদিন চলার পর। মেয়েটিকে হঠাৎ করে বলে বসলাম চলুন দেখা করি। মেয়েটি প্রথমে রাজি হলো না। পরে অনেক জোরজবরদস্তি করে কোনোভাবে রাজি করালাম।
উত্তরার দিয়াবাড়ি দাঁড়িয়ে আছি মেয়েটির জন্য। মেয়েটি এলো। আসলেই মেয়েটি সুন্দর। ছবির থেকেও সুন্দর। মেয়েটিকে দেখার পর মনের মধ্যে শাহরুখ খানের “কুছ কুছ হোতা হ্যায়” গানটা বেজে উঠলো। এমন সময় দেখি কোথায় থেকে যেন সিআইডি মতন আমার গার্লফ্রেন্ড এসে হাজির। সাথে সাথে “কুছ কুছ হোতা হ্যায়” গানটা বন্ধ হয়ে মনের মধ্যে বেজে উঠলো ” আমি ফাইসা গেছি, আমি ফাইসা গেছি,আমি ফাইসা গেছি, মাইনকার চিপায়”। গার্লফ্রেন্ডের হাতে বিশাল সাইজের একটা লাঠি। আমি কোনো কিছু বলার আগেই হাতের লাঠি দিয়ে আমার মাথায় দিলো একটা বারি। চোখে জোনাকি পোকা দেখছিলাম আর কানে গার্লফ্রেন্ড আর সুন্দরী মেয়েটির হাসির শব্দ আসছিল। আবার জ্ঞান ফিরে আসার পর সবকিছু পানির মতন পরিষ্কার হয়ে গেলো। এখনো সামনে গার্লফ্রেন্ড দাঁড়িয়ে । হাতে বিশাল সাইজেই সেই বিখ্যাত লাঠি। গার্লফ্রেন্ড বলে উঠলো,,,
-আর লুকিয়ে কোনো মেয়ের সাথে দেখা করতে যাবি? আমি সাথে সাথে লাঠির ভয়ে বললাম,,,
– না মা না”। গার্লফ্রেন্ড বলল,,,
-ঐ হারামজাদা আমি তোর মা লাগি? আমি বললাম,,,
– হাতে লাঠি দেখলে সব মেয়েকে মা মা মনে হয়। পাশে থাকা নার্স জ্ঞানীর মতন বলে উঠলো,,,
-ছোটবেলায় লাঠি নিয়ে মনে হয় ভয়ংকর কোনো স্মৃতি আছে যার ফলে এমন হচ্ছে। গার্লফ্রেন্ড নার্সের কথা শুনে সাথে সাথে বলে উঠলো,,,
-আপনি চুপ করুন। আজ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাচ্ছি। গার্লফ্রেন্ড কে বললাম,,,
-তুমি নিচে নেমে যাও আমি আসতেছি। গার্লফ্রেন্ড চলে যাবার পর নার্সকে ফেসবুক আইডি দিয়ে বললাম
– রিকোয়েস্ট পাঠাবেন কিন্তু।লাইক, কমেন্ট দিয়ে পাশে থাকবো “???