একটি বছর চলে গেল,নতুন বছরের আগমনে।চারিদিকে নতুন বছরকে স্বাগতম জানানোর উৎসব চলছে।সাল টা বদলে গেল অর্থাৎ এখন ২০১৮,ঘড়িতেও রাত বারোটার ঘন্টা বেজে উঠলো।
,
শুভ তারাতারি করে রেডি হচ্ছিল,পার্টিতে যাবার জন্য,হ্যাপি নিউ ইয়ার উপলক্ষ্যে প্রতিবছর বন্ধুরা মিলে রাতে পার্টির আয়োজন করে।বিশেষ করে এখন রাত ১২টা মানে অনেক রাত,কারণ শীতের রাতে সবাই তারাতারি ঘুমিয়ে পড়ে,তাই রাস্তা ফ্রি থাকে,শুভ ফ্রি রাস্তা পেয়ে হাইস্পিডে বাইক চালিয়ে যাচ্ছিল।কিছুদূর পথ যাবার পর সে লক্ষ্য করল ব্রিজের ল্যাম্পপোস্টের নিচে একটা মেয়ে কাদছে আর তাকে ডাকছে,মেয়েটির কাছে গিয়ে শুভ যা দেখলো তাতে সে প্রচন্ড শীতের মাঝেও দরদর করে ঘামতে লাগল।শুভর মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরুচ্ছিলনা,কারণ সে যা দেখল তাতে তার প্রাণ শুকিয়ে গেল।
,
আজ থেকে প্রায় দুই বছর আগের কথা,শুভ নিশি নামের একটি মেয়েকে ভালোবাসতো আর মেয়েটিও তাকে প্রচন্ড ভালোবাসতো,তারা একই ভার্সিটিতে একই ডিপার্টমেন্টে পড়াশোনা করতো,কিন্তু একটা বিশেষ কারণে মেয়েটি সুইসাইড করে আর শুভও তার জিবন নতুন করে শুরু করে।এভাবেই চলে যাচ্ছে দিন।
,
নিশি শুভকে এতটাই বিশ্বাস করতো যে নিজের দেহটাকে বিলিয়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করেনি,কিন্তু কে জানতো তার এই অন্ধ বিশ্বাস একদিন তাকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিবে।
,
সেদিন ছিল ২০১৭ সালের প্রথমদিন,হ্যাপি নিউ ইয়ার ২০১৭।নতুন বছর উৎযাপন উপলক্ষে শুভ তার ভার্সিটির বন্ধুদের নিয়ে নাইট পার্টির আয়োজন করে,রাতে পার্টি শেষে সবাই বাসায় ফিরে গেলেও শুভর কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও নিশি রয়ে যায়।শুভ তখন তার আসল চরিত্র প্রকাশ করে।নিশির সাথে যে তার ফিজিক্যাল রিলেশন ছিল,এটা শুভ গোপনে ভিডিও করে রেখেছিল।তাই সেদিন শুভ নিশিকে ব্লাকমেইল করে।বলে যে তার বন্ধুদের সাথে তাকে ফিজিক্যাল রিলেশন করতে হবে,নিশি এতে রাজি হয়নি তাই তাকে তার রুমডেটের ভিডিও প্রকাশের হুমকি দেয়।কিন্তু নিশি তবুও রাজি হয়নি তাই সেদিন তার বন্ধুরা মিলে ধর্ষণ করে।নিশি এমন নিষ্ঠুর আঘাত সহ্য না করতে পেরে সেদিন রাতেই একটা ব্রিজের উপর থেকে লাফ দিয়ে সুইসাইড করে।কিন্তু তার মৃতদেহ কেউ দেখেনি,তাছাড়া তার এই মৃত্যুর কথা কেউ জানতো না তাই তাকে জানাযা দিয়ে দাফন কাফন করানো হয়নি।তাই নিশির মৃত্যুর পর তার আত্না সেই ব্রিজের আশেপাশেই ঘুরঘুর করে আর অপেক্ষায় থাকে একটি নতুন বছরে
অপেক্ষায় কারণ সে একটি নতুন বছরের শুরুতেই সুইসাইড করেছে তাই শুভকেও কোনো নতুন বছরেই মেরে ফেলতে চায়,নিশির আত্না যদিও এর আগে শুভকে এই ব্রিজের উপর দিয়ে যাতায়াত করতে দেখেছে কিন্তু সে অপেক্ষা করছে ২০১৮ সালের পহেলা জানুয়ারিতে মারবে বলে।অবশেষে সে সুযোগ পেল।
,
যাইহোক এতক্ষণ শুভ আর নিশির পেছনের গল্পে ছিলাম,এবার মূল গল্পে ফিরে যাই।
,
=নিশি তুমি??(শুভ কাপা কাপা গলায় বলল)
>>হ্যাঁ,আমি(নিশি ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল)
=তুমি এতদিন কোথায় ছিলে?
>>আমি তো মরে গেছি।
=মানে?
>>আমি এই ব্রিজের উপর থেকে লাফ দিয়ে সুইসাইড করেছি।
=কখন?কবে?
>>আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে।
=কি বলছো এসব?
>>হ্যাঁ,ঠিকই বলছি।
=তবে তুমি এখানে কেন?
>>আমার আত্না তোমাকে আজ মেরে ফেলবে বলে।
=মানে?
>>আমার মৃত্যুর কোনো জানাযা বা দাফন কাফন হয়নি,তাই আমার আত্না এখানেই ঘুরাঘুরি করে আর একটি হ্যাপি নিউ ইয়ারের জন্য অপেক্ষা করে।
=মানে?
>>তোমার কি মনে পড়ে সেদিন রাতের কথা?আমি এতদিন এইদিনটার জন্য অপেক্ষা করেছি,আজ সেই দিন এসেছে,তাই মৃত্যুর জন্য তৈরি হয়ে যাও
=প্লিজ,নিশি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
>>ক্ষমা তো তাকে করা যায়,যে ক্ষমার যোগ্য।তুমি যা করেছে তুমি ক্ষমার যোগ্য নয়।
,
অতঃপর ঠিক রাত দুইটা তেত্রিশ মিনিটে শুভ কে নিশির আত্না ব্রিজের উপর থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয় আর অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে এবং ধীরে ধীরে সে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।
গল্পের বিষয়:
রহস্য