শেষ কবে এভাবে অন্ধকারে হেঁটেছি ঠিক মনে নাই! ফোনের চার্জ টাও শেষ হয়ে গেলো! কি করতে যে গ্রামে আসলাম, আল্লাহ-ই ভালো জানে!
.
আমি ইমরান! একজন সাংবাদিক, এখানে অনেক আগের নাকি একটা জমিদার বাড়ী আছে, আমি সেটার ওপর একটা প্রোগ্রাম করবো! আমি গ্রাম ভালোবাসি তাই গ্রামের নাম শুনে খুশী হয়েছিলাম। কিন্তু এখন যেন মনে হচ্ছে এটা তো গ্রাম না ভুতের নগরীতে চলে এসেছি, কতো আর বাজবে হয়তো ৯ টা থেকে ১০ টা!
.
বাজার থেকে বলল, রাস্তার বাম পাশে! তাই তো যাচ্ছি মনে হচ্ছে, কিন্তু চার দিক এতো অন্ধকার কেন? আর দূরের ওটা কি মনে হচ্ছে? যতো পাশে যাচ্ছি ততোই মনে হচ্ছে আমার ঠাণ্ডা লাগছে! কখন ও সিগারেট খায় না কিন্তু আজ যেন মনে হচ্ছে এটা ভুল করে ফেলেছি! সিগারেট খেলে অন্তত একটা আগুন থাকতো।
.
সামনে একটা বড় বাড়ী দেখলাম! চার পাশ অন্ধকার, ভাবলাম বাড়ীতে গিয়ে আমার কথা বলি, কিন্তু এতো বড় বাড়ী অন্ধকার কেন? হয়তো সবাই ঘুমিয়ে গেছে, আমি বাড়ীর সামনে গিয়ে ডাক দিলাম, কিছুক্ষণ পর একজন দরজার ওপার থেকে একজন মেয়ের কণ্ঠ ভেসে আসলো।
.
মেয়েটা- কে বলছেন?
আমি- আমার নাম ইমরান! আমি শহর থেকে এসেছি কাজের জন্য, কিন্তু অন্ধকারে মনে হয় পথ হারিয়ে ফেলেছি, আমি চেয়ারম্যানের বাড়ী যেতাম।
মেয়েটা- তো এখানে কেন? যান ওনার বাড়ী যান! আমার বাবা এতো বড় জমিদার ছিল তাও গ্রামবাসী শুধু চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান করে। এখানে কোন যায়গা নাই যান এখান থেকে।
.
আমি- আমাকে ক্ষমা করবেন। আচ্ছা আমি চলে যাচ্ছি।
মেয়েটা- আপনি কি কাজে এসেছেন?
আমি- অনেক বছর আগে এখানে নাকি অনেক বড় জমিদার ছিল, আমি উনি আর ওনার পরিবার সম্পর্কে জানতে এসেছি, সাথে ওনাদের বাড়ীর সম্পর্কে।
মেয়েটা- এসব কি গ্রামবাসী আপনাকে বলবে? ওরা তো সব মিথ্যাবাদী।
আমি-আমি তো সেটা জানি না, আমি সবার থেকে আগে শুনবো, তারপর বুঝবো। আচ্ছা আমি আসছি।
মেয়েটা- এই অন্ধকারে কোথায় যাবেন। তাছাড়া এটা গ্রাম, শহর না। এখানেই থাকেন। হ্যাঁ তবে বাইরে ঐ বারান্দায়।
.
আমি- সে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! কিছু না মনে করলে একটা কথা বলতাম, অনেক খুদা লেগেছে।
মেয়েটা- আপনি ঐ দিকে দাঁড়ান। আমি আমি দরজার সামনে কিছু খাবার আর শুবার জন্য পাটি আর বালিশ দিয়ে দিচ্ছি।
.
আমি ওনার কথা মতো বারান্দা থেকে নীচে চলে গেলাম। হালকা শীত ও পড়েছে, শহরে অবশ্য এসব বুঝা যায় না একটু পর দেখলাম, একটা হারিকেন, আর ওটার আলোতে কিছু রাখা দেখলাম, এখন ও অবশ্য মেয়েটাকে দেখতে পেলাম না, যাক আমার নিয়ত অনেক ভালো। এসব মাথায় ঢুকাতে চাই না।
.
দেখলাম আমার জন্য কিছু ফল রাখা আছে, ওটায় খেলাম। আমি পাটি পেড়ে শুয়ে গেলাম, কাঁথা টা গায়ে দিয়ে মনে হচ্ছে, হাজার বছর পুরাতন একটা কাঁথা আমি গায়ে দিয়েছি, ভাবলাম হয়তো বছর খানিক বাক্সে ভরা ছিল, হতেই পারে। গ্রামের বাড়ীতে নতুন মেহমান আসলে তাদের কাঠের বাক্স থেকেই নতুন কাঁথা বালিশ বের করে দেওয়া হয়।
.
ঘুমালাম!
কিন্তু যখন সকালে আমার ঘুম ভাঙল, আমি বাড়ী দেখে পুরো শক! এতো অনেক পুরাতন বাড়ী! আমি সকালে চলে আসবো তাই পাটি আর কাঁথা গুছিয়ে নিলাম, আমি কাঁথার কারু কাজ দেখে অবাক হলাম। না সুতো পরিচিত মনে হচ্ছে না কাপড়। আমি এসব নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অনেক বার ডাক দিলাম, কিন্তু কারো সাড়া পেলাম না। বুঝলাম না, আমি দরজার সামনে এসব রেখে, একটা চিরকুট লিখলাম!
“ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, এই বিপদের সময় আপনি আমার সাহায্য করেছেন শুধু যাবার সময় মানুষটাকে একবার দেখার শখ থেকে গেলো, আমি কোন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে বলছি না, মন থেকে সম্মানের সহিত বলছি”
.
আমার ব্যাগটা ঘাড়ে নিয়ে আমি রাস্তা ধরলাম! যায়হোক আমি চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ী গেলাম।
উনি আবার আমাদের অফিসের এক কলিগের আত্মীয় তাই আমার এতো সেবা যত্ন।
চেয়ারম্যান সাহেব- কি ব্যাপার বাবা! তুমি তো কালকে রাতে আসবা বলেছিলা, তো এতো দেরি কেন?
.
আমি রাতের ঘটনা বলতে যাবো বলেই আমার হাত তুলে বললাম,
আমি-গ্রামের ঐ পাশে যে বড় বাড়ী…(আমাকে আর বলতে দিলো না)
চেয়ারম্যান সাহেব- হ্যাঁ ওটায় আগের জমিদার বাড়ী! ওটার ইতিহাস বলবো তোমাকে, আগে খেয়ে নাও।
আমি- না মানে, ওখানে এখন কেউ থাকে না?
চেয়ারম্যান সাহেব- পাগল নাকি? আমার দাদার মুখে শুনেছিলাম, প্রায় ১৫০ বছর থেকে এই বাড়ী বন্ধ! তারপর থেকে কেউ থাকে না, হ্যাঁ তবে ওখানে একটা অশুভ আত্মা থাকে কারণ আজ পর্যন্ত যে ঐ বাড়ীতে ঢুকতে চেষ্টা করেছে তার-ই ক্ষতি হয়েছে।
.
আমি- কি বলেন?
চেয়ারম্যান সাহেব- কেন কি হয়েছে?
আমি- না কিছু না! আমি এর পুরো ঘটনা জানতে চাই।
চেয়ারম্যান সাহেব- আচ্ছা বলছি, তুমি চাও খাও।
.
চেয়ারম্যান সাহেব- আমার দাদার দাদা ছিলেন জমিদারের খুব কাছের বন্ধু! কিন্তু জমিদার খুব একটা ভালো মানুষ ছিলেন না। উনি আমার দাদার দাদার বউয়ের ওপর কুনজর দিয়েছিলেন, সেটা দাদা বুঝতে পেরে জমিদারের সাথে চলা চল কমিয়ে দেয়। কিন্তু একদিন জমিদার আমার দাদিতে তুলে নিয়ে চলে যায়, তারপর আমার দাদা ও ওনার ছেলের সাথে হাতা হাতি করতে গিয়ে জমিদার মারা যায়,
আমি- আর জমিদারের বউ বাচ্চা?
চেয়ারম্যান সাহেব- ওনার একটা মেয়ে ছিল। শুনেছি অনেক সুন্দরী ছিল নাকি সে। জমিদারের বউ ও আমার দাদার দাদাকে মারতে আসে এভাবে সেও মারা যায়। আর মেয়েটা পালিয়ে যায়।
আমি- ও আচ্ছা!
.
চেয়ারম্যান সাহেবের কথা আমার জানি খুব একটা বিশ্বাস হলো না, কেমন জানি একটা খটকা লাগলো। আর ওটায় যদি জমিদার বাড়ী হয় তাহলে মেয়েটা কে? সে তো বলেছিল আমার বাবা জমিদার, তার মানে সেই কি সেই মেয়ে? তাহলে কাল রাতে আমি একজন আত্মার সাথে কথা বলছিলাম,
.
কিন্তু সে নাকি সবার ক্ষতি করে তবে আমার কেন করলো না। আমি এসব উত্তর চাই! কোথায় তো নিশ্চয় ভেজাল আছে।
আমি দুপুরের খেয়ে পুকুর পাড়ে এসে বসলাম, এটা নাকি এক সময় জমিদারের নিজস্ব পুকুর ছিল। আমার সামনে রাস্তার ওপাশেই জমিদার বাড়ী। আমার তো এখনই ভয় করছে। আর আমি রাতে সেখানে ছিলাম?
.
আমি বসেই আছি, সন্ধ্যা হয়ে গেলো! অন্ধকার নামলো। আমি সেই বাড়ী গেলাম। এবার অনেক সাহস নিয়ে গেলাম! আমার শরীর কাঁপছে। আমি দরজা টোকা দিবো তার আগেই পিছন থেকে একজন বলল,
মেয়েটা- সব তো জেনে গেছেন-ই তবে আবার কেন আসলেন?
আমি- ওটা সে বলছে, সত্যি কি মিথ্যা সেটা আগে বুঝতে হবে না? এখন এসেছি আপনার কাছ থেকে শুনতে।
মেয়েটা- এসব বলে কি লাভ? যান ফিরে যান।
আমি- আমি যাবো না!
.
তারপর আর কেউ কিছু বলল না। আমি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দরজার পাশে দেখলাম সেই পাটি, বালিশ আর কাঁথা পড়ে আছে, আমি ওগুলো নিয়ে চুপ করে বারান্দায় শুয়ে গেলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠলাম! আজ বের হবার সময় দেখলাম পানির ওভাবে গাছ গুলো প্রায় শুকিয়ে যাচ্ছে, আমি কুয়া থেকে পানি তুলে গাছগুলো তে দিয়ে চলে গেলাম।
.
প্রথমে গেলাম, আমি উপজেলা ভূমি রেকর্ড অফিস! অনেক কষ্ট করে সব তথ্য নিলাম, প্রথম থেকেই আমাকে মনে হচ্ছিলো একটা ভ্যাজাল আছে এবার কিছুটা সন্দেহ বেড়ে গেলো।
জমিদারের প্রায় ১০০০ একর সম্পত্তি ছিল যা বর্তমানে ২০০ একর প্রায় চেয়ারম্যান সাহেবের পরিবারের।
উনি তো এই বিষয়ে আমাকে একবার ও বলেনি, আর এই সব সম্পত্তি সরকারী হয়ে যাবে, চেয়ারম্যান সাহেবের পরিবারের হয় কীভাবে?
.
কাগজ পত্র নিয়ে আমি সাড়া দিন অনেক খোঁজা খুজি করলাম, দেখা গেলো, ২০০ না ওনার আত্মীয় স্বজন ধরলে প্রায় ৫০০ একরের বেশি জমিদারের সম্পত্তি !
আমি আবার সন্ধ্যায় সেই বাড়ী চলে গেলাম।
মেয়েটা- আবার আসলেন কেন? বললাম না আমি কিছু বলবো না, এই গ্রামের সবাই খারাপ।
আমি- আমিও সেটা মেনে নিচ্ছি। কিন্তু আমি আসল ঘটনা জানতে চাই। আপনাদের সব সম্পত্তি চেয়ারম্যান সাহেবের পরিবারের কাছে কেন? দেখেন আমি আপনার সম্পত্তি তো আপনাকে ফেরত দিতে পারবো না, কিন্তু আপনার বাবার হারানো সম্মান আমি ঠিক ফেরানোর ব্যাবস্থা করে দিতে পারবো। বাকিটা আপনার ইচ্ছা
.
মেয়েটা- সে দিন ছিল শুক্রবার! কয়েক দিন থেকে বাবার মন খারাপ ছিল, একে তো ব্রিটিশ সরকার বেশি খাজনা আদায় করছিলো, তার ওপর ওনারা কিছু সম্পত্তি বাবার কাছ থেকে জোর করে নিয়ে নেই, এর ওপর আবার বন্ধু সাদেক(চেয়ারম্যানের দাদার দাদা) কাকা ওনার ছেলের জন্য বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।
.
আমার বাবা অনেক ভালো মানুষ ছিলেন, কিন্তু বাবা বুঝেছিলেন সাদেক কাকা আমাদের সম্পত্তির লোভে আমার সাথে বিয়ে দিতে চাই, এজন্য বাবা রাজী হয় নি।
শুক্রবার সাদেক কাকা আগে আমাদের বাড়ী আসে তারপর বাবাকে নিয়ে নামাজে যায়। সে দিন ও আসলো, কিন্তু সে দিন ওনার ছেলেরাও এসেছে, যেহেতু তারা আগেও অনেকবার এসেছে তাই এসব এ কেউ মনোযোগ না দিয়ে যে যার কাজ করা শুরু করলো।
.
আমি গোসল করে বাড়ী ফিরে আমার ঘরে ঢুকলাম, আমি জানি না যে সাদেক কাকার ২ ছেলে ঘরের মধ্যে ছিল, আমি যেই কাপড় বদলানোর জন্য খুলেছি তারা আমার ওপর পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো, কিছু বুঝার উঠার আগেই তারা আমার সব কিছু কেড়ে নিলো, আমি কয়েক বার অজ্ঞান হয়ে গেলাম,
.
কিছুক্ষণ পর দেখলাম আমার মা-ও আমার সাথে বিছানায়, এরপর ঐ পশুগুলো আমাদের মা মেয়েকে পালা ক্রমে ধর্ষণ করে গেলো। আমাদের বাড়ীতে ১০-১৫ জন কাজের লোক ছিল কিন্তু কেউ কেন আমাদের বাঁচাতে আসলো না তখন বুঝলাম না।
.
এরপর আর কিছু মনে নাই, যখন জ্ঞান ফিরল মনে হলো কেউ আমাদের ওপর কিছু চাপা দিচ্ছে, বুঝলাম আমার একটা গর্তে আছি, আমি অনেক কিছুই বলতে চাইছিলাম, কিন্তু পারলাম না, আসতে আসতে সব অন্ধকার হয়ে গেলো।
মেয়েটা- পরে জানতে পারলাম, বাবার অনেক সম্পত্তি ওনারা নিয়ে নিয়েছে, আর আমাদের কাজের লোকদের ও ওনারা অনেক সম্পত্তি দিয়ে গ্রাম থেকে দূরে পাঠিয়ে দিয়েছে।
আমি- এজন্য আপনি গ্রামের কাউকে দেখতে পারেন না?
.
মেয়েটা- না! আমি বেঁচে থাকতে কিছু করতে পারিনি, কিন্তু আমি মোড়ে যাবার পর যেই এই গ্রামের মানুষ এই বাড়ীর মধ্যে প্রবেশ করেছে আমি তাকে ছাড়ি নি। আমি কি দোষ করেছিলাম? যে আমাকে আর আমার পরিবারের এতো বড় শাস্তি পেতে হবে? আমি তাদের কাউকেই ছাড়বো না।
.
মেয়েটা- একটা কথা চেয়ারম্যান আপনাকে বলে নি?
আমি-কি?
মেয়েটা- ওদের বংশের কোন মেয়ের স্বামী বেশীদিন বাঁচে না।
আমি- কেন?
মেয়েটা- আমি সংসার করতে পারি নি তাহলে তাদের মেয়ে কীভাবে সুখের সংসার করবে? আমার কি স্বপ্ন ছিল না? যাক অনেক রাত হয়েছে ঘুমাবেন না?।
.
আমি-হ্যাঁ কিন্তু আজ বাইরে যে পাটি নাই।
মেয়েটা- বাইরে ঠাণ্ডা পড়েছে অনেক। আপনি ভিতরে আসেন।
আমি- আমি কি আপনাকে একবার দেখতে পারবো না?
মেয়েটা- এই ১৫০ বছরে কাউকে দেখা দেয় নি।
আমি- না দেখলে ভয় লাগবে, যে বাড়ীতে একা একা আছি।
মেয়েটা- আচ্ছা এসব কেন করছেন?
আমি- কি সব?
মেয়েটা- এই যে ওদের সাথে শত্রুতা! ওরা বুঝতে পারলে আপনাকেও ছাড়বে না।
আমি- আচ্ছা আমি আপনার শত্রুতাকে যথেষ্ট সম্মান করি, তবে আপনার শত্রু আর কতো জন।
মেয়েটা- এখন বর্তমান শুধু ওদের বংশে চেয়ারম্যান বেঁচে আছে, আর ছেলে কেউ নাই, আর চেয়ারম্যানের একটা মেয়ে আছে, ওর বিয়ে হয় না কারণ এখন সবাই জানে যে ওদের বংশের কোন মেয়ের বিয়ে হলে সে জামায় বেশি দিন বাঁচে না।
.
আমি- এক জনের শাস্তি আরেকজনকে দেওয়া কি ঠিক?
মেয়েটা- এসব কথা আমাকে বলবেন না। আমি পছন্দ করি না। ঐ ঘরে আপনার জন্য খাবার আছে, খেয়ে শুয়ে যান। আর এসব কথা কাউকে বলবেন না, না হলে ওরা আপনাকে মেরে ফেলবে।
.
আমি চুপ করে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম, কি করা যায়, সেটায় ভাবছি। অনেক বড় দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিচ্ছি, কি করবো বুজছি না তো।
.
সকালে আমি বের হয়ে গেলাম। পুকুর পাড়ে বসে আছি! হটাৎ পিছন থেকে একটা মেয়ে আমাকে ডাক দিলো।
মেয়েটা- আমি আতিয়া! চেয়ারম্যান সাহেবের মেয়ে আমি, আপনি শহর থেকে এসেছেন না?
আমি- হ্যাঁ!
.
মেয়েটার সাথে দেখা হয়ে আমার একটা মাথায় বুদ্ধি আসলো।
আতিয়া-কি হলো? আমি কি বিরক্ত করলাম?
আমি- না না টা কেন করবেন? বসেন।
আতিয়া- আমার সাথে তো কেউ তেমন কথা বলে না, একে তো আমার বাবার ভয়ে আর দ্বিতীয় আমাদের বংশে নাকি মেয়েদের স্বামী বাঁচে না তাই আমাদের সাথে কেউ কথা বলে না।
.
আমি- একটা কথা বলবো? যদি কিছু না মনে করেন?
আতিয়া- জি বলেন!
আমি- আপনাদের বংশের মেয়েদের কেন স্বামী টিকে না জানেন?
আতিয়া- না তো, বাবাকে বললেও বাবা বলে উনিও জানে না। আমার তো দুই বার বিয় ঠিক হয়েও হয় নি। বাবা ১০০ একর সম্পত্তি বিয়ের দিন লিখে দিতে চেয়েছিল তারপর ও হয় নি।
.
আমি- কেন হয় নি উত্তর চান?
আতিয়া- হ্যাঁ অবশ্যই
আমি- তাহলে আপনাকে ভয় পেলে চলবে না, সাহস করে আমার সাথে থাকতে হবে। আমি ওয়াদা করছি আপনার কিছু ক্ষতি হবে না, আপনি আপনার উত্তর পেয়ে যাবেন, কিন্তু আমার একটা কাজ করে দিতে হবে।
আতিয়া- ঠিক আছে দিবো।
আমি- ঠিক আছে চলেন।
.
এই বলে ওকে জমিদার বাড়ী নিয়ে গেলাম। সে তো যাবে না, আমি জোর করে নিয়ে গেলাম।
আমি ভিতরে গিয়েই জোরে জোরে ডাকতে শুরু করলাম, কই শুনছেন। এই দিকে আসেন। এই যে রাজকুমারী।
.
কিছুক্ষণের মধ্যেই গাছ ঝাকি দিতে শুরু করলো। একটা ফুলের টব আতিয়ার দিকে ছুঁড়ে আসলো, আমি মেয়েটাকে আমার বুকে নিয়ে নিলাম। টব টা আমার হাতের এক পাশে একটু বাড়ী খেলো, আমার হাত কেটে গেলো।
.
আমি- দেখেন! আমার কথা শুনেন।
মেয়েটা- এই কেন এখানে এসেছে? আমি কোন মেয়েকে খুন করিনি তবে আমি আজ একে ছাড়বো না।
আমি- আপনি কি চান না? আপনার বাবার ওপর মিথ্যা অভিযোগ সব উঠে যাক! এই মেয়েই পারে সেই কাজ করতে। এখন বলেন কি চান আপনি?
আতিয়া- আমার খুব ভয় করছে।
আমি- কি বলেন? ওকে মারবেন? আর আজ ওকে মারলে আমাকে মারতে হবে।
.
মেয়েটা- বলেন কি করতে হবে।
আমি- এই মেয়েকে উত্তর দেন কেন এই মেয়ের পরিবারের কোন মেয়ের স্বামী জীবিত থাকে না।
.
জমিদারের মেয়ে আতিয়ার সামনে সব বলল, আতিয়া অঝর নয়নে কাঁদছে।
আতিয়া- আমি যে বংশ নিয়ে এতো গর্ব করতাম, সেই আমার বংশ সম্পত্তির লোভে এতো নিকৃষ্ট কাজ করেছে? ঘৃণা হচ্ছে আজ এই বংশে জন্ম নিয়ে।
আমি- এবার আমার কথা শুনেন, আপনাকে এবার আমাদের কথা মতো কাজ কাজ করতে হবে।
আতিয়া- কি বলেন।
.
আমি- আপনার বাবা বলেছিল যে জমিদার আর জমিদারের বউ কে এখানে কবর দেওয়া আছে, মেয়ের কথা বলে নি, আপনি এমন ভাব করবেন আপনাকে যেন ভুতে ধরেছে সে ভুত আর কেউ না এই মেয়ে! আপনাকে অনেক মৌলবি, দরবেশ , কবিরাজ দেখানো হবে, আমি সুযোগ বুঝে এই বাড়ীর বাগান খুঁড়তে বলবেন, এখানে কিছু না পেলেও ৩ টা মৃত দেহের হাড় পাবে, আর ভাগ্য ভালো থাকলে আরও কিছু প্রমাণ ও পেয়ে যেতে পারে।
.
আতিয়া- ঠিক আছে আমি করবো।
কথা মতো আতিয়া বাড়ী গিয়ে ভুল ভাল বকতে শুরু করে দিলো, তারপরের দিন স্থানীয় এক মৌলবি কে ডাকা হলো, তাকে সে ইতিহাসের গল্প শুনিয়ে দিলো, সাথে বললও, আমার বাবার ১০০০ একর সম্পত্তি কয়?
এভাবে দুই দিনের মধ্যে সবাই বিশ্বাস করে নিলো যে জমিদারের মেয়ের ভুত আতিয়ার শরীরে প্রবেশ করেছে।
.
পরের দিন কিছু দরবেশ আসলো, অনেক ঝাড় ফুক করলো, কিন্তু কাজ হলো না, আতিয়া বলল, কাল সকালে সবাই যেন জমিদার বাড়ীর সামনে গিয়ে দাড়ায়, সবাই যদি আসে তবে সে আতিয়াকে ছেড়ে দিবে, না আসলে আতিয়েকে নিয়ে স-শরীরে পুকুরে ডুব দিয়ে মারা যাবে।
.
পরের দিন সবাই আসলো, এমন কি থানার পুলিশ পর্যন্ত।
আতিয়া- আমি জানি, আপনারা জানেন যে জমিদারের চরিত্র ভালো ছিল না, এ কারণে সে মারা যায়, আর তার মেয়ে পালিয়ে যায়, কিন্তু আসল ঘটনা সেটা না, আসল ঘটনা আমি আপনাদের বলছি,
.
তারপর আতিয়া সে দিন যা শুনেছিলো সব এক ভাবে বলে দিলো।
আতিয়া- আমার জমিদার বাবা আর আমরা যদি সত্যি হয় তবে ঐ বাগানে ৩ টা মৃত দেহ পাওয়া যাবে, আর যদি চেয়ারম্যানের বানানো গল্প যদি সত্যি হয় তবে ২ টা পাওয়া যাবে ।
.
অবশেষে প্রমাণ করার জন্য জমিদার বাড়ী যাওয়া হলো, যদিও অনেকেই সেই সাহস পাচ্ছিল না, সবাই গিয়ে মাটি খুঁড়তে আরাম্ভ করলো, আতিয়ার কথা মতো ৩ টা মৃত দেহ খুঁজে পেলো।
.
গ্রামে একটা সালিশ বসলো, যদিও সব সময় এর জন্য চেয়ারম্যান সভাপতি হয়, কিন্তু আজ উনি আসামীর কাঠ গড়ায়। এখানে পুলিশ ও আছে।
.
চেয়ারম্যান সহ আরও ৪৫ জন মানুষ যারা অবৈধ ভাবে জমিদার সাহেবের জমি নিয়েছিলো সবাই সেটা ফেরত দিয়ে দিলো।
এক মৌলবি বলল- মা! আমি আসলে কি করবো বুঝছি না, তবে এখন তুমি যা বলবা তাই করবো।
আমি-আপনারা এই এলাকার সব স্কুল রাস্তা, সব পুকুর সব কিছু জমার সাহেব আর ওনার পরিবারের নামে করেন। সবাই জানুক এগুলো সব ওনার সম্পত্তি যা ওনারা দান করেছেন। আস পাশ সব গ্রামে এই আসল তথ্য জানিয়ে দিন, যে ওনার চরিত্র ভালো ছিল, কিছু মানুষ রুপি পশুরা ওনার সাথে কি করেছে সব বলে দিন।
.
আর এই জমিদার বাড়ী সুন্দর করে রং করে এটা একটা সৃতি হিসাবে রেখে দিন যার দায়িত্বে থাকবে চেয়ারম্যান সাহেব! তার পূর্ব পুরুষের খারাপ কাজের প্রায়শ্চিত্ত হিসাবে ওটা অনেক সেবা করতে হবে।
.
আমি- আতিয়া!(উদ্দেশ্য জমিদারের মেয়ে) আমারা কি আপনার কাজ করতে পেরেছি? তাহলে আপনি আতিয়াকে কে মাফ করে দেন। ওর শরীর থেকে বের হয়ে যান। আপনি আজ থেকে এই পুকুরে বাস করবেন।
.
এরপর আতিয়া মাথা ঘুরে পড়ে গেলো! কেন পড়ে গেলো সত্যি জানি না, কারণ এটা পরিকল্পনাতে ছিল না।
.
৫ বছর পরের ঘটনা!
আমি শ্বশুর বাড়ী গেলাম!
আতিয়া- কি গো! কখন আসলা?
আমি- এই তো এখন? আমাদের মেয়ে কোথায়?
আতিয়া- কেন বাড়ীতে নাই? আমি তো ঘরে বসিয়ে বাইরে গেছি।
.
আমারা সবাই আমাদের ৩ বছর ৬ মাসের মেয়েকে খুজতে শুরু করলাম কিন্তু কোথায় পেলাম না, অবশেষে একজন বলল, পুকুরের দিকে তাকে হাঁটতে দেখেছে, আমারা দৌড় দিয়ে সেখানে গেলাম, সেখানে সে পুকুরে পড়ে গেলেও ডুবে যাচ্ছে না।
.
আমি পুকুরে লাফ মেরে মেয়েটাকে ধরলাম, অথচ আমি ডুবে যাচ্ছি, তখন একজনের স্পর্শ পেলাম! সাথে একটা পরিচিত কণ্ঠের আওয়াজ
“শত বছরের সম্মান যেমন তুমি আমার পরিবারকে ফিরিয়ে দিয়েছো
ঠিক তেমনি, তোমার পরিবার ও শত বছর বিপদ থেকে হেফাজতে থাকবে- রাজকুমারী”
………………………………………………….. সমাপ্ত …………………………………………….