স্বাধীনতা যুদ্ধের আগের কথা।আমার দাদারা তখন চার ভাই মিলে নতুন বাড়িতে উঠেছে।
বাড়ির মধ্যে ঘর ছিল তখন চারটি।একটি আমার দাদার আর বাকি তিনটা তার তিন ভাইয়ের।
আমাদের বাড়ির পিছনে ছিলো একটি ছোট্ট পাঁটি বন।আর সে বনের মাঝখানে ছিল একটি
ছোট্ট ডোবা।এলাকার কারো গরু মহীষ মারা গেলে এই ডোবাতে এনে ফেলা হতো।আমার দাদার ছিলো বাজারে ছোট্ট একটা দোকান।
আর প্রতিদিন দোকান বন্ধ করে তার বাড়িতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যেত।এই এলাকায় তখন বিদ্যুত্ ছিলোনা।
তাই রাত একটু গভীর হলে চারপাশে সুনসান নীরবতা নেমে আসতো।
একদিন রাত্রি বেলা আমার দাদা বাজার থেকে দোকান বন্ধ করে বাড়িতে এসে লক্ষ্য করলেন …….
তাদের পিছনের সে পাঁটি বনটি আছে সেখান থেকে একটা শব্দ আসছে।শব্দটা ছিলো অনেকটা দুটি পিতলের বস্তু ধাক্কা খেলে যেমন হয়।
আমার দাদা ছিলো অনেক সাহসী প্রকৃতির মানুষ।তিনি ঘর থেকে একটি হারিকেন নিয়ে পাঁটি বনের ভেতর ঢুকলেন।
তারপরে সোজা চলে গেলেন ঐ ডোবার কাছে।সেখানে গিয়ে এক দূশ্য দেখে তিনি হতবাক হয়ে গেলেন।
তিনি দেখলেন ডোবার জলে কিছু কলসি ভেসে আছে।আর সেগুলো একটি অন্যটির সাথে ধাক্কা খেয়ে ঢং ঢং শব্দ হচ্ছে।
তিনি তখন তারাতারি ঐ জায়গা ত্যাগ করে ঘরে চলে আসেন।
তারপরে কেটে গেলো বহু বছর।দেশ স্বাধীন হওয়ার এক বছরের মাথায় আমার দাদা মারা গেলো।আমার বাবারা ছিলো চার ভাই।
বাড়ির মধ্যে সবাই আলাদা আলাদা ঘর করে সংসার জীবন শুরু করলেন।
এক সময় বাড়ি পিছনে থাকে সেই পাঁটি বন আর ডোবার কোন অস্তিত রইলো না।তবে বাড়ির পিছনে এখন একটি পুকুর খনন করা হয়েছে।
পুকুর খননের পরে বাড়ির সবাই ঐ পুকুরে গিয়ে গোসল করতো।
আমার বাবার এক চাচাতো ভাই ছিলো।বাড়ির মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে গরীব।অত্যান্ত কষ্ট করে তিনি সংসার চালাতেন।
তার ঘরটি ছিলো চার দিকে বেড়া আর উপরে ছন।তাদের টয়লেট ছিলো একদম পুকুরের পাড়ে।
একদিন চাদনী প্রসর রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তিনি বাহিরে গেলেন।এমন সময় তার চোখ গেলো পুকুরের জলে ।
দেখলেন জলের উপর কিছু একটা ভেসে আছে।ভালো করে তিনি লক্ষ্য করে দেখলেন সেখানে কিছু কলসি ভেসে আছে।
আর একটি অন্যটির সাথে ধাক্কা খেয়ে ঢং ঢং শব্দ হচ্ছে।ভয়ে তিনি তখন তারাতারি ঘরে চলে আসলেন।
সেদিন রাতে কে যেন তাকে স্বপ্ন দেখালো কলসি গুলি সব সোনা রূপায় ভরপুর।
আর এসব কলসি তার হতে পারে যদি তিনি কিছু শর্ত মানেন।প্রথম রাতে স্বপ্নটি দেখে তিনি তা বিশ্বাস করলেন না।
কিন্তু দ্বিতীয় রাতে তিনি আবার স্বপ্ন দেখলেন কে যেন তাকে বলছে ঘরে ভেতর একটি গর্ত খুঁড় রাখতে।আর কলসি গুলো সেখানে আসবে।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি এবং তার স্ত্রী দুজনে মিলে এই বিষয় আলোচনা করলেন।
তার পরে সিদ্ধান্ত নিলেন রান্না ঘরের ভেতর গর্ত খুঁড়বেন।উনাদের রান্না ঘরটি ছিলো মূল ঘর থেকে একটু বিচিছন্ন।
সেদিন সন্ধাবেলা তারা দুজন রান্না ঘরের ভেতর একটি গর্ত খুঁড়লেন।তারপরে রাতের খাবার খেয়ে ঘরে ঘুমিয়ে গেলেন।
মাঝ রাতে হঠাত্ একটি আওয়াজ শুনে তাদের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।তিনি লক্ষ্য করলেন কে যেন তার নাম ধরে ডাকছে।
আর আওয়াজটি আসছিলো ঠিক তাদের রান্না ঘরের ভেতর থেকে।
তিনি এবং তার স্ত্রী দুজনি একটি হারিকেন নিয়ে রান্না ঘরের দিকে গেলেন।
রান্না ঘরের ভেতর ঢুকার সাথে সাথে একটি ধমকা হাওয়া এসে হাতের হারিকেনটি নিভে গেলো।চারপাশে তখন ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢেকে গেলো।
এমন সময় একটি গায়ওবী আওয়াজ তাদের কানে ভেসে আসলো।
কে যেন তাদের বলছে, তাদের বড় ছেলেকে এই গর্তের মধ্যে নামিয়ে কলসি গুলো নেয়ার জন্য।
এই কথা শুনে তাদের মনে একটা খটকা লাগলো।তার দুজন তখন কলসি গুলোর লোভ ছেড়ে দিয়ে তারাতারি ঘরে চলে আসলে।
পরদিন সকালে এই ঘটনা সবার মধ্যে জানাজানি হয়ে গেলো।সবাই এসে তখন এই গর্তটি দেখতে লাগলো।
পরে আমাদের গ্রামের এক মুরব্বীর কাছে শুনেছি এক সময় নাকি আমাদের এলাকায় মগ উপজাতিদের বসবাস ছিলো।
মগরা কুফুরি কালাম করত বেশি।তারা তাদের ধন সম্পদ মাটির নিচে লুকিয়ে রাখতো।
কিন্তু মগরা এই এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে তাদের সেই লুকিয়ে রাখা সম্পদ দীর্ঘ দিন মাটির তলে থাকার কারনে এখন খারাপ হয়ে গেছে।
যারা এসব সম্পদ লোভ করে একবার ঘরে এনেছে তারা ধ্বংস হয়ে গেছে !!!!!