-“দারুন,দারুন ক্যামেরা কোয়ালিটি!স্ক্রিন রেজোলিউশন জাস্ট মাইন্ড ব্লোয়িং।অসাধারন মেটাল ফিনিশিং। 3 জিবি র্যাম!কোয়াডকোর স্ন্যাপড্রাগন 800 প্রসেসর!ওহ!জমে পুরো ক্ষীর।আর পারা যাচ্ছে না!”
-“পছন্দ?”
-“সে আর বলতে!কিন্তু দাদা দামটা বেশি বলছ।“
-“কোথায় বেশি?কদিন ব্যবহার করেছি বল তো!মেরেকেটে মাস চারেক হবে।নেহাত নতুন মডেলটা খুবই চোখে ধরে গেছে তাই এটা বেচে দেব ঠিক করেছি।“
-“একটু কম কর না দাদা।“
-“নারে। পনেরোর কমে দিতে পারব না।আঠের চেয়েছিলাম,নেহাত তুই এত করে ধরে পড়লি।পাড়ার ছেলে,রাজি হয়ে গেলাম।এই দামে তোর পরতা না পড়লে ছেড়ে দে, আমি অনেক কাস্টমার পেয়ে যাব।“
-“সে জানি দাদা।যাকগে,আর কি করব।তুমি যখন আর কমাতে রাজি নও এই দামেই নেব।তাহলে বিকালে টাকা নিয়ে আসছি।“
-“ওকে।তাড়াতাড়ি আসিস।বেশি রাত করিস না।“
একটু থেমে অমিয় বলল,
-“ইয়ে একটু বেরোতে হবে আমায়।তুই সন্ধ্যের আগেই চলে আসিস। “
-“ওকে দাদা।বিকালে দেখা হচ্ছে।“
মোটর বাইক স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে এল আর্য।এখন একবার ব্যাংকে যেতে হবে।
২
বিকালে টাকা গুনে অমিয়দার হাতে দিয়ে ফোনটার দখল নিল আর্য।উফ!কত দিনের স্বপ্ন এমন হাই ফাই ফোন হাতে নিয়ে ঘোরার।ফোনটার আসল দাম অনেক।যদিও সেকেন্ড হ্যান্ড তবুও ফোনটা একদম প্রায় নতুন।খুব যত্নে ব্যবহার হত বোঝাই যাচ্চে।বয়স চার মাস তিন দিন।ফোনটার সাথে ক্যাশমেমো,ওয়ারেন্টি পেপার্স,হেডফোন,চার্জার,ইউ এস বি কেবল সবকিছুই পেয়ে গেছে আর্য।পেপার্স চেক করতে গিয়ে কেনার ডেটটা চোখে পড়েছে আর্যর,চোদ্দই ফেব্রুয়ারি।ডেটটা দেখে বেশ মজাই লেগেছিল ওর।অমিয়দা শেষে ভ্যালেন্টাইন ডে বেছে নিয়েছিল নিজেকে ফোন গিফট করার জন্য!
ফোনটা ফ্যাক্টরি সেটিংস এ আগে থেকেই সেট করে রেখেছিল অমিয়দা।ফলে আর্যকে আর খাটতে হবে না।আজ বাড়ি গিয়ে আর কোনদিকে তাকানো নেই।ফোনটার দারুন দারুন ফিচারগুলোকে সারা সন্ধ্যে ধরে এক্সপ্লোর করবে সে।
কাল অফিসে তার হাতে এমন ঝিনচ্যাক ফোন দেখে সবার মুখের অবস্থা কেমন হবে সেটা ভেবে পরম আনন্দ হল তার।ঝিলমিলও দারুন খুশি হবে।আফটার অল এবার থেকে ওর গুলো দারুন উঠবে।লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যাবে।সোশ্যাল মিডিয়া ফ্রিক ঝিলমিলের আর কি চাই!
৩
বাড়ি ঢুকে আর্য দেখল মিতালিদি রান্না সেরে বেরোচ্ছে।সাড়ে সাতটা বাজে।মিতালিদি সন্ধ্যে ছটা নাগাদ বাজার করে ঢোকে আর্যর ফ্ল্যাটে।রান্না সেরে রাতের খাবার বেড়ে সকালেরটা ফ্রিজে স্টোর করে বেরিয়ে যায়।সকালে আসে না।আর্য ঘুম থেকে ওঠে দেরি করে।খাবার ফ্রিজ থেকে বার করে একটু গরম করে খেয়েই দৌড়য় অফিসে।তাই মিতালিদি রাতেই আসে।আসলে আর্যর বাড়ি এই শহরে নয়।এখানে তার চাকরি সূত্রে আসা।একটা এক কামরার ফ্ল্যাট ভাড়া করে সে একাই থাকে।মাঝে মধ্যে মা আসেন বা সে ছুটি ছাটায় বাড়ি যায়।আর এখন ঝিলমিল তার জীবনে আসায় তার বাড়ি যাওয়াটা কমে গেছে।ওর সাথেই সন্ধ্যে গুলো ঘোরাঘুরি করে কেটে যায়।
আজ সে কোথাও যাবে না।আর্য খুব টেক স্যাভি।কিন্তু সব চাকরিতে ঢুকেছে,এখনো এত দামি ফোন ফার্স্ট হ্যান্ড কেনার সামর্থ্য হয় নি তার।তাও লাকিলি প্রায় নতুন একটা ফোন সে এত সস্তায় পেয়ে গেল।রিয়ালি সে এই ব্যাপারে লাকি!
৪
ফোনটা ঘাঁটতে ঘাঁটতে টের পায় নি আর্য যে কখন সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত হয়ে গেছে।খিদে পাওয়ায় ফোনটা থেকে মাথা তুলে হাতঘড়িটার দিকে চেয়ে সে দেখল রাত এগারোটা একুশ।এবার খেয়ে শুতে হবে।আড়মোড়া ভাঙল সে।কাল সকালে অফিসে মিটিং আছে একটা-
দরজা থেকে কে সরে গেল না?আর্যর স্নায়ু সজাগ হয়ে উঠল।তার মনের ভুল নাকি কেউ সত্যিই দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল!
আর্য উঠল।ছোট্ট ফ্ল্যাট।পুরোটাই তন্নতন্ন করে খুঁজল।না!কেউ কোথাও নেই।তার মনের ভুল হবে।নিশ্চিন্ত মনে রান্নাঘরের দিকে এগোল সে।
ডিনার সেরে আর্য যখন বেসিনে দাঁড়িয়ে ব্রাশ করছে এমন সময় কারেন্ট চলে গেল।উফ!এই এক জ্বালা হয়েছে!বর্ষাকালে দুবার বিদ্যুৎ চমকাল কিনা কারেন্ট অফ।আর্যর ফ্ল্যাটে ইনভার্টার নেই।ফোনটাও সেই শোবার ঘরে রেখে এসেছে।এখন এই অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে ঘরে যাও!ফোন নিয়ে এসে মোমবাতি খুঁজে জ্বালাও!আচ্ছা জ্বালাতন!
বেডরুমে বিছানার উপর ফোনটা পেল না সে।কই গেল!এইমাত্র তো এখানেই রেখে উঠেছিল সে।সারা বিছানা হাতরেও ফোন পেল না সে।আশ্চর্য ব্যাপার!ফোনটা কি একেবারে উবে গেল।
টুপ টুপ করে জল পড়ছে।জলের আওয়াজ আসছে কোথা থেকে!বাথরুম থেকে মনে হচ্ছে।কিন্তু বাথরুমের সব কল তো বন্ধ করা।তাহলে জল পড়ছে কিভাবে!তবুও একবার দেখা যাক ভেবে আর্য বাথরুমের দরজাটা খুলল।এখন চোখ অন্ধকারে অনেকটা সয়ে এসেছ।কলটা হালকা খোলা।টুপ টুপ করে জল পড়েই চলেছে।
বাথরুমে ঢুকেছে আর্য ঠিক এমনি সময়ে কারেন্ট চলে এল।বাথরুমের ভিতরে ঢুকে আর্য অবাক।মোবাইলটা ঠিক কলের তলায় রাখা।আর টুপটুপ করে মোবাইলের স্ক্রিনের উপর জল পরে চলেছে।কি আশ্চর্য কান্ড!ভাবতে ভাবতে মোবাইলটা তুলে নিল আর্য।ইস!তার এত সাধের ফোনের এ কি হল!তাড়াতাড়ি বাথরুম থেকে বেরিয়ে টাওয়েল টা দিয়ে মোবাইল টা মুছতেই সাদা টাওয়েলটায় একগাদা লালচে ছোপ লেগে গেল।লাল রঙ এল কোথা থেকে!আর্য বিছানায় বসে পরপর ঘটে যাওয়া ব্যাপারগুলো ভাবতে শুরু করল।নাহ!কিছু মাথায় আসছে না।যা ঘটেছে পুরোটাই অযৌক্তিক।একটা অজানা ভয় আর্যকে আচ্ছন্ন করে ফেলল।তার মন বলছে ব্যাপারটা খুব আনক্যানি কিন্তু মস্তিস্ক বলছে গোটা ব্যাপারটাই চোখের ভুল ।সে আর দেরি করল না।শুয়ে পড়ল।সারা সন্ধ্যে ফোন ঘেঁটে হয়তো মাথাটা ঠিককাজ করছে না।রেস্ট নিলেই সব ঠিক হয়র যাবে,ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল আর্য।
৫
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙল দেরি করে।সেদিন আর খাওয়ার সময় হল না আর্যর।অফিসে পৌঁছতে লেট হয়ে গেল সেদিন।অফিসে কাজের প্রেসারে ফোনের কথা সে ভুলেই গেছিল।দুপুরে রিসেস টাইমে সকলকে সে নিজের ফোনটা সগর্বে ডিসপ্লে করল।সকলেই চমৎকৃত।এত দামি একটা ফোন একদম নতুন অবস্থায় সে এত কম দামে পেয়েছে শুনে সকলেই অবাক।সেদিন নতুন ফোন কেনার আনন্দে সকলকে চা বিস্কিট খাওয়াতে হল আর্যকে।বিকালে ঝিলমিলও অত্যন্ত খুশি হল এই সারপ্রাইজে।দুজনে মিলে অনেক সেলফি তুলল ফোনে।বিবেকানন্দ পার্কের মোড়ে ফুচকা খেয়ে সেলিব্রেট করা হল ফোন কেনাটাকে।
বাড়ি ফিরতে দেরি হয়েছিল আর্যর।মিতালিদি চলে গেছে।চাবি খুলে ঢুকে ঘরের লাইটগুলো জ্বালিয়ে দিয়ে ছোট্ট ড্রয়িংয়ের আর্ম চেয়ারটায় আয়েশ করে বসল আর্য।সারাদিনের দৌড়াদৌড়ি,ব্যস্ততার ক্লান্তিতে তার চোখে ঘুম নেমে এল।
ঘুম ভাঙল ফোনের রিংটোন শুনে।ফোনটা বড্ড কর্কশ সুরে বাজছে।ঘুম চোখেই ফোনটা তুলে নিল আর্,”হ্যালো।“
কোনো উত্তর নেই।শুধু একটানা ঝিঁ ঝিঁ ঝিঁ শব্দ ভেসে আসছে।আর্যর ঘুমটা একেবারেই চটকে গেল।সে আরো কয়েকবার হ্যালো হ্যালো করল।কিন্তু ওপার থেকে কোনো উত্তর নেই।
বিরক্ত হয়ে ফোনটা কেটে দিল সে।রাতবিরাতে লোকে কেন যে কল করে এমন ভাবে ডিস্টার্ব করে!অবশ্য একটা ভালো ব্যাপার হয়েছে।সে ক্লান্তিতে চেন্জ না করে,না খেয়েই আর্মচেয়ারে শুয়ে ঘুমিয়ে গেছিল।হাতঘড়িতে দেখল আর্য, রাত এগারোটা বেজে কুড়ি।মস্ত একটা হাই তুলে চেয়ার ছেড়ে উঠল সে।এইবেলা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিতে হবে।তারপর শান্তির ঘুম!
খাওয়া শেষে বিছানায় শুয়ে কিন্তু আর ঘুম আসতে চাইছিল না ।কোলবালিশ আঁকড়ে এপাশ ওপাশ করতে করতে আর্যর মনে হল ঝিলমিলের সাথে যে সেলফিগুলো তোলা হল সেগুলো একবার দেখা যাক।ফোনটা হাতে নিয়ে ছবিগুলো দেখতে দেখতে বেশ খানিকটা সময় কেটে গেল।ফোল্ডারের একদম শেষ ছবিটাতে পৌঁছে আশ্চর্য হয়ে গেল সে।একটা মেয়ের ছবি।কিন্তু ছবিটা বড্ড অস্পষ্ট।মনে হচ্ছে মেয়েটা যেন একটা ঘষা কাঁচের ওপারে আছে, তাই তার মুখটা স্পষ্ট নয়।এটুকুবোঝা যাচ্ছে এটা একটা অল্পবয়সী মেয়ের ছবি।মেয়েটি গোলাপি রঙের সালোয়ার পরে আছে।
“আশ্চর্য!”
এই ছবিটা তার ফোনে এল কি করে!সে তো এই মেয়েটাকে চেনে না!কস্মিনকালেও দেখে নি।আজ সারাদিনের ব্যস্ততায় কিছু ডাউনলোড ও করা হয় নি।আর সে সম্পূর্ণ অচেনা,অজানা মেয়ের ছবি ডাউনলোড করবেই বা কেন!তার নিজের গার্লফ্রেন্ড আছে।হঠাৎ বিদ্যুৎচমকের মত তার কালকের রাতে ঘটে যাওয়া অবাস্তব ঘটনাগুলো মনে পড়ল।আচ্ছা!তখন যে ফোনটা এল সেটা কার ছিল!কৌতূহলবশত ফোনটা নিয়ে কললিস্ট চেক করল সে।অচেনা নম্বর।এক মুহূর্ত থেমে ওই নম্বরে কল ব্যাক করল আর্য।ফোন সুইচড অফ।আরেকটা কথাও তার মনে পড়ল।আজই ঝিলমিল একটা সুন্দর রিংটোন সেট করে দিয়েছে তার ফোনে।কিন্তু যখন ফোনটা এল কেমন কর্কশ স্বরে রিং হচ্ছিল।সত্যিই অদ্ভুত ব্যাপার!
৬
দিনের বেলায় ফোনটা একদম স্বাভাবিক।এমনকি রিংটোন ও ঠিকঠাক।কিন্তু রাত হলেই শুরু হয় নানা অস্বাভাবিক কান্ডকারখানা।প্রায় সাতদিন সে ফোনটা ব্যবহার করছে।প্রথম দিন থেকেই ফোনটা তাকে কোনো না কোনো ভাবে ডিস্টার্ব করছে।দিন দিন সমস্যা বাড়ছে।রাত এগারোটা নাগাদ রোজ একটা কল আসে।আননোন নাম্বার।কোনো কথা নেই।শুধু টানা ঝিঁ ঝিঁর আওয়াজ।গতকাল রাতে তো উপদ্রব আরেক কাঠি বেড়েছে।রাতে ঘরে ল্যাপটপ খুলে আর্য অফিসের কিছু পেন্ডিং কাজ সারছিল।মিতালিদি সন্ধ্যায় কফি করে একটা ফ্লাস্ক ভর্তি করে গেছিল।সেই ফ্লাস্কের ঢাকনায় কফি ঢেলে খেতে খেতে হাতের পেন্ডিং কাজগুলো দ্রুত সারছিল সে।এমন সময় ফোনে এস এম এস টোন বেজে উঠল।অন্যমনস্ক ভাবে ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজবক্স খুলতেই আনরিড মেসেজটা চোখে পড়ল।একটা হলুদ খাম স্ক্রিন জুড়ে নেচে বেড়াচ্ছে।মেসেজটা খুলে দেখল সেই আননোন নাম্বার থেকে এসএমএস এসেছে,”আর্য আমি আছি………আর্মচেয়ারে……….।“
এনাফ!এখন আবার এসএমএস আসা শুরু হল।আর্য কিছুতেই ভেবে পায়না যে সুইচড অফ মোবাইল থেকে ফোন বা এসএমএস আসে কি ভাবে।আর্য বিছানা ছেড়ে উঠল।সে আজ ব্যাপারটার শেষ দেখেই ছাড়বে।একই মামদোবাজি নাকি!
ড্রয়িংরুমে পৌঁছে কিন্তু সেই সাহসটুকু আর রইল না তার।এককামরার ফ্ল্যাটের ছোট্ট ড্রাইয়িংরুম।একচিলতে জায়গায় যাতায়াতের জায়গা বাঁচিয়ে একটা রকিং আর্মচেয়ার পাতা।এই চেয়ারেই সেদিন সে ঘুমিয়ে পড়েছিল।আজ আর্মচেয়ারে কেউ বসে নেই।অন্তত এমন কেউ নেই যাকে খালিচোখে দেখা যায়,বা হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করা যায়।তবু চেয়ারটা দুলছে; ধীর লয়ে কিন্তু একটানা।ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ উঠছে প্রতিটা দুলুনির সাথে।এই দুলুনির যেন কোনো থামাথামি নেই। চেয়ারে আসীন ব্যক্তি সৃষ্টির আদিকাল থেকেই যেন দুলছে এবং শেষদিন অবধি দুলেই যাবে।নিবিড় নিস্তবদ্ধতার মধ্যে এই অস্বাভাবিক ক্যাঁচ কোঁচ আওয়াজ কেমন অপার্থিব শোনাচ্ছে।
আর্য আর ধৈর্য রাখতে পারল না।চিৎকার করে উঠল,”কে?কে তুমি?কি চাও আমার কাছে?কেন বারেবারে আমাকে ভয় দেখাচ্ছ?”
এরপর যেটা হল আর্য সেটার জন্য প্রস্তুত ছিল না।আর্মচেয়ারে হঠাৎ একটা ধোঁয়ার কুণ্ডলীর আবির্ভাব হল।কুন্ডলীটা ক্রমশ একটা অবয়বের আকৃতি নিতে শুরু করল।যেন কোনো ভাস্কর ধীরে ধীরে মার্বেল কেটে বের করে আনছে একটি নারীদেহের অবয়ব।অবশেষে সেই ধোঁয়াটে আবছায়া নারী কথা বলে উঠল,”আর্য”
বহুদূর থেকে যেন ডাক ভেসে আসছে।কেউ তার নাম ধরে ডাকছে,
“আর্য…..ওই আর্য……আর্য ওঠো।“
আর্য ধড়মড় করে উঠে বসল।সে কি ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিল?না!সে তো ড্রাইয়িংয়ের রকিং চেয়ারটায় উপরই শুয়ে।তার মুখের উপর ঝুঁকে পড়ে তাকে ডাকছে একটি মেয়ে।বেশি বয়স নয় মেয়েটির,ঝিলমিলের মতোই হবে।মুখটা সারল্য মাখা।এবার আর আর্যর ভয় করল না।সে শান্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করল,”কে তুমি?”
-“আমি লাবণ্য।“
-“কিন্তু তোমাকে তো আমি চিনি না?”
-“না চেন না।আমি আজ আর থাকতে পারছি না আর্য।আমার কষ্ট হচ্ছে।আজ….আসছি।ফোনে মেসেজ দেখো…”
লাবণ্য যখন কথা বলছিল তখন ওর অবয়বটা বারবার ঝাপসা হয়ে আসছিল।পুরোনো ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট টিভিতে যেমন মাঝে মাঝে এন্টেনা ঘুরে গেলে ঝাপসা ছবি আসত, স্পার্ক করত ঠিক সেরকম।কথা শেষ হতেই বাতাসে মিলিয়ে গেল ধোঁয়ার কুণ্ডলী।
আর্যর সারা রাত ঘুম হল না।
৭
পরদিন সকালে অফিসে গেল না আর্য।রাতে ঘুম না হওয়ায় শরীর ভালো নেই।কাল সারা রাত সে ভেবেছে।ভেবে ভেবেও কিছু কুলকিনারা পায় নি সে।আজ সকালে ফোনে একটা এসএমএস এসেছে।তাতে একটা ঠিকানা লেখা আছে।এই শহরেরই ঠিকানা।আর্য আজ এই ঠিকানার খোঁজ করবে।যদি লাবণ্যর ব্যাপারে কিছু জানা যায়!
ঠিকানা খুঁজে বার করতে বেশি বএগ পেতে হল না।একটা ছোট্ট একতলা বাড়ি।বেশ পুরোনো।সামনে একচিলতে বাগান।বাড়ির সদর দরজায় কড়া নাড়তে এক বয়স্ক ভদ্রলোক বেরিয়ে এলেন।
-“কাকে চাই?”
ভদ্রলোকের গলাটা বেশ আন্তরিক।মনে মনে একটু ভরসা পেয়ে আর্য জিজ্ঞাসা করল,
-“আজ্ঞে,লাবণ্যর খোঁজে এসেছি।“
-“লাবণ্য!চেন তুমি বাবা ওকে?জান ও কোথায় আছে?”
ভদ্রলোক ব্যাকুল হয়ে তার হাতটা জড়িয়ে ধরলেন।আর্য কি বলবে প্রথমে ভেবে পেল না।তার অপ্রস্তুত অবস্থা দেখে ভদ্রলোক বলে উঠলেন,
-“আগে ভিতরে এসে বস বাবা।তুমি ওর বন্ধু বুঝি।“
বাড়ির ভিতরটা একটু অন্ধকার।সবকিছুতেই দারিদ্রের ছাপ প্রকট।বাড়ির চেহারা মলিন হলেও সর্বত্র যত্নের ছাপ স্পষ্ট।একটা টুলে বসল আর্য।সামনে শোকেসের উপর একটা মাঝারি সাইজের ফটোফ্রেম রাখা।ছবিটা লাবণ্যর।আর্যকে ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভদ্রলোক বললেন,”গত জন্মদিনে তোলা।“
এরইমধ্যে আর্যর পিছনে এসে একজন বয়স্কা ভদ্রমহিলা এসে দাঁড়ালেন।ভদ্রলোক পরিচয় করিয়ে দিলেন।তিনি লাবণ্যর ঠাকুরদা আর এই ভদ্রমহিলা ঠাকুমা।লাবণ্য ছোটবেলাতেই নিজের বাবামাকে হারিয়েছে।ঠাকুরদা ঠাকুমাই তাকে অপত্য স্নেহে বড় করে তুলেছেন।এখন লাবণ্যর একুশ বছর চলছে।সে কলেজে পড়ে।পড়াশোনাতে ছোটবেলা থেকেই সে বেশ মেধাবী।সবই ঠিকঠাক চলছিল।হঠাৎ দশদিন আগে সে নিখোঁজ হয়ে যায়।রোজকার মত সে সকালে কলেজ গেছিল কিন্তু আর ফেরেনি।তাঁরা পুলিশে রিপোর্ট করেছেন কিন্তু ওই যা হয়,পুলিশের দায়সারা মনোভাবে তদন্ত একচুলও এগোয়নি।লাবণ্যর কোন খবর পাওয়া যায়নি।
আর্য ভেবে পাচ্ছিল না কি বলবে!এঁরা এখনো আশা করেন লাবণ্য বেঁচে আছে,একদিন সে আবার ফিরে আসবে।সে কি করে এঁদের বলবে যে লাবণ্য আর কোনোদিন ফিরবে না।সে আদৌ জীবিত নেই।এক বিদেহী আত্মা হয়ে ছটপট করছে কোনো অজানা কারণে।সে মুক্তি পায়নি,হয়তো পাবেও না যতক্ষন তার কোনো ইচ্ছে,কোনো কাজ অপূর্ণ আছে,যা না শেষ করে সে পৃথিবী থেকে যেতে পারছে না।কিন্তু কি সেই কাজ?কি সেই অপূর্ণ ইচ্ছা যা লাবণ্যকে শান্তি দিচ্ছে না?
সম্পূর্ণ ঘটনা আর্যের মুখ থেকে শোনার পর লাবণ্যর ঠাকুমা অজ্ঞান হয়ে গেলেন।তার ঠাকুরদার মর্মভেদী কান্না আর্য কোনোদিন ভুলতে পারবে না।
ওনারা একটু শান্ত হলে আর্য জিজ্ঞাসা করল,”আপনাদের কি মনে হয়,লাবণ্যর সাথে এক্সাক্টলি কি হয়েছে?”
লাবণ্যর ঠাকুরদা বললেন,”কিছুই জানি না।আমার নাতনি বরাবরের বাধ্য মেয়ে।কখনো পড়াশোনায় ফাঁকি দেয়নি।এমন কোনো কাজ কোনোদিন করেনি যাতে আমরা ওকে বকাবকি করতে পারি।কি থেকে কি হয়েছে কিছুই তো বুঝতে পারছি না।“
ঠিক এমন সময় আর্যর ফোনে এসএমএস টোন বেজে উঠল।মেসেজে খুলতে দেখা গেল লেখা রয়েছে,”ডায়েরি 2016-2017”
আর্য মুখ তুলে জিজ্ঞাসা করল,”লাবণ্য কি ডায়েরি লিখত?”
-“হ্যাঁ বাবা,লিখত।কিন্তু কেন জিজ্ঞাসা করছ?” ঠাকুমা চোখ মুছে বললেন।
-“আমার মনে হয় ওর ডায়েরি পড়লে হয়তো কিছু না কিছু ঠিক জানা যাবে।বেশি না,2016 আর 2017 এর ডায়েরিদুটো দিন আমাকে।আমি পড়ে দেখতে চাই।“
৮
আর্য স্তম্ভিত হয়ে বসে আছে।সামনে লাবণ্যর ডায়েরি খোলা।সে এখন এমন এক সত্যের মুখোমুখি যা সে কখনো ভাবতেও পারেনি।দিনের আলোর মত সবকিছু এখন স্পষ্ট তার কাছে।শুধু ঘটনার শেষটুকু সে নিশ্চিত ভাবে জানে না,তবে আন্দাজ করে নিতে পারে।
2016 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লাবণ্যের সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় হঠাৎ আলাপ হয় এই শহরেরই একটি ছেলের।ছেলেটি লাবণ্যের চেয়ে প্রায় পাঁচ বছরের বড়।চাকরি করে বড় পদে।প্রথমে টুকটাক কথা শুরু হয় একই শহরের নাগরিক হওয়ার সুবাদে।দ্রুত সেই পরিচয় ঘনিষ্ঠতায় বদলে যায়।মুখোমুখি দেখা হয়।কখন যে লাবণ্য নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল,নিজের সর্বস্ব উজাড় করে ধরা দিয়েছিল ছেলেটির কাছে সে নিজেই জানে না।প্রায় দেড় বছরের সম্পর্ক তাদের।একদিন এই লাগামছাড়া সম্পর্কের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসাবে লাবণ্য জানতে পারে সে মা হতে চলেছে।সাথে সাথে সে কথাটা জানায় ছেলেটিকে।তারপর থেকেই অদ্ভুত ভাবে বদলে যেতে থাকে ছেলেটি।প্রথমে এভয়েড করতে শুরু করে সে।শেষে বিস্তর ঝগড়া ঝাঁটির পর সে লাবণ্যকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় তার পক্ষে লাবণ্যকে বিয়ে করা সম্ভব নয়।তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে এক ধনী পরিবারে।লাবণ্য যেন আর তাকে এভাবে ডিস্টার্ব না করে!
ডায়েরিতে লাবণ্য এই সব তথ্য বিস্তারিত ভাবে লিখেছে।তার প্রেম,তার অন্ধবিশ্বাস,শেষে সেই পাগলপারা প্রেমের এমন ভয়ঙ্কর পরিণতি সব কিছুই উজাড় করে দিয়েছে ডায়েরির পাতায় পাতায়।
আর্যর কাছে এটা পরিষ্কার লাবণ্য এক মারাত্মক ষড়যন্ত্রের শিকার।ছেলেটি লাবণ্যকে নিজের স্বার্থে নিজের লালসা পূরণের জন্য ব্যবহার করে শেষে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল।কিন্তু লাবণ্যর মৃত্যু কিভাবে হল সেটা পরিষ্কার নয় এখনো।আচ্ছা লাবণ্য কি আত্মহত্যা করেছে?যদি তাই হবে তো লাবণ্যর মৃতদেহ কোথায়?
-“ওই আর্য!আর্য!”
আর্য অফিসের জন্য বেরোচ্ছিল বাইক নিয়ে।এমন সময় ডাক শুনে পিছন ফিরে দেখে রাস্তায় বাইক থামিয়ে অমিয়দা দাঁড়িয়ে।
-“আরে অমিয়দা!হোয়াট আ প্লেসেন্ট সারপ্রাইজ!কেমন আছ?”
-“ভালো আছি।তোকে দেখলাম বেরোচ্ছিস,ভাবলাম দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করে যাই কেমন আছিস।“
-“ভালো আছি।তুমি কেমন আছ?”
-“চলে যাচ্ছে।ইয়ে,ফোনটা..ফোনটা কেমন কাজ করছে?ভালো তো?”
-“দুর্দান্ত।“
-“তাই।বাঃ।ভালো তো।আচ্ছা।আজ আসি।তুইও অফিস যা।“
-“ওকে।পরে কথা হবে।“
বলে আর্য বাইক স্টার্ট দিল।অফিসের রাস্তা ধরে চলতে চলতে একটা কথা বারবার মনে হচ্ছিল আর্যর।তার ফোন কেমন কাজ করছে সেই খবর নিতে অমিয়দা চিন্তিত!দুর্দান্ত কাজ করছে শুনে মুখটা কেমন চোরের মত করে চলে গেল।উঁহু!ব্যাপারটা ভালো ঠেকছে না একেবারেই।
অফিসে কাজের ফাঁকে ফোনটা একবার হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে আর্য দেখল একটা এসএমএস এসে আনরিড হয়ে পড়ে আছে।তড়িঘড়ি এসেএমএসটা খুলে পড়ল সে।পড়ে চমকে গেল।এসেমেসটা সেই আননোন নাম্বার থেকেই এসেছে।আর তাতে লেখা আছে একটা নাম।নামটা আর্যর চেনা,বড় প্রিয় ও বটে।লেখা আছে,”ঝিলমিল।“
বিকালে বিবেকানন্দ পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে আকাশ পাতাল ভাবছিল আর্য।কেন লাবণ্য এসএমএসে ঝিলমিলের নাম লিখে পাঠাল?ঝিলমিলের সাথে লাবণ্যর কি সম্পর্ক?একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল আর্যর মুখ দিয়ে।কি যে পাকেচক্রে জড়িয়ে পড়েছে সে!কিভাবে মুক্তি পাবে?কি জানি কি আছে কপালে?
-“এই যে মশাই।রাস্তার মোড়ে এমন রামগরুরের ছানার মত চোখ পাকিয়ে মুখটা হাঁড়ি করে দাঁড়িয়ে আছ কেন?কি হয়েছে?”
-“ঝিলমিল?”
-“হুঁ?”
-“তুমি কি লাবণ্যকে চেন?মানে চিনতে?”
-“লাবণ্যকে?”হ্যাঁ, চিনি তো।আমার কলেজ মেট।আমরা একে অপরের খুব ভালো বন্ধু।কিন্তু তুমি কি করে ওকে চিনলে?”
-“ওর সম্পর্কে আর কি জান তুমি?”
-“এই কি ব্যাপার বল তো? হঠাৎ লাবণ্যকে নিয়ে পড়লে কেন?বেচারি গত দশদিন ধরে মিসিং জান।আমরা সকলেই খুব ওরিড ওর জন্য।“
-“ঝিলমিল।আমি জানি লাবণ্য কোথায় আছে।মানে ঠিক কোথায় আছে জানি না,এটুকু জানি যে লাবণ্য আর বেঁচে নেই।“
-“বেঁচে নেই!ওহ মাই গড!!”
-“হুঁ।আমি যদি তোমাকে সত্যিটা বলি তুমি কি আদৌ আমাকে বিশ্বাস করবে?ভাববে হয়তো পাগলের প্রলাপ বকছি।“
আর্য কথা শেষ করে অসহায় ভাবে ঝিলমিলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।ঝিলমিল খানিকক্ষণ চুপ করে আর্যকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল।তারপর ওর হাতটা ধরে টান দিল।বলল,
“চল পার্কের মধ্যে বসি।তারপর তোমার পুরো কথা শুনব।রাস্তায় দাঁড়িয়ে এভাবে কথা হয় না।“
ঘটনাটা পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করল আর্য।একটুও কিছু বাদ দিল না।একটানা বলে থেমে আড়চোখে ঝিলমিলের মুখের দিকে তাকাল সে।দেখল ঝিলমিলের চোখে জল।বেশকিছুক্ষণ আর কোনো কথা হল না।তারপর নিস্তব্ধতা ভেঙে ঝিলমিল বলে উঠল,
-“শেষ কিছুদিন সত্যিই লাবণ্য খুব অন্যমনস্ক থাকত জান।ওকে দেখে বুঝতাম ও ভালো নেই।কোনো গভীর সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছে।কিন্তু মেয়েটা কিছু ভাঙত না।আমরা বন্ধুরা ভাবতাম হয়তো বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়েছে।দুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে।“
আর্য উত্তেজনায় সোজা হয়ে বসল।
-“তুমি ওর বয়ফ্রেন্ডকে চিনতে?”
-“হ্যাঁ।কিন্তু সে যে এতদূর ছোট মনের মানুষ কোনোদিন বুঝতেই পারিনি।“
-“কে সে?”
ঝিলমিল আর্যর চোখে চোখ রেখে শান্ত স্বরে উত্তর দিল,
-“তুমিও চেন।অমিয় স্যান্নাল।“
১০
আজ ঝিলমিলকে নিয়ে আর্য লাবণ্যর বাড়ি এসেছে।লাবণ্যর ঠাকুরদা ঠাকুমাকে সবটা জানিয়েছে।গত পরশু
সন্ধ্যায় ঝিলমিলের সাথে কথা হওয়ার সময়ই একটা এসএমএস আসে আর্যর ফোনে।তাতে এই মিটিংটা অ্যরেঞ্জ করার কথা লেখা ছিল ঠিক রাত এগারোটা নাগাদ।
সেই মত আজ সকলে জড়ো হয়েছে লাবণ্যর ঘরে।এখন এগারোটা বেজে পাঁচ।সকলেই উসখুস করছে।ঝিলমিলের মুখে অস্বস্তি মাখানো উত্তেজনার ছাপ।লাবণ্যর ঠাকুমা ঠাকুরদার চোখে জল।একা আর্যই শান্ত হয়ে প্রতীক্ষা করছে লাবণ্যর আগমনের।
ঘড়িতে যখন এগারোটা বেজে পনেরো মিনিট তখন ঘরের লাইটটা নিভে গেল।ঝিলমিল ভয়ে আর্যর ডানহাতটা শক্ত করে চেপে ধরল।আর্য অন্য হাত দিয়ে ঝিলমিলের হাতের উপর মৃদু চাপ দিয়ে নীচু স্বরে বলল,-“ভয় পেও না।আমি আছি তো।“
কথার ফাঁকেই খোলা জানলা দিয়ে ঘরে ঢুকে পড়েছে একটা ধোঁয়ার কুণ্ডলী।অন্ধকারে ততক্ষণ সকলেরই চোখ একটু সয়ে এসেছে।সেই আবছা আবছা আলোতেই ধোঁয়ার কুন্ডলী ঘরের মধ্যে ঢুকতে দেখা গেল।তারপর হঠাৎ ঝিলমিল এলিয়ে পড়ল আর্যর কাঁধে।আর্য চমকে উঠে ঝিলমিলকে ধরে নিতে নিতে বুঝল সে অচেতন।আর্য চিন্তিত ভাবে দুবার ঝিলমিলের নাম ধরে ডেকে কাঁধ ধরে ঝাঁকানি দিতেই সে আবার সোজা হয়ে বসল।তারপর আর্যর হাত ছাড়িয়ে উঠে গেল ঘরের দক্ষিণ দিকের জানালার কাছে।তারপর বাকিদের দিকে ফিরে স্পষ্ট উচ্চারণে বলে উঠল,
-“আমি লাবণ্য।কথা বলতে এসেছি।ভয় পেও না আর্য, ঝিলমিলের কোনো ক্ষতি হবে না।আসলে অনেক কথা বলার আছে আমার।কিন্তু এতক্ষন ধরে আমি একটানা কথা বলতে পারি না।বড্ড কষ্ট হয়।তাই ঝিলমিলকে আশ্রয় করলাম।এবার স্বাভাবিক ভাবে নিজের কথাটুকু বলতে অন্তত পারব।“
-“লাবুরে,আমার লাবু।“
লাবণ্যর ঠাকুমা ডুকরে কেঁদে ওঠে ছুটে গেলেন ঝিলমিলের কাছে।ওকে আঁকড়ে ধরে কেঁদে উঠলেন।লাবণ্যর ঠাকুরদার চোখেও জল।ঝিলমিলের পাশে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে নাতনির মাথায় হাত বোলাচ্ছিলেন তিনি।
ঝিলমিলের মধ্যে থেকে লাবণ্য বলে উঠল,
-“ঠামি,দাদাই তোমরা কেঁদো না।আমি ভালো আছি।চোখের জল মোছ।এবার তারা কাঁদবে যারা আমার এই হাল করেছে!”
-“তার মানে তুমি খুন হয়েছিলে?”
আর্যর গলা থেকে যুগপৎ বিস্ময় আর বেদনা ছিটকে বেরিয়ে এল।
তার প্রশ্নের উত্তরে ঝিলমিল থুড়ি লাবণ্য বলে উঠল,
-“খুন!কি নিষ্ঠুর ভাবে আমাকে হত্যা করা হয়েছিল তা তোমরা কেউ কল্পনা করতে পারবে না।উফ!মানুষ যে এমন পশুর অধম হতে পারে..”
-“কি হয়েছিল বিস্তারিত বল আমাদের।“
-“হ্যাঁ, মা।বল সেদিন কি হয়েছিল তোর সাথে।”
ঠাকুরদার দিকে তাকিয়ে ঝিলমিল অর্থাৎ ঝিলমিলের ভিতর থেকে লাবণ্য বলতে শুরু করল,
-“তোমরা আমার ডায়েরি থেকে জেনেই গেছ,অমিয় আমাকে কিভাবে ঠকিয়েছে।নিজের প্রবৃত্তি চরিতার্থ করতে আমাকে দিনের পর দিন ব্যবহার করেছে তারপর একদিন সুযোগ বুঝে সরে যেতে চেয়েছে।আমি তোর পায়ে ধরে অবধি অনেকবার সেধেছি, কোন ফল হয় নি।
তারপর একদিন মরিয়া হয়ে কলেজ ফেরত ওর অফিসে চলে গেলাম।“
সকলে রুদ্ধশ্বাসে শুনছিল।ঝিলমিল রূপী লাবণ্য থামতেই সকলে একযোগে প্রশ্ন করল,
-“তারপর?তারপর কি হল?”
-“তারপর?অমিয় আমাকে ওর অফিসে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠল।তারপর আমাকে ভিজিটর্স রুমে বসিয়ে ভিতরে চলে গেল।কিছুক্ষন পর দেখি ও ব্যাগপত্র নিয়ে বেরিয়ে এল।বলল,
-“চল।আজ সব সমস্যার সমাধান করেই ছাড়ব।চিন্তা কর না।সব ঠিক হয়ে যাবে।“
বলে আমাকে টেনে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে এল।
অফিস থেকে বেরিয়ে একরকম জোর করেই আমাকে ও নিয়ে গেল কোনো একটা নার্সিংহোমে।ওখানে একজন ডাক্তারকে দেখলাম ও খুব ভালো করে চেনে।আমায় অমিয় বলল,ও আমার প্রেগনেন্সি চেকআপের জন্য এখানে নিয়ে এসেছে।ও আজই আমাদের কথা বাড়িতে জানাবে।ঠিক হয়ে যাওয়া বিয়েটা ভেঙে দেবে।চোখের জলে মিষ্টি মিষ্টি কথায় ক্ষমা চাইল আমার সাথে প্রথমে বাজে ব্যবহার করার জন্য।আমিও বোকা।দুফোঁটা চোখের জলে সব ভুলে গেলাম।সরল বিশ্বাসে ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকলাম অমিয়র সাথে।ডাক্তার চেকআপ সেরে বললেন যে আমি খুব দুর্বল,আয়রনের অভাব রয়েছে শরীরে।এক্ষুণি একটা ইঞ্জেকশন করতে হবে,না হলে আমার গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হতে পারে।ইঞ্জেকশন পুশ করার পর চোখ জড়িয়ে আসযে লাগল।ধীরে ধীরে গভীর ঘুমে ডুবে গেলাম।“
-“তোকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েছিল শয়তানটা।“
উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন লাবণ্যর ঠাকুরদা।
লাবণ্য মাথা নাড়ল,
-“হ্যাঁ।ঘুমের বলতে পার আবার জেনারেল এনাস্থেসিয়াও বলতে পার।যখন জ্ঞান এল,দেখলাম একটা বেডে শুয়ে আছি।তলপেটে অসহ্য যন্ত্রনা।স্যালাইন চলছে।বুঝলাম আমার অজান্তেই আমাকে ঠকিয়ে আমার সন্তানকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।অসহায় ভাবে কান্নাকাটি করা ছাড়া আর আমার কিছু করার পথ নেই।
বেডে শুয়ে কাঁদছি এমন সময় ঘরে ঢুকল অমিয়।আমাকে বলল,
-“বলেছিলাম না,সব ঠিক করে দেব।দেখ তুমিও ঝঞ্জাট মুক্ত হয়ে গেলে।আমিও ফ্রি হয়ে গেলাম।“
বলে আমার কাছে এসে মুখের উপর ঝুঁকে পড়ল সে।তারপর শয়তানি হাসি ঠোঁটের কোণে ঝুলিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-“আশা করি।এবার তুমি আমার পিছু ছাড়বে।আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না।আমি চাইলে আজ তোমাকে খুন ও করিয়ে দিতে পারতাম।কিন্তু অনেক ভালো সময় কাটিয়েছি তোমার সাথে,তাই আজ ছেড়ে দিলাম।এরপর সাবধানে থেকো।আমার পথের কাঁটা হতে এস না।“
-“আমি ততক্ষণ কান্না ভুলে এই পিশাচটাকে দেখছিলাম।ও থামতেই ওর মুখে একদলা থুতু ছুঁড়ে দিলাম।প্রবল রাগে ও আমার গলা টিপে ধরল।প্রচন্ড যন্ত্রনায় ছটপট করতে করতে আমি ওর শার্টটা চেপে ধরলাম।হাতে কি একটা ছিঁড়ে চলে এল।গলায় চাপ উত্তরোত্তর বাড়ছিল।একসময় চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে গেল।“
সারা ঘর জুড়ে অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতা।কেউই কথা বলতে পারছে না।আর্যর গলার কাছে মনে হচ্ছে কিছু একটা ডেলার মত আটকে গেছে।প্রবল কষ্টে আত্মসম্বরণ করে আর্য জিজ্ঞাসা করল,
-তুমি জান তোমার বডি ওরা কোথায় পাচার করেছিল?”
-“হ্যাঁ।যখন আবার চেতনা ফিরে এল দেখলাম নোংরা কাদাপাঁকের মধ্যে ডুবে আছি।শরীরটা বেশ হালকা লাগল।কোনো কষ্ট ছিল না।আমার মনে হল ইচ্ছে করলেই ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারব।বেরিয়ে এলাম।দেখলাম আমার শরীরটাকে রসিক বিলের পশ্চিম দিকের মজে যাওয়া অংশটাতে ফেলে দিয়ে গেছে ওরা।“
-“হুম।ওদিকে যে জনবসতি নেই।কি নিষ্ঠুর!“
-“আজ আমি আসি।বড্ড কষ্ট হচ্ছে।আর পারছি না।ঝিলমিলের ও কষ্ট হচ্ছে।ওর রেস্ট দরকার।“
বলা শেষ হতেই ঝিলমিল ঠাকুমার কোলে পড়ে গেল।বোঝা গেল লাবণ্য চলে গেছে।
১১
সেই রাতে আর কোনো কথা হয় নি।ঝিলমিল ভীষন ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল।সেই রাতটা ও লাবণ্যর ঠাকুমার কাছেই রয়ে গেল।বাড়ি এসে বিছানায় শুয়ে নানা চিন্তায় আর্য ডুবেছিল।
যেমন লাবণ্যর দেহ কোথায় আছে জানা গেছে।কিন্তু কি করে পুলিশকে বোঝানো যাবে?কি বলা হবে পুলিশকে?ভুত এসে বলে গেছে তার মৃতদেহ কোথায় লুকোনো আছে?
আর এই হত্যার সাথে অমিয়র যোগসাযোগ কি করে প্রমাণ করা যাবে?কি করে সকলকে জানানো যাবে এই সত্যিটা যে অমিয় একজন খুনি!
আকাশপাতাল ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ল সে।ঘুমের মধ্যে কত যে স্বপ্ন দেখল সে।কোনো স্বপ্নেরই কোনো মাথা মুন্ডু নেই।
পরদিন অফিসে কাজের চাপ ছিল প্রচন্ড।ফোনে তিনটে মিসডকল হয়ে গেছে।ঝিলমিলের ফোন ছিল।কল ব্যাক করলে একবার রিং বাজতে না বাজতেই ও ফোন তুলল।ফোনে ওর গলা খুব উত্তেজিত শোনাচ্ছিল।আর্য কিছু বলার আগেই ঝিলমিল গড়গড় করে বলে চলল এক উত্তেজনাপূর্ণ খবর।পুলিশ আজ রসিক বিলের পশ্চিমপাড়ে যে পোড়োবাড়িটা আছে ওখানে রেড করে প্রচুর বেআইনি স্মাগলিং করা মালপত্র উদ্ধার করেছে।আর তখনই ওদের নজরে পরে বিলের পাড়ে জলকাদার মধ্যে আটকে থাকা এক মৃতদেহ।
লোক মুখে খবর দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছে।সকলে এখন বিল পাড়ে ভিড় জমিয়েছে।
একমুহূর্ত আর অপেক্ষা করল না আর্য।কোনক্রমে হাফ ডে সি.এল ম্যানেজ করে ছুটল সে বাইক নিয়ে।বিল পাড়ে পৌঁছে দেখে কাতারে কাতারে মানুষ।ঠেলে সরিয়ে বিলের পাড়টায় পৌঁছে দেখে পুলিশ একটা জায়গা ঘিরে রেখেছে।একটা মৃতদেহ শোয়ান সেখানে,সাদা কাপড়ে আপাদমস্তক ঢাকা।শোনা গেল লাশ মর্গে যাবে পোস্টমর্টেমের জন্য।
আর্য সেখান থেকে পৌঁছে গেল লাবণ্যর বাড়ি।ততক্ষণে তিনিও থানার উদ্দেশ্যেই বেরোচ্ছিলেন।থানা থেকে নাকি ফোন এসেছিল যে একটি মহিলার মৃতদেহ পাওয়া গেছে।এসে সনাক্ত করে যান এটা নিঁখোজ লাবণ্য সমাদ্দারের মৃতদেহ কিনা।
মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে লাবণ্যর ঠাকুরদা অঝোরে কাঁদছিলেন।আর্য ও একটু আগে দেখা বীভৎস দৃশ্যটা কিছুতেই ভুলতে পারছে না।লাবণ্যর মৃতদেহটা জলে কাদায় এতটাই বিকৃত হয়ে গেছে যে চেনাই যায় না।পেট ফুলে উঠেছে।পচা গন্ধে মর্গের মধ্যে থাকা যাচ্ছে না।লাবণ্যর ঠাকুরদা নাতনিকে পোষাক দেখে সনাক্ত করলেন।শেষদিন সে এই গোলাপি সালোয়ারটা পড়েই কলেজ গেছিল।আর কানের পাঞ্জাবি রিংটাও সাক্ষী দিল এটা লাবণ্যের মৃতদেহ।
অফিসারের সাথে তাদের কথা হয়েছে।অফিসার কথা দিয়েছেন,দ্রুত পোস্টমর্টেম করা হবে।কি করে মৃত্যু হল লাবণ্যর কালকের মধ্যেই জানা যাবে।
লাবণ্যর বাড়ি পৌঁছে আর্য ঠিক করল সে এই কদিন এখানেই থাকবে।লাবণ্যর ঠাকুরদা ঠাকুমা একদম ভেঙে পড়েছেন।তাদের পাশে কারোর থাকাটা দরকার।
পরদিন সকালে ঝিলমিল খবর নিয়ে এল অমিয় ও তার পরিবার নাকি আজকের রাতের ট্রেনে হাওড়া যাচ্ছে।কাল তারা এলাহাবাদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যাবে।ওখানেই এক পয়সাওয়ালা প্রবাসী বাঙালির মেয়ের সাথে অমিয়র বিয়ে।
কথাটা শুনে সকলেরই চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল।তারমানে তাদের হাতে শুধু আজকের দিনটাই।না হলে আবার একটা মেয়ের সর্বনাশ নিশ্চিত।
বিকালে অফিসারের ফোন এল।তিনি লাবণ্যর ঠাকুরদার কাছেই আসছেন।
দশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলেন তিনি।হাতে একটা ব্রাউন কালারের বড় খাম।সেটা বের করে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পড়ে শোনালেন তিনি।হত্যা করা হয়েছে লাবণ্যকে।গলা টিপে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে।দেহ বিকৃত হয়ে গেলেও শ্বাসনালীর টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে যাওয়া এটাই প্রমাণ করে যে এটা হোমিসাইড।
আর যেটা সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য সেটা হল লাবণ্যর ডান হাতের মুঠোর মধ্যে একটা এমন জিনিস পাওয়া গেছে যে অকাট্য ভাবে খুনির পরিচয় সকলকে জানিয়ে দিচ্ছে।সেটা হল একটা আইডেন্টিটি কার্ড।খুনের সময় নিজেকে বাঁচানোর জন্য লাবণ্যর সাথে খুনির যে ধস্তাধস্তি হয় তাতে খুনির গলায় ঝোলানো আইডেন্টিটি কার্ডটা কোনোভাবে লাবণ্যর হাতে চলে আসে।লাবণ্যর মৃত্যুর পর ঐভাবেই তার হাতের মুঠোর মধ্যে কার্ডটা থেকে যায়।
কার্ডটা ওয়াটারপ্রুফ খামের মধ্যে থাকায় জল লেগে নষ্ট হয় নি।কার্ডে নামটা স্পষ্ট পড়া যাচ্ছে।কার্ডে কালো রঙের ইংরাজি ব্লক লেটারে বড় বড় করে লেখা আছে,”অমিয় স্যান্নাল।“
এরপর দ্রুত ওয়ারেন্টের ব্যবস্থা করে পুলিশ গিয়ে ফাঁদ পাতে স্টেশনের গেটে।স্টেশনের ভিড়ের সাথে মিশে আর্য,ঝিলমিলরাও উপস্থিত হয়।রাত নটা পয়তাল্লিশের হাওড়া গামী ট্রেনে ওঠার সময় গ্রেপ্তার হয় অমিয়।বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত তার হাতে নেমে আসে হাতকড়ার কঠিন বন্ধন।
১২
আজ লাবণ্যর দেহ সৎকার করা হবে।সকলে এসেছে শ্বশান ঘাট।সকলের চোখের জলের মধ্যে দিয়ে আজ লাবণ্য বিদায় নেবে।অমিয় এখন জেলে।প্রথমে সে ভীষন তরপেছিল।কিন্তু আইডি কার্ডের কথা উঠতেই জোঁকের মুখে নুন পরে।পুলিশি আতিথেয়তায় তার সত্যি কথা উগরে দিতে বেশি সময় লাগে নি।তার কথার সূত্রে শহরের বুকে একটা বেআইনি নার্সিংহোম এবং তার মালিক ডাক্তারটিও ধরা পড়ে।নার্সিংহোমটাতে নানা ধরনের বেআইনি কাজকর্ম করা হত।এখন নার্সিংহোমটাকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।লাবণ্য শেষবারের মত এসেছিল কাল রাতে।সে বলে গেছে শেষ কিছু কথা যেগুলো না জানা হলে আর্যর সব কৌতূহল মিটছিল না।যেমন সে কেন আর্যকেই বাছল সাহায্য চাইবার জন্য?উত্তরটা আর্যর কেনা সেকেন্ড হ্যান্ড ফোনটা।ফোনটা অমিয় চারমাস আগে ভ্যালেন্টাইন গিফট হিসাবে দিয়েছিল লাবণ্যকে।খুনের পর সিমটা জলে ফেলে দিয়ে ফোনটা নিজের কাছে রেখে দেয়।লাবণ্যর মৃত্যুর সময় তার হাতে একমাত্র ওই ফোনটাই ছিল যা অমিয় লোভের বশে জলে ফেলে দেয় নি।ফলে ওটাই হয়ে দাঁড়ায় মানুষের সাথে লাবণ্যর যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম।অমিয় ফোনটা আর্যকে বিক্রি করে।আর তাই লাবণ্য মরিয়া হয়ে নিজের সত্যিটা আর্যকে জানানোর চেষ্টা শুরু করে,তার মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা শুরু করে।
লাবণ্য এগারোটার সময় আসতে পারত কারন ঠিক ওই সময়টায় তার মৃত্যু হয়।বিদেহী আত্মারাও সম্পূর্ন বন্ধনমুক্ত হয় না,এই ঘটনাটাই তার প্রমাণ।
শেষবারের মত মিলিয়ে যাওয়ার আগে লাবণ্যর মুখে ছিল এক অপার্থিব জ্যোতি।হয়তো নিজের মৃত্যুর পর যে জগতটা রয়েছে সেখানে পৌঁছে গেলে এমনই শান্তি পাওয়া যায়।যেখানে সব কথা,সব ব্যথা,সব অভিযোগ,সব দীনতা শেষ হয়ে যায় সেইখানে পৌঁছে যাওয়ার ডাক পেয়েছে লাবণ্য।
আজ তাই তাকে বিদায় জানানোর অনুষ্ঠানে কারোর চোখে জল নেই।বরং মুখে হাসি নিয়ে সকলে চিতার আগুনে বিদায় জানাচ্ছে লাবণ্যর ফেলে যাওয়া পার্থিব দেহটাকে।এই হাসিটুকুই হোক লাবণ্যর পরলোক যাত্রা শুরুর পাথেয়।জীবনটা যার সুখের হয়নি,অতি অল্প বয়সেই যাকে থেমে যেতে হয়েছে জীবনপথের বিফল পথিক হিসাবে,তার পরলোক যাত্রা শুরু হোক আনন্দের মধ্যে।মঙ্গল গীত ধ্বনিত হোক স্বর্গপথে।
……………………………………..সমাপ্ত………………………………..