আমি শ্রেয়ার কথামত সূর্যকে তুলে এনেছি,,,
সূর্যের মুখ শক্ত করে বাধা,,,
তুলে আনার সময় ধস্তাধস্তির কারনে
দুজনেরই চোট লেগেছে।
তবে আমার চেয়ে সূর্য বেশি চোট পেয়েছে।
যদিও আমার মনে এখন কোনো
মায়া নাই, কেবল একরাশ ঘৃণা ছারা।
রাত ৯ টায় শ্রেয়া আসলো, ওর বাড়ির পাশের হিজলগাছের নিচে।
এখানেই অপেক্ষা করতে বলেছিলো।
সূর্যের হাতদুটো পিছনে বাধা,
আর পা দুটো গাছের সাথে।
শ্রেয়া এসে বললো, তুই একটু দুরে যা,,,
এখনকার দৃশ্য তুই সইতে পারবিনা।
আমি সইতে পারবো বলে ওকে
ওর কাজ করতে বললাম।
সে মুহুর্তেই শ্রেয়া মানুষ থেকে বিভৎস এক আগুনে পোড়া ডাইনি হয়ে গেলো,,,
ডাইনির হাতদুটো নাই,
পুরো শরিরটা আগুনে ঝলসানো,
দেখলেই ভয়ে অজ্ঞান হওয়ার কথা,
এটা কে, না যানলে হয়তো আমিও জ্ঞান হারাতাম।
কিন্তু ভয় পাচ্ছি না একটাই কারনে,,,
কারন এক সময়ে সে আমার বেস্টফ্রেন্ড শ্রেয়া ছিলো, আর এই সূর্যের নৃশংসতার কারনে সে এখন মৃত ডাইনি শ্রেয়া,,,
আমার সামনে সূর্যের হাতদুটো কাটলো শ্রেয়া,
কড়মড় করে বিকট শব্দ করে চিবিয়ে খেলো,
সূর্য কেবল যন্ত্রণায় ছটফট করছে।
মুখ বাধা থাকার কারনে চিৎকার করতেও পারছেনা।
হাতদুটো খেয়ে বুকের ভিতর হাত ঢুকিয়ে কলিজা বের করে আনলো,,,
কলিজাও একইভাবে খেয়ে ফেললো,
কি বিভৎস অবস্থা। শ্রেয়ার মুখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে পরছে।
সূর্যের দেহটা নিথর হয়ে গেছে।
আমি আর এসব দৃশ্য সইতে না পেরে, শ্রেয়াকে বললাম,
ওতো মরে গেছে,
আমাকে বাকি কাজটা করতে দে।
শ্রেয়া একটু রেগে দুইধাপ আমার দিকে এগিয়ে আসলো,
আবার কি মনে করে পিছনে সরে গেলো, আমি সূর্যের মৃত দেহতে আগুন দিলাম।
দাও দাও করে আগুন জ্বলছে,,,
শ্রেয়া তার ডাইনি রূপ পরিবর্তন করে পাশে এসে দারালো,
এবার বিদায় মুহুর্ত।
অনেক কষ্ট লাগলেও আমি শ্রেয়াকে আগুনে ধাক্কা দিলাম।
রাত দুইটা বেজে গেছে,
এর মাঝে আগুনও নিভে গেছে।
সব ছাইগুলো একত্র করে গাছের গোড়ায় পুতে দিলাম।
আর কিছু কাঠখরি নিয়ে সেখানে আবার আগুন ধরিয়ে দিলাম।
যেনো এখানে কি হয়েছে, বোঝা না যায়।
সবাই ভাবতে পারেন, কেনো এমন কাজ করলাম,
তাহলে পুরো ঘটনা শুনুন
#ফ্ল্যাশব্যাক
অনেকদিন পরে দেশে আসছি,,
প্রবাস জিবনটা একদমই একঘেয়ে,,,
সারাদিন কেবল কাজ আর কাজ।
যেনো সবাই একেকটা রোবট।
কিছুক্ষণ রেস্ট নিলেও, হিসেব করতে হয়।
আর যাবো কিনা ঠিক নাই।
এয়ারপোর্টে পৌছতে দুপুর গড়িয়ে গেলো।
বাসায় থেকে রিসিভ করতে আসতে চেয়েছিলো, কিন্তু কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে ঠিক নাই বলে, নিষেধ করে দিয়েছি।
বুঝতেই পারছি আজ বাসায় যেতে বেশ রাত হয়ে যাবে।
তাই মালপত্র সাথে না নিয়ে
কুরিয়ার করে দিলাম।
এত মালামাল হাতে নেয়ার মানেই হয়না।
মধ্যে আবার ফেরি পার করতে হবে কিনা।
অবশ্য নদীটা পার করে
২ কিঃ মিঃ দুরেই বাড়ি,,,
তবুও সব মালামাল কুরিয়ার করে কেবল একটা ব্যাগ সাথে নিয়ে একটা ট্যাক্সি করে রওনা হলাম।
নদীর পারে যতক্ষণে পৌছলাম,
রাত ১১:৩০ পার হয়ে গেছে।
কিন্তু বিপত্তি বাধলো ফেরি নাই।
আর ব্রিজের কাজ শেষ হয়নি।
পায়ে হেটে যাওয়া যাবে, কিন্তু গাড়ি যাবেনা। অগত্যা ব্যাগ কাধে নিয়ে হাটতে শুরু করলাম।
গ্রামটা অনেকটাই বদলে গেছে।
বিশেষ করে ব্রিজের কাজ শেষ হলে
হয়তো আরো বদলে যাবে।
ব্রিজের কর্মিদের অস্থায়ি তাবু খাটানো আছে চারিদিক।
ব্রিজের এলাকা পার হতেই চোখে পরলো সামনের বড় হিজলগাছটা ,,,
জন্মের পর থেকে গাছটা এমনই দেখছি।
স্বমহিমায় দারিয়ে আছে। গাছটার ওপাশেই শ্রেয়াদের বাড়ি।
শ্রেয়ার ব্যাপারে বলাই হয়নি,
আমি আর শ্রেয়া ছোটবেলার খেলার সাথী, আর বেস্টফ্রেন্ড, আমি একটু বেশিই ভাবি ওকে,
তবে সে মনেহয় শুধু বেস্টফ্রেন্ড ভাবে।
গাছের কাছে এসেই অবাক হয়ে গেলাম।
শ্রেয়া দারিয়ে আছে,,, মুখটা কেমন শুকনো,
কি ব্যাপার শ্রেয়া? তুমি এতরাতে একা দারিয়ে,,,
শ্রেয়া বললো, তোর জন্যই দারিয়ে আছি, তুই এমন সময়ে আসবি, তোর বাসায় গিয়ে যেনেছিলাম।
তোর মুখটা শুকনো কেনো জিগ্যেস করলাম।
সে বললো, বাদ দে,
শোন, আমি এতরাতে এখানে দারিয়ে ছিলাম, কাউকে বলিসনা।
খারাপ ভাবতে পারে, অনেকদিন থেকে তোকে দেখিনি বলেই দারিয়ে ছিলাম।
অনেকটা পথ অতিক্রম করে এসেছিস।
বাসায় গিয়ে রেস্ট নে।
কালকে রাত ৮টায় এখানে আসবি, অনেক কথা জমে আছে।
তোকে সব বলতে হবে,
আমি ওকে বাসায় যেতে বললাম।
শ্রেয়া বাসায় যাওয়ার পরে আমিও বাসায় চলে আসলাম।
বাবা আর মা অনেক খুশি হলো আমায় দেখে। ছোট ভাইটা ঘুমিয়ে আছে। আর বড়বোন এসেছে আমি আসবো বলে,,,
বাবা, মা হাসিখুশি থাকলেও, বড়বোন কেমন যেনো চুপচাপ।
অনেক ক্লান্ত আর পরিশ্রান্ত থাকার কারনে খেয়ে একটা লম্বা ঘুম দিলাম।
পরেরদিন দুপুর ১২টায় ঘুম ভাংলো। ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে রুমে বসে আছি, বিকালে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে হবে, এদিকে রাত ৮টায় শ্রেয়া দেখা করতে বলেছে,
এসবই ভাবছিলাম বসে বসে,,,
হটাৎই রুমে বড়বোন আসলো,
কুশল বিনিময় করে জিগ্যেস করলাম, মুনের বাবা কই?
(মুন আমার ভাগ্নি, বোনকে বোন জামাই কই জিগ্যেস করলাম।)
বললো, শহরে ব্যাবসার কাজে একটু ব্যাস্ত,,, দুইদিন পরে আসবে,,,
কিছুকথা ছিলো বলে করুন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো বোন,,,
এত ইতস্তত করছো কেনো বলে অভয় দিয়ে বলতে বললাম।
বোন চোখ টলমল করে শুধু বললো, শ্রেয়া……
বলেই চলে গেলো, আমি পরে গেলাম ঘোরের মধ্যে।
রাতেও শ্রেয়ার সাথে দেখা হয়েছিলো,
একটু অসুস্থ মনে হলো, এরবেশি না,,,
আমি আর এখন মাথা ঘামালাম না।
চলে আসলাম বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে।
৭:৩০ প্রর্যন্ত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে আমি রওনা হলাম শ্রেয়ার বাড়ির দিকে।
কিছুক্ষণ আগেই পৌছে গেলাম,
একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি শ্রেয়ার বাড়ির রাস্তায়, কোনো খবর নাই,
কালকে বললো অনেক কথা আছে, অথচ এখন খবর নাই।
হটাৎই পিছনে থেকে ডাকলো শ্রেয়া,,,
আমি পিছনে তাকিয়ে একটু চমকে গেলাম।
আমি বাড়ির রাস্তায় তাকিয়ে আছি, আর সে কিনা উল্টা দিক থেকে?
আমি জিগ্যেস করলাম,
– তুমি আমার পিছনে আসলে কিভাবে? কিভাবে?
– আমি বাড়িতে থাকিনা বলে শ্রেয়া মাথা নিচু করলো,
– মানে?
– অনেক কথা আছে পলাশ,
সবকিছু শুনতে হবে।
অনেক কথা জমে আছে তোকে বলার
সবকিছু শুনতে হবে তোর
………….
কিন্তু তার আগে কথা দে, আমার একটা কাজ করে দিবি?
আমি শুধু বলতে বললাম,
সে বললো, নদীর ওপারের মোড়টা ঘুরেই দেখবি সূর্য
ভিলা নামের একটা বাড়ি,,,
সেই বাড়িতে থাকে সূর্য নামের একটা ছেলে, ওকে
আমার চাই,,,
আমি একটু অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম,
কিন্তু কেনো?
শ্রেয়া বললো, তুই আমাকে এখন যেইটা দেখছিস, আমি
এখন সেইটা নইরে,,,,
আর আমি এখন যেমন, তুই দেখেও ঠিক থাকতে পারবিনা।
শুধু এটুকু বলতে পারি,,,
আমি এখন আর বেচে নাই।
আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো, বেচে নাই মানে,
সামনে দারিয়ে বলছিস তুই বেচে নাই?
বলে শ্রেয়াকে স্পর্শ করতে গেলাম,,,
কিন্তু আমি তাকে কোনভাবে ছুতে পারলাম না।
এখন আর বিশ্বাষ না করে উপায় নাই।
আমি আবার জিগ্যেস করলাম, কিভাবে কি হলো শ্রেয়া?
শ্রেয়া বলতে শুরু করলো,
তুই চলে যাবার পর, বাবা
একজন ধনি জানোয়ার সূর্যের সাথে আমায় জোর করে
বিয়ে দেয়,,,
কিন্তু বিশ্বাষ কর, তোকে নিয়ে কত সপ্ন দেখতাম,
আমি বিয়েতে রাজি ছিলাম না।
কিন্তু অনেক টাকা পয়সা থাকার কারনে বাবা জোর
করেই বিয়ে দেয়,
আমার সব সপ্ন ধুলিৎসাত করে।
নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমায় সংসার করতে হয়।
কিন্তু আমার আরো কিছু দেখার বাকি ছিলো,,,,
বিয়ের ৪ মাসের মাথায় বাবা মারা যায়,,,
কিছুদিন পর থেকেই সূর্য তার আসল রূপ প্রকাশ করে।
আমাকে টাকার জন্য প্রেশার দিতে শুরু করে,
আমার মা এসব শুনে বাড়িটা রেখে বাকি সব বিক্রয় করে
টাকা দেয় সূর্যকে,,, আমার সাথে তবুও খারাপ ব্যাবহার
চালিয়ে যায়,,,,
৩ মাস পরে আবারও টাকা চায় সূর্য, আমি দিতে
অস্বীকার করলে,
প্রচন্ড মারধর করে আমায়,,,
তারপর আমাকে নিয়ে মায়ের কাছে আসে,
আম্মুও আর টাকা দিতে পারবেনা বলে,,,
শেষে সূর্য আমার আর আম্মুর হাত, পা বাধে,
মুখটাও খোলা রাখেনি আমার আর আম্মুর, পকেট থেকে
দলিল বের করে বলে সই করতে, সই না করতে চাইলে
মায়ের মাথায় আঘাৎ করে,
আমি সই করে দেই, আমাকে আঘাৎ করে আম্মুর সই নেয়,
এসব সইতে না পেরে আমিও সূর্যের মাথায় আঘাৎ করি,
কিন্তু খুব জোর আঘাৎ লাগেনাই, মাথাটা ফেটেছে শুধু,
সূর্য রেগে আমায় আঘাৎ করে,
আম্মু প্রতিবাদ করলে, আম্মুকে আবার মাথায় আঘাৎ
করে, আম্মু শান্ত হয়ে যায়, একদম শান্ত,
আমি কিছু বলারও ভাষা হারিয়ে ফেলেছি, চিৎকার
করতে পারবোনা কারন,
মুখটা বাধা আছে,
সূর্য নিজেও ভাবেনি, খুন হবে সেই আঘাতে, সবকিছু
মাটিচাপা দিতে সে হিজলগাছের নিচে আম্মুকে পুতে
দেয়, আর আমাকে গাছের সাথে বেধে আগুন ধরিয়ে দেয়।
তারপর সব ছাই মাটিচাপা দিয়ে পরিবার সহ বিদেশ চলে
যায় সে।
তোর বোন একদিন বেরাতে আমার শশুড় বাড়ি যায়,
বাড়িটা তালা দেয়া ছিলো, তাই আমাদের বাড়িতে
আসে, কিন্তু কোনো খোজ না পেয়ে, সন্দেহ হয়, শেষে
পুলিশে রিপোর্ট করে, পুলিশ খোজা খুজির পর
আমার আম্মুর হাড় আর আমার পোড়া ছাই পায়,,,
কিন্তু সূর্য পুলিশকে টাকা খাইয়ে সবকিছু ধামাচাপা
দিয়ে দেয়,,,
তুই কষ্ট পাবি ভেবে তোকে খবরটা দেয়নি তোর বোন,
আর তোর ক্ষতি করবে ভয় দেখিয়ে তোর বোনকেও চুপ
করিয়ে দেয়।
সেই কথা বাদ দে,
তিনদিন আগে জানোয়ারটা দেশে ফিরেছে,,,
আগামি সাপ্তাহে সে আবার বিদেশে ফিরে যাবে।
এখন তুই এখানে সূর্যকে আনলে, আমি প্রতিশোধ সম্পন্ন
করতে পারবো,
আমি সবকিছু শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পরলাম।
তবে এখন আমার কান্না করার সময় নয়, জানোয়ারটাকে
তুলে আনতে হবে,
আমি ওর বাসায় গিয়ে পরিচয় গোপন করে ওকে বাড়ির
বাইরে নিয়ে আসি,
তারপর অনেক ধস্তাধস্তির পরে ওকে
শ্রেয়ার কথামত তুলে এনে, শ্রেয়ার হাতে তুলে দেই।।।
(এরপরের টুকু প্রথম পর্বে পাবেন)
শ্রেয়াকে মুক্ত করা শেষে বাসায় ফিরে আসি,
বোনকে জিগ্যেস করি,,,
শ্রেয়া বেচে নাই, আমাকে বলিসনাই কেনো?
বোন মাথানিচু করে থাকে, কিন্তু কিছুই বলেনা,,,
যদিও আমি সবই যানি, এমনকি আমি যতদূর যানি, আমার
বোনও যানেনা,
মনমরা হয়ে কয়েকটা দিন নিজের রুমেই কাটিয়ে দিলাম,,,
ভাবছি বিদেশ ফিরে যাবো,,,,
দেশে যেই কারনে থাকতে চেয়েছিলাম।
সেই কারনটাই মৃত হয়ে গেছে।
কি হবে আর দেশে থেকে।
আমি ফ্লাইটে আসার আগের তারিখে সূর্য নিখোজের
সংবাদ পেলাম।
পরেরদিন আমি ফ্লাইটে উঠে গেলাম।
শ্রেয়ার আর আমার একবুক মৃত সপ্ন নিয়ে।
………………………………..সমাপ্ত……………………………..
গল্প, গল্পের নাম এবং কাহিনী সম্পুর্ন কাল্পনিক, কারোজিবনের সাথে কোনরকম মিল থাকলে, আমি দায়ি নই। আমি শুধুমাত্র বাস্তবতা তুলে ধরেছি।
(লেখাটার প্রধান উদ্দেশ্য,,, টাকা থাকলেই সেখানে সুখ থাকেনা। একটা মেয়েকে অবশ্যই একটা মানুষের সাথে বিয়ে দিতে হবে, টাকার সাথে নয়।
ভালোভাবে খোজ খবর নিয়ে ছেলে, মেয়ের বিয়ে দিন।)