কিশোরের মুখটা খুব খুশি খুশি লাগতাছে।যেন আজ ঈদের দিন।আমি আবার কৌতুহল দমাই রাখতে না পাইরা জিজ্ঞেস করলাম…
— কিরে হালা…এত্ত খুশি ক্যা…?? মনে হইতাছে আসমানের চাঁদ হাতে পাইছোস??(আমি)
— ওরে মামা বুকে আয়।একটু হাগ করি।(কিশোর)
— আরে হইছে কি বলবি তো??
— মামা নিহা আমারে একসেপ্ট করছে..!!!!!
— ওরে মামা কস কি!!?? ট্রিট দে। মিষ্টি কয় কেজি খাওয়াবি। সেইটা বল…!!!??
মিষ্টি আর ট্রিটের নাম শুনে হঠাৎ করে কিশোরের হাসিখুশি মুখটা কিসমিসের মত চুপসে গেল।
— দোস্তো মজা করছি।আসলে নিহা আমারে একসেপ্ট করেনি।এমনি এমনি বলছি।বাদ দে।
আসলে নিহা ওরে ঠিকই একসেপ্ট করছে।ট্রিটের নাম শুইনা পেটে বদহজম শুরু হয়ে গেছে।এজন্য মিথ্যা বলছে।
শালায় একটা চরম কিপ্টা।শুধু কিপ্টা না হারকিপ্টা।
ওর বাপে তো ওর পিছনে দুহাতে টাকা উড়ায়। তারপরও যে ক্যান এই হালায় কিপ্টামি করে কে জানে।
হঠাৎ করে তীব্র গ্যাসের(পাদের) গন্ধ অনুভব করলাম।বুঝলাম ফাহিম কলেজ থেকে আসছে।
শালায় একটা পাদরাজ(পাদের রাজা)
রেগুলার বড় করে।তারপরও ক্যান যে এত্ত গন্ধ উপরওয়ালাই ভাল জানেন।
অতঃপর দৌড়ানি দিলাম।পাঁচ মিনিটে রুমের ধারে কাছে আশা যাবেনা।এতটাই তীব্র গন্ধ।
ওরে আমরা পাদরাজ বলি কারন,যদি সারা বাংলাদেশে পাদের কম্পিটিশন হয় তাহলে ফাহিমই সেরা হবে। দিন নাই রাত নাই,সকাল নাই,বিকাল নাই।মিনিটে মিনিটে গ্যাস ছাড়ে।
আর যা গন্ধ, তা বর্ননা করার মত না।
আর ও এতটা হারামি যে প্রতিদিন ওর গার্লফ্রেন্ডের সাথে ফোনে কথা বলার সময় যদি গ্যাস ছাড়ার টাইম আসে তখন ওর গার্লফ্রেন্ডরে বলে…
— বাবু একটা পাদ আসছে।শুনবা??😃
বইলাই ফোনে গ্যাস কুরিয়ার কইরা গার্লফ্রেন্ডের কাছে পাঠাইয়া দেয়😃
তাছাড়া..
ঘনঘন গ্যাস ছাড়ে বলে, ওকে আমরা মাঝেমাঝে বলি যে,”তোর এই গ্যাসের প্রতিভা বাইরে প্রকাশ করিস না।তাইলে দেখা যাবে বাংলাদেশের গ্যাস স্বল্পতা কমানোর জন্য তোরে গ্যাসের মেশিন বানাইবো।শেষে কিনা সেকেন্ড মাউথে গ্যাসের পাইপ ঢুকাইয়া ল্যাম্পপোষ্টের সাথে বাইধা গ্যাস সিলিন্ডার বানাইয়া রাখে তখন বুঝবি।”
ও তখন শুধু হাসে।
ওর এই প্রতিভার জন্যই পাদরাজ নামকরন।
আগে এই নামটা ছিল আমাদেরই অন্য এক ফ্রেন্ড জয়ের।
ক্লাশে একদিন সজোরে গ্যাস ছারছিল।এজন্য এ নাম দিছিলাম।
কিন্তু ফাহিম আসার পর হতে আমরা পাদরাজ নামটা ফাহিমকে দিতে বাধ্য হই।
কারন যোগ্যতার দিক দিয়ে ফাহিমই এই নামটার উপযুক্ত ব্যক্তি।
রুমে এইজন দুজন মানে কিশোর আর ফাহিম ছাড়াও আমরা আরো দুজন আছি।
আমি শাওন আর অন্যজন বায়েজিদ।
এই চারজন মিলেই আমাদের ব্যাচেলর টিম।
কিশোরের গার্লফ্রেন্ডের জন্মদিন।এজন্য কিশোর জন্মদিনের রাতে সবার
আগে উইস করতে গিফট হাতে ওর গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গেল।
যাওয়ার পথে দূরে দেখে দুইটা সাদা কাপড় পড়া মানব আকৃতির লোক গাছের আড়ালে দাড়িয়ে আছে। কিশোর চোর ভেবে হাতে লাঠি নিয়ে ওখানে গেল।ওর লক্ষ্য চোরগুলারে রাম প্যাদানি দিবে। তো যেই ভাবা সেই কাজ। লাঠি নিয়া কাছে গিয়া বললো।।।
— হালার চোর,তোরে আইজকা খাইছি। (কিশোর)
আসলে গাছের আড়ালে ওই দুইটা ছিল ভূত।
ভূতদুইটার একটি ছিল ছেলে আরেকটি মেয়ে।ওরাও মানবজাতির মত প্রেম করতেছিল।
ভূতদুইটা এতটাই মনোযোগ দিয়া প্রেম করতেছিল যে ওদের কাছে কেউ আসছে এটা ওরা খেয়ালই করেনাই।
কিশোরের হঠাৎ চিৎকার শুনে মেয়ে ভূতটা আচমকা ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।
আর কিশোর দেথে দুইটা বিশ্রি চেহারার ভূত।
কিশোরও ভূত ভূত বলে চিৎকার দিয়ে উল্টা দৌড়ানি দিল।এক দৌড়ে সোজা কলেজ হোস্টেলে!!
এদিকে ভূত দুইটার প্রেমে ব্যাঘাত ঘটায় আর মেয়ে ভূতটা ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়াতে ছেলে ভূতটা কিশোরের উপর প্রচন্ড রেগে যায়।
ভূতটা তারপর কিশোরের সাথে সাথে আসে।
তারপর সেদিন রাতে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ওত পেতে থাকে।
সেদিন রাতে কিশোর ঘুমঘুম চোখে বাইরে মুততে নামে।কিছুক্ষন পর আমিও যাই গিয়া দেখি কিশোর স্যারের নতুন দালানের দিকে মুখ করে বসে বসে মুততেছে।
আমিও ওর পাশে গেলাম। গিয়ে তাকাইয়া দেখি কিশোর হালায় মুততে মুততে ঘুমাইয়া পরছে।মুততে বইসা নাক টাইনা ঘুমাইতেছে। আমিতো দেখে হাসতেছি।হঠাৎ জোরে হোহো করে হেসে উঠলাম।কিশোর তাকাইয়া দেখে আমি অস্বাভাবিক ভাবে হাসতেছি।
অন্ধকারে আমাকে ওর দিকে তাকিয়ে হাসতে দেখে ও ভয় পেয়ে যায়। ও আমাতে ভূত ভেবে ভয় পেয়ে চিৎকার করে দৌড়।আর আমি ভাবছিলাম হয়তো কিশোর সত্যিই ভূত দেখছে।আমিও ওর সাথে দৌড়ানি দিছি।আমিতো আর তখন বুঝিনি যে ও আমাকে দেখে ভয় পাইছে। কিশোর পিছে তাকাইয়া দেখে আমিও ওর পিছে পিছে দৌড়াইতেছি। কিশোর সেটা দেইখা আরো জোরে বাবাগো মাগো বইলা দৌড়াইতেছে।আমিও ওর পিছনে পিছনে জোরে দৌড়াইতেছি। হঠাৎ দেখলাম কিশোরের লুঙ্গি খুলে গেছে।হালায় লুঙ্গি হাতে নিয়া দৌড়াইতেছে। বুঝতে হবে লুঙ্গির পরে,জান বাচানো আগে। অতঃপর দুজন হুসাইন বোল্টের গতিতে রুমে ঢুকলাম।
পরে বিষয়টা ক্লিয়ার হলে দুজনেই ব্যাপক হেসেছিলাম। আমাদের এ কান্ডতে ভূতটা ওর প্রতিশোধ নিতে পারেনি।এজন্য ও রেগে গিয়ে আমাদের সবার উপর প্রতিশোধ নিতে উঠে পরে লাগলো।
তো পরেরদিন আমি আর ফাহিম কলেজ থেকে ফিরতেছিলাম।বাকিরা একটু দেরিতে আসবে।
আমি একটু পরে রুমে ঢুকেছিলাম।আর ফাহিম আগেই রুমে ঢুকে যায়।
ফাহিম রুমে ঢুকে দেখে কিশোরের বিছানায় কিশোর কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।
আসলে ওইটা কিশোর ছিল না।ওইটা ছিল সেই ভূতটা।আমাদের উপর প্রতিশোধ নিতে কিশোরের রুপ ধরে কিশোরের বিছানায় শুয়ে ছিল।যে আগে রুমে ঢুকবে তাকে মেরে ফেলবে এই আশাতে।
তো ফাহিম ওরফে পাদরাজের একটা গ্যাস আসলো।তারপরও বিছানার ভূতকে কিশোর ভেবে ওর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো যে। কিশোরেকে গ্যাসখাওয়াইয়া দিবে।
যেই ভাবা সেই কাজ।
ফাহিম ধীরে ধীরে বিছানার দিকে আগাচ্ছে আর ভূতটাও মনে মনে বলতেছে।আয় ব্যাটা কাছে আয়।তোর ঘাড় মটকাই।
তারপর ফাহিম গিয়া কম্বলের এক মাথা উচু করে একেবারে ভূতটার মুখ বরাবর একটা গ্যাস ছেড়ে কম্বলটা ভূতটার উপর জোর করে চেপে ধরে। যাতে কিশোর গ্যাসের গন্ধে নাজেহাল হয়ে যায়।
ভূতটার আবার গ্যাসে এলার্জি ছিল।
ভূতটায় বলে একিরে।এত্ত গন্ধ ক্যা??
ভূতটা প্রানপনে উঠার চেষ্টা করে। কিন্তু ফাহিম জোর করে চেপে ধরে রাখছে।ফাহিমের গায়ে অবশ্য স্বাভাবিকদের চেয়ে একটু বেশিই জোর ছিল।এজন্য ও ওর সাথে ভূতটা অত সহজে পেরে উঠেনি।
কিন্তু ভূতটা তারপরও টিকতে না পেরে ফাহিমকে এক ঝটকায় ছিটকে ফেলে প্রান পনে দৌড়ানি দিল।
ফাহিম তো টাসকি খাইয়া বইসা আছে।কিশোরের মত পাটকাঠির গায়ে এত শক্তি কবে হইলো।যে এক ঝটকায় ওকে ছিটকে ফেলে দিলো।
তারপরও ফাহিম বেজায় খুশি।কারন আজ কিশোরকে কায়দা মত গ্যাস খাওয়াইছে।
কিছুক্ষন পর আমিও রুমে ঢুকলাম আর কিশোর,বায়েজিদও রুমে ঢুকলো।
ফাহিমতো বীরের মত ওর কীর্তির কথা আমাদের কাছে সগর্বে বর্ননা করতেছিল।যে ও কিশোররে গ্যাস খাওয়াইছে।
কিন্তু কিশোর তো আকাশ থেকে পরলো।
ও বললো, “কখন করছোস শালা,মিথ্যা বলবি না।আমি এইমাত্র রুমে আসছি।এতক্ষন আমি বায়েজিদের সাথেই ছিলাম”
কথাটা তো আসলেই ঠিক।কিন্তু ফাহিম ভেবেছিল হয়তো কিশোর প্রেস্টিজ বাচাতে অস্বীকার করতেছে।
এজন্য ফাহিম বিষয়টা মাথায় নিল না ।
এদিকে ভূতটার ফাহিমের গ্যাস খেয়ে অবস্থা হালুয়া টাইট।
ও মনে মনে ভাবতেছে কি জিনিমের হাতেই না পরছিল।এবার আর কিশোরের রুপ ধরে থাকা যাবেনা।তাহলে হয়তো ফাহিম হারামজাদা আবার গ্যাস খাওয়াইয়া দিবে।
তো ভূতটা এবার তাহলে বায়েজিদের রুপ ধারন করবে ভেবে নিল।
সেদিন বিকালে বায়েজিদ প্রাইভেট পড়তে গেল।আর কিশোর গেছে বাথরুমে।আর আমি রুমের দরজার কাছে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলতেছিলাম।
তারপর ভূতটা বায়েজিদের রুপ ধরে বায়েজিদের বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে পরলো।
ফাহিম জিজ্ঞেস করলো….
— কিরে প্রাইভেটে গেলি না??(ফাহিম)
— নারে দোস্ত আজ ভাল্লাগে না পড়তে যাইতে।তাই যামু না।(বায়েজিদ)
— তুই হালা ফাকিবাজই রয়ে গেলি।(ফাহিম)
ভূতটা তখন বায়েজিদের রুপ ধরে চুপচাপ উপুর হয়ে শুয়ে আছে সুযোগের অপেক্ষায়।
এদিকে ফাহিমের আবার গ্যাস আসছে।
ফাহিমের মাথায় আবার দুষ্টু বুদ্ধি চাপছিল।
ও ধীরে ধীরে বায়েজিদ রুপী ভূতের কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর ঘাড়ের কাছে বসলো।ভূতটা উপুর হয়ে থাকায় ওর দুইটা হাত সামনে ছড়ানো ছিল।ফাহিম হঠাৎ ভূতের দুই হাতের উপর পা দিয়ে চেপে ধরে ভূতটার ঘাড়ের উপর সজোরে একটা গ্যাস ছাড়লো।
ভূতটা মনে মনে বলে এরে কাজতো সাইরা ফালাইছে ফাহিম হারামজাদায়। হঠাৎ ভূতটা তীব্র গন্ধে টিকতে না পেরে প্রানপনে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করতেছে।
ফাহিমও আমার হারে হারামী।তাই ও আবার বায়েজিদরুপী ভূতটার মাথার চুল টেনে ধরে বলে,
— কই যাস হালা গ্যাসটা খাইয়া যা।মাথা উঠা।আরো দুইটা আইছে। খাবি না??(ফাহিম)
ভূতটা দেখতেছি অবস্থা বেগতিক।একটা গ্যাসের তেজই সহ্য করতে পারেনা।এরপর যদি আরো দুইটা ছাড়ে। তাইলে তো কেস জন্ডিস হয়ে যাবে।
তারপর ভূতটা এক লাফে উঠে ফাহিমকে ছিটকে ফেলে দিয়ে দিল ভোদৌড়।আর পিছে ফিরে তাকালোনা।
ফাহিমতো পুরাই টাসকি।ও মনে মনে ভাবতেছে..
একিরে সবার গায়ে দেখি জোর বাইড়া গেছে নাকি আমার শরীর দুর্বল হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি ভিটামিন খাইতে হবে।
যেই ভাবা সেই কাজ।
ওইদিনই ফাহিম ভিটামিন ঔষধ কিনে খাওয়া শুরু করলো।
ফাহিমের আবার একটা রোগ আছে।রোগ না দোষ।
ভিটামিন খাইলে ওর গ্যাসের গন্ধের তীব্রতা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।
এজন্য ওকে বলেছিলাম যে আমাদের সামনে গ্যাস না ছাড়তে যদি ছাড়ে তাহলে মাইর দিতে এতটুও ভুল হবে না।
আর ফাহিমও সেটা মেনে নিল।
ওদিকে ভূতটা চিন্তা করতেছে ও যদি বায়েজিদ, কিশোর বা আমার যারই রুপ ধারন করুক। ফাহিম ঠিকই গ্যাস খাওয়াইয়া ওরে নাজেহাল করে দিবে।সুতরাং তিনজনের রুপ ভুলেও নেয়া যাবেনা।
তাই ও ফাহিমের রুপ ধারন না করে ফাহিমের শরীরে ভর করলো।যাততে ফাহিমের অ্যাটাকে না পরার ভয় থাকে।
তো ভূতটা ফাহিমের উপর ভর করে বেশ গম্ভীর ভাব নিয়ে বসে ছিল।আমরাও ভাবতেছি।
শালায় নিশ্চই কোনো প্লান করতেছে। হাতের কাছে ঝাড়ু রেডি রাখ।যদি গ্যাস ছাড়ে ঝাড়ু দিয়া পিডামু।
ওদিকে ভূতটা ফাহিমের উপর ভর করে ফাহিমকে কন্ট্রোল করতে পারলেও ওর গ্যাসটারে কন্ট্রোল করতে পারেনি।
এইকারনে হঠাৎ গ্যাস কন্ট্রোল না করদে পেরে ছেড়ে দিল।
এদিকে আমরা এতে অনেক ক্ষেপে গিয়ে হাতের কাছে রাখা ঝাড়ু দিয়া ফাহিমরে কায়দামত পিটাইলাম।
ভূতের তো আবার ঝাড়ুর বাড়িতে এলার্জি।
এজন্য ঝাড়ুর বাড়ি খাইতে খাইতে একসময় সহ্য করতে না পেরে ফাহিমকে ছেড়ে দিয়ে ছুটে পালালো।
আর ফাহিম অজ্ঞান হয়ে গেল।
আমরা তারপর ধরাধরি করে ফাহিমের মাথায় জল দিয়ে ওর জ্ঞান ফিরালাম।
ওর কাছে ক্ষমাও চাইলাম কিন্তু ও এসবের কিছুই জানতো না।এজন্য ও কিছু ই বুঝতে না পেরে হাবলার মত তাকিয়ে ছিল।
ওদিকে ভূতটা পদে পদে জব্দ হতে হতে।অবশেষে আমাদের উপর প্রতিশোধ নেয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে ওর আস্তানায় ফিরে গেল।