আজানা রহস্য

আজানা রহস্য

ফেসবুকে ডুকতেই একটা হিজিবিজি নামের আইডি রিকুয়েস্ট দিছে দেখতে পেলাম। আমার আবার ঝুলিয়ে রাখতে ভালো লাগে। কিন্তু কেন জানি এই আইডিটাকে একসেপ্ট করতে মন চাইল। আইডি দেখে বুঝতে পারছিলাম যে এটা বিদেশি আইডি। ত আইডি একসেপ্ট করলাম।আর সাথে সাথে হিজিবিজি নামের আইডি থেকে আমায় নক দিল হাই। আমিও হেলো বলে রিপ্লে দিলাম।

এক সময় কথা বলতে বলতে বুঝতে পারলাম যে ছেলেটা বাংলাদেশী। তার নাম রায়হান। এরি মধ্যে রায়হানের সাথে ভালোই বন্ধুত্ব হয়ে গেল। কেটে গেল কয়েক মাস। রায়হান আমার খুব কেয়ার করত। পরতে বসলাম কি না। খেয়েছি কি না?এসব সারাক্ষন বলত। রায়হানের প্রতি আমি দুর্বল হয়ে যায়। কিন্তু সেটা তাকে বুঝতে দেইনি। কারন রায়হান থাকে কোরিয়া আর আমি বাংলাদেশে। কিন্তু আমিও জানি রায়হান আমার প্রতি দুর্বল। একদিন হুট করে রায়হান বলল সে বাংলাদেশ আসবে। আর আমি নাকি তাকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে আনতাম।

–এমন পাগলামি করার কোনো মানে আছে রায়হান?
–ও তুমি আসবে না তাই ত??
–আমি ত সেটা বলিনি.
–আর বলতে হবে না।আগামি ১ তারিখ তুমি আমাকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে নিয়া যাবা এটাই শেষ কথা।

আমি শুধু হ্যা সুচক মাথা নাড়ালাম। এর মধ্যে চলে আসল ১ তারিখ আমি রায়হান কে আনতে এয়ারপোর্ট যাচ্ছি। কিন্তু আমার কেন যানি মনে হচ্ছে কিছু একটা ভুল করছি আমি। এসব ভাবতে ভাবতে এয়ারপোর্ট চলে আসলাম। রায়হান কে নিয়ে আবার ব্যাক করলাম।

–এখন কোথায় যাব আমরা?রায়হান বলল।
–রেষ্টুরেন্ট এ।
–আমি বাংলাদেশের কোথায় কি আছে জানি না।ছোট থেকেই কোরিয়া আছি।বাংলা বলতে পারি তার কারন হলো আব্বু আম্মু বাংলাতে কথা বলে।
–আমাদের বাসায় ত আর তুমাকে নেওয়া যাবে না।তাই তুমি যেকদিন বাংলাদেশ থাক হোটেলে থাকবা।
–হুম। আমাদের গাড়ি একটা রেষ্টুরেন্ট এর সামনে থামল। ভিতরে গেলাম। আর তার কিছুক্ষন পরেই রায়হান আমার হাতে রিং পরিয়ে দিয়ে প্রোপোজ করল।

–দেখো মিম আমি যদি তুমায় কোরিয়া থেকে প্রোপোজ করতাম তাহলে হয়ত বিলিভ করতে না তাই আমি বাংলাদেশ এ আসছি।প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না। আমি কি বলব বুঝতে পারছি না। এত দিনে বুঝে গেছি রায়হান আমাকে অনেক ভালোবাসে।নাহলে আমার এত কেয়ার করত না। আমিও আর কথা বাড়ালাম না। রায়হান কে হ্যা বলে দিলাম। শুরু হল আমাদের লাভ স্টোরি। রায়হান ১০ দিন বাংলাদেশ ছিল।আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলতে চেয়ে ছিল।আমি নিষেধ করেছি। বলেছি আংকেল আন্টি কে নিয়ে তারপর কথা বলতে। রায়হান রাজি হয়ে যায়। ১০ দিন পর রায়হান আবার কোরিয়া চলে যায়। এদিকে আমাদের ভালোবাসা আরও মজবুত হচ্ছে। একবার যদি না খায় তাহলেই অভিমান।

খুনসুটি মান অভিমান এসব নিয়ে আমাদের দিন ভালোই কাটছিল। ৬মাস পর রায়হান আবার বাংলাদেশ আসে। কিন্তু আংকেল আন্টিকে নিয়ে আসেনি। তাদের নাকি বিজনেস এ চাপ বেশি। আমিও বোকার মত বিশ্বাস করলাম। রায়হানের সাথে এইবার দেখা হবার পর একটু বেশিই খুশি হলাম। কারন এখন আমরা ত একি আত্মা হয়ে গেছি। সারারাত চ্যাটিং এ কথা বলতাম। ফোন এ কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে যেতাম।আবার ঘুম থেকে উঠে দেখতাম এখনো রায়হান ফোনের অপর পাশ থেকে হেলো হেলো করছে। খুব ভালো লাগত। আজকে হঠাত রায়হান তাড়াতাড়ি দেখা করতে বলল। আমিও বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। রায়হানের কাছে যেতেই দেখলাম রায়হানের মুখটা কেমন চুপসে আছে।

–কি হয়ছে রায়হান?
–আমার সাথে কোরিয়া যাবা?
–এ কথা কেন বলছ।
–আব্বু আম্মু তুমাকে মেনে নিবে না।তাই তুমি আমার সাথে চল আজই আমরা কোরিয়া চলে যাব।
–কিন্তু আমার আব্বু আম্মু?
–আমার জন্য তুমি..???
–হুম পারব।

একটু বেশিই বিশ্বাস করে ফেলছিলাম রায়হানকে। রায়হানের হাত ধরে চলে গেলাম কোরিয়া। আব্বু আম্মুর জন্য মন পুড়ছে। কিন্তু কি আর করার আমি ত রায়হানকে ভালোবাসি আর রায়হানও আমাকে ভালোবাসে। কোরিয়া গিয়ে আমরা বিয়ে করে ফেললাম। ভালোই কাটছিল দিন গুলো। আমিও কোরিয়ার পরিবেশ এর সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে ফেললাম। আব্বু আম্মু হয়ত অনেক কষ্ট পাচ্ছে। একমাত্র মেয়ে বলে কথা। কিন্তু আমার যে কিছু করার নাই। একদিন রায়হান অফিস থেকে ফিরে কেমন জানি জিমাচ্ছিল।

–কি হয়ছে? আজকে অফিসে চাপ ছিল বেশি?
–হ্যা। একটু ঘাবড়ে গিয়ে উত্তর দিল রায়হান।
–কফি এনে দিব??
–না।এক গ্লাস পানি দাও।

আমাদের ১ বছর ছয় মাস ধরে বিয়ে হয়ছে কিন্তু আজকের মত রায়হানকে আর দেখিনি। তাই ব্যাপার টা নিয়ে ভাবতে লাগলাম কি হল আবার। কিচেন থেকে পানি এনে দিলাম। এক দমে সব টুকু পানি খেয়ে নিল। কিন্তু আসতে আসতে রায়হান কেমন জানি চেঞ্জ হয়ে যেতে লাগল। আগের মত আমার কেয়ার করে না। অফিসে যাওয়ার সময় কপালে চুমু একে দেই না। আমি ভাবলাম কি হল হঠাত? রায়হান এমন হয়ে গেল কেন? একদিন রাতে দেখলাম রায়হান বিছানা থেকে নেমে কোথায় যেন যাচ্ছে।

আমিও পিছু নিলাম। কিন্তু যা দেখলাম তাতে পুরু মাথা ঘুরে গেল। রায়হান টিকটিকি হয়ে দেওয়ালে দেওয়ালে ঘুরে মশা খাচ্ছে। ও খোদা একি দেখছি আমি! এটা কি করে সম্ভব? রায়হান টিকটিকি হল কিভাবে?? রায়হান কি তাহলে ভুত। ভুত!এটা ভাবতেই ভয়ে শরির জমে গেল আমার। পুরো বাসাতে আমি আর রায়হান ছাড়া আর কেউ নাই। এখন যদি এই ভুত আমাকে খেয়ে ফেলে? রায়হান কি করে সেটা দেখার জন্য আবার উকি দিলাম। আবারো একি অবস্থা দেখলাম। আমি চলে আসলাম রুমে। কি করে আমি এখন রায়হানের সাথে থাকব? যদি আমার ঘাড় মটকিয়ে দেই। উফ ভাবতেই শরির কাটা দিয়ে উঠে।

আচ্ছা এই জন্যিই কি রায়হান তার পরিবার এর কাছে আমাকে নিয়ে যায়নি? নাকি তার কোনো পরিবারই নাই? এত কিছু ভাবতে পারছি না। মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। কিছুক্ষন পর রায়হান আমার পাশে এসে শুইল। আমার ভয় লাগছে খুব। কোনোমতে রাতটা কাটালাম। সকালে রায়হান চলে গেল অফিসে। আমি পরে রইলাম একা বাসায়। কিন্তু রাতের ঘটনা আমাকে বার বার ভাবাচ্ছে। পরদিন রাতে আমি আর ঘুমালাম না। আজকে কি করে সেটা দেখার জন্য। আজকেও সেইম কাহিনি হইল। পরদিন সকালে আমি ঘুম থেকে উঠার আগেই রায়হান অফিসে চলে গেল। আর আমি কিচেনে একটা চিরকুট দেখতে পেলাম। আর সেটাতে যা লেখা ছিল তা দেখার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।

লেখাটা এমন ছিল, আমাকে মাফ করে দিও।আমি আসলে মানুষ না।কিন্তু আমি তুমাকে সত্যি ভালোবাসি। আমার আসল রুপ যে দেখে ফেলে তাকে আমি মেরে ফেলি কিন্তু আমি তুমাকে মারিতে পারব না।তাই তুমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি।বিশ্বাস করো আমি মানুষ হয়ে বাচতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু পারিনি। আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল । এটা কি করে সম্ভব? না না আমার রায়হান আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না। এই বলে চিতকার করা শুরু করলাম। এমন করে কেটে গেল সাত দিন।

ফেসবুকে ডুকলাম। রায়হানের আর আমার আগের মেসেজ গুলা দেকছিলাম কিন্তু শুধু আমার টাইপিং গুলোই দেখা যাচ্ছে। রায়হান যে মেসেজ গুলো দিছিল সেগুলো নাই। কল রেকর্ড চেক করলাম সেখানে শুধু আমার কথা শুনা যাচ্ছে। এটা কি করে পসিভল। রায়হান চিরকুট এ বলেছিল সে মানুষ না তাহলে কি?? রায়হান মানুষ ছিল না তাহলে কি ছিল এই অজানা রহস্য আমার মনে আজ ১০ বছর যাবত ধরে মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। আমি এখনো কোরিয়া আছি।একটা কোম্পানিতে জব করি। কিন্তু রায়হানের হদিস আজও পায়নি।

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত