দাদার শেষ কথাটা ছিল ভুলেও রাত্রে গোসল করবিনা।
অার অামি সেই কাজটাই করছি।রাত্রে গোসল করছি।রাত্রে গোসল করলে নাকি ভয়ংকর কিছু হতে পারে।কিন্তু,অামার কাছে তো কোনরকমই লাগল না।
গোসল করে অাসার পর বিছানায় শুয়ে পড়লাম। মনে মনে খুব হাসি পাচ্ছিল দাদা তোমরা যে কেন কুসংস্কার বিশ্বাস কর।অামি তো ঠিকই গোসল করলাম কিচ্ছু হলনা তো।তোমরা অন্ধ বিশ্বাসি। তাই শত বুঝালেও তোমরা ভেবে নিবা এই বাড়িতে অশরীরী কিছু অাছে।মানুষ বোকা হয় কিন্তু তোমাদের মত নয়।তা না হলে কি অার এই এত সুন্দর বাড়িটা খালি থাকত?
যাইহোক,গোসল করার পর মনে হলে খিদা পেয়েছে এতক্ষণ একটু ভয়ে ছিলাম না জানি গোসল করতে গেলে কি হবে!! যার জন্য রাত্রে গোসল করা যাবেনা।
খেতে যাব বিছানা থেকে উঠলাম।
টেবিলে খাবার রেডি করে রাখছিলাম। তাই খেতে গেলাম।তৃপ্তি সহকারে খাইলাম।৩টা মোমবাতি চারদিকটা অালোকিত করে রাখছে।
খাওয়ার পর অাবার বিছানায় যাব।কিন্তু বিছানায় চোখ পড়তেই সারা শরীরে হিম শীতল রক্তের শ্রোত যেন দৌড়াতে শুরু করল।কারণ,অামি যেখানে শুইছিলাম মনে হচ্ছে যেন অামার পিঠে রক্ত ছিল।যার জন্য রক্তের ছাপ পিঠ থেকে বিছানায় লেগেছে। একটু একটু ভয় মনের মাঝে কাজ করছিল।
অাবার চোখের পলকেই রক্ত উধাও! মনকে শান্তনা দিচ্ছিলাম যে এটা অামার মনের ভুল ছিল।
অাবার শুয়ে পড়লাম ঘুমিয়ে পড়ব।সাতদিন এই বাড়িতে থাকতে হবে।অাজকে মাত্র প্রথম দিন।
.
.
ডিসেম্বর মাস,ডিসেম্বরের ১৮ তারিখের পর থেকে কোন কাজ নেই।তাই ভাবলাম কোথাও ঘুরে অাসি।অামাদের এক অাত্বীয় এর বাড়ি শেরপুর জেলার কোন এক গ্রামে ।শেরপুর কিন্তু পাহাড়ি এলাকা।
চারদিকে গাছ-পালা। পরিবেশ টা খুব নিস্তব্ধ। সেখানে গেলেই মনে অন্যরকম একটা উত্তেজনা কাজ করে।অামি এর অাগে 2বার গেছিলাম।একবার পিকনিকে অারেকবার সেই অাত্বীয় বাড়ি।তাই এবারও ভাবলাম সেখান থেকে ঘুরে অাসি।
যেমন ভাবা তেমন কাজ চলে অাসলাম।
এই অাত্বীয় বাড়িতে অামার সমবয়সী একটা ছেলে অাছে।অাজ বিকালে ওর সাথে ঘুরতে বের হইছিলাম।
হাটতে হাটতে অনেক দূরে চলে গেছিলাম।
তখনই ও একটা বাড়ি দেখাইছিল।বাড়িটাকে নাকি সবাই অভিশপ্ত বাড়ি নামেই চিনে।কারণ,কেউ যদি এ বাড়িতে রাত্রিযাপন করে পরদিন তার চিহ্ন থাকেনা থাকলেও সেটা পরিপূর্ণ নয়। ছোট থেকেই অামি রহস্যপ্রেমি।তাই মনটা খুব করে চাচ্ছিল এই বাড়িতে থাকতে।কিন্তু,কেউ তো রাজি হবেনা।
বাড়ি অাসার পর দাদা কে বলতেই খুব করে বকা দিলেন।
অনেক অনেক রিকোয়েস্ট করার পর দাদাকে রাজি করাইলাম।এমন ভাবে বললাম যেন অামার মাঝে অাধ্যাত্বিক কিছু রয়েছে যার জন্য অামার ক্ষতি হবেনা।
দাদাকে বলে নিলাম অামাকেও যদি সবার মত খুজে পাওয়া না যায় তাহলে যেন বাড়িতে বলে দেয় অামি অাপনাদের কাছ থেকে চলে গেছি অন্য কোথাও যাতে দোষটা দাদার বা কারো উপর না পড়ে।
দাদা পুরণো মানুষ।দাদার কাছ থেকেই এ বাড়ি সম্পর্কে সব জানলাম। কিন্তু,বাড়িতে প্রবেশ করব কিভাবে? দাদা বললেন বাড়ির উত্তর পাশে নাকি একটা দড়জা অাছে সেটা সবসময়ই খোলা থাকে।সেই দড়জা দিয়েই ভিতরে প্রবেশ করতে হয়।
বাড়িটা নাকি অনেক পুরণো কিন্তু বছর তিনেক অাগে নতুন করে বাড়িটা মেরামত করা হয়েছে।তাই এখন কিছুটা ঝকঝকে ।
পরদিন সকালেই অামি সেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
শুধু দাদাই জানেন যে অামি এই বাড়িতে থাকব।
দাদা বলছেন থাকবিই যখন ৭ দিন থাকিস।অার শোন,ভুলেও রাত্রে গোসল করবি না।
অামি রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে চলে অাসলাম।
দাদার রাজি হওয়ার প্রধাণ একটা কারণ রয়েছে।যার জন্য দাদা রাজি হয়েছেন অার অামাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছেন ।কারণটা পরে বলি।
.
.
ঘুম অাসছিল না চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইছি।
এখন মস্তিষ্ক কিছুটা কাজ করতে শুরু করল।
বাড়িটার ভেতরে একটা পুকুর রয়েছে পুকুরে সুন্দর একটা ঘাট রয়েছে।দেখে মনেহয় এটা কোন রাজবাড়ী।কিন্তু,অামি তো গোসল করলাম বাথরুমে!! বাথরুমে পানি কোথায় থেকে অাসল।অামি তো পানি সংগ্রহে রাখিনি।গোসল করার কথা ছিল পুকুরে কিন্তু অামি বাথরুমের রাখা বালতির পানি দিয়ে করেছি।অার অামি কোন বালতিও অানিনাই।
দাদা বলেছিল একবছর অাগে নাকি একজন এখানে থাকতে চেয়েছিল।অার সবরকম প্রস্তুতি নিয়েই সে অাসছিল।অার পরদিন সেই লোকের অর্ধেক লাশ পাওয়া গেছিল। তারপর থেকেই এই বাড়িতে কেউ থাকার সাহস পায়নি।
দাদা যখন এই বাড়ির সম্পর্কে বলছিল দাদার চোখ গুলো একাধারে অানন্দ ও বেদনায় প্রকাশ পাচ্ছিল।
যাইহোক,মাথা কিচ্ছু কাজ করছেনা।
এমনি এই প্রচন্ড শীতের রাতে গোসল করে বরফের মত হয়ে গেছি।তারমাঝে,উল্টাপাল্টা কি সব হচ্ছে!!
একটু পর মনে হল বাথরুমে বালতি থেকে মগ দিয়ে শরীরে পানি দিয়ে কেউ গোসল করছে। অামি কেন জানি তেমন ভয় পাচ্ছিলাম না।পানির শব্দ একদম স্পষ্ট শুনতে পারছি এটা কোনভাবেই মনের ভুল হতে পারেনা।একটু পর মনেহল অন্যকিছু একটা বাথরুমে উপস্থিত হল যার জন্য পানির শব্দ থেমে গেল।
এবার মনের অজান্তেই ভয় পাচ্ছিলাম। মনকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম যে না এটা অামার কল্পনা মাত্র।কিন্তু,যখন বাঁচাও বাঁচাও বলে কেউ চিৎকার করছিল তখন অার মনকে সান্তনা দেওয়ার কোন কোন পথ’ই ছিলনা। অামি এখন একটা বাড়িতে রয়েছি যেখানে মানুষ দিনের বেলা অাসতেও ভয় পায়।বাড়িটাকে সবাই অভিশপ্ত বাড়ি নামেই চিনে।কেউ এখানে থাকলে পরদিন তাকে খুজে পাওয়া যায়না।জানিনা অামার সাথে কি হবে।
মনে হচ্ছিল বাথরুমে কেউ একটা মানুষ কে ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছে। খাওয়ার শব্দ বন্ধ হয়ে গেল।
এবার মনে হচ্ছে বাথরুম থেকে কেউ বের হল।বাথরুম টা এই রুমের পাশেই তাই সব কিছু বুঝা যায়।কিন্তু মোমবাতির অালো সেখানে পড়েনি যার জন্য কিছু দেখা না গেলেও শব্দ শোনা যায়।
মনেহচ্ছে,বাথরুম থেকে খাট পর্যন্ত যা যা জিনিসপত্র সামনে রয়েছে তার উপর দিয়ে কেউ হেটে অামার দিকেই অাসছে।
এবার মনকে সান্তনা দিতে গিয়েই ব্যর্থ হচ্ছিলাম।মনেমনেই নিজেকে বলছিলাম মরার জন্য প্রস্তুত হয়ে যা।অার মরবিই যেহেতু শেষ বাঁচার চেষ্টা করে তবেই মরবি।প্রয়োজনে অদৃশ্যার সাথে যুদ্ধ করবি এত সহজে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিবিনা।
তখন বাহির থেকে দমকা এক শীতল বাতাস যেন ঘুরে ডুকে সব উলটপালট করে দিচ্ছিল।বাতাসের জন্য তিনটা মোমবাতি এক সাথে নিভে গেল।মনে হল যেন কেউ মোমবাতি গুলোর সুইচ অফ করে দিল।না হলে তিনটা একসাথে নিভে যাওয়ান কোন কারণই নেই।
দমকা এক শীতল বাতাস যেন ঘুরে ডুকে সব উলটপালটকরে দিচ্ছিল।বাতাসের জন্য তিনটা মোমবাতি এক সাথে নিভে গেল।মনে হল যেন কেউ মোমবাতি
গুলোর সুইচ অফ করে দিল।না হলে তিনটা একসাথে নিভে যাওয়ান কোন কারণই নেই। যার জন্য ভয়টা খুব বেড়ে গেছে।জানিনা আমার সাথে কি হবে! মনেহচ্ছে কোন ছায়ামূর্তি অাসবে অার অামার রক্ত খেয়ে চলে যাবে।এতক্ষণ মনেহচ্ছিল কেউ অাসছে।কিন্তু,এখন মনে হচ্ছে খুব
কাছে অাসার পর কিছু একটা দেখে অাবার চলে যাচ্ছে।মানুষ যখন বেশি রেগে যায় তখন যেমন করে এটাও তেমন করে চলে যাচ্ছে! যাক বাঁচলাম।
অামি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অাছি, না জানি কখন থেকে কি হয়ে যায়। যখন সেটা দড়জা ভেদ করে চলে যাচ্ছিল।হঠাৎ করে
চারদিকটা অালোকিত হয়ে গেল বিদ্যুৎ চমকালে যেমন হয় ঠিক তেমনই।খুবই অল্প সময় অালোটা ছিল কিন্তু চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে
উঠল একটা মানুষ অাকৃতির কিছু হবে তার মুখ রক্তে লাল হয়ে অাছে। যেন রক্ত খেয়ে মাত্রই অাসল। চেহারা টা খুবই ভয়ংকর।যে কেউ একবার দেখলেই
হয়তো সেন্সলেস হয়ে যাবে।কিন্তু,অামি এতক্ষণ যাবত ভাবছিলাম এমন কিছুই হবে তাই সেন্সলেস হইলাম না।এখন অার কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই।মনে
হচ্ছে সব ঠিকঠাক।
.
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙল।রাতের সেই ঘটনার পর কখন জানি ঘুমিয়ে পড়ছিলাম।ভাবছি এখনি চলে যাব এই ভূতুরে বাড়ি থেকে।কিন্তু,পরক্ষণেই দাদার কথা মনে
পড়ে গেল।হ্যাঁ দাদা কিছু কথা বলছিলেন। তাই অামাকে এখন অার যাওয়া যাবেনা গেলে অারো ক্ষতি হতে পারে।সাত দিনের খাবার সঙ্গে করেই
নিয়ে অাসছি।খাবারের সমস্যা হবেনা।তাই রান্না করতে চলে গেলাম। রান্না প্রায় শেষ নাকে বাজে একটা গন্ধ অাসছে মনে হচ্ছে পেট থেকে সবকিছু বের হয়ে যাবে।সহ্য
করতে পারছিলাম না। কোথা থেকে অাসছে এই বাজে গন্ধ! চারদিকে খোজ করছিলাম। একটু বাম দিকে যেতেই দেখি একটা অর্ধগলিত লাশ!
লাশের চোখ গুলো যেন জীবন্ত! অামি যেখানে রান্না করছিলাম সেখানে অাসলাম কাঠি নেওয়ার জন্য।অবাক করার বিষয় হল কাঠি নিয়ে যাওয়ার পর
কোন লাশের চিহ্ন’ই খোজে পেলাম না! রাতের ঘটনা গুলো না হয় মেনে নিলাম স্বপ্ন ছিল।কিন্তু,এই ঘটনার পরও যদি বলি এই বাড়িতে অশরীরী কিছু নেই
তাহলে বুঝতে হবে অামি পাগল! চোখ বন্ধ করে ভাবছিলাম কি অাছে এই বাড়িতে। দাদা তো সব ক্লিয়ার করে বলেনি।তাহলে এই বাড়ির রহস্য কি! চোখ খুলতেই লাশ যেখানে ছিল সেখানে কিছু লেখা চিহ্ন অাকারে।পড়তে পারছিলাম না কিন্তু,বুঝলাম অামাকে চলে যেতে বলছে। এটা কোন মানুষের কাজ হতে পারেনা।মানুষের কাজ
হলে এত দ্রুত এত কিছু করা সম্ভব ছিলনা। অামি যে ভয় পাচ্ছিনা তা নয়।মনে মনে খুব ভয় পাচ্ছিলাম।কিন্তু চেহারায় সাহস সঞ্চয় রাখার চেষ্টা করলাম।জানিনা ব্যর্থ হচ্ছি কিনা।
.
.
বিকাল হয়ে গেছে বিকাল না সন্ধ্যাই বলা যায়। অদূরে শেয়াল ডাকছিল।শেয়ালের ডাক কিন্তু উপভোগ্য নয়।কয়েকটা শেয়াল একসাথে ডাকলে ভয়ংকর শোনায়। অামি পুকুরঘাটে বসেই সন্ধ্যা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। চিন্তার কারণ নেই কোন কিছুর অভাব হবেনা। কারণ,যথেষ্ট পরিমাণ খাবার সংগ্রহে অাছে।অার ৫০ টা মোমবাতিও অাছে।প্রতিরাতে ৩টা করে খরচ করলেও অনেক গুলো থেকে যাবে। একটু পরই সন্ধ্যা হয়ে গেল। অামি ঘরে চলে গেলাম। ৩টা মোমবাতিই জ্বালাইলাম। অাজ প্ল্যান করছি একটু পরেই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ব। যেমন ভাবা তেমন কাজ।তারাতারি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।মনে মনে খুব খুশি হচ্ছিলাম যে অাজ কিছু ঘটছিলনা।
.
.
হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল।মনে হচ্ছে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। সব কিছু উড়িয়ে নিয়ে যাবে। মোমবাতি গুলো সেই কবেই নিভে গেছে।অর্থাৎ এখন মাঝরাত হবে হয়তো। দড়জার দিকে চোখ পড়তেই হালকা অালোয় বুঝা যাচ্ছিল তিনটা সাদা কাপড় পড়ে দাড়িয়ে অাছে। পয়েন্ট ১.) হালকা অালো অাসছে কোথা থেকে! পয়েন্ট ২.) এই সাদা কাপড় পড়া তিনটা কি হতে পারে! অামি চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়তে চাইছিলাম। কিন্তু,তাদের অট্টহাসিতে ঘুম তো দূরের কথা এখানে থাকাই খুব কষ্ট হচ্ছিল। কেন অামি মরতে অাসছিলাম এই বাড়িতে ? ঘুরতে অাসছি ঘুরে চলে যেতাম কত্ত ভালো হতো কিন্তু না এখানেই অাসতে হবে। সাদা তিনটা অাস্তে অাস্তে অামার খাটের দিকে অাসছিল।কিন্তু,খাটে না সাইড দিয়ে বাথরুমে চলে গেল! অার যাওয়ার পরই মনে হচ্ছিল কড়কড় শব্দ করে হাড় খাচ্ছিল।মনে মনে ভাবছিলাম অাজও অামার ক্ষতি হবেনা।কারণ,তাদের উদ্দেশ্য কালকেও দেখলাম বাথরুমে যায়া হাড় খাওয়ার মত শব্দ করে কিছু খেয়ে নিল।অাজকেও তাই। হ্যাঁ একটু পর তারা বের হয়ে গেল।দাদা বলছিল ভয়ংকর কিছু ঘটলে নাকি অাস্তে অাস্তে তা বাড়তেই থাকবে কমবে না।কিন্তু কালকের চেয়ে তো অাজকে ভয় কম লাগছিল। মানুষ যারা ভুতের নাম শুনলেই ভয় পায় তাদের যদি এখানে নিয়ে অাসা হয় তারা কি অাদৌ বেঁচে থাকবে! যাইহোক,একটু পর তারা বের হয়ে চলে গেল।অার এত্ত বৃষ্টি হচ্ছিল মনে হচ্ছে কমবেই না কিন্তু তারা যাওয়ার সাথে সাথেই বৃষ্টির শব্দ নেই।চারদিকটা নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। অাবার ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
.
হঠাৎ একটু বাজে স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেল। কিন্তু,এবার ঘুম ভাঙার পর অবাক না হয়ে পারলাম না।ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল।কারণ,দড়জায় চোখ পড়তেই দেখি হালকা অালোয় সেই সাদা তিনটা। কালো ছায়ার মত একটা। অার মাঝ খানে অামি দাড়াই রইছি।কিন্তু,অামি তো বিছানাতে তাহলে যে হুবহু অামার মত দেখতে দাড়াই রইছে সে কে?? হঠাৎ একটু বাজে স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেল। কিন্তু,এবার ঘুম ভাঙার পর অবাক না হয়ে পারলাম না।ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল। কারণ,দড়জায় চোখ
পড়তেই দেখি হালকা অালোয় সেই সাদা তিনটা। কালো ছায়ার মত একটা। অার মাঝ খানে অামি দাড়াই রইছি।কিন্তু,অামি তো বিছানাতে তাহলে যে হুবহু অামার মত দেখতে দাড়াই রইছে সে কে?? গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, হওয়ারই কথা। কারণ,অামার কোন জমজ ভাই নেই।তাহলে অামার মত হুবহু অারেকজন যদি অামার সামনে দাড়ায় বিষয়টা নিশ্চয়ই স্বাভাবিক নয়।তারউপর অাবার এই ভূতুরে বাড়িতে। মন খুব করে চাচ্ছিল অামি যেন এখন সেন্সলেস হয়ে যাই কারণ,সেন্সলেস হলে বেঁচে যাব অার কোন ভয়ও থাকবে।কিন্তু,না অামি সেন্সলেস হচ্ছিনা মনে হচ্ছে অার হব ও না।কিন্তু,গায়ের লোম গুলো পর্যন্ত ভয়ে দাড়িয়ে গেছে।অামি অাগে কখনো এরকম পরিস্থিতিতে পরিনি লাইফে ফার্স্ট এরকম অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হচ্ছি তাই স্বাভাবিক ভাবেই ভয়টা তিনগুণ বেশি। যাইহোক,দড়জার মানুষ গুলো অবশ্য ওগুলো মানুষ নাকি অন্যকিছু ? সেটা অাদৌ অামি জানিনা। কিন্তু,খুব জানার ইচ্ছে।অাচ্ছা এগুলো কি প্রেতাত্মা? অাগে এই বাড়ির রহস্য উদঘাটন করতে গিয়েই কি ওরা মরেছিল? অাচ্ছা মেনে নিলাম প্রেতাত্মা। তাহলে অামার মতো যে দাড়িয়ে অাছে সে কে? সবাই দড়জা ছেড়ে খাটের দিকে অাসছিল। কিন্তু,এবারও খাটে না এসে সোজা বাথরুমে চলে গেল।অাজব! কি অাছে এই বাথরুমটাতে! সবাই কি এই বাথরুমেই মরেছিল? ওরা বাথরুমে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই শুরু হল কান্নাকাটি। অাচ্ছা,একা একটা বাড়িতে যদি একা থাকেন? অার কয়েকটা অপরিচিত ভূতুরে মানুষ অাপনাদের বাথরুমে যায়া কান্নাকাটি শুরু করে কেমন লাগবে? নিশ্চয়ই ভয় লাগবে? যে সবসময় ভূত- প্রেত নিয়ে ঠাট্টা করত তারও ভয় লাগবে নিশ্চয়ই? অামারও ভয় লাগছিল।অার ভয় কি লাগবে! ভয়ের রাজ্যেই অাছি এখন।বাড়িটা সম্পর্কে যদি অাগে না জানতাম অার হঠাৎ এরকম কিছু অামার সাথে ঘটত ভয়ে হয়তো মারাই যাইতাম।
.
.
একটু পর সবাই অাবার বাথরুম থেকে বের হয়ে চলে যাচ্ছিল।বিষয়টা যদি অনুমান করি এমন হবে যে,এদের সবাইকে এই বাথরুমেই মারা হয়েছে। শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করার এক সেকেন্ড অাগেও এরা বাঁচার জন্য অনেক চেষ্টা করছিল,খুব কান্নাকাটি করছিল কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি মারা গেছে ওরা।ওদের অাত্বা এখনো এসে এখানে কান্নাকাটি করে। এটা শুধু অামার কল্পনা।অামি সঠিক জানিনা এর পিছনে কাহিনী কি। সবাই অাবার চলে যাচ্ছিল। এখন অার ভয় পাচ্ছিলাম না। কারণ,ভাল করেই বুঝে গেছি ওরা অামার ক্ষতি করবেনা।কিন্তু,এই বাড়িতে একটা কিছু রয়েছে যা ওদের ক্ষতি করেছে অার সেটা প্রথম রাতেই বুঝতে পেরেছিলাম।তাকেই অামার খুজে বের করতে হবে।অামি অার কি খুজে বের করব? সে’ই হয়তো অামাকে মারার জন্য অধির অাগ্রহ নিয়ে বসে অাছে। সবাই চলে গেলেও।অামার মতো দেখতে মানুষটা যাওয়ার অাগে খুব মায়া মায়া চোখে অামার দিকে তাকাইছিল।যেন অামায় কিছু বলতে চায়।ইশারা করে বলতেছিল চলে যেতে বা অামার সাথে খারাপ কিছু হবে,এবার অামার পালা এই টাইপের কিছু।কিন্তু তার অাগেই মনে হল অন্য কেউ তাকে জোর করে সেই জায়গা থেকে নিয়ে চলে গেল।যাওয়ার অাগ পর্যন্ত সে অামাকে চলে যাওয়ার জন্য ইশারা করতেছিল। কিন্তু অামি কিভাবে যাব! এখন চলে গেলে অারো বেশি ক্ষতি হবে যেটা দাদা বলেছিলেন।না অামি মরে গেলেও যাবনা। হয় মরব না হয় এই বাড়িটাকে মুক্ত করব।না হলে হয়তো ভবিষ্যতে অারো অনেক মানুষের প্রাণ চলে যাবে। সবাই চলে যাওয়ার পর মনে হচ্ছে সব ঠিক ঠাক।কোন এবনরমাল কিছু নেই।যেন,নিজের বাড়িতেই অাছি। অাস্তে অাস্তে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলাম।
.
.
সকালে ঘুম ভাঙতেই বাহিরে গেলাম। বাড়ির মাঝখান থেকে কালো ছায়ার মত কিছু একটা অামার উপস্থিতি পেয়েই দৌড়ে চলে গেল কিন্তু অামি দেখতে পারলাম না কি ছিল এটা! দিনটাই শুরু হল অস্বাভাবিক ভাবে না জানি অাজ কি কি হবে! অার অাশ্চর্যের বিষয় রাতে এত বৃষ্টি হল অথচ এক ফোঁটা পানির অস্তিত্ব’ও কোথাও নেই! যাইহোক,এই অভিশপ্ত বাড়ির জন্য এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। পুকুরে গেলাম মুখে পানি দিলাম।অাবার ঘরে চলে অাসতেছিলাম। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ অামায়
জড়িয়ে ধরল।তার সাড়া শরীর যেন লোমভর্তি! দম বন্ধ হয়ে অাসছিল। এখনি হয়তো শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হবে।অামার অাশা পূরণ হলনা।অামি পারলাম না এই বাড়ির রহস্য উদঘাটন করতে।মরবই যখন এর শেষ দেখেই মরব।অামি প্রাণপণে ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম।অনেক কষ্টে যখন পিছনে তাকাইলাম দেখলাম বড় দাদা!!!!!! কি?
মনে প্রশ্ন জাগছে?
বড় দাদা কে?
বড় দাদা হলেন দাদার ভাই। অামি তো বড় দাদাকে কখনো দেখিনি তাহলে চিনলাম কিভাবে? কারণ,বড় দাদার একটা অার্ট করা ছবি দাদার ঘরের মাঝে ঝুলে রইছে যেটা অামি প্রথমদিনই দাদার বাড়িতে দেখছিলাম । তাই চিনতে একটুও দেরী হয়নি। চোখে চোখ পড়তেই তিনি এক প্রকার দৌড়ে চলে গেলেন। দাদা বলছিলেন তার ভাই নাকি এই বাড়িতেই মারা গেছেন! (কিভাবে মারা গেছেন, এটার ঘটনাও বলছেন সেটা পরে বলছি।) একটু অাগে যিনি অামায় জড়াই ধরছিলেন তিনি
অারো বহু বছর অাগেই মারা গেছেন!একটা মৃত মানুষ অামাকে মারার জন্য অাসছিল! এখনি পানি খাওয়া দরকার, দৌড়ে পুকুরে চলে গেলাম।ইচ্ছামত পানি খাইলাম।অামি কখনো ময়লা গ্লাসের পানিও খায়নি কিন্তু অাজ পুকুরের পানি খেতেও একবারও ভাবিনি।কারণ গলা একদম শুকিয়ে গেছে।পানি না খেলে হয়তো পানির অভাবেই মারা যাইতাম। একটা মৃত মানুষ যদি অনেকদিন পর অাইসা জড়াই ধরে! তাহলে কেমন লাগবে? অামারও তেমনটাই লাগছিল।কারণ অামিও সবার মত সাধারণ মানুষ ।
পানি খাওয়ার পর ঘরে অাইসা শুয়ে পড়লাম মাথাটা ঝিমঝিম করছে।তারাতারি ব্যাগ গুছিয়ে রেডি হয়ে চলে অাসতেছিলাম।কিন্তু,ঘর থেকে বের হওয়ার
অাগেই দাদার কথা গুলো মনে পড়ে গেল। অামি যদি এখন এখান থেকে চলে যাই অারো বেশি ক্ষতি হবে। অামি এখন এমন এক জায়গায় পড়েছি! কি বলা যায়? চোরাবালি? হ্যাঁ চোরাবালি, এই চোরাবালি থেকে উঠতে পারছিলাম না।যতই উঠতে যাব অারো নিচের দিকে চলে যাচ্ছিলাম।অাচ্ছা,এই চোরাবালি থেকে কেউ কি হাত বাড়িয়ে অামায় উদ্ধার করবে ? নাকি অাস্তে অাস্তে বিলিন হয়ে যাব অামি?
.
.
বিকাল হয়ে গেছে । অাজ সারাদিন চিড়া খেয়েই কাটিয়ে দিয়েছি। রান্না করার মত সাহস অামার ছিলনা।সারাদিন ঘরে কাথা গায়ে দিয়ে শুয়ে রইছি।মনেহচ্ছে জ্বর
অাসবে। কালকের মতই শেয়ালের ডাক চারদিকে। অাজ কেন জানি প্রকৃতি টা কাদছে! যদি না’ই কাদে বাহিরে এখনি এত অন্ধকার কেন? কারণ,প্রকৃতির অাজ মন খারাপ তাই অালো তুলে নিয়ে অন্ধকারে ঢেকে দিছে।শেয়ালের ডাক অাস্তে অাস্তে কমে যাচ্ছে। শেয়ালের ডাক সম্পর্কে মজার একটা ঘটনা অামার এখনো মনে পড়ে। ছোটবেলা অাম্মুকে জিজ্ঞাস করতাম অাম্মু শেয়াল ডাকে কেন? অাম্মুও মজা করে বলত : খাদিমুল শোন”শেয়াল সারাদিন সবার বাড়িতে মুরগি চুরি করে। শেয়ালের
তো থাকার জায়গা নেই।অার ঘরও বানাইতো না। কারণ,দিনে মুরগি চুরি করতে চলে যাইত সন্ধ্যায় অাসত।অার তখন দেখত থাকার জায়গা নেই।তাই রাগে ডাকাডাকি শুরু করে” জানিনা এটা সত্যি নাকি রুপকথার ঘটনা শুনাইত। কিন্তু এই শেয়াল গুলোর ডাক সেই ছোটবেলা যে শোনতাম সেই শেয়াল গুলোর ডাকের সাথে কেন জানি মিল পাইনা।ছোটবেলা শেয়ালের ডাক খুব উপভোগ করতাম।এখন বড় হয়ে গেছি কিন্তু এই শেয়াল গুলোর ডাক শুনলেই খুব ভয় করে
.
.
একটু পর প্রকৃতি ওর সুইচ বন্ধ করে দিল অালো নিভে গিয়ে তা অন্ধকারে পরিণত হল। তিনটা মোমবাতি জ্বালাইলাম। ভাবছি চিড়া খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ব।কোনমত সাতদিন যাক তাহলেই বাঁচি। চিড়া খাইলাম ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। অনেক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকার কারণে হালকা ঘুম অামায় গ্রাস করে ফেলেছে। কিন্তু হঠাৎ কারো অস্ফুটে কান্নার অাওয়াজ অামার ঘুম কেড়ে নিল।উঠে বসলাম। মনে হচ্ছে কেউ বাঁচার জন্য কাকুতি করছে।অামি খাট থেকে নেমে কান্নাটার জন্ম কোথায়? সেখানে খোজ শুরু করলাম। হ্যাঁ পেয়েছি বাথরুমে। একটা মোমবাতি নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম। কিন্তু বাথরুমের ভিতরে কেউ নেই! কান্নার অাওয়াজও নেই।
.
কি করলাম অামি! বাথরুমেই চলে অাসলাম!! এতক্ষণ অামার কিচ্ছু মনে ছিলনা যে অামি একটা ভূতুরে বাড়িতে অাছি! এখনি মনে হল । তারাতারি বের হয়ে যাব সেই সময় অাচমকা মোমবাতির অালোটা নিভে গেল।কিন্তু নিভে যাওয়ার কোন কারণই ছিলনা কারণ এখানে কোন বাতাস ছিলনা যারজন্য নিভে যাবে বা অামি এত দ্রুত ও বের হচ্ছিলাম না যে নিভে যাবে! অন্ধকার হয়ে গেছে। দড়জা দিয়ে বের হতে যাব দেখি দড়জাটা লাগানো। মনে হচ্ছে বাহির দিয়ে কেউ ছিটকিনি মেরে দিছে। অামি জোরে জোরে দড়জায় লাথি দিচ্ছিলাম।কিন্তু তা খুলছেইনা।অথচ এই দড়জার বাহির দিয়ে কোন ছিটকিনি’ই নেই! তাহলে দড়জা খুলে না কেন???
মনে হচ্ছে বাহির দিয়ে কেউ ছিটকিনি মেরে দিছে। অামি জোরে জোরে দড়জায় লাথি দিচ্ছিলাম।কিন্তু তা খুলছেইনা।অথচ এই দড়জার বাহির দিয়ে কোন ছিটকিনি’ই নেই! তাহলে দড়জা খুলে না কেন???
হঠাৎ ভিতরে প্রচুর বাতাস বইতে শুরু করল। সব উলটপালট করে দিচ্ছিল।অামি দড়জায় লাথি দিয়েই যাচ্ছিলাম।কিন্তু দড়জা খুলে না। ভয় পরের ব্যাপার অাগে এখান থেকে বের হতে হবে ।কিন্তু,যেরকম অবস্থায় অাছি বের হওয়া হয়তো সম্ভব নয়। কি করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।অামি সাহস ধরে রাখার চেষ্টা করছিলাম। সব অাশা ছেড়ে বসে পড়লাম। তখন বাতাস বন্ধ হয়ে গেল।সব অাগেরমত হয়ে গেল কোন সাড়াশব্দ নেই। একটু পর বুঝতে পারলাম ঘরের ভিতরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেউ কাদছে,একে মায়াকান্না বলা যায়। কান্নার অাওয়াজটা এমন ছিল যে,যে কেউ ভাববে হয়তো কেউ বিপদে পড়েছে তাকে সাহায্য করি। অামারও এমনটা হয়েছে।অামি অাস্তে অাস্তে দড়জায় ধাক্কা দিলাম দড়জা খুলে গেল। ঘরে এতটা অালো থাকার কথা নয়! কিন্তু,এত অালো অাসতেছে কোথা থেকে? অারেকটু সামনে যেতেই দেখি খাটের উপর একটা লাশ।সবাই লাশের পাশে বসে কান্না করতেছে।যেন সদ্য মারা যাওয়া কোন লাশ।অামি যে ঘরে অাছি, তারজন্য কারো ভ্রুক্ষেপ নেই।সবাই সবার মত কান্না করতেছিল। অামি সামনের দিকে অাস্তে অাস্তে অগ্রসর হচ্ছি। যখন খাটের কাছে বসলাম। সব উধাও হয়ে গেল।অালোটাও নেই। রুমটা সম্পুর্ণ অন্ধকার হয়ে গেছে। কিন্তু অাগরবাতির সুঘ্রাণ পাচ্ছিলাম। অামি অার কিছু না ভেবে বিছানায় শুয়ে পড়লাম ভেবে নিলাম এটা মনের ভুল ছিল।
.
.
কখন জানি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।সকালে ঘুম ভাঙল। রাতের সেই ঘটনা মন থেকে এখনো যায়নি। সকাল টাই শুরু হল হালকা বৃষ্টি দিয়ে। বের হয়ে দেখলাম।একটু একটু বৃষ্টি পড়ছে। চারদিকটা হালকা অন্ধকার।বাহিরে গেলাম না বৃষ্টি দেখছিলাম।অামি যেখানে দাড়িয়ে অাছি।তার একটু ডানপাশেই কয়েকটা ছোট ছোট গাছ।গাছগুলোতে অনেক পাতা। তাই অন্ধকার দেখা যায়। যখন গাছ গুলোর দিকে চোখ পড়ল।বুঝলাম কেউ সেখানে দাড়িয়ে অাছে। অামি এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে দেখার জন্য এক
প্রকার দৌড়ে চলে গেলাম। অার দেখেও ফেললাম।বৃদ্ধ একটা লোক।সারা শরীর রক্তে লাল হয়ে অাছে।
– চলে যা, চলে যা, চলে যা, চলে যা………..
বলতে বলতেই লোকটা চোখের পলকেই হারিয়ে গেল।
বুঝতে পারলাম অশুভ কোন ইঙ্গিত দিয়ে গেল। বাড়িটায় যেন প্রেতাত্মাদের মেলা বসেছে। যার জন্য একের পর এক ভয়ানক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। না এই বাড়িতে অার থাকা যাবেনা। পরে যা হবে দেখা যাবে।অাগে এখান থেকে যাই। তাই সব গুছিয়ে চলে অাসার জন্য বের হলাম। কিন্তু,যাওয়ার জন্য কোন রাস্তাই খুজে পাচ্ছিলাম না।চারদিকটা যেন চারদেয়ালে অাবদ্ধ। অনেক্ষণ চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হলাম। বাধ্য হয়েই অাবার ফিরে অাসলাম।বিষয়টা এমন যে
”অাঙুর ফল টক’ অামি ইচ্ছে করেই ফিরে এসেছি।
সেই গাছগুলোর কাছে অাসতেই বৃদ্ধটাকে অাবার
দেখতে পারলাম।
– অনেক দেরী করে ফেললি,অনেক দেরী করে
ফেললি,অনেক দেরী….
এবারও কথা গুলো বলতে বলতেই অদৃশ্য হয়ে গেল। অামি রাগে গজগজ করতে করতে ঘরে গেলাম। এমন ভাব করলাম যে,অায় কে অাসবি অায়।তোর
মোকাবেলা করার জন্য অামি প্রস্তুত।
.
.
বিকাল হয়ে গেছে এর মাঝে কোন কিছু ঘটেনি। অাজ দিনটা মনেহয় ভালোই যাবে।কিন্তু,দাদা বলেছিলেন প্রতিদিন অাগের দিনের চেয়ে বেশি ভয়াভহ ঘটনা ঘটবে।তাই অার চিন্তামুক্ত হতে পারছিলাম না।অাজ রান্না করেছি।তাই তৃপ্তি সহকারে খাইলাম। গোসল করা হয়নি। ভাবলাম গোসল করে অাসি।দুপুরেই করা দরকার ছিল কিন্তু করিনি। তাই গোসলের প্রস্তুতি নিয়ে পুকুরে অাসলাম। যখন ডুব দিলাম। স্পষ্ট দেখতে পারছিলাম পানির নিচেও অনেক মানুষ। অার সেই বৃদ্ধ লোকটা প্রথমে।পানি থেকে উঠলাম। অাবার ডুব দিলাম এবার অার কেউ নেই। এটাও মনের ভুল ভেবে নিলাম।পানির নিচে কাউকে দেখা সম্ভব নাকি! তাই গোসল শেষ করে উঠে অাসলাম। যখন পুকুর থেকে উঠে অাসলাম।অার শরীরের পানি মুছতেছি।তখনই পুকুরের দিকে চোখ গেল।অার দেখলাম অনেক লাশ।একেকটার কি বিদঘুটে চেহারা! দূরের গুলো দেখতে পারিনি।কাছে যেগুলো ছিল সেগুলোই দেখতে পারলাম। এক দৌড়ে চলে অাসলাম।এই দৃশ্য দেখার চেয়ে…..!!!
যখন দৌড়ে ঘরে অাসছিলাম। তখন দেখলাম ঘর থেকে কয়েকজন বের হয়ে অামার দিকে অাসছে।তাদের চেহারাও ভয়ানক।মনে হচ্ছে কেউ খুব কষ্ট দিয়ে এদের মারছে। অাসলে অামি অাগে ভূত-প্রেত বিষয়টা একদম সিরিয়াস ভাবে নেইনি। কারণ,যখন ”অাহট”দেখতাম সেই ভূত গুলো দেখলে ভয় তো পাইতামই না উল্টা হাসতাম।
”শাকচুন্নি” কে তো দেখেছিই কার্টুনে।নামটা কি ভয়ানক ”শাকচুন্নি” কিন্তু দেখলে ভয় লাগেনা। অাবার একটা কার্টুন অাছে। ছেলেটা পিঠা বানায়া গাছের নিচে যাইয়া বলে একটা খাব দুটো খাব সব বেটাকেই চিবিয়ে খাব।তখন ভূতরা অারো ছেলেটাকে খুশি করে। তাই ভাবতাম ভূত-প্রেত এগুলা হাসির’ই জিনিস। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি এরা কতটা ভয়ানক হতে পারে। যাইহোক,ঘর থেকে যখন তারা অাসছিল। অাবার পিছন দিকে অাস্তে অাস্তে যেতে লাগলাম। পুকুরের কাছে অাসতেই মনে পড়ে গেল।পুকুরেও তো লাশ ভেসে রইছে।সামনের গুলোকে দেখে পুকুরের কথা ভুলেই গেছিলাম। চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম। তারা অামার পাশ দিয়ে চলে গেল।অার ইশারায়–
ইঙ্গিতে হয়তো কিছু বলে গেল।বিষয়টা এমন যে,অফিসে নতুন বস অাসলে সবাই যেমন “Welcome” জানায়।তেমনি তারাও যেন অামাকে শিগ্রই ওদের রাজ্যে পাবে।তাই “Welcome” জানিয়ে গেল। পিছনে ফিরতেই দেখি কেউ নাই! পুকুরেও কেউ নাই। অাবার ঘরে চলে অাসলাম। কিন্তু ঘরে প্রবেশ করার অাগেই বুঝতে পারলাম ঘরে
যেন কম্পন শুরু হইছে। যেন ভূমিকম্প হচ্ছে!তাই সব নাড়াচাড়া করছে। যখন ঘরের কম্পন বন্ধ হয়ে গেল। ঘরের উপর দিয়ে কালো একটা জমাট ধোয়ার মতো ঘর থেকে বের হয়ে গেল। অাবার ঘরে প্রবেশ করলাম। এখনো অাগরবাতির ঘ্রাণ রয়েছে।অাজকের মত ভয় অাগে পাইনি।সারাক্ষণ বুকটা ধুকধুক করছিল। না জানি কখন থেকে কি হয়ে যায়। সন্ধ্যা হয়ে গেছে চারদিকটা অন্ধকার হয়ে গেছে। প্রচুর বৃষ্টি শুরু হল সাথে বাতাস ও অাছে।বুঝতে পারলাম এই বৃষ্টি,বাতাস শুধু এই ঘরের জন্যই।
মোমবাতি জ্বালাইলাম।যেহেতু রান্না করে খাওয়ার পর ঘরে রেখে গেছি।ভাবলাম এখনি খেয়ে নেই যদিও বিকালেও খাইছি।কিন্তু এখনি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ব।তাই খেতে বসলাম। মোমবাতি জ্বালাইলে তিনটা করে জ্বালাই। অাজকেও তিনটা জ্বালাইলাহ। কিন্তু একটু পরেই একটা মোমবাতি নিভে গেল। অাবার জ্বালাইলাম। যখন খাচ্ছিলাম মনেহচ্ছে চারপাশে কালো ছায়ার মত কয়েকজন মানুষ দাড়িয়ে খাওয়া দেখছে। যাইহোক,অামার খাওয়া শেষ হলো। অাজ রাতে যে খুব ভয়াভহ ঘটনার সম্মুখিন হতে
হবে,অাগেই বুঝতে পারছিলাম। তাই অারো তিনটা মোমবাতি জ্বালাইয়া ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
.
.
যখন চোখে হালকা ঘুম ।তখনই কালকের মত অস্ফুটে কান্নার শব্দ। এই কান্নার শব্দ শুনলে অামি থাকতেই পারিনা।ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করে।কিন্তু,অাজ যাবই না ।
যাইকিছু হোকনা কেন অামি যাবনা।তাই কাথা গায়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু ঘুম অাসছেইনা। কান্নার শব্দ বেড়েই যাচ্ছে।অার থাকতে পারছিলাম না।অাস্তে করে কাথাটা সড়িয়ে উঠলাম। অাজ কান্নাটা বাথরুম থেকে নয় বাহির থেকে অাসছে। তাই অাস্তে অাস্তে সামনের দিকে যেতে লাগলাম। যখন দড়জার কাছে চলে অাসলাম। তখন বাহিরে অনেক মানুষ চোখে পড়ল।অার বাহিরে বৃষ্টি খুজে পাচ্ছিলাম না।কিন্তু,হালকা অালো রয়েছে। দেখলাম সবাই একসাথে কান্না করতেছে। যেন কোন অসুস্থ মানুষ মারা যাবে তাই সবাই কান্না করতেছে।অামি এখন একটুও ভয় পেলাম না।ওদের কাছে চলে গেলাম। কাল রাতে যেমন কেউ অামায় দেখছিল না। তেমনই অাজ অামায় সবাই দেখছিল। প্রথমেই সেই বৃদ্ধটাকে দেখতে পেলাম। সেও কান্না করতেছে।
– তুই কেন গেলিনা? তুই কেন গেলিনা? তুই কেন গেলিনা।এগুলো বলে এবার অার অদৃশ্য হচ্ছিলনা। যদিও অামার ভয় পাবার কথা কিন্তু এই লোক গুলো কে দেখে ভয় পাচ্ছিলাম না। অবশ্য এরা মানুষনা সেটা ভাল করেই জানি। যাইহোক,ওদের দেখে ভয় না পাওয়ার কারণ হল, ওদের কাউকে দেখেই বুঝা যাচ্ছিল না যে,ওরা অামার ক্ষতি করবে।সবাই অামার ভালো চায় তা ওদের দেখেই বুঝতে পারছিলাম। অামাকে দেখে ওদের কান্না অারো বেড়ে গেল। যেন,অামিই এতক্ষণ অসুস্থ ছিলাম। অার এখন মারা গেছি। ওরা হয়তো এমন কিছু চেয়েছিল ” অামি ওদের উদ্ধার করব,কিন্তু অামি পারিনি।অামিও ওদের মত শেষ হয়ে গেছি” কিন্তু অামার তো এখনো কোন ক্ষতি হয়নি।তাহলে ওরা কান্না করছে কেন? অাদৌ অামার জন্য কান্না করছে? নাকি অন্য কোন কারণে? অামি অাবার ঘরে চলে অাসলাম। কিচ্ছু ভাবতে পারছিনা।মাথা কাজ করছেনা। এবার অার ঘুমাতে চেষ্টা করলাম না।কারণ,ঘুমালে যদি ঘুমের মাঝে কিছু হয়ে যায়। শুয়ে রইছি,শরীর ঘেমে গেছে অতিরিক্ত ভয় পেলে যা হয়! তখনই ডানপাশে কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম।অার বামপাশে অট্টহাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম।দুহাত দিয়ে কান বন্ধ করে রাখার চেষ্টা করছিলাম। তখনই শব্দ বন্ধ হয়ে গেল।কান্না-হাসি কোন শব্দই অার নেই। চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইছি। তখনই বাম পা ও খুব ঠান্ডা কিছু অনুভব করছিলাম। একটা হাত বাম পা টা শক্ত করে ধরেছে। মনেহচ্ছে,কোন মৃত মানুষ পা এ শক্ত করে ধরেছে।পা অাস্তে অাস্তে অবশ হয়ে যাচ্ছে। যখন উঠে বসলাম। দেখলাম একটা মানুষ অাকৃতির কিছু অামার সামনে বসে রইছে।তার মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে। দাত গুলো বের করে হাসছে ।খুব ভয়ানক চেহারা। অামি হাত দিয়ে সড়ানোর চেষ্টা করছিলাম।কিন্তু হাত কাজ করছিল না। অার তার অারেকটা হাত অামার গলার দিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে…….
দেখলাম একটা মানুষ অাকৃতির কিছু অামার সামনে বসে রইছে।তার মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে। দাত গুলো বের করে হাসছে ।খুব ভয়ানক চেহারা। অামি হাত দিয়ে সড়ানোর চেষ্টা করছিলাম।কিন্তু হাত কাজ করছিল না। অার তার অারেকটা হাত অামার গলার দিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে…….
ভাবলাম হয়তো খুব কষ্ট দিয়ে মারবে অামায়। কিন্তু গলার কাছে অাসতেই তার হাত অাটকে গেল। কারণ গলায় অাম্মুর দেয়া একটা তাবিজ ছিল।সেটা দেখে রাগে গজগজ করতে করতে কোনমতে বের হয়ে গেল। অারযাওয়ার সময় বিকট এক চিৎকার দিয়ে গেল। (ওহহ! তার মানে এই তাবিজের খুব পাওয়ার অাছে। যা অামায় এতদিন রক্ষা করছে।) অামি অাবার বাহিরে গেলাম তখনো দেখলাম। সেই অাগের লোকগুলো দাড়িয়ে অাছে। বুরো লোকটা সবার অাগে। সবাই যেন অামায় জীবিত দেখে অবাক হয়ে গেছে। এমনটা ভাবছিল হয়তো অামি মারাই যাব। তো অামি অাবার ঘরে অাইসা শুয়ে পড়লাম।সে রাতে অার কিছু ঘটেনি।হতে পারত সেই রাতটাই অামার জীবনের শেষ রাত।
.
.
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর,নিজেকে অন্য কোথাও অাবিষ্কার করলাম।কারণ প্রতিদিন সকালে যখন ঘুম ভাঙে।ঘরে অালো প্রবেশ করে।কিন্তু অাজ অন্ধকার।তাহলে কি এখনো রাত? অামি খাট থেকে নেমে বাহিরে গেলাম। বাহিরে যাওয়ার পরই দেখি।একটা খাটিয়া, খাটিয়া তে সেই কালকের বৃদ্ধ লোকটা । সবাই কান্না করছে।অার অাগরবাতির ঘ্রাণ তো অাছেই। মানে বৃদ্ধ লোকটা মারা গেছে। অামি লোকটাকে কাছ থেকে দেখার জন্য তার মুখের কাছে গেলাম। অার তখনই লোকটার চোখ দুটো হঠাৎ অামার দিকে তাকাইল! যা এতক্ষণ বন্ধ ছিল। মৃত মানুষ অথচ তাকাই রইছে।অামি এক চিৎকার দিলাম। অার সেই চিৎকারের শব্দে সেখানে যারা ছিল
সবাই।অামার দিকে এগিয়ে অাসছিল।
.
নি:শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। কারণ অামি এতক্ষণ যা দেখেছি সবই স্বপ্নে। ঘুম থেকে উঠা,নিজেকে অন্য কোথাও অাবিষ্কার করা,খাটিয়াতে বৃদ্ধ লোকটা সবই স্বপ্ন ছিল।
কিন্তু খুব ভয় পেয়ে গেছি।কারণ এরকম ভয়ংকর স্বপ্ন অাগে কখনো দেখিনি। যাইহোক,ঘুম ভাঙার পর বাহিরে গেলাম।অবাক করার বিষয় হল স্বপ্নের মতই দেখি একটা খাটিয়া।অার পাশে সবাই দাড়িয়ে রইছে। অামি কিছুটা অবাক হলাম।খাটিয়ার পাশে গেলাম বিষয়টা ভালভাবে দেখার জন্য।যায়া দেখি সেখানে অামিই শুয়েই অাছি! যখন দেখলাম সেটা অামি। অার তখনই অামার বেশে সেই নকল মানুষটা চোখ খুলল অার তার একটা হাত দিয়ে অামার হাতটায়শক্ত করে ধরে বিচ্ছিরি হাসি দিচ্ছিল।অার সেটা দেখে পাশের সবাই হাসছিল। অামি খুব চেষ্টা করছিলাম হাতটা সড়ানোর জন্য।কিন্তু ব্যর্থ হলাম। অবশেষে সেই বুড়ো লোকটাই অামায় উদ্ধার করল। কিন্তু অামার হাতে তার পাঁচ অাঙুলের ছাপ বসে গেছে। অামি দৌড়ে ঘরে চলে গেলাম।খাটের উপর দেখলাম সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটা মানুষ। যখন কাছে গেলাম। এবার তো অামার অজ্ঞান হওয়ার অবস্খা। কারণ সেটাও যে অামিই ছিলাম। অামি তাকে বললাম চলে যেতে।অার সে উঠে অাস্তে অাস্তে চলে যাচ্ছিল। অার যাওয়ার সময় বলল অামাকেও চলে যেতে। অামি মৃদু হাসলাম।কি বা করার অাছে? অামি তো বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য চেষ্টাও কম করিনি কিন্তু বের হতে পারিনি।
.
.
বিকাল হয়ে গেছে।এর মাঝে অার তেমন কিছু ঘটেনি। বিকালে খুব বাতাস বইছিল।অামি সেটা উপভোগ করার জন্য পুকুর পাড়ে গেলাম। অাজ কেন জানি খুব ভালই লাগছিল। কিন্তু একটু পরই বাতাসে পঁচা লাশের গন্ধ অাসছিল। যার জন্য নাক মুখ বন্ধ হয়ে অাসছিল। তারাতারি সেখান থেকে উঠে চলে অাসলাম। উঠানে হাটছি।তখন দেখি বাড়িন পিছন থেকে নতুন একটা লোক অাসল। কিন্তু এতদিন বাড়ির ভিতরে যাদের দেখেছি তাদের চেয়ে এই লোকটা অালাদা। লোকটা যেন অামার মতই এই বাড়িতে থাকার প্রস্তুতি নিয়েই অাসছে। অামি কথা বলতে যাব।কিন্তু লোকটাকে দেখেই খুব ভয় পাচ্ছিলাম। কেমন গম্ভির! হয়ে অাছে। লোকটা ঘরে গেল।পিছু পিছু অামিও গেলাম। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গেছে অার শেয়ালের ডাকও শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু অাজ শেয়ালগুলো খুব ভয়ে ভয়ে ডাকছিল। রাতে চিড়া খাইলাম। কারণ অাজ সারাদিন রান্না করিনি। বরাবরের মত তিনটা মোমবাতি জ্বালাইলাম। অার সেই লোকটা অাসার পর থেকেই যে, খাটে শুইছে একটা কথাও বলেনি।নাড়াচাড়াও করেনি। লোকটা অাসাতে মনে মনে ভরসা না পেয়ে অামি একটু একটু ভয় পাচ্ছিলাম জানিনা কি হবে। অারেকটু রাত হল অার অামি সেই প্রথম থেকেই শুধু দাড়িয়েই অাছি। হঠাৎ সে বিছানা থেকে উঠল। লোকটা সঙ্গে যা যা জিনিস এনেছিল। তারমাঝে একটা বালতিও অাছে।লোকটা বালতিটা নিল।অার মোমবাতি গুলো নিভিয়ে বাথরুমে চলে গেল।অামি তারাতারি খাটের উপর যায়া কাথা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। একটু পর বাথরুম থেকে টেপ ছাড়ার অাওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম।অর্থাৎ লোকটা হয়তো গোসল করবে। অামি দুহাত দিয়ে কান গুলো বন্ধ করে রাখছি।যেন কোন শব্দই অার না শুনতে পারি।কিন্তু একটু পরেই পরেই চিৎকার শুরু হল।অামি কান শক্ত করে ধরে রাখার পরও সেই চিৎকারের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। পরে,কান থেকে হাত গুলো সড়াইলাম।কারণ,হাত দিয়েও কোন লাভ নেই।অার তখনি শুনতে পেলাম বাঁচাও বাঁচাও বলে সে চিৎকার করছে । ভাবলাম অাজকে যাবইনা যত ইচ্ছে ডাকুক।অাগেরবার যায়া খুব প্রবলেমে পড়ছিলাম। এবার অার যাবইনা।কিন্তু, সে ডাকছেই চিৎকার করে।অার থাকতে পারছিলাম না। কেন যে একটা অচেনা মায়া নিজেকে গ্রাস করে ফেলে।যার জন্য না গিয়ে থাকতেই পারিনা। তাই, অামি সেটা দেখার জন্যই অাস্তে অাস্তে পা ফেলে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। কিন্তু কিছুই দেখতে পারছিলাম না।অার নিয়ত করছি বাথরুমের ভিতরে যাবনা যত কিছুই হয়ে যাক। বাহির থেকেই শুধু দেখব। একসময় চিৎকার থেমে গেল। অার একটা কালো ছায়ার মত বাথরুম থেকে বের হয়ে গেল।শুধু বুঝা যাচ্ছিল তার মুখ রক্তে লাল হয়ে অাছে! অার অামি একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে নিয়েযখন বাথরুমে গেলাম।দেখি লোকটার অর্ধেক অংশ কেউ খেয়ে ফেলছে।অার লোকটা এখনো মরেনি।খুব কষ্টে ইশারা করছিল তাকে তুলার জন্য।অামিও তারাতারি তাকে তুলার জন্য গেলাম। লোকটার এত কষ্ট হচ্ছে দেখে অামার খুব মায়া হচ্ছিল।তাকে যখন ধরে উঠালাম। সে অাস্তে করে হাত দিয়ে টান দিয়ে অামার গলার তাবিজটা ছিড়ে ফেলল।অার অট্টহাসিতে মেতে উঠল। এবার বুঝতে পারলাম এতক্ষণ এই কাহিনীর মানে কি!! সবটাই এই তাবিজ ছেড়ার জন্যই। এখন অার লোকটাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না।অদৃশ্য হয়ে গেছে হয়তো। সঙ্গে অামার তাবিজটাও নিয়ে গেছে।যেটা ছিল অামাকে বাঁচানোর শেষ সম্ভল। অামি হতাশ হয়ে খাটের উপর এসে শুয়ে পড়লাম।
.
.
একটু পর শুনতে পেলাম কেউ অামার নাম ধরে ডাকছে ।অার অামার ঘুমটা ভেঙে গেল।তারমানে অাস্তে অাস্তে হয়তো ঘুমিয়ে পড়ছিলাম । অামি ডাক শুনে উঠলাম।
দেখি বড় দাদা। যিনি অারো বহুবছর অাগেই মারা গেছিলেন।
– তুমি এই বাড়ি সম্পর্কে সব কিছু জানতে চাও?
– হ্যাঁ তারজন্যই এসেছি ( ভয়ে ভয়ে)
– তাহলে এসো অামার সাথে।
– জ্বী চলুন
অামি বড় দাদার পিছু পিছু গেলাম। অার দাদা বলা শুরু করলেন।
– অনেক অাগে এই বাড়িটা বানানো।অামার
দাদারাও এই বাড়িতেই থেকেছেন। কিন্তু,এই বাড়িটার একটা দোষ ছিল।যা অামার দাদার সময় থেকে শুরু হয়।অার তারজন্যই অামার দাদাকে মারা যেতে হয়েছে।অামার বাবাও মারা গেছেন। অার অামিও। অার তুমি এতদিন যেই মানুষ গুলো কে দেখেছ তারা একটাও মানুষ নয়।অার…..
পিছনে তাকাও, পিছনে তাকাও।অার সোজা ঘরে চলে যাও এখনি। অামি অাবার অাসব।কিন্তু এখন থাকা সম্ভব না।নিজেকে রক্ষা কর। অামি যেই পিছনে তাকাইলাম। দেখি একটা মানুষ।যেন তার মাথা অাকাশে গিয়ে ঠেকেছে সাদা কাপড় পড়ে দাড়িয়ে অাছে। অামি তার দুপায়ের মাঝখান দিয়ে এক দৌড়ে ঘরে চলে যাচ্ছিলাম। কিন্তু অাজ দেখি ঘরের দড়জাই খুলছেনা। ভিতর দিয়ে কেউ লক করে রাখছে। অথচ অামি লক করিনি।অার কিভাবে করব? অামি তো বাহিরে ।যা অাগে কখনো হয়নি তাই অাজকে হল। অামি অাবার দৌড়ে পুকুরের দিকে চলে অাসছিলাম। কিন্তু,সেদিনের মত পুকুর থেকে কয়েকটা মানুষ উঠল। যাদের সবারই চেহারাই ছিল বিদঘুটে,অাবার রক্তে মাখা। ঘরেও যেতে পারছিলাম না।বাহিরেও থাকতে পারছিলাম না। অার পুকুর থেকে যারা অাসছে তারা খুব হিংস্র হয়েই অামার দিকে এগিয়ে অাসছে। অার এতদিন তাবিজটার জন্যই হয়তো এতদিন বেঁচে গেছি। কিন্তু অাজ তো তাবিজটাও নেই। ঘর যেতে পারছিলাম না।বাহিরেও থাকতে পারছিলাম না। অার পুকুর থেকে যারা অাসছে তারা খুব হিংস্র হয়েই অামার দিকে এগিয়ে অাসছে। অার এতদিন তাবিজটার জন্যই হয়তো এতদিন বেঁচে গেছি। কিন্তু অাজ তো তাবিজটাও নেই। তারা অামার দিকে এগিয়ে অাসছেই। অামি নি:শ্বাস বন্ধ করে রাখতে চেষ্টা করছি।কারণ শ্বাস নিতেও খুব কষ্ট হচ্ছে অামার। হালকা চাঁদের অালোয় তাদের চেহারা গুলো খুবই ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। অামি পাশের গাছটার কাছে চলে গেলাম। অার তখন ওরা প্রায় অামার কাছাকাছি চলে অাসছে।সবার প্রথমে যে, তার মুখটা বেশি ভয়ঙ্কর। তার একটু বর্ণনা দেই,মুখটা সম্পুর্ণ রক্তে মাখা, চোখ গুলো বের হয়ে অাসতে চাইতেছে,মাথায় বড়বড় চুল। যখন খুবই কাছে অাসল।হাতের বড় বড় নোখ গুলো
দিয়ে অামাকে অাক্রমন করার চেষ্টা করল।অামি চোখ বন্ধ করে সজোরে এক চিৎকার দিলাম।
.
.
হঠাৎ মনে হল কেউ অামায় ডাকছে।
অামি চোখ খুললাম দেখি বড় দাদা।
– দাদা অাপনি?
– ভয় পেয়োনা।ওরা চলে গেছে।
তখনি অামার সব মনে হয়ে গেল।অার অামি তখন চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে গেছিলাম।
– চলে গেল কিভাবে?
– অাকাশের দিকে তাকিয়ে দেখ।
– কিছুইতো নেই অাকাশে চাঁদ ছাড়া।
– হ্যাঁ। অাজ পূর্ণিমারাত। ওরা পূর্ণিমারাতে কারো ক্ষতি করতে পারেনা যদি চাঁদের অালো এখানে পৌছাতে পারে।এতদিন বেঁচে গেছ,তাবিজটার জন্য।
অাজ বেঁচে গেলা মেঘের জন্য।
– মেঘের জন্য?
– হ্যাঁ তুমি যখন চিৎকার দিছিলা অার ঠিক সেই মূহুর্তে।চাঁদের উপর থেকে মেঘ সড়ে গেছে। যারজন্য চাঁদের অালো সম্পুর্ণ ভাবে এখানে পৌছাতে
পেরেছে অার মুহুর্তেই ওরা চলে গাছে।
– হ্যাঁ বুঝলাম।অাচ্ছা অাপনি সম্পূর্ণ কথা অামায় বলতে পারেননি অাজ বলুন।
– হ্যাঁ অাবার শুরু করছি।
অনেক অাগে এই বাড়িটা বানানো।অামার দাদারাও এই বাড়িতেই থেকেছেন। কিন্তু,এই বাড়িটার একটা দোষ ছিল।যা অামার দাদার সময় থেকে শুরু হয়।অার তারজন্যই অামার দাদাকে মারা যেতে হয়েছে।অামার বাবাও মারা গেছেন। অার অামিও। অার তুমি এতদিন যেই মানুষ গুলো কে দেখেছ তারা একটাও মানুষ নয়।অার অামার দাদা মারা যাওয়ার কারণ হচ্ছে। সেই সময় গ্রামে একটা মহামারী সৃষ্টি হয়। কোন এক খারাপ কিছুর (অশরীরী’র) নজর পড়ে অামাদের গ্রামে। রাতের বেলা কারো
বের হওয়ার সাধ্য ছিলনা কেউ বের হলে তাকে অার খুজে পাওয়া যেতনা। একসময় সবাই রাতে বের হওয়া বন্ধ করে দেয়। তখনি অারো ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে শুরু করে। সবার বাড়ির দরজা কেউ শব্দ করে।যদি কেউ সাহস করে খুলে তাহলেই সর্বনাশ। তেমনি একদিন রাত্রে হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল। সবাই ঘুমিয়ে পড়ছে।অামার বাবা তখন যুবক বয়সের। গভীর রাত্রে দড়জায় কেউ নাড়া দেয়। এত শব্দ হচ্ছিল যে সবার ঘুম ভেঙে যায়। সবাই বুঝে যায়।এটা কোন মানুষের কাজ নয়।তা’ই কেউ দড়জা খুলেনা।কিন্তু অামার দাদা নাকি প্রচন্ড জেদী মানুষ ছিলেন।তাই তিনি সাহস করে দড়জা খুলতে যান।অার দড়জা খুলার সাথে সাথেই ঘরে প্রচুর বাতাস বইতে শুরু করে অার মানুষ অাকৃতির ভয়ানক চেহারার কেউ ঘরে প্রবেশ করে। দাদা দড়জার কাছেই ছিলেন।অার প্রথমেই দাদাকে বড়বড় নোখের হাত গুলো দিয়ে বুকটা ছিড়ে ফেলে। অার সাথে সাথেই দাদা মারা যান।
– অাচ্ছা অামার একটা প্রশ্ন। অাপনি কি অাগে থেকেই এরকম শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেন?
– না তোমার যাতে বুঝতে কষ্ট না হয় তাই এভাবে বলছি।
– অাচ্ছা যদি অামার অারো কোন প্রবলেম হয়। অাপনি অামায় সাহায্য করতে পারবেন না?
– না পারবনা কারণ সেই শক্তি অামার নেই।
– অাচ্ছা পড়ে কি হয়েছিল।
– না না এখন অারো বলা যাবেনা অামার হাতে সময় নেই।তুমি তারাতারি ঘরে যাও।
– কেন কেন!
– বাহিরে বৃষ্টির শব্দ শুনতে পাচ্ছ?
– হ্যাঁ
– অাজকের দিন অার অামার দাদার পরিবারের সবাইকে যেদিন মারা হয়েছিল শুধু অামার বাবাকে ছাড়া সেই দিনটা হুবহু মিল।শুধু তারিখটা পাল্টে গেছে।
– তো?
– তুমি এই বাড়িতে অার একদিন যেভাবেই পারো থাকবা।অার অাজকের রাতটা তোমার জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ হবে।তুমি মারাও যেতে পারো।অার যদি বেঁচে যাও তাহলে অনেক উপকার হবে।অামি অাবার অাসব তোমাকে সব বলতে যদি বেঁচে থাকো।
– অাচ্ছা দাদা অামি প্রাণপণে চেষ্টা করব বেঁচে থাকার জন্য।অাশাকরি অামাদের অাবার দেখা হবে।
অামার কথা শেষ হওয়ার অাগেই দেখি দাদা উধাও হয়ে গেছে।অামি চারদিকটা খুজলাম কিন্তু নেই। বাহিরে গেলাম,হালকা বৃষ্টি হচ্ছে।খুব ভাল একটা ঘ্রাণ অাসছিল।অামি ঘ্রাণের টানে কখন যে পুকুরপাড় চলে গেছি নিজেই জানিনা। হঠাৎ মনে হল অামি নিজের অনিচ্ছায়ই পুকুরে নেমে যাচ্ছি।কেন নেমে যাচ্ছি তা নিজেই জানিনা। একসময় পুকুরে নেমেই গেলাম। ডুব দিলাম।
রাতের বেলায় ও পানির নিচে স্পষ্ট দেখতে পেলাম সেই মানুষ গুলো।তখন তো শুধু একজনকেই ভয়ঙ্কর লাগছিল এখন সবাইকেই ভয়ঙ্কর লাগছে। অামি তারাতারি উঠে পড়লাম।অাবার ডুব দিলাম তখন দেখি কেউ নেই! চারদিকটা অন্ধকার।যখন পানির নিচ থেকে উঠলাম। দেখি সবাই উপরে! অামি দ্রুত পুকুর থেকে উঠতে চাচ্ছিলাম।অার স্বপ্নের মত হচ্ছে অামার সাথে।যত উঠতে চাচ্ছি ততই নিচ দিকে যাচ্ছি।অনেক কষ্টে একটা গাছের শিকড় ধরে উপরে উঠার চেষ্টা করছিলাম।যখন অর্ধেক উঠলাম তখনি অামার পায়ে ধরে কেউ টানাটানি শুরু করল।অামি উঠতেই পারছিলাম না। নিচে তাকিয়ে দেখলাম। একটা মানুষ! যার চেহারায় কোন ভয়ের ছাপ নেই,সাধারণ একটা মানুষ। তখনি উপরে উঠার জন্য উপর থেকে কেউ হাত বাড়িয়ে দিল।
যখন উপরে তাকাইলাম।তখন দেখি নিচ থেকে যে লোকটা অামাকে টানছিল।এটাও সেই লোকই। কিভাবে সম্ভব! যাইহোক,অামাকে টেনে উপরে তুলল। সাথে সাথে নিচ থেকে সেই লোক গুলোও উঠল। খেয়াল করে দেখলাম চাঁদের অালো হালকা হয়ে গেছে। খুব বৃষ্টিও হচ্ছে। অামি দৌড়ে ঘরে চলে গেলাম,অার দড়জা বন্ধ করে দিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম যাক বাঁচলাম । তখনি সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল যা হয়েছিল বড় দাদার,দাদার সাথে। দড়জায় কেউ খুব শব্দ করছে দরজা খোলার জন্য
চাদের অালো হালকা হয়ে গেছে। খুব বৃষ্টিও হচ্ছে। অামি দৌড়ে ঘরে চলে গেলাম,অার দড়জা বন্ধ করে দিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম যাক বাঁচলাম । তখনি সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল যা হয়েছিল বড় দাদার,দাদার সাথে। দড়জায় কেউ খুব শব্দ করছে দরজা খোলার জন্য। অামি ভয়ে ভয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।একবার মন চাচ্ছিল
দরজাটা খুলব। অারেকবার মন চাচ্ছিল খুলবনা। দোটানায় পড়ে গেছি। অবশেষে মন থেকে হ্যাঁ সূচক অনুভুতি জাগ্রত হল।যার জন্য দরজাটা খুললাম। অার তখনি ঘরে প্রচুর বাতাস বইতে শুরু করল। অামি ভয় পাচ্ছিলাম কারণ সেই অাগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে। কিন্তু না কোন কিছুর অাগমন ঘটলনা।শুধু বাতাস
বইয়েই যাচ্ছে। অামি এই কয়েকদিন যাবত এই বাড়িতে অাছি।অথচ অাজকে বাড়িটাকে সম্পুর্ণ অন্যরকম মনে হচ্ছে। মনেহচ্ছে,কোন পুরণো বাড়ি। একটু পর একটা লোক ঘরে অাসল।অার এই লোকটার চেহারার সাথে কেন জানি বড় দাদার চেহারার খুব
মিল রয়েছে।তিনি ঘরে প্রবেশ করলেন।অার বললেন :
– অনেক সাহস অাছে তোমার।
– অাপনি কে?
– শোন এই জিনিসটা রাখ।(একটা প্রদীপের মত ছোট বাক্স)
– এটা দিয়ে কি করব?
– তুমি যার জন্য এতদিন ধরে অপেক্ষা করছ অাজকেই সেই রাত।তোমাকে এই বাড়িতে সাত দিন থাকতে হবেনা।অাজকের রাতটা থাকতে পারলেই হবে।
– কিন্তু এখন কি করণীয়?
– প্রদীপটার ভিতর একটা ছোট্ট সুইয়ের মতো চিকন জিনিস অাছে।সেটা খুবই বাজে গন্ধের।কোনভাবেই এর ঘ্রাণ নিতে চেষ্টা করবানা তাহলে সারাজীবনের জন্য এই বাড়িতেই থাকতে হবে।
– বুঝলাম কিন্তু এটা দিয়ে কি করব?
– অারেকটু পরেই ঘরে বাতাস বন্ধ হয়ে যাবে।
তখন তোমার খুব ঘুম পাবে অার তুমি ঘুমিয়েই পড়বা। কিন্তু মাঝরাতে তোমার সাথে ভয়ানক কিছু হতে পারে।কিন্তু তার অাগে একটা বিকট শব্দ হবে।তুমি যদি সেই শব্দে ঘুম থেকে উঠতে পারো তাহলে তোমার ক্ষতি কম হবে যদি সঠিক ভাবে সবকিছু মোকাবিলা করতে পার।
– পরে?
– একটা মানুষের মত কিছু ঘরে প্রবেশ করবে।অার যেভাবেই হোক তার শরীরে বক্সের ভিতরেরজিনিসটা প্রবেশ করাতে হব তাহলেই এই বাড়ি অভিশাপ মুক্ত হবে। মানে সে মারা যাবে।অার এই কাজটা অামিই করতে পারতাম । কিন্তু সে অামাকে তখন সেই সুযোগ টা দেয়নি ।অার কিছু কাজ অাছে যা তুমি নিজেই বুঝতে পারবা।সাবধানে। থেকো।
– কিন্তু অাপনি কি?
– (রহসম্যয় হাসি)
– বলুন?
– অামি কে জানতে হবেনা। তবে শোন এর অাগেও অনেকে এই বাড়িকে অভিশাপ মুক্ত করতে অাসছিল কিন্তু সবাই মারা গেছে। তুমিই প্রথম এ পর্যন্ত অাসতে পেরেছ।
অার হ্যাঁ এই লাঠিটা রাখ।এর মাথায় বক্সের ভেতরের জিনিসটা বসিয়ে নিও তোমার জন্য সুবিধা হবে।
– অাচ্ছা
– অামার হাতে সময় বেশি নেই। অামি চললাম……. মূহুর্তেই ধৌয়ার মত কিছু হয়ে তা উড়ে গেল। একটু পড়েই বাতাস বন্ধ হয়ে গেল।অামি বক্স থেকে সুইয়ের মত জিনিসটাকে বের করে মোমের অালোর সাহায্যে তা লাঠির মাথায় সেট করে নিলাম। কেন জানি মাথাটা খুব ঝিমঝিম করছে।অার খুব ঘুম পাচ্ছে।
.
.
মাঝরাতে কিছু একটার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল।অার ঘুম ভেঙে যাওয়ার একটু পড়েই খুব বাতাস বইতে শুরু করল। এখন বুঝতে পারলাম অামি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।অার ভাগ্যটা ভাল হওয়ার কারণেই ঘুম টা ভেঙে গেছে। দরজায় খুব শব্দ হচ্ছে। অামি জানি দরজাটা খুলতেই হবে।তাই সাহস করে খুলে দিলাম। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। একটু পরেই ঘর থেকে কেন জানি এই মাঝ রাত্রেও পুকুরটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।অামি চোখ সড়াতে পারছিলাম না।সেই অবিকল অাগের মানুষ গুলোই পুকুর থেকে উঠতেছে। অাজ তাদের খুব হিংস্র মনে হচ্ছে।ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। তাদের একেকটার দাত দেখে মনেহচ্ছিল এখনই অাসবে অার অামার রক্ত গুলো তাজা খেয়ে নিবে। তারা এগিয়েই অাসছে। অার সবার সামনে যিনি সে একটা ধবধবে সাদা কাপড় পড়ে অাছে।সে চোখ বন্ধ করেই এগিয়ে অাসছে।হঠাৎ অাকাশে বিদ্যুৎ চমকাল অার সামনে যে ছিল সাথে সাথেই তার চোখ গুলো জ্বলে উঠল। অাগুনের মত জ্বল জ্বল করছে।একটু ভাবুন তো? যদি রাত্রে দেখুন কেউ সাদা কাপড় পড়ে বড়বড় চোখ নিয়ে কেউ অাপনার দিকে এগিয়ে অাসছে তবে কেমন লাগবে? নিশ্চয়ই ভয়ে হাত-পা বরফের মত ঠান্ডা হয়ে যাবে? অামারো তেমনই লাগছিল। মনে মনে ভাবছিলাম ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাই কিন্তু সেই পথ খোলা ছিলনা যে, দৌড়ে বাড়ির বাহিরে চলে যাব।অামি অারো দুইটা মোমবাতি জ্বালাইলাম। অার ওরা ওদের মত এগিয়েই অাসছে। অার 30সেকেন্ড হাটলেই ঘরের ভেতর প্রবেশ করবে। কিন্তু সবাইকে তো সেই লাঠি দিয়ে অাঘাত করা সম্ভব নয়। কি করব তাই ভাবছিলাম? খুব জোরে একটা
চিৎকার দিলাম, কিন্তু গলা দিয়ে অাওয়াজ বের হলনা।অামি মোমবাতির কাছে সেই লাঠিটা রেখে দৌড়ে বাহিরে চলে গেলাম দেখার জন্য যে,ওরা অামার জন্যই এসেছে কিনা।বাহিরে যখন চলে গেলাম।তারা থেমে গেল।অার মুখ ঘুরিয়ে অামার দিকেই তাকাইল।এবার বুঝে গেলাম তারা অামাকে মারার জন্যই এসেছে। অামি অাবার ঘরে যেতে শুরু করলাম কিন্তু ঘরে যেতে পারছিলাম না।অথচ ঘরের দরজা খোলা। কিন্তু ঘরে প্রবেশ করার অাগেই কিছু একটার সাথে ধাক্কা খাই।যার জন্য ঘরে যেতে পারছিলামই না।এখন মনে হচ্ছে খুব ভুল করে ফেলছি বাহিরে বের হয়ে। অার ওরা অাস্তে অাস্তে এগিয়েই অাসছে।অার একটু পরেই অারো ভয়ংকর ঘটনার শুরু হল।ওরা একেকজন একেক রকম শব্দ শুরু করল। অামি দৌড়ে বাহিরে যেতে শুরু করলাম।অার অাশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে অাজকে বাহিরের গেইট টা যেন খোলা।অামি অনায়াসেই যেতে পারছি। ভাবলাম এক দৌড়ে এই জঙ্গল থেকে বের হয়ে যাব।অার তাই’ই করছিলাম।কারণ অাজকে ওদের মোকাবেলা করার মত সাহস অামার ছিলনা। তাই চলে অাসছিলাম। কিন্তু খানিকটা পথ দৌড়ানোর পরই বুঝতে পারলাম।অামার সাথে অারো কেউ দৌড়াচ্ছে।কিন্তু অামি থেমে গেলে অার কারো অস্তিত্ব খুজে পাচ্ছিনা।অাবার যখন দৌড় শুরু করি তখনই মনেহয় কেউ অাছে অামার সাথে। অবশেষে দৌড়ে রাস্তায় চলে অাসলাম। কিন্তু এখন নিজের কাছেই খুব খারাপ লাগছিল ।কি করলাম এটা? এতদিন এতসব ভয়ানক ঘটনার সম্মুখিন হওয়ার পর অাজ চলে অাসলাম? না এটা মেনে নেয়া যায়না।অামি অাবার উল্টোদিকে দৌড় শুরু করলাম। অার দৌড়ে অাবার সেই বাড়িতেই পৌছালাম।অার বাড়ির গেইটে অাসতেই দেখলাম। সেদিনের মত অনেক বড় একটা মানুষ অনেক বড়।অামি যতটুকো লম্বা এর চেয়ে মনেহয় তার একটু অাঙুলই তিনগুণ লম্বা ।সে মূর্তির মত দাড়িয়ে অাছে। অামি তার দুপায়ের নিচ দিয়েই ভিতরে প্রবেশ করলাম। অার ভিতরে যাওয়ার সাথে সাথেই সবকিছু সেই অাগের অবস্থাতেই দেখতে পেলাম। এতক্ষণ দৌড়ে অাসার কারণে মনে কেমন জানি একটা সাহস এসেছে। অার অাজ না গিয়ে ভালই করেছি কারণ ” দাদা এই বাড়িতে অামাকে অাসতে দিতে চেয়েছেন তার একটা কারণ ছিল তিনি অামাকে অাগেই সব বলেছিলেন।তার ধারণা তার পূর্বপুরুষরা যারা মারা গেছে সবাই এই বাড়িতে অাত্বা হয়ে অাছে।অার অামি সাতদিন এখানে থাকলেই ওরা মুক্তি পাবে। অার এই যে এতগুলা মানুষ দেখি সবাই’ইকোন না কোন একসময় এখানে মারা গেছে।অার এই বাড়িতে কেউ অাসলে তারাও ওদের মেরে ফেলে। কারণটা সবার প্রথম যে,বড় দাদার,দাদাকে মেরেছে সেই ছিল প্রধাণ।অার ও এদের সবাইকে তার
অনুসারী করেছে।যারজন্য এখানে কেউ রাত্রিযাপন করলে অার বেঁচে থাকতে পারেনা।অার যেই বালতির ঘটনা টা ঘটেছিল অামার সাথে সেটাও অাগে একজনের সাথে সত্যি সত্যি এমন হয়েছে। যার জন্য সেটারও পুনরাবৃত্তি হয়েছে অামার সাথে।অার অামার বেঁচে থাকার কারণ ছিল তাবিজটা।যারজন্য সবাই তাবিজের শক্তির কাছে হারমানে।কিন্তু যখন তাবিজটাই নিয়ে যায়।তখন অার কিছু বাকী ছিলনা। অার পরের রাত্রেই হয়তো বড় ধরণের কোন ক্ষতি হত। কিন্তু পূর্ণিমারাতের জন্যই বেঁচে গেছি।অার সে হয়তো বড় দাদার,দাদার ফ্যামিলির কাউকেই তার অনুসারী করতে পারেনি।যার জন্য বড় দাদা অামাকে হেল্প করেছিল। অার দাদা অামাকে বলছিলেন থাকলে যেন সাতদিনই থাকি। কারণ একবার একজন এরকম একদিনও না থেকেই চলে যায়।অার পরেরদিনই সে মারা যায়। তাই ভাবছিল হয়তো অামার সাথেও এমনটা হবে। অামিও তা বিশ্বাস করেছিলাম যারজন্য অার যাওয়ার চিন্তা করিনি।যদিও একদিন করেছিলাম কিন্তু যাওয়ার রাস্তা ছিলনা”
.
যাইহোক,অামি যখন পুণরায় বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলাম।তখনও তারা সেখানেই ছিল।অামি দৌড়ে ঘরে চলে গেলাম।কেন জানি এবার অার দরজায় অাটকালাম না।কিন্তু দরজা পার হতে খুব শক্তি প্রয়োগ করেই পার হতে হয়েছে।যেন সেখানে কিছু একটা ছিল তার ভিতর দিয়েই অাসতে হয়েছে। যখন ঘরে প্রবেশ করলাম অাবার সেই বাতাস শুরু হল। একটু পর যখন বাতাস বন্ধ হল তখনই বুঝতে পারলাম ঘরে নতুন কেউ প্রবেশ করেছে।অার বুঝলাম এটাই সেই প্রধান ভূত-প্রেত বা যাইকিছুই হোক এটাই সে। তার মুখটা পুরুটা বুঝা যাচ্ছিলনা। অার বাহিরের সেই মানুষগুলো ঘরে অাসতে চাইতেছে কিন্তু দরজা পর্যন্ত এসেই অাটকে যাচ্ছে অার অাসতে পারছেনা। অার ভিতরে শুধু সেই একজনই। এতক্ষণে অামার জ্বালানো মোমবাতি প্রায় নিভে গেছে। অার অামার সামনে যে, সে মূর্তির মত দাড়িয়েই অাছে, চুল পরিমাণও নড়ছে না।অামি এক হাতে মোমবাতি নিলাম অারেক হাতে সেই লাঠিটা অাস্তে অাস্তে তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যখন তার একদম সামনে অাসলাম সে হঠাৎ করেই মুখ তুলে অামার দিকে তাকিয়ে এমন বিচ্ছিরি একটা হাসি দিল! এমন বিচ্ছিরি হাসি দেখার জন্য অামি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।এতদিন থাকার পর যেই ভয়টা পাইছি।তার মুখ অার এই হাসিটা দেখে তারচেয়ে বেশি ভয় পেয়ে গেছি।এরকম একটা ভয়ানক মুখ দেখার পর যে কেউ হয়তো সেন্সলেস হয়ে যাবে। কারণ তার মুখ ছিল অর্ধেকটা,অার একটা চোখ অতিরিক্ত বড়। কিন্তু অামি যেহেতু তাকে শেষ করার জন্যই এসেছি তাই হয়তো সেন্সলেস হইলাম না। কিন্তু খুব করে চাচ্ছিলাম যেন সে এরকম হাসি অার না দেয়।তাহলে অামি নিশ্চিত অামি ঠিক থাকতে পারবনা। এমনি বুকের হার্টবিট অনেক বেড়ে গেছে। সে তখন দড়জার দিকে তাকিয়ে খুবই শব্দ করে একটা গর্জন দিল যার জন্য দরজার সবাই ভয়ে পালিয়ে গেল।কিন্তু শুধু যার পড়নে সাদা কাপড়,অার বড়বড় চোখ ছিল সেই শুধু দরজার ভিতর দিয়ে অাস্তে
অাস্তে অাসতে শুরু করল।কিন্তু এভাবে অাসলেও তার কমপক্ষে এক মিনিট সময় লাগবে কারণ সে খু্বই অাস্তে অাস্তে অাসছে। অার চেহারার নানান রুপ ধারণ করছে। সে যেহেতু এখনো বেশ দূরে তাই অামি অাগে একলাফ দিয়ে এর পিছন দিক দিয়ে লাঠি দিয়ে অাঘাত করলাম যাতে সুই এর মত জিনিসটা তার শরীরে ডুকে যায়।কিন্তু তার অাগেই সে অাবার অামার দিকে ফিরে খুবই বাজে ভাবে হাসি দিল। অামি ভয়ে এক চিৎকার দিলাম।কিন্তু তারপরও লাঠিটা সোজা তার বুক বরাবর লাগল। অার সে অাস্তে অাস্তে অদৃশ্য হতে লাগল।অার তখনই খেয়াল করলাম বড় দাদা এসেছেন।অার বললেন
– অামি অার যা যা বলতে চেয়েছিলাম সব তো দেখলাই।
(অার সাথে অাজ যিনি অামাকে এই লাঠিটা দিয়েছিলেন সেও এসেছেন। )
– ইনি কে বড়দাদা?
– ইনিই অামার দাদা।
– অামরা যাই, যাওয়ার সময় হয়ে গেছে ভাল থেকো।
(দুজন একসাথে) দেখলাম দুজনই অদৃশ্য হয়ে গেলেন অার যাকে লাঠি
দিয়ে অাঘাত করেছি সেও প্রায় অদৃশ্য হয়ে গেছে অার হয়েই গেল। সাথে সাথে যে পিছনে অাসছিল সাদা কাপড় পড়া সেই উধাও হয়ে গেল। অামি দৌড়ে বাহিরে গেলাম। মনে হচ্ছে এই বাড়িতে অনেক মানুষ অার সবাই দৌড়ে পালাতে চাচ্ছে। অার একটু পড়েই চারদিকে নিরবতা। যেন এতক্ষণ এখানে কিছুই ঘটেনি।
.
অামি পুকুর ঘাটে গিয়ে বসলাম। বৃষ্টি অার নেই। খুবই সুন্দর একটা বাতাস বইছে।কিন্তু অাজ বাতাসে কোন পঁচা গন্ধ নেই।খুবই সুন্দর একটা ঘ্রাণ অাসছিল। ইচ্ছে করছিল সারাক্ষণ এখানেই বসে থাকব। অামি অাগেই এই বাড়ি থেকে যাবনা।কাল অাগে গিয়ে দাদাকে নিয়ে অাসব পরে যাব। অারেকরাত থাকব।এতদিন তো ভয়ে ভয়েই ছিলাম কালকের রাতটা না হয় অানন্দে সারারাত অামি অার দাদা পুকুরঘাটে বসে গল্প করব অার এই সুন্দর সুঘ্রাণ টা উপভোগ করব।অাজকের পর থেকে এই
বাড়িকে অার কেউ অভিশপ্ত বাড়ি বলতে পারবেনা এটা ভাবতেই ভাল লাগছে।
………………………………( সমাপ্ত)………………………….