মিসেস মার্টিনার বিশাল হলরুম। বিশাল এজন্যই যে দোতলা বাড়ির নিচতলায় একপাশে কিচেন আর বার রয়েছে আর বাদ বাকী পুরোটাই হলরুম।
মিসেস মার্টিনা
খুবি পার্টি প্রিয় মহিলা । ইয়াং থেকে হেড়ে বুড়ো প্রাই সবাই আমন্ত্রিত থাকে তার পার্টিতে। মিসেস মার্টিনার বয়স চল্লিশোর্ধ অথচ ছোট্ট বালিকার মতো
উদ্যম আনন্দে মেতে থাকতেই পছন্দ করেন। আর তাইতো শহরের সবাই তাকে সমীহ ও ভালবাসে। হ্যালুইনের সন্ধ্যায় তার বাসায় বিশাল পার্টির
আয়োজন করা হয়েছে। বুড়োরাই বেশি উপস্থিত, আর যুবকরা শহরের বাহিরে যে ঘন গাছপালায় ঘিরা জঙ্গল ওখানেই হ্যালুইন উদযাপনে একত্রিত
হয়েছে। প্রথমদিকে গল্প, হার্ডড্রিংস দিয়ে ভালই চলছিলো পার্টি কিন্তু একসময় তা কেমন মিইয়ে গেলো । সবাই যার যার পেগ হাতে নিয়ে কেউ সোফায়
কেউ চেয়ারে কেউবা মেঝেতেই গড়িয়ে পড়েছে। এমন সময় এক তরুণ যুবক গলা খাঁকারি দিয়ে উঠল। এই পার্টিতে একমাত্র এই যুবকটি ছিল বুড়োদের
মাঝে তবে বেশ চুপচাপ। কারন এ শহরে ও নতুন। এলাকার কারো সাথেই তেমন পরিচয় নেই। আজ সকালে লেটার বক্সে এই পার্টির ইনভাইটেশন কার্ড
পায়। তারপর সাতপাঁচ না ভেবেই চলে আসে এলাকার সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ বাড়িটিতে। এদিকটায় এর আগে কখনো আসেনি। ইনভাইটেশন কার্ডের
ঠিকানায় বাড়িটির নাম্বার ছিল, সেই মোতাবেক এসেছে। তবে এসে একটু বিব্রতবোধ হয়েছিল, কারন ওর বয়েসি কেউ ছিলো না পার্টিতে। আর এটা ওর
কল্পনার বাইরে ছিল। যাই হোক এই পার্টিতে আসার উদ্দেশ্য ছিল সকলের সাথে পরিচিত হওয়ার। আর তাইতো গলা খাঁকারি দিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণের
চেষ্টা। এখন দাঁড়িয়ে সে কিছু বলতে চাইছে। সবার চোখ একসংঙ্গে ঘুরে গেলো তার দিকে। যুবকটি বলে উঠল, আমি ফ্রেড, ফ্রেড রোজারিও । মিঃ রোজারিও
বলেও ডাকতে পারেন তবে ফ্রেড নামটা বেশি পছন্দ। ওর কথা শুনে মাতাল প্রায় মানুষ গুলি খলখল করে হেসে উঠল। হাসি স্বাভাবিক হলেও ফ্রেডের কেন
জানি শরীরটা শিরশির করে উঠলো। ফ্রেড আবারো বলে উঠল, আমি এখানে নতুন, সবে চাকরীতে জয়েন করে এই শহরে এসেছি। আমি আপনাদের
সাথে পরিচিত হতেই এসেছি। পাশ থেকে এক টাকলা মাথার সাহেব নাক মুখ কুচকে খেক খেক করে হেসে বলে উঠল, আর জায়গা পেলে না বাপু মরতে
এসেছো এখানে!!
ফ্রেড এবার কেমন জমে গেল, মনে মনে ভাবল, একটু আগেই এই লোকগুলি কতো অমায়িক আর প্রাণবন্ত ছিল অথচ এখন কেমন নির্জীব আর ভয়ংকর
লাগছে। ঠিক যেন মিলছেনা। ফ্রেডের ভাবনাকে ছেদ করলো মিসেস মার্টিনা। তিনি সহাস্য এগিয়ে এসে ফ্রেডের সম্মুখে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন। হ্যালো
ফ্রেড, ওয়েলকাম !! নিশ্চয় পার্টিটি এনজয় করেছো!! মিসেস মার্টিনার বাড়িয়ে দেওয়া হাত ধরতে যেতেই একজনের গলা শুনে থেমে গেল ফ্রেড। মিসেস
মার্টিনার পিছনে দোতলায় উঠার সিঁড়িপথে কালো ওভারকোর্ট হাতে দস্তানা মাথায় সাহেবি টুপি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে এক ভদ্রলোক । লোকটির হ্যালো
এভরি ওয়ান!! কথাটি শুনেই ফ্রেডের হাত থেমে গিয়েছিল। আরেকটা জিনিসও লক্ষ্য করলো ফ্রেড, লোকটির উপস্থিতিতে মিসেস মার্টিনের চেহারা কেমন
ফ্যাকাসে হয়ে গেল। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে, হয়তো লোকটিকে পার্টিতে আশা করেনি। ভদ্রলোক ধীরে ধীরে নিচে নেমে খুব
অমায়িকতার সহিত সবার সাথে হ্যান্ড শেক করে নিজের পরিচয় দিতে লাগলো, আমি রিচার্ড হগ মার্টিনার স্বামী । কিছু কিছু মানুষের চেহারা দেখে বোঝা
গেল তারা উনাকে আগে থেকেই চেনেন আর কিছু কিছু অপরিচিত। যারা অপরিচিত তারা এগিয়ে গিয়ে সৌহার্দ্য বিনিময় করলো। মিসেস মার্টিনা দ্রুত
এগিয়ে গিয়ে কিছু বলতে চাইলেন কিন্তু মিঃ হগ তাকে থামিয়ে দিয়ে তার হাতটি নিয়ে হাটু গেড়ে বসে হাতের উল্টো পিঠে একটি মিষ্টি চুম্বন একে দিলেন।
সবাই একজোগে হাতে তালি দিয়ে উঠলো । কিন্তু মিসেস মার্টিনার মুখমন্ডলের কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হলো না, সেই ফ্যাকাসেই রয়ে গেল। যেন কোন
এক অজানা ঝড়ের অপেক্ষায় আছেন তিনি। মিঃ হগ সবার সাথে সৌহার্দ্য বিনিময় করলেন কিন্তু ফ্রেডকে যেন দেখতেই পাচ্ছেন না এমন ভাব করলেন।
এমনিতেই ওভার ড্রিংকস এ সকলের অবস্থা খারাপ, কেউ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেনা ঠিক মতো। সবাই একটি আধটু টলছে তার উপর মিঃ হগ তাদের
আবার ড্রিংকস এর অফার করলেন। কেউ তেমন একটা পাত্তা দিলেন না। কিন্তু মিঃ হগ নাছোড়বান্দা সবাইকে একপ্রকার জোড় কয়েই কয়েক পেগ
খাওয়ালেন সাথে মিসেস মার্টিনাকেও। ফ্রেড অবাক চোখে শুধু দেখেই যাচ্ছে, কেমন জানি খটিকা লাগছে ব্যাপারটি কিন্তু পরিস্কার নয়। তাই চুপচাপ হয়ে
দাঁড়িয়েই রইল। সবাই যখন নেশায় বুদ হয়ে সোফায়, মেঝেতে গড়িয়ে পড়েছে তখন মিঃ হগ এক পেগ ড্রিংকস হাতে নিয়ে উপরের দিকে উঠিয়ে প্রচন্ড
হাসিতে ফেটে পড়লো। জোড়ে জোড়ে বলতে লাগলো আজই তোমাদের জীবনের শেষ পার্টি, এনজয় এভরি ওয়ান এনজয়!! সেই মুহূর্তে মিঃ হগ কে বদ্ধ
উম্মাদ মনে হতে লাগলো। ফ্রেড বেরিয়ে যাবে কিনা ভাবছিল সেই মুহূর্তে কেমন একটা গন্ধ নাকে লাগতেই তাকিয়ে দেখে মিঃ হগের হাতে পেট্রোল ভরা
ক্যান। পাগলের মতো ঘরের যত্রতত্র পেট্রোল ছিটাচ্ছে সে । ফ্রেড দৌড়ে গিয়ে বাধা দেবার আগেই মিঃ হগ আগুন ধরিয়ে দিল। এরপর এগিয়ে এলো ফ্রেডের
দিকে। ফ্রেডের মনে হলো ও কোন মানুষ কে দেখছেনা, এ যেন সাক্ষাৎ সয়তান। কি ক্রুর হাসি ঝুলছে তার ঠোটে!! ফ্রেডকে অবাক করে দিয়ে মুহূর্তের
মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল সমস্ত ঘর সাথে পার্টিতে উপস্থিত প্রতিটি মানুষ। যেন চোখের পলকেই সব ঘটে গেল, কাউকে বাঁচানোর মতো সময়টুকু
পেলো না। মিঃ হগ সহাস্য এগিয়ে এলো ফ্রেডের দিকে। ফ্রেড শত চেষ্টাতেও একচুল নড়তে পারলো না। বিস্ফারিত চোখে মিঃ হগের এগিয়ে আসা দেখতে
লাগলো। মিঃ হগ ফ্রেডকে ধরার জন্য হাত বাড়িয়েই সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎবেগে ছিটকে পিছিয়ে গেল। আর তার সমস্ত শরীর মুহূর্তে আগুনের গোলায় পরিণত
হলো। আগুনের মধ্য থেকে হিসহিস করে রাগ জাহির করতে লাগলো। এমন সময় উপর থেকে পার্টিশনের এক খন্ড কাঠ ভেঙে পড়ল ঠিক ফ্রেডের পাশেই।
ফ্রেড উদ্ভ্রান্তের ন্যায় ছিটকে বেড়িয়ে এলো জ্বলন্ত বাড়িটি থেকে। ফ্রেড রাস্তায় এসেই আগুনের তাপ সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারালো। যখন জ্ঞান ফিরলো
তাকিয়ে দেখে ওর মুখের দিকে দুজন বুড়ো বুড়ি উদ্বিগ্ন চোখে তাকিয়ে আছে। ফ্রেড উঠে বসতেই তারা একটি পানির পট এগিয়ে দিয়ে বললেন, কি হয়েছে বাছা?
এই নির্জন পোড়ো বাড়ির সামনে তুমি কি করছিলে আর জ্ঞানই বা হারালে কেন? ফ্রেড সব কিছু খুলে বলতেই বুড়ো বুড়ি একে অপরের দিকে তাকিয়ে বললেন
ঈশ্বরের দয়ায় তুমি বেঁচে গেছো আর তোমার গলায় ওই ক্রুশই তোমাকে রক্ষা করেছে। নতুবা আজ পর্যন্ত কেউ ওখান থেকে জীবিত ফিরে আসতে পারেনি।
— কেন কি এমন অপরাধ ছিল ওদের যে মিঃ হগ কাল ওদের এমন নির্মম ভাবে হত্যা করলো ?? বুড়ো লোকটি বলে উঠল, কাল নয় বাছা, আজ থেকে প্রায় দশ
বছর আগে ঘটেছিল এই মর্মান্তিক ঘটনা। মিঃ হগ জাহাজে কাজ করতো। বছরে একবার কি দুবার দিন পনেরোর ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসতো। বাকিটা সময়
মিসেস মার্টিনা একাই দিন কাটাতো। তাদের কোন সন্তানাদি না থাকায় মিসেস মার্টিনার সময় কাটতে চাইতো না। তাই তিনি প্রায়ই পার্টির আয়োজন করতেন
শহরের সবাইকে ইনভাইট করতেন। কিন্তু মিঃ হগ এগুলি পছন্দ করতেন না বলে হগের অনুপস্থিতিতেই পার্টি দিতেন। একবার মিঃ হগ টানা দুই বছর বাড়িতে
এলেন না। মিসেস মার্টিনা বেশ বিচলিত হয়ে পড়লেন। তখন শহরের কিছু লোক সবার বাড়িতে ইনভাইটেশন কার্ড বিলিয়ে মিসেস মার্টিনার জন্য সারপ্রাইজ
পার্টির আয়োজন করলো। সবাই একত্রিত হলো পার্টিতে। সবকিছু বেশ ভালোভাবেই চলছিল কিন্তু হুট করেই সেদিন মিঃ হগ এসে হাজির হয় এবং পার্টি দেখে
তার মাথায় আগুন উঠে যায় এবং সবাইকে বদ্ধ মাতাল করে সমস্ত বাড়িতে পেট্রোল দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে সবাইকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারে সাথে নিজেও জ্বলে
মরে যায়। সেদিন ছিলো হ্যালুইনের রাত। এরপর প্রতি হ্যালুইনে সবার বাড়ির লেটার বক্সে একটি করে ইনভাইটেশন কার্ড আসে এবং সন্ধ্যায় ধ্বংসপ্রায় পোড়ো
বাড়িটা আবার জীবন্ত হয়ে ওঠে । আবারো শুরু হয় উৎসব এবং আবারো শুরু হয় সেই মর্মান্তিক মৃত্যুর খেলা। আজ দশটি বছর ধরে চলে আসছে এই মৃত্যুর
খেলা, জানিনা এর শেষ কবে……
……………………………………………….সমাপ্ত………………………………………..