আজ বৃহস্পতিবার । অফিসে প্রচুর কাজ থাকায় কাজ শেষ হতে রাত ১০ টা বেজে যায়। তাই অফিস থেকে আমি বের
হয়ে গাড়ি দ্রুত চালানো শুরু করলাম। কারন বাসায় এত দেরীতে পৈাছানোর জন্য আমার মা নিশ্চয়ই খুব রাগ করবেন ।
তাই আমি অফিস থেকে বের হয়ে জলদি গাড়ীতে উঠে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর গাড়ি নিয়ে আমি একটি নীরব সড়কে ঢুকে পড়ি।
সাধারণত রাতের সময় আমি কখনও এই সড়ক দিয়ে বাসায় যাইনা। কারন আমি শুনেছি এই সড়কটা নিরাপদ না।
কিন্তু বাসায় জলদি যাওয়ার জন্য আমি এই সড়ক ব্যবহার করি। আমি যখন গাড়ি চালাচ্ছিলাম তখন হঠাৎ লক্ষ্য
করি ৪-৫ বছর বয়সী একটি মেয়ে রাস্তার মাঝামাঝি একাকী দাড়িয়ে কান্না করছে। তাই আমি গাড়ি থামিয়ে মেয়েটাকে দেখতে যাই।
আমি দেখি মেয়েটির হাতে একটি পুতুল এবং সে পুতুলটি ধরে কান্না করছে। আমাকে দেখে মেয়েটি খুব ভয় পেয়ে যায়।
আমি তাকে স্বান্তনা দেই। এবং তাকে প্রশ্ন করি ,“তোমার নাম কি? এত রাতে এখানে কি করছো?”। কিন্তু সে কিছু বলে না,আমার
দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আমি ভাবি হয়তে সে কথা বলতে পারে না অথবা সে খুবই ভয় পেয়েছে। তাই আমি তাকে বলি,
“ভয় পেয়োনা মামনি,তোমার বাসা কোথায়?”। তখন সে আমাকে ঘন ঝোপের দিকে ইশারা করে দেখায়। আমি ভাবলাম সেখানে
হয়তো কেউ আছে। তাই আমি তাকে নিয়ে সেদিকে যেতে লাগলাম।কিন্তু আমি অন্ধকাের কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না।
পকেট থেকে মোবাইল বের করতে গিয়ে দেখলাম পকেেট মোবাইল নেই। তাই আমি গাড়ি থেকে মোবাইল আনতে যাওয়ার সময়
তাকে ইশারায় সেখানে অপেক্ষা করতে বললাম। আমি গাড়ী থেকে মোবাইল নেয়ার সময় লক্ষ্য করলাম গাড়ির সীটের নীচে একটি
লাইটার পড়ে আছে। আমি হাতে নিতেই মনে পড়ল এটা আমার বন্ধু রকিবের লাইটার। আমি লাইটার আর মোবাইল পকেটে রেখে দ্রুত
মেয়েটির কাছে ফিরলাম। কিন্তু এসে দেখি মেয়েটি সেখানে নেই। তাই আমি টর্চ অন করে তাকে খুজঁতে থাকি। কিন্তু তাকে পাইনি।
হঠাৎ লক্ষ্য করি তার পুতুলটি মাটিতে পড়ে আছে । পুতুলটি আমি মাটি থেকে তুলে নেই। এবং সে আশেপাশে থাকতে পারে ভেবে
তাকে খুজঁতে থাকি।হঠাৎ করে আমি ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাই। আমার কাছে মনে হল যেন পেছন থেকে কেউ আমাকে খুব জোরে ধাক্কা মেরেছে।
ধাক্কা খেয়ে আমার হাতে থাকা মোবাইলটি পড়ে গেল কিন্তু পুতুলটি হাতে রয়ে গেল। মোবাইলটি তুলতে যাওয়ার সময় আমি অনুভব
করলাম আমার যেই হাতে পুতুল আছে সে হাতটা যেন আগুনে পুড়ে যাচ্ছে।তীব্র যণ্রণায় আমি পুতুলটি তক্ষণাৎ ফেলে দেই।
পুতুলটি ফেলে দেয়ার পর আমি যা দেখলাম তাতে আমি নিজের চোখের উপর বিশ্বাসই করতে পারলাম না। আমি দেখলাম
আমার সামনেই পুতুলটা বীভত্স রাক্ষসীর রৃপ নিল। আরও ভয় পেলাম যখন আমি তার পায়ের দিকে খেয়াল করলাম। তার পা উল্টো ছিল।
এইসব দেখে আমার হাত-পা বরফ এর মতো জমে গেল। আমি খুব জোরে চিৎকার করতে চাইলাম। কিন্তু আমার মুখ থেকে কোন শব্দ বের হল না।
যখন পুতুলরৃপী রাক্ষসীটি আমার খুব নিকটে চলে আসে আমি ভয়ে প্রাণপণে খুব জোরে দৌড়ানো শুরু করি। অন্ধকারে আমি
কোথায় যাচ্ছি তা আমি মোটেও খেয়াল করিনি। হঠাৎ করে দূরে আমি একটি বাসা দেখতে পাই। আমি সাহায্যের জন্য সেই বাসার
দিকে দৌড়াতে থাকি। কিন্তু আমি যতই দৌড়ে যাচ্ছি না কেন আমি বাসার নিকটে পৌছাতে পারি না। আমি প্রায় ২ ঘন্টা দৌড়ানোর
পরও আমি যখন সেখানে পৌছাতে ব্যর্থ হই,আমি বেঁচে থাকার সকল ইচ্ছে হারিয়ে ফেলি।অনেক ক্লান্ত হওয়ার ফলে আমি আর
দৌড়াতে পারিনা,মাটিতে পড়ে যাই। ঠিক তখনই সেই রাক্ষসিনী আমার নিকট চলে আসে। আমি উঠে দাড়াতে চেষ্টা করি কিন্তু
অনেক ক্লান্ত হওয়ায় আমার শরীরে এক ফোঁটা দাড়ানোর শক্তি ছিল না।তখন আমার চোঁখ থেকে পানি পড়তে থাকে। হয়তো আর
কখন ও মা’র লাবণ্যময়ী চেহারা দেখতে পারব না। ততক্ষণে রাক্ষসিনী আমার খুব নিকটে চলে আসে আর আমার গলা চেপেঁ ধরে।
আমি তার হাত আমার গলা থেকে ছাড়ানোর প্রচুর চেষ্টা করার পর ও ব্যর্থ হই। হঠাৎ করে আমার মা’র কথা মনে পড়ে,যে প্রেতাত্মারা
আগুন সহ্য করতে পারে না। আমি তাই আমার পকেট থেকে লাইটার বের করার যথাসম্ভব চেষ্টা করি কিন্তু ততক্ষণে আমার শরীরে
অক্সিজেনের অভাবে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। আমার প্রচুর চেষ্টার পর অবশেেষ লাইটার বের করতে পারি। আমি লাইটারটি
জ্বালিয়ে রাক্ষসিনীর হাতে আগুন জ্বালিয়ে দেই। তক্ষণাৎ সে বিকট চিৎকার করতে করতে অদৃশ্য হয়ে যায়। পরক্ষণে আমি জ্ঞান
হারিয়ে ফেলি । জ্ঞান ফিরার পর আমি নিজেকে হাসপাতালের বেড এ দেখতে পাই।