অভিশপ্ত ডায়েরী

অভিশপ্ত ডায়েরী

আমি ইমিলিয়া ব্রাউন।আমার বাবা ফ্রেড ব্রাউন একজন ফরেস্ট অফিসার। আজকে আমি আপনাদের যেই ঘটনাটির

কথা বলবো সেটি যখন ঘটেছিলো তখন আমি সেভেন স্টান্ডার্ডে পড়ি। তখন আমার বাবার অস্টিন থেকে ডেনবার এ পোস্টিং হয়।

এখানে এসে আমি এখানখার রিচেল বি নয়েল স্কুলে ভর্তি হই। নতুন স্কুলে পড়ার চাপ খুব বেশি ছিল। কিছুদিন পরেই আমার পরীক্ষা।

তাই অনেক রাত জেগে পড়তাম। আমি আবার দিনের বেলা পড়তে পারি না। তাই আমার আম্মু এনি আমার জন্য কফি

বানিয়ে রাখতেন যেনও আমি রাতে খেটে পারি। যাই হোক, সেদিন ছিল ফেব্রুয়ারি মাসের ১১ তারিখ।

বরাবরের মতই সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আমি পড়া শুরু করলাম। ২ দিন পরে স্কুলে একটা মডেল টেস্ট পরীক্ষা।

তাই, ঠিক করেছিলাম পড়া একদম শেষ করে ঘুমাব। তার জন্য দরকার হয় ভোর পর্যন্ত পড়বো। তখন আনুমানিক রাত ৩ টা।

পড়তে পড়তে মাথা কেমন যেনও ভারী ভারী ঠেকছিল। তাই ভাবলাম একটু রেস্ট নিয়ে নেই। আমার বারান্দায় একটা ইজি চেয়ার পাতা আছে।

আমি বিকেলে অনেকটা সময় সেখানে কাটাই। বাবা আমার পছন্দের কথা মনে করেই চেয়ারটি বারান্দায় বসিয়েছিলেন।

তাছাড়াও আমাদের বাসা ছিল ইডিলিয়া স্ট্রীটে যা পার্কফিল্ড লেক এর খুব কাছে ছিল। এই লেক সম্পর্কে আমি এখানকার মানুষের মুখে নানা শুনেছি ।

যাই হোক, আমি বারান্দায় গিয়ে ইজি চেয়ারে বসলাম। পড়ার মধ্যে বিরতি নিলে আমি সাধারণত চোখ বন্ধ করে এতক্ষণ যা যা

পড়েছি তা মাথার মধ্যে একবার রিভিশন দেয়ার চেষ্টা করি। বরাবরের মতই আমি ইজি চেয়ারে শুয়ে মাথার মধ্যে তখনের পড়াগুলো নিয়ে ভাবছিলাম।

এমন করে প্রায় মিনিট ৫-৭ যাবার পর হটাত একটা আওয়াজে আমি চমকে চোখ মেলে তাকাই। যাই হোক, আমি চমকে চোখ মেলে তাকিয়ে

এদিক সেদিক দেখলাম। কিছুই চোখে পড়লো না। অথচ আমি স্পষ্ট একটা শব্দ পেয়েছি। শব্দটা কিসের ছিল জানি না।

তবে অনেকটা কোমল গলায় কাউকে ডাকলে যেমন আওয়াজ হয় তেমন আওয়াজ। আমাদের বাড়ির আসে পাশেই কোথাও হয়েছে।

আমরা ২ তালায় থাকতাম, তাই বারান্দা থেকে উকি দিলে নিচের দিকটা স্পষ্ট দেখা যেত। আমি প্রথমে ভাবলাম বারান্দার দরজা

আটকে দিয়ে রুমে চলে যাই। কিন্তু পরক্ষনেই মনের মধ্যে কেমন যেনও একটা খুঁতখুঁতানি চলতে লাগলো। কিসের আওয়াজ ছিল সেটা?

যদি কেউ আমার নাম ধরে ডাক দেয় তাহলে এতো গভীর রাতে কেন আসবে? মাথায় কিছুই ঢুকছিল না। বারান্দার দরজা আটকে দিয়ে রুমে ঢুকলাম।

ভাবলাম পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে ভুলে যাবো। কিতু ১০ মিনিটের মত শুধু শুধুই বই নিয়ে বসে থাকলাম।

মাথার মধ্যে চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। অবশেষে ঠিক করলাম আবার যাবো বারান্দায়। সাহস করে দরজা খুলে বারান্দায় দাঁড়ালাম।

আসে পাশে আবারো ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম। নাহ, কেউ নেই। ধীরে ধীরে গিয়ে বসে পড়লাম ইজি চেয়ারটায়।

অন্যান্য দিন যখন বসি তখন মনটা খুব শান্ত হয়ে যায়। আজকে হল উল্টো। ইজি চেয়ারে বসার সাথে সাথে বুক কেমন যেনও কেঁপে উঠলো।

আমি ইজি চেয়ার ছেড়ে রুমে গিয়েছি প্রায় মিনিট দশেক হবে। এখনও ডেনভার শহরে শীত ভালোই আছে।

যেই সময়ের ব্যবধানে আমি চেয়ারে আবার ফিরে এসেছি, তাতে চেয়ারটা ঠাণ্ডা হয়ে যাবার কথা। কিন্তু, চেয়ারে বসা মাত্রই অনুভব

করলাম সেটা অনেক গরম। যেনও এই মাত্র কেউ চেয়ারটা থেকে উঠে দাঁড়ালো। বুকের মধ্যে হৃৎপিণ্ড ধক ধক করে হাতুরির মত পিটাচ্ছিল।

চোখ বন্ধ করে জিশাসকে মনে মনে ডাকতে লাগলাম। তখন অনেক ছোট ছিলাম, কিন্তু তারপরও বলতে গেলে আমার বয়সী

অন্য যে কোনও মেয়ের চেয়ে আমার সাহস বেশি ছিল। এমনভাবে প্রায় মিনিট দুয়েক কাটল। হটাত আমাকে চমকে দিয়ে কে

যেনও আমার নাম ধরে ডেকে উঠলো। ভয়ে শরীরের পশমগুলো দাঁড়িয়ে গেছে। এবার আমি স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি। অনেকটা

বাতাসে ভর করে যেনও আসছিলো কথাগুলো। “ইমিলিয়া”, “ইমিলিয়া” “দেখো”, এমন বিক্ষিপ্ত কয়েকটা শব্দ। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে

চোখ মেললাম। এবারো কিছু চোখে পড়লো না। তাকালাম বাইরের দিকে। আসে পাশের বেশিরভাগ বাসায় আলো নিভানো।

শুধু দূরে এফ ব্লকে একটা বাড়িতে আলো জ্বলছে। হটাত মনে সন্দেহ হল, আওয়াজটা নিচ থেকে আসছে না তো? আমাদের

বারান্দায় কোনও গ্রিল লাগানো ছিল না। তাই ইচ্ছে করলেই ঝুঁকে নিছতা দেখা যেত। আমি সাহস করে, জিশাসের নাম নিয়ে

বুকে ফুঁ দিয়ে বারান্দার ওয়ালে ঝুঁকে নিচে উঁকি দিলাম।

নিচে কলিংবেল লাগানো, তাই রাতে সুবিধা হবে ভেবে একটা লাইট সবসময় জ্বালানো থাকে। সেই আলো মেইন গেটের সেখান

থেকে শুরু হয়ে গেটের সামনের অনেকটুকু রাস্তা পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। সেই আলোয় আমি যা দেখলাম তা জীবনেও ভুলার মত নয়।
আমি উঁকি দিয়েই দেখলাম নিচে কে যেনও ঠিক আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। যেনও জানত আমি এই মুহূর্তে উঁকি দিবো।

ঐ জিনিসটা এমন জায়গায় দাঁড়ানো ছিল যে গেটের আলোটা প্রায় তার মুখের উপর এসে পড়েছে। ওর মুখটা দেখে ভয়ে কেঁপে উঠলাম।
ছেলে না মেয়ে তা পরিষ্কার করে বোঝা যাচ্ছিল না। আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো, এরপর আমার দিকে একটা হাত বাড়িয়ে দিল।

আমি ভয়ে জ্ঞান হারানোর মত অবস্থা। চিৎকার করতে চাচ্ছি, কিন্তু মুখ দিয়ে কোনও আওয়াজ বের হচ্ছে না।

এবার দেখলাম সেই আকৃতিটি আস্তে আস্তে হাওয়ায় ভেসে আমার দিকে আসতে লাগলো। আমি পাগলের মত চেষ্টা করছি চিৎকার

দেয়ার জন্য কিন্তু পারছি না। দৌড়ে যে ভেতরে চলে যাবো তারও কোনো উপায় নেই।সেই হাওয়াটি আমার ভিতর মিলিয়ে গেল।

সেই শক্তিটি আমাকে নিয়ন্ত্রিত আর চালিত করতে লাগল। সেই শক্তিটি আমাকে বারান্দা থেকে সিড়ি বেয়ে নিচে গেল।

সেই শক্তিটি আমাকে সম্মোহিত করে আমাকে যেন নিয়ে যাচ্ছে।আমার ইচ্ছাশক্তি না থাকা সত্ত্বেও শক্তিটি আমাকে আমার বাসা থেকে বের করে আনল।

আমি বাসা থেকে বের হয়ে ইডিলিয়া স্ট্রীটে হাটছি।আমি কোথায় যাচ্ছি,কেন যাচ্ছি কোন কিছুই বুঝতে পারলাম না শুধু এইটুকু বুঝলাম

আমি পার্কফিল্ড লেকের দিকে যাচ্ছি।এবং সেই শক্তিটির প্রভাব উপেক্ষা করে ফিরে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।

আমি প্রায় ৩০ মিনিট জঙ্গলে হাটলাম। এতক্ষণ চলার পর অবশেষে আমি লেকের পাশে এসে পৌছালাম।পৌছানোর পর আমি লেকটিকে দেখলাম।

রাতের সময়ও লেকটিকে দেখতে অপরুপ লাগছিল।যখন আমি লেকটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছিলাম ঠিক তখনই কেউ

আমাকে সজোরে ধাক্কা মারল এবং আমি লেকে পরে গেলাম।আমি সাতার কাটতে পারতাম না।তাই খুবই ভয় পেলাম।

কিন্তু কিছুক্ষণ পরই আমি টের পানির ভিতর থেকে কেউ যেন আমাকে টেনে সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।লেকের ঠিক মাঝামাঝি আসার পর

আমি টের পেলাম দড়ির মত কিছু আমার পায়ে পেচিঁয়ে আছে।কিছুক্ষণ পর পানির ভিতর সেই দড়িটি টান দিয়ে আমাকে পানির ভিতর নিয়ে গেল।

লেকের খুব গভীরে যাওয়ার পর লেকের তলদেশে আমি একটি কালো রংয়ের ট্রাংক দেখতে পেলাম।তারপর সেই ট্রাংকটিকে আমি লেকের

পানি থেকে তুলে তীরে নিয়ে গেলাম।ততক্ষণে আমি খুব ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমি অনুভব করলাম আমার অপর এখন আর তার প্রভাব নেই।

তাই আমি সেখান থেকে দৌড়ে যেতে লাগলাম। ঠিক তখনি আমি মাটিতে পড়ে গেলাম। যেন কেউ আমাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিল।

তারপর আমি শুনতে পেলাম “ইমিলিয়া” “ইমিলিয়া” “খুলো”।তখন আমি বুঝতে পারলাম সেই শক্তিটি চাইছে আমি যেন ট্রাংকটি খুলি তাই

আমি লেকের তীরে ফিরে গেলাম। আমি ট্রাংকটি খুললাম। খুলার পর আমি ট্রাংকে একটি নীল ডায়েরী দেখতে পেলাম।

ডায়েরিটি আমি নিয়ে আমি বাসার দিকে রওয়ানা করলাম।বাসায় যাওয়ার সময় আমি প্রচুর ক্লান্ত ছিলাম।আমার কাপড় ভেজা থাকায়

ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিলাম।আমি হাটতেও পারছিলাম না।মনে হচ্ছিল বাসায় আর কখনো পৌছাতে পারব না।অবশেষে প্রচুর কষ্টে আমি বাসায় পৌছলাম।

আমি ভেবেছিলাম বাসায় ঢুকার সময় কেউ হয়তো দেখে ফেলবে।আম্মু দেখলে তাকে সত্য ঘটনা বললে সে আমাকে উন্মাদ ভাবতে পারে।

কিন্তু আম্মু,আব্বু দুজনই ঘুম ছিল।বাসায় পৌছে এতই ক্লান্ত ছিলাম যে আমি ভেজা কাপড় পরেই ঘুমিয়ে পরলাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম আম্মু পাশে বসে। আম্মু বলল,“ঘুমিয়ে থাকো লক্ষ্মীটি, তোমার শরীরে জ্বর।তুমি অপেক্ষা কর।

আমি তোমার জ্বর মাপার জন্য থার্মোমিটার নিয়ে আসছি।”আম্মু কিছুক্ষণ পর থার্মোমিটার নিয়ে এসে আমার জ্বর মাপল।

জ্বর মেপে দেখলেন ১০৩ ডিগ্রী জ্বর।আম্মু বললেন,“আমি এক্ষণি এমারজেন্সী নাম্বারে কল দিয়ে তোমার জন্য একটা

ফিজিশিয়ানকে বাসায় ডাকি আর তোমার বাবাকেও কল করি যেন সে দ্রুত বাসায় এসে পরে।”আমি ২ দিন যাবৎ ভীষণ

অসুস্থ ছিলাম।২ দিন শয্যাত্যাগ করে উঠতেও পারিনি।আম্মু স্কুলে কল করে আমার টিচারকে ইনফর্ম করল যে অসুস্থতার

জন্য আমি পরীক্ষা দিতে পারব না।সুস্হ হওয়ার পর আমি আমার টেবিলের ড্রয়ার থেকে ডায়েরীটা আনতে গেলাম কিন্তু

সেখানে কোন ডায়েরী ছিল না।আমি আমার রুমের সব জায়গায় ডায়েরীটা খুঁজতে লাগলাম কিন্তু পেলাম না।কিছুদিন পর্যন্ত

আমি ডায়েরীটা খোঁজার পরও আমি যখন ডায়েরীটা পেলাম না আমি ভাবলাম যা হয়েছে হয়ত ভালো হয়েছে।কিছুদিন পর্যন্ত

আমি পড়াশুনা নিয়ে এত ব্যসত ছিলাম যে ডায়েরীর ব্যাপারটি আমি প্রায় ভুলেই গেছি।

একদিন প্রায় রাত ৩ টার দিকে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল।এপাশ ওপাশ করার পর ও ঘুম আসলো না। তাই ভাবলাম বারান্দায় যাই।

বারান্দায় আমি যখন ইজিচেয়ারে বসে রেস্ট নিচ্ছিলাম তখন আমি একটি অপরিচিত কণ্ঠ শুনতে পেলাম।আওয়াজটা কিচেেনর

দিক থেকে আসছিল।তাই আমি কিচেন এ গেলাম।শুনতে পেলাম কেউ যেন বলছে,”পরশু দিনই সেই দিন যার জন্য আমি শত

বছর অপেক্ষা করেছি।পরশু দিনই আমি আমার উদ্দেশ্যে সফল হব।”কে সেখানে জানতে যখন আমি কিচেনে ঢুকলাম তখন

দেখলাম আম্মু একা দাড়িয়ে।আমাকে দেখে আম্মু হচকিয়ে গেল।“কিছু লাগবে,মামনি?”আমি বললাম,“হ্যা,আমার রুমে পানি নেই।

”আমি পানির বোতল নিয়ে রুমে চলে এলাম।ভাবতে লাগলাম, কিচেন থেকে কার কণ্ঠ শুনতে পেলাম।আর পরশুদিনই কি হতে যাচ্ছে?

এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিন সকালে টেবিলে ব্রেকফাস্ট করার সময় বাবা আর আমি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছিলাম।

বাবা বলল,“কেমন কাটছে দিনকাল?পড়াশুনা কেমন চলছে? আমি বললাম,“ভালো,আমার টেস্ট এর রেজাল্ট দিয়েছে।

আমি ফোর্থ হায়ারিং স্কোর করেছি। বাবা বলল,“ভালো কিন্তু পরবর্তীতে আরও ভাল করবে।আমি বললাম,“অবশ্যই করব।

”আমি বললাম,“তোমার লুসি কেমন আছে?”বাবা বলল,“সে খুব ভালো তার বাচ্চাগুলো তার মত ভালো শিকারী হয়েছে।

”আমি বললাম,“খুবই অবাক বিষয়,কিছুদিন আগেই তো দেখলাম তারা জন্ম নিল।”বাবা বলল,“এর চেয়ে ও অবাক জিনিস

আমি গতকালকে ফরেস্টে দেখলাম।দেখলাম প্রায় শখানেক বাদুড় মাটিতে পড়ে আছে এবং তাদের কারো চোখ নেই যেন কেউ তুলে ফেলেছে।

ব্রেকফাস্ট করার পর আমি সারাদিনব্যাপী ভাবতে লাগলাম যে কিছু অশুভ হতে চলেছে যা আমরা বুঝতে পারছিনা।

আমার সেদিন লেকের ঘটনাটিও বিরাট কোন বিপদের ইঙ্গিত দিচ্ছে।রাত ১১ টার পর আমি যখন ঘুমাতে যাব তখন হঠাৎ

একটা দমকা বাতাসে আমার দরজা খুলে গেল।তাই আমি যখন দরজা বন্ধ করতে গেলাম আমি অনুভব করলাম কিছু যেন পুড়ছে।

তাই মনে মনে ভাবলাম হয়ত কিচেনে কিছু পুড়ছে।তাই আমি দৌড়ে গেলাম য়েয়ে দেখলাম স্টোভে কিছুই নেই।

কিন্তু সেই গন্ধটা কিচেন থেকেই আসছে।তখন হঠাৎ করে আমার হাতের দিকে চোখ পরতেই দেখলাম আমার আংটিটা নেই।

তাই ফ্লোরে আংটি খুঁজতে লাগলাম।ভাবলাম হয়ত কার্পেটের নিচে চলে গেছে।তাই কার্পেট উঠালাম আমি।কার্পেট উঠানোর পর

আমি যা দেখলাম তা দেখে আমি নিজ চোখে বিশ্বাস করতে পারলাম না। দেখলাম একটি বেসমেন্ট। এই গুপ্ত কক্ষটি এতদিন

আমাদের দৃষ্টির অগোচরে ছিল।তার চেয়েও বেশী ভয় পেলাম

আরও বেশী ভয় পেলাম বেসমেন্ট এর চারদিক রক্ত দেখে।তাই আমি অনেক ভয় পেয়ে গেলাম।কিন্তু পরক্ষণে ভয় কাটিয়ে ভাবলাম,

সেদিন যেমন আমার সাথে লেকে ঘটনা ঘটেছিল তেমন কেউ বিপদে পরল নাকি? তাই আমি দ্রুত বেসমেন্টের নিচে গেলাম।

যেয়ে যা দেখলাম তাতে আমি স্তম্ভিত হয়ে পরলাম।দেখলাম একটি বিরাট অগ্নিকান্ড আর তার সামনে দাড়িয়ে মন্ত্র পড়ছে আর তাতে

অনেক গুলো চোখ সেই আগুনে পুড়ছে আর যে এসব করছে সে আর কেউ না স্বয়ং আমার মা।আমি এসব দেখে ভয়ে পাথর হয়ে গেছি।

আর আমার আম্মুর চোখ বন্ধ করে ছিল তাই সে আমাকে দেখতে পাচ্ছিল না।একটু পরই দেখলাম আমার আম্মুর সামনে সেই নীল ডায়েরীটি।

আর সে ড়ায়েরীটা শূন্যে ভাসছে।এবং সে তারপর সে নিজের হাতে একটি বুচার নাইফ নিল এবং হাত কেটে ফেলল এবং রক্ত

সেই ডায়েরীতে পরতে লাগল।এই দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে আমি চিৎকার করলাম।আর তার নিকট দৌড়ে গেলাম।আর আমার আম্মু

আমাকে দেখতে পেয়ে তার হাতে থাকা বুচার নাইফটি দিয়ে আঘাত করতে চেষ্টা করল কিন্তু আমি সময়মত সরে গিয়ে নিজেকে বাচিঁয়ে ফেললাম।

কিন্তু সে থামল না আমাকে আঘাত করার জন্য আমার পিছে আসতে লাগল আর আমি প্রাণপ্রণে দৌড়াতে লাগলাম আর বলতে লাগলাম,

“আম্মু আমি তোমার ইমিলিয়া,তুমি কেন আমাকে মারতে চাচ্ছো?”আম্মু বলল,“আমি তোর আম্মু না,আমি মিয়া,বুঝেছিস?আজকেই

তোর জীবনের শেষ দিন।”এই বলে সে আমাকে ধরে ফেলল। আমি চিৎকার করে বলতে লাগলাম,“আমি ইমিলিয়া,আম্মু,আমি তোমার মেয়ে।”

আম্মু আবার বলল,“আমি মিয়া,তোর আম্মু না।তুই আমার ডায়েরীটা এনে আমাকে সাহায্যে করেছিস।তাই তোকে

আমি পুরস্কারস্বরুপ কম যন্ত্রনাময় মৃত্যু দেব।”এই বলে আম্মু বুচার নাইফটি ফেলে আমার গলা দুই হাত দিয়ে চেপে ধরল।

কিছুক্ষণ এর মধ্যে আমার শরীরে অক্সিজেনের অভাবে আমার প্রায় দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। আমি তার দুই হাত ছাড়ানোর প্রচুর চেষ্টা করি।

কিন্তু আমি ব্যর্থ হই।তাই আমি বললাম,“ঈশ্ব-শশর তুম-মি আমার আম্মু-কে রক্ষা কর।”ঠিক তখনি আমার আম্মু আমার গলা থেকে হাত নামিয়ে ফেলল।

আর বলতে লাগল,“আমাকে মাফ করো।এই বলতে বলতে আম্মু অজ্ঞান হয়ে পড়ল।আমি কাদঁতে লাগলাম,দেখলাম

আম্মুর হাত থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে।তাই আমি দ্রুত ফার্স্ট এইড বক্স এনে আম্মুর হাত ব্যান্ডেজ করে দিলাম।তারপর বেসমেন্ট থেকে

দৌড়ে যেয়ে আব্বুকে কল করে বললাম,”আব্বু দ্রুত বাসায় এসো আম্মু অসুস্থ।”আব্বু দ্রুত বাসায় আসল।আমাকে প্রশ্ন করল চিন্তিত কণ্ঠে,

“তোমার আম্মু কোথায়?”আমি বললাম,“আম্মু বেসমেন্টে।আব্বু বলল,“কিসের বেসমেন্ট?কোথায়?দেখ ইমিলিয়া এটা যদি তোমার দুষ্টুমি হয়,

আই এম নট গোয়িং টু ফরগিব ইউ।”আমি কেঁদে ফেললাম আর বললাম,“আমি সত্য বলছি,আসো আমি তোমাকে বেসমেন্টে নিয়ে যাই।”

আমি কিচেনের দিকে গেলাম আমার আব্বুও আমার সাথে আসতে লাগল।আব্বু বেসমেন্ট দেখে অবাক হয়ে গেল।

আমি আব্বুকে নিচে আম্মুর কাছে নিয়ে গেলাম।আব্বু নিচে চারপাশে অগ্নিকুন্ড আর রক্ত দেখে বিস্মিত হয়ে গেল।

আমি আর আব্বু দুজন মিলে আম্মুকে বেডরুমে নিয়ে গেলাম।আব্বু কল করে একজন ডাক্তার ডেকে আনল।

ডাক্তার এসে বলল আম্মুর প্রচুর রক্তক্ষয় হয়েছে।তাই তাকে শীঘ্রই হসপিটালে এডমিট করতে হবে।আব্বু আম্মুকে হসপিটালে নিয়ে গেল,

সাথে আমিও গেলাম।ডাক্তাররা যখন আম্মুকে পরীক্ষা করছিল আব্বু আমার কাছে আসল।আব্বু আমাকে প্রশ্ন করল,“কি হয়েছিল,ইমিলিয়া?

তোমার গলায় এই দাগ কিসের?আমি যা দেখলাম বেসমেন্টে সেসব কি ছিল?”আমাকে সব খুলে বল?”আমি আব্বুকে লেকের ঘটনা,

ডায়েরীর ব্যাপারে আর বেসমেন্টে যা যা ঘটল সবই খুলে বললাম।আব্বু আমাকে কিছু বলতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই নার্স এসে

ভয়ভীত কণ্ঠে বলল,“আপনাদের রোগী!!!জলদি আসুন।”আমি আর আব্বু দৌড়ে গেলাম যেয়ে দেখলাম আম্মু বলছে,“কাউকেও ছাড়বো না,সবাই মরবে।

”আমাকে বলল,“তুইও মরবি।”আম্মু আমার নিকট আসার চেষ্টা করল কিন্তু তার হাত পা বাধা ছিল তাই পারল না।

আব্বু আম্মুর এই অবস্হা দেখে সহ্য করতে পারল না।এই প্রথম আমি আব্বুর চোখে পানি দেখলাম।আব্বু বলল,

“ইমিলিয়া সেই ডায়েরীটা কোথায় যা তুমি পেয়েছিলে হয়ত তা কোন কাজে আসতে পারে।” আমি বললাম,“বেসমেন্টে আছে।

”আব্বু বলল,“চল আমরা বাসায় যাই।”আমি আর আব্বু বাসায় যেয়ে ডায়েরীটা খুঁজে বের করলাম।আমি আর আব্বু ডায়েরীটা খুললাম

পড়ার জন্য কিন্তু আমরা পড়তে পারলাম না কারন ডায়েরীতে লেখা ভাষাটি অপরিচিত ছিল।আমার আম্মু নানারকম ভাষা জানতো

তাই সে পরতে পেরেছিলেন। এখন আমি বুঝলাম যে কেন সেই অশরীরীটি ডায়েরীটা আম্মুর কাছে নিয়ে গেল আমার কাছে না।

আমি হতাশ হয়ে আব্বুকে বললাম,“আম্মুকি কখনো ঠিক হবে না?”আব্বু বলল,”যখন কোন পথ দেখা যায় না,তখন সর্বদাই

একটি পথ খোলা থাকে,ঈশ্বরের পথ।চল আমরা গীর্জায় যাই,প্রার্থনা করতে।”আমি আর আব্বু গীর্জায় গেলাম আর সাথে ডায়েরীও

নিয়ে গেলাম।আব্বু গীর্জার ফাদারকে সব খুলে বলল এবং ডায়েরীটাও দেখাল।তিনি বললেন:”খুব অশুভ কিছু ঘটতে চলেছে,

তোমাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা সমূহ সবেই শুরুমাত্র…..সবেই শুরু!!! ”

আমার আব্বু বলল,“আপনি এমন কেন বলছেন?আপনি যদি আমাদের যেকোন সাহায্য করতে পারেন,প্লিজ করুন।

”আমি ঐই বিষয়ে সবকিছু জানিনা কিন্তু একজন আছে যে আপনাকে সাহায্য করতে পারবে। আব্বু বলল,“কে সে?

আপনি কি আমাকে তার কাছে নিয়ে যাবেন?”ফাদার বলল,“তিনি একজন প্রিস্ট।তিনি খুব বৃদ্ধ তাই চার্চে আসেন না।চার্চের পিছনের

একটি ছোট বাসায় থাকে।চলেন আমি আপনাদের তার কাছে নিয়ে যাই।”আমরা তার সাথে সাথে চলতে লাগলাম চার্চের পিছনে।

যেয়ে দেখলাম পুরাতন দিনের একটি আউট হাউস।ফাদার আমাদের বললেন,“আপনারা এখানে অপেক্ষা করুন।আমি আসছি।

”কিছুক্ষণ পর তিনি আবার আসলেন এবংআমাদের ভিতরে আসতে বললেন।আমরা ভিতরে যেয়ে দেখলাম প্রায় ৮০ বছরের একটি

বৃদ্ধ লোক হুইলচেয়ারে বসে আছে।আমার আব্বুকে দেখে তিনি ফাদারকে বললেন,“ইনি কি সেই ব্যক্তি যার কথা তুমি আমাকে একটু

আগে বলেছিলে?”ফাদার বললেন,“জ্বী,তিনিই সেই সাহায্যপ্রার্থী।”আমার আব্বু তাকে সব ঘটনা বলল।আমি তাকে সেই ডায়েরীটাও দেখালাম।

তিনি ডায়েরীটা দেখে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন এবং বললেন,“এটি অভিশপ্ত,ভীষণ অভিশপ্ত তোমরা এই ডায়েরী কেন নিয়ে আসলে?

”আব্বু বললেন,“আপনি এই ব্যাপারে কিছু জেনে থাকলে,প্লিজ বলুন।”প্রিস্ট বললেন,“ঠিক আছে।প্রায় ১০০ বছর আগে আজকের দিনের

ডেনভার শহরের বেশিরভাগ স্থানই ঘন জঙ্গল ছিল।এখানে খুবই কম জনবসতি ছিল।সেই সময়ও এই চার্চ ছিল।অনেক দূরদূরান্তে থেকে

মানুষ আসতো।তখন এখানে এক নতুন দম্পতি আসলো।তার মধ্যে মেয়েটি রাশিয়া থেকে এসে এসেছিল।তার নাম মিয়া ছিল আর ছেলেটির

এলেক্স।তৎকালীন সময়ে আমেরিকা-রাশিয়া পরস্পর বিরোধী হওয়ায় এখানকার স্থানীয়রা তাদের খুবই অপছন্দ করতো।তাদেরকে কেউ

কোন উৎসবেও নিমন্ত্রণ দিত না।সবাই এড়িয়ে চলতো।তবুও তারা দুজন অনেক সুখে ছিল কারণ তারা একে অপরকে অনেক ভালবাসতো।

কিন্তু মাঝে মাঝে এলেক্স খুবই মনমরা হয়ে যেত এখানকার মানুষের ব্যবহার এর জন্য তখন মিয়া তাকে বুঝাতো,সান্ত্বনা দিত যদিও মিয়াও

খুব কষ্ট পেত।কারন সানডেতে সে যখন চার্চে যেতো অনেকেই বিরুপ মন্তব্য করত।একদিন এলেক্স খুব অসুস্থ ছিল।মিয়া খুবই চিন্তিত হয়ে উঠলো।

সেই সময় অনেক রাত ছিল তাই মিয়া পাশের এক ডাক্তার এর বাসায় গেল।সেদিন ডাক্তারের স্ত্রী বাসায় ছিল না।মিয়া ডাক্তারকে যেয়ে বলল,

“আমার স্বামী এলেক্স খুব অসুস্থ এবং প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন।”ডাক্তার মিয়াকে বলল,”যে আমি তোমাকে আমি কেনইবা সাহায্য করব

আর আমিইবা কি পাবো?”মিয়া বলল,“আমার পক্ষে যা সম্ভব তাই করে আমি আপনাকে সাহায্য করব,প্লিজ এখন চলুন।”ডাক্তার বলল,“ঠিক

আছে।তুমি যখন এত অনুরোধ করছো আমি তোমাকে সাহায্য করব।কিন্তু তার আগে আমার একটি কাজ করে দিতে হবে।”মিয়া বলল,“অনেক

অনেক ধন্যবাদ। আপনি বলুন,আমি এক্ষণি করে দিব।”ডাক্তার বলল,“আমার স্ত্রী জেনিফার বাসায় নেই তাই আজ রাতটি তুমি আমার সঙ্গ

দিলে কেমন হয়?”মিয়া খুবই বিস্মিত হয় আর ভাবে পৃথিবীটা খুবই নির্দয়ী।একজন অপরজনের অসহায়ত্মকে কাজে লাগিয়ে নিজের স্বার্থ

উদ্ধারে সর্বদাই তৎপর।ডাক্তার বলল,“কি ভাবছো?ইউ ডন্ট হাভ মাচ্ টাইম।টেল মি আর ইউ রেডি অর নট ?”এই বলে সে এক গ্লাস স্কচ দিলো মিয়াকে ।

মিয়া তার হাত থেকে গ্লাসটি নিলো আর তার চেহারায় স্কচ ঢেলে দিল।আর বলল ,“তোমার মত মানুষের জন্য আজ সমগ্র মানবজাতি

কলঙ্কিত।কিন্তু এখনো পৃথিবীতে ভালো মানুষ আছে এবং তাদের সাথে ইশ্বর আছে।”এই বলে মিয়া চলে গেল।কিন্তু ডাক্তারটি সাথে সাথে

ফন্দি আটল তার অপমানের বদলা নেয়ার জন্য।সে বলল,“আমাকে মাফ কর,মিয়া।যা বললাম সব নেশার ঘোরে।চল আমি তোমার সাথে চলি।

”অগত্যা কোন উপায় না পেয়ে মিয়া রাজি হল।বাসায় পৌছে ডাক্তার এলেক্সকে পরীক্ষা করতে লাগল।সে মিয়াকে বলল,“আমাকে একটু গরম

পানি এনে দাও।”মিয়া তাই কিচেন যেয়ে স্টোভেগরম পানি চড়াল।ততক্ষণে ডাক্তার জ্ঞানহীন অবস্থায় পরে থাকা এলেক্সের বুকে ছুরি মারল।

আর তার রুমের ড্রয়ারে কালো জাদুর একটি বই রেখে পালিয়ে গেল।

মিয়া এসে দেখে এলেক্সের বুকে ছুরি বিঁধে আছে।ঠিক সেইসময়ই তার পুরো জীবন ধূলিস্মাত হয়ে যায়।সে এলেক্স এর কাছে আসে।

আর ততক্ষনে ডাক্তার পাড়া-প্রতিবেশি সবাই এর কাছে যেয়ে বলে মিয়া শয়তানের উপাসক সে কালো জাদু করে।তারা সবাই আগে

থেকেই মিয়াকে তেমন পছন্দ করতো না।তাই অনেকে তার কথা মেনে তায় কথা মেনে তার বাসার দিকে যেতে থাকে।

আর সেই দিকে মিয়া এলেক্সের বুকে বিঁধে থাকা ছুরিটি বের করে তাকে বাচাঁনোর জন্য কিন্তু তাকে বাচাঁতে পারে না।পরক্ষণে সবাই

এসে দেখে মাটিতে ছুরি পরে।এলেক্স রক্তাক্ত অবস্থায় এবং মিয়া তার পাশে বসে কাদঁছে।তখন ডাক্তার সবাইকে বলে,“আপনারা

সবাই নিজ চোখে দেখে নেন,আমি যা বলছিলাম সব সত্য।আপনারা তার রুমে তল্লাশি চালান।প্রমাণ পেয়ে যাবেন সে একটা ডাইনি।

”ডাক্তারের এসব কথা শুনে মিয়া বুঝে যায় এলেক্সের মৃত্যু এর জন্য সেই দায়ী।তাই প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সে রক্তে মাখা ছুরিটি তুলে

নেয় এবং ডাক্তারের পেটে ঢুকিয়ে দেয়।ঘটনার আকস্মিকতায় কেউ কিছুই করতে পারে না।কিছুক্ষণ পর পুলিস আসে এবং সবার

থেকে সাক্ষ্য গ্রহন করে এবং মিয়াকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।মিয়া শোকে পাথর হয়ে যায়।তাকে কারাগারে প্রেরণ করি হয়।

সেই প্রিজনে তার সাথে আর একটি বয়স্ক মহিলাও ছিল।মহিলাটি তাকে বলল,“এই মেয়ে,তোমার নাম কি?তোমাকে এখানে কেন

আনা হয়েছে?কি করেছ,তুমি?নাকি বিনা দোষে?”কিন্তু মিয়া একটি প্রশ্নেরও উত্তর দেয় না।চুপ করে থাকে।যেন সে কিছুই শুনতে পায়নি।

এভাবে ২ দিন পর্যন্ত মিয়া চুপ করে থাকে।মহিলাটি তাকে যতই প্রশন করে না কেন সে কোন জবাবই দেয় না।পরে সে প্রহরীকে প্রশ্ন করে,

“মিয়াকে কোন দোষে আনা হয়েছে?”প্রহরী বলে,“সে তার স্বামিকে খুন করেছে এবং আরও একজনকে খুনের দায় আছে এবং অনেকে বলে

সে কালো জাদু করে কারন পুলিস তার রুমে তল্লাশি চালিয়ে কালো জাদুর বই পায়।” বুড়ো মহিলাটি মিয়াকে বলে,“তাহলে তুমি কালো জাদু করো?

”মিয়া তার প্রশ্নের কোন উত্তর দেয় না।সে আবার বলে,“তোমার স্বামীর খুনের দায়ে তোমাকে আনা হয়েছে?”মিয়া চিৎকার করে বলে,

“আমি এলেক্সের খুন করিনি।সেই ডাক্তার মেরেছে।তাই আমি তাকে খুন করেছি।আম এলেক্সকে খুব ভালোবাসি এইসব বলতে গিয়ে মিয়া

কান্নায় ভেঙে পড়ে।বুড়ি তাকে বলল,“তোমার সাথে ভাগ্য খুবই অন্যায় করেছে।আমার সাথেও ঈশ্বর খুবই অন্যায় করেছে।সে মিয়াকে বলল

তুমি চাইলে আমাকে তোমার দুঃখ শেয়ার করতে পারো।”মিয়া তাকে তার সাথে ঘটে যাওয়া সমস্ত কিছু খুলে বলল।বুড়ি বলল,

“তুমি ঈশ্বরবিশ্বাসী হয়ে কি পেয়েছ?তিনি তোমার জীবনে বেঁচে থাকার সমস্ত ইচ্ছা কেড়ে নিল।আমিও তোমার মত এক সময় অনেক

ঈশ্বরবিশ্বাসী ছিলাম।আমারও সুখের পরিবার ছিল।কিন্তু একটি দূর্ঘটনায় আমার ছেলে এবং তার স্ত্রী মারা যায়।শুধু রয়ে যায় আমার শেষ

বয়সের সম্বল,আমার নাতনী চেরী।আমি তাকে কোলেপিঠে করে মানুষ করি।তার দিকে তাকিয়ে আমি ছেলে মারা যাওয়ার দুঃখ ভুলে যেতাম।

সে একদিন তার বান্ধবীদের সাথে পার্টিতে যেতে চাইলো।আমি তাকে না করলাম তবুও সে যাওয়ার জন্য প্রচুর আগ্রহ করল।আমি তাকে না

করতে পারলাম না।অনেক রাত হল সে ফিরল না।তাই আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লাম।কিছুক্ষণ পর তার বান্ধবী আমার কাছে এসে যা বলল

আমি তা বিশ্বাস করতে পারলাম না।চেরীকে কিছু ছেলেরা ধর্ষিত করার পর তাকে হত্যা করেছে।এই বলতে বলতে বুড়িটি কাদঁতে লাগল।

মিয়া বলল,“আপনার দুঃখ আমার চেয়েও অনেক বেশী।তারপর সেই হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আপনি কিছু করেননি?”বুড়ি বলল,আমি তাদের

বিরুদ্ধে মামলা করেছিলাম কিন্তু তারা খুবই প্রভাবশালী ছিল তাদের কিছুই হয়নি।কিন্তু আমি আমার চেরীর হত্যাকারীদের কখনো ছেরে

দেওয়ার পাত্র ছিলাম না।যখন ঈশ্বরের উপাসনা করে আমাকে এত কষ্ট করতে লাগল তাই আমি শয়তানের উপাসনা করতে শুরু করলাম।

আমি কালো জাদুর সাহায্যে তার দুই হত্যাকারীকে মেরে ফেললাম কিন্তু তৃতীয় জনকে মারতে পারলাম না কারণ সে সর্বদা ক্রশ পারে থাকতো।

কিন্তু আমি তাতেও নিরাশ হইনি।একদিন আমি তাকে চার্চে দেখলাম। আমার সাথে থাকা ছুরিটি বের করলাম এবং তাকে মেরে ফেললাম।

আর সেই কারনে আমি এখন কারাগারে।কিন্তু আমি এখান থেকে বের হতে চাই।আমার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে চাই।আমার চেরীকে

পুনরায় জীবিত করতে চাই।মিয়া বলল,“আপনি এসব কি বলছেন?”আমি যা বলছি সবই সত্য,মিয়া।কালো জাদুর মাধ্যমে এটা সম্ভব।

আমি তোমাকে প্রমিস করছি তুমি আমাকে এখান থেকে বের হতে সাহায্য করলে আমি তোমার এলেক্সকেও ফিরিয়ে আনব।মিয়া রাজি হয়ে গেল।

মিয়া বলল,“ আমরা এখান থেকে বের হবো কিভাবে?”বুড়ি বলল,“আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে।কাল ক্রিস্ট্মাস এখানে

নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই শিথিল থাকবে।ক্রিসমাস শেষ হওয়ার পর কালো জাদু ব্যবহার করে আমী আর তুমি অদৃশ্য হয়ে পালিয়ে যাব।

আমি এইকাজটি অনেক আগেই করতে পারতাম কিন্তু আমার হাতে ব্যথা থাকায় আমি মন্ত্র লিখতে পারব না।তাই আমার তোমার

সাহায্যের দরকার।মিয়া তার কথা অনুযায়ী কাজ করলো এবং পালিয়ে গেল।মিয়া বলল,“এখন আমরা কি করবো?”বুড়ি বলল,

“আগে আমরা চেরীকে ফেরত আনব তারপর এলেক্সকে।কিন্তু এইকাজ খুবই কঠিন।আমাদের চেরী যেই সময় জন্মগ্রহণ করেছিল

ঠিক সেই সময় জন্মগ্রহণ করেছে এমন ১০০ জন মানুষের বলি দিতে হবে।মিয়া বলল,“যতই কঠিন কাজই হোক আমি রাজি।”
আমি প্রিস্টকে বললাম,“আপনি এসব কিভাবে জানেন?প্রিস্ট বলল,“আমি এসব জানি,,,,,,

প্রিস্ট বলল,“আমি এসব জানি কারন মিয়া এইকথাগুলো আমাকে নিজে বলেছে এই ডায়েটীর মাধ্যমে।” আমি বললাম,

“আপনি এই ডায়েরীটি পড়েছেন?”প্রিস্ট বলল,“হ্যা,কারণ এটি রুশ ভাষায় লেখা।আর আমি রুশ ভাষা খুব ভালভাবে জানি।

”আমি বললাম,তারপর বুড়িটি আর মিয়ার কি হলো?”প্রিস্ট বলল,“মিয়া আর সেই বুড়িটি তারা টেক্সাসে থাকতো।

সেখানে তাদের দুজনকেই অনেকে চিনতো।যে কেউ দেখলেই তাদের আবার সমস্যায় পড়তে হত।তাই বুড়ি এজেলা মিয়াকে বলল,

“মিয়া এই শহর আমাদের জন্য নিরাপদ না।এখানে আমরা আমাদের কাজ সম্পূর্ণ করতে পারব না।এখানে কেউ না কেউ আমাদের

দেখে ফেলবে এবং পুনরায় কারাগারে যেতে হবে যা আমি চাই না।তাই আমাদের অন্য শহরে যেতে হবে।”মিয়া বলল,“কেন?আমরা

অদৃশ্য হয়েও কাজটি করতে পারব।এজেলা বলল,“তা সম্ভব না।কারণ একবার অদৃশ্য হওয়ার পর ৩ মাস ১৫ দিন পর্যন্ত আমি অদৃশ্য

হতে পারব না।আর তুমিও একই সময় পর্যন্ত পারবে না।আর তাছাড়া এই মন্ত্র পড়ে আমরা ৫ মিনিট এর বেশি সময় অদৃশ্য হতে পারব না।

তা নাহলে আমরা ক্রিস্ট্মাস এর আগের দিনই প্রিজন থেকে বের হয়ে যেতাম।”মিয়া বলল,“কিন্তু ঠিক ৩ মাস ১৫ পর পর কেন আমরা

অদৃশ্য হতে পারব?তার আগে কেন পারব না?”এজেলা বলল,“এই মন্ত্রের এই নিয়ম সর্বদা সবক্ষেত্রে।আমাদের কাছে সময় নেই আমাদের

এই শহর ছেড়ে দ্রুত অন্য কোন শহরের জন্য রওয়ানা হতে হবে।”মিয়া বলল,“আমি যাওয়ার আগে একবার এলেক্সকে দেখে যেতে চাই।

আর অন্য শহরে যাওয়ার আগে আমাদের অর্থের প্রয়োজন।আমি আর এলেক্স কিছু ডলার সঞ্চয় করে আমাদের বাসায় লুকিয়ে রেখেছিলাম।

যাওয়ার আগে আমি বাসায় যেয়ে তা নিয়ে যেতে চাই।”এজেলা বলল,“ঠিক আছে।তারা প্রথমে গ্রেভইয়ার্ডে এলেক্সের কবর দেখতে গেল।

মিয়া অশ্রু সিক্ত কণ্ঠে বলল,“আমি তোমাকে ফিরিয়ে আনব।শীঘ্রই আমরা আগের মত একসাথে থাকব।”তারপর মিয়া বাসায় যেয়ে

ডলার সহ প্রয়োজনীয় জিনিস নিল আর যাওয়ার সময় তার বাবার দেয়া ডায়েরীটাও নিয়ে গেল।তারা টেক্সাস থেকে সান ফ্রান্সিসকোতে

যেয়ে বসবাস শুরু করল।মিয়া বলল,“আমার কাছে একটি উপায় আছে যাতে করে আমরা খুব সহজেই আমাদের লক্ষ্যে পোছাতে পারব।

আপনি আপনার কালো জাদু দ্বারা মানুষের ভবিষৎবাণী করবেন।এতে অনেকেই আপনার কাছে আসবে এবং আপনি খুব সহজেই তাদের

জন্মসময় জানতে পারবেন।এবং আমি একটি বারে কাজ নিব যাতে করে আমি সহজেই অনেক ছেলেদের আকৃষ্ট করে তাদের আপনার

এখানে নিয়ে আসব।”এজেলা বলল,“উপায়টি খুবই ভালো।তুমি কি প্রস্তুত?”মিয়া বলল,“হ্যা,আমি প্রস্তুত।”তারপর মিয়া আর এজেলা

তাদের প্ল্যানমত নিরীহ মানুষদের ফাঁদে ফেলে তাদের শয়তানের উদ্দেশ্যে বলি দিতে লাগল।কিন্তু তারা বিপদে পড়ল যখন একটি মহিলা

পুলিসে মামলা করল যে তার মেয়ে সুশি এজেলার বাসায় যাওয়ার পর তাকে আর খুজেঁ পাওয়া যায়নি।তাই একদিন এক পুলিস অফিসার

এজেলাকে গ্রেপ্তার করার জন্য তার বাসায় পৌছল কিন্তু এজেলা জানালা দিয়ে তাদের আসতে দেখে অদৃশ্য হওয়ার মন্ত্র পড়ল।তাই তারা

তাকে না পেয়ে মিয়ার সাথে কথা বলে চলে গেল।সেদিন রাতেই মিয়া আর সান ফ্রান্সিসকো শহর ছেড়ে ডেনভার শহরে আসল।ডেনভারেও

তারা একই উপায়ে মানুষ গুম করতে লাগল।কিন্তু এবার তারা আগের চেয়ে অনেক সাবধান ছিল।তাই যখন পুলিস ও কিছু করতে পারল না

তারা উদ্বিগ্ন হয়ে চার্চের প্রিস্টকে বলল যে তাদের এখান থেকে হঠাৎ করেই মানুষ গুম হতে লাগল।কিন্তু কেউ বের করতে পারল না তার

কারন কি।সেই বছর ক্রিস্ট্মাস এর দিন সবাই চার্চে যাচ্ছিল তাই এজেলা আর মিয়াকেও তাদের প্রতিবেশি এসে বলল,“কি ব্যাপার?আপনারা

যাবেন না?”এজেলা বলল,“বয়স হয়েছে।তাই সবসময় চলা-ফেরা করতে পারি না।প্রতিবেশি স্টেলা বলল,“তাহলে মিয়া চল আমাদের সাথে।

তাই একান্ত অনন্যপায় হয়ে মিয়া তার সাথে গেল।কিন্তু চার্চে যাওয়ার পর মিয়া ছটফট করতে লাগল।তার হাত পা কাপঁতে লাগল।কেউ সেটা

খেয়াল না করলেও একজন নান এর সন্দেহ হল।তাই সে চার্চের প্রিস্টকে জানাল।তিনি নানকে বললেন,“মিয়ার উপর নজর রাখতে।

”একদিন নান তার পিছু নিল আর দেখলো মিয়া কালো জাদু করছে।সে প্রিস্টকে সে যা দেখল সব জানাল।প্রিস্ট তাই তার শিষ্যদের নিয়ে

এজেলার বাসার দিকে গেল।মিয়া তাদেরকে দেখে অদৃশ্য হওয়ার মন্ত্র পড়তে লাগল।কিন্তু এজেলা অদৃশ্য হতে পারল না কারণ সে কিছুদিন

আগেই অদৃশ্য হওয়ার মন্ত্র ব্যবহার করেছিল।তাই সবাই এসে এজেলাকে ধরে নিয়ে গেল।এজেলা বলল,“আমি কোন অপরাধ করিনি।

যদি কিছু করে থাকি আপনারা আমাকে পুলিসে দেন।আদালত বিচার করবে।”সবাই প্রিস্টকে বলল,“যদি আমরা এখন তাকে পুলিসে দেই

তাহলে আদালত তাকে ছেড়ে দিেব কারণ কোন প্রমাণ নেই আমাদের কাছে।আর যদি তা হয় তাহলে আমাদের আপনজনের আত্মা শান্তি

পাবে না।তাই এখানেই তাকে শাস্তি দিতে হবে যাতে কেউ জানতে না পারে।”প্রিস্ট তাদের কথায় রাজি হল।তাই তারা সবাই এজেলাকে

গাছে দড়ি বেঁধে তাকে ফাসি দিয়ে দিল।আর মিয়া..

আর মিয়া অদৃশ্য হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে হয়ে গেল।কিছুক্ষণ পর সে ভাবল তার এই শহরে থাকা আর নিরাপদ না।তাই সে অন্য শহরে

যাওয়ার কথা ভাবল।কিন্তু পরক্ষণে সে ভাবল যে সে এজেলার মত সব মন্ত্র জানেনা।তাই সে তার সকল মন্ত্র তার ডায়েরীতে লিখে রেখেছে।

যেই ডায়েরীতে সে তার র জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা আর স্মৃতি লিখে রেখেছে।তাই সে ডায়েরি আনতে বাসায় যায় কিন্তু প্রিস্ট জানতো

সে তার বাসায় তার জিনিস নিতে ঠিকই ফিরবে।তাই সে তার বাসার সামনে কিছু মানুষকে বলেছিল লুকিয়ে থাকতে।মিয়া খুবই সাবধানী

হয়ে বাসায় ঢুকলো তারপর ডায়েরী থেকে মন্ত্র পড়তে লাগল যাতে সে এজেলার আত্মাকে পরপারে যেতে বাধা দিতে পারে।কিন্তু সে যখন

মন্ত্র পড়ার শেষে তার সবকিছু নিয়ে বাসা থেকে বের হতে যাচ্ছিল তখন সবাই তাকে ধরে ফেলল।মিয়া তখন চেচিঁয়ে উঠল,“আমাকে ছেড়ে দাও।

নাহলে তোমাদের সবার পরিণতি অশুভ হবে।”তখন একজন বলে উঠল,“আমাদের না তোর পরিস্থিতি অশুভ হবে,ডাইনি ।

”এই বলে সে মিয়ার পেটে ছুরি ধুকিয়ে দেয়।প্রিস্ট বলে পরীক্ষা করে দেখ সে জীবিত কিনা।তাকে সবাই মৃত ভেবে সেখান থেকে চলে যায়।

কিছুক্ষণ পর মিয়া চোখ খুলে এবং ডায়েরীটাতে একটি মন্ত্র লিখে যায়। যাতে যখনই যে কেউ এই মন্ত্রটি পড়ে মিয়া তার দেহে সে প্রবেশ করে

তার অসম্পূর্ণ কাজটি সম্পূর্ণ করতে পারে।কিছুক্ষণ পর মিয়া মারা যায়।মারা যাওয়ার আগে মিয়া প্রতিজ্ঞা করে তাকে মায়ের মত আদর করা

এজেলা এর মৃত্যুর প্রতিশোধ সে নিবে এবং এজেলা আর এলেক্স দুইজনকে সে ফিরিয়ে আনবে।মিয়া মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ পর প্রিস্ট আর

কয়েকজন এসে মিয়ার লাশ সেই বাড়ির বেসমেন্টে দাফন করে সেই রুমের দরজা দেয়াল দিয়ে ঢেকে দেয়।কিছুদিন পর সবাই সবকিছু ভুলে

স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছিলো।কিন্তু কিছুদিন পর এলাকার বিভিন্ন স্থানে মাথাকাটা লাশ পাওয়া যেতে শুরু করে।লাশ গুলোর মাথা ছাড়া

এমন বীৎভস্য লাশ দেখে ডেনভারবাসী এমনকি তদন্তকারী পুলিস অফিসাররা ভয় পেতে শুরু করে।পুরু এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি হয়।পুলিসরাও

চিন্তিত হতে শুরু করে কারণ এর পিছনে কে আছে তা তারা বের পারছিল না এবং কারণটি বুঝা যাচ্ছিল না এমন হত্যার।কিছুদিন পর প্রিস্ট এর

একজন সহচর্য লেকের ধারের রাস্তা দিয়ে হাটছিল হঠাৎ তার কাছে লাগল কেউ তার পিছনে আছে কিন্তু ঘুরে দেখলাম কেউ নাই।সে হাটছিলো

হঠাৎ করে পিছলিয়ে পরে যায়।তার কাপড় সম্পূর্ণ মাটি দিয়ে মেখে যায়।তাই সে লেকে গোসল করতে নামে এবংতার ক্রশটা তীরে রেখে যায়

যাতে পানিতে গোসল করার সময় হারিয়ে না যায়।যখন গোসল করে উঠে তখন কারো কান্নার আওয়াজ শুনতে পায় সে।যখন কাছে যায় দেখতে

পায় আমাদের চার্চের একজন নান।সে তাকে বলল,“আরে তোমার হাতে ব্যথা পেলে কিভাবে?চল আমার সাথে চল আমি চিকিত্সার জন্য

তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।”নানটি তার সাথে চলতে চলতে তার হাত এমন শক্তভাবে ধরল যেন সে ভেঙে ফেলতে চাইছে।

”সে বলল,“তুমি ছাড়ো আমাকে,আমি প্রচুর ব্যথা পাচ্ছি।”নানটি বলল,“তুমি কি আমাকে ছেড়ে দিয়েছিলে?আমি তোমাদের সবাইকে

বলেছিলাম তোমাদের সবার পরিণতি অশুভ হবে।”এই বলে সে সহচর্যটিকে অনেক দুরে আছড়ে ফেলল।সহচর্যটি দেখে

তার ক্রশটি তার থেকে ২-৩ হাত দুরে তাই সে হামাগুড়ি দিয়ে সেটি নেয়ার চেষ্টা করতে থাকে ততক্ষণে নানটি তাকে হত্যা করার

জন্য একটি ধারালো ছুরি নিয়ে তার খুবই নিকটে চলে আসে।সে আমার উপর ছুরি নিয়ে তাকে যখন মারতে আসল ঠিক তখনই

সে তার উপর ক্রশটি ছুরে মারলো।নানটি তক্ষণাৎ ছটফট করতে লাগল এবংজ্ঞান হারিয়ে ফেলল।তক্ষনাৎ আমি প্রিস্টকে যেয়ে সব বললাম।

আমি আর আব্বু বললম,“তাহলে আপনি সেই সহচর্য?”প্রিস্ট বলল,“হ্যা,তখন আমি সেই সময়কার প্রিস্ট এর সহচর্য ছিলাম।

এখন আমি নিজেই একজন প্রিস্ট।”আব্বু বলল,“তারপর কি হলে?”প্রিস্ট বলল,“আমি আমাদের প্রিস্টকে সব বলার পর সে নানকে

নিয়ে আসল এবং তার চারপাশে হলি ওয়াটার আর কান্ডেলস জ্বালিয়ে মন্ত্র পড়তে লাগল যাতে নানের জ্ঞান ফেরার পর মিয়া তার দেহে

প্রবেশ করতে না পারে।নান জ্ঞান আসার পর বলল যে এজেলার বাড়িতে সে যাওয়ার সে একটি ডায়েরী পায় তাই সে ডায়েরিটা পড়তে শুরু করে।

তারপর সে রাতে ঘুমানোর পর সকালে উঠে দেখতে পায় তার শরীর রক্তে মাখা।কিন্তু সে ভয়ে এই ব্যাপারটা কাউকে জানায়নি। এর অতিরিক্ত

সে কিছুই জানেনা।প্রিস্ট আমাকে ডায়েরিটি আনতে বলল।আমি ডায়েরীটি আনলাম।কেউ রুশ ভাষা না পারায় প্রিস্ট আমাকে ডায়রীটি পড়তে বলল।

আমি ডায়েরিটি পড়তে লাগলাম।হঠাৎ করে আমি সেই মন্ত্রটিও ভুলে পরে ফেললাম ফলে নান এর উপর মিয়ার আত্মা আবার এসে পড়ল।

মিয়া তার উপর এসেই বলতে লাগল,“আজ তোদের সবাই মরবে, সবাই। ”তারপর জোরে বাতাস বইতে শুরু করল ফলে প্রিস্ট এর হাতে থাকা

ক্রশটি পরে গেল এবং কান্ডেলসগুলো নিভে গেল।তারপর সে প্রিস্ট এর গলা চেপে ধরল এবং বলল,“আজ তোর জীবনের শেষ দিন।

”আমি নানের হাত ছাড়াতে গেলাম কিন্তু সে আমাকে মাটিতে ফেলে দিল।তখন আমার মনে আসল এই ডায়েরীর মন্ত্র পড়ার ফলে মিয়া নানের

শরীরে প্রবেশ করেছিল তাই আমি একটি কাঠ কয়লার পাত্রতে আগুন ধরিয়ে ডায়েরিটি তাতে ফেলে দিলাম।নান ছটফট করতে করতে মিয়ার

দেহ ত্যাগ করল কিন্তু ডায়েরিটি আগুনে দেয়ার পরও ডায়েরিটী পুড়ল না।এই পরিস্থিতি দেখে আমি প্রিস্টকে বললাম,“নানের দেহ থেকে

কিভাবে মিয়ার আত্মাকে দূর করব?”প্রিস্ট বলল,“একবার ডায়েরী থেকে যে মন্ত্রটি পড়বে মিয়া তার দেহে ততদিন প্রবেশ করতে পারবে যতদিন না

মানুষটি মারা যায়।তাই নানের দেহে মিয়ার আত্মা পুনরায় প্রবেশ করার আগে নানকে মিয়াকে যেই স্থানে দাফন করা হয়েছিল সেই স্থান থেকে

মিয়ার দেহ আর নান দুইজনকে আগুনে পুড়াতে হবে তাহলে মিয়ার দেহের বিনাশ হবে এবং নানের উপর ভর করা তার আত্মারও শেষ হবে।

”তাই নান জ্ঞানহীন থাকা অবস্থায় আমরা তাকে এজেলার বাসার বেসমেন্টে নিয়ে যাই এবং তাকে বেধে রাখি।সে যখন জ্ঞান ফিরে পায় মিয়ার

আত্মা আবার দেহে এসে বলতে লাগল,“তোমরা চাইলেও আমাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে পারবে না।আমার ডায়েরি যতদিন থাকবে আমিও

এই পৃথিবীতে থাকব।এই ডায়েরি তোমরা ধ্বংসও করতে পারবে না।এখন হয়ত নানকে মেরে আমাকে বিদায় করবে।কিন্তু আমি আমার ডায়েরি

দ্বারা আবার আসবো।”
তখন প্রিস্ট বলল,“তা তখনই সম্ভব যখন কেউ এই ডায়েরিটি তখন প্রিস্ট বলল,“তা তখনই সম্ভব যখন কেউ এই ডায়েরিটি পড়বে।কিন্তু আমি

তোকে আর এই ডায়েরিটিকে অভিশাপ দিলাম যে,যতদিন এই বেসমেন্টে এসে তোর নাম কেউ না লিখবে ততদিন তুই চাইলেও তোর জাদু

প্রয়োগ করতে পারবি না ফলে এই ডায়েরীও কেউ পরতে পারবে না।আই কার্সড দিস ডায়েরি।”মিয়া চিৎকার করল,“না,না,না।আমি নিজের

শক্তি না প্রয়োগ করলেও এজেলার আত্মা দ্বারা কাউকে বশীভূত করে আমার নাম লিখাবো।”প্রিস্ট বলল,“এজেলার আত্মা এত শক্তিশালী না।

তোর এই আশা করা অর্থহীন।”
তারপর আমরা নান আর মিয়ার কফিনে আগুন ধরিয়ে দিলাম।মিয়া চিৎকার করতে লাগল,“আমি আবার আসবো,আবার।
তারপর আমরা এই ডায়েরিটিকে লেকের পানির তলে মাটি গর্ত করে পুতে দিলাম।কারন কেউ লেকের তলের মাটি কখনোই খুড়বে না

তাছাড়াও তখন লেকটি আরও বিস্তীর্ণ আর গভীর ছিল।
আমার অাব্বু বলল,“তাহলে কি এনাকে আমরা বাচাঁতে পারব না?প্লিজ কিছু বলেন।আব্বু কান্না করতে লাগলেন।

প্রিস্ট আব্বুকে বলল,“ফ্রেড, আমি জানি তুমি তোমার স্ত্রী এনাকে খুব ভালোবাসো।”কিন্তু হাসপাতালে এখন যে আছে সে এনা নয়।

এখন যে আছে সে একটি ডাইনি যে শুধু তোমার আর আমার প্রাণ নিয়ে শান্ত হবে না সে তোমার মেয়ের এবং অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণ

কেড়ে নিবে।সে অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণ নিয়েছে এবং আরও নিবে।সে এখন তোমার মেয়েকে মেরে ফেলতে চাইছে।তোমার মেয়ের জীবন

এখন সংকটে।তুমি যদি আমার কথা না মানো তাহলে এনার আত্মা শয়তানের অধীনে থাকবে সে নরকে যাবে।তুমি কি এটাই চাও।তুমি যদি

এনাকে আসলেই ভালবাসো তাকে এই নরক থেকে মুক্ত কর।”আমি চিৎকার করে উঠলাম,“না,আমার আম্মুকে আমি কোথাও যেতে দিব না।

আব্বু,তুমি তাদের কথা মানবে না।”আমি কান্না করতে করতে বাহিরে চলে গেলাম। প্রিস্ট বলল,“যাও ফ্রেড,ইমিলিয়াকে সান্ত্বনা দাও।

”আব্বু আমাকে বলল,“তুমি কি চাও যে তোমার আম্মু আজীবন সেই শয়তানের অধীনে থাকুক?আমরা যখন মারা যাব,তখন তোমার আম্মু

যদি প্রশ্ন করে, আমরা কেন তাকে সেই শয়তানের নিকট ছেড়ে দিলাম?তখন আমরা তাকে কি উত্তর দেব?তাই তাকে মুক্ত করে দেয়া তোমার

আর আমার কর্তব্য।”আমি আব্বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলাম।
আমরা আম্মুকে অজ্ঞান করে বেসমেন্টে নিয়ে গেলাম।আব্বু প্রিস্টকে বলল,“আমি চাই এনার মৃত্যু কম কষ্টদায়ক হোক।এই ইনজেকশন দ্বারা

এনা ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যাবে।”প্রিস্ট বলল,“যা করতে হবে জলদি করতে হবে।আমি এই মন্ত্র দ্বারা শুধু মাত্র ১৫ মিনিট মিয়ার আত্মাকে এই

বেসমেন্টে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখতে পারব।”আব্বু আর আমি শেষ বারের মত আম্মুকে চুমু দিলাম।আমি বললাম,“আমি তোমাকে ভীষন

ভালবাসি,আম্মু।”আমি কান্নায় ভেঙে পড়লাম।আব্বু আম্মুকে বলল,আই লাভ ইউ,হানি।প্লীজ ফরগিভ মি।”আব্বু আম্মুকে ইনজেকশন দিয়ে দিল।

আব্বুর চোঁখ বেয়ে পানি আম্মুর চোখে পড়ল।কিছুক্ষণ পর বেসমেন্টে খুবই জোরে বাতাস শুরু হল যেন ঘূির্ণঝড় হচ্ছে।প্রিস্ট বলল,“প্রার্থনা করতে থাকো।

মিয়ার আত্মা করছে এসব,সে চায়না এনার দেহ থেকে কর্তৃত্ব হারাতে।”অন্যাদিকে আম্মুও দ্রুত নিশ্বাস ত্যাগ করতে থাকে।

আব্বু আম্মুর হাত শক্ত করে ধরে রাখে।প্রায় ১০ মিনিট ঝড়ো বাতাসের তান্ডবের পর সব কিছু থেমে যায়।আম্মুর পাশে আমি যেয়ে দেখি

সে পরপারে চলে গেছেন।
প্রায় ২ মাস পরের কথা আজ আমি আমার আন্টি লুনার সাথে নিউইয়র্ক যাচ্ছি।যাওয়ার আগে আমি বাসাটিকে ভালমত দেখছি।

দেখছি এই সেই বাসায় যেখানে আমি আমার আম্মু,আব্বু দুজনকেই হারিয়েছি।হ্যাঁ,আমার আব্বুকেও।আম্মু মারা যাওয়ার কিছু দিন

পর আমার আব্বু আত্মহত্যা করে।সে আম্মুর শুধু ইহলৌকিক নয় পরলৌকিক সাথী হতে তার নিকট চলে যায়।
আম্মু আব্বুর ছবি দেখতে গিয়ে এই বাসায় আমাদের কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত মনে পড়ে গেল।চোখের দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে ছবিটার উপর

পড়ে গেল।আমি ফ্রেমের উপর পানি মুছছিলাম ঠিক তখন আন্টি আমাকে ডাক দিল, “কাম কুইক,হানি।উই আর গেটিং লেট।”আমি চোঁখের

পানি মুছতে মুছতে বললাম,“আসছি আন্টি”।

…………………………………….(সমাপ্ত)…………………………………

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত