গল্পটা একটু অন্যরকম। আর এই গল্পে কোথাও আমি জোক্সের কথা উল্লেখ করিনি।
তাই জোক্স পাবার উদ্দেশ্য গল্পটা পড়লে আপনার বৃথা সময় নষ্ট হবে। গল্পে কোথাও আধুনিক চিরাচরিত যন্ত্রাংশ, প্রযুক্তি কে অসম্মানিত করা হয়নি।
আমি জানিনা তোকে আমাদের সাথে আমার গ্রামের বাড়িতে চেঁচিয়ে ওঠে নিতাই।
– – আরে ভাই বোঝ ব্যাপার-টা আর কদিন পর পরীক্ষা এখন যদি ঘুরতে যাই তাহলে কি করে পড়া করবো।
নিতাই – তুই যদি না যাস। তাহলে কাল থেকে আমি আর তোর সাথে এক রুমে থাকবোনা। আর কোনোদিন কথা বলবোনা। দেখেনিস।
আমি – আচ্ছা ভাই। নে যাবো। তুই সবসময় জেদ করিস কেন। বোঝার চেষ্টা করিস না।
নিতাই – হ্যাঁ বলেছিস মাথায় রাখিস।
আমি – কথা যখন দিয়েই দিয়েছি। তখন নিশ্চয় রাখবো।
মনেমনে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজী হয়ে গেলাম।
আমি কলকাতার এক কলেজে পড়ি। বাড়ি অনেক দূর বলে হোস্টেলে থাকি। আর এই হোস্টেলে নিতাই থাকে। বহুদিন বাড়ি যাইনি ছেলেটা।
সেদিন ওর মা ফোন করে বাড়িতে ডাকে। এই নিয়েই কথা কাটাকাটি।
নিতাই আমাকে ছেড়ে যাবেনা। আর আমার ও যেতে ইচ্ছে করছেনা। কিন্তু উপায় কোথায়।
কাল ভোরে শেয়াল – দা থেকে ট্রেন ধরবো। তাই সব গোছগাছ করে রাখলাম। একদম ভোর ছ-টার মধ্যে রওনা দিলাম আমি আর সোম।
শেয়াল-দা থেকে দুটো ট্রেন। তারপর ফেরিঘাট থেকে নৌকা। তারপর টেকার। বাদবাকি পায়ে হাঁটা পথ।
প্রায় দুপুর ২.৩০ এর মধ্যে চলে আসলাম। নিতাই এর বাড়ি। না বলতে ভুল করলাম আধাঘণ্টা আরও বেশী লাগলো।
আসার সময় পাড়ার বিভিন্ন ছেলে,বউ এর সাথে থেমেথেমে কথা বলছিলাম। এতদিন পর নিতাই কে দেখছে সবাই।
সকলের মধ্যে একটু আনান্দের ছাপ দেখতে পেলাম। ওপাশ থেকে দুইখানা ছোটো বাচ্চা দৌড়ে এলো এসে নিতাই কে বললো নিতাই দা নিতাই দা।
আমি ভ্যান চালানো শিখেছি।
নিতাই কে দেখলাম অনেক খুশী। ওপাশে দেখছিলাম একটা মাঠ। যেখানে মেয়েরা খেলছিলো।
আমি একটু তাড়া দিলাম ওকে। বললাম এবার তো চল। নিতাই আর আমি বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।
শেষমেশ একটা পরিত্যক্ত রেল লাইন পাড় করলাম। তার পর দূর থেকে দেখালো নিতাই..
ওইদেখ মলয়।
আমি – কি?
নিতাই – ওইদেখ আমার বাড়ি।
আমি দেখলাম – একটা বাড়ি তার সামনে একটা শানবাঁধানো বেশ উঁচু চাপকল। নিতাই বললো
– জানিস এইকলে জল নেবার জন্য বহু দূর থেকে মানুষ আসে।
আমি বললাম – হ্যাঁ ভাই এবার চল। আমার বিশাল খিদে পেয়েছে।
আমি আমার ব্যাগ থেকে বিস্কুটের প্যাকেট-টা বেড় করলাম। যেটা সেই স্টেশনে কিনে ছিলাম এখনো খাইনি।
নিতাই এর বাড়ি যেই ঢুকবো। ওমনি দেখলাম একটা কুকুর বাইরে শুয়ে আছে। কালো-সাদা মোটাসোটা।
আমি ওই বিস্কুটের প্যাকেট থেকে একটা বিস্কুট ওকে দিলাম। কুকুর-টা বিস্কুট খাওয়ার পর। আমার সাথে খেলা করতে লাগলো।
আমি এইরকম মিশুকে কুকুর জীবনে প্রথম দেখলাম। যে কিনা প্রথম দেখাতেই মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করে নেই।
নিতাই এর বাড়ি তে গিয়ে দেখি ওর মা কত খুশী আমাদের দুইজন কে দেখে। আমি ওর মাকে প্রণাম করলাম।
নিতাই এর মা বললো।
তুমি সেই মলয়..যার কথা নিতাই এতো বলাবলি করে।
ওইঘর থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলো কোন মলয় দেখি দেখি।
ও..তুই সেই মলয়। যে কিনা গল্প লেখো।
আমি বিশাল লজ্জা পাচ্ছিলাম। ওইঘর থেকে নিতাই এর বাবা বলে উঠলো – ওরে তোরা কতক্ষণ দাঁড়াবি। এবার হাতমুখ ধুঁয়ে আই। খাবার খাবিনা।
আমি আর নিতাই হাত – পা ধুঁয়ে এলাম। বারান্দায় বসে রইলাম আমাকে নিতাই এর মা আসন দিয়েছিলো। আর নিতাই খালি মাটিতে বসে ছিলো।
আমি নিতাই কে বললাম কিরে আসনে বস।
নিতাই বললো – ও আমার অভ্যাস আছে।
তারপরেই নিতাই এর মা খেতে দিলো আমাদের।
মেনুতে ছিলো।
ভাত,ডাল,সজনে ফুলের বড়া,আরও কত কি।
বেশ জমিয়ে খেলাম। তারপর দেখলাম নিতাই এর বোন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরলো। ওর বোন আমাকে দেখে সোজা ঘরে চলে গেলো।
ঘরে গিয়ে ওর মাকে বললো।
মা – এ কি দাদার বন্ধু।
নিতাই এর মা বললো – হ্যাঁ। আর তুই হাত পা না ধুঁয়ে চলে এসেছিস। তাড়াতাড়ি হাত-পা ধুঁয়ে আয়। খেয়ে পড়তে চলে যা।
আমি খেয়ে দেয়ে নিতাই এর বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েক – টা সেল্ফি তুলে নিলাম।
হঠাৎ আমার চোখ পড়লো আমার থেকে প্রায় ৩০-৩৫ হাত দূরে এক পরিত্যক্ত রেললাইনের দিকে। আমি নিতাই কে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম।
কি….রে নিতাই। এই রেললাইন কোথাকার। কোথায় গিয়ে মিশেছে এই লাইন। দেখলাম নিতাই ব্যাপার টা এড়িয়ে গেলো।
দেখতে দেখতে রাত নেমে এলো। আমরা খেয়ে দেয়ে শোবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ নিতাই বলে উঠলো শোন। রাতে একা বাইরে যাস না।
বাথরুম – টাথরুম গেলে আমাকে ডাকিস।
আমি বললাম আচ্ছা।
কানে হেডফোন দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ আমার বাথরুম পায়। বাথরুমের চাপে ঘুম ভেঙে যায়।
দেওয়ালের গায়ে লাগানো পেরেকের উপর থেকে চাবি – টা নিয়ে দরজা খুলে। দরজা-টা বাইরে দিয়ে ভেজিয়ে দিলাম।
বাথরুম করে যেই ঘরর ঢুকবো। ওমনি দেখলাম বাইরে বেশ হাওয়া বইছে। আমি একটু তিন-চার পা এগিয়ে গেলাম।
নিতাই দের বাড়ির গেটের কাছে। দুই-তিন মিনিট হাওয়া খেয়ে যেই ঘরে আসবো। ওমনি আমার কি মনে হলো। আমি গেট খুলে বাইরে বেড়োলাম।
আর সেই পরিত্যক্ত রেললাইনের দিকে তাকালাম। তার আগে বলে রাখি। নিতাই দের বাড়ির দিকে ল্যাম্পপোস্ট আছে ঠিক-ই কিন্তু
কোনো ল্যাম্পপোস্টের লাইট ভাঙা তো কোনো কোনো ল্যাম্পপোস্ট বিশাল দূরে। তো আমার সামনে সেই পোস্ট-টা ছিলো। সেটার আলো জ্বল ছিলোনা।
আমি খেয়াল করলাম কারা যেন রেল লাইন বরাবর হেটে রেললাইনের সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
আমার মনে একটু খটকা জাগলো। আমি এগিয়ে গেলাম ব্যাপার-টা দেখার জন্য। আমার সামনে যারা ছিলো।
তারা প্রায় আমার থেকে ২০-২২ হাত দূরে আর আমি তাদের পেছনে। সামনে একটা পুরনো ট্রেনের বগী ছিলো।
ওই যায়গা টার পর আমি আর ওদের দেখলাম না।
যাইহোক আমি বাড়ি ফিরে আসি।
পরেরদিন সারাদিন বেশ ভালোই কাটলো। কিন্তু সেইদিন রাতযে কতটা ভয়ের ছিলো সে কথা ভাবলে আমার এখনো গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়।
সেইদিন রাতের বেলাও আমার ঘুম ভেঙে যায়। না বাথরুম না। রাস্তার সামনে কতগুলি লোকের চিৎকারে।
কাঁচাঘুম ভেঙে গেছিলো মেজাজ বিগড়ে গেছে। আমি ভাবলাম যাই উঠেই যখন পড়েছি এবার বাথরুম করে আসি।
মোবাইলে দেখলাম রাত ১১.৩০ বাজে।
বাথরুম করে এসে যেই ঘরে ঢুকবো ওমনি ভাবলাম দেখিতো রেল লাইনের দিকে। ওখানে কাউকে দেখা যায় কিনা।
আমি রেল লাইনের দিকে তাকালাম দেখলাম। আজও রেল লাইনের উপর দিয়ে কয়েকজন হেঁটে যাচ্ছে।
কিন্তু আজ শুধু ৩০-৪০ জন না। তার থেকেও অনেক বেশী।
মনেমনে ঠিক করলাম আজ যা হবে। দেখেই ছাড়বো। ওরা কোথায় যায়। না। আজও ওরা দেখলাম সেই রেলবগীর দিকে যাচ্ছে।
আমি ওদের পিছু নিলাম। না। আজ ওরা সেই বগীর দিকে যাচ্ছেনা। আরও এগিয়ে গেলো ওরা। সামনে দেখলাম একটা সিগনাল পোষ্ট।
তাতে সবুজ আলো জ্বলছে। অবাক হলাম এই রেল লাইন টার আসা যাওয়ার পথে তো অনেক গাছ,আবার একটা দোকান ও আছে।
অথচ এই লাইনের উপর সবুজ আলো জ্বলছে। এই আলো তো ট্রেন আসার সংকেত। যাইহোক আমি লোক গুলোর পেছন করে যাচ্ছিলাম।
লোকগুলো কেমন অদ্ভুত ভাবে হাঁটছিলো। সবাই নিদিষ্ট একটা লাইন মেনেই চললে যেমন ভাবে যায় লোকেরা ঠিক সেমন।
আমি রেল লাইনের পাশ দিয়ে হাটছিলাম। প্রায় তিন হাত দূরত্ব বজায় রেখে। হঠাৎ আমি অনুভব করলাম আমার পাশ থেকে
একটা হাওয়া অত্যন্ত দ্রুত বেগে সামনে এগিয়ে গেলো। হাওয়া টা রেল লাইন বরাবর সোজা এগিয়ে গেলো। হাওয়াটা প্রায় ৯-১০ সেকেন্ড চলছিলো।
তারপরে হাওয়া টা যখন সামনের দিকে চলে গেলো। তখন আমি যে সমস্ত লোকের পিছু নিচ্ছিলাম তারা দেখি চিৎকার করে উঠলো।
অনেক দূরে একটা সিগনাল দেখতে পাচ্ছিলাম আমি ওটাতে সবুজ আলো জ্বলছিলো কিন্তু যেই ওই লোকগুলোর চিৎকার
থামলো তখন আমার চোখের কোণ দিয়ে দেখতে পেলাম ওই সিগনাল – টা আবারো লাল হয়ে গেলো।
তারপর আমি আরও মর্মান্তিক ঘটনার সম্মুখীন হলাম। আমি দেখলাম আমার সামনে ওই লোক গুলো শুয়ে আছে। আমি দৌড়ে গেলাম ওদের কাছে।
যা দেখলাম তাতে আমার পিলে চমকে উঠলো।
আমি দেখলাম ওই প্রত্যেক-টা লোক মাটিতে পড়ে আছে। তাদের কারুর মাথা নেই। আর কারুর হয়তো বা পা।
আবার কারুর শরীর দুই খন্ডে বিভক্ত হয়ে আছে। ঠিক যেমন রেলে কাটা পড়লে যেমন হয়। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে উঠলো।
আমি আর একমিনিটও ওখানে দাঁড়ালাম না। যেই ওখান থেকে দৌড় দেবো। ওখন ওই মাটিতে পরে থাকা একটি লোক।
আমার পা ধরে বলে।
– – তুই অনেক কিছু দেখে ফেলেছিস। যেটা ঠিক করিস নি। এবার তোকেও আমাদের সাথে যেতে হবে। আমি ভাবলাম সব শেষ।
আমি ভুতের খপ্পরে পরেছি।
ধীরেধীরে দেখলাম ওই লোকটা মাটির উপরে উঠে দাঁড়ালো তারপর বলে উঠলো। ওই সামনের সিগনাল পোশট-টা অবধি তোর শেষ যাত্রা।
এইবলে আমার জামার কলার-টা ধরে উঠলো।
নিতাই দের বাড়ির সেই কুকুরের কথা মনে আছে। হঠাৎ দেখলাম ও কোথা থেকে ছুঁটে আসে।
একসময় অনুভব করলাম আমার জামার কলার টা ওই লোকটি আর ধরে নেই। আমি সাতপাঁচ না ভেবে দৌড় দিলাম বাড়ির দিকে।
আমার সাথে সাথে ওই কুকুর টাও দৌড় দিলো।
পেছন থেকে শুনতে পাচ্ছিলাম কারা যেন দৌড়াচ্ছিলো। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না।
একবার যখন প্রাণে বেঁচেছি। তখন শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত দৌঁড়াবো। আমি মাঠ পেড়িয়ে কোন দিকে যাবো ভেবে উঠতে পাচ্ছিলাম না।
তখন দেখলাম একটা বউ কলে জল নিচ্ছে। আমি তারকাছে দৌড়ে গেলাম। ওনিতো আমাকে দেখে চোর চোর বলে চেঁচামেচি করতে লাগলেন।
আশেপাশের বাড়ি থেকে ৫-৬ জন ছুঁটে বেড়িয়ে এলো।
আমি তাদের সকল কে জানালাম যে আমি চোর নই। তারপর সব ঘটনা খুলে বললাম।
সবকথা শুনে ওরা অবাক হয়ে গেলো।
ওরা আমাকে বললো তুমি কার বাড়ি এসেছো। তুমি জানো এখন ভোর চারটে বাজে।
আমি অবাক হয়ে বললাম – নিতাই এর বাড়ি এসেছি। না আমার মোবাইল টা ওই বাড়িতে রেখে এসেছি। সময়টা জানা নেই।
ওরা জিজ্ঞেস করলেন নিতাই এর বাবা কি করেন।
আমি বললাম – ভ্যান চালায়।
ওদের মধ্যে থেকে একজন বলে উঠলো।
তুমি জানো তুমি এখন কোথায়?
আমি – না। এতো রাতে কি কিছু চেনা যায়।
তুমি নিতাই এর বাড়ি থেকে দুটো গ্রাম আগে চলে এসেছো। লোকটি বললো।
নিতাই দের বাড়ি অনেক দূর।
আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
তখন এক ইঞ্জিন ভ্যান চালক আমাকে বললো আমার ভ্যানে বসো। আমি ওইদিকেই যাবো। বাজারে আমার
শাকসবজির দোকান আছে যাবার সময় নামিয়ে দেবো।
আমি পুরো অবাক।
আর তার থেকেও অবাক করার বিষয় নিতাই দের বাড়ির কুকুর-টা নেই। যে কিনা আমার প্রাণ বাঁচালো।
একটু পর ভ্যান নিয়ে রওনা দিলো ওই ভ্যান চালক সাথে আমি।
ভোর সাড়ে পাঁচটার মধ্যে আমি নিতাই দের বাড়ির কাছে পৌঁছে যাই। তখন দেখি নিতাই দের বাড়িতে প্রচণ্ড ভীড়।
শেষে ওদের-ই মধ্যে একজন বলে উঠল্য আমার দিকে আঙুল তুলে।
– – ওইতো সেই ছেলেটা।
নিতাই এর মা ঘর থেকে বাইরে বেড়িয়ে এসে আমাকে খুব বকা দেয়। তারপর বলে কোথাও গেলে বলে যেতে হয়তো নাকি।
আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যায়। তোমার বাবা-মা কি ছেড়ে কথা বলতো আমাদের।
আমি তখন ওদের সব কথা জানালাম। ওরা আমাকে নিতাই এর বাবার ঘরে নিয়ে গেলো। ওখানে যা দেখলাম তাতে আরও অবাক হলাম।
দেখলাম নিতাই এর বাড়ির কুকুর-টা ওখানে শুয়ে আছে।
তাহলে কাল রাতে আমার প্রাণ কে বাঁচালো?
আমি সেইদিন কলকাতায় ফিরে এসেছিলাম। কলকাতায় এসে টানা পনেরো দিন জ্বরে ভুগেছি।