-May i coming sir!! (আমি)-Yes, coming… (স্যার)
-আস্সালামু আলাইকুম স্যার। (আমি)
-ওয়ালাইকুম সালাম। (স্যার)
(স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সামনে দাড়িয়ে আছি। মূলত স্যারের কাছ থেকে ছুটি নেওয়ার জন্যই এসেছি। স্যারের সামনে খাতাটা এগিয়ে দিলাম).
(স্যার সম্পূর্ন লেখা পড়ে নিল)
-ছুটি লাগবে…..?? (স্যার)
-জ্বী.. স্যার। আমার স্যার ভীষণ মাথা ব্যাথা করছে।
যার কারণে, আমার পরের ক্লাস গুলো করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমাকে স্যার এখন ছুটি দিলে আমি আপনার নিকট চির কৃতজ্ঞ থাকিব।
তো, কোনদিকে মাথা ব্যাথা করতেছে? (স্যার)
-স্যার, মাথা ব্যাথা এতটাই বেশী যে, কোন দিকে মাথা ব্যাথা করতেছে সেটাই বুঝতে পারতেছিনা। (আমি)
-খাবার স্কুলে আসার সময় বাড়ী থেকে নিয়ে আসছ নাকি, বাড়ীতে গিয়ে খেয়ে আসবে। (স্যার)
-খাবার স্কুলে আসার সময় নিয়ে আসছি স্যার। (আমি)
-আচ্ছা, খাবার কে রান্না করছে? (স্যার)
-আমার আম্মু স্যার। (আমি)
-ওহ! তাহলে, তোমার আম্মু যে তোমার জন্য খাবার রান্না করছে। তোমার আম্মুর রান্না করতে কী কষ্ট হইনাই? (স্যার)
-জ্বী স্যার, হয়েছে। (আমি)
-আচ্ছা, তো তোমার আব্বু কী করে? (স্যার)
-সি.এন.জি চালায় স্যার। (আমি)
-বাহ! খুব ভালো। তোমার আব্বু রোদ-বৃষ্টিকে পশ্রয় না দিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছে দুটো পয়সার জন্য।
তোমাদেরকে ভালোমন্দ খাওয়ানোর টাকা যোগাড় করার জন্য। তোমার স্কুলের বেতনের টাকা যোগাড় করার জন্য।
কতই না পরিশ্রম করছে তোমার বাবা। তোমার আব্বু-আম্মুরা নিজে না খেয়ে তোমাকে খেতে দিচ্ছে।
স্কুলে যাওয়ার সময় তোমার মা তোমার জন্য ভালোমন্দ খাবার রান্না করে দিচ্ছে। তোমার সকল আবদার পূরণ করছে।
তাদের শুধু একটাই চাওয়া,তোমাকে মানুষের মতো মানুষ করা। তুমি যাতে অন্য দশ জনের সামনেমাথা উঁচু করে দাড়াতে পার। এটাই তাদের সপ্ন।
কিন্তু, তোমার মা-বাবার সপ্ন পূরণ করার জন্য তুমি ঠিক কতটা পরিশ্রম করছো? আমাকে বলতে পারবে? (স্যার)
-(আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলাম। এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই আমার কাছে।)-যাও, খাবার খেয়ে নাও।
যদি বেশী মাথা ব্যথা করে তাহলে, ঔষুধের দোকান থেকে একটা “Ace Plus” ট্যাবলেট খেয়ে নিও। যাও। (স্যার)
(আমি খাতা নিয়ে চলে এলাম। কারণ, স্যারের কথা গুলো আমার ছুটি নেওয়ার মন মানসিকতাকে মেরে ফেলেছে।
অবশ্য, আমার ছুটি নেওয়ার কোনো উদ্দেশ্যই ছিল না। সব দোষ ঐ তৌহিদের। জয়নাল, মাহফুজ, শাওন আজ কেউ-ই স্কুলে আসেনি।
তৌহিদ এসেছিল কিন্তু, সেও এখন স্যার থেকে ছুটি নিয়ে ফেলেছে। ক্লাসে অনেক বন্ধু থাকলেও বেস্টফ্রেন্ড গুলো আলাদা হয়। আমি ক্লাসে চলে আসলাম।)
-দোস্ত, ছুটি নিয়েছিস নাকি? (তৌহিদ)
-না দোস্ত, আমাকে স্যার ছুটি দেয়নি। কিন্তু, আমাকে স্যার ছুটি দিলেও আমি এখন বাড়ী যাবনা। ক্লাস করে তারপর বাড়ী যাব। (আমি)
-তাহলে, তুই ক্লাস কর! আমি চলে যাই। (তৌহিদ)
-দোস্ত, প্লীজ যাস না। আমার ভালো লাগবেনা তোকে ছাড়া। (আমি)
-আমার গফের সাথে দেখা করতে হবে। আমি চলে যাচ্ছি। (তৌহিদ)
-আরে দোস্ত, তোর কাছে কী চার বছরের সম্পর্কের চাইতে দুই দিনের সম্পর্কটা বেশী হয়ে গেল..?? (আমি)
-আমার কাছে দুই দিনের সম্পর্কটা বিশ বছরের চাইতেও বেশী। যেখানে চার বছর সম্পর্কটা আমার কাছে তুচ্ছ ব্যাতীত আর কিছুই মনে হচ্ছে না।
আমি চলে যাচ্ছি। ভালো থাকিস। (তৌহিদ)
(তৌহিদের চলে যাওয়াটা দেখে আছি। কিভাবে একটা বন্ধু এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, বুঝতেও পারছিনা। নিজের চোখে মুকে অসহায়ত্বের ভাব।
যার সাথে আমার চার বছরের সম্পর্ক সে কিনা আমাদের চার বছরের বন্ধুত্বকে দুই দিনের সম্পর্কের চাইতেও নিচু চোখে দেখল।
ভাবতে ভাবতে, চোখের কোনায় জল এসে জমা হলো। কিন্তু, জলটুকু যে গড়িয়ে পরবে, সেই শক্তিটাও নেই।)..(এভাবে কেঠে গেল ১০দিন)
-কিরে দোস্ত, আজ প্রায় ১০দিন হয়ে গেল কিন্তু, তৌহিদ স্কুলে আসতেছেনা কেনো? (মাহফুজ)
-সেটাই তো ভাবতেছি। (আমি)
-আচ্ছা, তৌহিদের মোবাইলে কল করে দেখছস? (জয়নাল)
-করছিলাম। কিন্তু, মোবাইল বন্ধ। (আমি)
-আমি তৌহিদের ভাইয়ের সাথে কথা বলছিলাম। ওর ভাই বলছে, তৌহিদ নাকি ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়াতে গেছে। (শাওন)
-ওহ! তাই বলো। (মাহফুজ)..(দিন যায়, রাত আসে। এভাবে এভাবে কেটে গেল আরো ২মাস)
-আজ প্রায় দুই মাস হয়ে গেল, অথচ তৌহিদের কোনো নাম গন্ধ নেই। এতদিন তো বেড়ানোর কথা নয়।
আমার কিন্তু বেপারটা মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছেনা। (আমি)
-তুই কি বলতে চায়ছিস? (মাহফুজ)
-আমার মনে হচ্ছে, তৌহিদের পরিবার আমাদের থেকে কিছু লুকোতে চাইছে। (আমি)
-আমারও তাই মনে হচ্ছে। আসল ঘটনা জানার জন্য আমাদের উচিত তৌহিদের বাড়ীতে যাওয়া। তোমরা কী বল? (শাওন)
-তাহলে চল আমরা তৌহিদের বাড়ীতে যায়। (আমি)আমরা সবাই তৌহিদের বাড়ীর দিকে হাঁটা দিলাম…….
(প্রায় পনেরো মিনিট সময় লাগে তৌহিদের বাড়ীতে পৌঁছাতে)-সামনে দেখ তৌহিদের ছোট ভাই নিয়াজ। ওর সাথে কথা বলে দেখি।
(শাওন)(নিয়াজের সামনে গিয়ে)-কেমন আছো নিয়াজ? আমি -ভাল আছি। (নিয়াজ)
-তোমাকে একটি কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো! সত্যি করে উত্তর দিবে। (মাহফুজ)
-কী কথা? (নিয়াজ)-তৌহিদ কোথায়…?? (আমি)
(এই প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে তৌহিদের ছোট ভাই নিয়াজ হুর হুর করে কেঁদে উঠল। চোখ দিয়ে বৃষ্টি মত করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।)
-কি হল, তুমি কাঁদছ কেনো? বলো তৌহিদ কোথায়? (শাওন)
-আমার ভাইয়া পাবনার একটি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। ও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত (চোখের পানি মুঁচতে মুঁচতে বলল)। (নিয়াজ)
-কি বলছো কী তুমি? মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি? নিজের ভাইয়ের নামে এত বড় একটা মিথ্যা অপবাদ দিতে একটুও দ্বিধা বোধ করলেনা?(আমি)
-আমি সত্যি বলছি। আমাকে বিশ্বাস করুন। (নিয়াজ)
-আচ্ছা কিন্তু, তৌহিদের মানসিক সমস্যার উৎপত্তি কোথা থেকে? (শাওন)
-তাহলে শুনুন সবাই……আজ থেকে প্রায় দুই মাসেরও বেশি সময়ের আগের কথা, আমার বড় ভাইয়া(তৌহিদ)
দুপুর দেড়টার দিকে স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে চলে এসেছিলো।
পরিবারকে বলেছে, তার এক বন্ধুর সাথে নাকি দেখা করতে যাবে। তাই স্কুল থেকে ছুটি নিয়েছে।
তার বন্ধুর সাথে যখন দেখা করে বাড়ী ফিরেছে ঘড়ির কাটা ঠিক তখন বিকাল ৫:০০টা অতিক্রম করেছে।.সব কিছু ঠিকঠাক ছিল।
কিন্তু, সমস্যা সৃষ্টি হয় সেদিন রাত থেকে। রাত ২টার দিকে কাঁচের গ্লাস ভেঙ্গে যাওয়ার শব্দে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল।
ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম, আওয়াজটা ভাইয়ার রূম থেকে আসছে।
তখন, আমি ভাইয়ার রূমে গিয়ে দেখলাম, ভাইয়া একে একে সব জিনিসপত্র ভেঙ্গে ফেলছে। এভাবে পাঁচ দিন চলে গেল। তাওএকই রকম আচরণ।
তখন, ভাইয়াকে একটি ডাক্তার দেখালে ডাক্তারের পরামর্শে ভাইয়াকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। (নিয়াজ)
-খুবই খারাপ লাগছে দোস্ত। কী থেকে কী হয়ে গেল বুঝতে পারছিনা। (আমি)
তারপর, আমরা চলে এলাম……(এভাবে কেটে গেল আরো ১৫দিন। আমি, মাহফুজ এবং জয়নাল বসে বসে গল্প করছিলাম।
…..কিন্তু, হঠাৎ তৌহিদের আগমন।)
-মাহফুজ, এইটা তৌহিদ না? (আমি)
-তাই তো দেখতেছি। কিন্তু, সে তো হাসপাতালে থাকার কথা। এখানে কেন? তবে কী তৌহিদ সুস্থ হয়ে গেল। নাকি, হাসপাতাল পালিয়ে এল? (মাহফুজ)
-আরে, ওটাও তো আমি ভাবতেছি। চল তো গিয়ে দেখি। (জয়নাল)
আমরা তৌহিদের সামনে গেলাম….-দোস্ত, কবে আসছস তুই? (আমি)
-এই, কে তোমরা? সরে যাও আমার সামনে থেকে। সরে যাও বলছি। (তৌহিদ)
-তানজীদ, আমার মনে হয়, তৌহিদ হাসপাতাল থেকে পালিয়ে আসছে? সুস্থ হয়ে গেলে তো তৌহিদ আমাদেরকে চিনতে পারতো। (মাহফুজ)
-আমি ও এটাই চিন্তা করতেছি। (জয়নাল)
-আমি একটু চালাকি করব নাকি মাহফুজ? (আমি)
-কী রকম? (মাহফুজ)
-অপেক্ষা কর….. আরে তৌহিদ ভাইয়া, আমি বুঝতে পেরেছি তুমি হাসপাতাল পালিয়ে এসেছো তাইনা? (আমি)
-তুমি কিভাবে বুঝলে? (তৌহিদ)
-আরে, তোমাকে তো দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে তুমি হাসপাতাল পালিয়ে এসেছো। কিন্তু, আমি বুঝতে পারছিনা তুমি কিভাবে পালিয়ে এলে?
…ওখানে তো দারোয়ান থাকে। (আমি)
-আমি বুদ্ধি করে পালিয়ে এসেছি? (তৌহিদ)
-ওমা..!! তাই নাকি? তাহলে শুনি তোমার কী বুদ্ধি? (আমি)
-তাহলে, শুনোঃ আমি আর আমার হাসপাতালের আরেক বন্ধু মিলে পরিকল্পনা করলাম যে, আমরা চুপি চুপি হাসপাতাল থেকে লাঠি নিয়ে বের হব।
তারপর হাসপাতালের গেইটের কাছে গিয়ে দারোয়ানকে খুব মারব। তারপর চাবি দিয়ে গেইট খুলে পালিয়ে যাব।
কিন্তু, আমাদের১ম পরিকল্পনা টাই পুরো ভেস্তে গেল। (তৌহিদ)
-কিন্তু, কিভাবে ভেস্তে গেল? (মাহফুজ)
-আমরা পরিকল্পনা মতো ঠিকঠাক ভাবে এগোচ্ছিলাম। কিন্তু, যেই আমরা গেইটের কাছে লাঠি নিয়ে গেলাম তখন দেখলাম দারোয়ান নেই।
কিন্তু, গেইট খুলা। (আমাদের পরিকল্পনা মতে দারোয়ানকে লাঠি দিয়ে মেরে চাবি দিয়ে গেইট খুলে পালিয়ে যাব) কিন্তু, দারোয়ান অই তো নেই।
দারোয়ান না থাকলে চাবি পাব কোথা থেকে। তাই আমরা হতাস হয়ে চলে এলাম। কিন্তু, ২য় পরিকল্পনায় আমরা উত্তীর্ণ হলাম এবং পালিয়ে এলাম। (তৌহিদ)
-আরে, তৌহিদ ভাইয়া তুমি তো দেখতেছি ‘বুদ্ধিমান পাগল’। (আমি)
-আমাকে ডাক্তাররা ও বলছে আমি বুদ্ধিমান। তাই বুদ্ধি করে হাসপাতাল থেকেই পালিয়ে এলাম। (তৌহিদ)
-মাহফুজ, এবার সময় হয়েছে তৌহিদের স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়ার। (আমি)
-Let’s go. (মাহফুজ)(আমি, মাহফুজ, জয়নাল আমরা তিন জনেই একজন আরেক জনের কাঁধের উপর হাত রাখলাম।
তারপর, এক পা দু’পা এগিয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগলাম। মূলত, এইটা আমরা তৌহিদের স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।
কারণ, একদিন আমি, মাহফুজ এবং জয়নাল একজনের কাঁধের উপর আরেকজন হাত রেখে হাঁটতে লাগলাম। ঠিক তখনি সামনে পরলো তৌহিদ।
আর তৌহিদ ও পরে আমাদের সাথে যোগ দিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটতে শুরু করল। আর তখন, আমরা চার জন মিলে একসঙ্গে হেঁটেছি।
আর এটাই আমাদের সেরা স্মৃতি। তৌহিদকে এই স্মৃতিটাইমনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্ট করছি।)তৌহিদ আমাদের দিকে অবাক চোখে চেয়ে আছে।
তার মানে কাজ হচ্ছে। অর্থাৎ, ওর স্মৃতি শক্তি একটু একটু ফিরে আসছে। তৌহিদ একটা চিৎকার দিয়ে বেঁহুশ হয়ে পড়ে গেল।
তারপর আমরা ওকে তাড়াতাড়ি স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। ওকে একটি রূমে সিফ্ট করা হলো।..কিছুক্ষণ পর….
(আমরা হাসপাতালের একটি সিটে বসে আছি। অবশেষে, ডাক্তারের আগমন।)
-এই তোমাদের মধ্যে তানজীদ কে? (ডাক্তার)
-কেনো? আমিই তানজীদ। (আমি)
-আপনি আমার সাথে আসুন। রোগী (তৌহিদ) আপনার নাম ধরেই ডাকছে। (ডাক্তার)
-কী..?? তৌহিদ আমার নাম ধরে ডাকছে। তার মানে তৌহিদের স্মৃতি শক্তি ফিরে এসেছে। (আমি)(আমি তৌহিদের কেভিনে গেলাম)
-দোস্ত, তোর স্মৃতিশক্তি ফিরে এসেছে। (আমি)
-স্মৃতিশক্তি ফিরে এসেছে মানে? আমার কী হয়েছিল তানজীদ? (তৌহিদ)
-সব বলব তোকে! কিন্তু, আগে বল এখন কেমন আছিস? (আমি)
-এখন, ভালো আছি। কিন্তু, আমাকে আগে বল আমার কী হয়েছিল? (তৌহিদ)
-তুই পাগল হয়ে গিয়েছিলি। (মাহফুজ)
-আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম মানে!! তোরা আমার সাথে মজা নিচ্ছিস তাইনা? (তৌহিদ)
-ওহো, না। এইটা একদম সত্যি কথা। (ডাক্তার)
-ডাক্তার সাহেব, কী বলছেন আপনি এসব? (তৌহিদ)
-আচ্ছা তৌহিদ, তোর মনে আছে, তুই লাস্ট কবে স্কুলে গিয়েছিলি? (মাহফুজ)
-মনে আছে, আমি লাস্ট যেদিন স্কুলে গিয়েছিলাম। সেইদিন আমি স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে চলে এসেছিলাম মূলত আমার Gf এর সাথে দেখাকরার কথা ছিল। (তৌহিদ)
-আচ্ছা, তুই যখন তোর Gf এর সাথে দেখা করতে গেলি তখন, তোদের মধ্যে কী হয়েছিল? (আমি)
-তাহলে শুন…..আমি সেদিন দুপুর ২টার দিকে একটি পার্কে চলে গেলাম। (কারণ, হিমাদ্রী আমাকে আসতে বলেছিল) পার্কে গিয়ে দেখি হিমাদ্রী আগে থেকেই বসা।
আমি কাছে যেতেই ও আমার দিকে চোখ লাল করে দেখে আছে।(মনে হলো, আজকে কিছু না কিছু ঘটবেই)
-কিরে হিমাদ্রী, কেমন আছো? (তৌহিদ)
-হ্যাঁ। আমি খুব ভালো আছি। এবং আজকের পর থেকে আমি আরো বেশি ভালো থাকব। (হিমাদ্রী)
-মানে কী? আমি কিছুই বুঝতেছিনা? আমি দেরী করে আসছি বলে রাগ করছো? (তৌহিদ)
-না। এতে আমি মোটেও রাগ করিনি। কিন্তু, জিজ্ঞেস করবেনা কেন তোমাকে আমি এখানে ডেকেছি? (হিমাদ্রী)
-কেনো? (তৌহিদ)
-তোমার সাথে ব্রেকআপ করার জন্য। (হিমাদ্রী)
-ব্রেকআপ মানে! তুমি আমার সাথে মজা করতেছো তাইনা? (তৌহিদ)
-না! আমি মোটেও তোমার সাথে মজা করতেছিনা। আমি তোমার সাথে এখন, এই মূহুর্তে ব্রেকআপ করতেছি। (হিমাদ্রী)
-কিন্তু, কেনো? (তৌহিদ)-কেনো সেটা নিজেকে প্রশ্ন করে দেখো!! উত্তরটা খুব সহজ। (হিমাদ্রী)এইটা বলে হিমাদ্রী চলে গেল।
কিন্তু, ওর চোখের কোনায় অশ্রু ভেজা জল ও দেখতে পেলাম। ঠিক কী কারণে হিমাদ্রী আমার সাথে ব্রেকআপ করলো তা আমি এখনও বুঝতে পারলাম না। (তৌহিদ)
-আসলে, তোর সাথে হিমাদ্রীর ব্রেকআপের কারণ আমরাই। (মাহফুজ)
-মানেটা কী? (তৌহিদ)
-তাহলে আমিই বলছি……(তুই যেদিন হিমাদ্রীর সাথে দেখা করতে গেলি তার আগের দিন রাতে আমি, মাহফুজ, জয়নাল বসে বসে কথাবার্তা বলছিলাম)
-দোস্ত, তৌহিদের এই রকম আচরণ তো আর মেনে নেওয়া যায়না! (মাহফুজ)
-ঠিক বলেছিস, তৌহিদ আজকাল আমাদের বন্ধুত্বের সাথে ওই হিমাদ্রীর সম্পর্ককে তুলনা করছে। তাও আবার কথায় কথায়। (আমি)
-না! না! হিমাদ্রীর জন্য আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট হবে তা তো মেনে নেওয়া যায়না। তৌহিদকে আমাদের কাছে ফেরাতে, আমরা সবকিছু করতে প্রস্তুত। (জয়নাল)
-তাহলে, উপায়!! (মাহফুজ)
-Finally.. Break-Up!! করাতে হবে। (আমি)
-কিন্তু, কিভাবে? (জয়নাল)
-আমার কাছে একটা মেয়ের নামে ফেসবুকে ফেক আইড়ি আছে। ওটাতে হিমাদ্রীর সাথে আমার এড আছে। (আমি)
-কিন্তু, কিভাবে হবে? (মাহফুজ)
-এই দেখ, হিমাদ্রী অনলাইনে আছে। ওকে আগে একটা ম্যাসেজ দিয়। মেয়ের আইড়ি দেখে নিশ্চয় ম্যাসেজের রিপ্লাই দিবে। (আমি ম্যাসেজ দিলাম)
-হ্যালো!! (আমি)
-হাই। (হিমাদ্রী)-তোমার সাথে আমার একটা পারসোনাল কথা আছে। (আমি)
-কী কথা? (হিমাদ্রী)
-তুমি তৌহিদ নামে যে ছেলের সাথে প্রেম করতেছো, সে ছেলেটি আমারসাথেও প্রেম করেছিলো।
-মানে? কি বলতে চায়ছেন কী আপনি? (হিমাদ্রী)
-ভালোবেসেছিলাম তৌহিদকে! কিন্তু, তৌহিদ আমাকে ভালবাসেনি। আমার সাথে তৌহিদ ভালবাসার নামে টাইম পাস করেছে।
আমার ভালাবাসার সাথে তৌহিদ প্রতারণা করেছে। বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাই, আমি চাইনা তুমিও এই বিশ্বাসঘাতকার শিকার হও।
তৌহিদ আমি ছাড়াও আরো অনেকের সাথে প্রতারণা করেছে। তোমার যদি ইচ্ছা হয় তুমি রিলেশন চালিয়ে যেতে পারো। সেটা সম্পূর্ন তোমার বেপার।
আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। ওকে, গুড বাই।
(এইবলে আমি মেসেঞ্জার থেকে বের হয়ে গেলাম। আর হিমাদ্রী আমার কথাবিশ্বাস করে তার পরের দিন তোর সাথে ব্রেকআপ করে দিল।)
-কী..!! তোরাই হিমাদ্রীর সাথে আমার ব্রেকআপ করাইছস। (এইটা বলে তৌহিদ আমাদের পিঁছু ছুটল।)
-বললাম না! বন্ধুত্বের জন্য আমরা সবকিছু করতে পারি। (আমি).