‘বাবা!’ জেমস সিরিয়াস অবাক কন্ঠস্বর শোনা গেল।
হগওয়ার্টস ডিসেম্বরের ঠান্ডায় শুভ্র হয়ে আছে। সূর্যরশ্মি হালকা তুষারে সৃষ্টি করছে চমৎকার প্রতিফলন।
সামনেই ক্রিস্টমাস। এসময় অ্যালবাসের হাত ধরে হ্যারিকে করিডরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সিরিয়াস আশ্চর্য না হয়ে পারল না।
এরপর দৌড়ে জড়িয়ে ধরল বাবাকে। ব্যাপারটা তার স্বভাববিরুদ্ধ তাতে সন্দেহ নেই।
কিন্তু দীর্ঘদিন পরে বাবাকে দেখে বেশ ভাল লাগছে তার। সাধারণত ক্রিস্টমাসের বন্ধে সিরিয়াস,
টেডি আর ভিক্টরির সাথে হগওয়ার্টস এক্সপ্রেসে চেপে বাড়ি ফিরে যায়। বলে নেয়া ভাল টেডি হগওয়ার্টস
থেকে বেরিয়ে পড়লেও ভিক্টরির সাথে লম্বা ভ্রমণটা সে মিস করতে চায় না। যাতায়াত এতটাই নিরাপদ এবং নির্বিঘ্ন যে তাদেরকে
নিতে কারো আসার দরকার পড়ে না। তবে এবার যেহেতু অ্যালবাস প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে তাতে তাদের ক্রিস্টমাস যাত্রায় সঙ্গী
একজন বাড়বে এটুকুই আশা করেছিল সে। সত্যি বলতে ট্রেনে অ্যালবাসকে দেখে শুনে রাখার নির্দেশ ছিল এবার সিরিয়াসের উপরই।
কিন্তু বাবা এত ব্যস্ততার মধ্যেও তাদেরকে নিতে এসে যাবে ব্যাপারটা সত্যিই আশ্চর্যজনক। সম্ভবত ক্রিস্টমাসের জন্যই অরোর
ডিপার্টমেন্ট থেকে স্পেশালভাবে ছুটি নিয়েছে। হ্যারিকে ছুটিতে থাকলেও নানা দিক সামলাতে হয়।
‘বাবা তুমি এখানে?’
‘কেন বাবা এখানে আসতে পারবে না?’ অ্যালবাস গম্ভীর স্বরে বলল। সিরিয়াস তীর্যক দৃষ্টিতে তাকাল তার দিকে। অ্যালবাস হাসি চাপতে পারল না।
‘অনেকদিন হগওয়ার্টসে আসা হয় না। তাই আসলাম। তোমরা দুজন কেমন করছ একটু দেখা দরকার, তাই না?’ হাসল হ্যারি।
খুশিতে সবগুলো দাঁত বেরিয়ে পড়ল সিরিয়াসের। ‘একদম ঠিক বাবা।’
তবে সিরিয়াস বুঝতে পারল হ্যারির এবার হগওয়ার্টসে আসার পিছনে অন্য কোন কারন অবশ্যই আছে।
.
ক্রিস্টমাসে বাড়ি যাবার জন্য সবকিছু গোছগাছ করা শেষ। এখন শুধু ট্রেনে চেপে বসাটাই বাকি। তবে স্টেশনে যাবার সময় এখনো আসেনি।
সিরিয়াস অ্যালবাস দুজনই তাই তাদের বাবার পিছু নিল। এত ব্যস্ততার মধ্যেও হ্যারি কেন হগওয়ার্টসে এসেছে তা যদি জানা যায়।
হ্যারি সোজা মাঠ পেরিয়ে হ্যাগ্রিডের কেবিনের দিকে রওনা দিল।নিষিদ্ধ বনের ধারে হ্যাগ্রিডের কেবিন। কেবিনটায় কেমন বয়সের ছাপ পড়ে গেছে।
কিন্তু তারপরও হ্যাগ্রিডের কেবিনটা দেখলেই কেমন সতেজ একটা অনুভূতি হয়। হ্যারি দরজায় নক করল।
ভিতরে শোনা গেল ফ্যাং এর দুর্বল ঘেউ ঘেউ। তারপর ধুপ ধাপ একটা শব্দ এগিয়ে আসল দরজা পর্যন্ত।
দরজা খোলার পর চিরচেনা দাড়িভরা মুখটাকে উঁকি দিতে দেখা গেল। কিন্তু তার মুখভঙ্গী চিরচেনা নয়।
দরজার সামনে দেখা গেল ভেঙে পড়া বিমর্ষ এক হ্যাগ্রিডকে। সিরিয়াস স্বভাববশত চিৎকার করে অভিবাদন জানাল, ‘হ্যাগ্রিড!’
উত্তরে হাসবার চেষ্টা করল হ্যাগ্রিড। এরপর হ্যারিকে দেখে তার মুখের বিমর্ষ ভাব খানিকটা বেড়ে গেল যেন।
‘হ্যাগ্রিড কি হয়েছে?’ উদ্বিগ্নস্বরে জিজ্ঞেস করল হ্যারি।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল হ্যাগ্রিড। ‘ভেতরে এস হ্যারি। বাকবিক বোধহয় আর বাঁচবে না।’
***
হ্যাগ্রিডের ঘরের ভিতরটা চমৎকার উষ্ণ। ফায়ারপ্লেসে গনগনে আগুন জ্বলছে। পাশের চুলায় বড়সড় একটা কেতলি বসানো।
সামনেই বড় আকারের দুটো চেয়ার। একটায় বসে হ্যাগ্রিড ফুপিয়ে কাঁদছে। অন্যটায় বসে তাকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছে হ্যারি।
সিরিয়াস আর অ্যালবাস হ্যারির পিছনে দাঁড়িয়ে থাকাটাকেই ভাল মনে করল। অ্যালবাস সিরিয়াসের কানে ফিসফিস করে বলল,
‘হ্যাগ্রিড কাদলে তাকে একটা কুনো ব্যাঙের মত দেখায়, ঠিক না?’
সিরিয়াস বিরক্তস্বরে বলল, ‘কুনো ব্যাঙ না, কোলা ব্যাঙের মত দেখায়।’ একনজর হ্যাগ্রিডের দিকে তাকিয়ে আবার বলল, ‘চুপ থাক্ এখন।’
এরপর সে এগিয়ে গিয়ে টেবিলে রাখা বড়সড় রুমালটা নিয়ে দিল হ্যাগ্রিডের হাতে। এরপর শান্তভাবে বলল, ‘বাকবিক ভাল হয়ে যাবে হ্যাগ্রিড।
আমরা ওর জন্য প্রার্থনা করব।’
কান্না কিছুটা কমল হ্যাগ্রিডের। সে হাসার চেষ্টা করল। অ্যালবাস এগিয়ে এসে বলল,
‘আমরা ক্রিস্টমাসের ছুটিতে বাকবিককে ভাল করার জাদু শিখে আসব। এরপর দেখবে ওয়ান্ডের মারপ্যাঁচে বাকবিক ভাল হয়ে যাবে।’
হ্যাগ্রিড তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল ‘ধন্যবাদ।’ এবার সত্যি সত্যি হাসল হ্যাগ্রিড। কান্নামাখা মুখে হাসিটা খুব অদ্ভূত দেখাল।
বাকবিককে কেবিনের বাইরেই রাখা হয়েছে। আসার সময় সিরিয়াসদের চোখে পড়েনি ব্যাপারটা। এর পিছনে অবশ্য বড় ধরণের কারন রয়েছে।
বাকবিকের উপর ডিসইল্যুশনমেন্ট চার্ম প্রয়োগ করা ছিল। এতে সে সাধারণভাবে ছিল অদৃশ্য। হ্যারির কাছে ব্যাপারটায় খটকা লাগল।
‘আচ্ছা হ্যাগ্রিড বাকবিককে ডিসইল্যুশনমেন্ট চার্ম প্রয়োগ করেছ কেন? ওর ক্ষতি হবে এতে।’
হ্যাগ্রিডের মুখ আবার অন্ধকার হয়ে গেল। ‘হ্যারি বনের ড্রাগনগুলো ওকে বেশ জ্বালায়। আমি আশেপাশে না থাকলেই ঝগড়া লেগে যায়।’
‘হ্যাগ্রিড! তুমি আবার বনে ড্রাগন ছেড়েছ?’
হ্যাগ্রিড বুঝল বেফাস কথা বলে ফেলেছে সে। তবে হ্যারির কাছে কিছু লুকানোর নেই। ‘আসলে হ্যারি ওটা অন্য কোন ড্রাগন নয়। নর্বার্ট।
বিল রোমানিয়া ছেড়ে কয়েক মাসের জন্য বাইরে গেছে। ভাবলাম এই কিছুদিন ওদেরকে আমার কাছে রাখি।’
হ্যারির ভ্রূ কুচকে গেল। ‘ওদের?’
হ্যাগ্রিড কাচুমাচু হয়ে বলল, ‘নর্বার্টের একজন সঙ্গীর দরকার, ঠিক না? আর বাচ্চারও।’
হ্যারি একটা নিঃশ্বাস ফেলল। ‘তোমার ড্রাগনগুলোর জন্য তুমি বাকবিকের উপর অত্যাচার করলে?’ রেগে গেছে হ্যারি।
‘আসলে আমি শুধু হঠাৎ হঠাৎ ওর উপর চার্মটা প্রয়োগ করেছি। যখন আমার বাইরে যাবার দরকার হয়েছে শুধু তখন।
সে অদৃশ্য থাকলে নিশ্চয়ই নর্বার্ট দুষ্টুমি করবে না।’ এরপর একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার বলল,
‘কিন্তু আমি সত্যিই বুঝি নি ব্যাপারটা বাকবিকের উপর এত প্রভাব ফেলবে। বেচারার বয়স হয়ে গেছে। আর এখন আমার দোষে মরতে বসেছে বাকবিক।
আমি নিজেকে কিভাবে ক্ষমা করব হ্যারি?’ হ্যাগ্রিড আবার ভেঙে পড়ল কান্নায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল হ্যারি।
শান্তস্বরে বলল, ‘হ্যাগ্রিড পৃথিবীর কেউ অমর না। ভোল্ডমর্টের মত জাদুকরও মৃত্যুকে জয় করতে পারেনি। বাকবিক তো একদিন মারা যাবেই।
এতে তোমার কোন দোষ নেই।’
কথাগুলো হ্যাগ্রিডের উপর অবশ্য তেমন প্রভাব ফেলল না।
সিরিয়াস বড়দের আলোচনায় নাক গলায় নি। সে তীক্ষ্ণভাবে বাকবিককে পর্যবেক্ষণ করছে। বাকবিকের দেহের সামনের অংশটা দানবাকৃতির ঈগলের মত।
ঈগলের পালক দেহের পেছন অংশে গিয়ে পরিণত হয়েছে লোমে। তার পেছনটা ঘোড়ার মত।
একদম দুর্বল হয়ে পড়েছে বেচারা। পালকগুলো বেশিরভাগই খসে পড়েছে। খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে তাকে। সিরিয়াস অনেক শুনেছে বাকবিকের বীরত্বের গল্প।
এমনকি বাকবিক যে তার বাবাকে অনেকবার বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে এ তথ্যও তার অজানা নয়।
ওকে এ অবস্থায় দেখে সিরিয়াস একদমই ভাল অনুভব করছে না। কিছু একটা করার জন্য ভেতরে প্রবল এক তাড়া অনুভব করল সে।
তবে শেষ পর্যন্ত এত ব্যস্ততার মধ্যেও বাবার এখানে আসার কারনটা সম্ভবত বুঝতে পারা গেছে। বাকবিকের সাথে শেষ দেখা করতে? হতে পারে।
কিন্তু সিরিয়াসের মনে হচ্ছে বাকবিকের সাথে শেষ দেখা করার সময় এখনও হয় নি। অন্তত তার উচিৎ হবে না এটাকে বাকবিকের সাথে তাদের শেষ দেখা হবার সু্যোগটা রেখে দেয়া। সে জানে বাকবিককে হারালে হ্যারি বা হ্যাগ্রিড দুজনেই ভেঙে পড়বে। বাকবিক ওদের বন্ধু। খুব পুরোনো আর বিশ্বস্ত বন্ধু।
সিরিয়াস অনুভব করল সামনে তার করার মত বেশ কিছু কাজ আছে।
হগওয়ার্টস ক্যাসেলে ফেরার সময়ও হ্যারির মুখ থেকে বিমর্ষ ভাবটা গেল না। সিরিয়াস সতর্কতার সাথে বাবার মুখের ভাব লক্ষ্য করে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল।
তার মাথায় বেশ কিছু প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে। প্রশ্ন জমিয়ে রাখা ঠিক না।
‘আচ্ছা বাবা বাকবিকের কি হয়েছে?’
হ্যারির মুখে গম্ভীর ভাব ফুটে উঠল। ‘এক্সেসিভ মোল্টিং ডিজিজ। গৃহপালিত হিপোগ্রিফের সাধারণ একটা রাগে।
এতে তাদের পালক সব খসে পড়ে আর বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে তারা।’
‘কেন হয় এই রোগ?’
হ্যারি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “অতিরিক্ত ডিসইল্যুশনমেন্ট চার্ম প্রয়োগ করলে।’
‘এই রোগ দুর করার কোন উপায় নেই?’ অ্যালবাস মাঝখানে বলে উঠল।একটু চিন্তা করল হ্যারি। এই বিষয়ে তার জ্ঞান খুব বেশি নেই। তবে মোটামুটি জানা আছে।’উপায় একটাই আছে। সেটা হচ্ছে ২১ দিনের মত আক্রান্ত হিপোগ্রিফকে বনে ছেড়ে রাখতে হয়।’সিরিয়াসের মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেল। ‘তাহলে তো বাকবিককে সহজেই বাঁচানো যাবে। হগওয়ার্টসে অন্তত বনের অভাবটা নেই।’
হ্যারির মুখটা আরও বিমর্ষ হয়ে গেল। ‘বাকবিকের রোগটা একদম শেষ পর্যায়ে। এখন বনে ছেড়ে দিলেও বাঁচার আশা কম।
এছাড়া বনে ড্রাগন ছাড়া আছে। বাকবিককে সেখানে ছেড়ে দিলে ভাল কিছু আশা করা যাবে না।’
সিরিয়াস চুপ করে গেল।তবে তার চিন্তাভাবনা থেমে গেল না। হঠাৎ মুখ তুলে প্রশ্ন করল, ‘বাবা বাকবিকের কি একদমই কোন সুযোগ নেই?
এর কোন প্রতিষেধক কি নেই? কিংবা কোন স্পেল? যার মাধ্যমে বাকবিকের ক্ষত পূরণ হবে?’
থেমে গেল হ্যারি। ভ্রূ কুচকে কিছু একটা ভাবল সে। এরপর বিড়বিড় করে বলল, ‘ইল্যুশনমেন্ট চার্ম।
ডিসইল্যুশনমেন্ট চার্মের উপর ইল্যুশনমেন্ট চার্ম প্রয়োগ করলে এক্সেসিভ মোল্টিং ডিজিজটা সেরে যায়।
তবে সব ওয়ান্ড ইল্যুশনমেন্ট চার্ম ক্যাস্ট করতে পারে না। খুব শক্তিশালী ওয়ান্ড লাগে।’ এরপর হ্যারি বিমর্ষ মুখে একটু হেসে বলল,
‘আর এরকম শক্তিশালী ওয়ান্ড এখন আর একটাও পৃথিবীতে নেই।’
সিরিয়াস ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করা শুরু করে দিল। ক্যাসেলে প্রবেশ করার পর অ্যালবাসের কি একটা মনে পড়তেই গ্রিফিন্ডর
কমন রুমের দিকে ছুটে গেল। হ্যারি এগিয়ে গেল ম্যাকগোনাগলের অফিসের দিকে। হগওয়ার্টসে আসলে প্রতিবারই প্রফেসর ম্যাকগোনাগল আর প্রফেসর
নেভিলের সাথে সে অন্তত দেখা করে। সিরিয়াস আর হ্যারির সাথে প্রফেসরের রুমে গেল না। বাইরে দাঁড়িয়ে বাবার জন্য
অপেক্ষা করাটাকেই ভাল মনে করল। সত্যি বলতে প্রফেসর ম্যাকগোনাগলকে সে কিছুটা ভয় পায়। অবশ্য তার মাথায় চিন্তার ঝড় বইছে।
চিন্তা করার জন্য তার এই সময়টুকু দরকার ছিল। হ্যারি যখন প্রফেসরের রুম থেকে বেরিয়ে আসল তখনও তার মুখের বিমর্ষ ভাবটা কাটেনি।
সিরিয়াস তার বাবার মুড কখনোই এতটা অফ দেখেনি। তার প্রবল একটা কষ্ট অনুভূত হতে শুরু করল।
সে মনে মনে হাতে নিয়ে ফেলল তার জীবনের সবচেয়ে স্টুপিড প্ল্যানটা।
তবে আগের কাজ আগে। বাবার মুডটা একটু ভাল করার চেষ্টা করা উচিৎ।
‘আচ্ছা বাবা তুমি আমাদের ডিফেন্স এগেইনস্ট ডার্ক আর্ট টিচারকে চেন?’
ব্যাপারটায় কাজ হল। হ্যারি মনোযোগ সিরিয়াসের দিকে ফেরাল। নিঃসন্দেহে টপিকটা হ্যারির পছন্দের।
‘না তো। আমাদের সময় এই পোস্টটা বেশ নড়বড়ে ছিল। সে যাই হোক, তোমাদের টিচারের নাম কি?’
‘প্রফেসর ব্লোফিস। চমৎকার একজন প্রফেসর।’
‘তাই নাকি? বেশ অদ্ভুত নাম। পড়ানোটাও অদ্ভুত না আশা করি।’
‘একদমই না। তবে তিনি মানুষ হিসেবে খুব অদ্ভুত। প্রতিটা দিনই তিনি সেই নিউ ইয়র্ক থেকে অ্যাপারেট করে হগওয়ার্টসে আসেন।
চিন্তা করতে পার বাবা?’
হ্যারির মনোযোগ নিশ্চিতভাবেই সরে গেছে। তাকে অবাক হতে দেখা গেল। মুখের মাংসপেশীতেও ঢিল এসেছে।
অন্তত বাবার দুঃশ্চিন্তা সিরিয়াস কমাতে পেরেছে।
‘নিউ ইয়র্ক থেকে প্রতিদিন অ্যাপারেট করা তো দুঃসাধ্য ব্যাপার। এনার্জি কন্ট্রোল করা তো একপ্রকার অসম্ভব।’
সিরিয়াস হাত নাড়িয়ে বলল, ‘বললাম না উনি খুব অদ্ভুত। এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি তার ছেলের কথা বলেন।
তার ছেলের নাম সম্ভবত পার্সি। পার্সির কাছে কি এক ধরণের ড্রিংক থাকে। প্রফেসর সেগুলোকে বলেন নেকটার আর এম্ব্রোশিয়া।
এগুলো খেলে নাকি অ্যাপারেটের ধকল সব গায়েব হয়ে যায়।’
‘ইন্টারেস্টিং তো। তোমার টিচারের সাথে দেখা করতে হয়। আগে দেখি কেমন শিখিয়েছেন তোমাদেরকে তিনি।’
সিরিয়াস চোখ তুলে তাকাল। ‘ডুয়েল লড়বে বাবা?’
হ্যারি একটু হেসে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। সিরিয়াস মনে মনে বাহবা দিল নিজেকে। কে বলেছে সে কারো মন ভাল করতে পারে না?
ডুয়েলের নিয়মানুযায়ী পিতা পুত্র পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড়াল। সেকেন্ড হিসেবে নেয়ার মত কাউকে অবশ্য দরকার নেই এখানে।
তাই সে ঝামেলায় গেল না তারা। করিডরের বাইরে বেশ কিছু স্টুডেন্ট ঘোরাফেরা করছে। তারা হঠাৎ থেমে হ্যারি সিরিয়াসের দিকে কৌতুহলী হয়ে গেল।
হ্যারি-সিরিয়াস দুজনই বের করল নিজেদের ওয়ান্ড। এরপর বো করে দাঁড়াল সোজা হয়ে। পরমুহুর্তে প্রায় একসাথে দুটো শব্দ শোনা গেল।
এক্সপেলিআরমাস’
‘প্রোটেগো’
হ্যারি অবাক হয়ে দেখল সিরিয়াস সফলভাবে শিল্ড চার্ম প্রয়োগ করেছে। অরোর হিসেবে হ্যারি কিংবদন্তিতূল্য।
আজ পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে এনকাউন্টারে কখনো তার দুবার স্পেল প্রয়োগ করতে হয় নি। ব্যতিক্রম এই প্রথম।
প্রথম ধাক্কাটা কেটে যাবার পর আবার দুটো শব্দ বাতাসে ভেসে বেড়াল। তবে এবার সিরিয়াসেরটা কিছুটা আগে।
‘এক্সপেলিআরমাস’
‘প্রোটেগো টোটালা-‘
হ্যারি একটু ধাক্কা খেল। আর তার হাত থেকে খসে পড়ল তার জাদুদন্ডটা। মুহুর্ত পরেই সিরিয়াসের হাতে হ্যারির ফিনিক্স কোরের ১১ ইঞ্চি ওয়ান্ডটা দেখা গেল।
চোখ বড় বড় হয়ে গেল হ্যারির। হ্যারি পটার, যে অরোর কখনো ডুয়েলিংয়ে হারেনি, সে তার ছেলের কাছে ডিসআর্মড হয়ে গেল। ব্যাপারটা হয়তো লজ্জার।
কিন্তু গর্বে বুক ভরে উঠল হ্যারির। সে অবাক দৃষ্টিতে তাকাল সিরিয়াসের দিকে। সিরিয়াস ঠোটে মুচকি হাসি ফুটে উঠল।
এরপর সে এক ঝলক তাকাল চারপাশে। করিডরে তার পিছনে চোখ পড়তেই সে মনে মনে বলে উঠল, “ওহ শিট!”
গাদাখানেক বইপত্র হাতে একটি সুন্দরমত মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। রাচেল। সিরিয়াসের সাথে তৃতীয় বর্ষেই পড়ে সে।
সম্ভবত তার সবচেয়ে পুরোনো এবং ভাল বন্ধু। তার বাবা মিনিস্ট্রিতে কাজ করে। চোখে অগ্নিদৃষ্টি তার। এগিয়ে এসে চেচিয়ে বলল সে,
“জেমস! আবার করিডরে ডুয়েল করছ তুমি! স্কুলের একটা নিয়ম যদি মানতে! তোমার জ্বালায় বছর শেষে সব পয়েন্ট হারাব আমরা।”
“ইয়ে আশেপাশে তো কোন প্রফেসর নেই…” বলার চেষ্টা করল সিরিয়াস।
হতাশ দৃষ্টিত তাকাল রাচেল। এরপর হ্যারির দিকে তাকিয়ে অভিযোগের ভঙ্গীতে বলল, “আঙ্কেল হ্যারি, করিডরে জাদু নিষিদ্ধ।”
হ্যারি বিব্রত ভঙ্গীতে হাসল। এরপর গম্ভীরতা এনে বলল, “একদম ঠিক। আমার খেয়ালই ছিল না।” এরপর সিরিয়াসের দিকে তাকাল সে,
“সিরিয়াস! আর কোন জাদুমন্ত্র নয়। নিয়মকানুন সব মেনে চলবে। ঠিক আছে?”
দ্রুত মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানাল সিরিয়াস।
রাচেল আহত দৃষ্টিতে তাদের দিকে এক নজর তাকাল। এরপর হতাশভাবে মাথা নেড়ে দৃঢ় পায়ে চলে গেল কমনরুমের দিকে।
হ্যারি ইংগিতপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল সিরিয়াসের দিকে। সিরিয়াস একটু মাথা চুলকাল শুধু। হ্যারি বলল, ‘জাদু ভালই শিখেছ দেখছি।
হ্যারি পটার ফ্যানফিকশন
পটার ম্যানর বরাবরই ক্রিস্টমাসে কোলাহলময় হয়ে
ওঠে। তবে এবার একটু ব্যতিক্রম ঘটবে। পটার ফ্যামিলি ক্রিস্টমাস কাটাবে বারোতে।
মি. ও মি. উইজলি বিশেষভাবে সবাইকে যেতে বলেছেন। সত্যি বলতে এখানে সিরিয়াসের কিছুটা হাত আছে।
ফ্যামিলি গ্যাদারিং বরাবরই চমৎকার বিষয়। মিসেস উইজলির মাথায় ভাবনাটা ঢুকিয়ে দেয়া খুব কঠিন কোন বিষয় না।
সিরিয়াসের প্ল্যানের অংশ এটা। আরও দুইদিন হাতে আছে ক্রিস্টমাসের।
কিন্তু পটার ম্যানরে ইতোমধ্যেই অন্তত হাজারবার পেঁচা এসে মিসেস উইজলির চিঠি দিয়ে গেছে।
সেজন্য তারা বারোতে যাবার জন্য সবকিছু দ্রুত গোছগাছ করাটাকেই ভাল মনে করল।
‘জিনি আমার বাড়তি চশমাটা কোথায়?’ চিৎকার করে বলল হ্যারি।
পাশের রুম থেকে জিনির উত্তর শোনা গেল, ‘টেবিলের ড্রয়ারে দেখ।’
ড্রয়ার খুলে চশমাটা ব্যাগে পুরে নিল হ্যারি। হঠাৎ তার মনে হল ড্রয়ারে কিছু একটা মিসিং আছে।
‘জিনি, আমার ড্রয়ারে মরেডার্স ম্যাপটা ছিল না?
কোথায় ওটা?’
জিনি হাল ছেড়ে স্টাডিরুমে আসল। ‘নেই ওটা এখানে?’
‘না তো। দীর্ঘদিন তো এখানেই ছিল।’
জিনি হাত নাড়িয়ে বলল, ‘বাদ দাও। তোমার আর সেটার প্রয়োজন নেই। দ্রুত কাপড় গোছাও। দেরি হয়ে যাচ্ছে।’
.
বারোতে যাবার জন্য হ্যারিরা অবশ্য জাদু ব্যবহার করল না। সাধারণ মাগল গাড়ি দিয়েও ভ্রমনে আনন্দ আছে।বারোতে পৌছেই হ্যারি লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিল। এখানে আসলেই তার অসাধারণ একটা অনুভূতি হয়।একমাত্র হগওয়ার্টস ছাড়া এই অনুভূতিটা সে কোথাও পায় না। ইতোমধ্যেই বেশিরভাগ উইজলি বাড়ি ফিরে এসেছে।বিল-ডেলাকৌর, রন-হারমায়নি, জর্জ-এঞ্জেলিনা, চার্লি সহ তাদের পুরো পরিবার হাজির। পার্সি অবশ্য এখনো আসেনি।
বেশ উৎসবের একটা আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে এখানে। পটাররা ঢুকে পড়ল বারোতে।
.
বারোতে ঢোকার পর জেমস সিরিয়াসের প্রথম কাজ হল হারমায়নিকে খুজে বের করা।
আন্ট হারমায়নিকে সে পেঁচা মারফত জানিয়ে দিয়েছিল বিশেষ একটা বই আনতে।
‘এনশিয়েন্ট এন্ড পাওয়ারফুল ম্যাজিক’। বেশ দুর্লভ বই। কিন্তু মিনিষ্টার অভ ম্যাজিকের কাছে দুর্লভ বলে কোনো ব্যপার নেই।
হারমায়নি তার জন্য বইটা এনেছে। বারোর তৃতীয় তলায় হারমায়নিকে পাওয়া গেল। রনের রুমটা এখন দখল করেছে তার পুরো পরিবার।
তারাও বেশিক্ষণ হয়নি এসেছে। হারমায়নিকে বইয়ের কথা বলতেই তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
বইটা সিরিয়াসের হাতে দেয়ার আগে কড়াভাবে বলল, “বইয়ের স্পেলগুলো কোনোভাবেই ব্যবহার করবে না।
মনে রাখবে খুব প্রাচীন আর শক্তিশালী জাদু বিষয়ে এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
শুধুমাত্র জানার জন্য এই বইয়ের তথ্যগুলোর সত্যিই কোনো বিকল্প নেই।
আর বইয়ের অনেকগুলো স্পেলই সাধারণ জাদুদন্ডে কাজ করেনা। মনে রেখ কথাগুলো।”
সিরিয়াস হেসে মাথা নাড়ল। সে বুঝে ফেলল তার প্রয়োজনীয় তথ্য বইটায় আছে।
নিচতলায় নেমে বইটা নিরাপদ জায়গায় রেখে সে দৌড়ে গেল ভিক্টরির খোঁজে।
তিনতলায় ভিক্টরির জন্য আলাদা রুম বরাদ্দ আছে। বিল-ডেলাকৌরের মেয়ে ভিক্টরি উইজলি এবার হগওয়ার্টসের সপ্তম বর্ষে পড়ে।
সিরিয়াস রুমে ঢুকে রুম গোছগাছ করতে দেখল ভিক্টরিকে।
“হেই গার্ল কি খবর?” গম্ভীর গলায় বলার চেষ্টা করল সিরিয়াস। ভ্রু কুচকে তাকাল ভিক্টরি।
সিরিয়াস এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল, “ব্যাপার কি? টেডিকে আশেপাশে দেখা যাচ্ছে না। রহস্যজনক।”
ভিক্টরি এবার তীব্র দৃষ্টিতে সিরিয়াসের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘মার খাবি, সিরিয়াস। ফুট এখান থেকে।’
মার খাবার ভয়ে সিরিয়াস কাবু হল না। বরং দাঁত বের করে হেসে বিছানায় বসল।
‘ভিক্টরি, টেবিলে যে চিঠিটা পড়ে আছে ইচ্ছা করলেই কিন্তু আমি নিয়ে নিতে পারতাম।
নেই নি কিন্তু!’
ভিক্টরি দ্রুত চিঠিটা লুকিয়ে ফেলল। নিঃসন্দেহে টেডির চিঠি। সিরিয়াসের দিকে হতাশ দৃষ্টিতে তাকাল সে।
তার আপন ছোটভাই থাকা স্বত্বেও জালা যন্ত্রণা কাকে বলে টের পায়নি। কিন্তু সে সব পুষিয়ে দেয়ার জন্য সিরিয়াস
আর অ্যালবাসের মত দুজন কাজিনই যথেষ্ট। অবশ্য জ্বালালেও এদেরকে ভিক্টরি বেশ স্নেহ করে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নাড়ল সে।
‘কিছু খাবি, জেমস?’ ব্যাগ হাতড়াতে হাতড়াতে বলল ভিক্টরি। সিরিয়াসের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
এখনও সিরিয়াসের হগসমিডে যাবার সময় হয় নি।
বন্ধের পর হয়তো প্রথম টুরটা হবে। কিন্তু ভিক্টরি সপ্তম বর্ষে পড়ায় সে হগসমিডে প্রায়ই যেতে পারে।
আর সিরিয়াসের কাছে হগসমিড মানেই সুস্বাদু খাবার। ভিক্টরির সুবাদে হগসমিডের সব ধরণের মিষ্টান্ন সিরিয়াসের আস্বাদন হয়ে গেছে।
নিঃসন্দেহে কিছু খাবার কথা বলতে হগসমিডের কোন মজাদার খাবারই বুঝিয়েছে সে।
চকোলেট ফ্রগটা মুখে পুরে আসল কথায় আসল সিরিয়াস। ‘আচ্ছা ভিক্টরি ছুটির সপ্তাহখানেক আগে তোমাকে লেকের পাড়ে দেখেছিলাম।’
ভিক্টরির মুখ লাল হয়ে গেল। টেডি হগওয়ার্টসে এসেছিল সেদিন। এবং সিরিয়াসের উল্লেখিত সময়টায় সে টেডির সাথেই ছিল।
বেশি কিছু তো হয়নি। এক দুটো চুমুই খেয়েছে দুজন। কিন্তু সিরিয়াস দেখল কিভাবে?
আবার সিরিয়াসের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকানোর চেষ্ট করল ভিক্টরি। কিন্তু সিরিয়াস ব্যাপারটায় পাত্তা দিল না।
“কিন্তু তোমার ডিভাইনেশন ক্লাসটা ঠিক সেসময়েই ছিল। ক্লাস ফাঁকি দেয়ার মত মেয়ে তুমি না।
সেদিন তোমার ডিভাইনেশন ক্লাসে উঁকি দিয়েই নিশ্চিত হই ব্যাপারটায়। এখন কথা হচ্ছে একই সময়ে দুই জায়গায়ই তুমি উপস্থিত থাক কীভাবে?’
ভিক্টরি হতাশ গলায় বলল, ‘তুই ভালভাবেই জানিস কিভাবে। এখন ব্যাপারটা আয কাউকে বলিস না। খুব গোপনীয় বিষয় এটা।’
সিরিয়াস মাথা নেড়ে বলল, ‘তোমার অনেক সিক্রেটই আমার কাছে সেফ আছে। সেটা কোন সমস্যা না। কিন্তু আমার একটা অনুরোধ আছে।’
‘কি অনুরোধ?’
সিরিয়াস তার দুষ্টুমি মার্কা হাসিটা দিল। ‘তোমার টাইম টার্নারটা আমাকে কিছুক্ষণের জন্য দিতে হবে। এখন না।
যখন চাইব তখন।’
এখানে বলে নেয়া ভাল মিনিস্ট্রির যুদ্ধে সব টাইম টার্নার নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে আরো উন্নতভাবে নতুন জেনারেশন টাইম টার্নার বানানো হয়।
এগুলো সর্বনিম্ন পনের মিনিট অতীত পর্যন্ত যেতে পারে এখন। তাই এ ব্যাপারে কড়াকড়িও বেশি।
ভিক্টরি আতকে উঠে বলল, ‘দেখ সিরিয়াস ব্যাপারটা খুব গোপনীয়।
যাদের ক্লাসের শিডিউলগত সমস্যা হয় শুধুমাত্র তাদেরকে বিশেষ নিয়মে প্রফেসর ম্যাকগোনাগল টাইম টার্নার দিয়ে থাকেন।
আমি তোকে কিভাবে দেই জিনিসটা? যদি হারিয়ে যায় নিশ্চিতভাবেই বিপদে পড়তে হবে।’
‘ভিক্টরি ঐদিন লেকের পাড়ে টেডির সাদা পোশাকটা কিন্তু সুন্দর ছিল। পোশাকটা ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করার মত লম্বা সময় কিন্তু আমি সেখানে ছিলাম!’
সিরিয়াসের হুমকি খুব নিয়মিত ব্যাপার। তাই ভিক্টরি ব্যাপারটায় তেমন পাত্তা দিল না। তার টেডির পোশাকটার কথা মনে পড়ে গেল।
‘জানিস জেমস, টেডি অরোর হবার চিন্তা ভাবনা করছে। ব্যাপারটা ভালই হবে কি বলিস? ওর কাছের সব মানুষই ডিফেন্সিফ ম্যাজিকে ভাল ছিল।
পটার আঙ্কেল, লুপিন, টোংকস।’
ভিক্টরি হঠাৎ কিছুটা উদাস হয়ে গেল। ‘ঐদিন টেডি ক্যাসেলে আসার পরই তার চুলগুলো গাঢ় নীল রং ধারণ করেছিল। কেন জানিস?’
সিরিয়াস কিছু বলল না।
‘কারন ওর বাবা মার কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। ঐ ক্যাসেলেই তার বাবা মা মারা গেছে। সেই ক্যাসেলেই ওর প্রিয় ব্যক্তিত্ব,
তার গডফাদার পটার আঙ্কেল জাদু দুনিয়াকে শয়তানের হাত থেকে বাঁচিয়েছিল।
চিন্তা করে দেখ্ ওর জন্য ক্যাসেলটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, কতটা স্মৃতিময়!’
একটু থামল ভিক্টরি। সিরিয়াস কিছু বলল না। সত্যি বলতে এসব কথা শুনতে তার এতটা খারাপ লাগে না।
ভিক্টরি টেডির কথা মনে করে আবেগপ্রবণ হয়ে উঠেছে। সিরিয়াস তাকে সে সুযোগটা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
‘ব্যাপারটা ওর জন্য খুবই কষ্টকর ছিল। সবার বাবা মা আছে, ওর নেই। একটু চিন্তা করে দেখ সে তার বাবা মার কোন স্মৃতিই তার নেই।
সবসময় সে তাদের কথা চিন্তা করত। ভেবে দেখ একজন কিশোরের জন্য সময়টা কি কষ্টকর। তবে আঙ্কেল হ্যারিকে ধন্যবাদ।
তিনি ওর এই কষ্টটাকে অনেকাংশেই কমিয়ে দিয়েছেন। বেচারা টেডি! এত আপনজনের মধ্যে থেকেও কত দুঃখী সে।’
ভিক্টরির চোখ চকচক করছে। আরেকটু গেলে হয়তো চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়বে।
সিরিয়াস শান্ত স্বরে বলল, ‘তুমি জানো, তোমার বাবা মা টেডিকে বেশ পছন্দ করে। আর বাবাও তোমাকে পছন্দ করে।
তোমাদের বিয়েটা নিঃসন্দেহে চমৎকার একটা দিন হবে। আমি প্রায়ই কল্পণায় তোমাদেরকে বিয়েতে হাত ধরাধরি করে বসে থাকতে দেখি।
তোমাদেরকে একসাথে দেখতে সত্যিই ভাল লাগবে। আমি এখনই প্ল্যান করা শুরু করে দিয়েছি যে তোমাদের বিয়েতে কি কি দুষ্কর্ম করা যায়!’
হেসে ফেলল ভিক্টরি। সিরিয়াসের মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলল, ‘তোর টাইম টার্নার লাগবে না? আচ্ছা যা নিস।
তবে সাবধানে ব্যবহার করিস ঠিকাছে?’
খুশিতে ভিক্টরিকে জড়িয়ে ধরল সিরিয়াস। ‘অনেক অনেক ধন্যবাদ ভিক্টরি। যাও আগামী এক সপ্তাহ তোমাকে…..মানে তোমাদেরকে আর জ্বালাব না।’
ভিক্টরি হাসল।
ভিক্টরির রুম থেকে বেরিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল সিরিয়াস। যোগাড়যন্ত্র প্রায় শেষ। এখন শুধু মূল কাজটাই বাকি।কাজের বাকি অংশ হগওয়ার্টসে। হগওয়ার্টস ফিরে যাওয়ার দিন গুণতে শুরু করল সিরিয়াস।
মধ্যরাতে হগওয়ার্টস ক্যাসেলে আশ্চর্য নিস্তব্ধতা নেমে আসে। শুধু মাঝে মধ্যে সিড়িগুলোর ক্যাচক্যাচ শব্দ
আর আওলারি থেকে ভেসে আসে পেঁচার আর্ত ডাক। গভীর মনোযোগে কান পাতলে ক্যাসেলের ভূতদের ফিসফিসানিও শোনা যায়।
মধ্যরাতের একমাত্র করণীয় হচ্ছে ঘুমানো কিংবা পড়াশোনা। কিন্তু সিরিয়াস নিয়মের ধার ধারার প্রয়োজনীয়তা কখনোই অনুভব করেনি।
ক্রিস্টমাসে বন্ধ শেষ হবার পর থেকেই এই সময়ের অপেক্ষায় ছিল সে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে পা টিপে ছেলেদের ডর্মিটরি থেকে
বেরিয়ে আসল সিরিয়াস। কমনরুম পেরিয়ে আস্তে করে দরজা খুলে সিঁড়ি দিয়ে নিচে এসে দাঁড়াল। চারপাশে একবার সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে নেয় সে।
কাউকে দেখা যাচ্ছে না আশেপাশে। ইনভিসিবিলিটি ক্লোকটা আগেই গায়ে চাপানো উচিৎ ছিল। কিন্তু তাতে তেমন কোন কৃতিত্ব থাকে না।
তবে এখন পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। কোনরকম বিপদে না পড়ে কাজটা শেষ করা খুব জরুরী। সুতরাং ক্লোকটা গায়ে চাপানোর সিদ্ধান্ত নিল সে।
হঠাৎ পিছনে মৃদু শব্দ হতেই নিঃশ্বাস আটকে ফেলল। চট করে পিছনে তাকাতেই চোখ কপালে উঠে গেল সিরিয়াসের। র্যাচেল!
ভ্রূ কুচকে সে সিরিয়াসকে বলল, ‘এত রাতে করিডরে কি করছ? দ্রুত উঠে এস। গ্রিফিন্ডরকে তুমি রীতিমত বিপদে ফেলবে।’
চারপাশ নিরব থাকায় কথাগুলো অবচেতনভাবেই ফিসফিসিয়ে বলল সে। কিন্তু বলা বাহুল্য কথাটা সিরিয়াসের মনে ধরল না।
এই মেয়ে তাকে ডর্মিটরি থেকে বেরুতে দেখল কিভাবে? ঝামেলা।
‘র্যাচেল আমার মনে হয় তোমার উচিৎ ডর্মিটরিতে ফিরে যাওয়া। আমার ছোট একটা কাজ আছে। কিছুক্ষণ পরে যাব আমি।’
চোখ পাকিয়ে তাকাল র্যাচেল। ‘যদি কোন প্রফেসরের চোখে পড় নিশ্চিত বড় ধরণের পয়েন্ট হারাব আমরা। এখনো সময় আছে রুমে ফিরে যাও।’
হাত নাড়িয়ে র্যাচেলের কথা উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করল সিরিয়াস। ‘চিন্তার কিছু নেই। তুমি নিশ্চিত থাকতে পার কেউ দেখতে পাবে না আমাকে। যদি….’
সিরিয়াস কথা শেষ করতে পারল না। খুব কাছে কোথাও মৃদু একটা শব্দ শোনা গেল। চারপাশ নিস্তব্ধ থাকায় এই মৃদু শব্দও স্নায়ুতে ফেলে দিল প্রচন্ড চাপ।
সিরিয়াস দ্রুত কয়েক রকমের সম্ভাবনার কথা হিসেব করে ফেলল। সে পকেট থেকে বের করল একটা পার্চমেন্ট। অন্য হাতে উঠে এল তার ওয়ান্ড।
এরপর মৃদু শব্দে কিছু শব্দ আওড়াল। ‘আমি কসম খেয়ে বলছি আমার কোন ভাল উদ্দেশ্য নেই।’
চোখ বড় বড় হয়ে গেল র্যাচেলের। ‘আমি জানতাম তোমার কোন ভাল উদ্দেশ্য নেই। আমার মনে হচ্ছে আমার প্রফেসর ম্যাকগোনাগলকে জানানো উচিৎ।’
সিরিয়াস মনে মনে বলল, ঝামেলা। ভেবে পেল না এই মেয়েকে বিষয়টা কিভাবে বোঝাবে। ইতোমধ্যেই মরেডার্স ম্যাপটায় চিহ্ন ফুটে উঠতে শুধু করেছে।
হগওয়ার্টসের সম্পূর্ণ অবয়ব ভেসে উঠেছে সিরিয়াসের চোখের সামনে। সিরিয়াস নিঃশ্বাস আটকে ফেলল। ফিলচকে দেখা যাচ্ছে এদিকেই আসছে।
শুধুমাত্র আরেকটু এগিয়ে বাম দিকে মোড় নিলেই দেখে ফেলবে তাদেরকে। র্যাচেল এখনো তার নীতিকথা থামায় নি।
সিরিয়াস কোনভাবে ম্যাপে ফিলচের নাম দেখিয়ে চুপ করতে বলল তাকে। সে কি বুঝল ককে জানে। ফিলচ একদম কাছে এসে গেছে।
হাতে সময় নেই। ইনভিসিবিলিটি ক্লোকটার ভাজ খুলে পড়তে পড়তে অনেক দেরি হয়ে যাবে। বেচারার খুব বয়স হয়ে গেলেও এতটুকু তেজ কমেনি।
সিরিয়াস আচমকা র্যাচেলের হাত ধরে ডাকদিকে ছোটা শুরু করল। অল্প কথায় সিরিয়াস তাকে পরিস্থিতিটা বোঝানোর চেষ্টা করল।
র্যাচেল কিছু বুঝল বলে মনে হল না। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব সে।
‘ র্যাচেল এই রুমটায়। দ্রুত ঢুক। ফিলচ নিশ্চয়ই আমাদের পায়ের শব্দ শুনেছে। তার কাছে ধরা পড়লে খবর আছে।’
তারা গুটিকয়েক রুমে ঢুকে অন্যপাশ দিয়ে আবার বেরিয়ে আসল। পিছনে কোন পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। সিরিয়াস ম্যাপটা চেক করে দেখল।
নাহ কেউ নেই পিছনে। একটু থেমে দম ফিরিয়ে আনল তারা। র্যাচেল হতবাক হয়ে গেছে। এর আগে তার সাথে এমন কিছু ঘটেনি।
হগওয়ার্টসের কোন নিয়মই সে ভাঙেনি। মধ্যরাতে করিডর ধরে দৌড়ানো তো বহু দুরের ব্যাপার। সে হতভম্ব গলায় বলল, “জেমস, তুমি করছটা কি?”
সিরিয়াস বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকাল। র্যাচেল আর কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস করল না। সিরিয়াস দ্রুত হাতে ক্লোকটা ছড়িয়ে দিল তাদের দুজনের উপর।
অল্প কথায় এর কার্যকারীতা বুঝিয়ে বলল সে। এরপর ধীরে ধীরে এগোতে শুরু করল। পথঘাট পুরোপুরি গুলিয়ে গেছে।
ম্যাপটা দেখে রাস্তা ঠিক করার চেষ্টা শুরু করল সিরিয়াস। সামনে গিয়ে ডান দিকের করিডর ধরে এগিয়ে যেতে হবে।
কিন্তু ডান দিকে বাক নিতেই চমকে উঠল তারা। মিসেস নরিস! বলে রাখা ভাল মিসেস নরিস ফিলচের দ্বিতীয় বিড়াল।
প্রথম মিসেস নরিস মারা গেছে অনেক কাল হয়ে গিয়েছে। পরবর্তীতে ফিলচ আরেকটা বিড়াল পালা শুরু করে।
প্রথম বিড়ালের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েই বোধহয় এটার নামও মিসেস নরিস রাখে সে। বিড়াল তার নামের মর্যাদা রেখেছে।
এটাও আগের মিসেস নরিসের মত একইরকম খবিস! ম্যাপে বিড়ালটাকে আগেই দেখার কথা।
কিন্তু সিরিয়াস পথ ঠিক করতে এতটাই মনোযোগী ছিল খেয়াল করেনি সেটা। সে ব্যাপারটা পাত্তা না দেয়ার চেষ্টা করল। সে জানে তারা এখন অদৃশ্য।
কিন্তু মিসেস নরিস তীক্ষ্মদৃষ্টিতে ঠিক তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। সিরিয়াস চেষ্টা করল ধীরে ধীরে বিড়ালটাকে এড়িয়ে যেতে।
কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে বিড়ালটার প্রবৃত্তি খুবই প্রখর। হঠাৎ করেই তীব্র কন্ঠে ‘ম্যাও’ বলে চিৎকার করে উঠল সেটা।
সাথে সাথে দ্রুত পদশব্দ এগিয়ে আসার শব্দ শোনা গেল। কারও বুঝতে অসুবিধা হল না পদশব্দটা কার।
নিজেদেরকে আর নিরাপদ মনে হলো না সিরিয়াস- র্যাচেলের। উল্টো ঘুরে আবার দৌড় শুরু করল তারা।
বড়সড় একটা দরজা পেয়ে দ্রুত ঢুকে পড়ল ভিতরে। কিন্তু তারা অবাক হয়ে আবিষ্কার করল তারা কোন রুমের ভিতরে ঢুকে পড়েনি।
বরং হগওয়ার্টস ক্যাসেলের বাইরে এসে গেছে। অনেকটা এক্সিট ডোরের মত। এর আগে কখনো এই দরজা দেখেনি সে।
বাইরে এসে সিরিয়াস হালকা আশাহতই হল। সে চাইছিল র্যাচেলকে রেখে এসে সে তার কাজ করবে।
কিন্তু একবার বাইরে এসে যাওয়ার আবার ভিতরে যাবার প্রশ্নই আসে না। এই রিস্কটুকু নিতেই হবে।
দৌড়ানো থামিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করল তারা। ফিলচ নিশ্চয়ই ক্যাসেলের বাইরে খুঁজতে আসবে না।
সিরিয়াস হঠাৎ একটা বিষয় খেয়াল করল। ইনভিসিবিলিটি ক্লোকের কারনে র্যাচেল তার খুব বেশি কাছাকাছি। ব্যাপারটা এতক্ষণ মাথায় আসেনি।
খেয়াল হতেই সিরিয়াস অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেল। আড়চোখে দেখল র্যাচেলের গালও লাল হয়ে গেছে।
তবে সেটা ঠান্ডায় নাকি অন্য কোন কারনে সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারল না। চাঁদের মৃদু আলোয় কেমন অদ্ভূত দেখাচ্ছে তাকে।
সিরিয়াস অনেক কষ্টে তার চোখ ফিরিয়ে নিল। র্যাচেল আপনমনেই বলল, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না এই মধ্যরাতে আমি ক্যাসেলের বাইরে।
যদি ধরা পড়ি নিশ্চিত এক্সপেল।’
সিরিয়াস শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করল, ‘চিন্তা করো না। কাজটা শেষ করেই ফিরে যাব।’
ভ্রূ কুচকে সিরিয়াসের দিকে তাকাল র্যাচেল , ‘এর মানে আমাকেও তোমার সাথে যেতে হবে? ওহ্ না!’
সিরিয়াস নির্বিকারভাবে বলল, ‘ইচ্ছে হলে চলে যেতে পার। আমার কোন সমস্যা নেই। বরং আরও ভাল হয় তাতে।’
সে ক্লোকটা তাদের গা থেকে সরিয়ে নিয়ে ভাজ করে ফেলল। এরপর রওনা দিল হগওয়ার্টসের লেকের দিকে।
র্যাচেল কোন উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত সিরিয়াসকে ফলো করা শুরু করল। বিড়বিড় করে বলতে শুরু করল যে কিভাবে
ছেলেরা সবকিছুতেই ভজকট পাকিয়ে ফেলে।
লেক পর্যন্ত তেমন কোন কথা হলো না আর। আশেপাশের নিস্তব্ধতা তাদের মধ্যেও এক ধরণের নির্বাক অনুভূতি এনে দিল।
চাঁদের অস্বচ্ছ আলোয় জায়গাটাকে কেমন রহস্যময় বলে মনে হচ্ছে। গাছের ফাকফোকরে মাঝে মধ্যে ডেকে উঠছে অচেনা কোন পাখি।
পরিবেশটা মনে কেমন তরল একটা অনুভূতি এনে দেয়।
‘আচ্ছা তোমার কাজটা কী?’ অবশেষে জিজ্ঞেস করল র্যাচেল।
‘আমার কাজ আর যাই হোক খারাপ কিছুইনা এটুকু জেনে রাখ।’
‘ওহ’
আবার ফিরে এল অস্বস্তিকর নিরবতা। ঝোপঝাড় ভেঙে হাঁটতে শুরু করল তারা। কিছুক্ষণ পর থেমে গেল সিরিয়াস।
র্যাচেল আশপাশটা দেখার চেষ্টা করল। চাঁদের আলো থাকা সত্তেও ঠিকঠাক বুঝতে পারল না তারা কোথায় আছে।
চাঁদের আলো এক ধরণের বিভ্রমের সৃষ্টি করে। তবে ক্যাসেলটা খুব বেশি দুরে না। সামনে জলাশয় মত কিছু একটা দেখা যাচ্ছে।
র্যাচেল বুঝতে পারল তারা হগওয়ার্ট লেকে এসে গেছে। সিরিয়াস হঠাৎ ঘুরে র্যাচেলের উদ্দেশ্য গম্ভীরভাবে
কিছু কথা বলল, ‘সত্যি বলতে কাজটা খুবই জঘন্য আর বিপজ্জনক। তোমাকে অনুরোধ করব তুমি কোন চেচামেচি করবে না।
এবং ঘটনাটা আর কাউকে বলবে না। এইটুকু বিশ্বাস তোমার উপর রাখছি আমি।’
দ্বিধান্বিতভাবে মাথা নাড়ল র্যাচেল। ঘুরে দাঁড়িয়ে জাদুদন্ড বের করল সিরিয়াস। এরপর সে একটা অদ্ভূত কাজ করল।
র্যাচেল সত্যিকার ভাবেই বিস্মিত হয়ে গেল এবার। সিরিয়াস ফিসফিসিয়ে চিৎকার করে উঠল, ‘বোম্বার্ডো!’
কিছু একটা ভাঙার শব্দ পাওয়া গেল। র্যাচেল এবার ভালভাবে খেয়াল করে দেখল তাদের সামনে উঁচু বেদীর মত কিছু একটা।
সাথে সাথে ব্যাপারটা মাথায় আঘাত করল র্যাচেলের । প্রফেসর ডাম্বলডোরের কবর এটা। সিরিয়াস কবরটা ভেঙে ফেলেছে!
র্যাচেল হাত দিয়ে মুখ ঢাকল। হতভম্ব হয়ে গেছে সে।
.
সিরিয়াস ধীরে ধীরে ভাঙা টুকরা সরিয়ে একটা নিঃশ্বাস নিল। এরপর সর্বোচ্চ সহনশীলতা এক করে হালকা ঝুকে কবরটায় ঢুকিয়ে দিল তার একটা হাত।
এক মুহুর্ত পরেই দ্রুত হাতটা তুলে এনে ছিটকে সরে আসল কবরটা থেকে। তার হাতে একটা দন্ড দেখা যাচ্ছে। কারুকাজ করা একটা ওয়ান্ড।
পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী জাদুদন্ড। এল্ডার ওয়ান্ড! সিরিয়াস র্যাচেলের দিকে তাকিয়ে বিব্রত একটা হাসি দেয়ার চেষ্টা করল। ‘ভয়ের কিছু নেই।
তোমাকে পরে সব কিছু ব্যাখ্যা করছি।’ সিরিয়াস খেয়াল করল র্যাচেল এখনো অবাক দৃষ্টিতে ভাঙা কবরটার দিকে তাকিয়ে আছে।
সম্ভবত এখনও বিষয়টা হজম করে উঠতে পারেনি। গত দুই দশকে এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত কবরটা ভাঙা হল।
প্রথমবার ভাঙা হয়েছিল ক্ষমতার জন্য, দ্বিতীয়বার একজন্য টিনেজ জাদুকরের একটা স্টুপিড প্ল্যানের জন্য।
তবে সিরিয়াস জানে র্যাচেলকে এখন কবরটার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেয়া যাবে না। এতে সবকিছু পুরোপুরি গোলমেলে হয়ে যাবে।
সে র্যাচেলের মনোযোগ অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা করল।
‘র্যাচেল দেখ লেকটা কি সুন্দর দেখাচ্ছে, তাই না? চাঁদের আলোয় সম্পূর্ণ লেকটাই কাল্পণিক আয়নার মত লাগছে।’
র্যাচেল তীব্র দৃষ্টিতে তাকাল সিরিয়াসের দিকে। দৃষ্টি দেখে বোঝা গেল র্যাচেল সিরিয়াসের মাথার নাট বল্টু নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে সে।
কিন্তু এই দৃষ্টি সিরিয়াসের একটা হার্টবিট মিস করিয়ে দিল। সে অনেক কষ্টে চোখ ফিরিয়ে আমতা আমতা করে বলল,
‘এখান থেকে এখন মনে হয় চলে যাওয়া উচিৎ। আরও একটা কাজ বাকি এখনও।’
এবার র্যাচেলের ভ্রু কুঞ্চিত হল আরেকবার।
‘এরপর কি করবে? হগওয়ার্টস ক্যাসেলটাই গুড়িয়ে দিবে নাকি? আর চলে যাবে মানে? কবরটা এভাবে ফেলে যাবে?
তুমি করছটা কি, সিরিয়াস?’
সিরিয়াস বুঝতে পারল মেয়েটাকে এনে সত্যিই বড় ধরণের ঝুকি নিয়ে ফেলেছে। এভাবে ওকে নিয়ে আসা একদম উচিৎ হয়নি।
সিরিয়াস আরেকটা মৃদু চেষ্টা করল। কবর থেকে র্যাচেলের দৃষ্টিটা অন্তত সরাতে হবে।
‘দেখ ঐ যে একটা তারা’, আকাশের দিকে দেখাল সে। ‘দেখতে পাচ্ছ? তারার আলোয় তোমাকে কিন্তু সুন্দর দেখাচ্ছে। একদম অপরূপ।
একদম চাঁদের মত।’
এবার বিস্মিত দৃষ্টিতে র্যাচেল তাকাল সিরিয়াসের দিকে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এবার সে নিশ্চিত যে সিরিয়াসের মাথার নাট বল্টু ঢিলে ঢালা হয়ে গেছে।
তবে সিরিয়াস বুঝতে পারল কাজে দিয়েছে এই পদ্ধতি। আর কয়েক মুহুর্ত র্যাচেলকে ব্যাস্ত রাখতে পারলেই হয়ে যাবে।
হঠাৎ পিছনে মৃদু একটা শব্দ শোনা গেল। সিরিয়াস কোন শব্দ আশা করেনি, কিন্তু বুঝতে পারল ঘটনা শুরু হয়ে গেছে।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে শব্দটা র্যাচেলের কানেও গেছে। সে আবার তার দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়া শুরু করল কবরের দিকে।
সিরিয়াসের মনে আতঙ্ক জমে উঠল। র্যাচেলকে অন্তত এখন কিছুতেই দেখতে দেয়া চলবে না। তার মাথায় বয়ে গেল চিন্তার ঝড়।
মরিয়া হয়ে সিরিয়াস তার জীবনে করা আরেকটি অদ্ভূত কাজ করে ফেলল। সে আচমকা ঝুকে র্যাচেলের ঠোঁটে ডুবিয়ে দিল নিজের ঠোট।
ভাল ব্যাপারটা হচ্ছে র্যাচেলের মনোযোগ এইবার সত্যিকার অর্থেই সরে গেল। সে তৃতীয়বারের মত হতভম্ব হয়ে গেল। কিন্তু নিজেকে ছাড়িয়ে নিল না।
সিরিয়াস জানে না কয় মুহুর্ত পার হয়েছে। এক সেকেন্ডও হতে পারে, এক যুগও হতে পারে। যখন তার হুশ ফিরল দ্রুত ছাড়িয়ে নিল নিজেকে।
কান পেতে দ্রুত শুনে নিল বিপদ কেটে গেছে কিনা। সবকিছু শুনশান। সে দ্রুত কৈফিয়তের ভঙ্গিতে বলল, ‘আমি দুঃখিত।
সত্যিই আমি খুবই দুঃখিত। আমি চাইনি এমনটা করতে। কিন্তু…..দুঃখিত।’
র্যাচেল কিছু বলল না। তার চোখেমুখে এখনও বিস্ময় দৃষ্টিটা লেগে আছে। খেয়াল করলে গালের রক্তিম আভাটাও চোখে পড়বে।
র্যাচেলের দৃষ্টি আবার কবরটার দিকে চলে গেল। তার বিস্মিত মুখে আবার বিস্ময়ের ছাপ পড়ল। ‘কিভাবে হল এটা?’
কবরটা এক মুহুর্ত আগেও ভাঙা ছিল। কিন্তু এখন সব ঠিকঠাক। ভাঙার কোন চিহ্নও নেই। সিরিয়াস হেসে বলল, ‘ম্যাজিক!’
এরপর র্যাচেলের আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে টেনে বলল, ‘তোমাকে পরে সব বলছি। এখন চল। আসল কাজ এখনো বাকি।’
.
জেমসকে নিষিদ্ধ বনের দিকে যেতে দেখে একটু অবাকই হল র্যাচেল। তবে সে জানে এই ছেলের পক্ষে সবই সম্ভব।
তবে ভয়াবহ ব্যাপারটা হচ্ছে র্যাচেল এতে কোন আতঙ্ক বোধ করছে না। সিরিয়াসের আশেপাশে থাকলে তার এমনিতেই নিরাপদ বোধ হয়।
এবং সে এই অনুভূতিকে ঘৃণা করার চেষ্টা করে।
সিরিয়াস অবশ্য নিষিদ্ধ বনের ভিতর গেল না। হ্যাগ্রিডের কেবিনের সামনে এসেই থেমে গেল। এতক্ষণ কোন কথা হয়নি তাদের মধ্যে।
সত্যি বলতে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা নিয়ে উভয়ই লজ্জিত বোধ করছে। অদ্ভূত ব্যাপারটা হচ্ছে বিষয়টা র্যাচেলের কাছে একদমই খারাপ লাগেনি।
র্যাচেল আবায নিজেকে মনে করিয়ে দিল তার এই অনুভূতিকে ঘৃণা করা উচিৎ।
সে যাই হোক জেমস সিরিয়াস শেষ পর্যন্ত তার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, “হ্যাগ্রিডের বাগানে স্বাগতম।”
এরপর সে এগিয়ে গেল বাকবিকের দিকে। র্যাচেল বাকবিকের জন্য দুঃখ বোধ করল। বেচারার গায়ের অনেক জায়গায় চামড়া দেখা যাচ্ছে।
খসে পড়ছে সব পালক। তাকে দেখতে কেমন শীর্ণ আর অসহায় লাগছে। সিরিয়াস একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“বেচারা বাকবিক অনেক কষ্ট সহ্য করেছে। এবার এর একটা হেস্তনেস্ত করা উচিৎ।”
“বাকবিক? ওর নাম উইদারউইংস না?”
“তুমি যা ডাকতে চাও তাই। বাকাবিক বা উইদারউইংস কোন ব্যাপার না।”
বাকবিককে মিনিস্ট্রির হাত থেকে রক্ষার জন্য হ্যাগ্রিড তাকে পুণরায় নামকরণ করেছিলেন। অন্যান্য সকলে তাকে সেই নতুন নামেই চেনে।
র্যাচেলের দ্বিধাটা তাই অস্বাভাবিক কিছু নয়।
সিরিয়াস তাকাল তার হাতের এল্ডার ওয়ান্ডটার দিকে। এরপর লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে হারমায়নির বইটা থেকে প্রাপ্ত ইল্যুশনমেন্ট স্পেলটা মনে মনে আওড়াল।
তার মুখে আত্মবিশ্বাসের দৃঢ় আভা ফুটে উঠেছে। ডিসইল্যুশনমেন্ট চার্মের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দূর করতে ব্যবহৃত হবে ইল্যুশনমেন্ট চার্ম।
সে ওয়ান্ডটা দুলিয়ে স্পেলটা উচ্চারণ করল। আচমকা জাদুদন্ড থেকে সোনালী রশ্মির স্রোত বেরিয়ে এসে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল বাকবিককে।
যখন রশ্মির শেষ চিহ্নটাও উধাও হয়ে গেল, দেখা গেল ঝরঝরে স্বাস্থ্যবান এক বাকবিক দাঁড়িয়ে আছে।
বাকবিক অবাক হয়ে পালক নেড়েচেড়ে নিজেকে দেখার চেষ্টা করল। বেচারা ভেবে পাচ্ছে না হঠাৎ করেই তার সব পালক গজিয়ে গেল কিভাবে।
কিংবা হঠাৎই সে শরীরে এত বল পাচ্ছে কেন। এরপর সিরিয়াসের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল, যেন সব রহস্য বুঝে ফেলেছে।
বো করার ভঙ্গিতে তার দিকে ঝুকে গেল বাকবিক। সিরিয়াস নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
প্রাচীন এবং শক্তিশালী জাদুগুলো সবসময়ই ঝামেলা দেয়। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা চমৎকার কাজ করেছে।
সিরিয়াস বাকবিকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। ডানা ঝাপটে আনন্দ প্রকাশ করল হিপোগ্রিফটা। র্যাচেলের চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।
তবে সত্যি কথাটা হচ্ছে বাকবিককে সুস্থ্য দেখে তার বেশ ভাল লাগছে। হ্যাগ্রিডের বিমর্ষ মুখ দেখতে একদমই ভাল লাগে না তার।
হঠাৎ হ্যাগ্রিডের কেবিনের মধ্য থেকে শব্দ শোনা গেল। বাগানের আওয়াজ সম্ভবত তার কানে চলে গেছে।
সিরিয়াস চায় না এখন কেউ তাদেরকে দেখে ফেলুক। সে দ্রুত হাতে ইনভিসিবিলিটি ক্লোকটা ছড়িয়ে দিল নিজেদের গায়ের উপর।
এরপর তাড়াতাড়ি ত্যাগ করল জায়গাটা। দ্রুত পায়ে ছুটে চলল ক্যাসেল অভিমুখে। পেছনে হ্যাগ্রিডের দরজা খোলার আওয়াজ পাওয়া গেল।
কিছুক্ষণ পর ভেসে আসল হ্যাগ্রিডের বিকট গলার আনন্দধ্বনি। সিরিয়াসের মনে প্রশান্তি বয়ে গেল।
“জেমস, ব্যাপারটা সত্যিই খুব সাহসের ছিল। তোমার এত কিছু করার কারন একটা অবুঝ প্রাণীকে সাহায্য করা।
সেই সাথে ফিরিয়ে আনা গুটিকয়েক মানুষের মুখের হাসি। আমি তোমার জন্য সত্যিই খুব গর্ব বোধ করছি। সব জাদুকরের এই গুণ থাকে না।”
“র্যাচেল, তুমি কি আমার প্রশংসা করছ? এই বিরল গুণটাও কিন্তু সব উইচের থাকে না।
আমার মনে পড়ে না যে তুমি এর আগে জীবনে কখনো আমার বিষয়ে ভাল কথা বলেছ।”
চোখ পাকিয়ে তাকাল র্যাচেল। “এটা প্রশংসা ছিল না, জেমস। আমি আর যা-ই করি তোমার প্রশংসা করব না।”
সিরিয়াস হেসে ফেলল। সে খেয়াল করল ইনভিসিবিলিটি ক্লোকের মধ্যে র্যাচেলের এত কাছাকাছি থাকা স্বত্তেও তার অস্বস্তি লাগছে না।
বরং বেশ স্বাচ্ছন্দ বোধ করছে। র্যাচেলের দিকে তাকাল সে। তার চোখে চোখ আটকে গেল মুহুর্তের জন্য। র্যাচেলকে এত সুন্দর আর কখনোই লাগেনি।
তার হৃৎপিন্ডে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।
“উমম….আমাদের ক্যাসেলের দিকে যাওয়া উচিৎ না?” হঠাৎ বলে উঠল র্যাচেল।
তারা ক্যাসেলের দিকে না গিয়ে যাচ্ছে লেকের দিকে। সিরিয়াস রহস্যময় ভঙ্গিতে হাসল। “কাজটা শেষ করে নিই আগে।”
র্যাচেলের ভ্রূ কুচকে গেল। “আমি ভেবেছিলাম তোমার কাজ বাকবিকের উপর জাদু করা পর্যন্তই।”
“তুমি ঠিকই ভেবেছ।”
র্যাচেল দ্বিধান্বিত বোধ করল।
লেকের কাছাকাছি এসে একটা গাছের আড়ালে থামল তারা। সিরিয়াস ইনভিসিবিলিটি ক্লোকটা ভাজ করে ফেলল।
এখান থেকে ডাম্বলডোরের কবরটা স্পষ্ট দেখা যায়।
সিরিয়াস পকেট থেকে বড় একটা লকেট বের করল। অন্তত র্যাচেলের তা-ই মনে হল। তবে লকেটের মাথায় বাধা গোলাকার বস্তুটা আকারে খুব বড়।
র্যাচেল হঠাৎ চিনতে পারল জিনিসটা। সে অবাকস্বরে বলল, “প্রফেসর ম্যাকগোনাগল নিশ্চয়ই তোমাকে টাইম টার্নারটা দেন নি।
তোমার এটার কোন প্রয়োজনীয়তাই নেই।”
সিরিয়াস অদ্ভূত ভঙ্গিতে তাকাল তার দিকে। র্যাচেলের একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মনে পড়ে গেল।
সেই সাথে মনে পড়ল এল্ডার ওয়ান্ডটার ভাগ্যে কি ঘটেছে। সে একঘেয়ে কন্ঠে শেষ করল কথাটা, “তার দেয়ার দরকারও নেই।”
সিরিয়াস মাথা ঝাকাল।
“শোন র্যাচেল, এখন টাইম টার্নারটা দিয়ে ঠিক পনের মিনিট পেছনে চলে যাব। সুতরাং একটু সাবধান হতে হবে। কোন আওয়াজ করা চলবে না।”
মাথা নাড়ল র্যাচেল। এরপর সিরিয়াস লকেটটা তাদের দুজনের গলায় গলিয়ে দিল। লকেটরূপী ঘড়িটা পিছিয়ে দিল ঠিক পনের মিনিট।
র্যাচেল কোন পরিবর্তন টের পেল না। অবশ্য পনের মিনিটে কি-ই বা পরিবর্তন হবে।
শুধু চাঁদের আলোয় গাছের ছায়াগুলো কিছুটা স্থান পরিবর্তন করেছে মাত্র।
সিরিয়াস আশপাশটা লক্ষ্য করে লকেটটা খুলে ফেলল। এরপর ছায়াময় ঝোপালো অংশটায় গাছের আড়ালে দাঁড়াল তারা।
বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। মুহুর্তকয়েক পরেই আরেক সিরিয়াস আর র্যাচেলকে দেখা গেল এদিকে আসতে।
ঐ সিরিয়াসের হাতে ভাজ করা ইনভিসিবিলিটি ক্লোক। আর র্যাচেলের মুখে দ্বিধার একটা ছাপ।
র্যাচেল লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিল। সে এই প্রথম নিজেকে বা নিজের একটা কপিকে সামনাসামনি দেখছে।
আগে যা ঘটেছিল তাই ঘটতে শুরু করল। সিরিয়াস ডাম্বলডোরের কবরটা ভেঙে ফেলল। হাত ঢুকিয়ে বের করে আনল এল্ডার ওয়ান্ডটা।
অবশেষে র্যাচেল তর্ক করা শুরু করল সিরিয়াসের সাথে। ঝোপের পিছনে লুকিয়ে থাকা সিরিয়াস ফিসফিসিয়ে বলল, “সম্ভবত আমার এখনই যাওয়া উচিৎ।
এমনটাই ঘটেছিল। এখানে অপেক্ষা কর, র্যাচেল।”
র্যাচেল সত্যি বলতে এখনো ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারছে না জেমসের উদ্দেশ্যটা কি।
তাকে কিছু বলার আগেই সে মৃদু পায়ে ছায়াময় অংশ দিয়ে কবরটার দিকে চলে গেল। তার হাতে এল্ডার ওয়ান্ডটা ধরা।
সে এখন তর্করত সিরিয়াস-র্যাচেলের একদম পিছনেই। দুইজন সিরিয়াসকে একসাথে দেখা নিঃসন্দেহে খুব অদ্ভূত লাগল র্যাচেলের কাছে।
সিরিয়াস খুব সাবধানে পা ফেলে ভাঙা কবরটার কাছে পৌছাল। সে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করছে। বিপদটা এলো র্যাচেলের কাছ থেকে।
ঝোপের পিছনে বসে থাকা র্যাচেলের পায়ের নিচে হঠাৎ করে একটা ছোট ডাল ভাঙার ‘মট’ আওয়াজ শোনা গেল।
অসাবধানতাবশত র্যাচেল ডালটার উপর বেশি চাপ দিয়ে ফেলেছিল। ঝোপের আড়ালে থাকলেও র্যাচেলের অবস্থান কবরটা পিছনদিকেই।
ফলে কবরের সামনের র্যাচেলের মনোযোগ চলে আসল এদিকে। সে তাকাতে শুরু করল কবরটার দিকে।
ঝোপের আড়ালে র্যাচেল নিঃশ্বাস আটকে ফেলল। সিরিয়াস জায়গায় জমে গেল যেন। কবরের সামনের র্যাচেল তাকে দেখে ফেলবে যে কোন সময়।
র্যাচেল আতঙ্ক বোধ করল। সে হঠাৎ বুঝে গেল কেন আচমকা তাকে চুমুটা দিয়েছিল সিরিয়াস। এবং চোখের সামনে সেটা আরেকবারের মত ঘটতে দেখল।
একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে। সিরিয়াস ওদিকে ধীরে ধীরে এল্ডার ওয়ান্ডটা কবরে জায়গামত ঢুকিয়ে রাখল।
এরপর তার নিজের ওয়ান্ডটা বের করে দ্রুত বিড়বিড় করে বলল, “রিপেরো!”
ভাঙা টুকরাগুলো জোড়া লেগে আচমকা কবরটা ঠিক আগের মত হয়ে গেল। আদৌ এটা ভাঙা হয়েছে এমন কোন চিহ্নই আর নেই।
সিরিয়াস হাপ ছেড়ে ফিরে আসল ঝোপের আড়ালে। কবরের ওখানে সিরিয়াস আর র্যাচেল এখনো চুমু থামায় নি।
সিরিয়াস সেদিকে একবার তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল, “আমি ব্যাপারটার জন্য সত্যিই দুঃখিত। আমার হাতে আর কোন উপায় ছিল না।”
“ইটস ওকে। বুঝতে পেরেছি আমি। তুমি ভেবেছিলে কবরটার দিকে তাকালে আমি তোমাকেই দেখতাম।
আর দুইজন সিরিয়াসকে দেখলে নিঃসন্দেহে বিকট চিৎকার দিতাম আমি। আর এই নিরব পরিবেশে সে আওয়াজ ক্যাসেল পর্যন্ত অনায়াসেই চলে যেত।
আর ধরা পড়ে যেতাম আমরা, ঠিক না?”
খুশিতে সিরিয়াসের দাঁত বেরিয়ে পড়ল। “বোঝার জন্য থ্যাংকস।”
অবশেষে অতীতের সিরিয়াস র্যাচেল হ্যাগ্রিডের কেবিনের দিকে চলে গেল। বাকবিককেও দেখা গেল দ্বিতীয়বারের মত সুস্থ্য হয়ে উঠতে।
এরপর নিজেদের সময়ে আবার ফিরে আসল তারা। ঝোপ থেকে বেরিয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল সিরিয়াস। “সব ঠিকঠাকমত শেষ হয়েছে।
এই অ্যাডভেঞ্চারে তুমি আমার সঙ্গী হওয়ার সত্যিই ভাল লাগছে। আমি এতেই খুশি যে তুমি আমার উপর আর খেপে নেই। এবার চল ক্যাসেলে যাওয়া যাক।”
চোখ মটকে তাকাল র্যাচেল। “কে বলল খেপে নেই? এই ঠান্ডায় স্কুলের নিয়ম ভেঙে ঘোরাঘুরি করাটা রীতিমত ভয়ংকর ব্যাপার।”
হেসে ফেলল সিরিয়াস।
.
চাঁদ এখন একদম মাথার উপরে। জোছনায় ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। হগওয়ার্টস ক্যাসেলে আলোছায়া মিশে অদ্ভূত নকশা সৃষ্টি করেছে।
হঠাৎ দেখলে মনে হয় প্রাচীন কোন রাজ্য থেকে উঠিয়ে আনা কোন রাজপ্রাসাদ।
সিরিয়াস আর র্যাচেল এই অসাধারণ পরিবেশে ক্যাসেলের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। সিরিয়াসের এক হাতে ভাজ করা ইনভিসিবিলিটি ক্লোক, অন্য হাতে ওয়ান্ড।
র্যাচেলকে মনে হচ্ছে কিছুটা আনমনা। যেন গভীর ভাবনায় ডুবে গেছে। আচমকা সে বলে উঠল, “তাহলে জেমস সবই তোমার প্ল্যান ছিল।”
সিরিয়াস দ্বিধান্বিত বোধ করল। র্যাচেল সেটা খেয়াল করে বলল, “মানে করিডরে তোমার বাবার সাথে ডুয়েল লড়া থেকে সম্পূর্ণটাই তোমার প্ল্যান ছিল, তাই না?
এল্ডার ওয়ান্ডের প্রকৃত মালিক ছিলেন আঙ্কল পটার। সুতরাং সেটা তোমার হাতে সঠিকভাবে কাজ করত না। তোমার নির্দেশ মানত না পুরোপুরি।
কিন্তু এক্ষেত্রে ওয়ান্ডের পূর্ণ বিশ্বস্ততা তোমার দরকার ছিল। ফলে তুমি করিডরে তোমার বাবাকে ডুয়েল লড়তে উৎসাহিত করলে।
এবং শেষ পর্যন্ত তাকে হারিয়েছ তুমি।”
“হ্যাঁ জেতাটা খুবই আজব একটা ব্যাপার ছিল। আমি ভেবেছিলাম অন্তত দুই তিনবার চেষ্টা করতে হবে আমার। ভাগ্য সহায় ছিল হয়তো।
প্রথমবারেই জিতে গেছি আমি।”
“তোমার প্ল্যানটা সিরিয়াসলি অদ্ভূত ছিল। টাইম টার্নারটা এ্যাড করে সেটাকে করে তুলেছিলে আরো ভয়ংকর।
অতীতে গিয়ে এল্ডার ওয়ান্ডটা জায়গামত রেখে আসা। যেন ওয়ান্ডটা সরানোই হয়নি। অদ্ভুত।”
“এখানে অদ্ভুতের কি দেখলে?”
র্যাচেল এই প্রশ্নের জবাব দিল না। পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিল। “কিন্তু জেমস, এল্ডার ওয়ান্ডটা তো জায়গামত পরেও রাখতে পারতে।
অতীতে যাবার কি দরকার ছিল?”
হাসল সিরিয়াস। “ঠিকই বলেছ। কিন্তু কবরটা ভাঙা অবস্থায় রেখে আসাটা একদম উচিৎ হত না। ব্যাপারটা খুব রিস্কি হয়ে যেত।
ভিতরে ওয়ান্ডটা সহ কবরটা দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিলাম আমি। বলা যায় না যে কেউ দেখে ফেলতে পারত।
কে জানে হয়তো এখনও কেউ আমাদেরকে দেখছে।”
তারা ক্যাসেলের দরজার কাছে এসে গেছে। কথা বলতে ব্যস্ত থাকায় খেয়াল করেনি দরজাটার কাছে একটা লম্বা ছায়া দাঁড়িয়ে রয়েছে।
র্যাচেল ব্যাপারটা প্রথমে খেয়াল করল। হাঁটা থামিয়ে দিল সে। ফিসফিসিয়ে বলল, “তুমি ঠিকই বলেছ, জেমস। কেউ সত্যিই আমাদেরকে দেখছে।”
সিরিয়াস হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকাল সামনের দিকে। ইনভিসিবিলিটি ক্লোকটা গায়ে না চাপানোর জন্য নিজেকে মনে মনে আরেকবার গাল দিল।
দরজাটার অন্ধকারে তাদের দিকে ভ্রূ কুচকে তাকিয়ে আছেন স্বয়ং প্রফেসর ম্যাকগোনাগল।
সকালটা দেখেই আন্দাজ করা যায় সারাটা দিন কিভাবে কাটবে। সে হিসেবে সিরিয়াসের আজকের দিনটা জঘন্য কাটবার কথা।
এর পিছনের কারন দুটি। প্রথমটা খুব স্বাভাবিকভাবেই ডিটেনশন। দ্বিতীয় ব্যাপারটা হচ্ছে অন্যদের মজার পাত্র হওয়া।
মাঝরাতে কোন মেয়ের সাথে ডর্মিটরি ছেড়ে স্কুলের বাইরে ঘোরাঘুরি করে ধরা পড়লে, মানুষ আপনার দিকে কৌতুক দৃষ্টিতেই তাকাবে।
করিডর ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় চ্যাং জর্ডান স্বগতোক্তি করল, “তোমার জন্য সমবেদনা, সিরিয়াস। আশা করি পরের ডেটটা দারুণ হবে।”
সিরিয়াস বলতে পারে জর্ডান হাসি আটকানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছে। সে প্রতিবাদী কন্ঠে বলে উঠল, “ওটা কোন ডেট ছিল না।”
জবাবে জর্ডান মৃদু হাসল। ছোটদের বোকামী দেখে বড়রা যেরকম হাসি দেয় আরকি। এরকম কথাবার্তা আরো প্রচুর শুনতে হল।
সবার মুখেই মেকী সমবেদনা, চেষ্টা করছে রীতিমত মজা নেয়ার। শেষ পর্যন্ত সিরিয়াসের মনে হল এর চেয়ে ফিলচের অধীনে
ডিটেনশন বেশি আরামদায়ক। দুঃখজনক হলেও সিরিয়াসের ভাগ্যে তা-ই জুটল। কোন জাদু ব্যবহার না করতে
দিয়ে দীর্ঘ তিন ঘন্টা রীতিমত তাকে খাটাল ফিলচ। হগওয়ার্টসে সংরক্ষিত প্রাইজগুলো খুটিয়ে পরিষ্কার করতে হল তাকে।
ফিলচের জন্য লিখে দিতে হল গাদাখানেক চিঠি। এর চেয়ে জঘন্য কাজ, মিসেস নরিসের জন্য বিছানা বানিয়ে দিতে হল সিরিয়াসকে।
তবে ভাল ব্যাপারটা হচ্ছে ফিলচের ডেস্কে ছাত্রদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা দারুণ কিছু জাদুসামগ্রী পাওয়া গেল।
ফিলচের অজান্তে সেগুলো পকেটবন্দী করল সিরিয়াস। লাভ বলতে এটুকুই। ওদিকে র্যাচেলও ডিটেনশন পেয়েছে।
তবে তার বিষয়ে খোঁজ নিতে ব্যর্থ হয়েছে সে। কাউকে তার কথা জিজ্ঞেস করলেই সে কৌতুকদৃষ্টিতে তাকাচ্ছে সিরিয়াসের দিকে।
খারাপ খবর সত্যিই খুব দ্রুত ছড়ায়।
তবে এত কিছুর মধ্যেও স্বস্তির ব্যাপারটা কাল রাতেই টের পেয়েছে সিরিয়াস। প্রফেসর ম্যাকগোনাগল খুব বেশি কিছু জানতে পারেন নি।
তিনি ভেবেছেন দুইজন আন্ডারএজ জাদুকর শুধু হালকা এ্যাডভেঞ্চারের খোঁজে স্কুলের বাইরে বেরিয়েছিল।
আসল ব্যাপারটা ধরতে পারলে তাদের কপালে এক্সপেলের মত জটিল শাস্তি জোটার সমূহ সম্ভাবনা ছিল।
হাউজ থেকে কোন পয়েন্টও কাটেননি তিনি। আরেকটা ভাল খবর হচ্ছে আজ বিকেলে তার বাবা আসবে স্কুলে।
হ্যাগ্রিডের খবর পেয়েই যে সে ছুটে আসছে তা বোঝার জন্য জ্যোতিষি হতে হয় না।
ডিটেনশন আর জঘন্য ক্লাসগুলো করতে করতেই দিনটা কেটে গেল। অবশেষে বিকালে র্যাচেলের সাথে দেখা হল তার।
হাতে গাদাখানেক বই নিয়ে করিডর ধরে হেঁটে আসতে দেখা গেল তাকে। মুখে কালিঝুলি মাখা, বিরক্ত দৃষ্টি।
সিরিয়াস তাই তাকে আর ডিটেনশন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে সাহস করল না। শুধু চোখ তুলে বলল, “ওয়াও র্যাচেল, তোমাকে দারুণ দেখাচ্ছে।”
র্যাচেল আহত দৃষ্টিতে তাকাল শুধু।
একসাথে তারা গ্রিফিন্ডর কমন রুমের দিকে এগিয়ে গেল। ভাগ্য ভাল করিডরে তেমন কারো সাথে দেখা হল না।
সবাই হয়তো কমন রুমে নয়তো মাঠে ঘোরাফেরা করছে। কমনরুমে অবশ্য অ্যালবাসের কটুক্তি থেকে বাঁচতে পারল না সিরিয়াস।
তবে পাত্তা না দিয়ে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নিল সে। এরপর হ্যাগ্রিডের খোঁজ নেয়ার জন্য রওনা দিল নিষিদ্ধ বনের ধারে।
খুব স্বাভাবিকভাবেই পিছু নিল অ্যালবাস আর র্যাচেল।
.
হ্যাগ্রিডের মেজাজ খুব ফুরফুরে। সে উৎফুল্লতার সাথে ব্যস্তভাবে বাগান মেরামত করছে।
বাকবিকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার চেষ্টা আরকি। সিরিয়াসকে দেখেই উত্তেজিত হয়ে উঠল বাকবিক।
হ্যাগ্রিড হাক ছাড়ল, “সিরিয়াস! দেখে যাও কি অদ্ভুত কান্ড! বাকবিক হঠাৎ করেই একদম সূস্থ্য হয়ে গেছে। পুরো ম্যাজিকের মত!”
র্যাচেল আর সিরিয়াস দৃষ্টি বিনিময় করল। এরপর প্রবল বিস্মিত হবার অভিনয় করতে হল তাদের। অ্যালবাস অবশ্য সত্যিই অবাক হল।
হিপোগ্রিফটার চারপাশে ঘুরে খুটিয়ে দেখতে শুরু করল সে।
“হ্যারিকে খবর দিয়েছি”, হ্যাগ্রিড বলল, “এই সুন্দর ব্যাপারটা ওর দেখা উচিৎ।”
সিরিয়াস বাকবিকের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। অ্যালবাস তাকে বশ করার চেষ্টা করছে।
বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। হ্যারিকে কিছুক্ষণের মধ্যেই ছুটে আসতে দেখা গেল। কাজের মাঝখান থেকেই উঠে এসেছে বেচারা।
এ সময়টায় চাপ একটু বেশি থাকে।
বাকবিককে দেখে হ্যারির মুখে চওড়া একটা হাসি ফুটে উঠল। সে হিপোগ্রিফটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।
এরপর হ্যাগ্রিডকে জিজ্ঞেস করল, “ঘটনা কি?”
“কাল রাতের ঘটনা, হ্যারি”, উত্তেজিত স্বরে বলতে শুরু করল হ্যাগ্রিড, “হঠাৎ বাগানে আওয়াজ শুনে বেরিয়ে আসি।
বাকবিককে চেক করতে এসে দেখি ও পুরোপুরি সুস্থ্য। বিশ্বাস করতে পারিনি নিজের চোখকে। একদম আজব ঘটনা!”
হ্যারি চট করে তাকাল সিরায়াসের দিকে। সিরিয়াস হঠাৎ করেই বাকবিকের পালকের প্রতি অতি আগ্রহী হয়ে উঠল।
হ্যারি দৃষ্টি ফিরিয়ে হ্যাগ্রিডের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করল। “সেটা বড় কোন ব্যাপার না, হ্যাগ্রিড। বাকবিক ভাল হয়ে উঠছে এটাই বড় কথা।”
.
হ্যারির হাতে বেশি সময় নেই। মিনিস্ট্রিতে ফিরে যেতে হবে তার। অ্যালবাসের মাথায় হাত বুলিয়ে কিছু উপদেশ দিয়ে দিল।
এরপর সিরিয়াসের কাঁধে হাত রেখে চলে এল কিছুটা সামনে।
“তো সিরিয়াস, সবকিছু ঠিকঠাক? পড়াশোনা চলছ ঠিকমত?”
সিরিয়াস দ্রুত মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।
“হ্যাগ্রিড বলল কাল রাতে সে কিসের যেন শব্দ পেয়েছে। এরপরই দেখা গেল সুস্থ্য হয়ে উঠেছে বাকবিক। অদ্ভূত না?”
সিরিয়াস আরো জোরে মাথা নাড়ল।
“আর আসার সময় প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন গত রাতে তুমি নাকি বিছানার বাইরে ছিলে?”
বিব্রত ভঙ্গীতে হাসল সিরিয়াস।
হ্যারি একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলল। এরপর হেসে বলল, “পড়াশোনা করবে ঠিকমত। মাঝেমধ্যে নিয়ম কানুন হালকা মেনে চলার চেষ্টা করবে কেমন?”
“অবশ্যই বাবা।”
হ্যারি গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকাল। “শোন সিরিয়াস, তোমার নাম রাখা হয়ে আমার দেখা সবচেয়ে ভাল মানুষটার নামে। সিরিয়াস ব্ল্যাক।
তুমি কি জান বাকবিকের মালিকানা তার ছিল? আমি জানি তুমি তাঁর কোন অসম্মান করবে না।”
মৃদু হাসল সিরিয়াস। ধীরে ধীরে বলল, “চিন্তা করো না বাবা। আমি ভালভাবেই থাকব।”
হ্যারি ভালমত হাসল এবার। “আচ্ছা ঠিকাছে। আমার যাওয়া দরকার এখন। অ্যালবাসকে দেখে রেখো।”
“আচ্ছা বাবা। গুডবাই।” সিরিয়াস বাবাকে বিদায় জানিয়ে হ্যাগ্রিডের বাগানের দিকে ফিরে গেল।
হ্যারি ফিরে চলল ক্যাসেলের দিকে। হঠাৎ কি মনে করে থেমে গেল সে। পিছনে ফিরে ডাক দিল, “র্যাচেল!”
দৌড়ে আসল র্যাচেল। “জ্বি আঙ্কেল হ্যারি?”
“তোমার বাবা তোমাকে আদর জানিয়েছে। পড়াশোনা করতে বলেছে ঠিকঠাকমত।”
“ধন্যবাদ আঙ্কল। বাবাকে দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করবেন।”
“অবশ্যই। আর শোন র্যাচেল”, বিশেষ দৃষ্টিতে তাকাল হ্যারি, “সিরিয়াসকে দেখে রেখো।”
চওড়া হাসল র্রাচেল। “খুশি মনে রাখব আঙ্কেল।”
মৃদু হেসে মাথা নাড়ল হ্যারি। এশ ফিরে চলল ক্যাসেলের দিকে। মিনিস্ট্রিতে যেতে হফে তার। ধীরে ধীরে দৃষ্টির আড়াল হয়ে গেল সে।
র্যাচেল ফিরে আসলে সিরিয়াস আগ্রহী স্বরে জিজ্ঞেস করল, “বাবা কি বলল তোমাকে?”
গম্ভীর স্বরে র্যাচেল বলল, “সেটা তোমার জানবার কোন বিষয় না।”
চোখ কুচকে তাকাল সিরিয়াস।
.
সূর্যটা ঢলে পড়ছে পশ্চিম দিকে। শেষ বিকেলের মায়াবী আলোকরশ্মি হগওয়ার্টস ক্যাসেলে সৃষ্টি করছে সোনালী প্রতিফলন।
মাঠে অনেক ছাত্র ছাত্রী ঘোরাফেরা করছে। কেউ কেউ খেলাধুলা করছে, কেউ আবার চেষ্টা চালাচ্ছে গোপন জাদুচর্চা করার।
সিরিয়াস অ্যালবাসের দিকে তাকাল। সে বাকবিকের সাথে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করছে।
“একটা বিষয় খেয়াল করছ, জেমস?” র্যাচেল আচমকা জিজ্ঞেস করল।
সিরিয়াস প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাল তার দিকে।
“এল্ডার ওয়ান্ডের বর্তমান বৈধ মালিক হচ্ছ তুমি”, র্যাচেল বলল। “উত্তরাধিকার সূত্রে ইনভিসিবিলিটি ক্লোকটাও তোমার।
কেবলমাত্র রিসারেকশন স্টোনটা পেলেই তুমি পরিণত হবে মাস্টার অফ ডেথে।”
সিরিয়াস কোন উত্তর দিল না। সূর্যটার দিকে তাকিয়ে রইল। তবে সে সত্যিই ধারণা করেনি যে র্যাচেল ব্যাপারটা খেয়াল করবে।
মনে মনে তার প্রশংসা করল সে। মেয়েটা মাথায় সত্যিই বুদ্ধি রাখে। সত্যি বলতে তার মাথায় এখন একটাই চিন্তাঃ রিসারেকশন স্টোন!
সিরিয়াস সামনে তাকাল। অ্যালবাস বাকবিকের কাঁধে চেপে বসেছে। ডানা ঝাপটাল বাকবিক।
এরপর লাফিয়ে একদম সিরিয়াসদের উপর দিয়ে উড়াল দিল। আনন্দ চিৎকার দিয়ে উঠল হ্যাগ্রিড।
সূর্যের রশ্মি বাকবিকের ডানায় পড়ে স্বর্ণের মত চকচক করছে। স্বচ্ছ নীল আকাশের পটভূমিতে তাকে দেখাচ্ছে দেবদূতের মত।
সিরিয়াস মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অপূর্ব দৃশ্যটার দিকে।
(সমাপ্ত)