পুনর্জন্ম (পর্ব -২)

পুনর্জন্ম (পর্ব -২)

কথাটা শুনে এবার আর তারেক বিষ্ময় লুকাতে পারলনা। ‘বলেন কি? ‘
‘হুমম্।’
‘একটু খুলে বলুন তো? ‘

‘গত একসপ্তাহ ধরে নার্গিস ক্রমাগত ভয় পেতে থাকলে আমার মাথায়ও আপনার মত বুদ্ধিটা আসে।গতকাল নার্গিসকে বলি, “এগুলো সব তোমার কল্পনা। ওখানে আসলে কিছুই নেই।তোমার বিশ্বাস না হলে আজ লোক দিয়ে খুড়ে দেখাব তোমাকে। ‘

‘নার্গিস বলে, ‘তুমি বিশ্বাস করো কিংবা না করো ওখানে সত্যিই একটা লাশ আছে।”

শেষপর্যন্ত ওকে বিশ্বাস করাতে না পেরে গতকাল বিকালের দিকে কাজের লোক দিয়ে মাটি খুঁড়তে চাই।নার্গিস কিছুতেই নির্দিষ্ট জায়গাটা দেখাতে রাজি হচ্ছিল না। বার বার বলছিল, “শয়তান আত্মাটাকে জাগালে ক্ষেপে যাবে ও।”
অনেক বলে কয়ে ওকে জায়গাটা দেখাতে রাজি করাই।ও জায়গাটা দেখালে কাজের লোকটাকে বললাম খুঁড়তে।

আশ্চর্যের ব্যাপার, মাত্র তিন চার হাত খুঁড়তেই ঠং করে কোদাল বাড়ি খায় কিসের সাথে যেন।আওয়াজটা শুনেই নার্গিস ছুটে বাড়ির ভেতরে চলে যায়।
আমার তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না, ওখানে সত্যিই কিছু থাকতে পারে।তবে আমাকে চুড়ান্ত অবাক করে দিয়ে একটা মাথার খুলি বেরিয়ে এল!
আস্তে আস্তে আরো হাড়গোড় বেরুতে লাগল। বোঝা যাচ্ছিল অনেক পুরনো লাশ এটা।হাড়গুলো ক্ষয়ে ক্ষয়ে গিয়েছে। ‘

‘তারপর? ‘
‘আমি আমার সারাটাজীবন বিদেশে কাটালেও এদেশে আমার পরিচিত অনেক মানুষ আছে।আমার এক বন্ধু সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের প্রধান।ওকে হাড়গুলোর কার্বন টেস্ট করতে দিয়েছি। ‘

‘ভেরি গুড।কবে রিপোর্ট দেবে বলেছে? ‘
‘কাল। ‘
‘আচ্ছা এখন বলুন, আপনি আমার কাছে আসলে কি ধরনের সাহায্য চান? ‘

‘দেখুন, আমিও এসব পুনর্জন্ম ফুনর্জন্ম বিশ্বাস করিনা। কিন্তু চোখের সামনে এধরনের অলৌকিক ঘটনা দেখতে ভাল লাগছেনা।আমি চাই আপনি ইনভেস্টিগেশন করে দেখুন আসলে কি ঘটছে ?নার্গিস কিভাবে জানল ওখানে একটা লাশ শুয়ে আছে?কেনই বা ভয় পাচ্ছে ও?

আমি জানি এর আগেও আপনি অদ্ভুত অদ্ভুত রহস্যের সমাধান করেছেন।অনুপ আমাকে না বললেও আমার মনে হয় ওর সমস্যাটাও সুপার ন্যাচারাল টাইপের কিছু একটা হবে। ‘

তারেক মাথা দুলিয়ে বলল,’আমাদের পৃথিবীতে যে রহস্যময় ঘটনা ঘটেনা তা না। ঘটে,তবে অধিকাংশ রহস্যময় ঘটনা তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে আসলে কিছুই না।কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই তলিয়ে দেখতে যায়না।শেক্সপিয়ারের সেই বিখ্যাত ডায়লগ, ‘দেয়ার আর মেনি থিংস ইন আর্থ অ্যান্ড হেভেন ‘বলে ব্যাপারটাকে অন্যরকম একটা মাত্রা দিতেই বেশি পছন্দ করে।

ধরুন আপনি রাতে ঘুমিয়েছেন। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে দেখতে দেখলেন, আপনার জানালার পাশে একটা ছায়ামূর্তি দাড়িয়ে আছে।কি করবেন আপনি?
অধিকাংশ মানুষই কিন্তু এ ঘটনাটাকে পরেরদিন একটা অতিপ্রাকৃত রুপ দান করবে।’

‘কিন্তু দেখা যাবে ওটা একটা চোর ছিল তাইনা? বললেন হাসানুজ্জামান।

‘চান্স ফিফটি ফিফটি। হতে পারে সত্যিই রহস্যময় কেউ দাড়িয়ে ছিল আপনার জানালার পাশে!

আমার কাজ হল আসলেই কে দাড়িয়ে ছিল সেটা বের করার চেষ্টা করা।নিশ্চিত না জেনে আমি কিছু বলতে চাইনা। ‘

‘তারমানে বলতে চাচ্ছেন নার্গিসের পুনর্জন্মের ব্যাপারটা সত্যি হতে পারে? ‘

‘চান্স ফিফটি ফিফটি।আমি তদন্ত করে দেখব।’

‘ইয়ে. . .আপনার ফি? ‘

‘আমার কোনো ফি নেই।আগে শখের বশে গোয়েন্দাগিরি করতাম। এখনও শখের বশেই করি তবে কাজ শেষ হবার পর যদি কেউ কিছু দিতে চায় তাহলে আপত্তি করিনা। ‘

‘আচ্ছা। তা আপনি কবে থেকে কাজ শুরু করতে চান। ‘

‘এখন থেকেই।আপনার আপত্তি না থাকলে এখনই আপনার সাথে আপনার বাড়িতে যেতে চাচ্ছি।রহস্যময় বাড়িটা দেখতে অত্যন্ত আগ্রহী আমি।’

‘তাহলে তো খুবই ভাল। আমিও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর শেষ দেখতে চাচ্ছি। ‘

হাসানুজ্জামানের গাড়িতে চেপে ধানমন্ডির বাড়িটা এল তারেক।
গাড়ি থেকে নেমেই বাড়িটা ভালমত পর্যবেক্ষণ করতে লাগল।
একতলা একটা বাড়ি। ছিমছাম। বাড়ির সামনে পেছনে বেশ খানিকটা বাড়তি জায়গা।এমন জায়গাওয়াল বাড়ি ঢাকা শহরে দেখতে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।
বাড়ির সামনে ছোট্ট কিন্তু চমৎকার একটা বাগান।
তারেক লক্ষ্য করল বাড়িটা অনেক পুরোনো। পঞ্চাশ বছর তো হবেই।এরপরও একটা রুচিশীলতার ছাপ স্পষ্ট।

‘বাড়ির পেছনে কি এখনই যাবেন? ‘ গাড়ি থেকে নেমে বললেন হাসানুজ্জামান।

‘না,আগে আপনার স্ত্রীর সাথে কথা বলে আসি, তারপর বাড়ির পেছনটা দেখা যাবে। ‘

‘চলুন তাহলে। ‘

‘বাড়িতে আপনারা ছাড়া আর কে কে থাকে? ‘

‘দারোয়ান আর দুজন কাজের লোক।’

‘তারা কি আপনার স্ত্রীর ভয় পাবার ব্যাপারটা জানে? ‘

‘মোটামুটি। তেমন পরিষ্কার কিছু না। ‘
বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ল ওরা দুজন।

‘আপনি বসুন আমি নার্গিসকে ডেকে আনি,’বলে ভেতরে চলে গেলেন হাসানুজ্জামান।

তারেক সোফায় বসে একটা ম্যাগাজিন তুলে নিল।ভাবছে।কেসটা আসলেই অদ্ভুত।আজীবন বিদেশে কাটানো একটা মানুষ অপরিচিত একটা বাড়ির পেছনে শুয়ে থাকা প্রাচীন এক লাশের খবর কিভাবে পাবে? রহস্যময় না?

একটু পর এক মহিলাকে সাথে করে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করল হাসানুজ্জামান।
তারেক উঠে দাড়িয়ে সম্মান দেখাল ভদ্রমহিলাকে।
ভদ্রমহিলার চেহারায় ভয়ের একটা ছাপ দেখা যাচ্ছে।দুস্টু আত্মাটা তাহলে তাকে ভালমতই জালাচ্ছে!
ব্রিটিশ মায়ের গায়ের রং পেয়েছে মিসেস নার্গিস। এখনও যথেষ্ঠ সুন্দরী।তরুণ বয়সে সৌন্দর্যটা যে অসাধারণ ছিল সেটা বলাই বাহুল্য।

‘কেমন আছেন ম্যাম? ‘

‘ভাল, আপনি? ‘

হাসানুজ্জামান ঠিকই বলেছিলেন, ভদ্রমহিলার কথা শুনে বোঝার উপায় নেই যে তিনি সারাজীবন দেশের বাইরে কাটিয়েছেন।

‘ভাল।ম্যাম,আপনি নিশ্চয়ই জানেন, আমি কেন এসেছি? ‘

‘হ্যাঁ, জানি। আপনি একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভ। ‘

‘প্রাইভেট ডিটেকটিভ বলতে প্রচলিত অর্থে যা বোঝায় আমি আসলে তেমন কেউ নই।শখের বশে টুকটাক রহস্য ভেদ করি।আচ্ছা, আপনি কি আমাকে একটু ডিটেইলস বলতে পারবেন, আপনি আসলে কিভাবে ভয় পান? কি দেখেন? ‘

‘কিছুই দেখিনা। ‘

‘তার মানে? ‘অবাক হল তারেক

‘হ্যাঁ, কিছুই দেখিনি এখন পর্যন্ত। ‘

‘মাফ করবেন, তাহলে ভয় পাবার ব্যাপারটা? ‘

‘আসলে আমার সবসময়ই মনে হয় কেউ একজন বাড়িটাতে ঘোরাফেরা করে।আমাদের চারপাশে তার অস্তিত্ব অনুভব করি আমি।’

‘কিছু শুনতে পান? যেমন, পায়ের শব্দ কিংবা শ্বাস প্রশ্বাসের আওয়াজ? ‘

‘না। ‘

‘তাহলে ঠিক কিভাবে আপনি তার অস্তিত্ব অনুভব করেন? ‘

‘আমি আসলে আপনাকে বলে বোঝাতে পারবনা।এটা আসলে একটা অনুভূতি।’

‘হুমম্,তবে অনুভূতিটা যে নিছক অনুভূতি নয় সেটা এখন আমরা জানি।আচ্ছা, এখন বলুন তো আপনি কিভাবে জানলেন ওখানে একটা লাশ আছে? ‘

‘ওই যে বললাম না অনুভূতি।’

‘সেটা তো ভয় পাবার ক্ষেত্রে।লাশের ব্যাপারটা একটু মনে করুন তো।অনুভূতিটা প্রথম কখন, কিভাবে আপনি টের পেলেন? ‘

কিছুক্ষণ চুপ থেকে কি যেন ভেবে নিলেন মিসেস নার্গিস।’উমমম, বাড়িটাতে যেদিন প্রথম আসি সেদিনই কেমন যেন চেনা চেনা লাগতে শুরু করে বাড়িটা। ধীরে ধীরে অনুভূতিটা বাড়তে থাকে। মনে হতে লাগল এই বাড়ি আমার খুব চেনা, অনেকদিন ধরে আমি বাড়িটা চিনি।’

‘এরপর? ‘উৎসাহ দিল তারেক।

‘এ বাড়িতে আসার দুদিন পর রাতের বেলা হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় আমার। ঠিক তখনই আমার মনে হতে থাকে কেউ একজন ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে বাড়িটাতে। এবং তখনই প্রথম আমার বদ্ধমূল ধারণা হয় যে বাড়ির পেছনে একটা লাশ পোঁতা আছে। ‘

‘আচ্ছা, আপনার কি এর আগেও কখনো এমন হয়েছে?’

‘কেমন? ‘

‘অন্য কোথাও, বিশেষ করে বাংলাদেশে আসবার পর কি কোনো জায়গা দেখে মনে হয়েছে এটা আপনার পরিচিত? ‘

‘না।’

‘ওকে ম্যাম,কষ্ট দেবার জন্য দুঃখিত। আপাতত আমার আর কোনো প্রশ্ন নেই। ‘

‘ধন্যবাদ। ‘

স্ত্রীকে নিয়ে ভেতরের রুমে চলে গেলেন হাসানুজ্জামান।
তারেক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেছে।

আরো গল্প পড়তে লিংক এ ক্লিক করুন……

পুনর্জন্ম (পর্ব -১)
পুনর্জন্ম (পর্ব -2)
পুনর্জন্ম (পর্ব -3)
পুনর্জন্ম (পর্ব -4 শেষ পর্ব)

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত