পাহাড়পুরের রহস্য

পাহাড়পুরের রহস্য

অনেকেই বলে থাকেন ভূত ব্যাপার টা নাকি একটা অনুভূতি। যাদের সেই অনুভূতি আছে তারা ভূতে বিশ্বাস করে আর যাদের সেই অনুভূতি নেই তারাও যে একেবারেই ভূতের অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দিহান একথাও জোর দিয়ে বলা যায়না।

মোদ্দা কথা হল পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষই কম বেশি ভূতে বিশ্বাস গ্রস্ত। এবারে আসি অনুভূতি প্রসঙ্গে। পাঠকরা কখনও চিন্তা করে দেখছেন কি, মাঝরাতে কোনও অপরিচিত আওয়াজে গায়ের লোম কেন খাড়া হয়ে ওঠে বা অন্ধকার ঘরে লণ্ঠন বা হ্যারিকেনের আলোয় হটাৎ কোনও ছায়া দেখে বুকটার ছাঁৎ করে ওঠা, এসবই কোনও না কোনও অতিপ্রাকৃত অনুভূতি কে কেন্দ্র করে। এরকম লোকের ওভাব নেই যারা তাদের বয়সের কোনও না কোনও সময় বন্ধু বান্ধব মহলে বাজী রেখেছেন, বাজী হারলে রাত বারটায় শ্মশান বা কবরখানা ঘুরে আসবেন।

এত কিছু থাকতে শেষ পর্যন্ত শ্মশান বা কবরখানা কেন? উত্তর টা বোধহয় আমাদের সকলেরই জানা। মুখে আমরা যতই যুক্তি তক্ক কপচাই না কেন, ঐ জায়গায় গিয়ে পড়লে তখন আর “রামনাম” (ধর্ম ভেদে ভিন্ন) ছাড়া গতি থাকেনা। রাত বারটার শ্মশাণে বা কবরখানায় যদি নিতান্তই অসহায় একটি পেঁচা বা শেয়াল ডেকে ওঠে তখন, নিউটন এর কটা ল আর পেঁচার বিজ্ঞানসম্মত নামের চেয়ে অনেক বেশি ইম্পরট্যান্ট ইষ্টঠাকুরের নাম হয়ে দারায়। ছোটবেলা থেকেই ডানপিটে ছিলাম। ভূতে অবিশ্বাস না করলেও অকারণ ভয় পাওয়া আমার ধাতে ছিলনা। সে কারনেই ক্লাস ফাইভ এ থাকতে, একা একাই এক ঝড়জলের রাতে স্টেশন চলে গিয়েছিলাম। হাফইয়ারলী পরীক্ষা দিয়ে দাদুর বাড়ী বেড়াতে গিয়েছি। হটাৎ খবর এল আমার দাদুর আপন ভাই খুব অসুস্থ। উনি ময়নাগুড়ি থাকেন। সকালের ট্রেন ধরে আমার মা আর দাদু চলে গেলেন। রাতের ট্রেনেই ফিরে আসার কথা।

সেদিন সন্ধ্যে থেকেই আকাশের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করল। থেকে থেকে এলোমেলো হাওয়া বইছে আর ঘন ঘন মেঘ ডাকছে। দু একবার খুব জোরে কোথাও বাজ পড়লো একেবারে কড় কড় আওয়াজ করে। রাত তখন ১০ টা। দুর্যোগ আরও বেড়েছে। মা আর দাদু তখনো ফেরেন নি। দিদাও দুশ্চিন্তা করছিলেন এত ঝড় জলে ওরা ফিরবে কি করে। বাড়ী থেকে স্টেশন এর দূরত্ব খুব বেশি না হলেও যাওয়ার রাস্তা টি খুব সুখকর ছিলনা আর তখনকার দিনেত নয়ই। দুপাশে ঘন বাঁশঝাড়, ছোট ছোট পুকুর, মোড়াম বেছানো রাস্তা আর রাস্তার আসে পাসে খুব একটা বসতিও ছিলনা। তারপর সেই ঝড়জল এর বর্ষণমুখর রাত।

তখন বাড়ীতে বাড়ীতে কারেন্ট এলেও রাস্তায় ল্যাম্পপোস্ট বসেনি। চারিদিকে ধু ধু অন্ধকার। আর সেই রাতে তো যেন গোটা নরকপুরিটাই নেমে এসেছিল ধরণীর বুকে। একদিকে তিরের ফলার মতো বৃষ্টি আর তার সাথে বিদ্যুতের ঘন ঘন ঝলকানি আর কান ফাটানো বজ্রধবনি। গাছগুলো যেন সবকটা মাটি থেকে উপড়ে আসতে চাইছিল। উফফফফ কি ভয়ানক ছিল সেই রাত। সেই রাতে ক্লাস ফাইভে পরা একটি ছেলে রেইনকোট পরে সাথে ছাতা নিয়ে মা আর দাদুকে আনতে গিয়েছিল পাছে তারা বৃষ্টিতে ভিজে যায়। বলা বাহুল্য এই ভালো কাজের কোনও পুরস্কার তো জোটেইনি আর স্টেশন ভরা লোকের সামনে মা সপাটে গালে একটি চড় কষিয়ে বলেছিলেন যদি রাস্তায় কিছু হয়ে যেত।

তখন এতসব ইগো ফিগো কিছু ছিলনা কাজেই কিছুদিনের মধ্যেই সব ভুলে গিয়েছিলাম, যদিও পরে দিদার কাছে জেনেছিলাম আমার মাতৃভক্তির এই পুরস্কার দেওয়ার সুবাদে মা সারারাত কেঁদেছিলেন। কালের নিয়মে বড় হতে থাকলাম। কিন্তু ভূত আর ভূতের ভয় পাওয়ার থেকে কেন জানি অজানাই রয়ে গেলাম। অনেক চেষ্টা করতাম রাতে ইংলিশ হরর মুভি দেখে একটু ভয় পাওয়ার। রাতে খাওয়ার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা হরর স্টোরি পড়তাম। কিন্তু তবুও কেন জানিনা সেই আকাঙ্ক্ষিত অনুভূতি টা আনতে পারতাম না। খালি মনে হত সবই অভিনয় আর গল্প। এর কোনও বাস্তব সারবত্তা নেই। একসময় সত্যি সত্যিই ভাবতাম ভূত বলে কি সত্যিই কিছু হয়? নাকি সবকিছুই মানুষের অবচেতন মনের কল্পনা। এভাবেই উনিশটা বসন্ত পার করে ফেললাম। ঘটনাটা তখনকার যখন আমি কলেজে পড়ি।

জলপাইগুড়িতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিঙ পড়ছি। শিলিগুড়িতে বাড়ী হওয়ার সুবাদে ডেলী প্যাসেনজারি করতাম কয়েকজন বন্ধু মিলে। শিলিগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ি মেরেকেটে দেড় ঘণ্টার বাসরাস্তা, তাই হস্টেলে থাকার দরকার হয়নি আমাদের। তবে হস্টেল সতীর্থ দের অণুরোধে উপরোধে অনেক বারই হস্টেল এ থেকেছি। রাতভর দেদার হইহুল্লোড় আর খানাপিনা। যেসময় ক্লাস অফ থাকত, বন্ধুদের সাথে কাছাকাছি রমণীয় স্থান গুলো ঘুরে আসার একটা চল ছিল। বেশীরভাগ সময়ই আমরা যারা শিলিগুড়ি থেকে আসতাম, তারাই একসাথে যেতাম। কখন কখনও হস্টেল এর বন্ধুরা বা জলপাইগুড়ির স্থানীয় বন্ধুরা সঙ্গী হত।

আমাদের কলেজের খুব কাছেই ছিল দেবী চৌধুরানীর কালী মন্দির। স্থানটি ছিল অতিশয় মনোরম। অনেকটা জায়গা জুড়ে মন্দিরের সীমানা। মন্দিরের সীমানা ঘেঁসে বয়ে গেছে করলা নদী। এই নদী দিয়েই নাকি দেবী চৌধুরানীর বজরা চলত। মন্দিরের ভেতর থেকে নাকি সুড়ঙ্গ কাটা ছিল সরাসরি নদীতে যাওয়ার জন্য। মন্দিরের ভেতরে প্রচুর গাছগাছালী আর সাথে বড় বড় গাছের নীচে বসার বেদী। অনেকটা জঙ্গল জঙ্গল মনে হত। আমরা মাঝে মাঝেই ওখানে গিয়ে আড্ডা মারতাম। বেশ চলছিল আমার কলেজ লাইফ। এক এক সময় মনে হত এর থেকে ভাল কলেজ লাইফ হয়ত আর কিছুই হতে পারেনা। কে জানত কিছুদিনের মধ্যেই আমার জীবনে এমন কিছু একটা ঘটতে চলেছে যার প্রভাব হয়ত মন মস্তিষ্ক থেকে আর কোনোদিনই মুছে ফেলা যাবেনা।

দিনটা ছিল শুক্রবার। আর সব দিনের মতই একটা দিন। সময়টা ছিল সেপ্টেম্বর এর মাঝামাঝি। কিছুদিনের মধ্যেই পূজোর ছুটি পরে যাবে। বাতাসে একটা পূজো পূজো গন্ধ। গরম ও তেমন একটা নেই। এককথায় আদর্শ একটা দিন। সারাদিন নামমাত্র পড়াশোনা আর দেদার হইচই আর আড্ডা মেরে যখন বাসস্ট্যান্ডে এসে পৌঁছেছি তখন শুনলাম দুপুর দুটোর পর থেকে বাস চলছেনা। কোনও এক রাজনৈতিক সংগঠন বন্ধ ডেকেছে তাদের কর্মী খুনের প্রতিবাদে।

এমনটা নয় যে এই প্রথমবার এইরকম বাসবন্ধের সম্মুখীন হলাম। এরকম হলে আমরা রাতটা হস্টেল এ থেকে গিয়েছি এমন অনেকবার হয়েছে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি আর সব বার এর থেকে আলাদা। কিছুদিন আগে কেউ বা কারা আমাদের নামে হস্টেল সুপার কে অভিযোগ করেছে আমরা নাকি প্রায়ই হস্টেলে থাকি। এরপর পরই হস্টেল কতৃপক্ষ নির্দেশ জারি করেছেন কোনও বহিরাগত কে হস্টেল এ আশ্রয় দেওয়া যাবেনা। সমস্যা টা আমার জন্য খুব একটা ছিলনা কারণ জলপাইগুড়ি শহরেই আমার মাসি থাকেন, অন্যান্য আত্মীয়রাও খুব কম একটা নেই।

কাজেই রাতটুকু কাটানো আমার জন্য চিন্তার কিছু ছিলনা। কিন্তু আমার বাকী বন্ধুরা যারা আমার সাথে শিলিগুড়ি থেকে আসে তাদের তেমন কেউ নেই যাদের বাড়ীতে ওরা রাতটুকু আশ্রয় পায়। আর আমার পক্ষেও সবাইকে নিয়ে কোনও আত্মীয়র বাড়ীতে তোলা সম্ভব ছিলনা কারণ সংখ্যায় আমরা ছিলাম প্রায় সাত জন। এতজন কে নিয়ে কোনও আত্মীয়র বাড়ীতে ওঠার পক্ষপাতী আমি ছিলাম না। আর আমি একা চলে যাব, বাকিরা যে যার মত থাকবে সেটাও মন থেকে মানা সম্ভব ছিলনা। কি করব কি করব ভাবছি এমন সময়ই আমাদের চিন্তার অবসান করে উদয় হল আমাদের জলপাইগুড়ি নিবাসী বন্ধুদের। তারা বলল, তারা সবাই একজন বা দুজনকে তাদের সাথে নিয়ে যাবে। কারণ একজনের পক্ষে সাত সাত জনের আতিথ্য করা সম্ভবপর ছিলনা।

উৎপলের সাথে গেল সৈকত আর সম্রাট। অমিত নিলো সবিনয় আর নীলাভ্র কে। পরেশ এর সাথে চলল মনোময় আর রণজিৎ। বাকী রইলাম আমি একা। সবার যখন হীল্লে হয়েই গেছে তখন আমার আর মাসীর বাড়ী যেতে অসুবিধে কোথায়? কিন্তু নিয়তি র পরিহাস, আমার এই ভাবনাতে বাধ সাধল বিজন। বিজন আমাকে অণুরোধ করল আমি যেন ওর সাথে ওর বাড়ী যাই। বিজন আমার খুবই ভাল বন্ধু ছিল। ও কে না করার কোনও অভিপ্রায়ও আমার ছিলনা, কিন্তু অকস্মাৎ মনে পড়ল বিজনদের পারিবারিক অবস্থার কথা। কিছুদিন আগেই ওর বাবা দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।

বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে খুবই সঙ্গিন অবস্থা ওদের। কোনও স্থায়ী উপার্জন নেই। বিজন এর দাদাও পয়সার অভাবে গ্রাজুয়েশন ছেড়ে একটা গ্যারেজে মেকানিক এর কাজ করে। এমন অবস্থায় ওদের ওপর বোঝা বাড়াতে আমার মন সায় দিচ্ছিলনা। আমি না করলাম। কিন্তু বিজনের ক্রমাগত অনুরোধে হার মেনে শেষে রাজী হলাম। বিজন দের বাড়ী পাহাড়পুরে। আমাদের কলেজ থেকে যে বাসরাস্তা সোজা ডুয়ার্স চলে গিয়েছে সে রাস্তায়। হাঁটলে আধঘণ্টা আর সাইকেলে বড়জোর দশ মিনিট। বিজন আমাকে বলল আমি যেন ওর সাইকেলে বসি, কিন্তু আমার হেঁটে যাওয়ার ই ইচ্ছে ছিল। হাটা শুরু করলাম। এই দিকটায় আমি খুব ছোটবেলায় এসেছিলাম, আমার এক মামার বিয়েতে। গাড়ীতে থাকার সুবাদে খুব ভালো করে কিছু দেখতে পাইনি। শুধু এটুকু মনে ছিল সামনেই তিস্তা নদী।

কথাটা মনে পরাতে বিজন কে জিজ্ঞাসা করলাম “হ্যারে তিস্তা তোদের বাড়ী থেকে কতদুর রে?” বিজন উত্তর দিল “আরে দূর কি বলছিস, ভরা বর্ষায় আমাদের বাড়ী থেকে তিস্তার জলের গর্জন শোনা যায়। মেন রাস্তা ধরে গেলে মিনিট পনের, আর আমাদের গ্রামের গলি দিয়ে গেলে সাত থেকে আট মিনিট লাগবে হাঁটাপথে।” মনে মনে ভাবলাম যদি সময় থাকে একবার ঘুরে আসব। ঘড়িতে দেখলাম চারটে বেজে গেছে। কিন্তু আকাশ দেখে তো তা মনে হচ্ছেনা। মেঘ করেছে কি? আকাশের দিকে একবার মুখ তুলে চাইলাম। হ্যাঁ একটু মেঘ করে এসেছে। ভালই লাগছিল হাঁটতে। কালো পিচের রাস্তা। রাস্তার দুপাশে আকন্দের ঝাড়। মাঝে মাঝে কাশফুলের গাছ। মনে পড়ল, দুর্গা পুজোর আর খুব বেশি দেরি নেই। শেষ বিকেলের মেঘলা আকাশ আর মাঝে মাঝে ধেয়ে আসা দখিনা যেন মনটাকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। রাস্তার পাশেই সার সার কিছু ভেড়িতে দখিনারা তরঙ্গ তুলছিল। সামনে আকন্দের ঝারে বসা দুটো চড়ুই পাখির খুনসুটি দেখতেও খুব মজা পাচ্ছিলাম।

রাস্তা শুনশান, কেউ কোথাও নেই, শুধু আমরা হেটে চলেছি কোনও এক নিরুদ্দেশ এর পথে। এককথায় মন কে পাগল করে দেওয়া অনুভুতি। কেন যে আমি আসতে চাইছিলাম না এই স্বর্গে। মনে মনে হারিয়ে গিয়েছিলাম, সম্বিত ফিরল বিজনের ডাকে “কিরে তুই যে একেবারে হারিয়েই গিয়েছিস।” সত্যি বলতে কি এই মনোরম জায়গায় আমি বিজনের উপস্থিতির কথা একেবারেই ভুলে গিয়েছিলাম। খানিকটা লজ্জিত হয়ে বললাম, “আরে না না, কি যে বলিস, আসলে জায়গাটা এতো সুন্দর যে মনে হয় দুচোখ ভরে শুধু দেখেই যাই। হ্যাঁ বল কি বলছিলি।” বিজন বলল “তোকে একটা জিনিস দেখানোর জন্য ডাকলাম।” আমি ঔৎসুক্ক ভরা নজরে বিজনের দিকে চাইলাম। “ঐ দুরে একটা টিনের ছাউনি দেখতে পারছিস?

সামনে একটা বেদী মত করা, পাশে একটা মন্দির” বিজন থামল, মাথা ঘুড়িয়ে বিজনের তোলা আঙুলের দিকে চাইলাম। ছাউনি টা পরিষ্কার বোঝা নে গেলেও, মন্দিরের চূড়া টা বুঝতে অসুবিধে হলনা। বেদী টাও ঠিক ঠাহর করতে পাড়লাম না। “কি ওটা, শ্মশান কি?” বিজন মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাল। আমিও মজা করার এই সুযোগ হাতছাড়া করলাম না, “ছি ছি বিজন, শেষ পর্যন্ত আমাকে বাড়ীতে নেমন্তন্ন করলি শ্মশান দেখানর জন্য।” মজা টা বিজন গায়ে মাখলনা, “আসলে তোকে শ্মশান টা দেখালাম তার একটা কারণ আছে। তুই ত সবসময় এইসব ভূত পেত্নী নিয়ে আলোচনায় মশগুল থাকিস, তাই তোকে দেখালাম।

কয়েকমাস আগে ডেঙ্গুয়াঝার রেল ষ্টেশন এর কাছে ট্রেনের তলায় দুটো লোক কাটা পরে। কোনও বারীশ পাওয়া যায়নি। পোস্টমর্টেম এর পর পুলিশ এই শ্মশাণে দেহ দুটিকে দাহ করে।” আমার হাসি পেল, বললাম “ তাহলে কি তোর মনে হয়, দেহ গুলো কে দাহ না করে রেল মিউসিয়ামে সংরক্ষণ এর ব্যবস্থা করা উচিৎ ছিল। শ্মশাণে দেহ দাহ হবে এতে অবাক হওয়ারই বা কি আছে, আর এর সাথে ভূত পেত্নীর কি সম্পর্ক? নাকি ট্রেনের তলায় এই প্রথম কেউ কাটা পড়ল। তবে হ্যাঁ একটা কথা বলতে পারিস একসাথে দুজনের কাটা পড়াটা একটু অন্যরকম মনে হলেও, ব্যাপারটা মোটেও অন্যরকম নয়।”

বিজন একটু রাগত সুরে বলল “তোকে নিয়ে এই একটাই প্রব্লেম, যখন নিজের কথা বলতে থকিস তখন অন্য কারোর কথা শুনিসনা, আমার কথা পুরোপুরি না শুনেই মন্তব্য করলি। আমাকে শেষ করতে দিবি তো” আমারও মনে হল বিজন কে কথাটা শেষ করতে দেওয়া উচিৎ ছিল। ভুল সংশোধন করে বললাম “না না বল বল, আমি শুনছি।” এই বলে আগ্রহ ভরে বিজন এর দিকে চাইলাম। “আর এখন শুনতে হবেনা, এই ডানদিকের রাস্তা টা দিয়ে আমরা এবার যাব, সামনের দিকের রাস্তা টা দিয়ে গেলে একটু শর্টকাট হয় কিন্তু ওদিক দিয়ে আমরা কেউ এখন যাইনা।” খেয়াল করে দেখলাম, যে রাস্তার কথা বিজন বলছে সেটা ঐ শ্মশান এর একেবারে উল্টদিকে। আমরা ডানদিকের রাস্তা দিয়ে নেমে এলাম। একটু ঢালু রাস্তা, কিছুটা দূর এসে সমতল হয়েছে। আশে পাশে প্রচুর গাছগাছালি। বেশিরভাগই ফলের।

আম আর কাঁঠালই ম্যাক্সিমাম। কিছু নোনা, জাম আর লিচু গাছও চোখে পড়ল। আম কাঁঠাল গাছ চিনি, বাকি গাছ গুলো বীজনই চিনিয়ে দিল। ঘড়িতে দেখলাম প্রায় পৌনে পাঁচটা বাজে। কিছু মাটির রাস্তা, কিছু এর বাড়ীর তার বাড়ীর উঠোন পার করে (গ্রামের দিকে প্রায়শই এমন হয়, উঠোনের মাঝ দিয়ে রাস্তা) বিজনের বাড়ীর সামনে এসে পৌছোলাম। বিজনের বাড়ী দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। ঠিক যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহজ পাঠে আকা ছবির সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। মাটির দেওয়াল, হোগলা পাতার চাল। নিকনো উঠোন এত পরিষ্কার, যেন এখনি বসে ভাত খাওয়া যায়। বাড়ীর পেছনেই কিছু বড় বড় তাল নারকেল সুপুরি গাছ। আর তার পেছনে একটা পুকুর। বাড়ীর চালে কিছু চালতা ধরেছে। দুটো ঘর মুখোমুখি।

মনে হল ছোটবেলায় আঁকার খাতায় এমন ছবি প্রচুর এঁকেছি। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম, খেয়াল করিনি কাকীমা কখন ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছেন। প্রিন্টেড নিলসাদা শাড়ী আটপৌড়ে কায়দায় পড়া, গোলগাল মুখ, হাতে দুগাছা চুড়ি, চূলে পাক ধরেছে ভালরকম। আমাকে দেখে বিজনের মুখের দিকে চাইলেন। বিজন আমার পরিচয় দিয়ে আমার আসার কারণ বলল, এটা বলতেও ছাড়লনা, যে প্রথমে আমি আসতে চাইছিলাম না। কাকীমা এবার আমার মুখের দিকে তাকানয় আমি একটু লজ্জা পেলাম, হটাৎ করে মনে পড়ল কাকীমা কে প্রণাম করা হয়নি। তাড়াতাড়ি পিঠ থেকে ব্যাগ নামিয়ে কাকীমা কে প্রণাম করলাম, “থাক বাবা, বেচে থাক, অনেক বড় হও, মা বাবাকে আমার প্রনাম দিও” এইবলে, কাকিমা আমার চিবুকে হাত ঠেকিয়ে চুমু খেলেন।

ঠিক যেমনটা উত্তম কুমারের ছবিতে ছায়াদেবী কে করতে দেখেছি। কাকিমা বিজন কে ডেকে বললেন “বিজু তুই বন্ধুকে নিয়ে পুকুর পাড়ে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে আয়, আমি ভাত বাড়ছি। বন্ধুকে একা ছাড়িসনা, ধরে রাখিস, পুকুরপার টা যা পেছল হয়েছে। তপু কে বলেছি একটু ঘসে দিতে, সে ছেলেত সময় ই পায়না।” এবার কাকিমা আমার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললেন “যাও বাবা বিজুর সাথে যাও, একটু হাত মুখ ধুয়ে নাও। এখানে তোমার একটু কষ্ট হবে বাবা, এখানে ট্যাঁপের জল নেই, ঐ পুকুরের জলে সবকিছু। একটু মানিয়ে বাছিয়ে নিও।” আমি খুব লজ্জা পেলাম সাথে সাথে বললাম “না না কাকিমা, কি বলছেন, আমার কোনও কষ্ট হবেনা।” কাকিমা খুশি হয়ে বললেন “যাও বাবা হাতমুখ ধুয়ে নাও, বেলা পরে এল, এরপর খেয়ে দেয়ে একটু বিশ্রাম কর, রাতের খাওয়ার এর সময় আমি আবার ডেকে দেব” এই বলে কাকিমা রান্নাঘরে চলে গেলেন।

দেখলাম একটা ঘরের সামনের দাওয়ার কিছুটা অংশকে মুলি বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা হাত মুখ ধুতে চলে গেলাম। পুকুরের জল চিরকাল কাদাময় না হয় শ্যাওলাময় দেখে এসেছি। বিজন দের পুকুর টা না দেখলে বোধহয় এই ভুলটা আমার কোনদিনই ভাঙতনা। কাকের চোখের মত স্বচ্ছ পরিষ্কার জল, নিচটাও যেন দেখা যাচ্ছে। হাতমুখ ধুয়ে ঘরে আসার পর বিজন আমাকে ওর একটা পাজামা পরতে দিল। আমিও কলেজের জামাকাপড় ছেড়ে পাজামা পরে কিছুটা স্বস্তি বোধ করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই কাকিমা খেতে ডাকলেন। দাওয়াতেই খাওয়ার ব্যবস্থা হল। কাকিমা একটা আসন বিছিয়ে দিলেন। যদিও তার দরকার ছিলনা, কারন, দাওয়া এতো পরিষ্কার যে খালি পায়ে ঘুরেও আমার পায়ের তলায় এতটুকু ধুলো লাগেনি।

মোটা চালের গোলগোল ভাত, পেঁয়াজ দিয়ে মুসুরির ডাল সাথে বেগুন ভাজা আর ডিমের ডালনা। কাকিমা আমাদের খেতে দিয়ে একপাশে বসে পাখা দিয়ে বাতাস করতে লাগলেন, মুখের সেই অমলিন হাসি ধরে রেখে কাকিমা বললেন “তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে না বাবা? আসলে টেবিল চেয়ার এ খাও তো তোমরা বাড়ীতে।” আমার যে সত্যি সত্যিই কোনই কষ্ট হছেনা, বরং মনে এক অনবিল অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছে এখানে এসে, সে কথা কাকিমা কে বোঝাই কেমনে। মুখে শুধু বললাম “কাকিমা আপনি একদম চিন্তা করবেন না, আমার কোনও কষ্ট হছেনা।” আমাদের খাওয়া শেষ হলে, বিজন আমাকে তার ঘরে নিয়ে আসে। একটাই ঘর মাঝখানে বেড়া দিয়ে পার্টিশন করা।

বেড়ার মাঝখানে একটা টিনের দরজা মত করা আছে। বিজনের থাকার অংশে দুটো জানলা। একটা মাথার কাছে, একটা পাশে। বিজনের বিছানা খুব নরম না হলেও খুব পরিপাটি করে গোছানো। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে খেয়াল করেছিলাম, ঘরের সব কিছুই খুব পরিপাটি করে সাজানো। বিছানায় এসে বসাতে, বিজন পাশের ঘর থেকে একটা বালিশ নিয়ে এসে বলল “একটু শুয়ে নে।” আমি বললাম “শোব তো গল্প করব কখন?তোদের বাড়ীতে এসে আমি সত্যি সত্যিই আমি খুব অবিভুত। বিশ্বাস কর আমি এতটুকু বাড়িয়ে বলছিনা।” আমার কথা শুনে বিজন হেসে ফেলল।

আমি বললাম, “তুই তখন কিছু একটা বলতে বলতে  থেমে গিয়েছিলি, এবার শেষ কর।” বিজন অন্যমনস্ক হয়ে জিজ্ঞেস করল “কোন কথাটা রে” আমি বললাম “ঐ যে রেলে দুজন কাটা পড়েছিল আর শ্মশানে ওদের দাহ করা হয়েছিল” বিজন আমার কথাটা শেষ না করতে দিয়ে বলল “ সন্ধ্যে নামছে, এখন এসব কথা থাক। তুই একটু শুয়ে বিশ্রাম কর, আমি ঘরে আলো গুলো জ্বেলে দিয়ে আসি।” এই বলে বিজন ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। বিজনদের বাড়ীতে ইলেক্ট্রিসিটি নেই। বেশ কিছুক্ষণ পরে দেখি কাকীমা আর বিজন একসাথে ঘরে ঢুকল। বিজনের হাতে একটা অনেক পুরনো আমলের হ্যারিকেন আর কাকীমার হাতে দুটো চায়ের কাপ। আমিও শশব্যস্ত হয়ে বিছানায় উঠে বসলাম। কাকীমা চায়ের কাপ দুটো নামিয়ে রাখলেন। দেখলাম সাথে বাটীতে মূড়ীমাখা ও রয়েছে। “চায়ের সাথে এটুকু খেয়ে নাও বাবা।” এই বলে কাকীমা চলে গেলেন। বিজন ঘরে হ্যারিকেন টা রেখে, জানলা গুলো বন্ধ করতে গেল, আমি বললাম “তাড়ার কি আছে, একটু পরে বন্ধ কর।

এতো সুন্দর হাওয়া আসছে।” বিজন আমার কথাটা পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে জানলা গুলো বন্ধ করে আমার পাশে এসে বসল। সাত তাড়াতাড়ি জানলা বন্ধ করায় আমি অসন্তুষ্ট হয়েছি আন্দাজ করে আমার হাতের উপর হাত রেখে বিজন বলল “কিছু মনে করিসনা, আসলে এখানে কয়েকদিন থেকে খুব খারাপ খারাপ ঘটনা ঘটছে। সবই রাতের দিকে। কাজেই এখানে সন্ধ্যা নামতে নামতেই সবাই দরজা জানলা বন্ধ করে দেয়।” আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম “খারাপ ঘটনা মানে?” বিজন এক দৃষ্টিতে হ্যারিকেনের আলোয় চোখ রেখে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বলল “মৃত্যু”।

এবার সরাসরিআমার চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করল “তুই তখন জানতে চাইছিলি না শ্মশান এর ব্যাপার টা নিয়ে, তাহলে শোন, কিছুদিন আগে ডেঙ্গুয়াঝার রেলস্টেশনের কাছে যে দুটো লোক ট্রেনে কাটা পড়েছিল তারা এখানকার লোক নয়। লোকে বলে লোক দুটো নাকি তান্ত্রিক ছিল। তাদের কি কাজ ছিল কেনই বা এখানে এসেছিল সবই ভীষণ রকম ঝাপসা। মাঝে মাঝেই ওরা ঐ শ্মশানে যেত। এক অমাবস্যার রাতে ঐ শ্মশানে ওদের কে শেষ দেখা গিয়েছিল।

পরদিন সকালেই ওদের রেলে কাটা পরা ডেডবডি পাওয়া যায়। আশ্চর্যের ব্যপার ওদের মাথা দুটো কিন্তু পাওয়া যায়নি।” এটুকু বলে বিজন একটু থামল। তারপর আবার শুরু করল “এরপর থেকে আমাদের গ্রামে নানা অঘটন ঘটতে শুরু করল। অনেকেই বলা শুরু করল মুণ্ডহীন তান্ত্রিক দের নাকি মাঝে মাঝেই দেখা যাচ্ছে। কখনো তিস্তার চরে, কখনো বা ঐ শ্মশানে, কখনো বা যে রাস্তা দিয়ে আমরা এলাম তার ধারে। যে বা যারা ওদের দেখা পাচ্ছে কয়েকদিন এর মধ্যেই তাদের মৃত্যু হচ্ছে। অলরেডি আমাদের গ্রামে আট জন মারা গেছে।

কাজেই ব্যপারটা যে মোটেই ছেলে খেলা নয়, সেকথা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছিস” এটুকু বলে বিজন আমার চোখে চোখ রাখল, এরপর বিজন যা বলল, তা একরকম আমার কাছে অবিশ্বাস্য ছিল, “আমার বাবাও ওদের দেখা পেয়েছিলেন, তিনদিনের মাথায় উনি মারা যান। ওনার ডেডবডি টাও ঐ শ্মশানের কাছেই পাওয়া যায়। ওনাকে জড়িয়ে ধরে যে কাঁদবো তার সুযোগ উনি আর রেখে যাননি” আমার বাক্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল, বিস্ফারিত চোখে অস্ফুট স্বরে শুধু এটুকুই জিজ্ঞেস করতে পেরেছিলাম “কেন”।

তার যা উত্তর বিজন দিয়েছিল তার চাইতে চারশো চল্লিস ভোল্টের শক খাওয়া অনেক ভাল ছিল। “ওনার মাথা টা পাওয়া যায়নি। ওনার জামা কাপড় দেখে আমরা ওনাকে সনাক্ত করেছিলাম। যারা যারা এখানে মারা গিয়েছেন তাদের সবার মরণ পদ্ধতি ঐ একই। ঠিক যেভাবে ঐ তান্ত্রিক রা মারা গিয়েছিল।” আমার মুখ দিয়ে কোনও শব্দ বের হচ্ছিলনা। মনে হচ্ছিল বিজনের কথায় কেমন যেন হিপ্নটাইয হয়ে গেছি। আমি জানতাম বিজনের বাবা কোনও দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। বিজন প্রায় মাস খানেক ছুটিতে ছিল।

পাছে ও কষ্ট পায় তাই আমরা কেউই ওর বাবার মৃত্যু সম্পর্কে কোনও প্রশ্ন করিনি। আর বিজন ও কোনোদিন কিছু ভেঙে বলেনি। একথা শোনার পর আমি আমার সমস্ত কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে বিজনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। দুজনেই চুপচাপ, আমিও ব্যপারটার সাথে একটু ধাতস্থ হওয়ার চেষ্টা করছি, এমন সময় নিরবতা ভেঙে বিজনই প্রথম কথা বলল “ আমিও তোর মতো ছিলাম। গ্রামে থাকলেও কোনোদিন ভূত প্রেতে বিশ্বাস করিনি। অনেকেই অনেক রকম ভৌতিক ব্যপার দেখে এসে গল্প করত কিন্তু আমি সব কিছু মজা করে উড়িয়ে দিতাম। বাবার সাথে হওয়া ব্যপারটার পর আমাদের পরিবার এর সবাই খুব সাবধানী।

রাতে বিরেতে বাইরে থাকিনা, রাত করে ফিরিনা, সন্ধ্যের পর দরজা জানালাসব বন্ধ। যতই প্রয়োজন পড়ুক রাতে আমাদের গ্রামের কেউই বের হয়না। আর যদি যেতেই হয় গ্রামের সবাই মিলে একটা দল করে মশাল হাতে বের হই। সব মহিলারা আর বাচ্চাদের কে কোনও একজনের বাড়ীতে রেখে যাওয়া হয়। কেউ একলা থাকেনা। কিছুদিন আগে গ্রামে এক মহিলার রাতে প্রসব বেদনা ওঠে, তখনও আমরা এটাই করেছিলাম।” কথাগুলো বলে বিজন একটু থামল। মুড়ি মুড়ির মতো পড়ে রইল, চা পড়ে পড়ে জল হয়ে এলো। “আরে এগুলো তো পুরো ঠাণ্ডা হয়ে গেল। দাড়া মাকে বলি গরম করে দিতে।”

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বিজন বেরিয়ে গেল চায়ের কাপ হাতে। আমি বিছানায় বসে বসে বিজনের বলা কথাগুলোকে পরপর মেলানোর চেষ্টা করছিলাম। দুজন তান্ত্রিক, তারা কি করত কেউ জানেনা, তাদের মাথা কাটা লাশ পাওয়া গেল। তারপর তাদের দেখা পাওয়া আর যারা দেখেছে তাদেরও মাথা কেটে নেওয়া। এটাতো দুষ্কৃতিদের ও কাজ হতে পারে। কিন্তু মাথা কেটে নেওয়ার ব্যপারটা মেলাতে পারছিনা। সেটা আবার সাথে সাথে ঘটছেনা, ঘটছে দেখা পাওয়ার দু তিন দিন পরে। এটার কারণ কি হতে পারে? তাহলে কি বিজন যেটা বলছে সেটাই ঠিক? এটার সাথে সত্যি কি কোনও ভৌতিক যোগাযোগ রয়েছে। এত কিছুর মধ্যে কোথাও যেন একটা আনন্দ হচ্ছিল।

এতদিনে একটা ঠিক জায়গায় এসে পড়েছি। ভূত আছে কি নেই তার প্মাণ পাওয়ার এর থেকে ভাল জায়গা আর হতেপারেনা। এসবই ভাবছি এমন সময় বিজন ঘরে এসে ঢুকল। আমার দিকে হাসিমুখে চেয়ে প্রশ্ন করল “কিরে ভয় পেলি?” উত্তর আমারও রেডি ছিল “ভূতে ভয় পাবো এমন কিম্ভূত অন্তত আমি নই। আর তাছাড়া দেশে অরাজকতা, জঙ্গিহামলা বাড়ছে, এমতাবস্থায় এসবের জন্য ভূতকে দায়ী করাদের দলে আমি নেই। একরকম ধরেই নিচ্ছিস কেন, এসব কোনও ভৌতিক ঘটনা।

নাও তো হতে পারে, হতে পারে কোনও জঙ্গি সংগঠন চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে।”বিজন বলল “আমিও যে তা ভাবিনি তা নয়, কিন্তু গ্রামের এই নিরীহ মানুষ গুলোর ওপর কার এতো আক্রোশ থাকবে, যে এমন নৃশংস ভাবে প্রত্যেক কে খুন করবে।

প্রত্যেক টা ডেডবডির পোষ্টমর্টম হয়েছে, ডাক্তার বলছে প্রত্যেকে হার্ট এটাক এ মারা গেছে, পরে মুণ্ডু টা কেটে নেওয়া হয়েছে” ক্রমশ…

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত