মৃত্যুর নাম্বার

মৃত্যুর নাম্বার

সেদিন হটাৎ করেই অফিস গিয়ে সাত তাড়াতাড়ি মোবাইল টা খুলল অজয়। সাধারণত দুপুরে কাজের আর টিফিনের ফাঁকে ছাড়া ও মোবাইল খোলার সময় ও পায় না। নেট অন করার পর পিরিং পিরিং করে বিভিন্ন গ্রুপের ম্যাসেজ আসতে লাগল। মনে মনে একটু বিরক্তই হল ও। বেশ কিছু আলতু ফালতু ম্যাসেজ না পরে বাতিল করার পর একটা ভিডিও তে চোখ আটকাল।

সাধারণত সময়ের অভাবে কষ্মিণকালেও ভিডিও ডাউনলোড করে না। তবু কি যে হল, ভিডিও টা ডাউনলোড করল। একটা জরুরী ম্যাসেজে ভিডিও বার্তা। একটা মোবাইল নাম্বার দিয়ে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে, যে নাম্বার থেকে ফোন এলে সবাইকে তা রিসিভ করতে বারণ করা হচ্ছে। নাম্বার টা ভাল করে দেখল ও। 9 সংখ্যার ভারি অদ্ভুত নাম্বার-777888999

সাধারণত মোবাইল নাম্বার 10 সংখ্যার হয়। এই টা 9 সংখ্যার। ভিডিও টিতে যে লোকটা ঘোষণা করছে, সে বলছে যে, গত 10 দিনে নাকি সারা ভারতে নাকি 50 জন মারা গেছে ; এই নাম্বার থেকে কল রিসিভ করে। আসলে যখনই কেউ এই নাম্বার থেকে আসা কল রিসিভ করেছে, তখনই মোবাইলে বিস্ফোরণ হয়েছে। জরুরী বার্তায় বলা হয়েছে ই নাম্বারে একটা ভাইরাস রয়েছে, যা কল টা রিসিভ করলেই ব্যাটারীতে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। আর সঙ্গে সঙ্গে সব শেষ।

সর্বশেষ বিস্ফোরণ নাকি কয়েকদিন আগেই হয়েছে। এক যুবক গুরুতর আহত হয়েছে। ভিডিও তে দেখান হল যে, লোকটা রক্তাক্ত শরীরে নার্সিংহোমের বেডে কাতরাচ্ছে। নাকে অক্সিজেন মাস্ক। পুরো ব্যাপারটা অজয়কে ছুঁয়ে গেল যেন। কি সাংঘাতিক! এরকম ও হয় নাকি? কিন্তু এরকম নাম্বার থেকে তো যেকোন সময় ফোন আসতে পারে। সব সময় কি আর নাম্বার দেখে ফোন ধরা যায় নাকি?

মাথাটা হটাৎ ঝিম ঝিম করতে লাগল। মাত্র একটা আপাত নিরীহ ফোন কল! আর তারপর মৃত্যু অনিবার্য। কি ভয়ানক! যত বারই চিন্তা করছে, ততবারই ভিতরে ভিতরে ও ভয়ে কুঁকরে যাচ্ছে। ভাবনার মাঝেই হটাৎ বসের ডাক।  এই ফাইলটা আজই চেক করে ছেড়ে দেবে, খুব আর্জেন্ট। ওকে স্যার।  ও মোবাইল থেকে চোখ না সরিয়ে বলল। বস একবার ওর দিকে আর এক বার ওর মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বলল কি হয়েছে বলতো। মোবাইল থেকে তো চোখই সরাচ্ছ না। স্যারের কথায় লজ্জা পেয়ে ও সংক্ষেপে সবটা বলল। স্যার ওর সব কথা শুনে হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলল সারাদিন এসব ঘাঁটলে এরকম মাথা খারাপ করা হাজার জিনিস পাবে। যাও এসব রেখে এবার কাজে যোগ দাও।

লজ্জা পেয়ে অগত্যা ও মাথা নীচু করে হালকা দোলাল। কথা শেষ করে বস চলে যেতেই ও রাকেশের নাম্বার টা খুঁজে একটা ফোন লাগাল। রাকেশ ওর ছোট বেলার বন্ধু। সব ব্যাপারেই ওস্তাদ। হাজার রকমের জ্ঞান রয়েছে ওর। এরকম অনেক বিপদে ও অজয় কে সাহায্য করেছে। আশা করি এই বার্তাটার ব্যাপারেও কোন পরামর্শ বা তথ্য দিতে পারে। ফোনটা দু বার বাঁজতেই সে চিরাচরিত ঢঙে ধরল। হ্যালো, রাকেশ পোদ্দার বলছি। আরে গা আমি অজয় বলছি। নাম্বার সেভ নেই নাকি? মনে মনে রাকেশকে খিস্তি মারল ও। শালা জমিদারের ব্যাটা!

আরে কি খবর রে চার অক্ষর?  ওপাশ থেকে রাকেশ গলা নামিয়ে জিজ্ঞাসা করে। আরে শালা মজার ব্যাপার না এটা। সিরিয়াস ম্যাটার।  অজয় ফিস ফিস করে বলে।  আচ্ছা, বেশ বল শুনছি। ততোধিক ফিস ফিস করে রাকেশ বলল। অজয় বুঝল রাকেশ মজা করছে। তবু না উত্তেজিত হয়ে মোবাইলের ঘটনাটা সবিস্তারে বলে গেল। আর রাকেশ ও বিঘ্ন না ঘটিয়ে পুরো টা চুপ করে শুনল। তারপর অট্টহাস্য করে উঠল। রাবিশ ভাই। 100% রাবিশ। ওরকম আমিও ম্যাসেজ পেয়েছি। কিন্তু পাত্তা দিই নি। আর ঐ নাম্বার থেকে ফোন এলে আমি অন্তত ধরবই। তারপর যা হবার হবে। রাকেশের কথায় মনে একটু বল পেল ও। সত্যিইতো। এরকম কত অর্ধসত্য বা আজগুবী খবর তো বাতাশে ওরে। তা বলে কি তা বিশ্বাস যোগ্য? মনে সাহস সঞ্চয় করে ও কাজে মন দিল। এমনিতে অ্যাক্সিডেন্টের পর থেকেই এখন কেমন যেন ও ভিতু ভিতু হয়ে যাচ্ছে। সব ব্যাপারেই কেমন যেন ভয় ভয়। ওর এরকম আচরনে সুপর্ণার সাথে পর্যন্ত সম্পর্ক ভেঙে গেছে।

সেদিন সন্ধ্যা বেলায় বাড়ি ফিরে একটু ফ্রেশ হয়ে সংসারের এক মাত্র সঙ্গী মা কে মোবাইলের পুরো ঘটনা টা বলল ও। অবাক হয়ে দেখল মা যেন কেমন গুম হয়ে আছে। সব শুনে মা বলল মিথ্যে হোক বা সত্যি। অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এলে ধরার দরকার কি?  ওহ, তুমিও না মা আচ্ছা দরকারি ফোন ও তো আসতে পারে? ওর কথায় মা কোন উত্তর না করে রান্নাঘরে চলে গেল।

ও বুঝতে পারল না, আজ মা এত চুপচাপ কেন? সেকি ওর সাম্প্রতিক মানসিক সমস্যার জন্য? হতে পারে, কারণ গত পরশু ই এক সাইক্রিয়াটিস্ট ওকে দেখে রায় দিয়েছে, যে সামান্য তম মনের উপর চাপ পরলে ও পাগল হয়ে যেতে পারে। কারণ ওর মাথার বেশ কিছু নার্ভ দুর্বল। বেশী প্রেশার নেবার ক্ষমতা নেই। অফিসের প্রেশারের বাইরে কোন ধকল না নেওয়াই ভাল। অবশ্য আগে এরকম ছিল না। গত বছর বাইক অ্যাক্সিডেন্টের পর থেকেই এরকম চলছে।

রাত আটটা নাগাদ হটাৎই সুপর্ণার ফোন। প্রায় 6 মাস পর! ব্যাপার কি? ফোন টা রিসিভ করল ও কাঁপা হাতে। হ্যালো, কি ব্যাপার? হটাৎ এতদিন পর? অজয়ের গলায় আবেগের কাঁপন। না, ভেবনা সখ করে করলাম। একটা খবর দেওয়ার ছিল। অজয় বুঝল সুপর্ণার গলায় চাপা উত্তেজনা আছে, কিন্তু তা এত দিন কার বিরহে সৃষ্টি না। বরঞ্চ কোন দুঃসংবাদ শোনানোর জন্য। নিজের আবেগ কে দমন করে ও বলল বল, শুনছি। অজয়ের কথায় সুপর্ণা কিছু সময় নিল নিজেকে প্রস্তুত করার। জানেনা এই খবরটাকে কিভাবে অজয়ের কাছে প্রকাশ করবে?

কি হল চুপ কেন? বল এবার। অজয়ের ধৈর্য বাঁধ ভাঙল। আচ্ছা মাসীমা তোমায় কিছু বলেনি?  কি ব্যাপারে?  অজয়ের মাথার ভিতরে যন্ত্রণা শুরু হল। কোন কিছু ভাবতে গেলেই হয়। কেন যে সুপর্ণা এত সময় নিচ্ছে বলার জন্য। প্লিজ, প্লিজ সুপর্ণা বল আমার, কি হয়েছে?  রাকেশ আজ বিকেলে একটা বিষ্ফোরনে মারা গেছে। সুপর্ণা এক নিশ্বাসে কথাটা বলে কেঁদে ফেলল।

রাকেশ আর সুপর্ণা এক পাড়ায় থাকে। রাকেশের বাড়ি যেতে যেতেই সুপর্ণার সাথে ওর আলাপ। কথাটা শুনেই কি বলবে, কি করবে ভেবে পেল না ও। রাকেশ আর নেই ! মাথাটা হটাৎ কেমন যেন অন্ধকার হয়ে গেল। মুহুর্তের মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল ও।

যখন জ্ঞান এল, তখন পরদিন সকাল। চারদিকে বন্ধুরা দাঁড়িয়ে গোল হয়ে। নান্টু, বাচ্চু, মৌ, এমনকি সুপর্ণাও। শুধু রাকেশ নেই। ও চোখ মেলতেই দেখল, একজন ডাক্তার ওকে পরীক্ষা করছে। তারপর চলে যাবার সময় মাকে বলল উনি মানসিক ভাবে প্রচণ্ড দুর্বল। একটা ট্রমায় রয়েছেন। কোন রকম ট্রেস দেওয়া যাবে না।

ডাক্তার বাবু বেরিয়ে যেতেই মা এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল গত কাল বিকালে রাকেশের বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার টা হটাৎই ব্লাস্ট করেছে। সঙ্গে সঙ্গেই ও মারা গেছে। আমি সব জেনে চুপ করে ছিলাম। কারণ তোকে কোন করম শক দিতে ডাক্তার বারণ করেছে। এরপর কি করে তোকে প্রিয় বন্ধুর মৃত্যু সংবাদ জানাতাম? অজয় কি বলবে ভেবে পেল না। এই তো গত কাল সকালেই রাকেশের সাথে কথা হয়েছে।

না মাসীমা তুমি ঠিক কাজই করেছ। সুপর্ণা ই নীরবতা ভেঙে কথাটা বলল। আর আমরা সদ্য এক বন্ধুকে হারিয়েছি। আর কাউকে হারাতে পারব না। ও পাশ থেকে নান্টু বলল। অজয় ধীরে ধীরে উঠে বসল। মাসীমা এখন মনে হয়, পোষ্টমর্টেম হয়ে বডি বাড়িতে এসেছে। ও একটু শেষ বারের মতন যাক না। মৌ এর কথায় শুকনো হাসি হেসে অজয়ের মা সায় দিল। নিয়ে যা, কিন্তু খুব সাবধান।

রাকেশকে দেখতে এসে চারদিকে শোকার্ত মানুষের ঢল দেখে অজয় অবাক হল। যুবমহলে কত বিখ্যাত ছিল ছেলেটা। কিন্তু এভাবে গ্যাস সিলিন্ডারে বিষ্ফোরনে সব শেষ হয়ে গেল। আচ্ছা রাকেশ তো কোনদিন রান্না করতে পারত বলে ও শোনে নি। তবে বিষ্ফোরনে বাড়ির আর কেউ না মরে ও মরল কিভাবে? এই প্রশ্নটা করতেই সুপর্ণা যেন অস্হির হয়ে গেল। এখানে আর থাকার দরকার নেই। চল বাড়ি ফিরবে। কিন্তু সু, সবাই মোবাইল নিয়ে কথা বলছে কেন বলতো?

হুম বলছে, কারণ ভিড়ের মধ্যে কে যেন এক মহিলার মোবাইল চুরি করেছে। তা নিয়ে চর্চা হচ্ছে। ওহো, তাই নাকি? আমি তো ভাবলাম কি ভাবলে? যে রাকেশ মোবাইল বিস্ফোরণে মারা গেছে? রাবিশ অজয়। সুপর্ণা বিরক্তি সহকারে কথাটা বলল। ও মনে মনে ইশত লজ্জিত হল। এখনও মনের মধ্যে দ্বন্ধ চলছে। বাইক অ্যাক্সিডেন্টের পর অজয়ের যখন সাময়িক স্মৃতি ভ্রম হওয়ার যোগার, তখনি ওকে ছেড়ে ও চলে এসেছিল। রাকেশের হটাৎ মৃত্যু ওকে আবার একসাথে মিলিয়েছে। কিন্তু একটা কথা কিছুতেই ওকে বলতে পারছে না যে, রাকেশের মৃত্যু টা গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে হয়নি। ওটা সুপর্ণার ভাবনার মাঝেই অজয়ের মোবাইলে ফোন এল। অফিসের বস করেছেন। হ্যালো স্যার, কি ব্যাপার? আজ তো রবিবার, অফিস বন্ধ। কি বলছেন ? এমা সেকি! আচ্ছা কোথায় আছেন? কোন হসপিটাল? আচ্ছা আমি যাচ্ছি। ফোনটা রেখে বিভ্রান্ত মুখে অজয় সুপর্ণার দিকে তাকাল। খারাপ কিছু একটা আন্দাজ করে সুপর্ণাও হকচকিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। কি হয়েছে?

বসের স্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাড়িতে বোম ব্লাস্ট হয়েছে। কথাটা শুনে সুপর্ণার বুকের ভিতরটা ছ্যাত করে উঠল। তবে কি ভাবনা পরিস্ফুট হওয়ার আগেই একটা ট্যাক্সি ধরার জন্য অজয় ছটফট করে উঠল। ওকে এখন ই একবার উডল্যান্ডসে যেতে হবে। সুপর্ণাকে বলাতে সুপর্ণাও বাধ্য হল যেতে। ওর বস সুপর্ণার পূর্ব পরিচিত। অজয় কে একটা দোকানের সামনে দাঁড় করিয়ে ও বিশাল দত্তকে ফোন লাগাল। তারপর যা শুনল, তা তে ওর রক্ত হিম হয়ে গেল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা নার্সিংহোমে এল। মিসেস দত্তের অবস্হা আশঙ্কাজনক। লাইফ সাপোর্টে এখনও শ্বাস প্রশ্বাস চলছে। অজয়ের বস একটা সোফায় গুম মেরে বসে ছিলেন। ওদের দেখে শুকনো মুখে উঠে দাঁড়িয়ে ম্লান হেসে বললেন মনে হয়, আর ফেরাতে পারব না।  কিভাবে হল স্যার? অজয়ের কথায় উত্তর দিতে গিয়েও সুপর্ণার ইশারায় চুপ করে গিয়ে বললেন পুলিশ তদন্ত করছে। কিসের থেকে ব্লাস্ট পরে জানা যাবে।

সেদিন সন্ধ্যা অবধি থেকে অজয় কে ফেলে চলে যেতে পারল না সুপর্ণা। অজয়কে নিয়ে বাড়ি ফিরল। অজয়ের মা ওদের সম্পর্কের কথা জানে। তাই ওদের একসঙ্গে বাড়ি ফিরতে দেখে খুশি ই হলেন। বাড়ি ফিরে অজয় স্নান করতে ঢুকলে সুপর্ণা ড্রয়িং রুমে টিভি অন করল।

সব চ্যানেলেই একই সংবাদ–মোবাইলের একটি বিশেষ নাম্বারের ফোন কল রিসিভ করে আজ কোলকাতায় 4 জন মারা গেছে। আর 2 জন মৃত্যুর সাথে লড়ছে। 777888999 নাম্বারটাকে মৃত্যুর নাম্বার বলা হচ্ছে সর্বত্র। খবর টা চালু হতে অজয়ের মা হন্তদন্ত হয়ে ড্রয়িং রুমে এসে টিভিটা অফ করে দিলেন।

কিন্তু মাসীমা এভাবে কটা মৃত্যুর খবর ই বা তুমি লুকাবে? আর লুকাবেই বা কেন।? খবর কি চাপা থাকে? আমার মনে হয় ওকে এবার বলে দেওয়া ভাল, যে ও যেটা পড়েছে বা দেখেছে, তা 100 ভাগ সত্যি। না হলে তো সতর্ক হবে না ও। কিন্তু ও তো গত কালই অফিস থেকে ফিরে এ ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছিল। তার পরে ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। মা হয়ে কিভাবে ওকে ভেঙে পড়তে দেখি বলতো?

অজয়ের মা এর কথায় সুপর্ণা মাথা নাড়িয়ে উঠে দাঁড়াল। তোমার মা এর মন, হয়তো ঠিকই বলেছ। যাই হোক সেই সকালে বেড়িয়েছি। বাড়িতে সবাই চিন্তা করছে গো। আজ তবে আসি। আর হ্যাঁ, সবাই সাবধানে থেক। অচেনা নাম্বারের ফোন কল রিসিভ করো না।

সুপর্ণা বেড়তেই অজয় স্নান সেরে ঘরে ঢুকল। সুপর্ণা বেড়িয়ে গেছে শুনে মন খারাপ হলেও মাকে কিছু বলল না। আজ কলকাতা নাইট রাইডার্সের ম্যাচ ছিল বিকেল 4 টে থেকে। ও টিভি অন করতে গিয়ে দেখল কেবল নেই। ও জানত না যে, মা প্লাগ খুলে রেখেছে। মোবাইল টাও খুঁজে পেল না। বোধ হয় ডাক্তারের পরামর্শে মা সব সরিয়ে রেখেছে। মনে মনে বিরক্ত ই হল। এভাবে সময় কাটান যায়?

অবশ্য মার একটা পুরানো ফোন আছে। মা কাউকে ফোন করলে এটা থেকেই করে। বেশ কিছু ভাল গেম আছে এটায়। তবে স্মার্ট নয়। মোবাইল টা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে মনে পড়ল গত কালকের মোবাইল বার্তা টার কথা। শালা ও তো ভয়েই শেষ হয়ে যাচ্ছিল। বস আর রাকেশ যদি না ওকে সাহস দিত। অথচ কি ভাগ্যের পরিহাস! একজনের মৃত্যু সেই বিষ্ফোরনেই আর একজনের বৌ লড়ছে মৃত্যুর সাথে। বসের স্ত্রী যেন কিভাবে নার্সিং হোমে এল? এসি মেশিন ব্লাস্ট? ধুর পুলিশ তদন্ত করছে। ওর মাথাব্যথা নেই। তবে দু জনের জন্যই খুব কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে রাকেশের জন্য। কিন্তু ও আর বেশী ভাবতে পারছে না। মাথার মধ্যে সব জট পাকিয়ে যাচ্ছে।

আচ্ছা কোন বদমাশ এই ভিডিও টা পোস্ট করেছে জানলে হতো। এভাবে সিরিয়াস ব্যাপার নিয়ে মানুষকে ভয় দেখান। 777888999…. আজব নাম্বার ভাই! আচ্ছা এই নাম্বারে একটা ফোন করলে কেমন হয়? শালা, অন্তত জানা যেত এরকম মস্করা কে করছে? ভাবা মাত্রই ঐ নাম্বারে মা য়ের ফোন থেকে একটা কল করল ও। তাজ্জব ব্যাপার! মোবাইলটা বাঁজছে। কিন্তু কেউ ধরছে না। তা ধরবে কি আক্কেলে? পুলিশের উচিত বদমাশ টাকে ধরে সাজা দেওয়া। কিন্তু না। পর পর 2-3 বার ফোন করলে ও লোকটা ধরছে না।

অগত্যা ও হাল ছেড়ে দিয়ে মাকে বলল  মা আমি একটু ছাদে যাচ্ছি। বসের বৌ হাসপাতালে ভর্তি। ফোন করলে আমার ডেকে দিও। মা মাথা নাড়াতে ও ছাদে গিয়ে বসল। ছাদে অনেকে ঘুরি ওড়াচ্ছে। ও মগ্ন হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকল। মনে মনে রাকেশের হাসিখুসি মুখটা ভেসে উঠতে লাগল। কোথা থেকে কি যে হয়ে গেল।

ওর মা একমনে পেপাড় টা পড়ছিল। সকালে কাজের চাপে ঠিকমতন পড়াই হয় নি। এমন সময় পুরানো ফোনটা বেজে উঠল। এই নাম্বারে তো চট করে কেউ ফোন করে না। হয় বাপের বাড়ি থেকে সবে ধন ভাই, না হয় বান্ধবী দের কেউ। ঘরটা তো অন্ধকার। লাইট টা জ্বালতে গেলে পাছে ফোনটা কেটে যায় ; তাই তিনি ফোনটা ধরলেন।

তারপর ই….

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত