অপারেশন আইসল্যান্ড

অপারেশন আইসল্যান্ড

এক

‘বরফের দেশ!’, অবাক হয়ে বলল রিনক।
‘মোটেও বরফের দেশ নয়’, জাহিদ বলল।
‘একদম ঠিক বলেছো তুমি’, মি.পিটার সন বললেন।’নামটা শুনে যদিও মনে হয় পুরো দেশটা বরফে ঢাকা আসলে কিন্তু তা না।আইসল্যান্ড হল অপরূপ এক মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্যের দেশ।তোমরা গেলেই দেখতে পাবে।’

মি.জন পিটার সন হচ্ছেন জাহিদের বাবার ছোট বেলার বন্ধু।থাকেন আইসল্যান্ডে। একটা সময় বাংলাদেশেই ছিলেন।জাহিদের বাবার মত তিনিও একজন ব্যাংকার।ব্যাংকের কিছু কাজ পরায় বাংলাদেশে আসতে হয়েছে তাকে।এ ফাঁকে পুরোনো বন্ধুর সাথে একবার দেখা করার লোভটা সামলাতে না পেরে সোজা কুমিল্লায় চলে এসেছে।একদিক দিয়ে অবশ্য ভালোই হয়েছে দুইগোয়েন্দার জন্য।এখানে এসেই প্রথমে জন পিটার সন মি.আনিসুল হককে ছেলেদের আইসল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার বেপারে বলার সাথে সাথে তিনি রাজি হয়ে যান।রিনকের বাড়ী থেকেও কোনো আপত্তি করেনি।সে কি খুশি ছেলেদের।আইসল্যান্ডে যাবে সেটাতো চাট্টি খানি কথা নয়।হাজার হোক সূর্য না ডোবার দেশ এ আইসল্যান্ড।এসব নিয়েই ছেলেদের সাথে মি.পিটার সনের কথা বার্তা হচ্ছে।

‘এই যে এর অবস্থান’, একটা ম্যাপ খুলে টেবিলের উপড় মেলে ধরল গোয়েন্দা প্রধান। ‘আর এই যে আইসল্যান্ড।গ্রীনল্যান্ডের পূর্বে ও উত্তর মেরুর ঠিক দক্ষিণে মধ্য আটলান্টিক পর্বতমালার মধ্যখানে এর অবস্থান।’
‘এখনতো আমার মনে হচ্ছে দেশটার নাম আইসল্যান্ড না হয়ে হিলল্যান্ড হওয়া উচিত ছিল।যে ভাবে চারদিক দিয়ে পাহাড় ছেকে ধরেছে তাতে হিলল্যান্ড নামটাই বেশ মানান সই ছিল।’
‘আইসল্যান্ড হচ্ছে’

‘জাহি-হি-হিদ’, জাহিদের মায়ের কণ্ঠ ভেসে আসায় ওদের আলোচনায় ভাটা পরল।’তোর আংকেলকে নিয়ে খেতে আয়,খাবার রেডি।’

খাবারের কথা শুনে তৎক্ষনাত আলোচনার ইতি টানল রিনক।হাত নেড়ে বলল,’আরে দূর রাখতো তোমার আইসল্যান্ড-টাইসল্যান্ড।আগে খেয়ে নিজের পেটটাকে আইসবেলি বানাই তারপর অন্য কথা।’
গোয়েন্দা সহকারির কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠল বাকী দুজন।

দুই

এর দুদিন পর।
হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে আইসল্যান্ডের উদ্দেশ্যে প্লেনে উঠল দুইগোয়েন্দা জাহিদ, রিনক এবং সাথে পিটার সন।প্রায় ২ ঘন্টা আকাশে উড়ার পর ঘুমে জড়িয়ে আসলো জাহিদের চোখ।তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পরল সেটা ও নিজেই টের পেল না।ওর ঘুম ভাঙল কারওর হাতের গুতোয়।ঘুম থেকে জেগে দেখে রিনক ওকে গুতো মারছে।

‘জাহিদ ‘, ফিসফিস করে বলল রিনক।’আমার একজনের উপড় বেশ সন্দেহ হচ্ছে।’
‘কার উপড়?’, অবাক হল গোয়েন্দা প্রধান।

‘আমাদের পেছনের সিটে যে লোকটি বসেছে তার উপড়।সেই এয়ারপোর্ট থেকে লক্ষ্য করেছি, লোকটা বার বার আমাদের দিকে তাকাচ্ছিল।একটা মুহূর্তের জন্যও আমাদের চোখের আড়াল করেনি।প্লেনে উঠার পরও সে একই অবস্থা।এখনো কিছুক্ষণ পর পর ওকি দিয়ে আমাদের দেখছে।’

‘বেপারটাতো তাহলে গুরতর।’, চিন্তিত হয়ে পরল গোয়েন্দা প্রধান।যদি লোকটা ওদের পিছু নিয়েই থাকে তাহলে কেন? এখনতো ওরা কোনো কেসে কাজ করছে না! তাহলে কেন কেউ ওদের পিছু নেবে?

‘এই দেখ দেখ’, চেচিয়ে উঠল রিনক।’নিচে দেখ’।
নিচে কি আছে তা দেখার জন্য জাহিদ প্রায় হুমড়ি খেয়ে পরল রিনকের উপড়।রিনকের সিট জানালার পাশে তার পাশে জাহিদের এবং ওদের সিটের পেছনেই রয়েছেন মি.পিটার সন।

একটা বিশাল আগ্নেওগিরি দেখা যাচ্ছে নিচে।প্লেনটা যখন আগ্নেওগিরির উপড় দিয়ে উড়ে গেল তখন এত উপড়ে থাকা সত্তেও আগ্নেওগিরির উত্তাপ অণুভব করতে পারল যাত্রীরা।

‘বুঝলে জাহিদ’,মি. পিটার সন বললেন।’এটা হচ্ছে আইসল্যান্ডের একমাত্র জীবন্ত এবং বড় আগ্নেওগিরি।কয়েক কোটি বছর ধরে এটা জ্বলছে।’

‘কয়েক কোটি!,’ অবাক হল গোয়েন্দা সহকারি।

‘হ্যা।কোয়েক কোটিও হতে পারে কিংবা কয়েক শ কোটিও হতে পারে।বিজ্ঞানীরা এর প্রকৃত বয়স এখনো বের করতে পারেনি’। আইসল্যান্ডের ম্যাপ খুলে কোলের উপড় মেলে ধরল গোয়েন্দা প্রধান।প্লেনের অবস্থানটা একবার দেখে ম্যাপটা আবার পকেটে রেখে দিল।ওরা এখন সেলফোস শহরে রয়েছে।এ শহরটায় কোনো জনবসতির নাম গন্ধ নেই।অবশ্য থাকবেই বা কি করে? পুরো সেলফোস শহর জুড়ে যে রয়েছে বিশাল আগ্নেওগিরি।কিছুক্ষণ বাদে নিচে দু একটা খামাড়ের মত বাড়ী দেখতে পেল ছেলেরা।প্রথমে একটা,এরপর ৫ টা, এরপর ১৫, এভাবেই বেড়ে চলল জনবসতির সংখ্যা।একটা পর্যায় ওরা আইসল্যান্ডের রাজধানী রেকিয়াভিকে প্রবেশ করল।যাত্রীদের সকলকে সিট বেল্ট বাধার নির্দেশ দিলেন ক্যাপ্টেন। এর ১০ মিনিট পর প্লেন রেকিয়াভিকের এয়ারপোর্ট পরাগাটায় ল্যান্ড করল।এয়ার পোর্টের গেটের সামনে দাড়িয়ে রয়েছে একজন কাস্টমস অফিসার।ছেলেদের দেখে কাস্টমস অফিসার সামনে এগিয়ে আসল।

‘ওয়েলকাম টু ইস্লান্ত’, মাথাটা হালকা নত করে বলল অফিসার।এরপর অফিসার ছেলেদের পাসপোর্ট দেখতে চাইল।পাসপোর্ট দেখা শেষ হলে অফিসার ছেলেদের যাওয়ার অনুমতি দিলেন।

‘আরি বাপরে’, বাতাসে থাবা মারল রিনক।’অফিসারটা কোন ভাষায় আমাদের স্বাগতম জানালেন?’
‘কেন ইংরেজি’
‘আরে না ওটা না,ঐ যে কি যেন বলল….ও হ্যা ইস্লান্ত,এটা আবার কোন ভাষা?’
‘এটা হচ্ছে এখানকার স্থানীয় ভাষা’, এক গাল হাসলেন মি.পিটার সন।’আমরা আইসল্যান্ডকে বলি ইস্লান্ত।’
‘হু বুঝেছি এতক্ষণে’, মাথা নাড়ল রিনক।
এয়ারপোর্টের সামনের রাস্তা ধরে এগিয়ে চলছে ওরা।হঠাৎ রিনক জাহিদের পেটে গুতো দিয়ে বলল,’ জাহিদ দেখ দেখ,প্লেনের লোকটা।আবার আমাদের পিছু নিয়েছে।’
আড় চোখে পেছনে তাকালো গোয়েন্দা প্রধান।আরে তাইতো।প্লেনের লোকটা আবার ওদের পিছন পিছন আসছে।এতক্ষণ ধরে লোকটার কথা মনেই ছিল না ওর।লোকটা আসলে করতে চায় কি? আর কেনই বা ওদের পিছু নিয়েছে? এমন হাজারো প্রশ্ন এসে ভিড় করছে জাহিদের মাথায়।’দূর এসব কি ভাবছি আমি’, নিজের মনকে ধমক লাগাল জাহিদ।’লোকটা ওদের পিছু নিতে যাবে কেন? বেপারটা সম্পূর্ণ কাকতালিয়ও হতে পারে।’

যদিও জাহিদ ওর নিজের মনকে বোঝাচ্ছে বেপারটা কাকতালিয় কিন্তু ওরও সন্দেহ হচ্ছে।কোথায় যেন একটা খাদ রয়েই গেছে।বাংলাদেশ থেকে আইসল্যান্ড পর্যন্ত যতগুলো বেপার হয়েছে সবগুলোতো আর কাকতালিয় হতে পারে না।কিন্তু অনেক ভেবেও ও পিছু নেওয়ার সন্তুষ্টজনক কারণ খুজে পেল না।

ট্যাক্সির কাছে পৌছে ট্যাক্সি নিয়ে তাতে মাল পত্র বোঝাই করল ওরা।তারপর ছেলেরা আর মি.পিটার সন ট্যাক্সিতে উঠল।গাড়ি স্টার্ট নিয়ে চলতে লাগল রাস্তার ধুলো উড়িয়ে।দুপাশে বড় বড় বিল্ডিং।বিল্ডিং গুলোর মধ্যে আবার অনেকগুলে গলি এদিক ওদিক চলে গিয়েছে।রাস্তায় এখন প্রায় মানুষজন নেই বললেই চলে।বেপারটা জাহিদের কাছে একটু অবাক করার মতই লাগল।একটা দেশের রাজধানী অথচ দিনের বেলায়েও কোনো মানুষ নেই!।হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আতকে উঠল গোয়েন্দা প্রধান।রাত ১২ টা বাজে।অথচ এখনতো দিন।তারপরই হঠাৎ ওর মনে পরল যে ঘড়ির টাইমটা বাংলাদেশের।এখানকার সময়ের সাথেতো আর বাংলাদেশের কোনো মিল নেই।তাই ঘড়ির সময় ঠিক করার জন্য জাহিদ মি. পিটার সনকে সময় জিজ্ঞেস করলে ওনি বললেন এখন রাত ২ টা বাজে।
‘কি রাত দুটো’, অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল রিনক।’এটা কি করে সম্ভব? আমিতো নিজের চোখে দিনের আলো দেখতে পাচ্ছি।’

‘এখানে ২২ ঘন্টা দিনের আলো থাকে।’ জাহিদ বলল।
‘জাহিদ একদম ঠিক বলেছে’, পিটার সন বললেন।’এখন গ্রীষ্ম কাল।এ সময়ে কখনো সূর্য ডুবে না।আবার শীত কালে এর উল্টো।পুরো শীত ধরে আইসল্যান্ডের আকাশে কোনো সূর্য দেখা যায় না।’

‘আরি বাপরে, এ তো দেখি বারি বৈচিত্রময় জায়গা এ আইসল্যান্ড।আচ্ছা এখানকার মানুষেরা কি তাহলে সারাদিন খায় নাকি! আমি বাপু সারাদিন খেতে পারব না।’

রিনকের কথায় হো হো করে হেসে উঠলেন পিটার সন।হাসতে হাসতে হঠাৎ জাহিদের চোখ গেল ট্যাক্সির লুকিং গ্লাসের দিকে।লুকিং গ্লাসে দেখল ওদের পিছু পিছু একটা ট্যাক্সি আসছে।আর সে ট্যাক্সির ডাইভারের পাশে বসে রয়েছে সে লোকটি যে লোকটির কথা রিনক বলেছিল।এবার আর বেপারটাকে কাকতালিয় হিসেবে মানতে পারল না গোয়েন্দা প্রধান।নিশ্চই কোনো কুমতলব রয়েছে লোকটার।লোকটাকে এ একটু ভালো করে দেখবে সে সুযোগটা পর্যন্ত নেই।এয়ারপোর্টে জাহিদ শুধু লোকটাকে এক মুহূর্তের জন্য দেখেছিল।লোকটিকে দেখে এখনো চিনতে পারত না ও যদি না লোকটার গায়ে লাল কোর্ট থাকত।এয়ারপোর্টে লোকটা লাল কোর্ট পরেই ছিল।কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ওদের ট্যাক্সির পাশ কেটে শা করে বেরিয়ে গেল পেছনের ট্যাক্সিটা।ট্যাক্সিটা যাওয়ার সময় জাহিদ এক পলকের জন্য লোকটাকে দেখতে পেল।লোকটা ওর দিকেই তাকিয়ে হাসছিল।এরপর সামনের একটা গলির ভেতর হারিয়ে গেল ট্যাক্সিটা।আর কোথাও দেখা গেল না ট্যাক্সিটা কিংবা লোকটাকে।মি.পিটার সনের বাড়ীর সামনে এসে ঘ্যাচ করে দাড়িয়ে গেল ট্যাক্সি।ভেতর থেকে লাফিয়ে নামল দুইগোয়েন্দা।ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে পিটার সন ছেলেদের বললেন,’তোমরা ট্যাক্সি থেকে জিনিসপত্র নামাও,আমি গিয়ে আমার কাজের লোককে পাঠাচ্ছি।ও এসে সব ভেতরে নিয়ে যাবে।’

এরপর বাড়ীর ভেতরে চলে গেলেন পিটার সন।এদিকে ট্যাক্সি থেকে মালপত্র নামাতে ব্যস্ত ছেলেরা।হঠাৎ বিকট একটা আওয়াজে চমকে ফিরে তাকাল দুইগোয়েন্দা।একটা ট্যাক্সির ভেতরে লাল সূট পরা একটা লোক বসে রয়েছে।লোকটার হাতে একটা পিস্তল।কিছুক্ষণ আগে লোকটা গুলি করায় আওয়াজটা হয়েছিল।ঘটনার আকস্মিকতায় পাথর হয়ে গেছে যেন জাহিদ।ট্রাক্সিটা সোজা ওর দিকে ছুটে আসতে লাগল।ধীরে ধীরে বাড়ছে ট্যাক্সির গতি।থামার নাম গন্ধ নেই।এদিকে নিজের জায়গা ছেরে এক পাও নড়তে পারছে না গোয়েন্দা প্রধান।শরীরের সকল শক্তি যেন হারিয়ে ফেলেছে।চোখেও তেমন কিছু দেখতে পাচ্ছে না।শুধু দেখতে পাচ্ছে ২ টন ওজনের একটা লোহার বস্তু ঘন্টায় ২০০ কিলোমিটার বেগে ওর দিকে ছুটে আসছে।

তিন

একেবারে শেষ মুহূর্তে রিনক এসে লাফিয়ে পরল জাহিদের উপড়।রাস্তার পাশে পরে গেল ওরা।সাথে সাথে ওদের কানের পাশ দিয়ে শা করে বেরিয়ে গেল ট্যাক্সিটা।কিছুদূর যাওয়ার পর ঘ্যাচ করে ব্রেক কষল ট্যাক্সি।ভেতর থেকে প্রায় লাফিয়ে নামল লাল সূট পরা লোকটি।এরপর একবার ছেলেদের দিকে তাকিয়ে একটা বিশ্রি হাসি দিয়ে দ্রুত হাঁটা শুরু করল।কিছুক্ষণরে মধ্যে রাস্তার বাকের ওপাশে আড়াল হয়ে গেল লোকটা।ট্যাক্সির ড্রাইভার দৌড়ে ছেলেদের এসে জিজ্ঞাসা করল,’তোমাদের কিছু হয়নিতো?’
‘আরেকটু হলে সোজা মেরে দিতেন আর এখন জিজ্ঞাসা করছেন আমাদের কিছু হয়েছে কিনা?’, রাগ দেখিয়ে বলল রিনক।
‘আসলে’

‘এই বেটা তোর লাইসেন্স দেখা’, ডাইভারের কথা শেষ হওয়ার আগেই একজন পুলিশ ওনার কাধ চেপে ধরলেন।

পুলিশটা আশেপাশে কোথাও এক জায়গায় ছিল আর এ পুরো ঘটনাটা ঘটেছে পুলিশটার চোখের সামনেই।
‘এই নিন স্যার’, পুলিশের দিকে লাইসেন্স এগিয়ে দিল ড্রাইভার।

কিছুক্ষণ ধরে পুলিশ ডাইভারের লাইসেন্সটা চেক করল এরপর তা আবার ড্রাইভারকে ফিরিয়ে দিল।
‘ওভাবে গাড়ী চালাচ্ছিলি কেন?’, হাতের লাঠি নাচাতে নাচাতে বলল পুলিশ।’চল থানায় চল,তারপর মজা দেখাচ্ছি।’
‘আমি না স্যার,ঐ লোকটা’, কাদো কাদো হয়ে বলল ডাইভার।’ঐ লোকটা আমাকে বাধ্য করেছে।
‘কোন লোক?’, ভ্রু কুচকে ফেলল পুলিশ।

‘একটা লাল সূট পরা লোক।আমাকে পিস্তল দেখিয়ে ভয় দেখাল,আমি যদি ওনার কথামত কাজ না করি তাহলে আমাকে খুন করবে।’

‘চালাকি হচ্ছে না আমার সাথে?’, ধমকে উঠল পুলিশ।’নিজের দোষ এখন অন্যের উপড় চাপাতে চাচ্ছো?’
‘স্যার ওনি সত্যিই বলছেন’, জাহিদ বলল।’ওনার সাথে একজন লাল সূট পরিধান করা লোক ছিল আর লোকাটার হাতে ছিল একটা পিস্তল।ছেড়ে দেন ওনাকে।ওনার কোনো দোষ নেই।’

‘ছেড়ে দেব?’, একমুহূর্ত জাহিদের দিকে তাকিয়ে রইল পুলিশটা।কি করবে এখন সেটা বুঝতে পারছে না।আরও কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে পুলিশটা বলল,’আজ ছেড়ে দিলাম।এরপর থেকে বেপোরোয়াভাবে গাড়ী চালালে সোজা নিয়ে জেলে ঢুকাব।’
এরপর পুলিশটা একটা জীপে করে চলে গেলে।
‘ধন্যবাদ তোমাকে’, বিনয়ের সাথে বলল ড্রাইভার।
‘ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই’, জাহিদ বলল।’আচ্ছা একটা কথা বলুনতো লোকটা কে ছিল?’
‘আমি সত্যিই জানিনা।আমার সাথে একটিবারের জন্যও কথা বলেনি।শুধু ইশারায় সবকিছু বলেছে।’
‘ঠিকাছে আপনি এবার যেতে পারেন।’

লোকটি যাওয়ার আগে বার বার ছেলেদের ধন্যবাদ দিল।আইসল্যান্ডের মানুষেরা যে কতটা আন্তরিক তা বেশ টের পেল দুইগোয়েন্দা।ইতিমধ্যে মি.পিটার সনের কাজের লোক এসে উপস্থিত হয়েছে।লোকটা সদ্য ঘুম থেকে উঠা।তাই চোখে তখনো ঘুম জড়িয়ে ছিল।ছেলেদের মালপত্র যখন নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল লোকটা তখন জাহিদ লোকটাকে না করে দিল।কাজের লোকটা সোজা হয়ে দাড়াতেই পারছিল না,বার বার ঢুলছিল।রাত ৩ টা বাজে।অথচ এখানেতো দিব্যি সূর্য রয়েছে মাথার উপড়।ওরা মালপত্র নিয়ে কাজের লোকটার পিছু পিছু যেতে লাগল।বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করে লোকটা ছেলেদের থাকার ঘর দেখিয়ে দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।বড় একটা হাই তুলে বিছানার উপড় শুয়ে পরল রিনক।মালপত্রগুলো একপাশে রেখে জাহিদও শুয়ে পরল।পরদিন ওদের ঘুম ভাঙল কাজের লোকটির চেচামেচিতে।জাহিদ যখন কারণ জিজ্ঞাসা করল তখন ভাঙা ইংরেজিতে লোকটা যা বলল তা দাড়ায় এমন,’আমি প্রতিদিনের মত সসকালে বাড়ী পরিষ্কার করছিলাম।হঠাৎ দেখি তোমাদের ঘরের ভেতরে একটা লোক প্রবেশ করছে।আমি চোর ভেবে পেছন থেকে ঝাপটে ধরি।অমনি লোকটা একটা পিস্তল দিয়ে আমায় বারি মেরে পালিয়ে যায়।’

‘অদ্ভূদতো’, বিড়বিড় করল গোয়েন্দা প্রধান।’আমাদের ঘরে আবার কেউ কেন ঢুকতে যাবে?’
‘আচ্ছা লোকটা কি পরেছিল?’, রিনক জিজ্ঞাসা করল।

‘একাা লাল সূট’
‘কি লাল সূট!’, লাল সূটের কথা শুনে একে অপরের দিকে তাকালো দুইগোয়েন্দা।বুঝতে বাকী রইলো না ওদের যে কে ছিল লোকটা।সে বাংলাদেশ থেকে পিছু নিয়েছে ওদের।কাল রাতে আবার জাহিদকে মারার চেষ্টা করেছে।আজ সকালে আবারর পিস্তল নিয়ে ওদের ঘরে ঢুকেছে।এতকিছু ঘটে গিয়েছে অথচ ওরা এখনো লোকটার বেপারে কিছুই জানেনা।আর লোকটার আসল উদ্দেশ্যটা কি সেটাও কিছুতে বুঝতে পারছে না ওরা।কিছুক্ষণ বাদে ব্রেকফাস্ট করতে গেল ছেলেরা।টেবিলের সামনেই যেতে দুইগোয়েন্দা দেখল মি.পিটার সনের সাথে ওনারিই বয়সের একটা লোক বসে রয়েছে আর লোকটার পাশে ওদেরিই বয়সের একটা ছেলে বসে রয়েছে।ছেলেদের দেখতেই মি.পিটার সন বলে উঠলেন,’আরে আসো আসো তোমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।’

টেবিলের পাশে দুজন দুটো চেয়ার টেনে বসল।
‘ইনি হচ্ছেন আমার বন্ধু ফেরেন্টি সন।’, পিটার সনের পাশে বসে থাকা লোকটাকে দেখিয়ে বললেন মি.পিটার সন।’আর ও হচ্ছে ফেরেন্টি সনের ছেলে জন লিভার সন।’, ছেলেটাকে দেখালেন পিটার সন। ‘আর ফেরেন্টি ও হচ্ছে জাহিদ আর ও হচ্ছে রিনক।একে অপরের বন্ধু।আর ওরা কিন্তু সাধারণ কোনো ছেলে নয়।পুরো বাংলাদেশ দাপিয়ে বেড়ায় ওরা।ওরাই হচ্ছে সে বিখ্যাত দুইগোয়েন্দা যারা মিস্ট্রিয়াস আইল্যান্ডে গিয়েছিল।’
নিজেদের নামে এত প্রশংসা শুনে লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেল ওদের।
‘পরিচিত হয়ে অনেক ভালো লাগলো ইয়াং ম্যান’, এক গাল হেসে বললেন ফেরেন্টি সন।
‘আমাদেরও’, রিনক বলল।

ইতিমধ্যে কাজের লোকটা টেবিলে অনেক রকমের খাবার পরিবেশন করেছে।তার মধ্যে লালচে রংয়ের এক অদ্ভুদ ধরনের খাবার দেখতে পেয়েই সাথে সাথে টেনে নিল।নতুন খাবার টেষ্ট করার এইতো সময়।অদ্ভুত খাবারটার কিছু অংশ ছড়ে দ্রুত মুখে পুড়ে চিবাতে শুরু করল ও।

‘এমন সু-স্বাদু খাবার এর আগে কখনো খেয়েছি বলে মনে হয় না আমার।’, রিনক বলল।’এটা তৈররি করে কিভাবে?’
‘হাঙর দিয়ে’, জন লিভার সন বলল।
‘হাঙর দিয়ে?’, অবাক হল রিনক।’সেটা আবার কিভাবে?’
‘এটা হচ্ছে আইসল্যান্ডের জাতীয় খাবার’, পিটার সন বললেন।’একে আমরা বলি “হাকার্ল”।দীর্ঘ দিন ধরে হাঙর পচিয়ে তৈরি করা হয় এ খাবার।’
‘কি পচা হাঙর খাচ্ছি তাহলে’, চেচিয়ে উঠল সহকারি গোয়েন্দা।
‘খাও না, আরও খাও’, খোচা দিয়ে বলল জহিদ।’খাবার দেখলেতো আর লোভ সামলাতে পার না, এবার সামলাও ঠেলা।কোনো কিছু নয় একেবারে পচা হাঙর।’
রিনক একে একে চারজনের মুখের দিকে তাকালো একবার আর হাকার্ল খাবারের দিকে তাকালো একবার।এরপর পুরো অর্ধেক পচা হাঙর মুখে পুড়ে দিল।
‘দূর জাহিদ মিয়া’, হাঙর চিবুতে চিবুতে বলল রিনক।’পচা হোক আর ভালই হক স্বাদটাতো অপূৃর্ব।তোমরা যাই বল আমি কিন্তু এ পচা হাঙরিই খাব।’
রিনকের কথা শুনে শব্দ করে হেসে উঠলো পিটার সন আর জাহিদ।মি.ফেরেন্টি আর তার ছেলে জন লিভার সন রিনকের কথা কিছুই বুঝেনি প্রথমে কারণ রিনক কথাটা বাংলায় বলেছিল।কিন্তু যখন পিটার সন বাকী দুজনকে কথাটা বুঝিয়ে বললেন তখন ওরাও হাসতে লাগল।

ব্রেকফাস্ট শেষ করে পিটার সন এবং তার বন্ধু ফেরেন্টি সন স্টাডি রুমে গিয়ে ঢুকলেন।জরুরি একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে দুই বন্ধু।ফেরেন্টির প্রথম কথা শুনেই মানুষটাকে পছন্দ করে ফেলেছে দুইগোয়েন্দা।
‘তোমরাই তাহলে সে দুইগোয়েন্দা?’, জন লিভার সন জিজ্ঞাসা করলো।
ব্রেকফাস্ট সেরে ছেলেরা মি.পিটার সনের বাড়ীর পেছনের একটা বাগানে এসেছে।
‘হু’, মাথা নেড়ে সায় জানালো রিনক।
‘যাক ভালোই হল’, জন বলল।’তোমাদের পেয়ে গেলাম।আসলে এখন আমার গোয়েন্দার খুব প্রয়োজন।’
জনের কথা শুনে ঝিলিক দিয়ে উঠলো গোয়েন্দা প্রধানের চোখ।এতক্ষণ ধরে মনে মনে যেটার কথা ভাবছিল সেটাই বোধ হয় এবার পেয়ে গেছে।রহস্যের গন্ধ।এটা যে জাহিদ মিয়ার চির নেশা।রহস্য পেলেই ও খুশি।আর যদি সেটা হয় কোনো জটিল রহস্য তাহলেতো আর কথাই নেই।দিন-রাত এক করে লেগে পরে রহস্য সমাধানে।
‘কেন?’,
‘আসলে আমার দাদা তার মৃত্যুে আগে আমাদের জন্য একটা মেসেজ দিয়ে যান।মেসেজটা হচ্ছে একটা ধাধা।আমি অনেক চেষ্টা করেও এ ধাধা কিছুতেই সমাধান করতে পারিনি।আমার বিশ্বাস ধাধার সমাধান করতে পারলে মূল্যবান কিছু পাওয়া যাবে।’
‘গুপ্তধনের কথা বলছো?’,
‘অনেকটা তেমনিই।’
‘কি জাহিদ মিয়া’, খোচা মেরে বলল সহকারি গোয়েন্দা।’হাতে নেবে গুপ্তধনের কেস নাকি শুয়ে বসে কাটাবে ছুটিটা?’
‘জন তুমি সাইকেল থেকে পরলে কিভাবে?’, রিনকের কথা যেন শুনতেই পেল না জাহিদ।
‘আরি তুমি জানলে কিভাবে?’, অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করল জন লিভার সন।
‘তোমার হাতের কাটা দেখে’, জাহিদ বলল।’তোমার হাতের উল্টো পাশটা যেভাবে বড় হয়ে কেটেছে তা থেকে বোঝা যায় এটা সাইকেল থেকে পরে কাঁটা।’
জনের ডান হাতের উল্টোপাশে একটা লম্বা কাটা রয়েছে।শার্টের আস্তিন দিয়ে ঢেকে থাকায় সহজে কারও চোখে পরবে না সে দাগ।
‘হু তোমার…………’
‘জাহিদ তোমার পেছনে……..’ জনের কথা শেষ হওয়ার আগেই চিৎকার দিয়ে উঠল রিনক।
পাই করে ঘুরে ঘুরে গেল জাহিদের মাথা।সাথে সাথে একটা চিৎকার দিয়ে মাটিতে পরে গেল ও।চোখ বন্ধ হয়ে নিথর হয়ে গেল গোয়েন্দা প্রধানের দেহ।

চার

‘চিন্তার কিছু নেই’, ডাক্তার বললেন।’কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ভালো হয়ে যাবে।’

বাগানে জাহিদকে একটা সাপে কামড়ে ছিল।সে সাপটা যদিও তেমন একটা বিষধর ছিল না কিন্তু তুবও বিপদের সম্ভাবনা ছিল অনেক।সাপ টার নাম জানে না রিনক কিংবা জন লিভার সন।ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ভ হয়ে একমুহূর্ত দাড়িয়ে ছিল ওরা।সে ফাঁকে পালিয়ে যায় সাপটা।সাপের কামড় খাওয়ার সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল গোয়েন্দা প্রধান।ছেলেরাতো রিতীমত ভয় পেয়ে গিয়েছিল, কোথাও আবার জাহিদের কিছু না হয়ে যায়।জাহিদকে বাড়ীর ভেতর এনে ডাক্তারকে খবর পাঠানো হল।
‘সত্যিই ভালো হয়ে যাবেতো?’, করুণ কন্ঠে জিজ্ঞাসা করল রিনক।
‘আমি ইঞ্জেকশাশ দিয়ে দিয়েছি।আশা করি খুব শিঘ্রই সেরে উঠবে।’
‘সেরে উঠলেই ভালো’, বড় একটা নিশ্বাস ফেলল পিটার সন।’ছেলেদের আনলাম আইসল্যান্ড দেখাতে আর কিনা…’
‘চিন্তা করো ননা পিটার’, পিটার সনের কাধে হাত রাখলেন মি.ফেরেন্টি।’ওর কিছু হবে না।শিঘ্রই ভালো হয়ে উঠবে।’

ডাক্তার যদিও বলেছিল জাহিদ কয়েক ঘন্টার মধ্যে সেরে উঠবে কিন্তু তা হল না।অবশ্য কয়েক ঘন্টা পর যদিও ওর জ্ঞানটা ফিরেছিল কিন্তু শরীর ছিল বেশ দূর্বল।পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও দুদিন লেগেছিল।

‘তো জন’, জাহিদ বলল।’এবার বলতো তোমার দাদা কেমন মেসেজ রেখে গিয়েছে?’
মি. পিটার সনের বাড়ীর পেছনের বাগানে আবার জড় হয়েছে দুইগোয়েন্দা আর জন লিভার সন।বাগানের মধ্যখানে একটা বেঞ্চ পাতা।তার উপরিই বসে রয়েছে ছেলেরা।জায়গাটা নিরিবিলি হওয়ায় এটাকেই আপাতত বানানো হয়েছে দুইগোয়েন্দার হেডকোয়াটার।
‘মেসেজ টা ভারি অদ্ভুদ’, মাথায় একবার হাত বুলালো জন।’অনেকটা কবিতার মত।’
‘কবিতা! সে আবার কি ধরনের?’, রিনক প্রশ্ন করল।
‘একটা কবিতা ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে মেসেজটা।একটা ইংলিশ কবিতা।’
‘মেসেজটা একবার দেখতে চাই’, মাথায় আঙ্গুল দিয়ে হালকা টোকা দিতে দিতে বলল জাহিদ।
‘তাহলেতো তোমাদের আমাদের বাড়ীতে যেতে হবে।মেসেজটাতো আমি এখানে আনিনি।’

আইসল্যন্ডের পাকা রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালাচ্ছে জাহিদ এবং রিনক।সাথে জন লিভার সনও রয়েছে।তিনজন পাশাপাশি রয়েছে।মি.পিটার সনের বাড়ী থেকে ২ মাইল দূরেই রয়েছে মি.ফেরেন্টি অর্থ্যাৎ জন লিভার সনের বাড়ী।হাত ঘড়ির দিকে তাকালো রিনক।লান্সের সময় হয়ে গিয়েছে।অনেক্ষণ ধরে ওর পেটটা মোচর দিচ্ছিলো।তবে কেন মোচর দিচ্ছিল সেটা এতক্ষণ ধরে না বুঝলেও এবার বুঝতে পেরেছে ও।
‘আমি আর এক কদমও যেতে পারব না’,কিচ করে সাইকেলের ব্রেক চেপে দাড়িয়ে গেল রিনক।ওর পাশে এসে দাড়ালো জাহিদ আর জন।’সেই কখন থেকে পেটের ভেতর ছুচো দৌড়াচ্ছে।এ দৌড় না থামালে আমি কিছুতেই সাইকেলকে দৌড় করাতে পারব না।’
‘তাহলে সেটাই হোক’, হো হো করে হেসে উঠল গোয়েন্দা প্রধান।কিছুক্ষণের মধ্যে জাহিদের হাসি সংক্রামিত হল জন আর রিনকের মধ্যে।একটা রেস্টুরেন্টের সামনে সাইকেল রেখে ওরা রেস্টুরেন্টের ভেতরে প্রবেশ করল।রিনক হাকার্লসহ পুরো একটা আস্ত মুরগির রোস্ট খেল।বাকী দুজনও পেটপুরে খেল।খাওয়া শেষ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আবার সাইকেল নিয়ে রওনা দিল ওরা।এর ১৫ মিনিট পর ওরা পৌছে গেল জনদের বাড়ীর সামনে।দুপাশে অসংখ্য ফুলের গাছ তার মধ্যখান দিয়ে বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করার রাস্তা চলে গিয়েছে।ফুল গাছগুলোতে অনেক ফুলই ফুটেছে।তবে সেগুলোর নাম জানে না জাহিদ কিংবা রিনক।
‘এটাই হলো আমাদের বাড়ী’, গর্বের সঙ্গে বলল জন।’আমার দাদা বানিয়েছিল বাড়ীটা।’
দোতালা বিশিষ্ট্য বিশাল বাড়ীটাকে রীতিমত একটা দূর্গের মত লাগছে দুইগোয়েন্দার কাছে।আগেরকার মানুষেরা ডাকাত আর জলদস্যুর ভয়ে এভাবেই দূর্গের মত বাড়ী তৈরি করত।বাড়ীর নিচতলা পেরিয়ে উপড়ে ওঠে আসলো ওরা।একটা ছোট করিডর দিয়ে সামনে এগিয়ে চলল।বাড়ীর ঠিক মধ্যখানে করিডরের ডান পাশে একটা রুমে ঢুকলো ওরা।রুমের ভেতর একটা বুকশেল্ফ আর কয়েকটা চেয়ার আর একটা টেবিল ছাড়া আর কিছুই নেই।এসকল জিনিসপত্র থেকে এটা অণুমান করা সহজ যে এটা স্টাডি রুম।জন টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা কাগজ বের করে সেটা এগিয়ে দিল দুইগোয়েন্দার দিকে,’এটাই হচ্ছে সে মেসেজ যেটা আমার দাদা তার মৃত্যূর পূর্বে দিয়ে গিয়েছিলেন।’
কাগজটা নিয়ে তা টেবিলের উপড় মেলে ধরলো গোয়েন্দা প্রধান।কি লেখা আছে তা দেখার জন্য পাশ থেকে ঝুকে আসলো সহকারি গোয়েন্দা রিনক।কাগজের লেখাটা জোরে জোরে পড়ল জাহিদ।

টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার
হাউ আর অন্ডার দ্যা আইসল্যান্ড বার,
সি দ্যা আন্ডার টুইংকেল হিল
হোয়ার আর ওয়াটার আর দ্যা ইন্ড

দেন সি দ্যা সানসেট সিন,
হোয়ার আর ওয়াটর দ্যা ব্রেক।
টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার
হাউ আর ওন্ডার দ্যা আইসল্যান্ড বার।
সি দ্যা স্যাডো অফ টুইংকেল হিল
দেন ফাইন্ড দ্যা লিটল অফ এ বাক্স।
হেয়ার ইজ মেসেজ ফর মাই সন।’

‘অদ্ভূদতো’, বিড়বিড় করলো জাহিদ।
‘তোমার দাদা কি পাগল ছিল নাকি জন?’, রিনকের প্রশ্ন।
‘কেন?’
‘না হলে কেও এরকম ধাধা রেখে যায় মৃত্যুর আগে? সোজাসুজি বললেইতো হত।’
‘আসলে আমার দাদা ছিলেন বেশ রহস্য প্রেমি।তাই সবসময় প্রতিটা জিনিসের মাধ্যে ধাধা তৈরি করতেন।আর তাছাড়া ঐ গুপ্তধনগুলো অন্য কারও হাতেও পরার সম্ভাবনা রয়েছে।তাই দাদা এরকম অদ্ভূদ মেসেজ রেখে গেছেন।’
‘তোমার দাদা বেশ বুদ্ধিমান ছিলেন’, কাগজটার দিকে চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে রইলো জাহিদ।’একটা সাধারণ কবিতা দিয়ে অনেক জটিল একটা ধাধা তৈরি করে গেছেন।সে যাইহোক আমরা এটার এক লাইন এক লাইন করে সমাধান করব।তাহলেই ধাধার সমাধান আমরা পেয়ে যাব সহজেই।’

যদিও জাহিদ বলেছে ধাধার উত্তর সহজেই পেয়ে যাবে কিন্তু আসলে তা নয়।এ ধাধার সমাধান করতে হলে ওদের কোনো একটা পাহাড়ের নিচে যেতে হতে পারে।মেসেজটা অন্তত সেটাই নির্দেশ করছে।
‘তাহলে কি……..’
জনের কথা শেষ হওয়ার আগেই দরজায় একটা খট করে আওয়াজ হলো। ‘দরজর বাইরে যাও কুইক’, চেচিয়ে নির্দেশ দিল গোয়েন্দা প্রধান।
সবার আগে ছুটল রিনক এরপর জাহিদ এবং সবার শেষে জন লিভার সন।করিডর দিয়ে একটা খট খট আওয়াজ ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে।আওয়াজটা অনেকটা শক্ত বুট জুতোর মত।সিড়ি বেয়ে নেমে সোজা দরজার দিকে ছুটলো রিনক।এক মহূর্তের জন্য একটা কালো স্যূট দেখতে পেল ও।তারপরই রিনক পৌছুবার আগেই একটা কালো ওয়েগান স্টার্ট নিয়ে বেরিয়ে গেল জনদের বাড়ীর চত্তর থেকে।জাহিদ দৌড়ে এসে থামলো রিনকের পাশে।এর পর পরই এসে থামলো জন।
‘ধরতে পারেনি বেটাকে’, হাপাতে হাপাতে বলল রিনক।’তার আগেই পালিয়েছে গাড়ী নিয়ে।’
‘তুমি লোকটার চেহারা দেখেছিলে?’
‘না। শুধু পরনে একটা কালো কোর্ট দেখেছি।’

রিনকের পাশে দাড়িয়ে আঙ্গুল দিয়ে কানের উপড়ে মৃদু টোকা মারছে জাহিদ।চিন্তার ঝড় বইছে এখন ওর মাথায়।পাশ থেকে রিনক ওকে হালকা একটা মৃদু ধ্বাক্কা দিয়ে বলল,’এই তোমার আবার কি হলো? কি ভাবছো?’
‘অ্যা,ও আমাদের এবার আরও সাবধান হতে হবে’, জাহিদ বলল।’লোকটা নিশ্চই লুকিয়ে থেকে আমাদের সকল কথা শুনেছে।মেসেজের কথাটাও শুনেছে বোধ হয়।’
‘কিন্তু লোকটা কেনইবা আমাদের কথা শুনতে আসবে?’, জন বলল।
‘নিশ্চই মেসেজের সম্পর্কে জেনে গিয়েছিল কোনোভাবে।তাই লুকিয়ে দেখতে এসেছিল।’
‘আরেকটু হলে ধরেই ফেলতাম বেটাকে’, বাতাসে থাবা মারল রিনক।’একটুর জন্য ফসকে গেল।ধরতে পারলে বসিয়ে দিতাম কয়েকটা কিল।’
‘যেদিন ধরতে পারবে সেদিন দিও’, হেসে বলল জন।’এবার ফিরে যাওয়া যাক।’

বাড়ীর ভেতরে এসে সিড়ি ধরে সোজা ওপড়ে চলে এল ওরা।এরপর করিডর ধরে এগিয়ে গিয়ে পুনরায় স্টাডিতে প্রবেশ করে দরজাটা বন্ধ করে দিল।
আবার আলোচনায় বসলো গোয়েন্দারা।
‘আমরা আরও একটা মেসেজ পেতে পারি’ জাহিদ বলল।’এখানে সে কথাই বলছে।’
‘কি আরও একটা!’, চেচিয়ে উঠল রিনক।
‘হ্যা এ দেখ।’, কাগজটা আবার মেলে ধরল জাহিদ। ‘ এ দেখ এখানে কি বলেছে “দেন ফাইন্ড অফ এ লিটল বক্স, হোয়ার আর মেসেজ ফর মাই সন” এ থেকেতো এটা পরিষ্কার আরও একটা মেসেজ পাওয়া যাবে যেটা একটা ছোট বাক্সে লুকানো রয়েছে।এখন আমাদের শুধু সেটা খুজে বের করতে হবে।আর তাহলেই…..’
‘পেয়ে যাব গুপ্তধন’, চেচিয়ে উঠল জন।
‘কিন্তু তার জন্যতো আমাদের আগে ধাধাটার সমাধান করতে হবে।’, রিনক বলল।
‘হু ঠিক বলেছো তুমি’ মাথা দোলালো জাহিদ।
‘তাহলে কাল থেকে লেগে পরি ধাধা সমাধানে’, দাত সব বেরিয়ে গেল রিনকের।

পাঁচ

‘কিছুইতো মাথায় ঢুকছে না আমার’, কাগজটার দিকে চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে রইল রিনক।
‘আমারও’, একমত হল জন।
‘দাড়াও এত হতাশ হওয়ার কিছু নেই।’, বাম কানের উপড়ে খুলির মধ্যে মৃদু টোকা মারছে জাহিদ।
সকালে ব্রেকফাস্ট করে জন সোজা মি.পিটার সনের বাড়ীতে চলে আসে।এরপর দুইগোয়েন্দা জনকে নিয়ে ওদের অস্থায়ি হেডকোয়াটারে আসে।মি.পিটার সনের বাড়ীর পেছনে বাগানের মধ্যে রয়েছে বড় একটা বেঞ্চ।জায়গাটা নিরিবিলি হওয়ায় এাকেই আপাতত দুইগোয়েন্দা ওদের হেডকোয়াটার হিসেবে ব্যবহার করছে।আলোচনায় বসেছে তিন কিশোর।জনের দাদার দেওয়া মেসেজটার মানে উদ্ধার করার চেষ্টা করছে।
‘মেসেজটা আরেকবার পরা যাক’, টেবিলের উপড় থাকা কাগজটার উপড় ঝুকে এল গোয়েন্দা প্রধান। “টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার
হাউ আর ওন্ডার দ্যা আইসল্যান্ড বার,
সি দ্যা আন্ডার টুইংকেল হিল
হোয়ার আর ওয়াটার আর দ্যা ইন্ড।
দেন সি দ্যা সানসেট সিন
হোয়ার আর ওয়াটার আর দ্যা ব্রেক।
টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার
হাউ আর ওন্ডার দ্যা আইসল্যান্ড বার।
সি দ্যা স্যাডো অফ টুইংকেল হিল
দেন ফাইন্ড দ্যা লিটল অফ এ বক্স,
হোয়ার আর মেসেজ ফর মাই সন।”
পুরো মেসেজটা পরার পর একটা মুহূূর্ত সেটার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো গোয়েন্দা প্রধান।
‘কিছু মাথায় ঢুকলো তোমার?’, রিনক জিজ্ঞাসা করল।
কোনো উত্তর দিল না জাহিদ।একইভাবে ভ্রু কুচকে মেসেজটার দিকে তাকিয়ে রইলো।
‘আমি অনেক চেষ্টা করেছি’, হাত নেড়ে বলল জন।’কিন্তু কিছুতেই এর মাথামুন্ডু বের করতে পারিনি।’
‘তুমি পারনি তাই বলে কি আমরা পারব না?’, মুখ খুলল জাহিদ।’সবই সম্ভব শুধু দরকার বুদ্ধি খাটিয়ে সমাধানের রাস্তা বের করা।এ দেখ তোমার দাদা প্রথমে কি বলেছেন’, প্রথম লাইনের উপড় আঙ্গুল রাখল ও।’টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার,হাউ আর অন্ডার অন্ডার দ্যা আইসল্যান্ড বার।তার মানে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন……..’ চুপ হয়ে গেল জাহিদ।
‘কি হলো থামলে কেন?’, জন জিজ্ঞাসা করল।’কি বোঝাতে চেয়েছেন দাদা?’
‘ইউরেকা’, চেচিয়ে উঠলো গোয়েন্দা সহকারি।’আমি বুঝে গেছি।তোমার দাদা প্রথম দু-লাইনের মাধ্যমে আইসল্যান্ডের সৌন্দর্যের কথা বলেছেন।এ দেখ ওনি বলেছেন টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার,হাউ আর ওন্ডার দ্যা আইসল্যান্ড বার।মানে ওনি আইসল্যান্ডকে তারার সাথে তুলনা করেছেন।তারার যেমন নিজস্ব আলো রয়েছে তেমনি আইসল্যান্ডেরও রয়েছে কিছু নিজস্ব আলো যা সৃষ্টি হচ্ছে জীবন্ত আগ্নেওগিরি থেকে।’
‘হু’, মাথা দোলালো জন।’যুক্তি আছে তোমার কথায়।’
‘এটার দ্বারা আরেকটা জিনিস বলতে চেয়েছেন তোমার দাদা’, দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করল জাহিদ।চট করে দু-জোড়া চোখ ঘুরে গেল ওর দিকে।’তিনি এটা নির্দেশ করেছেন যে গুপ্তধনটা আইসল্যান্ডের মধ্যেই রয়েছে।’
বাহ এইতো প্রথম দু লাইনের মানে বের হয়ে গেল।’, হাসি ফুটলো রিনকের মুখে।
‘এর পরের দু লাইনে বলেছে’, আবার বলতে লাগলো জাহিদ।’সি দ্যা আন্ডার টুইংকেল হিল,হোয়ার আর ওয়াটার আর দ্যা ইন্ড।এটা দ্বারা বোঝাতে চেয়েছেন……’ আবার গভির চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেল গোয়েন্দা প্রধান।ঘন ঘন বাম কানের উপড়ে মৃদু টোকা মারছে আঙ্গুলের নখের অংশ দিয়ে।কি হতে পারে এর মানে? কি বোঝাতে চেয়েছেন জনের রহস্যময় দাদা? এমন হাজারা প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ওর মনে।

‘জাহিদ’, রিনক বলল।’আমার মনে হয় এখানে কোনো পাহাড়ের নিচে তাকানোর জন্য বলছে।’
‘হু তাতো বুঝতেই পারছি’, চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা দোলালো জাহিদ।’এখানে বলা হয়েছে “সি দ্যা আন্ডার টুইংকেল হিল” এখন প্রশ্ন হল এ টুইংকেল হিলটা কোথায়?’
‘টুইংকেল হিল মানে জ্বলন্ত পাহাড়!,’ মনে মনে বিড়বিড় করলো সহকারি গোয়েন্দা রিনক।
‘এরপর বলা হয়েছে ‘, আবার বলতে শুরু করল গোয়েন্দা প্রধান।’হোয়ার আর ওয়াটার আর দ্যা ইন্ড।এখন প্রশ্ন হচ্ছে এটার মানে কি বোঝাতে চেয়েছেন তিনি।’
‘আমার মনে হয় কোনো লেক কিংবা নদীর তীরের কথা বলা হয়েছে’, অনেক্ষণ পর মুখ খুলল জন লিভার সন।
‘হতে পারে’, জাহিদ বলল।
‘কিংবা এমন কোনো জায়গা যেখানে পানি ভাঙ…….. পেয়েছি জাহিদ পেয়েছি।’, চেচিয়ে উঠলো রিনক।’হোয়ার আর ওয়াটার আর দ্যা ইন্ড এর মানে পেয়েছি।’
‘তুমি ঠিক ধরেছো রিনক’, জাহিদ বলল।’হোয়ার আর ওয়াটার আর দ্যা ইন্ড মানে যেখানে পানি শেষ।অর্থ্যাৎ সাগরের তীর।তীরে এসেই সাগরের পানি শেষ।’
‘বাহ দাড়ুণ কাজ দেখিয়েছো তোমরা’, প্রশংসা করল জন।’এত সহজেই ধাধার চার লান সমাধান করে ফেললে।অথচ আমি এক বছর চেষ্টা করেও এক লাইনে সমাধান করতে পারিনি।’
‘জন ‘, গম্ভির হয়ে বলল সহকারি গোয়েন্দা।’ধাধা সমাধানের পর কিন্তু সহজই মনে হয়।’
‘আমি আসলে…….’
নাটকিয় ভঙ্গিতে হাত নেড়ে জনকে থামিয়ে দিল জাহিদ।’তোমরা কিন্তু ভুলে যাচ্ছো টুইংকেল হিলটা কোথায় সেটা আমরা জানি না।কাজেই এখনো ধাধা সমাধান হয়নি।’
‘আরে তাইতো’, এতক্ষণ পর যেন হুশ ফিরল জনের।’জন্মের পর থেকে আইসল্যান্ডে আছি অথচ একবারওতো টুইংকেল হিলের নাম শুনিনি।’
‘সেটা পরে বের করা যাবে’, অধৈর্যভাবে হাত নাড়লো রিনক।’আগে পেট শান্তি করতে হবে।চল।’
উঠে পরল তিনজন।এখানেই আপাতত আলোচনার ইতি টানলো জাহিদ।পরবর্তি করণিয় যা করার তা লান্সের পর করবে।হাত ঘড়ি দেখল রিনক।দুপুর একটা বাজে।আলোচনায় এতই মগ্ন ছিল যে সময় কিভাবে কাটল সেটা বুঝতেই পারল না ছেলেরা।সূর্যটা মাথার উপড় চড়ে বসেছে।রোদের তাপ কিছুটা বেড়েছে।তাই শরীর থেকে ওভার কোট খুলে ফেলল জন।

ছয়

‘বাহ বেশতো,’ মি.পিটার সন বললেন।’বেড়াতে এসে একটা রহস্যও পেয়ে গেলে।’ মুরগির মাংসের পাত্রটা টেনে নিলেন তিনি।
‘কিন্তু একটা সমস্যায় পরে গেছি আমরা’, মুরগির মাংসে কামড় বসালো রিনক।
মি.পিটার সনের সাথে লান্স করতে বসেছে ছেলেরা।বড় একটা ডাইনিং টেবিলে গোল করে বসেছে ওরা।সাথে রয়েছে জন।লান্স করা ছাড়া পিটার সন কিছুতেই জনকে ছাড়তে রাজি নন।পিটার সনের স্ত্রী ও তার এক ছেলে থাকে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায়।ওখানে থেকে পিটার সনের ছেলে পড়ালেখা করছে।আইসল্যান্ডে তিনি সাথে করে একটা কাজের লোককে নিয়ে থাকে।
‘কেমন সমস্যা?’, ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করলেন মি.পিটার সন।
‘ভারি অদ্ভুদ একটা সমস্যা’, সুর মেলালো জন।
‘আহা সমস্যাটা কি সেটাতো বল।’
‘টুইংকেল হিল নামে কি কোনো পাহাড় আছে এখানে?’
‘টুইংকেল হিল!’, বেশ অবাক হলেন পিটার সন।’কই নাতো এমন কোনো পাহাড়ের নামতো শুনিনি কখনো।’
‘আমিও’, জন বলল।
কাজের লোকটা গরুর মাংসের কাবাব এনে টেবিলের উপড় রাখলো।সাথে সাথে কাবাবের বাটিটা টেনে নিল রিনক।তা দেখে হো হো করে হেসে উঠলো সবাই।এরপর নিরবে লান্স সারল ওরা।তারপর ছেলেরা নিজেদের রুমে চলে আসলো।দরজাটা ভেতর থেকে আটকে দিল রিনক।
‘এবার কি করবে’, দরজার কাছ থেকে সরে আসলো রিনক।’আঙ্কেলেও জানেনা এ পাহাড়ের কথা তাহলে আমরা জানবো কি করে?’
‘আমার মনে হয় টুইংকেল পাহাড়ের অন্য কোনো নাম আছে’, জাহিদ বলল।
‘অন্য নাম?’, অবাক হল জন।’কি বলতে চাচ্ছো তুমি?’
‘মানে পাহাড়টার আসল নাম টুইংকেল হিল নয়,এটা ছদ্ম নাম।পাহাড়টার এমন কোনো বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার কারণে দেখতে ওটা উজ্জল দেখায়।আর তাই তোমার দাদা পাহাড়টাকে টুইংকেল হিল বলেছে যাতে অন্য কেউ বুঝতে না পারে।’
‘তাহলে খুজে বের করব কিভাবে আসল পাহাড়টা?’
‘কোনো না কোনো উপায় নিশ্চই রয়েছে।’
‘আমরা একটা কাজ করতে পারি জাহিদ’, জন পরামর্শ দিল।’আমি এমন একজনকে চিনি যে পাহাড় নিয়ে গবেষণা করে।নাম মি.জোহান সন।হয়তো তার কাছ থেকে জানা যাবে এ টুইংকেল পাহাড় সম্পর্কে।’
‘মন্দ বলনি তুমি জন’, জাহিদ বলল।’ রিনক তোমাকেও যে এবার একটু গবেষণা করতে হবে।’
‘গবেষণা’ ভ্রু কুচকে ফেলল রিনক।’কিসের উপড়?’
‘পাহাড়ের উপড়।তুমি এদিকের পাহাড় নিয়ে যতগুলো বই রয়েছে সেগুলো একটু ঘেটে দেখ।এ ফাঁকে আমি আর জন গিয়ে মি.জোহান সনের বাড়ী থেকে ঘুরে আসি।’

ঘর থেকে বেরিয়ে গেল জন আর জাহিদ।রিনক উঠে গিয়ে ঢুকলো পিটার সনের ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে।আইসল্যান্ডের পাহাড়ের উপড় যত লেখা আছে তা সব টেবিলের উপড় রাখলো।এরপর একে একে পড়তে লাগলো সেগুলো।হঠাৎ একটা লাইনে চোখ আটকে গেল ওর।দ্রত পকেট থেকে নোট বের করে লাইনটা লিখে নিল খাতায়।এরপর আবার পড়া শুরু করল।কিছুক্ষণ বাদে হঠৎ কারও পায়ের আওয়াজ হল লাইব্রেরির দরজার সামনে।পাই করে ঘুরে গেল রিনকের ঘাড়।অমনি একটা শক্ত হাত এসে চেপে ধরলো ওর কাধ। ওদিকে ঘুরার আগেই শূণ্যে উঠে গেল ও।এরপর আটার বস্তার মত কেউ একজন ছুরে ওকে শূণ্য থেকে ফেলে দিল লাইব্রেরির মেঝেতে।

নিরবে সাইকেল চালিয়ে চলছে জাহিদ আর জন।এখন দুপুর বেলা।সূর্যটা ঠিক মাথার উপড় থেকে সরাসরি কিরণ দিচ্ছে।আইসল্যান্ডের রাজধানি রেকিয়াভিকের রাস্তা এখন তেমন একটা জনবহুল নয়। সবাই বিশ্রাম নিচ্ছে নিজ নিজ বাড়ীতে।তবে রাস্তায় গাড়ী রয়েছে প্রচুর।এ যেন গাড়ির মেলা।একটু অসাবধান হলেই ঘটে যেতে পারে মারাত্নক দূর্ঘটনা।একবার একমুহূর্তের জন্য অন্য মনস্ক হয়ে পরেছিল জাহিদ।এতেই প্রায় একটা গাড়ীর সাথে ধাক্কা লাগিয়ে দিয়েছিল ও।শেষ মুহূর্তে তীক্ষ একটা মোড় নিয়ে কোনোমতে গাড়িটার পাশ কাটাতে পারল জাহিদ।হাপ ছেড়ে বাঁচল ও।এরপর খুব সাবধানে সাইকেল চালাতে লাগলো ওরা।৩০ মিনিটের মাথায় পৌছে গেল মি.জোহান সনের বাড়ীর মাথায়।বিশাল বড় বাড়ীর সামনে রয়েছে এক চিল্তে চত্তর।চত্তরের ঠিক মাছখানে রয়েছে কয়েকটা ভিন্ন প্রজাতির গোলপ গাছ।ফুলও দেখা যাচ্ছে গাছগুলোতে।গেটের এক পাশে সাইকেল ঠেস দিয়ে রেখে বিশাল গেটটা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল ওরা।মি.জোহান সন চত্তরের পাশে একটা বাগানে গাছগুলোতে পানি দিচ্ছিলো।ছেলেদের আসার শব্দ পেয়ে ঘুরে দাড়ালেন।
‘আরে জন যে এসো এসো’, ছেলেদের দিকে এগিয়ে আসলেন মি.জোহান সন।’কেমন আছ? আর এ ছেলেটা কে?’, জাহিদকে দেখালেন তিনি।
‘ও আমার বন্ধু’, জন বলল।’বাংলাদেশ থেকে এসেছে।নাম জাহিদ।’
‘হ্যাল্লো জাহিদ’, হাত বাড়িয়ে দিলেন মি.জোহান সন।’পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো।’
‘আমারো’, হ্যান্ডশেক করলো জাহিদ।
ভালো করে মি.জোহান সনকে লক্ষ্য করলো ও।৬ ফুটের মত উচ্চতা।মাথা ভর্তি সাদা চুল।তবে সেটা বয়সের ফলে হয়েছে কিনা তা বুঝা গেল না।বিশাল কাধ দুটো যেন রিতিমত দুটো পাহাড়।হাত দুটো হাটু অব্দি ঝুলে রয়েছে।গায়ের গরন দেখে বয়সটা আন্দাজ করা গেল না।

‘আঙ্কেল’, জন বলল।’আমাদের একটু সাহায্য ধরকার।’
‘সাহায্য?’, ভ্রু কুচকে ফেললেন তিনি।’তাও আবার আমার কাছে?’
‘আসলে আঙ্কেল আমরা একটা পাহাড় সম্পর্কে আপনার কাছে জানতে এসেছি’, হাসি মুখে বলল জাহিদ।’যদি একটু সাহায্য করতেন এ বেপারে….’
এক মুহূর্ত ভ্রু কুচকে ছেলেদের দিকে তাকিয়ে রইলেন তিনি।তারপর ঘুরে ছেলেদের নিয়ে রওনা দিলেন বাড়ীর দিকে।
দরজা পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল ওরা।নিচে রয়েছে বড় একটা লিভিং রুম।রুমের ঠিক মাঝখানে রয়েছে একসেট সোফা।চারপাশের দেয়ালে ঝুলানো রয়েছে অসংখ্য পাহাড়ের চূড়োর ছবি।তার মধ্যে বাংলাদেশের তানজিও ডং এরও ছবি দেখা গেল।ছেলেদের নিয়ে সোফা সেটে বসলেন পাহাড় গবেষক।
‘এবার বল কি জানতে চাও পাহাড়ের সম্পর্কে’,।
‘আঙ্কেল আপনি কি টুইংকেল হিল চিনেন?’, মুখ ফসকে জিজ্ঞাসা করে ফেলল জন।
‘টুইংকেল হিল?’, অবাক হলেন গবেষক।’নামও শুনিনি কোনোদিন।কোনো নতুন আবিষ্কার নাকি?’
‘আমার দাদা…..’ জাহিদের ইশারায় মাঝ পথেই থেমে গেল জন।
‘তোমার দাদা কি করেছেন?’
‘কিছু করেননি।আচ্ছা আপনি কি এমন কোনো পাহাড় চেনেন যেটা দেখতে উজ্জল মনে হয়?’, দ্রুত প্রসঙ্গ বদলে ফেলল গোয়েন্দা প্রধান।
‘উজ্জল দেখতে?’, ভাবতে লাগলেন জোহান সন।’না এমন কোনো পাহাড়ের কথা আমার জানা নেই।হঠাৎ তোমরা পাহাড় নিয়ে এত আগ্রহি হয়ে উঠলে গেল? কোনো গুপ্তধন পেলে নাকি?’,
কান খাড়া হয়ে গেল জাহিদের।৬ষ্ঠ ইন্দ্রিয় পুরোপুরি সজাগ হয়ে গেল ওর অজান্তেই।নিজ থেকেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল একটা শব্দ,’আজবতো’।

সাত

রিনকের অবস্থা দেখে রিতিমত হতবম্ভ হয়ে গিয়েছে জাহিদ আর জন।মি.জোহান সনের বাড়ী থেকে ফিরে এসেছে ওরা দুজন।এসেই দেখে মাথায় ব্যান্ডিজ নিয়ে বারান্দায় বসে রয়েছে সহকারি গোয়েন্দা।
‘তোমার আবার কি হলো?’, রিনককে দেখেই বলে উঠলো জন।’ভূতে ধরল নাকি?’
‘আরে ভূত-টুত কিছু না’, হাত নেড়ে বলল রিনক।
‘তাহলে?’

বন্ধুদের লাইব্রেরিতে ঘটা সকল কিছু খুলে বলল ও।
‘শেষে আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম।’, পুরো ঘটনা বলার পর বলল রিনক।’কাজের লোকটা এসে আমায় লাইব্রেরির মেঝেতে দেখতে পায়।তারপর মি.পিটার সন একজন ডাক্তারকে খবর দেন।আর ডাক্তার এসে মাথা ব্যান্ডেজ করে দেয়।মাথা নাকি ফেঁটে গেছে।’
‘এতো সাংগাতিক বেপার’, জন বলল।
‘এর থেকেও সাংগাতিক বেপার ঘটেছে শুনলে একদম চমকে যাবে তোমরা?’
‘তাই বুঝি’, বেশ আগ্রহি দেখালো জন লিভার সনকে।
এদিকে ডান কানের উপড়ে মাথার মধ্যে ঘন ঘন টোকা মাররছে গোয়েন্দা প্রধান।চিন্তার ঝড় বইছে এখন ওর মাথায়।কি করছিলো লোকটা লাইব্রেরিতে? আর কেনই বা হামলা করেছিল রিনকের উপড়।এর সাথে কি ওদের পিছু নেওয়া লাল সূট পরা লোকটা কিংবা ঐ দিন জনদের বাড়ীতে দেখা নীল ওয়েগানে করে পালিয়ে যাওয়া লোকটার কোনো যোগ সূত্র রয়েছে?

জাহিদকে চুপ করে থাকতে দেখে রিনক ওর পেটে একটা গুতো মেরে জিজ্ঞাসা করল,’এই কি ভাবছো তুমি?’
‘অ্যা,না কিছু না’, বাস্তবে ফিরে এল জাহিদ।’তোমার সাংগাতিক বেপারটা বল।’
‘তার আগে এটা বল তুমি আর জন কিছু জানতে পেরেছো?’
‘না,মি.জোহান সন এ বেপারে কোনো সাহায্য করতে পারেনি আমাদের।সে যাহোক এখন তুমি বল কিছু পেলে গবেষণা করে?’
‘পেয়েছি মানে,টুইংকেল হিল পেয়ে গেছি।’
‘পেয়ে গেছো?’, উত্তেজিত হয়ে পরল জন।’কোথায় এ পাহাড়টা?’
‘এটার আসল নাম ডেভিল মাউন্টেন’, পকেট থেকে নোট বের করে এগিয়ে দিল জাহিদের দিকে।’এটাতে নোট করে রেখেছি।দেখ।’

নোটটা হাতে নিয়ে আওয়াজ করে পড়তে লাগল গোয়েন্দা প্রধান।রিনক নোটে লিখেছে,”আইসল্যান্ডের অদ্ভূদ এক পাহাড় নাম ডেভিল মাউন্টেন।লোক মুখে শুনা যায় ডেভিল মাউন্টেনে বাস রয়েছে এক দৈত্যের।পাহাড়টার চূড়ো থেকে প্রতিনিয়ত বের হচ্ছে অদ্ভূদ এক আলো যার ফলে পুরো পাহাড়কে উজ্জল দেখায় তারার মত।বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখতে পেয়েছে এ আলো মূল উৎস ফসফরাস।”
‘বাহ দাড়ুন কাজ দেখিয়েছো তুমি’, নোটটা পকেটে রেখে দিল জাহিদ।’এখন থেকে গবেষণার দায়িত্বটা তোমার উপড় দিলাম।তোমার কোনো আপত্তি আছে?’
রিনক গাড় নেরে জানালো ওর কোনো আপত্তি নেই। ডেভিল মাউন্টেন রেকিয়াভিক শহরের পূর্ব প্রান্তে।জায়গাটা জনের চেনা।জনের দাদা এ পাহাড়টার কথাই বলেছিলেন।ছেলেরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিল বিকেলের দিকে ডেভিল মাউন্টেনে যাবে ওরা।
শেষ বিকেলের দিকে সাইকেল নিয়ে রওনা দিল ওরা তিনজন।শহরের রাস্তা ধরে নিরবে সাইকেল চালাচ্ছে ছেলেরা।একটা সময়ে শেষ হয়ে এল শহরের সমতল রাস্তা।চোখের সামনে ভেসে উঠলো উচু নিচু পাহাড়ি আর নির্জন রাস্তা।সে নির্জন রাস্তা ধরে শান্তভাবে সাইকেল নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল তিনজন।কিছুক্ষণ বাদে হঠাৎ কিছু একটা শিষ কেটে বেরিয়ে গেল রিনকের কানের পাশ দিয়ে।থমকে দাড়ালো তিনজন।এরপর আরেকটা শিষ কেটে বেরিয়ে গেল জাহিদের কানের পাশ দিয়ে।পাথরের সাথে ধাক্কা খেয়ে টং করে পরে গেল ওটা।
‘কেউ গুলি করছে,শুয়ে পর কুইক’, চেচিয়ে নির্দেশ দিল গোয়েন্দা প্রধান।

জাহিদের নির্দেশ মত জন আর রিনক সাথে সাথে শুয়ে পরল সাথে করে জাহিদও।পরক্ষণে ওদের মাথার উপড় দিয়ে শা করে ছুটে গেল কয়েকটা বুলেট।সামনে থাকা একটা পাথরে পরে টং করে ছিটকে গেল বুলেটগুলো।ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল জন লিভার সন।এর আগে ও কখনো এমন পরিস্থিতিতে পরেনি।তাই সবচেয়ে বেশি ও ভয় পাচ্ছে।থেমে গেল গুলির আওজায়।আরও কিছু সময় একইভাবে শুয়ে রইলো ছেলেরা।তারপর আস্তে আস্তে উঠে দাড়ালো।
‘আমাদের উদ্দেশ্য করে গুলি ছুড়তে যাবে কে?’, শরীর থেকে বালু ঝাড়তে লাগল রিনক।
‘কই বন্দুকের আওয়াজতো শুনতে পেলাম না’, জন বলল।
‘শুনতে পাইনি কারণ বন্দুকে সাইলেন্সার লাগানো ছিল’, জাহিদ বলল।
‘কিন্তু আমাদের মেরে কার কি লাভ?’
‘কারও কোনো লাভ নেই’,জাহিদ বলল।’তবে আমার মনে হয় কেউ আমাদের সতর্ক করছে’,
‘জাহিদ’, রিনক বলল।’ডেভিল মাউন্টেনে আজকে যাওয়াটা ঠিক হবে না।চলো ফিরে যাই।’
‘দুইগোয়েন্দা কখনো তার রাস্তা থেকে পিছু হটে না’, দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করল গোয়েন্দা প্রধান।’সে যতই বাধা আসুক।’
সাইকেলের উপড় চেপে বসে চালাতে আরম্ভ করল ও।অগ্যতা অনিচ্ছা সত্তেও রিনক আর জনও চলতে লাগল জাহিদের পেছন পেছন।ধীরে ধীরে আবার সমতল হয়ে আসলো রাস্তা।ডান পাশে রয়েছে এখন খোলা সমুদ্র।আর বাম পাশে রয়েছে বিশাল বার্জ গাছের জঙ্গল।নিরবে সাইকেল চালাচ্ছে ওরা।২০ মিনিট পর হঠাৎ একটা উজ্জল আলো এসে চোখ ধাধিয়ে দিল ছেলেদের।আরেকটু সামনে এগিয়ে যেতেই চোখে পরল বিশাল একটা পাহাড় আর পাহাড়ের চূড়ো থেকে বেরুচ্ছে চোখ ধাধানো আলোক রশ্মি।
‘জায়গাটা একবার ঘুরে দেখা দরকার’, জাহিদ বলল।
‘ঠিক বলেছো চল’, একমত হল রিনক।
‘আমিও একমত।’জন বলল।
সাইকেলগুলো রাস্তার পাশে একটা গাছের আড়ালে রেখে পাহাড়টার সামনে চলে আসলো ওরা।এমন সময় হঠাৎ পাহাড়ের ভেতর থেকে শুনা গেল অদ্ভূদ একটা গোঙানির আওয়াজ।
‘আরি বাপরে কিসের আওয়াজ ছিল ওটা?’, চারদিকে ভয়ে ভয়ে তাকালো রিনক।
আবার শুনা গেল সে অদ্ভূদ আওয়াজ।এবারের আওয়াজটা শুধু অদ্ভূদই নয় রিতিমত রক্ত হিম করার মত ভয়ংকর।পাই করে ঘুরে উল্টো দিকে দৌড় লাগালো রিনক।পেছন থেকে কোর্টের কলারর চেপে ধরল জাহিদ,’এই কোথায় যাচ্ছো? ‘
‘আরে শুনলে না দৈত্যের হুংকার।চল ভাগি এখান থেকে।’
‘কি উল্টোপাল্টা বলছো তুমি রিনক’, জন বলল।’এখানে দৈত্য আসবে কোথা থেকে?’
‘আরে তোমরা………..’ পুরো কথা শেষ করতে পারল না রিনক তার আগেই আবার শুনা গেল সে ভয়ংকর আওয়াজটা।এবারের আওয়াজ প্রথম দুবার থেকে আরও জোড়ালো।
‘এখনো সময় আছে চল ভাগি’,ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল রিনক।’না হলে দৈত্যটা এক্ষুণি বেরিয়ে এসে গিলে ফেলবে আমাদের।তাছাড়া ঐ বইটাতেওতো লেখা ছিল এখানে একাটা দৈত্যের বাস রয়েছে।’

রিনকের কথায় কান দিল না জাহিদ।পাহাড়ের উপড়ের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে।কিছুক্ষণবাদে হাসি ফুটলো গোয়েন্দা প্রধানের মুখে।
‘রিনক তোমার দৈত্যের খোজ পেয়ে গেছি।’
‘আরি বাপারে, কিভাবে?’
‘এ দেখ’, পাহাড়ের চূড়োর দিকে নির্দেশ করল জাহিদ।’গুহাগুলো দেখতে পাচ্ছো? ঐ গুহাগুলো থেকেই আসছে এ আওয়াজটা।’
‘কি বলতে চাচ্ছো তুমি? দৈত্যটা ঐ গুহার মধ্যেই রয়েছে?’
‘বাতাসের ফলে হচ্ছে এমন আওয়াজ’, রিনকের কথা যেন শুনতেই পেল না জাহিদ।’ঐ গুহাগুলোর মধ্যে দিয়ে বাতাস প্রবাহ হলেই তৈরি হয় এ বিশেষ শব্দ।’
‘সত্যিই বলছোতো?’, উপড়ের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলল রিনক।
‘জাহিদ ঠিকই বলছে’, জন বলল।’আমারও তাই মনে হচ্ছে।’

আট

সাগরেরর পাশ ধরে দাড়িয়ে থাকা বিশাল পাহাড়টাকে এখন রিতিমত একটা দৈত্যের মতই লাগছে।ছেলেদের মাঝে বিরাজ করছে পিন পতন নিরবতা।ঢেউ এসে তীরে আছরে পরছে।সে শব্দ ছুরির ফলার মত এসে ওদের কানে বিধছে।
‘অবশেষে পাওয়া গেল টুইংকেল হিল’, জন বলল।
‘তোমার দাদা আসলেই একটা পাগল ছিলেন’, রিনক বলল।’জিনিসপত্র লুকানোর আর জায়গা পেলেন না, একেবারে ডেভিল মাউন্টেনে।’
আবার নিরবতা নেমে এল ওদের মাঝে।এদিকে জাহিদ নিরবে তাকিয়ে রয়েছে পাহাড়ের চূড়োর দিকে।ঘন ঘন ডান কানের উপড়ে মাথায় মৃদু টোকা মারছে।চিন্তার ঝড় বইছে গোয়েন্দা প্রধানের মাথায়।উপড়ের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা পরিক্ষা করছে।
‘এই তুমি কি দেখছো উপড়ে তাকিয়ে?’, জন জিজ্ঞাসা করল।
কোনো উত্তর দিল না জাহিদ।একইভাবে উপড়ের দিকে তাকিয়ে রইলো।
‘ও হচ্ছে জাহিদ হাসান’, ঘোষণা করল রিনক।’নিজ থেকে কিছু না বললে বোম মেরেও কথা কেউ বের করতে পারবে না।’
চুপ হয়ে গেল জন।
‘কিছু একটা নড়তে দেখলাম উপড়ে’, অবশেষে মুখ খুলল জাহিদ।
‘নিশ্চই দৈত্য’, ভয়ে ভয়ে চারদিকে তাকালো রিনক।’চলো ভাগি’
‘দুর দৈত্য নয়’, গোয়েন্দা প্রধান বলল।’আমার মনে হয় কেউ……….’

একটা ঘুরঘুর আওয়াজ কানে আসায় থেমে গেল জাহিদ।উপড়ে তাকাতেই থ হয়ে গেল গেয়েন্দা প্রধান।ও আর জন যেখানে দাড়িয়ে রয়েছে সেদিকে উপড় থেকে ছুটে আসছে বিশাল বড় একটা পাথর।চেষ্টা করেও পা নাড়াতে পারল না জাহিদ কিংবা জন।যেন ১০ টন ভারি হয়ে গেছে পাগুলো।ওদের দুজনের উপড় ঝাপ দিয়ে ছিটকে বালুর উপড় পরে গেল রিনক।পরক্ষনে পাথরটা এসে পরল ওরা যেখানে দাড়িয়েছিল ঠিক সেখেনে।এটার নিচে পরলে নির্ঘাত ছাতু হয়ে যেত ওরা।
‘এই তোমরা ঠিক আছতো?’, উঠে দাড়ালো রিনক।
‘আ-আ-আমি ঠিক আছি’, টলতে টলতে উঠে দাড়াল জন।
‘জাহিদ তুমি ঠিক আছতো?’
‘এখানে অসংখ্য আলগা পাথর’, রিনকের কথায় কান দিল না গোয়েন্দা প্রধান।উঠে শরীর থেকে বালু ঝাড়তে লাগলো।
‘আরে দুর রাখ তোমার আলগা পাথর,হাত পা ভাঙেনিতো?’
‘না কিছু হয়নি’, আনমনে উপড়ের দিকে তাকিয়ে রইলো জাহিদ।
পাথরটার দিকে এগিয়ে গেল সহকারি গোয়েন্দা। হাটু গেড়ে ভালো করে পরিক্ষা করতে লাগল।পরিক্ষা শেষে উঠে দাড়ালে।
‘জাহিদ,’ রিনক ডাক দিল।’আমার মনে হয় পাথরটা কেউ ইচ্ছে করে ঠেলে ফেলেছে।এ দেখ দাগটা’।একটা দাগ দেখালো রিনক।ভালো করে লক্ষ্য করল জাহিদ।দীর্ঘ দিন এক জায়গায় থাকার ফলে দাগ পরে গেছে।নিজ থেকে ওটা নিচে পরার কোনো সুযোগিই নেই।তাছাড়া তখন এক মুহূর্তের জন্য জাহিদ চূড়োতে একটা লোকের মাথা দেখতে পেয়েছিল।হয়তো এটা সে লোকেরিই কাজ।আজকে ধাধা সমাধান করাটা আর নিরাপদ মনে করল না গোয়েন্দা প্রধান।কাজেই বন্ধুদের নিয়ে রওনা দিল বাড়ীর দিকে।

নয়

‘কিছুতেই বুঝতে পারছি না আমাদের ওপর গুলি চালালো কে?’, চিন্তিত স্বরে বলল জাহিদ।
‘নিশ্চই আমাদের উপড় কেউ নজর রাখছে’, রিনক বলল।

দুইগোয়েন্দা ওদের অস্থায়ি হেডকোয়াটারে এসে মিলিত হয়েছে।গতকালের ধকল যাওয়ার যাওয়ার পর বাড়ীতে ফিরেই শুয়ে পরে ওরা।ঘুম ভাঙ্গে পরদিন সকালে।ব্রেকফাস্ট করে সোজা চলে এসেছে মি.পিটার সনের বাড়ীর পেছনের বাগানে।এখানকার একটা বেঞ্চের উপড় বসে আলোচনা করছে জাহিদ আর রিনক।

‘নিশ্চই এমন কেউ রয়েছে যে চায় না আমরা এ রহস্যের সমাধান করি’, বার দুয়েক মাথায় মৃদু টোকা মারল গোয়েন্দা প্রধান।
‘মনে হয় আমরা আর এ কেসে কাজ করতে পরবব না’, জিভ দিয়ে ঠোট চাটলো সহকারি গোয়েন্দা।’এটাই দুইগোয়েন্দার প্রথম কেস যেটাতে আমরা ব্যার্থ।’
‘আমি এর শেষ দেখেই ছাড়বো’, জোড় কণ্ঠে গোষণা করল জাহিদ।’এত সহজে আমি হাল ছাড়তে রাজি নয়।চল।’
উঠে গেরেজের দিকে রওনা দিল জাহিদ।ওখানেই ছেলেদের সাইকেল রাখা রয়েছে।ওর আচরণ সম্পর্কে জানা রয়েছে রিনকের।নিজ থেকে না বললে হাজার প্রশ্ন করেও লাভ নেই।কাজেই অযথা প্রশ্ন না করে রিনকও চলল ওর পেছন পেছন।গেরেজ থেকে সাইকেল দুটো বের করে বিশাল গেট দিয়ে বেরিয়ে পরল ওরা।কিছুক্ষণের মধ্যেই রিনক বুঝতে পারল ওরা কোথায় যাচ্ছে।শহরের রাস্তা ছেড়ে বার্জ গাছের জঙ্গল আর সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে যাওয়া রাস্তাটায় উঠলো ওরা যেখান দিয়ে গতকালও গিয়েছিল।কিছুক্ষণ বাদে ডেভিল মাউন্টেনের চোখ ধাধানো আলো চোখে পরল ওদের।পাহাড়টার সামনে এসে ব্রেক কষলো জাহিদ।রিনকও ওর পাশে ব্রেক কষলো।কোনো কথা ছাড়াই একটা ঝোপের আড়ালে সাইকেল লুকিয়ে ফেলল একটা ঝোপের আড়ালে।রিনকও রাখলো।উপড়ের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা দেখতে লাগল গোয়েন্দা প্রধান।
‘তুমি কি করতে চাচ্ছো বলতো?’, আর চুপ থাকতে পারল না রিনক।
‘সময় হলেই বুঝবে’, পাহাড়ের দিকে হাঁটা শুরু করল জাহিদ।অগ্যতা রিনকও ওর পেছন পেছন হাঁটতে লাগলো।পাহাড়ের গা বেয়ে একেবারে চূড়োয় উঠে পরল ওরা।এমনিতেই এ ডেভিল মাউন্টেন তেমন একটা বড় না।কিন্তু উঠতে বেশ পরিশ্রম করতে হলো ছেলেদের।ওরা যেখানে দাড়িয়ে রয়েছে ঠিক তার কিছুটা নিচ থেকেই বের হচ্ছে অদ্ভূদ সে আলোকরশ্মি।গতকালের আওয়াজটা আজ আর নেই।তাই রিনকও আজ ভয় পাচ্ছে না।
‘আরি বাপরে’, রিনক বলল।’এখানে কি দৈত্য খুজতে এলে নাকি?’
কোনো কথা বলল না জাহিদ।আনমনে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।
‘হু এখান থেকেই কাল আমাদের উপড় চোখ রাখা হচ্ছিলো’, অবশেষে কথা বলল গোয়েন্দা প্রধান।’উপড় থেকে নিচটা স্পষ্ট দেখা যায় কিন্তু নিচ থেকে উপড়টা দেখা যায় না।কাজেই এটা হলো চোখ রাখার খুব ভালো জায়গা।’

কালো রংয়ের কিছু একটা পরে রয়েছে একটা জায়গায়।সেদিকে এগিয়ে গেল রিনক।গতকাল যেখানে পাথরটা ছিল সেখানে দাগ রয়েছে পাথরটার।দীর্ঘদিন ধরে যে পাথরটা এখানেই ছিল এ বেপারে আর কোনো সন্দেহ রইলো না রিনকের।আর এ দাগটার পাশেই পরে রয়েছে একটা কালো দস্তানা।দস্তানাটা হাতে নিল রিনক।নেড়ে চেরে দেখতে লাগলো।
‘জাহিদ’, এগিয়ে আসলো রিনক।’দেখ একটা দস্তানা পেয়েছি পাথরটার কাছে মানে যেখানে গতকাল পাথরটা ছিল।’
হাত বাড়িয়ে রিনকের কাছ থেকে দস্তানাটা নিয়ে মন দিয়ে পরিক্ষা করতে লাগলো জাহিদ।
‘নিশ্চই যে এখানে লুকিয়ে আমাদের উপড় চোখ রেখেছিল দস্তানাটা তার’, জাহিদ বলল।’আমাদের আরেকটু সাবধান হতে হবে।’
এরপর দুইগোয়েন্দা জায়গাটা আরও একবার ভালো করে পরিক্ষা করে নিচে নেমে আসলো।ছেলেদের সাথে নিচে একটা লোকের সাথে দেখা হয়ে গেল।পাহাড়ের অন্যপাশ থেকে এসেছে লোকটা।
‘হায় বয়েজ’, হাত বাড়িয়ে দিলেন লোকটা।’হাউ ডু ইউ ডু?’
লোকটাকে দেখতে ভারি অদ্ভূদ দেখাচ্ছে তার পোশাক আশাকের জন্য।গায়ে রয়েছে মাথা থেকে পা পর্যন্ত বিস্তৃত বড় সাদা একটা আলখেল্লা।তার ভেতর রঢেছে শার্ট পেন্ট।চোখের রঙিন চশমাটা বেশ বেমানান।উচ্চতা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির মত হবে।
‘আমরা ভালো আছি’,
‘আমি জেনাতুল সুইফ্ট একজন আমেরিকান পাহাড় বিশেষজ্ঞ।’লোকটা বলল।
‘আমি জাহিদ আর ও আমার বন্ধু রিনক।’, পরিচয় করিয়ে দিল জাহিদ।
‘বাহ বঙালি,দাড়ুণ।তো পাহাড় দেখতে এসেছো বুঝি?’
‘জ্বি আঙ্কেল।ডেভিল মাউন্টেন সম্পর্কে বই আর লোকমুখে অনেক শুনেছি তাই নিজ চোখে একবার দেখতে আসলাম।’
‘তা বেশ।তো কেমন দেখলে পাহাড়?’
‘দাড়ুণ।এমন অদ্ভূদ পাহাড় আমরা জীবনেও দেখিনি।পাহাড়ের চূড়োর থেকে আলো বেরুচ্ছে আর তার ভেতর থেকে বেরুচ্ছে অদ্ভূদ গোঙানির আওয়াজ, এর থেকে অদ্ভূদ পাহাড় আর কি হতে পারে।’
এরপর হাত ঘড়ির দিকে তাকালো জেনাতুল সুইফ্ট।
‘সরি মাই বয়েজ আজ আমার একটু তাড়া আছে।পরে দেখা হবে।’ বালুর সৈকত ধরে হাঁটা শুরু করল জেনাতুল।এদিকে ছেলেদেরও আর কোনো কাজ নেই তাই ওরাও সাইকেল নিয়ে বাড়ী ফিরে চলল।
পরদিন সকাল বেলা জাহিদের ঘুম ভাঙল ওর ঘরের তীক্ষ্ণ ফোনের আওয়াজে।ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা রিসিভ করল ও।
‘হ্যালো,,,,,ও জন হ্যা বলো,,,,,,কি,,,, সত্যিই বলছোতো?,,,,,আচ্ছা তিমি চলে এস,বাই।’
ফোনটা রেখে দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পরল গোয়েন্দা প্রধান।রিনকও ইতিমধ্যে জেগে গেছে।জাহিদকে হঠাৎ উত্তেজিত হতে দেখে অবাক হয়ে রিনক জিজ্ঞাসা করল,’কি হয়েছে জাহিদ?’
‘অদ্ভুদ একটা কান্ড ঘটেছে’, বিড়বিড় করল জাহিদ।

দশ

‘অদ্ভূদ কান্ড?’, অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল সহকারি গোয়েন্দা।’সে আবার কেমন?’
‘জন আসছে’, জাহিদ বলল।’ওর চোখে নাকি অদ্ভূদ কিছু বেপার ধরা পরেছে।এখন দ্রুত রেডি হয়ে নাও,হেডকোয়াটারে যেতে হবে কুইক।’

দ্রুত রেডি হয়ে বাড়ী থেকে বেরিয়ে এল দুইগোয়েন্দা।মি.পিটার সন মরনিং ওয়াকে গিয়েছে।ওনার আসতে দেড়ি হবে।তাই ছেলেরা আর ওনার অপেক্ষা করলনা।তার আগেই ব্রেকফাস্ট সেরে চলে এসেছে।পিটার সনের বাড়ীর পেছনে বাগানে চলে এল ওরা।একটা বেঞ্চের উপড় আরাম করে বসলো।এটাই ওদের অস্থায়ি হেডকোয়াটার।কিছুক্ষণ পর মি.পিটার সনের বাড়ীর বিশাল বড় গেটটা দিয়ে সাইকেল নিয়ে প্রবেশ করল জন পিটার সন।আজ ওকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।পরনে রয়েছে লাল রংয়ের ভারি একটা সুয়েটার।তার সাথে চোখে রয়েছে রঙিন চশমা।বাড়ীর এক কোণে সাইকেলটা রেখে দুইগোয়েন্দার কাছে চলে আসলো ও।
‘একটা লোক আমার দাদার বেপারে জিজ্ঞাসা করেছিল’, ধপাস করে বেঞ্চে বসে পরল জন।
‘কি জিজ্ঞাসা করেছিল?’, জাহিদের প্রশ্ন।
‘তা বলতে পারব না’, হাত নেড়ে বলল জন।’বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিল।আমি তখন পাশের ঘরে বসে টেলিভিশন দেখছিলাম।ওনাদের কথাবার্তা আমি কিছুই শুনিনি। যখন বাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম তখন বাবা বলল দাদার বন্ধুর ছেলে লোকটা।কিন্তু আমার কাছে তা মনে হয় না।আমার জানা মতে দাদা সবসময় একা থাকতেই ভালোবাসতেন।কারও সাথে ওনি বন্ধুত্ব করতেন না।’
‘হু’, মাথা দোলালো রিনক।’পৃথিবীতে এমন বহু আজব লোক রয়েছে। ‘
‘লোকটার পিছু নিলাম আমি’, আবার বলতে লাগলো জন।’দেখলাম আমাদের ব্লক থেকে কিছুটা দূরে একটা বাড়ীতে উঠেছে।কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে বাড়ীটাকে লোকেরা গোষ্ট হাউজ বলে।ঐ বাড়ীতে কোনো মানুষ উঠতে পারে এ কথা কেউ কল্পনাই করতে পারে না এখানকার মানুষেরা।কিন্তু ২০ বছর পর লোকটা মানে আমার দাদার বন্ধু ঐ বাড়ীতেই কেন উঠলো?’
‘আরি বাপরে’, রিনক বলল।’ভূত থাকে নাকি ঐ বাড়ীতে?’
‘লোকেতো তাই বলে তবে আমি বিশ্বাস করি না।’
‘হু এগুলো লোকের ভূল ধারণা’, জাহিদ বলল।’তবে আগে এটা খোজ নিতে হবে যে বাড়ীটায় লোকটা একা উঠেছে নাকি সাথে আর কেউ।আমারতো দৃঢ় বিশ্বাস বাড়ীটায় আরও কেউ উঠেছে লোকটার সাথে।’
‘তাহলে চল গিয়ে বাড়ীর মালিককে জিজ্ঞাসা করি’, রিনকরে প্রস্তাব।
‘মালিকতো এখানে থাকে না।২০ আগে বাড়ী ছেড়ে বাড়ীর মালিক আমেরিকায় চলে যায়।সে থেকে বাড়ীটা এমনি পরে রয়েছে।’
‘তারমানে লোকগুলো বেআইনিভাবে বাড়ীটাতে উঠেছে’, কানের উপড় মাথায় মৃদু টোকা মারল জাহিদ।’নিশ্চই কোনো বদ মতলব আছে।এক কাজ করা যাক।আমি আর জন ডেভিল মাউন্টেনে গিয়ে ধাধার সমাধানের চেষ্টা করি আর রিনক তুমি গিয়ে বাড়ীটার উপড় নজর রাখ।দেখ সন্দেহ জনক কিছু চোখে পরে কিনা।’

সাইকেল নিয়ে বোরিয়ে পরল তিন কিশোর।কিছুদূর গিয়েই আলাদা হয়ে গেল ওরা।রিনক আর জন যাচ্ছে ডেভিল মাউন্টেনের দিকে আর রিনক যাচ্ছে গোষ্ট হাউজের উপড় চোখ রাখতে।কোনো ধরনের বিপদের আশঙ্কা নেই আজ।দুজনের কাছে রয়েছে বিশেষ ট্যাকার যেটার ফলে একজন বিপদে পরলে অন্যজনকে সিগন্যাল পাঠিয়ে জানান দেবে আর তখন অন্যজন সাহায্য করতে পারবে।কিছুক্ষণ বাদে শহরের রাস্তা ছেড়ে জন আর জাহিদ চলে এল বুনো রাস্তায়।রাস্তার একপাশে সমুদ্র আরেক পাশে বিশাল সব বার্জগাছের সাড়ি।দূর থেকে চোখে পরল ওদের ডেভিল মাউন্টেনের চোখ ধাধানো উজ্জল আলো।পাহাড়ের কাছে পৌছে সাইকেল দুটো একটা ঝোপের আড়ালে দ্রুত লুকিয়ে ফেলল।এরপর পাহাড়ের অন্য দিকে হাঁটা লাগালো।
‘হ্যাল্লো মাই বয়’, পেছন থেকে ভসে আসলে ভারি একটা কণ্ঠ।পাই করে ঘুড়ে গেল জাহিদ আর জনের ঘাড়।সাথে সাথে ওদের চোখে পরল গতকালের লোকটাকে অর্থ্যাৎ মি.জেনাতুল সুইফ্টকে।

সাইকেল নিয়ে এগিয়ে চলছে রিনক।কেন জানি আজ লোকেরা তেমন এবটা কোলাহল করছে না অন্যদিনের মত।পুরো আইসল্যান্ড ডেন একেবারে নিরব হয়ে গেছে আজ।গোষ্ট হাউজের ঠাকানা দিয়ে দিয়েছে জন।জনদের বাড়ী থেকে দু ব্লক পরেই রয়েছে গোষ্ট হাউজ।বাড়ীটার সামনে এসে ঘ্যাচ করে ব্রেক কষলো রিনক।একবার বাড়ীটার দিকে তাকালো।একটা পাহাড়ের উপড় বাড়ীটার অবস্থান।আশেপাশের যতগুলো বাড়ী রয়েছে তার থেকে এটাই হচ্ছে সবচেয়ে উচু জায়গায়।সাইকেলটা লোক চক্ষুর আড়ালে রেখে গোপনে বাড়ীটার উপড় চোখ রাখলো সহকারি গোয়েন্দা।অনেক সময় চলে গেল কিন্তু সন্দেহজনক কিছু চোখে পরল না ওর।অস্থির হয়ে উঠল ও।কিছু একটা করা দরকার।এভাবে বসে থাকলে চলবে না।বাড়ীটার ভেতর ঢুকে একবার ডু মারার বেশ ইচ্ছে হচ্ছে তার।যদিও সে ভূতের ভয় করে তবুও কেন জানি আজ একটুও ভয় পাচ্ছে না সে।চুপিচুপি বাড়ীর গেট দিয়ে ভেতরে ঠুকে পরল রিনক।সামনে দিয়ে গেলে লোকের চোখে পরার ভয় আছে।তাই ঘুরে বাড়ীর অন্যপাশের ঢালু বেয়ে উঠতে লাগলো সে।উঠতে উঠতে হঠাৎ থমকে দাড়ালো ও।একটা লোকের পায়ের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে।রিনক বারান্দার নিচে পাহাড়ের ঢালে একটা ঝোপে লুকিয়ে পরল।লোকটার পায়ের আওয়াজ এদিকেই আসছে।কিছুক্ষণ এভাবে লুকিয়ে থাকার পর অবশেষে মাথা তুলে উকি দিল সে।কেউ নেই এখন আর বারান্দায়।নিঃশব্দে বারান্দায় উঠে এল সে।বারান্দায় একটা টেলিস্কোপ বসানো রয়েছে।রিনক ওটার দিকে এগিয়ে গেল।আস্তে করে চোখ রাখল ওটার উপড়।চমকে চোখ সরিয়ে ফেলল ও।এখান থেকে ফাহিমের ঘরটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তারমানে লোকটা সে যেইহোক ফাহিমের উপড় নজর রাখছে সবসময়।ভেতরে দুজন লোকের কণ্ঠ শুনা গেল।একজন উচ্চস্বরে কথা বলছে আরেকজন কিছুটা নরম গলায়।বারান্দা থেকে সাবধানে নেমে আসলো রিনক।যা জানতে এসেছে সেটা সে জেনে গেছে।এখন আবার এ ঢালু বেয়ে নামতে রাজি নয় ও।তাই বাড়ীটার অন্যপাশে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।কিছুদূর যেতেই পেছন থেকে ভেসে আসলো একটা বজ্র কণ্ঠ,’বাঁচতে চাইলে যেখানে আছো সেখানে দাড়িয়ে যাও’
ঘুরে তাকালো রিনক।একটা লোক ওর দিকে পিস্তল উচিয়ে রেখেছে আর হুমকি দিচ্ছে।পালানোর কথা ভাবলো ও কিন্তু সেটাও সম্ভব হল না।কারণ এখান দিয়ে ঢালুটা কিছুটা কম হলেও দৌড়াতে গেলে উল্টে পরবে সে।এতে হাত পা ভাঙতে পারে।তাই কোনো পথ না দেখে জায়গায় দাড়িয়ে রইলো আর পিস্তলধারি লোকটার হাতে ধরা পরল।

এগারো

‘এখানে কি করছো?’, তিক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল লোকটা।হাতের রিভালবারটা তাক করে রেখেছে রিনকের দিকে।আর কিছুক্ষণ পর পর ওটা নাচাচ্ছে।
‘সেটাতো আমারও প্রশ্ন’, রিনক বলল।’আপনি এখানে কি করছেন?’
‘সেটা তোমার জেনে দরকার কি।আর অন্যের প্রোপার্টিতে বিনা অণুমতিতে প্রবেশ করা যে বেআইনি তা জানো না?’
‘আপনারাই বা আইনি কি করেছেন’, কথাটা বলতে ইচ্ছে হয়েছিল রিনকের কিন্তু বলল না মুখে।
‘কি হলো চুপ করে রয়েছো কেন?’, ধমক লাগালো লোকটা।
‘আমি……’
‘কি হয়েছে ডেনি কাকে ধমক দিচ্ছো?’, বাড়ীর ভেতর থেকে একটা কণ্ঠ ভেসে আসলো।অনেকটা ঝাঝালো কণ্ঠ।
‘একটা ছেলে না বলে ভেতরে ঢুকে পরেছে’, জবাব দিল ডেনি।এরপর একটা তিক্ত হাসি হেসে রিনককে বলল,’ভেতরে চল,তোমার আসল উদ্দেশ্য না জানা পর্যন্ত ছাড়ছি না তোমাকে।’
লোকটার হাতে পিস্তল থাকায় কোনো প্রতিবাদ করল না রিনক।লোকটার সাথে সোজা ভেতরে চলে আসলো।বাড়ীর ভেতরে কেমন একটা চাপা গন্ধ রয়েছে।দীর্ঘ বিশ বছর ধরে এখানে কেউ নেই।যার ফলে এতদিনে এটা পোকা-মাকড় আর বাদুরের আড্ডা হয়ে গিয়েছে।ডেনি রিনককে নিয়ে একটা রুমে প্রবেশ করল।রুমটা মোটামুটি পরিষ্কার।ভেতরে একটা খাট রয়েছে।বুঝাই যাচ্ছে সবকিছু পরিষ্কার করেছে লোকগুলো।খাটের উপড় বসে রয়েছে বদ মেজাজি একটা লোক।রিনককে দেখে লোকটা ডেনিকে জিজ্ঞাসা করল,’এ ছেলেটা কে?’
‘চুরি করতে এসেছে’, জবাব দিল ডেনি।
‘আমি মোটেও চোর নই’, রেগে গেল রিনক।’চোর বরং আপনারা।’
খাটের উপড় বসে থাকা লোকটা এক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলো রিনকের দিকে।হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে ছেলেটা চালাক নাকি বোকা।একটা চেয়ার এনে দিল ডেনি।তার উপড় বসার জন্য রিনককে ইশারা করল বদ মেজাজি লোকটা।চেয়ারটাতে বসলো ও।
‘সত্যি করে বলতো কেন ঢুকেছো এখানে?’, খাটের উপড়ের লোকটা বলল।
‘ওকে এভাবে কি জিজ্ঞাসা করছো ডেভিড?’, তিক্ত কণ্ঠে বলল ডেনি।’নিশ্চই ছেলেটার….’
‘তুমি চুপ করতো’, ডেনিকে থামিয়ে দিল ডেভিড।এরপর রিনকের দিকে ঘুরে বলল,’কেন ঢুকেছো বিনা অনুমতিতে?’
‘এখানে ঢুকতে আবার কারও অণুমতি লাগে নাকি?’, অবাক হওয়ার নাটক করল রিনক।
‘কেন লাগবে না কেন?’
‘কারণ গত ২০ বছর ধরে এ বাড়ীতে কেউ থাকে না।তাহলে কার কাছ থেকে অণুমতি নেব? আর আপনারাওতো বিনা অণুমতিতে ঢুকেছেন,আপনারাও অন্যায় করেছেন।’
‘তার কোনো প্রমাণ দিতে পারবে না তুমি’, শান্ত কণ্ঠে বলল ডেভিড।’এবার সত্য করে বল কেন ঢুকেছো এখানে?’
‘দেখুন’, রিনক বলল।’এখানে আমি প্রায় ঢুকি।লোকে বলে এখানে ভূত আছে।তাই মাঝে মধ্যে ভূত দেখতে আসি।’
নিখুত অভিনয় করছে রিনক।এতে লোক দুটোে দোটানায় পরে গেছে।ও সত্য বলছে নাকি মৃথ্যা বলছে তা বুঝতে পারছে না লোক দুটো।
‘বেটা মিথ্যা কথা বলছে’, চেচিয়ে বলল ডেনি।
‘আমি কেন মিথ্যে বলবো? তাছাড়া আপনারা যে এখানে আছেন সেটাই বা জানতো কে?’

এরপর ডেনি আর ডেভিড দু মিনিট নিজেদের ভেতর কথা-বার্তা বলল।তারপর রিনকের কাছে ফিরে এসে ডেভিড বলল,’তোমাকে আজ ছেড়ে দিচ্ছি।এরপর থেকে এখানে না বলে আর ঢুকবে না।এটা প্রাইভেট প্রোপার্টি।’
মাথা কাত করে সায় জানালো রিনক।বেরিয়ে আসলো সে ভূতুরে বাড়ী থেকে।ঝোপ থেকে সাইকেল বের করে বাড়ীর দিকে চলল।যা জানার দরকার তার থেকে বেশি জানা হয়ে গেছে ওর।

জেনাতুল সুইফ্টকে দেখে বেশ অবাক হয়ে গেল জাহিদ।এত সকালে লোকটা এখানে কি করছে।
‘এত সকালে এখনে কি করছো তোমরা?’ আবার জিজ্ঞাসা করল পাহাড় বিষেষজ্ঞ।
‘এমনি ঘুরতে এসেছি।’ জাহিদ বলল।’আসলে জায়গাটা খুব সুন্দরতো তাই।’
লোকটাকে মোটেও সুবিধার লাগছে না ওর কাছে।তাই আসল কথাটা চেপে গেল ও।
‘তা বেশ’, মাথা নারালো জেনাতুল।’তবে আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা লুকাচ্ছো তোমরা আমার কাছ থেকে।মেসেজটা কই?’
‘মেসেজ? কিসের মেসেজ?’, এমন ভান করল গোয়েন্দা প্রধান যেন কিছুই জানে না।এতদিন ধরে যে এ লোকটাই ওদের উপড় নজরদাড়ি করছিলো সে বেপারে আর সন্দেহ রইলো না জাহিদের।তা না হলে লোকটা মেসেজের বেপারে জানলো কি করে।
‘দেখ নাটক কর না’, জেনাতুল বললেন।’আমি নাটক মোটেও পছন্দ করি না।ভালোয় ভালোয় বলছি মেসেজটা আমায় দিয়ে দাও।’
‘সত্যিই বলছি আমি কোনো মেসেজের কথা জানি না’
‘সোজা আঙ্গুলে গী উঠবে না দেখছি’, পকেট থেকে একটা পিস্তল বের করল পাহাড় বিষেষজ্ঞ।’এ শেষবারের মত বলছি দিয়ে দাও জনের দাদার রেখে যাওয়া মেসেজটা’, এবার বেশ ভয়ংকর হয়ে উঠলো জেনাতুলের কণ্ঠ।
মিথ্যা বললেও আর কোনো লাভ হবে না।তাই পকেট থেকে মেসেজটা বের করে জাহিদ জেনাতুলেকে দিয়ে দিল।
‘এইতো ভালো ছেলে।’
‘আপনিই তাহলে সেদিন জনদের বাড়ীতে লুকিয়ে আমাদের কথা শুনে ছিলেন না?’, জাহিদ জিজ্ঞাসা করল।
‘ঠিক ধরেছো,আমিই ছিলাম।’
‘আর ঐ দিন পাথরটাও আপনিই ফেলেছিলেন আমাদের মারার জন্য তাই না?’
‘নাহ মানতেই হচ্ছে তুমি বেশ চালাক ছেলে।তবে পাথরটা আমি নিজের ইচ্ছে ফেলেনি।পাহাড়ের উপড় থেকে তোমাদের উপড় চোখ রাখতে গিয়ে ধাক্কা লেগে পরে গিয়েছিল।সে যাইহোক আগে তোমাদের একটা ব্যবস্থা করতে হবে।তা না হলে কখন কি আবার করে বসো তা ঠিক নেই।’
ব্যাগ থেকে একটা নাইলনের দড়ি বের করে সেটা জনের দিকে ছুড়ে দিল জেনাতুল সুইফ্ট।
‘দড়িটা দিয়ে শক্ত করে বাধো তোমার বন্ধুর হাত’, কড়া গলায় নির্দেশ দিল ওনি।
এমন পরিস্থিতিতে আর কোনোদিন পরেনি জন লিভার সন।তাই বেশ ঘাবড়ে গিয়েছে।কোনো কথা না বলে জন নিরবে জাহিদের হাত বাধলো।বাধা শেষ হলে জেনাতুল গিয়ে গোয়েন্দা প্রধানের হাত চেক করে দেখলো বাধনটা ঠিক হয়েছে কিনা।তারপর সে জনের হাত বাধলো।জেনাতুলের হাতে পিস্তল থাকায় ভয়ে বাধা দেওয়ার সাহস পেল না জন।
‘ঐ দিকে হাঁট’, পাহাড়ের একটা গুহার দিকে নির্দেশ করল জেনাতুল।’সাবধান কোনো ধরনের শব্দ করবে না তাহলে কিন্তু বিপদে পরবে।’
অস্ত্রের মুখে যে কিছু করতে পারবে না ওরা সেটা ভালো করেই জানে ছেলে রা।কাজেই কোনো রকম শব্দ না করে জেনাতুলের নির্দেশমত হাঁটা ধরল।কিছুক্ষণ পর একটা গুহার ভেতর পৌছালো ওরা।গুহার ভেতরে ছেলেদের ঠেলে দিয়ে দ্রিত একটা সুইচে টিপ দিল জেনাতুল।সাথে সাথে বন্ধ হয়ে গেল গুহা মুখ।ঘন অন্ধকার ঘ্রাস করল ছেলেদের।আর জেনাতুলের পায়ের শব্দ আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল দিগন্তে।আর ওরা আটকা পরল জীবন্ত কবরে।

বারো

‘এবার কি হবে?’, ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল জন।’আমাদেরতো ভেতরে জীবন্ত কবর দিয়ে চলে গেল।’
‘আমার মনে হয় জেনাতুল আমাদের মারতে চায়না’, জাহিদ বলল।
‘কেন?’
‘কারণ’, যুক্তি দেখালো গোয়েন্দা প্রধান।’যদি মারতেই হতো তাহলে প্রথম দিনই মারত।তোমার মনে আছে এখানে যেদিন প্রথম এসেছিলাম তখন রাস্তায় কি ঘটেছিল? কেউ আমাদের উপড় গুলি ছুড়ে ছিল।আর সেটা ছিল জেনাতুল।’
‘তুমি কি করে বুঝলে?’
‘ওনার পিস্তল দেখে।.৪৫ পিস্তল ছিল ওনার হাতে আর সেদিন রাস্তায় এ পিস্তলেরিই গুলি দেখেছিলাম আমি।’
‘তা না হয় বুঝলাম কিন্তু এখানে এভাবে কতক্ষণ পরে থাকতে হবে?’
‘সেটা বলা মুশকিল।যদি কোনোভাবে বাইরে সাহায্যের…..’ চট করে পকেটে থাকা যন্ত্রটার কথা মনে পরে গেল জাহিদের।এতক্ষণ উত্তেজনায় ছিল তাই যন্ত্রটার কথা মনে ছিল না।এটা দিয়েইতো ওরা বিপদ সংকেত পাঠাতে পারে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে ওদের দুজনের হাত বাধা পেছন করে।পা টা অবশ্য বাধেনি জেনাতুল।চাইলে ওরা একে অপরের কাছে আসতে পারে।কিন্তু গুহাটার ভেতর এত ঘন অন্ধকার যে শুধু মাত্র কালো ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।তবে এভাবে বসে থাকার পাত্র নয় জাহিদ।যে করেই হোক সিগন্যাল পাঠাতে হবে রিনকের কাছে।ভাবল সে।
‘জন’, ডাক দিল জাহিদ।’তুমি আমার কাছে আসতে পারবে?’
‘পারব’, জবাব দিল জন। জাহিদের কথার উৎস ধরে জন এগিয়ে আসলো। আরেকটু হলে জাহিদের ঘায়ের উপড় এসে হুমড়ি খেয়ে পরত।
‘আমার পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেখ যন্ত্রটা বের করতে পার কিনা’, জাহিদ বলল।
জন জাহিদের অন্যদিকে ঘুরে ওর পকেটে হাত ঢুকাবার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না।আবার চেষ্টা করল কিন্তু এবারো পারল না।আরও কয়েকবার চেষ্টা করার পর যন্ত্রটা জাহিদের পকেট থেকে বের করতে সফল হল জন লিভার সন।
‘উপড়ের বাটনটা টিপে দাও’,
সবচেয়ে উপড়ে থাকা বাটনটা অন করে দিল জন।এখন বসে বসে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই ওদের।গুহার দেয়ালের একপাশে ঘা ঘেষাঘেষি করে বসলো ওরা দুজন।’লোকটা আগে থেকে সব প্ল্যান করে রেখেছিল’, ভাবলো জাহিদ।আর নিশ্চই এ গুহার মুখে কৃত্রিম পাথরের দরজা লাগানো হয়েছে।হয়তো পুরো গুহাটাই কৃত্রিম।ডেভিল মাউন্টেনে আরও এসেছে ওরা কিন্তু একটিবারের জন্যওতো ওদের চোখে পরল না গুহাটা।আর ঐ দিন লাইব্রেরিতে হয়তো জেনাতুলই গিয়েছিল। তারমানে ধাধার অনেকটা সমাধান তার জানা হয়ে গিয়েছে।গোয়েন্দা প্রধানের ভয় হলো।কোথাও আবার জেনাতুল ওদের আগে পেয়ে যায় গুপ্তধন।তাহলে এত দিনের সব পরিশ্রম ভেস্তে যাবে।সময় গড়িয়ে যেতে লাগলো অন্ধকার গুহার ভেতর।কিন্তু কারও দেখা নেই।এতক্ষণেতো রিনকের চলে আসার কথা।মনে মনে ভাবল জাহিদ।তাহলে কি ওর কাছে পৌছেনি সিগন্যাল? এবার বেশ দুশ্চিন্তা হতে লাগলো ওর।ওদের জন্যই আজ জনকে এ পরিস্থিতিতে পরতে হল।

মি.পিটার সনের বাড়ীতে পৌছে সাইকেলটা গ্যারেজে ঢুকিয়ে রাখলো রিনক।এরপর বাড়ীর দিকে হাঁটতে লাগল।আইসল্যান্ডে আসার পর এ প্রথম বেশ শীত লাগছে রিনকের।শীতকাল এগিয়ে আসছে।সময় যতই যাচ্ছে শীতটা ততই বাড়ছে।দ্রুত নিজের রুমে এসে একটা কোর্ট চাপালো ও।এরপর হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়েই চমকে উঠলো।লান্সের সময় হয়ে গিয়েছে।পেটের ভেতর যে ছুচো দৌড়াচ্ছে সেটা ও এখন বেশ টের পেল।বেশ উত্তেজনায় কেটেছে পুরো সকালটা।তার উপড় কথাগুলো বলার জন্য অস্থার হয়ে রয়েছে সে।সব মিলিয়ে খিদের কথাটা এক প্রকার ভুলেই গিয়েছিল সহকারি গোয়েন্দা।দ্রুত হাঁটা ধরল নিচ তলায়।টেবিলের উপড় খাবার সাজিয়ে বসে রয়েছেন মি.পিটার সন।রিনককে বাড়ীর ভেতর ঢুকতে দেখেছেন তিনি।তাই আগেই সবকিছু ঠিকঠাক করে রেখেছেন।এ কয়দিনে রিনকের স্বভাবের কথা জেনে গেছেন ওনি।একটা চেয়ার টেনে তার উপড় ধপাস করে বসে পরল রিনক।এরপর কোনো ধরনের কথা না বলে একটা স্যান্ডউইচ সোজা মুখে পুরে দিয়ে চিবুতে লাগল।হঠাৎ ওর মনে পরে গেল সামনে মি.পিটার সন রয়েছেন।ওনার সামনে এভাবে খাওয়াটা উচিত হয়নি।অসহায়ভাবে রিনক মি.পিটার সনের দিকে তাকালো।তা দেখে হো হো করে হেসে উঠলেন মি.পিটার সন।
‘কি হলো রিনক?’,, এখনো হাসছেন পিটার সন।’না খেয়ে এভাবে তাকিয়ে রয়েছো কেন?’
চট করে মুখটা ঘুরিয়ে আবার খাওয়ায় মন দিল রিনক।
‘তো ডিটেকটিভ সাহেব কেমন এগোচ্ছে আপনাদের রহস্যের সমাধান?’, হেসে জিজ্ঞাসা করলেন পিটার সন।
‘আ-আপনি জানেন আঙ্কেল?’,অবাক হয়ে গেল রিনক।
‘সব জানি আমি।কিন্তু জাহিদকে যে দেখছি না,,,গেল কোথায় ও?’
আরও একটা স্যান্ডউইচ টেনে নিল রিনক।মুখে পুরে চিবুতে লাগল।এ নিয়ে নয়টা স্যান্ডউইচ সাবার করেছে সে।নবম তম স্যান্ডউইচ শেষ করে তবেই থামলো।
‘ও আর জন ডেভিল মাউন্টেনে গেছে’, বড় একটা ঢোক তুলে বলল রিনক।
‘হু রহস্যের সমাধানের চেষ্টা করছে’, মাথা দোলালেন পিটার সন।’সরি এখানে এনে তোমাদের কিছুই দেখাতে পারছি না।’
‘এখন জোর করেও জাহিদকে কোথাও নিতে পারবেন না’, হাত নেড়ে বলল রিনক।’রহস্যের গন্ধ পেয়েছে ও।রহস্যের সমাধান না করা পর্যন্ত শান্তি নেই ওর।’
‘এ কি রিনক’, পকেটে ভোমরা ভরেছো নাকি?’
‘ভোমরা?’, অবাক হয়ে পকেটের দিকে তাকালো ও।ওর পকেট থেকে বিপ বিপ একটা আওয়াজ আসছে।হঠাৎ পকেটে থাকা যন্ত্রটার কথা মনে পরে গেল ওর।দ্রুত পকেট থেকে ওটা বের করে চোখের সামনে তুলে ধরল।যন্ত্রটা থেকে এক নাগাড়ে বিপবিপ শব্দ আসছে তার সাথে একটা লাল আলো জ্বলছে।তার মানে সাহায্যের আবেদন করছে জাহিদ।দ্রুত চিন্তা করছে ও।নিশ্চই কোনো রকম বিপদে পরেছে ওরা।টেবিল থেকে উঠে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল সে।এরপর গ্যারেজ থেকে সাইকেল বের করে শা করে গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল।এদিকে অবাক হয়ে রিনকের চলে যাওয়া দেখলো পিটার সন।
যত দ্রুত সম্ভব সাইকেল চালাচ্ছে সে।শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে এত জোরে সাইকেল জীবনে আর কখনো চালায়নি সে।বন্ধুর বিপদ দেখলেই কোনো কিছু চিন্তা না করে বিপদে সেও ঝাপিয়ে পরে।তখন এ ছেলেকে দেখে কেউ বলবে না যে ভূতের ভয়ে কুকরে যায়।তবে সম্প্রতি ভয়টা একটু কম পাচ্ছে।সাইকেল নিয়ে যতই এগুচ্ছে বিপিবিপ আওয়াজটা ততই জোরালো হচ্ছে।শহরের রাস্তা ছেড়ে জঙ্গলের রাস্তায় উঠল ও।পাহাড়ি এবড়ো থেবড়ো রাস্তা দিয়ে জোরে চালাতে বেশ অসুবিদে হচ্ছে তার।সাইকেল কন্ট্রোল করাই কঠিন হয়ে পরছে।তারপরও একটুও গতি কমাচ্ছে না সে।বরং আরও বারিয়ে দিল।ডেভিল মাউন্টেনের সামনে পৌছে ঘ্যাচ করে ব্রেক ধরল রিনক।সাইকেলটা একপাশে রেখে সোজা দৌড় দিল পাহাড়ের দিকে।আশেপাশে তাকালো সে কিন্তু কাওকে দেখতে পেল না।ঘুরে চারপাশটা একবার দেখলো কিন্তু তবুও কাওকে চোখে পরল না।যন্ত্রটা থেকে ক্রমাগত বিপিপিব শব্দ আসছে।আর লাল লাইটটা জ্বলে থাকা নির্দেশ করছে জাহিদ আর এখানেই রয়েছে।
‘জা-হি-হিদ’, ডাক দিল সে।কিন্তু কোনো সাড়া পেল না।
‘জা-হি-হিদ’, আাবার ডাক দিল রিনক।কিন্তু এবারো কোনো সাড়া পাওয়া গেল না জাহিদ কিংবা জনের।
‘জা-হি-হিদ’, আবার ডাকল ও।পাহাড়ের গায়ে বারি খেয়ে প্রতিধ্বনি হতে লাগলো তার কথা।
‘জাহিদকে ডেকে লাভ নেই’, রিনকের পেছন থেকে কেও একজন বলে উঠলো।সাথে সাথে ঘুরে গেল রিনক।মি. জেনাতুল সুইফ্ট ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।হাতে রয়েছে. ৪৫ পিস্তল।
‘তোমার বন্ধুরা নিরাপদেই রয়েছে’, একটা বিশ্রি হাসি দিল লোকটা।
‘আপনি আমার বন্ধুদের আটকিয়ে রেখেছেন তাই না?’
‘ব্রিলিয়েন্ট।বেশ চালাক তোমরা।তাই আর কোনো উপায় ছিল না।’, হঠাৎ কঠোর হয়ে উঠলো জেনাতুলের চেহারা।’এবার যা বলছি তা কর।আমার সাথে চল।সাবধান কোনো চালাকি করার চেষ্টা করলেই কিন্তু মারা পরবে তোমার বন্ধুরা।’
রিনকের ইচ্ছে হচ্ছে দু-একটা ঘুষি লোকটার নাকে বসিয়ে দেওয়ার।কিন্তু এখন তা করতে গেলে জাহিদ আর জনের ক্ষতি হতে পারে।তাই চুপচাপ লোকটার সাথে হাঁটতে লাগল।পাহাড়ের পেছনের রাস্তায় দাড়িয়ে রয়েছে কালো ওয়েগান।
‘ভেতরে ওঠো’, কড়া গলায় নির্দেশ নিল জেনাতুল।
ভেতরে উঠে বসলো রিনক।সাথে সাথে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চালাতে লাগলো পাহাড় বিষেষজ্ঞ।

তেরো

পাহাড়ি রাস্তা ধরে এগিয়ে চলছে কালো ওয়েগানটা।রাস্তার দুপাশের গাছগুলো দ্রুত সরে যাচ্ছে।রিনকের পাশে বসে গাড়ী চালাচ্ছে মি.জেনাতুল সুইফ্ট।পেছনের দিকে করে হাত বাধা রয়েছে রিনকের।গাড়ীতে উঠে বসার পরপরই জেনাতুল ওর হাতটা নাইলনের দড়ি দিয়ে বেধে ফেলে পেছন দিক করে।জাহিদ আর জনের জন্য চিন্তা হচ্ছে ওর।লোকটা যে ওদের দুজনকে কোথায় আটকে রেখেছে সেটা কিছুতেই বুঝতে পারছে না সে।এখন গাড়ীতে বসে চিন্তা আর প্রার্থনা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই ওর।সে নিজেও বন্দি এখন।চেনা রাস্তাটা হঠাৎ কমেন যেন অচেনা লাগছে তার কাছে।চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।মাথা ঝাড়া দিয়ে চোখ ঠিক করার চেষ্টা করল ।কিন্তু কিছুই হল না।ঘুমে চোখ দুটো জড়িয়ে আসছে রিনকের।ঘুম জড়ানো চোখে ও জেনাতুলের দিকে তাকালো।মুখে একটা প্লাস্টিকের মাস্ক পরে রেয়েছে ওনি।ঘুমের কারণটা এবার বুঝতে পারল রিনক।ক্লোরোফর্ম গ্যাস স্প্রে করেছে জেনাতুল।আর তাই ওর প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে।কিছুক্ষণ পর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পরল সহকারি গোয়েন্দা।মানে অচেতন হয়ে গিয়েছে।
হঠাৎ পানির ঝাপটায় ঘুম ভাঙলো রিনকের।আস্তে করে চোখ মেলল।এরপর চারপাশটা ভালো করে দেখতে লাগলো।একটা চার দেয়ালের ঘরে ভেতর রয়েছে এখন সে।আবছা আলো হওয়ায় ঘরের ভেতরের জিনিসপত্রগুলো দেখতে পেল না ও।মেঝেতে এতক্ষণ অজ্ঞান হয়ে পরে ছিল সে।হাতটাও এখন বাধা নেই।অনেক্ষণ দড়ি দিয়ে বাধা থাকায় ফুলে গেছে হাত দুটোর কবজি।টলতে টলতে উঠে দাড়ালো রিনক।এমন সময় ঘরের ভেতর প্রবেশ করল পাহাড় বিষেষজ্ঞ।আবছা আলোতে লোকটাকে একটা দৈত্যের মত লাগলো রিনকের কাছে।পাশের একটা চেয়ার রিনকের দিকে ঠেলে দিয়ে বসার নির্দেশ দিল জেনাতুল।এরপর নিজেও একটা চেয়ার টেনে রিনকের মুখোমুখি বসলো।
‘আমাকে এখানে কেন এনেছেন? আর আমার বন্ধুরাইবা কোথায়?’, গম্ভির গলায় বলল রিনক।
‘এত অস্থির হচ্ছো কেন ইয়াং ম্যান’, একটা বিশ্রি হাসি দিল লোকটা।’তোমার বন্ধুরা নিরাপদেই আছে।’
‘আপনি আসলে কি চাচ্ছেন?’, রিনক জিজ্ঞাসা করল।
‘বেশি কিছু না’, লোকটা বলল।’শুধু ধাধার সমাধানটা আমাকে বলে দাও’
‘ধাধা? কোন ধাধা?’
‘দেখ নাটক আমি একদম পছন্দ করি না’, রেগে গেল জেনাতুল।’যা জিজ্ঞাসা করছি তার সোজা উত্তর দাও।গুপ্তধন কোথায়?’
‘আমি জানি না’
‘জানো না মানে? তোমরা ধাধার সমাধান করেছো আর এটা জানো না গুপ্তধন কোথায়?’
‘সত্যি বলছি আমি, গুপ্তধন কোথায় তা আমরা জানি না।এখন পর্যন্ততো ধাধারিই সমাধান করিনি।’
‘বোকা বানাচ্ছো না আমাকে?’
‘আপনাকে কেন বোকা বানাতে যাব।আমরাতো সবে মাত্র ধাধার প্রথম চার লাইন সমাধান করেছি।বাকীটা সমাধান করতে হলে ডেভিল মাউন্টেনে গিয়ে করতে হবে।’

একটা মুহূর্ত রিনকের দিকে তাকিয়ে রইলো জেনাতুল।হয়তো ভাবছে ছেলেটাকে বিশ্বাস করা যায় কিনা।কিছুক্ষণ বাদে কোনো রকম কথা না বলে লোকটা সোজা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।দরজাটা বাইরে থেকে লক করার আওয়াজ হল।এরপর একটা পায়ের শব্দ দূরে হারিয়ে গেল।এদিকে অন্ধকার ঘরটাতে মোটেও ভালো লাগছে না রিনকের।ঝড়ের গতিতে মাথায় চিন্তা চলছে তার।কি করবে? চিল্লাবে সাহায্যের জন্য? কিন্তু পরক্ষণেই চিল্লানোর চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিতে হল তাকে।’কারণ’, ভাবলো রিনক।’জেনাতুল এতটা বোকা নয় যে এমন কোথাও ওকে রাখবে যেখান থেকে সহজেই লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়।’

এখন সাহায্য চাওয়ার আর একটাই উপায় আছে।পকেট থেকে জাহিদের দেওয়া যন্ত্রটা বের করল সে।রিনক জানে জাহিদ আর জন নিজেই বিপদে আছে।কিন্তু পৃথিবীতে অলৌকিক কত কিছুইতো ঘটে।যদি সেরকম কিছু ওদের সাথেও ঘটে যায় তাহলে ছাড়া পেয়ে তাকেও বাঁচাতে পারবে।এ চিন্তায় যন্ত্রটার উপড়ের বাটনটা চেপে দিল সে।আপাতত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই তার।তাই মেঝেতে শুয়ে ঘুমোবার চেষ্টা করতে লাগলো।

চৌদ্দ

অন্ধকার এ কবরটার ভেতরে কতক্ষণ কেটে গেল তা কিছুতেই বুঝতে পারছে না গোয়েন্দা প্রধান।তবে ওর কাছে মনে হচ্ছে কয়েক যুগ পেরিয়ে গেছে।হাতে ঘড়ি আছে কিন্তু সময় দেখার কোনো উপায় নেই।যা ঘুটঘুটে অন্ধকার তাতে নিজের হাতটা নিজেই দেখতে পাচ্ছে না সে।জন কোনো কথা বলছে না।চুপ করে বসে রয়েছে।যেন একটা ছায়া মূর্তি।কি করা যায় এখন সে ভাবনায়ে মগ্ন জাহিদ।এখান থেকে বেরুনোর কোনোনা কোনো পথ নিশ্চই রয়েছে।যদিও তার কাছে মনে হচ্ছে গুহাটা তৈরি করা হয়েছে কিন্তু আসলে এটা একটা প্রাকৃতিক গুহা।শুধু মাত্র গুহার মুখে একটা ট্র্যাপ ডোর লাগানো হয়েছে।আগে নিজেকে মুক্ত করতে হবে তাকে।তারপর অন্য কথা।কিন্তু মুক্ত করবে কিভাবে? জনওতো পারবে না কারণ ওরও হাত বাধা পেছন দিক করে।তাহলে এখন একমাত্র উপায় পাথরের সাথে ঘষে ঘষে দড়ি ক্ষয় করা।আর সে তাই করল।একটা পাথরে পিছন দিক করে দাড়িয়ে হাতের দড়ি ঘষতে লাগল।খুব ধীরে ধীরে ক্ষয় হচ্ছে দড়ি।প্রতিটি সেকেন্ড এখন জাহিদের কাছে মনে হচ্ছে এক একটা যুগ।এভাবে অনেক্ষনণ ধরে ঘষার পর কিছুটা ঢিল হল দড়িটা।ঘষার গতি আরও বাড়িয়ে দিল সে।কিছুক্ষণের মধ্যে দড়ির একপাশ সম্পূর্ণ ক্ষয় হয়ে ছিড়ে গেল।নিজেকে মুক্ত করে সে জনের হাতের দড়িও খুলে দিল।বাধা অংশে হাত ডলতে লাগল জন রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য।অনেক্ষণ দড়ি দিয়ে হাত বাধা থাকায় ওদের কব্জিগুলো ফুলে গিয়েছে।এখন দুজনেই কব্জি ডলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।

‘চারদিকটা ভালো করে খুজে দেখ’, জাহিদ নির্দেশ দিল।’এখান থেকে বেরুনোর নিশ্চই কোনা না কেনো পথ রয়েছে।তুমি এদিক থেকে শুরু করে আর আমি ওদিক থেকে।’

এরপর জাহিদ আর জন মিলে গুহার দেয়ালের প্রতিটি ইঞ্চি পরিক্ষা করে দেখতে লাগল।গুহার দরজাটা বাইরে থেকে ছাড়া ভেতর থেকে খোলা সম্ভব না।সেটা ভালো করেই জানে জাহিদ।কাজেই ওদের বেরুবার অন্য পথ খুজতে হবে।আর এখন সেটাই করছে তারা।দেয়ালে খুজতে খুজতে একটা জায়গায় এসে থমকে দাড়ালো জাহিদ।দেয়ালের একটা অংশ দিয়ে বাতাস বেরুচ্ছে।সেদিকে এগিয়ে গেল সে।ভালো করে পরিক্ষা করে দেখলো।এটা একটা সূড়ঙ্গ পথ।তবে এটা প্রাকৃতিক নাকি কৃত্রিমভাবে তৈরি সেটা এখন বুঝতে পারছে না ও।ইতিমধ্যে দেয়াল পরিক্ষা করতে করতে জনও এসে হাজির হয়েছে জাহিদের কাছে।সে জানালো ঐদিকটায় কোনো ধরনের পথ নেই।

‘তার বোধ হয় আর দরকার পরবে না’, জাহিদ বলল।’একটা সূড়ঙ্গ পেয়ে গেছি।হয়তো এটাই আমাদের এখান থেকে বের করবে।চল।’

প্রথমে জাহিদ সূড়ঙ্গের ভেতরে ঢুকলো।এরপর ঢুকলো জন।সূড়ঙ্গের মেঝেটা তেমন একটা মশ্রিন না।এদিকে মাথা সোজাও করতে পারছে না ওরা।সূড়ঙ্গের ছাদটা কিছুটা উপড়ে।কাজেই ওদের উপুড় হয়ে যেতে হচ্ছে।কিছুক্ষণ এভাবে চলার পর উচু হতে লাগলো সূড়ঙ্গের ছাদ সে সাথে প্রস্থও।এখন আর উপুর হয়ে থাকতে হচ্ছে না তাদের।ছাদটা মাথা থেকে কিছুটা উপড়ে।তাই মাথা নুয়ে হাঁটতে হচ্ছে।অন্ধকার এ পথটা ধরে ওদের কচ্ছোপের গতিতে হাঁটতে হচ্ছে।সামনে কি আছে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।এভাবে আরও কিছুক্ষণ চলার পর একট জায়গায় এসে থমকে দাড়ালো ওরা দুজনে।ওরা যেখানে দাড়িয়ে রয়েছে তার আশপাশ থেকে অনেক জায়গা দিয়ে বাতাস বেরুচ্ছে।তারমানে এখানে অনেকগুলো সূড়ঙ্গ রয়েছে।এখন কোন সূড়ঙ্গ ওদের বাইরে বের করবে আর কোনটা আরও ভেতরে নেবে সেটা কিছুতেই বুঝতে পারল না কেউ।এবার ওরা আটকে পরল একটা গোলক ধাধায়।

ঘুমোনোর সাথে সাথে একটা সপ্ন দেখতে লাগলো রিনক।বিশাল বড় একটা দৈত্য ডেভিল মাউন্টেন থেকে বেরিয়ে এসেছে।গায়ের রং কুচকুচে কালো আর চোখগুলো টকটকে লাল।আর তার সাইজও পাহাড় সমান উচু।দৈত্যের হাতে রয়েছে দুজন মানুষ।কিছুক্ষণের মধ্যেই মানুষ দুটোকে গিলে খাবে দৈত্যটা।হঠাৎ রিনক দেখতে পেল মানুষ দুটো আর কেউ নয় স্বয়ং জাহিদ আর জন।চমকে লাফ দিয়ে উঠে পরল সে।যথেষ্ট শীত থাকা শর্তেও দরদর করে ঘামছে ও।কিছুক্ষণ পর দরজা খোলার আওয়াজ পেল ও।ভেতরে প্রবেশ করল পাহাড় বিষেষজ্ঞ মি.জেনাতুল সুইফ্ট।
‘কি ডিটেকটিভ সাহেব,এবার সত্য কথাটা বলবেন দয়া করে?’, হাতে থাকা রিভালবারটা নাচালো লোকটা।
‘আমি যা জানি তা সব বলে দিয়েছি’, রিনক বলল।’আর কি জানতে চান?’

‘তুমি বেশ চালাক ইয়াং ম্যান।এত সহজে আমি বোকা বনে যাচ্ছি না।এখনো সময় আছে সত্য কথা বল।’
‘আমি আর কিছুই জানি না’

‘মিথ্যে বলছো তুমি’, কঠোর হয়ে গেল জেনাতুলের কণ্ঠ।’সব জানো তুমি সব।আর এখন আমাকে বোকা বানাচ্ছো’
‘দেখুন’, শান্ত কণ্ঠে বলল রিনক।’আমি যা জানি তা প্রথমেই বলে দিয়েছি।এবার আপনার যা মনে হয় তা করুন।তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।’

এরপর লোকটা কোনো কথা না বলে গটগট করে হেঁটে বাইরে চলো গেল।পূনরায় দরজা লক করার শব্দ শুনল রিনক।কিছুক্ষণের মধ্যে হারিয়ে গেল জেনাতুলের পদ শব্দ।এখন আর কিছুতেই ঘুম আসবে না তার।একটা চেয়ারে বসে বন্ধুদের কথা ভাবতে লাগলো ও।

পনেরো

‘এবার কি হবে?’, ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল জন।’আমরাতো গোলক ধাধায় আটকে গেলাম’
‘হু’, মাথা দোলালো জাহিদ’এক বিপদ থেকে বের হতে গিয়ে অন্য বিপদে পরলাম।’
‘প্লিজ জাহিদ কিছু একটা কর,এখানে না খেয়ে মারা যেতে চাই না।’আর্তনাদ করে উঠল জন।
কোনো কথা বলল না গোয়েন্দা প্রধান।ঘন ঘন মাথায় মৃদু টোকা দিচ্ছে ও।গভীর চিন্তায় মগ্ন ।কি করা যায় সেটাই ভাবছে।ফিরে যাবে আবার গুহায়? কিন্তু ওখানে গিয়ে কি করবে ওরা? রিনকের কাছে হয়তো সিগন্যাল পৌছায়নি।বাইরের কেউ জানে না যে ওরা এখানে বন্ধি শুধু মাত্র জেনাতুল সুইফ্ট ছাড়া।গুহাটার বেপারে আদৌ কেউ জানে কিনা সে বেপারেও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে তার।তার মানে যা করার ওদের নিজেদেরই করতে হবে।ওদের নিজের চেষ্টায় এখান থেকে বের হতে হবে।এখন গোয়েন্দা প্রধানের সামনে দুটো রাস্তা খোলা,১- আবার গুহায় ফিরে যাওয়া আর বাইরের সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করা।

২-প্রতিটি সূড়ঙ্গে প্রবেশ করে এটা দেখা যে এখান থেকে বের হওয়ার কোনো রাস্তা আছে কিনা।

২য় টাই বেঁচে নিল জাহিদ।কারণ গুহায় ফিরে গিয়ে বাইরের সাহায্যের অপেক্ষা করা মস্ত বোকামি।তারচেয়ে বরং চেষ্টা করে দেখা যাক এখান থেকে বের হওয়ার পথ পাওয়া যায় কিনা।

‘আমারা এখন একটা একটা করে সূড়ঙ্গ পরিক্ষা করে দেখব কোনটা দিয়ে বের হওয়ার রাস্তা পাওয়া যায়।ফলে আমাদের প্রতিটি সূড়ঙ্গে ঢুকতে হবে।’ বলল জাহিদ।

জন মাথা নেড়ে সায় জানালো কিনা সেটা অন্ধকারের ফলে দেখা গেল না।তবে আপত্তিও করল না।নিরব হয়ে রইলো।প্রথমে একটা সূড়ঙ্গের ভেতর ঢুকল জাহিদ আর জন।আগে রয়েছে জাহিদ আর পেছনে জন।সামনে কি আছে তা দেখতে না পাওয়ায় কচ্ছোপের গতিতে এগোতে হচ্ছে ওদের।সূড়েঙ্গের ছাদটা মোটামোটি উচু।মাথা নুয়ে কোনো রকম হাঁটছে দুজনে।কিছুদূর গিয়ে থমকে দাড়ালো জাহিদ।পেছন থেকে জন এসে আরেকটু হলে ধাক্কা লাগিয়ে দিত তার সাথে।

‘কি হলো দাড়িয়ে গেল কেন?’, জনের প্রশ্ন।

‘দাড়াও সামনেটা কেমন যেন ফাঁকা’, জাহিদ বলল।’পায়ে মেঝে ঠেকছে না।’
সামনে কি আছে তা পরিক্ষা করার জন্য একটা পাথর ছুড়লো জাহিদ।পাথরটা নিচে পরতেই ঝাপাং করে পানির আওয়াজ হল।তার মাসে সামনে এগোনোর কোনো রাস্তা নেই।রয়েছে গভীর খাদ।ধীরে ধীরে পিছুতে লাগল ওরা।সূড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে গোয়েন্দা প্রধান সূড়ঙ্গ মুখে একটা পাথর দিয়ে রাখল নিশানা হিসেবে যাতে ভূল করে একই সূড়ঙ্গে আবার ঢুকে না পরে।এরপর আরও একটা সূড়ঙ্গে ঢুকল ওরা।কিছুদূর যেতে না যেতেই সূড়ঙ্গটা শেষ হয়ে গেল।বিশাল একটা পাথরের দেয়াল পথটাকে আটকে দিয়েছে।ফিরে এসে এ সূড়ঙ্গের মুখেও একটা পাথর দিয়ে রাখল জাহিদ।

আরেকটা সূড়ঙ্গে প্রবেশ করল ওরা।কিন্তু কিছুদূরে গিয়ে এটাও বিপদজনক ভাবে নিচু হয়ে ডানে মোড় নিয়েছে।বাধ্য হয়ে ঐ সূড়ঙ্গ থেকেও বের হয়ে আসলো ওরা।সূড়ঙ্গ মুখে একটা পাথর দিয়ে রাখলো জাহিদ।

‘ওফ এভাবে আর কতক্ষণ’,হা করে দম নিল জন।’অন্য কোনো পথ বের কর জাহিদ।’
জাহিদও একই কথা ভাবছে।এখনে ২০ টার মত সূড়ঙ্গ রয়েছে।সবগুলোতে একে একে ঢুকতে গেলে এমনিতেই ক্লান্ত হয়ে পরবে ওরা।এর থেকে বরং অন্য সহজ উপায় বের করতে হবে।ভাবল সে।কিন্তু কি করা যায়? আবারো গভির চিন্তায় মগ্ন হয়ে পরল গোয়েন্দা প্রধান।মাথায় ঘন ঘন মৃদু টোকা মারছে সে।তার পাশেই চুপ করে দাড়িয়ে রয়েছে জন।
‘পেয়েছি’,চেচিয়ে উঠল জাহিদ।
‘কি পেয়েছো?’, জনের প্রশ্ন।
‘এখান থেকে বেরুনর পথ।’
‘কোথায়?’
‘বাতাসে’
‘বাতাসে?’,অবাক হয়ে গেল জন।’বাতাস দিয়ে আবার বেরুবে কি করে?’

কোনো কথা বলল না জাহিদ।একটা সূড়ঙ্গের দিকে এগিয়ে গেল ।কান পেতে কী জানি পরিক্ষা করল।এরপর সেখান থেকে সরে গিয়ে আরেকটা সূড়ঙ্গ মুখে গিয়ে দাড়িয়ে কান পেত পরিক্ষা করতে লাগল।অন্ধকার থাকায় জন কিছুই দেখতে পাচ্ছে না।শুধু জাহিদের এদিক ওদিক হাঁটার আওয়াজ শুনছে।আসলে গোয়েন্দা প্রধান বাতাসকে কাজে লাগিয়ে এখান থেকে বেরুনোর পথ খুজকে।প্রতিটি সূড়ঙ্গের মুখে দাড়িয়ে সে এটা পরিক্ষা করছে যে এখান দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে কিনা।যে সূড়ঙ্গ দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হবে সে সূড়ঙ্গই হবে ওদের এখান থেকে বের হওয়ার পথ।কারণ বাতাস বাইরে থেকে সূড়ঙ্গে ঢুকবে।সে সূড়ঙ্গ ধরে এগিয়ে গেলে একটা সময়ে ওরা বেরুনোর পথ পেয়ে যাবে।আরেকটা সূড়ঙ্গের মুখে দাড়ালো জাহিদ।কান পেতে শুনল।ভেতরে মৃদু একটা গড়গড় আওয়াজ হচ্ছে।তার মানে এটা দিয়ে বাতাস বইছে।সে যা খুজছিলো তা পেয়ে গিয়েছে এখন এটা ধরে শুধু এগিয়ে যেতে হবে।আর একমহুহূর্ত দেড়ি করল না গোয়েন্দা প্রধান।জনকে নিয়ে ঢুকে পরল সূড়ঙ্গটাতে।সূড়ঙ্গের ছাদ টা নিচু হওয়ায় হামাগুড়ি দিয়ে এগোতে হচ্ছে ওদের।আর মেঝেতে ছোট ছোট পাথর থাকায় হাত আর পায়ে বেশ ব্যাথা পাচ্ছে দুজনে।এভাবে কিছুদূর যাওয়া পর সূড়ঙ্গটা বেশ চওড়া আর উচু হয়ে এল।এবার ওরা দাড়ািয়ে হাঁটছে।আরও কিছুদূর যেতেই দেখা দিল আরও একটা বিপদ।সূড়ঙ্গটার শেষ মাথায় পৌছে গিয়েছে ওরা।কিন্তু বেরুনোর পথের বদলে রয়েছে আরও দুটো সূড়ঙ্গ।এ দুটোর মধ্যে কোনটা দিয়ে যাওয়া উচিত সেটা কিছুতেই বুঝতে পারছে না জাহিদ। সূড়ঙ্গ দুটোর মুখের সামনে দাড়িয়ে কান পাতল সে।বাতাসের আওয়াজ পাওয়া যায় কিনা সেটাই পরিকক্ষা করছে।কিন্তু তেমন কিছু শুনতে পেল না ও।রাজ্যের যত নিরবতা সব যেন নেমে এসেছে সূড়ঙ্গ দুটোর মধ্যে।মাঝে মধ্যে বাদুড়ের পাখা ঝাপটানির আওয়াজ আসছে ভেতর থেকে।চট করে মাথায় একটা বুদ্ধি চলে এল গোয়েন্দা প্রধানের মাথায়।বাদুড়েরাতো চোখে দেখে না।শব্দের কম্পাঙ্ককে কাজে লাগিয়ে পথ চলে।সে একই কাজ করল জাহিদ।প্রথম সূড়ঙ্গের মুখে দাড়িয়ে জোরে চেচিয়ে বলল,’হ্যাল্লো’

পরক্ষণে দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধ্বনি হতে লাগল জাহিদের কথা,’হ্যাল্লো,হ্যাল্লো,হ্যাল্লো’।যেন আজব একটা জীব জাহিদের কথা বার বার বলে আনন্দ পাচ্ছে।এবার ওখান থেকে সরে ২য় সূড়ঙ্গের মুখটার সামনে এসে দাড়াল ও।তারপর চেচিয়ে আবার বলল,’হ্যাল্লো’।

এবার আর জাহিদের আওয়াজ ফিরে আসল না।হারিয়ে গেল যেন দূরে কোথাও।যেন বিশাল এক দৈত্য হা করে গিলে নিয়েছে তার কথাটা।মুখে হাসি ফুটল ওর।অবশ্য অন্ধকারের জন্য সেটা দেখা গেল না।জনকে নিয়ে ঢুকে পরল দ্বিতীয় সূড়ঙ্গে।যতই এগোচ্ছে পথ যেন ততই দীর্ঘ হচ্ছে।সূগঙ্গের পথ যেন আর শেষ হতে চায় না। একেকটা সেকেন্ডকে এখন বন্দিদের কাছে এক একটা যুগ বলে মনে হচ্ছে।অবাক করা এ প্রকৃতি যেন ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।তাইতো প্রকৃতির এ লিলা খেলা ধীরে ধীরে ওদের সমস্ত শক্তি শুষে নিচ্ছে।হঠাৎ দূরে একটা আবছা আলো দেখা গেল।সূড়ঙ্গটা এখন আর তেমন অন্ধকার না।আবছা আলো রয়েছে।তারমানে ওরা সূড়ঙ্গের একেবারে শেষ প্রান্তে পৌছে গেছে।আরও কিছুদূর এগোনোর পর বাইরের আলো এসে বন্দিদের চোখ ধাধিয়ে দিয়ে গেল।একটা ঝোপ সূড়ঙ্গের মুখটা ঢেকে রেখেছে।ঝোপ ঠেলে বাইরে বেরিয়ে আসল ওরা।বুক ভরে মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিল জন।জাহিদ সোজা মাটিতে শুয়ে পরল।অনেক খাটতে হয়েছে ছেলেদের ঐ গুহা থেকে বের হতে।ডেভিল মাউন্টেনের ঠিক উল্টো পাশে রয়েছে ওরা।কিছুক্ষণ এভাবে বিশ্রাম নেওয়ার পর উঠে দাড়াল জাহিদ।তারপর জনকে নিয়ে পাহাড়ের সামনে চলে আসলো।ঝোপে সাইকেলগুলো এখনো একই অবস্থায় রয়েছে।ওখান থেকে সাইকেল দুটো বের করে ছেলেরা রওনা দিল বাড়ীর উদ্দেশ্যে।সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পরেছে।টকটকে লাল সূর্যটা দেখে মনে হচ্ছে একটা লাল থালার মত।চারদিকের আলোটা কমে এসেছে আগের তুলনায় যদিও আইসল্যান্ডে রাত হয়না গ্রীস্মকালে।হালকা মৃদু বাতাসে বিশাল বার্জ গাছগুলো দূলছে।পাশেই সমুদ্রটা শান্ত হয়ে রয়েছে।একপাশে শান্ত সমুদ্র আর অন্য পাশে দোল খাওয়া বার্জ গাছ।তার মধ্যখান দিয়ে চলে গিয়েছে আকাঁবাকা এক পাথরের রাস্তা।সে রাস্তা ধরে ছুটে চলছে জাহিদ আর জনের সাইকেল।অবাক হয়ে ওরা দুজন এ অপরূপ প্রকৃতি দেখছে।দীর্ঘ সময় অন্ধকার গুহায় বন্ধি থাকার পর যখন মুক্ততি পেল তখন অপরূপ এ প্রকৃতিকে তাদের কাছে রুপ কথার রাজ্যের মত লাগল।পৃথিবীর সকল ক্লান্তি নিয়ে সে রুপকথার রাজ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে দুইকিশোর।কিন্তু ওদের বন্ধু যে বিপদের মধ্যে রয়েছে তা কল্পনাও করেনি ওরা।

সতেরো

জন আর জাহিদের আপাতত এখন বিশ্রামের প্রয়োজন।জন ওর নিজের বাড়ীতে যেতে চেয়েছিল কিন্তু জাহিদ ওকে যেতে দেয়নি।সাথে করে মি.পিটার সনের বাড়ীতে নিয়ে এসেছে।বাড়ীতে এসেই দুজনে শরীরে লেগে থাকা ময়লা পরিষ্কার করল ওরা।এরপর গোসল করে দুজনে সোজা বিছানায় চলে গেল।বালিশে মাথা লাগতেই ঘুম চলে এল দুজনের চোখে।পরদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই ওদের শরীর বেশ ঝরঝরে হয়ে গেল।গতকাল দীর্ঘক্ষণ অন্ধকার গুহায় বন্দি থাকায় বেশ ক্লান্ত হয়ে পরেছিল জন আর জাহিদ।মি.পিটার সন বাড়ীতে আসেননি।ব্যাংকের কাজে একটু বাইরে গিয়েছেন।তাই আপাতত “গত কাল কোথায় ছিল” এ প্রশ্নের হাত থেকে বেঁচে গেল জাহিদ আর জন।অবশ্য জাহিদও চায় যাতে বেপারটা মিটার সন না জানুক।ওনি জানলে দূশ্চিন্তা করবেন।টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করার সময় গোয়েন্দা প্রধানের হঠাৎ করে রিনকের কথা মনে পরল।কোথাওতো সে দেখতে পাচ্ছে না রিনককে।গেল কোথায়? মিটার সনের কাজের ছেলেটাকে জিজ্ঞাস করে জাহিদ জানতে পারল রিনক গতকাল বাইরে গিয়ে আর ফেরেনি।কথাটা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে যায় সে।কোথাও গেল তাহলে রিনক?

‘চিন্তা কর না’, জন বলল।’হয়তো কোথাও ঘুরতে গিয়েছে কিংবা কোনো কাজে গিয়েছে।’

জাহিদও একই কথা বলে নিজের মনকে বোঝাতে লাগল।কিন্তু কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না তার মন।কোথাও যেন একটা খটকা লাগছে তার কাছে।দ্রুত ব্রেকফাস্ট করে নিজের রুমে চলে আসলো ও জনকে নিয়ে।হঠাৎ যন্ত্রটার কথা মনে পরে গেল জাহিদের।গতকাল ঘুমোবার সময় সে যন্ত্রটা টেবিলের ড্রয়ারের ভেতর রেখেছিল।তার মনে সন্দেহ জেগেছে।রিনক কোনো বিপদে পরেনিতো? আর যদি পরে থাকে তাহলে নিশ্চই রিনক সাহায্যের জন্য সিগন্যাল

পাঠাবেই।একটানে ড্রয়ারটা খুলে ফেলল গোয়েন্দা প্রধান।যন্ত্রটা হাতে নিল।সাথে সাথে উত্তেজিত হয়ে পরল সে।তার সন্দেহই ঠিক।রিনক বিপদে পরেছে।যন্ত্রটা এক নাগারে বিপ বিপ করেই যাচ্ছে।রাতেও(গ্রীষ্মকালে যদিও

আইসল্যান্ডে সূর্য পুরোপুরি অস্ত যায় না তবুও দিন রাতের হিসেব সময়মত করা হয়) নিশ্চই সিগন্যালটা এসেছিল।কিন্তু তখন ওরা এতটাই ক্লান্ত ছিল যে সিগন্যালের আওয়াজ কেউই খেয়াল করেনি।

‘জন’, জাহিদ বলল।’আমাদের দ্রুত যেতে হবে।’
‘কোথায় যেতে হবে?’,অবাক হয়ে গেল জন।

হাতের যন্ত্রটা জনের সামনে তুলে ধরল জাহিদ।আর কিছু বলতে হল না জন লিভার সনকে।যন্ত্রটার বিপবিপ আওয়াজ থেকেই বুঝে গেল রিনককে বাঁচাতে যেতে হবে।গ্যারেজ থেকে দ্রুত সাইকেল বের করে তাতে চেপে বসল ওরা।এরপর সিগন্যাল ধরে এগিয়ে যেতে লাগল দুজনে। যতটা দ্রুত সম্ভব সাইকেল চালাচ্ছে ওরা।হাত ঘড়ি দেখল জাহিদ।সকাল ৯ টা বাজে।আইসল্যান্ডের বিশেষ করে এ রেকিয়াভিক শহরে সকালটা বেশ ব্যাস্ততাপূর্ণ থাকে।তাই যথেষ্ট দ্রুত সাইকেল ওরা চাইলেও চালাতে পাররছে না।খুব সতর্ক থাকতে হচ্ছে।একটু অসতর্ক হলেও ঘটে যেতে পারে মারাত্নক দূর্ঘটনা।তার উপড় আবারর কিছুক্ষণ পর পর থামতে হচ্ছে ছেলেদের।থেমে দেখতে হচ্ছে সিগন্যালটা কোথা থেকে আসছে।সবমিলিয়ে বলতে গেলে মন্দা গতিতে এগিয়ে চলছে দুজনে।

কতক্ষণ এভাবে বন্দি হয়ে থাকতে হবে তা জানে না রিনক।শুধু আল্লাহর কাছে বন্ধুদের জন্য প্রার্থনা করছে।ঘরটার পূর্বপাশে একটা জানালা রয়েছে। জানালাটা দিয়ে ঘরের ভেতর মৃদু আলো আসছে।আলোটা দেখেই বুঝতে পারল রিনক এটা সকালের মিষ্টি আলো।তবুও শিউর হওয়ার জন্য হাত ঘড়ির দিকে তাকালো সে।দেখল ওর ধারণাই ঠিক।এখন সকাল ৯ টা বাজে।তারমানে ১ দিন পার হয়ে গিয়েছে সে এখানে বন্ধি।রাতে জেনাতুল একবার এসেছিল খাবার দিতে।তারপর আর আসেনি।অন্যসময় হলে এতক্ষণে সে ক্ষিদায় চেচামেচি শুরু করে দিত।কিন্তু এখন কেন জানি একটুও ক্ষিদে লাগছে না তার।ঘরের আবছা আলো ঘরের ভেতরে একটা ভূতুরে পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।অন্যসময় এমন পরিবেশে থাকলে ভয়ে কুকরে যেত সে।কিন্তু এখন একটুও ভয় লাগছে না।বরং এ ভূতুরে পরিবেশ আর

নিরবতাকে ভালোই লাগছে।’আচ্ছা জাহিদ আর জন কি বিপদ থেকে আদৌ উদ্ধার হতে পারবে?’ নিজের মনকে প্রশ্ন করল সে।’বিপদ থেকে উদ্ধার হয়ে কি তাকেও বাঁচাতে আসবে?’

বসে বসে রিনক এসব কথাই ভাবছে।রাতে ঘুমানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসেনি তার।পুরো রাত জেগেই কাটিয়েছে।কিছুক্ষণ বাদে হঠাৎ জানালা দিয়ে একটা আওয়াজ শুনতে পেল।কে যেন ওর নাম ধরে ফিসফিস করে ডাকছে।বেপারটা তেমন একটা পাত্তা দিল না ও।এমন জন শূন্য একটা জায়গায় মানুষ আসবে কোথা থেকে।রাতে না ঘুমোবার ফলে হয়তো উল্টোপাল্টা শুনছে।নিশ্চই এটা মনের ভুল তার।

‘রিনক’, এবার আওয়াজটা আসলো দরজার দিক থেকে।এবার আর এটাকে মনের ভুল মনে হল না তার কাছে।নিশ্চই ওকে চিনে এমন কেউ দরজার সামনে দাড়িয়ে ডাকছে তাকে।দরজার দিকে এগিয়ে গেল সে।কান পাতল খুব

সতর্কভাবে।কোনো আওয়াজ নেই।হয়তো সত্যিই মনের ভুল ছিল এটা ভেবে দরজার উপড় থেকে কান সরাতে যাবে ঠিক এমন সময় শুনা গেল আবার সে আওয়াজ।

‘রিনক,তুমি কি ভেতরে আছো?’, অন্যবারের চেয়ে এবারের আওয়াজটা বেশ জোরালো আর স্পষ্ট।আননন্দে লাফিয়ে উঠল সহকারি গোয়েন্দা।কারণ গলাটা চিন্তে পেরেছে সে।গলাটা তার চির পরিচিত বন্ধু সয়ং জাহিদ হাসানের।

‘রিনক’, আবার শোনা গেল জাহিদের কথা।’ঠিক আছোতো তুমি?’
‘আমি ঠিক আছি’, ফিসফিস করে দরজার ভেতর থেকে উত্তর দিল রিনক।’তোমরা গতকাল কোথায় ছিলে?’
‘সেটা পরে বলব তোমাকে।’, জাহিদ বলল।’এখন দেখি ভেতরে ঢোকার কোনো রাস্তা পাই কিনা।’

দরজার পাশ থেকে জাহিদের সরে যাওয়ার আওয়াজ শুনতে পেল রিনক।অদ্ভূদ এক অনুভূতি হচ্ছে তার।মানে কিছুটা আনন্দ আর বেদনা মিলিয়ে যেমন হয় আর কি।দীর্ঘ সময় একটা অাধো অন্ধকার ঘরের ভেতর বন্দি থাকার পর খোলা আকাশের নিচে মুক্তি পেতে চায় না কে?।আর এ মুক্তির জন্যই এখন রিনকের মন ছটফট করছে।এভাবে কিছু সময় গড়িয়ে যাওয়ার পর দরজায় আবার শুনা গেল জাহিদের কথা

‘ভালো যায়গায় আটকা পরেছো তুমি রিনক।অনেক খুজলাম ভেতরে ঢুকার কোনো রাস্তা পােলাম না।’
‘জেনাতুলতো আর এত বোকা না’, বিড়বিড় করে বলল সহকারি গোয়েন্দা।কিন্তু এ কথাটাও কানে গেল গোয়েন্দা প্রধানের।চমকে সে জিজ্ঞাসা করল, ‘এখানে কি তোমাকে জেনাতুল নিয়ে এসেছে?’
‘হ্যা বেটাই নিয়ে এসেছে।’ রিনক উত্তর দিল।

‘ইস যদি এখন ঢুকতে পারতাম’, আফসোস করল জাহিদ।’দাড়াও অন্য কোনো উপায় খুজে দেখছি।’
‘তার আর দরকার নেই’, একটা ভারি কণ্ঠ শুনা গেল।’আমিই তোমাদের ভেতরে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’
দরজা খোলার আওয়াজ আসলো রিনকের কানে।দ্রুত সে দরজার কাছ থেকে সরে গেল।দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল জাহিদ,জন আর ওদের পেছনে জেনাতুল সুইফ্ট।লোকটার হাতে রয়েছে পিস্তল।পিস্তলটার দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলল রিনক।

‘নিজেদের খুব চালাক ভাব তোমরা না’, হো হো করে হেসে উঠলো জেনাতুল।’এবার দুটোকেই হাতের কাছে পেয়েছি।অবশ্য তোমরা চালাক ছেলেই বটে।তা না হলে কি কেউ এভাবে একটা অন্ধকার গুহা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে?।’
‘এখানে আমরা আসবো যে সেটা আপনি আগে থেকেই জানতেন তাই না?’, জাহিদ বলল।
‘হু ‘, মাথা দোলালো জেনাতুল।’জানতাম।

জেনাতুল গিয়ে দরজাটা আটকিয়ে দিল।হাতের পিস্তলটা পকেটে ভরে রাখলো।তারপর ছেলেদের সামনে দাড়িয়ে বলতে লাগল,’আজ সকালে তোমাদের ছুটাতে গুহাটায় গিয়ে ছিলাম।কিন্তু গিয়ে যখন তোমাকে বা জনকে কাউকেই পেলাম না তখন বুঝতে পারলাম তোমরা ওখান থেকে পালিয়েছো।আর এটাও আমি নিশ্চিত ছিলাম যে তুমি তোমার বন্ধুকে বাঁচাতে আসবেই।আর তুমি সত্যিই এলে।’
‘কেন করছেন আপনি এসব?’, জাহিদ জিজ্ঞাসা করল।

‘আমার গুপ্তধনগুলো চাই।’, এবার কঠোর হয়ে গেল জেনাতুলের চেহারা।’ধাধার সমাধানটা বল আমাকে।’
‘ রিনক নিশ্চই বলে দিয়েছে আপনাকে।আমরা এখনো ধাধার সমাধান করিনি।’

‘মিথ্যে বলছো তোমরা’, খেখিয়ে উঠলো পাহাড় বিষেষজ্ঞ।’তোমরা সবাই মিথ্যে কথা বলছো।এর জন্য পস্তাতে হবে তোমাদের।’

জেনাতুল গটগট করে হেঁটে বাইরে বেরিয়ে গেল।এরপর দরজায় তালা লাগানোর আওয়াজ শুনল ওরা।পরক্ষণেই একটা পায়ের আওয়াজ দূরে সরে যেতে লাগল।আবারো বস্মিত হয়ে পরল দুইগোয়েন্দা আর জন।এতক্ষণ ধরে জন একটি কথাও বলেনি।অল্প শোকে কাতর,অধিক পাথর।জনের বেলাও তাই ঘটেছে।বার বার এভাবে বন্ধি হওয়ায় বেশ ঘাবড়ে গিয়েছে সে।সেদিকে মন নেই গোয়েন্দা প্রধানের।মাথায় ঘন ঘন মৃদু টোকা মারছে।গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেছে সে।ঘরের আবছা আলোতে তার ভাবনাগুলোও কেমন আবছা হয়ে আসছে।

আঠারো

‘রিনক তুমি এখানে আটকা পরলে কিভাবে?’, জিজ্ঞাসা করল জাহিদ।
‘আমি তোমাদের বিপদ সংকেত পেয়ে ছুটে গিয়েছিলাম ডেভিল মাউন্টেনে।তারপর’
বন্ধুদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যা যা ঘটেছে তা সব খুলে বলল রিনক।
‘হু ‘, সব শুনে মাথা দোলালো গোয়েন্দা প্রধান।’বেটা তাহলে আমাদের বন্দি করে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিল।আর তুমি আসতেই পাকড়াও করে এখানে নিয়ে চলে আসলো।’
‘কিন্তু তোমাদের আমি দেখতে পেলাম না কেন গতকাল ঐ ডেভিল মাউন্টেনে?’
‘কারণ আমরা গুহায় বন্দি ছিলাম’,জাহিদ বলল।
‘গুহা!, অবাক দেখালো সহকারি গোয়েন্দাকে।’কিন্তু আমিতো সেখানে কোনো গুহা দেখিনি।’
‘গুহাটা ছিল একটা গুপ্তগুহা তাই দেখতে পাওনি।প্রথম থেকেই তোমাকে বলি’
ওরা কিভাবে গুহায় আটকা পরল, কিভাবে ওখান থেকে বের হলো তা সব খুলে বলল জাহিদ।জনও চুপ থাকতে পারেনি।মাঝে মধ্যে জাহিদের সাথে সেও সুর মিলিয়ে বলল অন্ধকার গুহার বিচিত্র সে অভিজ্ঞতার কথা।
‘আর সর্বশেষ সিগন্যাল পেয়ে আমরা এখানে চলে আসলাম’,, পুরো বর্ণনা শেষ করে বলল জাহিদ।
‘আরি বাপরে’, রিনক বলল।’তোমরাতো তাহলে সাংঘাতিক বিপদের মধ্যে পরেছিলে।আমার সাইকেলটা একটা ঝোপে লুকিয়ে রেখেছি।তাই ওটা তোমাদের কারও চোখে পরেনি।’

ঘরটার ভেতর আধো আলো আধো অন্ধকারের ফলে এক রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।এমন পরিবেশেই দুইগোয়েন্দার আলোচনা চলছে।

‘জাহিদ’, রিনক বলল।’তোমার কথাই ঠিক।গোস্ট হাউজে একজন নয় দুজন রয়েছে।একজনের নাম ডেনি আর অন্য জনের নাম ডেভিড।রাত-দিন চব্বিশ ঘন্টাই লোকগুলো জনের উপড় নজর রাখছে।’
রিনক টেলিস্কোপের কথা জাহিদকে খুলে বলল।

‘দাড়ুন কাজ করেছো তুমি’, সন্তুষ্ট দেখালো গোয়েন্দা প্রধানকে।’এখন আমাদের লোকদুটোর বেপারে খোজ নিতে হবে।আর এও জানতে হবে লোকগুলোর উদ্দেশ্য কি।’

‘কিন্তু তার আগেতো আমাদের এখান থেকে বের হতে হবে।’

‘আরে তাইতো।ভুলেই গিয়েছিলাম আমরা বন্দি।যে করেই হোক এখান থেকে বের হতেই হবে।কিন্তু কিভাবে?’,আবার গভির চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেল গোয়েন্দা প্রধান জাহিদ।

ঘরের একপাশে একটা দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে রয়েছে জন।মুখে কথা নেই।আনমনে কি যেন ভাবছে।হয়তো বাড়ীর কথা ভাবছে।সেদিকে মন নেই জাহিদ কিংবা রিনকের।ওদের দুজনের মাথায় এখন একটাই ভাবনা চলছে।এখান থেকে কিভাবে বের হয়ে যায়?।দরজা দিয়ে বেরুনো সম্ভব না।ভাবল জাহিদ।জানালা দিয়েও সম্ভব না।তাহলে কি দরজা ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করবে? কিন্তু দরজার দিকে তাকিয়েই এ চিন্তা বাদ দিতে হল জাহিদকে। কারণ দরজাটা সম্পূর্ন স্টিলের তৈরি।আর ওদের মত তিনটে ছেলেকে দিয়ে এ দরজা ভাঙ্গা কোনোদিনও সম্ভব না।তাহলে হঠাৎ চেচিয়ে উঠলো গোয়েন্দা প্রধান,’পেয়েছি,পেয়েছি।’
একসাথে চমকে রিনক আর জন জিজ্ঞেস করল,’কি পেয়েছো?’
‘গুপ্ত পথ।’

‘গুপ্ত পথ?’, অবাক হয়ে বলল রিনক।’এই তোমার মাথা ঠিক আছেতো? এখানে গুপ্ত পথ আসবে কোথা থেকে?’
‘নিশ্চই আছে’, জাহিদ বলল।’তোমার চোখ বাদা ছিল তাই তুমি বাইরেটা দেখতে পাওনি।কিন্তু আমাদের চোখ বাদা ছিল না।আমরা আসার সময় দেখেছি এ বাড়ীটা একটা দূর্গের অংশ।একসময় হয়তো অনেক বড় দূর্গ ছিল।কিন্তু এখন সেটা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।শুধু বাকী রয়েছে এ ঘরটাই।আর পুরোনো আমলের সকল বাড়ীতেই এক বা একাধিক গুপ্ত পথ বানানো হত।আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস এ ঘরের মধ্যেও নিশ্চই ওরকম কিছু একটা রয়েছে।’

সাধরণত ভুল করে না জাহিদ।এ কথা বেশ ভালো করেই জানা আছে সহকারি গোয়েন্দার।তাই আর কথা না বারিয়ে রিনক গুপ্ত পথ খোজার কাজে লেগে গেল।জনও বসে রইলো না।সেও খুজতে লাগল।এক সাথে তিন জোড়া চোখ পুরো ঘরটাকে খুজতে লাগল।কিন্তু কারও চোখে তেমন কিছু চোখে পরেনি।ওরা মেঝে,দেয়াল সব জায়গায় খুজে দেখল।কিন্তু কোথাও পাওয়া গেল না সে গুপ্ত পথের নিশানা।

‘আমাদের বের হওয়ার আশা আর পূরণ হল না’,ধপাস করে মেঝেতে বসে পরল রিনক।
‘ঘরের প্রতিটি ইঞ্চি খুজে দেখেছি’, জন বলল।’কোথাও কিছু দেখলাম না।’

‘আমার মনে হয় কিছু একটা মিস করেছি আমরা’, হাল ছাড়তে রাজি নয় জাহিদ।’নিশ্চই গুপ্তপথ রয়েছেই।’
দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসলো জাহিদ।মাথায় ঘন ঘন মৃদু টোকা মারছে।এভাবে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর উঠে দাড়ালো সে।ঘরের পূর্ব কোণে এগিয়ে গেল।শুয়ে পরল মেঝেতে।এরপর মেঝেতে টোকা দিয়ে কান পেতে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করল।উঠে পরল সে।এগিয়ে গেল আরেক কোণে।আগের মত মেঝেতে শুয়ে কান পেতে টোকা মেরে কিছু একটা পরিক্ষা করতে লাগল।আধো আলোর মধ্য দিয়ে জন আর রিনক অবাক হয়ে জাহিদের কর্মকান্ড দেখতে লাগল।সে আসলে কি করতে চাইছে তা কিছুতেই বুঝতে পারছে না ওরা দুজন।পশ্চিম কোণ থেকে উঠে পরল গোয়েন্দা প্রধান।এরপর আরেক কোণে এগিয়ে গেল।আগের মত করে কিছুক্ষণ কান পেতে টোকা মারতে লাগল।এভাবে আরও কয়েকটা জায়গায় কয়েকটা জায়গায় পরিক্ষা করে দেখার পর একটা জায়গায় থমকে দাড়ালো সে।বন্ধুদের ডাক দিল।সেদিকে এগিয়ে গেল জন আর রিনক। হাসি ফুটেছে জহিদের মুখে।

‘আমাদের এটা ভাঙতে হবে’,পা দিয়ে ঠুকে মেঝোটা দেখালো জাহিদ।’দেখতো শাবল কিংবা অন্য কিছু পাও কি না।’
কংক্রিটের মেঝেতা জাহিদ কেন ভাঙতে চাচ্ছে তা কিছুতেই বুঝতে পারল না রিনক কিংবা জন।কিন্তু কেউ কোনো প্রশ্নও করল না।ঘরের ভেতর শাবল খুজতে লাগল।ঘরের এক কোনে কিছু জঞ্জালের ভেতরে পাওয়া গেল মরচে ধরা একটা শাবল।সেটা নিয়ে এল রিনক।এরপর জাহিদের দেখানো জায়গাটা ভাঙতে আরম্ভ করল ও।বেশি কষ্ট করতে হল না রিনককে।কারণ মেঝেটা সম্পূর্ণ ফাঁপা।জোরে দুটো কোপ মারতেই ঝরঝর করে নিচের দিকে চলে গেল কংক্রিটের মেঝেটা।এতক্ষণে ওরা বুঝতে পারল জাহিদ কান পেতে আর টোকা মেরে কি পরিক্ষা করছিল।কারণ মেঝের পরিবর্তে এখন নিচে দেখা যাচ্ছে অন্ধকার একটা গোপন পথ।জাহিদ যে সহজে ভুল করে না সেটার আরও একবার প্রমাণিত হয়ে গেল।

‘খুজে দেখ এখানে কোনো টর্চ পাওয়া যায় কিনা’,জাহিদ নির্দেশ দিল।

গোয়েন্দা প্রধানের কথা মত কাজে লেগে পরল রিনক আর জন।ঘরের ভেতর টর্চ বা মোম জাতীয় কোনো জিনিস আছে কিনা তা খুজতে লাগল।বেশিক্ষণ খুজতে হল না ওদের।শাবলটা যেখানে পেয়েছিল সে জঞ্জালের মধ্যেই পাওয়া গেল তিনটে ছোট টর্চ লাইট।টর্চ টিনটে জ্বেলে দেখল গোয়েন্দা প্রধান।তেমন একটা আলো নেই।তবে তিনটে এক সাথে জ্বালালে মোটামোটি কাজ চালিয়ে নেয়া যাবে।অন্ধকার গুপ্ত পথটা যেন একটা অন্ধ কূপ।টর্চ জ্বেলে রিনক এগিয়ে গেল সেদিকে।একটা ছোট মই সোজা নিচে সূড়ঙ্গ পর্যন্ত নেমে পরেছে।সবার প্রথমে মই ধরে নিচে নামল রিনক।তারপর জন আর সবার শেষে জাহিদ।এরপর তিনকিশোর হাতে সামান্য আলো নিয়ে পা বাড়ালো অজানা এক অন্ধকার সূড়ঙ্গের পথে।

উনিশ

হাতে টর্চ নিয়ে আগে চলছে রিনক।মাঝখানে রয়েছে জন আর সবার শেষে জাহিদ।অন্ধকার এ সূড়ঙ্গের দেয়াল দুপাশ থেকে বেশ চাপা।যার ফলে ছেলেরা পাশাপাশি হাঁটতে পারছে না।একজনের পেছন আরেকজন হাঁটছে।দীর্ঘদিন ধরে সূড়ঙ্গটা কেউ ব্যবহার করেনি।ময়লা যুক্ত দেয়াল দেখেই তা সহজে অণুমাণ করা যায়।একটা সময় এসকল সূড়ঙ্গ পথ এক বাড়ী থেকে অন্য বাড়ীতে যাতায়াত কিংবা পালানোর কাজে ব্যবহার করত লোকেরা।সে একই কাজ আজ করছে দুইগোয়েন্দা আর জন।সূড়ঙ্গটা পালানোর কাজে ব্যবহার করছে।ইতিমধ্যে ভূতের ভয়টা আবার চেপে বসেছে রিনকের মাথায়।তাই যতদূর সম্ভব লাইট মেরে সতর্ক দৃষ্টিতে দেখছে ভূত বা এ জাতীয় কিছু আছে কিনা।কিছুক্ষণ চলার পর হঠাৎ রিনক থমকে দাড়ালো।পেছন থেকে দেখতে না পেয়ে জন রিনকের ঘায়ের উপর এসে পরল।

‘কি হয়েছে?’, জাহিদ জিজ্ঞাসা করল।’থামলে কেন?’
‘ভূ-ভূ-ভূত’, আতংকে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না সহকারি গোয়েন্দার।

‘ভূত? কোথায় দেখিতো।’ জনের পাশ দিয়ে উকি দিল জাহিদ।টর্চের সামান্য আলোতে দেখা গেল দুজোড়া টকটকে বড় বড় লাল চোখ মাথার উপড় থেকে ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।চোখ দুটোর চাহনি দেখে অজানা আতংকে আতকে উঠলো সে।তবে সেটা একমুহূর্তের জন্য।পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে ও বলল,’এগোলো ভূত নয়,বাদুর।’
‘তাহলে চোখ এত ভয়ংকর কেন?’, ঢোক গিলল রিনক।

‘এ প্রজাতির বাদুরেরা অন্ধকার গুহার ভেতরেই থাকে।কখনো আলোতে বের হয় না।আর এ অন্ধকারে দেখতে সাহায্য করে এ চোখগুলো।’

‘কিন্তু আমরা এখন এগোবো কিভাবে?’, জন বলল।’আমরা এগোতে গেলেইতো থুথু ছুরবে ওরা।আর বাদুরের থুথু চোখে পরলেই চিরকালের জন্য অন্ধ হয়ে যাব।’

‘দাড়াও বেটাদের ভয় দেখিয়ে তাড়াচ্ছি’, ইতি মধ্যে ভয়টা উবে গেছে রিনকের।
‘তাহলে থুথু ছুড়ে চোখ অন্ধ করে দেবে।’, জাহিদ বলল।’অন্য কিছু করতে হবে আমাদের।’
‘কি করবে?’

‘বাদুরেরা বেশি শব্দ সহ্য করতে পারে না।আমরা যদি একসাথে চিৎকার করি তাহলে নিশ্চই ওগুলো বিরক্ত হয়ে এখান থেকে সরে যাবে।এসো চিল্লাই।’

এরপর তিনজনে মিলে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে লাগল।মাটির নিচে থাকায় এ চিৎকার উপড়ে কারও শোনার সম্ভাবনা নেই।কিছুক্ষণের মধ্যে বিরক্ত হয়ে বাদুর দুটো ডানা ঝাপটে চলে গেল।যাওয়ার আগে শত্রুদের দিকে কিছুটা থুথু ছুরে গেল।অবশ্য সেটা কারও শরীরে পরেনি।যেন ওদের প্রতি ঘৃণায় থুথু ছুরল বাদুর দুটো।ওরা সামনে এগোতে যাবে এমন সময় পেছন থেকে একটা শক্ত বুটের আওয়াজ শুনা গেল।চুপ করে কান পেতে রইলো ওরা কিছুক্ষণ।শক্ত বুট পরা একটা পায়ের আওয়াজ ওদের দিকেই এগিয়ে আসছে।

‘নিশ্চই বেটা জেনাতুল’, মন্তব্য করল রিনক।
‘তাহলে সে এটাও জানে আমরা এ সূড়ঙ্গ দিয়েই পালিয়েছি।তাই পিছু নিয়েছে।’ জন বলল।
‘দ্রুত এগো কুইক’, চেচিয়ে নির্দেশ দিল জাহিদ।

এরপর যত দ্রুত সম্ভব সামনে এগোতে লাগলো ছেলেরা।এভাবে কিছুক্ষণ হাঁটার পর হঠাৎ করে তিন ফুট নিচে নেমে গেল সূড়ঙ্গের মেঝেটা।সবার আগে লাফ দিয়ে নামল রিনক।ঝাপাং করে ওর পায়ের নিচে আওয়াজ হল।এরপর একে একে জন আর জাহিদও তিনফুট নিচে নেমে এল।ওদের পায়ের নিচে এখন হাঁটু পানি।শহরের ড্রেনে এসে পৌছেছে ওরা।ইতিমধ্যে পায়ের আওয়াজটা আর শুনা যাচ্ছে না।তারমানে লোকটা ফিরে গিয়েছে।হাপ ছেরে বাঁচল ছেলেরা।স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে হাঁটা ধরল ড্রেন ধরে।

হাঁটার সময় পায়ের নিচের পানিগুলো ঝপাং করে শব্দ করছে।এখন আর টর্চ জ্বালিয়ে ওদের হাঁটতে হচ্ছে না।আবছা আলোয় ড্রেনের ভেতরটা সব দেখা যাচ্ছে।আরও কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ করে বিশাল একটা লোহার গেট ওদের যাত্রার ইতি ঘটালো।এ গেট টপকে কিছুতেই ওপাশে যেতে পারবে না ওরা।আশপাশটা টর্চ মেরে দেখতে লাগল জাহিদ।ওদের বায়ে আরেকটা সূড়ঙ্গপথ।সেদিকে ইশারা করল সে।ইশারা বুঝতে পারল বাকী দুজন।এগিয়ে গিয়ে পূর্বের মত সবার আগে ঢুকে পরল রিনক।এরপর জন আর জাহিদও ঢুকে পরল।রিনকের এ সাহস দেখে মাঝে মাঝে গোয়েন্দা প্রধানের মনে প্রশ্ন জাগে এটাই কি সে ছেলেটা যে কিনা ভূতের ভয়ে কুকড়ে যায়?

সময় গড়িয়ে চলছে।কিন্তু অন্ধকার সূড়ঙ্গের চলা শেষ হচ্ছে না।আরও কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ করে পূর্বের মত আবারো চেচিয়ে উঠল রিনক।

‘কি হলো চেচালে কেন?’, পেছন থেকে জিজ্ঞাসা করল গোয়েন্দা প্রধান।
‘চলো এখান থেকে ভাগি।আমার খুব ভয় করছে।’, রিনক উত্তর দিল।
‘কেন?’, জন জিজ্ঞাসা করল।
ইশারা করে সামনে কিছু একটা দেখালো রিনক।সেদিকে একসাথে এগিয়ে গেল জাহিদ আর জন।সূড়ঙ্গের দেয়ালে একটা মানুষের কংকাল ঝুলছে।আর তা দেখেই ভয়ে চেচিয়ে উঠেছে রিনক।
‘লোকটা হয়তো এখানে আটকে পরেছিল’, কংকালটার দিকে তাকিয়ে মন্তব্য করল জন।’বের হতে না পেরে, না খেয়ে মারা গেছে’
‘কিংবা খুন করে লাশ এখানে ফেলে দেওয়া হয়েছে’, চিন্তিত হয়ে ওটার দিকে তাকিয়ে রইলো জাহিদ।
‘কি হলো তোমরা এখনো দাড়িয়ে রয়েছো?’, সামনে এগিয়ে আসলো রিনক।’চলো ভাগি’
‘রিনক’,জন বলল।’এটা কিন্তু ভূত না।একটা মানুষের কংকাল।’

‘ও ঠিকই বলছে’, সুর মেলালো জাহিদ।’তাকিয়ে দেখ এটা একটা সাধারণ কংকাল ছাড়া আর কিছুই না।নড়ার কিংবা খাওয়ার ক্ষমতা নেই এটার।’

‘ঠিক বলেছো তুমি’, কংকালের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলল রিনক।’তবুও আমি আর এক মুহূৃত এখানে দাড়াতে চাই না।চল’

সামনে হাঁটা ধরল রিনক।কংকালটার দিকে একবার তাকিয়ে জাহিদ আর জনও হাঁটা ধরল।ওরা যতই হাঁটছে ততই দীর্ঘ হচ্ছে অন্ধকার পথ।ইতিমধ্যে টর্চ তিনটের চার্জও শেষ।সূড়ঙ্গের ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার।আলো ছাড়া হাঁটতে ওদের বেশ অসুবিধা হচ্ছে।অন্ধের মত সামনে হাত বারিয়ে দিয়ে দেখতে হচ্ছে সামনে কিছু আছে কিনা।মাঝে মধ্যে সামনে লাল চোখ দেখা যাচ্ছে।তখন ছেলেরা একসাথে চিৎকার করে সে লাল চোখওয়ালাকে(বাদুর) তাড়াচ্ছে।এভাবে কতক্ষণ ধরে ওরা চলল তা জানেনা ওরা।তবে ওদের কাছে মনে হচ্ছে কয়েক যুগ পেরিয়ে গেছে।হঠাৎ সামনে একটা আলো দেখতে পেয়ে সেদিকে এগিয়ে গেল ওরা।মাথার কিছুটা উপড়ে দেখা যাচ্ছে একটা সূড়ঙ্গ মুখ আর সেটা দিয়েই আলোটা আসছে।ওরা উপড়ে ওঠতে যাবে এমন সময় একটা মুখ দেখা গেল সূড়ঙ্গ মুখটায়।
‘আরে তোমরা ওখানে কি করছো?’, চেচিয়ে উঠল সূড়ঙ্গ মুখের লোকটা।

বিশ

‘এমনি একটু দেখছিলাম’, জাহিদ বলল।
‘তোমরা এখানে আর ওদিকে মালিক তোমাদের জন্য চিন্তা করছেন’, বলল মি.পিটার সনের কাজের লোকটা।আসলে সূড়ঙ্গের মুখে মি.পিটার সনের কাজের লোক দাড়িয়ে রয়েছে।
‘আপনি ওনাকে গিয়ে বলুন আমরা এসে গিয়েছি।’, জাহিদ বলল।’কিছুক্ষণ বাদে আমরা আসছি।’
‘ঠিকাছে তোমরা দ্রুত চলে আসো।’, বাড়ীর দিকে রওনা দিল কাজের লোকটা।অন্ধকার সূড়ঙ্গের ভেতর থেকে তিনকিশোর একে একে উঠে এল খোলা আকাশের নিচে।সূড়ঙ্গ পথের মধ্য দিয়ে ওরা সোজা মি.পিটার সনের বাড়ীতে পৌছে গেছে।বাড়ীর পেছনের দিকে একটা ঝোপের আড়ালে থাকায় এতদিন ধরে ওরা দেখতে পায়নি সূড়ঙ্গ পথটা। আজ হয়তো কাজের লোকটা ঝোপ পরিষ্কার জন্য সূড়ঙ্গ মুখ থেকে ঝোপ সরিয়ে ফেলেছে।
‘আরেকটা রহস্যের সমাধান হল’, জাহিদ বলল। চট করে বাকী দুজোড়া চোখ ঘুরে গেল গোয়েন্দা প্রধানের দিকে।
‘কোন রহস্য?’, রিনক জিজ্ঞাসা করল।

‘জেনাতুল সুইফ্ট সেদিন এ পথটাই ব্যবহার করে লাইব্রেরির মধ্যে ঢুকেছিল আর বেরিয়ে ছিল।তাই লোকটা কারও চোখে পরেনি।’

‘চলো বেটাকে পুলিশের কাছে দিই।’ জনের প্রস্তাব।
‘কোন অপরাধে পুলিশ তাকে ধরবে?’, জাহিদ বলল।
‘কেন আমাদের যে অন্যায়ভাবে আটকিয়ে রেখেছিল সে অপরাধে’, রিনক বলল।
‘প্রমাণ কোথায় আমাদের কাছে?’, গোয়েন্দা প্রধান বলল।’তাছাড়া পুলিশ আমাদের কথা বিশ্বাস করবে না।মি.পিটার সনের কথা করতে পারেন তবে ওনাকে এসবের কিছুই বলা যাবে না।তাহলে সাথে সাথে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিবে।’
‘তাহলে আর কোনো রাস্তা নেই বেটাকে শাস্তি দেওয়ার?’, জনের প্রশ্ন।
‘সে না হয় পরে দেখা যাবে’, জাহিদ বলল।’চলো গিয়ে আগে কিছু খাই।যা ক্ষিদে পেয়েছে….’
‘আরে তাইতো’, চেচিয়ে উঠল রিনক।’আমারতো মনেই ছিল না খাবারের কথা।যা ক্ষিদে পেয়েছে তাতে করে পুরো আস্ত একটা হাতি সাবাড় করে দিতে পারব।’
টেবিলে ডিনার নিয়ে ছেলেদের জন্য অপেক্ষা করছেন মি.পিটার সন।ওদের দেখতে পেয়েই যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলেন তিনি।

‘এই যে ছেলেরা’, পিটার সন বললেন।’কোথায় ছিল এতক্ষণ? সে সকালে বের হয়েছো আর এখনতো ডিনারের সময় হয়ে গিয়েছে’

‘না-মানে-ইয়ে’, বলতে দ্বিধা করছে জাহিদ।
‘ওহ বিঝতে পেরেছি,রহস্য সমাধানের কাজ করছিলে।’
চট করে জাহিদের চোখ ঘুরে গেল রিনকের দিকে।
‘আমি কিছু বলিনি’, ফিসফিস করে বলল রিনক।’ওনি আগে থেকেই জানতেন’
‘আরে তোমরা দাড়িয়ে রয়েছো কেন?’, আবার বললেন মি.পিটার সন।’বসো বসো ডিনার কর।’
তিনজন তিনটে চেয়ার টেনে বসে পরল ডিনার করার জন্য।

পুরো আটটা স্যান্ডউইচ শেষ না করা পর্যন্ত থামল না রিনক।তা দেখে আজ আর কেউ হাসলো না।জাহিদ আর জনের নিজের যা ক্ষিদে লেগেছে তার থেকে দশগুণ ক্ষিদে রিনকের লেগেছে।অনেকটা নিরবতার মধ্য দিয়েই কাটল ছেলেদের ডিনার।সরাদিন অনেক ধকল যাওয়ায় ক্লান্ত হয়ে পরেছে তিন কিশোর।ওদের তিনজনেরিই এখন বিশ্রাম দরকার।জন ওর বাড়ীর দিকে রওনা দিল।ওর বাবা চিন্তা করবে ওকে না দেখলে তাই রিনক আর জাহিদের হাজার অণুরোধের সত্তেও সে এখানে থাকতে রাজি হয় নি।বিছানায় গিয়ে সোজা শুয়ে পরল রিনক আর জাহিদ।নরম বিছানায় শরীর এলিয়ে দেওয়ার সাথে সাথেই দুজনের চোখে ঘুম নেমে আসলো।

পরদিন সকাল বেলা ভোরে ঘুম ভাঙল দুইগোয়েন্দার।ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট করে ওরা সোজা হেডকোয়াটারে চলে আসলো।

‘রিনক’, জাহিদ বলল।’আমাদের এখন ডেনি আর ডেভিডের বেপারে খোজ খবর নিতে হবে।তুমি গিয়ে দুজনের উপড় নজর রাখ।দেখ কিছু জানতে পার কিনা।আর আমি ধাধার সমাধান বের করছি।’

‘ধাধার সমাধান?,’ অবাক হল রিনক।’কিভাবে? মেসেজতো ঐ বেটা জেনাতুল নিয়ে গিয়েছে।’
‘জাহিদ হাসানের এটা আছে না’, মাথায় টোকা দিল গোয়েন্দা প্রধান।’এর মধ্যেই সবকিছু রয়েছে।’
সাইকেল নিয়ে গোস্ট হাউজের দিকে রওনা দিল রিনক। এদিকে ধাধার লেখার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরল জাহিদ।
“টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টান,
হাউ আর ওন্ডার দ্যা আইসল্যান্ড বার
সি দ্যা আন্ডার টুইংকেল হিল,হোয়ার আর ওয়াটার আর দ্যা ইন্ড।
দেন সিন দ্যা সানসেট সাইট, হোয়ার আর ওয়াটার আর দ্যা ব্রেক।
টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার,
হাউ আর অন্ডার দ্যা আইসল্যান্ড বার।
সি দ্যা স্যডো অফ টুইংকেল হিল
দেন ফাইন্ড লিটল এ বক্স,
হোয়ার আর মেসেজ ফর মাই সন।”

লেখা শেষ করে জাহিদ মনে মনে আরও একবার পরল পুরো মেসেজা।এরপর ধাধার মানে বের করার কাজে লেগে পরল সে।

একুশ

চমৎকার সকালের ফুরফুরে বাতাসের মধ্য দিয়ে সাইকেল চালাচ্ছে রিনক।গতকাল ওরা গিয়ে ডেভিল মাউন্টেন আর পুরোনো দূর্গ যেখানে ওদের আটকিয়ে রেখে ছিল জেনাতুল সেখান থেকে ওদের সাইকেল গুলো নিয়ে আসে।কিছুক্ষণের মধ্যে রিনক পৌছে গেল গোস্ট হাউজের সামনে।বাড়ীা একটা ছোট পাহাড়ের উপরে হওয়ায় নিচ থেকে লোকগুলোর উপর নজর রাখা সম্ভব না।তাই রিনক বাড়ীর পেছন সাইডের ঢালু বেয়ে আগের মত বারান্দার পাশে চলে আসলো।এখনো টেলিস্কোপটা আগের জায়গায় রয়েছে।নিঃশব্দে বারান্দায় উঠে এলো সে।পূর্বের মত পূনরায় টেলিস্কোপে চোখ রাখলো।নিজের ঘরের ভেতর বিছানার উপর চুপ করে বসে রয়েছে জন লিভার সন।টেলিস্কোপ দিয়ে স্পষ্ট দেখছে রিনক।এরপর জন উঠে দাড়ালো।কিছুক্ষণ ঘরের ভেতর এদিক ওদিক পায়চারি করল।তারপর আবার এসে বিছানায় বসলো।আরও কিছুক্ষণ পর উঠে গিয়ে সে একটা বই নিয়ে এসে পড়তে লাগলো।হঠাৎ রিনকের পেছনে একটা পায়ের আওয়াজ হল।টেলিস্কোপ থেকে চোখ সরিয়ে আনলো ও।এরপর দ্রুত বারান্দা থেকে নেমে গিয়ে একটা ঝোপে লুকিয়ে পরল।টেলিস্কোপে এসে চোখ রাখলো ডেনি।কিছুক্ষণ এভাবে দেখার পর টেলিস্কোপ থেকে চোখ সরিয়ে আনলো ডেনি।তারপর ঘট ঘট করে হেঁটে চলে গেল ঘরের ভেতর।ঝোপ থেকে বেরিয়ে আসলো রিনক।বারান্দায় উঠে জানালার পাশে এসে কান পাতলো।

‘ডেভিড’, ডেনি বলল।’বেপারটাতো আমার কাছে সুবিধের মনে হচ্ছে না।ছেলেটাকে আজকাল প্রায় দেখাই যাচ্ছে না।’

‘এতে করে কি বোঝা যায়?’, শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল ডেভিড।’ছেলেটা হয়তো অন্য কোথাও গিয়ে থাকছে।’
রিনক স্পষ্ট সব শুনতে পাচ্ছে ভেতরের কথা-বার্তা।

‘তুমি বেপারটা বুঝতে পারছো না’, ডেনি বলল।’আমার মনে হয় ছেলেটা জিনিসটা পেয়ে গেছে।’
‘চুপ করবে তুমি’, ধমক লাগালো ডেভিড।’না জেনে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ হবে না।আমাকে আগে একটু ভাবার সময় দাও।’

‘আমি বলছি মেসেজটা ছেলেটার কাছেই রয়েছে।ডারউইন নিশ্চই ঐ মেসেজের মধ্যে বলে দিয়ে গিয়েছে জিনিসটা কোথায় আছে।’

‘আরও কিছুদিন ধৈর্য ধর ডেনি।তোমার ধৈর্যটা কম।হুট করে কিছু করা ঠিক হবে না।’

‘মনে রেখ আমাদের হাতে কিন্তু সময় বেশি নেই।খালি হাতে গেলে সোমালিয়ানরা কিন্তু আমাদের আস্ত রাখবে না।’
‘হু জানি’

আর কোনো কথা শুনতে পেল না সহকারি গোয়েন্দা।শোনার প্রয়োজনও মনে করল না।পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামতে লাগলো সে।গতবারের মত সামনে দিয়ে যাওয়ার মত বোকামিটা আর করল না।নিচে পৌছেই সাইকেল ঘুরিয়ে দ্রুত প্যাডেল মারতে লাগলো সে।বেশ উত্তেজিত হয়ে পরেছে ও।তথ্যগুলো শুনিয়ে আজ জাহিদের মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারবে।

‘নাহ এভাবে হবে না’, ভাবল গোয়েন্দা প্রধান।’ডেভিল মাউন্টেনে না যাওয়া পর্যন্ত ধাধার সমাধান কিছুতেই করতে পারবে না সে।কিন্তু রিনকতো এখনো ফেরেনি।এদিকে জনও নেই।তার উপড় জেনাতুলের উৎপাত।এ অবস্থায় একা যাওয়াটা ঠিক হবে না তার।তাহলে কি করা যায়?’, ঘন ঘন মাথায় টোকা মারতে লাগলো জাহিদ।কিছুক্ষণ বাদে হঠাৎ ওর মুখ উজ্জল হয়ে গেল।উপায় একটা পেয়েছে সে।ডেভিল মাউন্টেনের একটা ম্যাপ হলেই আর কিছুর দরকার নেই তার।ডেভিল মাউন্টেনের ম্যাপ পেতে তেমন একটা সময় লাগলো না তার।মি.পিটার সনের ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতেই পাওয়া গেল ডেভিল মাউন্টেন আর তার আশেপাশের ম্যাপ।ম্যাপ নিয়ে পূনরায় অস্থায়ি হেডকোয়াটারে চলে আসলো ও।তারপর ধাধা সমাধানে আার মন দিল।প্রথম চার লাইনের সমাধান আগেই করে ফেলেছে ওরা।ম্যাপে অবস্থানটা পয়েন্ট করে সে পরবর্তি লাইনের সমাধান করার চেষ্টা করল।
পরের লাইনটা হচ্ছে,”দেন সিন দ্যা সানসেট সাইট,
হোয়ার আর ওয়াটার আর দ্যা ব্রেক।
টুইকেল টুইংকেল লিটল স্টার,হাউ আর ওন্ডার দ্যা আইসল্যান্ড বার”

‘এর মানে হচ্ছে….’, চিন্তিত ভঙ্গিতে একবার ম্যাপের দিকে তাকালো ও আরেকবার ধাধার দিকে।কিছুক্ষণ বাদে পুরো ধাধাটা আরেকবার পড়ল গোয়েন্দা প্রধান।তারপর আরও কিছুক্ষণ ম্যাপের দিকে চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে রইলো।হঠাৎ বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠলো সে।দ্রুত বাড়ীর ভেতর এসে ছো মেরে ফোনটা তুলে ডায়াল করল।কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর ফোনের ওপাশ থেকে সাড়া পাওয়া গেল।

‘হ্যাল্লো জন, রহস্যের সমাধান হয়ে গিয়েছে।তুমি দ্রুত চলে আসো এখানে।

বাইশ

উত্তেজিত হয়ে মি.পিটার সনের বাড়ীতে এসে সাইকেল নিয়ে ঢুকল রিনক।সাইকেলটা বাড়ীর চত্তরের দেয়ালে ঠেস দিয়ে রেখে এক দৌড়ে বাড়ীর ভেতর ঢুকে পরল।হন্ন হয়ে জাহিদকে খুজতে লাগল বাড়ীটার প্রতিটি ঘর আর প্রতিটি কোণা।জাহিদকে চমকে দেওয়ার জন্য আর তর সইছে না তার।পুরো বাড়ী খোজার পর যখন জাহিদকে পাওয়া গেল না তখন হঠাৎ করে হেডকোয়াটারের কথা মনে পরে গেল তার।আর একমুহঅর্ত দাড়িয়ে রইলো না।সোজা ছুটলো পিটার সনের বাড়ীর পেছনের দিকে যেখানে ওদের অস্থায়ি হেডকোয়াটার রয়েছে।আর সেখানেই পাওয়া গেল গোয়েন্দা প্রধানকে।একমনে একটা ম্যাপের দিকে তাকিয়ে রয়েছে সে।
‘জাহিদ’, চেচিয়ে উঠলো সহকারি গোয়েন্দা।’একটা দাড়ুণ তথ্য জানতে পেরেছি।’
‘কি তথ্য?’, শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল জাহিদ।
‘ঐ লোক দুটো ডেনি আর ডেভিড আসলে’

‘এই তোমরা এখানে?’, হঠাৎ জনের আগমনে মাঝ পথে কথায় বাধা পরল রিনকের।’আর আমি তোমাদের সারা বাড়ী খুজে বেড়াচ্ছি।’

‘এসে গিয়েছো তাহলে’, জাহিদ বলল।’রহস্যের সমাধান হয়ে গিয়েছে।’
‘আরি বাপরে’, রিনক বলল।’রহস্যের সমাধান হয়ে গেছে আর আমি জানলাম না।’

‘তুমি চলে যাওয়ার পর আমি ধাধা সমাধানের চেষ্টা করি আর মনে হয় সমাধানও করে ফেলেছি।’, ডেভিল মাউন্টেনের ম্যাপটা মেলে ধরল জাহিদ।ভালো করে দেখার জন্য দুপাশ থেকে ঝুকে আসলো রিনক আর জন।’এ দেখ এখানে’, ম্যাপের উপড় পয়েন্ট করা কয়েকটা জায়গা দেখালো জাহিদ।’এর আশেপাশেই হবে ঐ মেসেজটা যেটাতে তোমার দাদা গুপ্ত ধনের কথা উল্লেখ করে গিয়েছেন।এ ধাধার শেষাংকে বলা আছে”দেন ফাইন্ড দ্যা লিটল এ বক্স,হোয়ার আর মেসেজ ফর মাই সন।”

‘এর মানে আমরা এমন একটা বাক্স পাব যেটাতে একটা মেসেজ রয়েছে তোমার বাবার জন্য।’

‘দাড়ুন’, চেচিয়ে উঠলো জন।’তাহলে এখনি চল।’

‘দাড়াও’, গম্ভির কণ্ঠে বলল রিনক।’তার আগে এটা বল তোসার দাদার নাম কি ছিল?’
‘ডিগ ভার্ণার’

‘জাহিদ’, রিনক বলল।’ডেনি আর ডেভিড আসলে’ রিনক গোস্ট হাউজে ডেনি আর ডেভিডের কথা-বার্তা যা শুনেছে তা সব খুলে বলল বন্ধুদের।

‘হু’, মাথা দোলালো গোয়েন্দা প্রধান।’তার মানে লোকগুলো জানে গুপ্তধনের কথা।এক কাজ কর রিনক।তুমি লাইব্রেরিতে গিয়ে সোমেলিয়ার উপড় যত বই আছে সেগুলো একটু ঘেটে দেখ কিছু পাও কিনা এ বেপারে।আর আমি আর জন গিয়ে গুপ্ত মেসেজটা উদ্ধারের চেষ্টা করি।’

কিছুক্ষণ পর সাইকেল নিয়ে জাহিদ আর জন বেরিয়ে পরল আর রিনক রওনা দিল পিটার সনের লাইব্রেরির দিকে।
হঠাৎ করে কেন জানি আজ রেকিয়াভাক শহরটা একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছে।অন্যদিন যে রাস্তা দিয়ে মানুষ আর গাড়ীর জন্য হাঁটা যেত না আজ সে রাস্তায় একটি পর্যন্ত গাড়ী নেই।যতদূর চোখ যায় শুধু ফাঁকা আর

জনশূন্যহীন রাস্তা।এখনতো রাত নয়।ভাবল জাহিদ।তাহলে পুরো শহরটা এমন ঘুমিয়ে রয়েছে কেন?।বেপারটা জনকে জিজ্ঞাসা করলে জন বলল, ‘প্রতি মাসের এ দিনটিতে পুরো আইসল্যান্ড প্রার্থনা করে দুপুর নাগাত।দুপুরের আগে কেউ ঘর থেকে বের হয় না কিংবা উচ্চস্বরে কথাও বলে না।’

বৈচিত্রময় এ আইসল্যান্ডের নিয়মকানুনটাও বেশ বৈচিত্রময়।কয়েকদিনের ব্যবধানে শীত পরতে আরম্ভ করেছে এখানে।আর কিছুদিন পর সূর্যকে আগামি ৬ মাসের জন্য আর আকাশে দেখা যাবে না।এখনকার রাতের মত আবছা আলো থাকবে তখন।তাই যত দ্রুত সম্ভব এ রহস্যের কিনারা করে ফেলতে চায় গোয়েন্দা প্রধান।যদিও প্রথম ধাধাটার মানে বের করতে পেরেছে ও কিন্তু আসলটা এখনো হাতে পায়নি।যদি দ্বিতীয় মেসেজটাও একটা ধাধা হয় তাহলে অল্প যে কদিন সময় আছে সে কদিনের মধ্যেই তার সমাধান করতে হবে।জনশূন্য রেকিয়াভিকের রাস্তা ধরে সাইকেল চালিয়ে ডেভিল মাউন্টেনে পৌছাতে ১৫ মিনিটের বেশি লাগেনি।সাইকেল দুটো একটা বার্জ গাছের নিচে ঠেস দিয়ে রেখে ওরা ডেভিল মাউন্টেনের সামনে এসে দাড়াল।জ্বলন্ত আগ্নেওগিরির মত এ পাহাড়ের চূড়োর কিছু নিচ থেকে বের হচ্ছে ফসফরাসের অদ্ভূদ সে আলো।

‘এখান থেকেই শুরু করা যাক’, পকেট থেকে ধাধাটা বের করে মেলে ধরল জাহিদ।”প্রথম দুলাইনের তেমন বিশেষ একটা অর্থ নেই।কিন্তু তৃত্বীয় লাইনে বলা হয়েছে “সি দ্যা আন্ডার টুইংকেল হিল,হোয়ার আর ওয়াটার আর দ্যা ইন্ড”
‘এর মানে হচ্ছে এমন কোনো জায়গায় দাড়াতে বলছে যেখানে এসে পানি শেষ হয়েছে আর সেখান থেকে পাহাড়ের চূড়োটা দেখা যাবে।’

‘এমনতো কোনো জায়গা দেখছি না আমি’, আশেপাশে তাকালো জন।’এখানেতো শুধু বালু।আর সমুদ্রতো রাস্তার ওপাশে।’

‘হু আমিও তাই ভাবছি’, চিন্তিত দেখালো জাহিদকে।
‘জাহিদ’, চেচিয়ে উঠল জন।’তুমিতো ম্যাপের ভেতর সবকিছু পয়েন্ট করেছিলে তাই না?’,

‘তাইতো,আমারতো মনেই ছিল না ম্যাপের কথা।কিন্তু ম্যাপটাতো বেঞ্চের উপড়ে রয়েছে।আমিতো আনিনি।’
‘কিন্তু আমি এনেছি’, পকেট থেকে ভাজ করা ম্যাপটা বের করে জন সেটা জাহিদের দিকে এগিয়ে দিল।ম্যাপটা জনের কাছ থেকে নিয়ে মেলে ধরল জাহিদ।পয়েন্ট করা স্থানটা একবার ভালো করে দেখে নিয়ে ম্যাপটা ভাজ করে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলল।

‘জায়গাটা পাহাড়ের পেছনে’ জাহিদ বলল।’চলো যাই।’

পূর্ব পাশ দিয়ে ঘুরে ওরা পাহাড়ের পেছন দিকে চলে আসলো।এদিকওদিক কয়েকবার তাকাতেই একটা সচ্ছ পানির লেক চোখে পরল ছেলেদের।লেকটার পাশে গিয়ে উপড়ের দিকে তাকালো গোয়েন্দা প্রধান।এখান থেকে স্পষ্ট ডেভিল মাউন্টেনের চূড়ো দেখা যাচ্ছে।

‘মনে হয় এটাই সে জায়গা’, জাহিদ বলল।’যেটার কথা ধাধায় বলা হয়েছে।’
‘এরপরের লাইনের মানে কি?’, জনের প্রশ্ন।

‘এর পরের লাইনে বলা হয়েছে’, বলতে আরম্ভ করল জাহিদ।”দেন সিন দ্যা সানসেট সাইট,হোয়ার আর ওয়াটার আর দ্যা ব্রেক”

‘এখানে যেহেতু সূর্যাস্তের কথা বলা হয়েছে তার মানে পশ্চিমের কথা বলতে চেয়েছেন তোমার দাদা ডিগ ভার্নার।আর পশ্চিমের এমন কোনো জায়গার কথা বলা হয়েছে যেখানে পাণি ভেঙ্গে পরে।কিন্তু, চুপ হয়ে ভাবা শুরু করল গোয়েন্দা প্রধান।ইতিমধ্যে ডেভিল মাউন্টের দৈত্য তার তর্জন-গর্জন শুরু করে দিয়েছে।বাতাসের ফলে এমনটা হচ্ছে।কিন্তু সেদিকে কাররই মন নেই।

‘পেয়েছি,পেয়েছি’, হঠাৎ করে লাফিয়ে উঠল জন লিভার সন।’ঐ দেখ লেকের ঐ জায়গাটায়।পানি কেমন ভেঙ্গে পরছে।’

ভালো করে জায়গাটা লক্ষ্য করল জাহিদ।তীর থেকে কিছুটা দূরে লেকের পানি দুদিক থেকে এসে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে পরছে।আসলে ওখানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে।তাই পানিগুলোর ও অবস্থা হয়েছে।

‘বেশ’, জাহিদ বলল।’ভাঙ্গা পানি পেয়ে গেলাম।এর পরবর্তি লাইনগুলো হচ্ছে “টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার,হাউ আর ওন্ডাার দ্যা আইসল্যান্ড বার।

সি দ্যা স্যাডো অফ টুইংকেল হিল,দেন ফাইন্ড লিটল এ বক্স, হোয়ার আর এ মেসেজ ফর মাই সন”
‘তোমার দাদা পাহাড়টার ছায়াকে অনুসরণ করতে বলেছেন।আমার মনে হয় পাহাড়ের ছায়াটা যেখানে পরবে সেখানেই পাওয়া যাবে গুপ্ত মেসেজের বক্সটা।’

‘কিন্তু এখানেতো কোনো ছায়া দেখছি না।’, বলল জন।’ছায়াতো সামনে।’

‘তোমার মনে আছে জন ধাধায় সানসেটের কথা বলা হয়েছে।আমার দৃঢ় বিশ্বাস সূর্যাস্তের সময় যেখানে ছায়াটা পরবে সেখানেই পাওয়া যাবে বাক্সটা।'(এখানে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পরার কথা বলা হয়েছে।গীষ্মকালে আইসল্যান্ডের আকাশে কখনো সূর্য অস্ত যায় না।)

‘তাহলেতো আমাদের অপেক্ষা করতে হবে’, জন বলল।

তেইশ

লাইব্রেরির টেবিলের উপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কয়েকটা বই।প্রতিটি বই সোমালিয়ার উপড় লেখা।এক এক করে বইগুলোর পাতা উল্টে দেখছে রিনক।সকল বই ঘাঘাটি করে নতুন কিছু আর জানতে পারল না ও।বইগুলো সব আগের জায়গায় রেখে রিনক বেরিয়ে গেল ব্যাক্তিগত লাইব্রেরি থেকে।মি.পিটার সনের কাছ থেকে ওনার লাইব্রেরির কার্ডটা নিয়ে বেরিয়ে পরল সে।কাছেই একটা পাবলিক লাইব্রেরি রয়েছে।লাইব্রেরিতে ঢুকতেই রিনকের দিকে এগিয়ে এল লাইব্রেরিয়ান।

‘হ্যাল্লো খোকা বল তোমাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?’
রিনক পকেট থেকে পিটার সনের কার্ডটা বের করে লাইব্রেরিয়ানকে দেখিয়ে বলল,’আমি মি.পিটার সনের ওখানে এসেছি।আঙ্কেলই দিল কার্ডটা।আসলে সোমালিয়ার উপড়ে আপনাদের যত বই আছে সেগুলো একবার দেখতে চাই।’

লাইব্রেরিয়াণ রিনককে সোমালিয়ার উপড় লেখা ৫ টা বই এনে দিল।বইগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করার সময় হঠাৎ একটা বইয়ের পাতায় চোখ আটকে গেল তার।এক চমৎকার তথ্য রয়েছে সোমালিয়ার উপড়।এ বইটা রেখে বাকী বইগুলো ফেরত দিয়ে বাড়ীতে চলে এল সে।এরপর বইটার প্রথম থেকে পড়া আরম্ভ করল।

‘হ্যা এবার সময় হয়েছে চল’, পাহাড়ের পেছনে এসে দাড়ালে জাহিদ আর জন। সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পরেছে কিছুক্ষণ আগে।সময় কাটানোর জন্য ওরা এতক্ষণ এদিক ওদিক ঘুরোঘুরি করেছে।

‘দেখ দেখ’, চেচিয়ে উঠল জন।’পাহাড়ের ছায়া।’
জাহিদও দেখেছে ছায়াটা।লেকের পানিতে দেখা যাচ্ছে পাহাড়ের চূড়োর ছায়া।
‘বাক্সটা ওখানেই আছে’, দৃঢ় কণ্ঠে বলল জাহিদ।’সম্ভবত পানির নিচে।’

‘দাড়াও আমি নামছি’, পানিতে নেমে গেল জন ঘায়ের জামা -কাপড়সহ।ছায়াটা যেখানে পরেছে সেখানে গিয়ে ডুব দিল পানির নিচে।কিছুক্ষণ বাদে বোস করে পানির উপড় ভেসে উঠল জনের মাথা।

‘কিছু পাইনি জাহিদ’, চেচিয়ে বলল।
‘বালির নিচে খুজে দেখ।এতদিনে কয়েকফুট বালির নিচে চাপা পরেছে বাক্সটা।’

আবার ডুব দিল জন।কিছুক্ষণ বাদে হাসি মুখে উঠে পানি থেকে উঠে আসলো জন।হাতে রয়েছে পিতলের মাঝারি সাইজের একটা বাক্স।

‘চল এখুনি খুলে দেখি এটা’, বেশ উত্তেজিত দেখালো জনকে।
‘এত তাড়াহুড়ো কিসের খোকা’, পাশের একটা ঝোপ থেকে বেরিয়ে এল জেনাতুল সুইফ্ট।আর তার হাতে শোভা পাচ্ছে .৪৫ পিস্তল।

‘আ-আ-আপনি?’ পিস্তলের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলল জন।
‘হ্যা আমি’, কঠোর গলায় বলল জেনাতুল।’কেন চিন্তে পারছো না? ভালোয় ভালোয় বলছি গুপ্তধনটা আমায় দিয়ে দাও, তা না হলে’ হাতের পিস্তলটা নাচালো লোকটা।
‘এটা গুপ্তধন নয়’, শান্ত কণ্ঠে বলল জাহিদ।’গুপ্ত মেসেজ।’

জাহিদ কথাটা এত শান্ত গলায় কিভাবে বলল তা কিছুতেই বুঝতে পারছে না জন।বেশ অবাক লাগছে তার।চরম বিপদের মুহূর্তেও জাহিদ নিজেকে কিভাবে এত শান্ত রাখে সেটাই এখন সবচেয়ে বড় রহস্য তার কাছে।

‘আমাকে আর বোকা বানাতে পারবে না ‘, পাহাড় বিষেষজ্ঞ বলল।’তোমাদের সম্পর্কে আমার বেশ জানা হয়ে গিয়েছে।’

‘আমি’

‘চুপ’, জেনাতুল ধমকে উঠায় চুপ হয়ে গেল জাহিদ।’তোমাদের ভালোভাবে বলছিতো তাই দিচ্ছো না।সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাকাতে হয়।এ শেষবারের মত বলছি ওটা আমাকে দিয়ে দাও।’

একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলো দুই কিশোর।ওদের আর কিছু করার নেই।লোকটার কাছে পিস্তল আছে।তাছাড়া লোকটার হাবভাবও তেমন একটা সুবিধের মনে হচ্ছে না ওদের কাছে।গুপ্তধনের লোভে অন্ধ এখন লোকটা।বলা যায়না কখন কি করে বসে।তাই আর অযথা ঝুকি নেওয়ার চেষ্টা করল না গোয়েন্দা প্রধান।জনকে বাক্সটা দিয়ে দিতে বলল।কাপা হাতে জন বাক্সটা সামনে এগিয়ে দিল।প্রায় ছো মেরে সেটা জনের হাত থেকে নিয়ে নিল জেনাতুল।
‘এইতো ভালো ছেলে’, বাক্সের উপড় একবার হাত বুলালো সে।এরপর লোকটা বাক্সটা খোলার কাজে মন দিল।বেশ খারাপ লাগছে জনের।দাদার রেখে যাওয়া সম্পদ শেষ পর্যন্ত একটা বদমাইশ লোকের হাতে পরল।
একটা ছোটো তালা লাগানো বাক্সটার মধ্যে।সামান্য আঘাতেই ভেঙ্গে যাবে ওটা।

‘বাই বাই’, বলেই সামনে পা বাড়ালো জেনাতুল সুইফ্ট।হঠাৎ পাশের একটা ঝোপ থেকে আচমকা একটা লোক বেরিয়ে এসে ঝাপিয়ে পরল জেনাতুলের উপড়।তার হাত থেকে সিটকে বাক্সটা পরে গেল।লোকটা জেনাতুলকে নিয়ে সোজা মাটিতে পরে গেল।লোকটার দিকে পিস্তল তাক করল জেনাতুল।অমনি জুডোর একটা কায়দায় হাত থেকে পলকের মধ্যে পিস্তল টা ফেলে দিল লোকটা।শুরু হয়ে গেল দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি।কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ খন্ড যুদ্ধে হার মানতে হল জেনাতুলকে।মাটিতে রেখেই পকেট থেকে একটা হাত কড়া জেনাতুলের হাতে বিদ্যুৎ গতিতে পরিয়ে দিল লোকটা।একটা সিগণ্যাল দিতেই ঝোপ থেকে ১০ জন পুলিশ বেরিয়ে আসলো।

‘একে গাড়ীতে নিয়ে যাও, আমি আসছি’, পুলিশগুলোকে অর্ডার দিল লোকটা।দুজন পুলিশ অফিসার এসে জেনাতুলকে দুদিক থেকে ধরে নিয়ে চলল পাহাড়ের সামনের দিকে।

‘ধন্যবাদ তোমাদের’, ছেলেদের বলল লোকটা।ত্বরুণ বয়সের এ অফিসারটাকে কোথাও যেন দেখেছে জাহিদ।আরও ভালো করে লক্ষ্য করতেই সে চিনতে পেরে গেল লোকটাকে।এতো ঐ লাল স্যূটওয়ালা।

‘আপনিইতো বাংলাদেশ থেকে আমাদের পিছু নিয়েছেন তাই না? সে লাল স্যূট পরিধান করা।’,বলল জাহিদ।
‘ঠিক ধরেছো’, হেসে বলল ত্বরুণ অফিসার।’আমিই নিয়ে ছিলাম।’
‘কিন্তু কেন?’,জনের প্রশ্ন।

‘আসলে আমি যখন বাংলাদেশে গিয়েছিলাম তখন তোমাদের সাইফুল আঙ্কেল আমাকে তোমাদের উপড় একটু চোখ রাখতে বলেছেন।’

‘এ সাইফুলটা আবার কে?’

‘তুমি চিনবে না জন’, জাহিদ বলল।’চীফ সাইফুল,আমাদের আঙ্কেল।তো প্রথম দিন আপনি ট্যাক্সি দিয়ে আমাকে মারতে চেয়েছিলেন কেন? তার উপড় আবার গুলিও চালিয়েছেন।’

নিরব হয়ে লোকটা জাহিদের দিকে তাকিয়ে রইলো।এ ছেলেটাকে যে কি বলবে সেটাই বুঝতে পারছে না।
‘আসলে তোমাদের নামে এত প্রশংসা শুনেছি তাই তোমাদের সাহসটা একটু পরিক্ষা করে দেখতে চেয়েছিলাম’
‘আপনার এ পরিক্ষার জন্য যদি ওদের কিছু হয়ে যেত?’, রেগে গেল জন।

‘তা অবশ্য ঠিক’, মাথা নাড়লো লোকটা।’কিন্তু হয়নি যখন তখন আর বলে লাভ নেই।বাই দ্যা ওয়ে আমি একজন ইন্টারপোল অফিসার।আর যে লোকটাকে ধরেছি সে ইন্টারনেশন্যাল ক্রিমিনাল।খুব সাংঘাতিক মানুষ।’
হাত ঘড়ির দিকে তাকালো অফিসার।

‘আমাকে এবার যেতে হবে বয়েস,গুডলাক।’, পা বাড়ালো অফিসার।

‘দাড়ান’, পেছন থেকে ডাক দিল গোয়েন্দা প্রধান।’আপনিই গতকাল সূড়ঙ্গে ঢুকেছিলেন আমাদের পিছনে তাই না?’
‘তুমি জানলে কি করে?’

‘আপনার জুতো দেখে।আপনার জুতোতে যে কালিটা লেগে রয়েছে সেটা গতকাল আমি ঐ সূড়ঙ্গের মেঝেতে দেখেছিলাম।’

নিজের জুতোর তিকে তাকালো অফিসার।সত্যিই একটা কালো কালি লেগে রয়েছে তার জুতোতে।

‘নাহ মানতেই হবে তুমি গোয়েন্দা’, বেশ অবাক দেখালো অফিসারকে।’জেনাতুলকে ধরতেই ওখানে গিয়েছিলাম।কিন্তু পাইনি।সূড়ঙ্গ দেখে ভেবেছিলাম ওখান দিয়ে পালিয়েছে বেটা।ওকে বয়েস আসি তাহলে।’

দ্রুত পাহাড়ের বাকে হারিয়ে গেল লোকটা।পরে থাকা বাক্সটা নিয়ে বাড়ীর দিকে রওনা দিল ওরা।

তেইশ

‘তাহলে বেটা হাত ফসকে বেড়িয়ে গেল?’, আফসোস করল গোয়েন্দা সহকারি।’আমার কয়েকটা কিল বেটার পিঠের উপড় বসিয়ে দেওয়ার ইচ্ছাটা আর পূরণ হল না।’
‘কে বলেছে ফসকে বেড়িয়ে গেছে?’,জন বলল।’বেটাকেতো ইন্টার ন্যাশনাল পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে।’
কিছুক্ষণ আগে বাক্সটা নিয়ে বাড়ী ফিরেছে জাহিদ আর জন।জন ডেভিল মাউন্টেনে থাকতেই বাক্সটা খোলার প্রস্তাব দিয়েছিল কিন্তু জাহিদ তাতে রাজি হয়নি।রিনককে ফেলে এ কাজ করার সায় দেয়নি তার মন।তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রিনককে নিয়েই বাক্সটা খুলবে।বাড়ীতে এসেই ডেভিল মাউন্টেনে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা রিনককে খুলে বলেছে ওরা দুজন।

‘ঐ একই কথা’, হাত নেড়ে বলল রিনক।’পুলিশের হাতে পরা মানে আমাদের হাত থেকে ফসকে যাওয়া।’ ‘তবে এটা ভালোই হয়েছে’,জাহিদ বলল।’আমাদের কাজে বাধা দেওয়ার মত আর কেউ নেই।’ ‘কে বলেছে নেই? ডেনি আর ডেভিড যে আমাদের পেছনে পরে রয়েছে সেটা কি ভুলে গেলে নাকি?’ ‘না ভুলিনি।তবে আমাদের পেছনে পরলে কাজে বাধা দিত

কিন্তু তা দেয়নি।শুধুমাত্র জনের দাদার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছে ওরা।’ একমুহর্ত চুপ থেকে কিছু একটা ভাবল গোয়েন্দা প্রধান।এরপর আবার বলল,’তুমি নতুন কিছু জানতে পারলে?’

‘পেরেছি মানে?’, চেচিয়ে উঠল রিনক।’আলবাদ পেরেছি।দাড়াও আমি একটু আসছি।’

উঠে চলে গেল রিনক।লাইব্রেরির দরজা খুলে বেড়িয়ে গেল সে।কিছুক্ষণ পর হাতে মোটা একটা বই নিয়ে ফিরে এল সে।বইটা ধপাস করে টেবিলের উপড় রেখে দ্রুত নিজের চেয়ারে বসে পরল।মি.পিটার সনের ব্যাক্তিগত লাইব্রেরিতে বসে রয়েছে তিন কিশোর।আলোচনা চলছে তিনজনের মধ্যে।

‘তোমার মনে আছে জাহিদ’,রিনক বলল।’ডেনো আর ডেভিড সোমেলিয়ার কথা বলছিল? এ বইটা সে সোমেলিয়ার উপড় লেখা।’

বইটা নিজের দিকে টেনে নিল জাহিদ।খুলে পৃষ্ঠা উল্টাতে লাগল।

‘হ্যা এখানেই থামো।’ রিনক নির্দেশ দিল।পৃষ্ঠা উল্টানো বন্ধ করে দিল গোয়েন্দা প্রধান।তার চোখ আটকে রয়েছে শিরোনামের উপড়।শিরোনামে লেখা “রাজা জর্জ ভার্ণারের পতন”

‘১৯৭০ এর দিকের কথা’, লেকচার দিতে আরম্ভ করল রিনক।’তখন সোমেলিয়ার রাজা ছিলেন রাজা জর্জ ভার্ণার।তারও আগে রাজা ছিলেন রাজা জর্জ ভার্ণারের বাবা রাজা অ্যালেন ভার্ণার।তখন রাজা অ্যালেন ভার্ণারের নির্দেশ অনুযায়ি তখনকার সময়ের সবচেয়ে ভালো শিল্পিদের ডাকা হল।এরপর ঐ শিল্পিদের দিয়ে রাজা অ্যালেন ভার্ণার তৈরি করালেন একটা সর্ণ ও হিরের রাজকিয় মুকুট যেটা পরবর্তিতে রাজা জর্জ ভার্ণার পেয়েছে উত্তরাধিকার সূত্রে।বড় একটা নিশ্বাস নিল রিনক।এরপর আবার বলতে আরম্ভ করল সে, ‘রাজার এ মুকুট রক্ষার দায়িত্ব ছিল

ডারউইনের।ডারউইন রাজ সভারিই একজন সদস্য ছিলেন।আর সেনাপতি ছিলেন ডিউক।একদিন ডিউক রাজা জর্জ ভার্ণারের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে নিজেকে রাজা বলে দাবি করে বসে।ডিউক অত্যান্ত অত্যাচারি থাকায় কেউ তার বিরুদ্ধে যেতে সাহস পায়নি।কিন্তু তিনজন ডেনি, ডেভিড আর ডিগ ভার্ণার ডিউকের বিরুদ্ধে যায়।রাজাকে অনেক ভালোবাসত এ তিনজন।একদিন সকালে ডারউইন কাউকে কিছু না বলে গায়েব হয়ে যায় তার সাথে রাজকিয় মুকুটটা।ঐ মুকুট ছাড়া বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি ডিউক।।তারও পতন ঘটে।

‘হু বুঝলাম’ বইটা বন্ধ করল জাহিদ।’কিন্তু পরবর্তিতে কি হয়েছে ডিউকের সে বেপারেতো এ বইয়ে আর কিছু লিখেনি।

‘আমিও আর তেমন কিছু জানতে পারিনি।তবে দেশটায় এখন সরকার ব্যবস্থা চালু হয়েছে।’
‘এ থেকে কি বোঝা যায়?’, জনের প্রশ্ন।

‘তোমার দাদাই হল সে ডারউইন যে মুকুট নিয়ে গায়েব হয়ে ছিল।’, জাহিদ বলল।’আর তাই ডেনি আর ডেভিড আমাদের পেছনে পরেছে।

‘আর এ মেসেজটার মাধ্যমে তোমার দাদা সে মুকুটের কথাই বলেছে’ রিনক বলল। ‘হু বুঝলাম’, মাথা নাড়ালো জন।’তবে আর দেড়ি কেন? চল বাক্সটা খুলে ফেলি।

‘আরে তাইতো’, রিনক বলল।’বাক্সটার কথাতো বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলাম।চল চল খুলে ফেলি আমার আর তর সইছে না।’

রিনকের কথায় হেসে উঠল বাকী দুজন।এরপর তিনজন মিলে বাক্স খোলায় মন দিল।

‘কিভাবে খুলবো তালাটা?’, চিন্তিত হয়ে বাক্সের তালাটার দিকে তাকিয়ে রইলো জন।’দেখেতো কোনো সাধারণ তালা মনে হচ্ছে না।’

‘হু আমারও’, সায় জানালো জাহিদ।

‘দাড়াও আমি গিয়ে হাতুরি নিয়ে আসছি।’, লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে গেল রিনক।কিছুক্ষণ পর একটা মোটামুটি সাইজের হাতুরি নিয়ে ফিরে আসলো।

‘তোমরা সর’, রিনক বলল।’আমি দেখছি চেষ্টা করে।’
তালাতে আঘাত করার জন্য হাতুরি উপরে উঠালো সে।

‘দাড়াও’, জাহিদ বলল।মাঝ পথে এসে থেমে গেল রিনক।ধীরে ধীরে নামিয়ে নিল হাতুরি।’এটা লাইব্রেরি।এখানে শব্দ করাটা ঠিক হবে না।তারচেয়ে বরং হেডকোয়াটারে চল।সেখানে কেউ বাধা দেবে না।’

কথাটা মনে ধরল বাকী দুজনের।বাক্সটা নিয়ে ওরা চলে এল ওদের অস্থায়ি হেডকোয়াটারে।হেডকোয়াটার বলতে শুধু মাত্র একটা বেঞ্চ।মি.পিটার সনের বাড়ীর পেছনে একটা বাগানের মধ্যে পাতা রয়েছে বেঞ্চটা।জায়গাটা নিরিবিলি হওয়ায় এটাকেই দুইগোয়েন্দা ওদের হেডকোয়াটার হিসেবে ব্যবহার করছে।

‘হ্যা এবার চেষ্টা করে দেখ’, তালা ভাঙ্গার অণুমতি দিল জাহিদ।পূনরায় হাতুরি মাথার উপরে তুলল রিনক।তার বিশাল পেশিবহুল হাতের সমস্ত শক্তি দিয়ে আঘাত হানল ছোট্ট তালাটার উপর।কিন্তু কিছুই হল না ওটার।আবার ক্ষুদে তালাটার উপর আঘাত হানল রিনক।কিন্তু এবারও কিছু হল না ওটার।ওটা যেন এক জীবন্ত তালা।জেদ ধরে বসে রয়েছে বাক্সের ঘায়ের উপর।এরপর একের পর এক ক্ষুদে তালাটার উপর আঘাত হানতে লাগল।কিন্তু এত আঘাত করার পরও তালাটায় কিঞ্চিৎ পরিমাণও আচর লাগেনি।

‘আমি আর পারব না’, ধপাস করে বেঞ্চে বসে পরল রিনক।ঘামে পুরো শরীর ভিজে গিয়েছে।এ শীতের মধ্যে রিনকের ঘাম দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে সে কঠোর পরিশ্রম করেছে।

‘এভাবে যখন হয়নি তখন আমাদের অন্য রাস্তা বের করতে হবে’, জাহিদ বলল।’কিন্তু কিভাবে?’। গভীর চিন্তায় ডুব দিল সে।ক্ষুদে একটা তালা এত শক্ত কি করে হতে পারে যে রিনকের মত পেশিবহুল একটা ছেলের হাতুরির

আঘাতেও কিছু হয়নি? কানের উপরে মাথায় মৃদু টোকা দিতে লাগল সে।কিছুক্ষণ বাদে হঠাৎ উজ্জল হয়ে উঠল তার মুখ।

‘রিনক’, জাহিদ বলল।’ সুচোলো কিছু একটা হলেও খোলা যাবে এটা।’

‘কিভাবে?’, অবাক হয়ে জাহিদের দিকে তাকালো রিনক।জনও অবাক হয়েছে।যেখানে একটা হাতুরি কিছু করতে পারছে না সেখানে একটা সুচোলো জিনিস কি করে খুলবে এ তালা?

‘দাড়াও আমি আসছি’, ওখান থেকে চলে গেল গোয়েন্দা প্রধান।কিছুক্ষণ বাদে একটা চিকন বাটাল নিয়ে ফিরে আসলো সে।

‘আমি যখন বলব তখন তুমি এটার উপর আঘাত করবে।’, চিকন বাটালটা তালার চাবি ঢুকানোর জায়গাটায় ভালো করে ধরল জাহিদ। ‘আঘাত কর’, নির্দেশ দিল সে।সাথে সাথে রিনক হাতুরি তুলে আঘাত করল বাটালটায়।পলকের মধ্যে পিতলের নিরেট তালাটা মধ্যখান দিয়ে চিরে দুটুকরো হয়ে ছিটকে পরল।

‘এতো দেখছি পুরো ম্যাজিক’, জন বলল।’এত সহজেই খুলে ফেললে কি করে এটা?’
‘আরে এর জন্যইতো ও প্রধান’, রিনক বলল।’আর আমি ওর সহকারি।’

ওদের কথার দিকে মন নেই গোয়েন্দা প্রধানের।বাক্সের ঢালাটা ধীরে ধীরে খুলছে সে।শ্বাস বন্ধ করে সেটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে বাকী দুজন।এখনি পাওয়া যাবে রাজকিয় মুকুটের সন্ধান।জাহিদ পুরো খুলে ফেলল বাক্সটা।এক টুকরা ভাজ করা।হলদে কাগজ ওকি দিচ্ছে ওটার ভেতর থেকে।কাগজটা হাতে নিল জাহিদ।ভাজ খুলে মেলে ধরল বেঞ্চের উপর।কি লেখা আছে তা দেখার জন্য দুপাশ থেকে ঝুকে আসলো জন আর রিনক।
‘আরিবাপরে’, রিনক বলল।’এটা আবার কি লিখলো?’

চব্বিশ

‘আবারও আরেকটা ধাধা!’, হতাশ দেখালো জনকে।এমনটা মোটেও আশা করেনি সে।প্রথমবারতো একটা ধাধা সমাধান করতে গিয়ে কতকিছু করতে হয়েছে ওদের।সে ভেবেছিল তার দাদা দ্বিতীয় বাক্সটায় সরাসরি বলে যাবে গুপ্তধন কোথায় রাখা রয়েছে।

‘হু ধাধাটা দেখে বেশ জটিলই মনে হচ্ছে।’, গাল চুলকালো গোয়েন্দা প্রধান।মনে মনে আরেকবার পড়তে লাগল ধাধাটা, “রহস্য ভান্ডার,সেতো অনেক বড়।যদি পার তার রহস্য উদঘাটন করতে তবেই পাবে দেখা গুপ্তধনের।”
আরও কিছুক্ষণ জাহিদ ভ্রু কুচকে লেখাটার দিকে তাকিয়ে থাকার পর বলল, ‘কিছু একটা বুঝতে পারছি এ বেপারে’ আবার চুপ হয়ে গেল সে।

‘জাহিদ’,রিনক বলল।’এক কাজ করা যাক।আমি আর জন গিয়ে দেখে আসছি ডেনি আর ডেভিড বেটারা কি করছে আর তুমি এটা সমাধানের চেষ্টা কর।বলাতো যায় না জেনাতুলের মত হঠাৎ করে উড়ে এসে ঝুরে বসতে পারে।’
বোঝাই যাচ্ছে তীরে এসে তরি ডোবাতে রাজি নয় সহকারি গোয়েন্দা।তাই আগ থেকেই সতর্ক হতে চাচ্ছে।
‘ঠিকাছে যাও’,

গ্যারেজ থেকে রিনক তার সাইকেল বের করে জনকে নিয়ে রওনা দিল গোস্ট হাউজের দিকে।বেশ বেলা হয়ে গিয়েছে।এতক্ষণ ধরে ওরা আলোচনায় এতই মগ্ন ছিল যে কখন যে সময় কেটে গিয়েছে তা টেরই পায়নি ওরা।
‘আরেকটু দ্রুত চালাও’, নির্দেশ দিল রিনক। ‘লান্সের সময় হয়ে আসছে।’

আরও জোরে প্যাডেল মারতে লাগল দুজনে।১৫ মিনিটের মাথায় ওরা পৌছে গেল গোস্ট হাউজের সামনে।সাইকেল দুটো একটা গাছের নিচে রেখে গেটের সামনে এসে দাড়াল।

‘দেখেতো মনে হচ্ছে কেউ নেই’, বাড়ীর দিকে তাকিয়ে চিন্তিত স্বরে বলল জন।
‘আমারও তাই মনে হচ্ছে।’, রিনক সায় জানালো। ‘তবে ভেতরে গিয়ে দেখা দরকার।চল।’

বাড়ীর বিশাল গেটটা হালকা একটু ফাঁক করে তা দিয়ে বাড়ীর ভেতর ঢুকে পরল তারা।পূর্বের ন্যায় এবারো রিনক জনকে নিয়ে বাড়ীর পেছনের দিকের ঢালু বেয়ে উঠে আসলো বারান্দায়।বারান্দার টেলিস্কোপটা আর চোখে পরল না ওদের।টেলিস্কোপটা যেখানে ছিল এখন সেখানে সেটা নেই।

‘ভাগল নাকি বেটারা?’, দরজার দিকে এগিয়ে গেল রিনক।হালকা একটা ধাক্কা দিতেই হালকা সুর তুলে খুলে গেল দরজা।সাবধানে ভেতরে ওকি দিল সে।কেউ নেই।বারন্দায় জনের কাছে ফিরে এল ও।

‘পালিয়েছে বেটারা’, বাতাসে থাবা মারল রিনক।

‘যাক ভালোই হল তাহলে’, জন বলল।’আমাদের কাজে বাধা দেওয়ার মত আর কেউ রইলে না।’
ভূতুরে বাড়ী থেকে বেরিয়ে এল ওরা।সাইকেল নিয়ে আবার রওনা দিল বাড়ীর দিকে।

গভীর চিন্তায় মগ্ন গোয়েন্দা প্রধান।লেখাটার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রয়েছে সে।ভাবছে কি হবে এটার সমাধান।
“রহস্য ভান্ডার, সেতো অনেক বড়।যদি পার তার রহস্য উদঘাটন করতে তবেই পাবে দেখা গুপ্তধনের।”

আরেকবার ধাধাটা পড়ল জাহিদ।রহস্য ভান্ডার বলতে কি বোঝাতে চেয়েছেন ডার উইন অরুপে ডিগ ভার্ণার।ভাবছে সে।তাও আবার বড়?

দরজায় নক করার আওয়াজ হল।ভেতরে প্রবেশ করল জন আর রিনক।
‘তুমি এখানে’, জন বলল।’আর আমরা তোমাকে পুরো বাড়ী খুজছি।তো আবার লাইব্রেরিতে এলে কেন?’
‘সুবিধার জন্য ‘, জাহিদ বলল।’এখানে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারব।এখন বল ঐ দুজনের খবর কি?’
‘ভেগেছে বেটারা’,চেয়ার টেনে বসে পরল রিনক।’আমরা যাওয়ার আগেই সরে গেছে।’

‘হু’, মাথা দোলালো জাহিদ।’তাহলেতো’ থেমে গেল সে।হঠাৎ করে মনটা যেন কেমন খচখচ করে উঠল।এরকম হঠাৎ উদাও হয়ে গেল কেন লোকদুটো? বেপারটার মধ্যে নিশ্চই কোনো একটা ঘাপলা আছে কিন্তু কি সেটাই হল এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

‘কি হলো চুপ হয়ে গেল কেন?’, রিনক জিজ্ঞাসা করল।
‘অ্যা,ওহ না এমনি’, জাহিদ বলল।’জন তোমার বাবার সাথে একবার দেখা করতে হবে আমাদের।’

‘কেন?’
‘আরে ভুলে গেলে নাকি মেসেজটা তোমার বাবার জন্য।হয়তো ওনি এ ধাধার মানে জানে।’.
‘তাহলে কাল সকালে চলে এস আমাদের বাড়ীতে’।
‘তোমরা কিন্তু একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা ভুলে গেছ’, রিনক বলল।
‘কি?’, অবাক হল জাহিদ।
‘এখন লাঞ্চের সময়’।

পচিশ

‘আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না’, চিন্তিত স্বরে বললেন জনের বাবা মি. ফেরেন্টি সন। ‘একটু মনে করে দেখুন আঙ্কেল’, রিনক বলল।’আপনার বাবা মেসেজটা আপনার জন্যই রেখে গিয়েছে।’ দ্বিতীয় ধাধাটা মনে মনে আরও কয়েকবার পড়লেন ফেরেন্টি সন।চুপ করে রইলেন কিছুক্ষণ।

‘সরি বয়েস’, মি.ফেরেন্টি বললেন।’এটার সমাধান আমি জানিনা।’ ঘড়ির দিকে তাকালেন তিনি।অফিসে যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে।ছেলেদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি বেরিয়ে গেলেন বাড়ী থেকে।আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই দুইগোয়েন্দা জাহিদ আর রিনক চলে আসে জনদের বাড়ীতে।ধাধাটা জনের বাবাকে দেখিয়েও কোনো লাভ হল না।

‘রহস্যের শেষের দিকে এসেই আবার থমকে গেলোম’, সোফার উপর ধপাস করে বসে গেল রিনক। ‘এবার কাজটা বেশ কঠিন হয়ে যাবে তোমাদের জন্য’, জন বলল।’কি পারবে এ রহস্য সমাধান করতে?’ ওদের কথার দিকে মন নেই জাহিদের।ঘন ঘন মাথায় মৃদু টোকা মারছে।গভির চিন্তায় মগ্ন।ধাধার সমাধান নিয়ে ভাবছে।রিনক তার পেটে একটা গুতো মেরে বলল,’এই তুমি কিছু বলছো না কেন? কি করবে এখন।আঙ্কেলতো কিছুই বলতে পারল না।’

‘যা করার আমাদেরই করতে হবে’, চিন্তার সাগরের থেকে ফিরে এল জাহিদ।’আমাদেরই এ রহস্যের সমাধান করতে হবে’

‘কিভাবে করবে?’,জনের প্রশ্ন।’বাবাতো কিছুই বলতে পারল না।’

‘যেভাবেই হোক আমি এর সমাধান করবই’, দৃঢ় কণ্ঠে গোষণা দিল গোয়েন্দা প্রধান।’জন তোমার দাদার লাইব্রেরিটা একবার দেখতে চাই’

জন ওদের নিয়ে দোতালায় চলে আসলো।ছোট কটেজটা ধরে কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে বায়ে মোড় নিল ওরা।আরও কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে একটা অন্ধকার মত রুমে প্রবেশ করল।সুইচ টিপে আলো জ্বালিয়ে দিল জন।আলোকিত হয়ে উঠল অন্ধকার রুমটা।সে সাথে ছেলেদের চোখের সামনে ভেসে উঠল ৫ টা বড় বড় বুকশেল্ফ।বুকশেল্ফগুলো চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে।রুমের মাঝখানে রয়েছে ছোট্ট একটা টেবিল আর একটা চেয়ার।বালুর স্তর দেখে বোঝা যায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়নি সেগুলো।বুকশেল্ফগুলোরও একি অবস্থা।একটার দিকে এগিয়ে গেল জাহিদ।তাক থেকে একটা বই নামিয়ে বালু ঝেড়ে সেটা খুলে দেখতে লাগলো।

‘দীর্ঘদিন ধরে এখানে কেউ আসেনি’, জন বলল।’তাই এমন অবস্থা হয়ে রয়েছে।’

প্রতিটি বুকশেল্ফ থেকে বই নামিয়ে দেখছে জাহিদ।রিনকও দাড়িয়ে নেই।কোনো সূ্ত্র পাওয়া যায় কিনা সে আশাতে পুরো রুমটাতে তীক্ষ্ণ নজর বুলাচ্ছে।হঠাৎ দরজার কিছুট দূরে একটা জায়গায় নজর আটকে গেল তার।এগিয়ে গেল সেদিকে।

‘জাহিদ’, চেচিয়ে উঠল রিনক।’দেখে যাও এটা কি’
দ্রুত রিনকের কাছে চলে এল জাহিদ।জনও চলে এল।একটা জুতোর ছাপ রয়েছে মেঝেতে।ধুলোবালির স্তরের উপর স্পষ্ট ছাপটা।সেটা দেখেই চেচিয়ে উঠেছে রিনক।

‘ছাপটা বেশি পুরোনো নয়’, জাহিদ বলল।’দিন দুয়েক আগের হবে।’
‘তারমানে এখানে আমাদের আগে অন্য কেউ এসেছে’, রিনক বলল।
‘হু’,মাথা দোলালো জাহিদ।’সেটাই মনে হচ্ছে।’

‘কিন্তু কি করে সম্ভব এটা?’, জন বলল।’দীর্ঘদিন ধরেতো এখানে কেউ আসেনা।আর তাছাড়া দরজাতো সবসময় তালা লাগানো থাকে।’

‘সেটা খুব শ্রিঘ্রই জানা যাবে’,দরজার দিকে এগিয়ে গেল রিনক।দরজার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একবার চোখ বুলালো।এরপর তীক্ষ্ণ নজর দিয়ে পরিক্ষা করতে লাগল পুরো দরজাটা।চিরুনি তল্লাসি করেও কিছু পাওয় গেল না দরজায়।এবংকি একটা আচর পর্যন্তও পাওয়া যায়নি।

‘নাহ কিছু নেই’, হতাশ হয়ে ফিরে এল রিনক।
‘তাহলে কি ছাপটা কি ভূতের নাকি’, বলল জন।

‘ভূত’, ঢোক গিলল রিনক।চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে দেখল কোনো ভূত আছে কিনা।’ভূতেরাও কি জুতো পরে নাকি? আমিতো শুনেছি ভূতেদের পা উল্টো দিকে থাকে।’

কিছুক্ষণের মধ্যেই পিন পতন নিরবতা নেমে এল রুমটায়।কারও মুখে কোনো কথা নেই।গভীর চিন্তায় মগ্ন গোয়েন্দা প্রধান।কীভাবে এখানে ঢুকল এ জুতোর ছাপের মালিক।আরও একটা চিন্তা চলছে তার মাথায়।দ্বীতিয় ধাধা।”রহস্যভান্ডার,সেতো অনেক বড়।যদি পার এর রহস্য উদঘাটন করতে তবেই পাবে দেখা গুপ্তধনের।”

লাইব্রেরির প্রতিটি বুকশেল্ফ চেক করে দেখেছে জাহিদ।প্রতিটি শেল্ফ এডভেঞ্চার আর রহস্য গল্পের বইয়ে পরিপূর্ণ।জনের দাদা যে কতটা রহস্যপ্রেমি ছিল তা এ লাইব্রেরি দেখেই বোঝা যায়।রহস্যে ঘেরা লাইব্রেরি থেকে বেরোনোর সময় হঠাৎ করে কটেজে কারও পায়ের শব্দ হল।চট করে লাইব্রেরিতে আবার ঢুকে পরল ওরা।শব্দটা ধীরে ধীরে এদিকেই এগিয়ে আসছে।দরজার পাশে দাড়িয়ে কান পেতে রইলো তিনকিশোর।হঠাৎ লাইব্রেরির দরজার একেবারে কাছে এসে থেমে গেল শব্দটা।ধুকধুক করছে ছেলেদের বুক।হয়তো কেউ গুপ্তধনের খবর পেয়ে ওদের ধরার জন্য এসেছে।কিছুক্ষণ বাদে আওয়াজটা একেবারে দরজার সামনে শুনা গেল।নিশ্বাসও ফেলতে ভয় করছে ছেলেদের।যদি নিশ্বাস নেওয়ার শব্দ শুনে ফেলে লোকটা তাহলে ওদের বিপদ হতে পারে।কিছুক্ষণ বাদে দরজার সামনে থেকে সরে যেতে লাগল শব্দটা।একটা সময়ে আর শুনা গেল না।ছেলেরা যেন হাপ ছেড়ে বাঁচল।

‘আরিবাপরে’, রিনক বলল।’আরেকটু হলে হার্টঅ্যাটাক করে ফেলতাম’
‘কে ছিল লোকটা?’, জনের প্রশ্ন।

‘বোধহয় এ জুতোর ছাপের মালিক।’, রিনক বলল।’নিশ্চই কোথাও লুকিয়ে ছিল এতক্ষণ।
‘ঠিক ধরেছো তোমরা’, একটা বুকশেল্ফের পেছন থেকে বেরিয়ে এল জেনাতুল সুইফ্ট।’আমিই এ জুতোর ছাপের মালিক।’

ছাব্বিশ

আচমকা জেনাতুলের আগমন একেবারে হতভম্বব করে দিয়েছে ছেলেদের।কারও মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।

‘আ-আপনি এখানে কি করে?’, তোতলাতে লাগল জন।’আপনাকে না পুলিশে নিয়ে গিয়েছিল।’
‘তাতো বটেই’, হেসে বলল জেনাতুল।’কিন্তু তোমাদের সে লাল স্যূট ওয়ালা অফিসার আমাকে আটকে রাখতে পারেনি।এটা দিয়ে শেষ করে দিয়েছি।’, লোকটা পকেট থেকে তার বিখ্যাত. ৪৫ পিস্তলটা বের করে হাতে নিল।
‘কি,আপনি ওনাকে মেরে ফেলেছেন?’, জ্বলে উঠল রিনক।পরলে এখনি খতম করে দিত লোকটাকে।

‘এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই’,বলল জেনাতুল।’আমার সম্পর্কে নিশ্চই জানা হয়ে গেছে তোমাদের।এসব কাজ আমার জন্য কিছুই না’, কঠোর হয়ে উঠল লোকটার চেহারা।’এবার তোমাদেরও একই হাল করব যদি এটা না বল গুপ্তধন কোথায়।’

‘গুপ্তধন এখনো পাইনি’, পিস্তলের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলল জন।
‘তোমরা মিথ্যে কথা বলছো’, গর্জে উঠলো জেনাতুল।
‘আমরা মিথ্যে বলছি না’, শান্ত কণ্ঠে বলল জাহিদ।জাহিদের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকালো সে।
‘প্রথম থেকেই তোমার চোখে একটুও ভয় দেখিনি।তাহলে তোমাকে দিয়েই শুরু করি।’
পিস্তল জাহিদের দিকে তাক করল লোকটা।টিগারে চাপ বাড়তে লাগল ধীরে ধীরে।

বিদ্যূৎ খেলে গেল রিনকের শরীরে।একলাফে গিয়ে পরল লোকটার উপর।আচমকা হামলা করায় টাল সামলানোর সময় পেলনা জেনাতুল।ছিটকে হাত থেকে পরে গেল পিস্তল।আটার বস্তার মত মেঝেতে ধপাস করে পরে গেল লোকটা।মেঝেতে ফেলে দিয়েই ক্ষ্রান্ত হল না সে।।লোকটার নাক বরাবর একটা কষে ঘুষি লাগালো।আউক করে নাক চেপে ধরল জেনাতুল।এ সুযোগে আরেকটা ঘুষি বসিয়ে দিল পেটের উপর।এমন কারও সাধ্য নেই রিনকের ঘুষি খেয়ে আর ঠিক থাকতে পারে।লোকটার বেলাও তাই হল।এবার ঘুঙিয়ে উঠল লোকটা।এক হাতে নাক চেপে রাখল আরেক হাতে পেট।যেই না জেনাতুল পেট ধরে উল্টালো অমনি তার পিঠের উপর কয়েকটা কিল বসিয়ে দিল রিনক।এবার লোকটার গলা দিয়ে অস্ফুট একটা শব্দ বেরিয়ে এল।আরও একটা কিল পিঠের উপর বসিয়ে দিতেই অজ্ঞান হয়ে গেল জেনাতুল।বন্ধুদের কাছে ফিরে এল রিনক।দাত সবগুলো বেরিয়ে গিয়েছে তার,’দিয়েছি ইচ্ছে মত কিল বসিয়ে বেটার পিঠে’।

রিনকের কান্ড দেখে অবাক হয়ে গেছে জন আর জাহিদ।এমন একটা সাংঘাতিক খুনিকে এভাবে রিনক ঘায়েল করে ফেলবে তা কল্পনাও করতে পারেনি ওরা।

দ্রুত নিজেকে সামলে নিল জাহিদ।
‘দড়ি আনো কুইক’, চেচিয়ে নির্দেশ দিল সে।’বেটাকে বানতে হবে।’

জন ছুটল নিচে দড়ি আনতে।কিছুক্ষণের মধ্যেই হাতে দড়ি নিয়ে হাজির হয়ে গেল সে।মুখে হাসি।রিনকের কান্ড দেখে বেশ মজা পেয়েছে সে।রিনকের ক্ষমতা সম্পর্কে আরও এক ধাপ জানতে পারল জাহিদ।কিছুক্ষণের মধ্যে তিনকিশোর দড়ি দিয়ে বেধে ফেলল জেনাতুলকে।এখন সে চাইলেও নড়তে পারবে না।

‘আমি গিয়ে পুলিশকে খবর দিচ্ছি।’, হাঁটা ধরল জন।কিন্তু দরজার ওপাশে যেতে পারল না।তার আগেই লাইব্রেরির রুমে প্রবেশ করল দুটো লোক।ডেনি আর ডেভিড।একজনের গড়ন বিশাল।আরেকজন ছোটখাট।

‘আপনারাও এসে গিয়েছেন তাহলে’, কথাটা জাহিদ এমন ভাবে বলল যেন সে লোকদুটোর জন্যই অপেক্ষা করছে।
‘তুমি জানতে আমরা আসব?’, ডেনির প্রশ্ন।

‘অবশ্যই’, জাহিদ বলল।’আপনারা মুকুট না নিয়ে যে ফিরে যাবেন না সেটা আমি হলফ করেই বলতে পারি।’
‘বাহ তুমি খুব বুদ্ধিমান ছেলে’,প্রশংসা করল ডেভিড।’তার মানে এতদিনে তোমরা এটাও যেন গেছ আমরা কে।ঐ দিনতো সোমেলিয়ার উপর গোটা দুয়েক বই পড়তে দেখলাম তোমার বন্ধুকে।’

‘লুকিয়ে আমাদের উপর চোখ রাখছিলেন’, বিড়বিড় করল রিনক।তারও সন্দেহ ছিল।মুকুট না নিয়ে লোকদুটো চলে গেছে এটা মানতে পারেনি রিনক।জনের বেপারটা সম্পূর্ণ আলাদা।সে ভেবেছিল রাস্তা থেকে সকল বাধা শেষ।
‘এবার লক্ষি ছেলের মুকুটটা আমাদের দিয়ে দাও’, ডেনি বলল।’ওটা আমাদের জাতিয় সম্পদ।ওটা পেলেই আমরা চলে যাব।’

‘মুকুটতো আমরা এখনো পাই নি’, রিনক বলল।’আরেকটা ধাধার মধ্যে আটকে গেছি।’
‘পাওনি’,অবাক হল ডেভিড।’কিন্তু মুকুটটা যে আমাদের লাগবেই।ডারউইন মুকুটটা নিয়ে পালানোর পরই সোমেলিয়ার লোকজন আমাদের উপর ক্ষেপে গিয়েছে।এটা এখন না নিলে আস্ত রাখবে না আমাদের।’
রিনক যখন লোকদুটোর সাথে ব্যাস্ত কথা বলায় তখন এ সুযোগে জাহিদ জনের কাছে তার দাদার মৃত্যুর কথা

জিজ্ঞাসা করল।মি.ডিগ ভার্ণারের মৃত্যু সম্পর্কে বেরিয়ে এল অদ্ভূদ এক তথ্য।জন বলল,’তার দাদা নাকি হঠাৎ করে এক রাতে গায়েব হয়ে যায় বাড়ী থেকে।এর দুদিন পর একাটা চিঠির মাধ্যমে দাদার মৃত্যুর সংবাদ পায় তারা।’
‘অদ্ভূদতো’, বিড়বিড় করল জাহিদ।’প্রথমে সোমেলিয়া আর তারপর বাড়ী থেকেই গায়েব হয়ে যান।’

লাইব্রেির রুমের ভেতর পিন পতন নিরবতা নেমে এল।কারও মুখে কোনো কথা নেই।ধাধার জটিলতা মাথা খারাপ করে দিয়েছে ডেনি আর ডেভিডের।

‘ধাধার সমাধান এখনো করতে পারনি তাহলে’, চিন্তিত স্বরে বলল ডেভিড।
মাথা নাড়ল রিনক।

‘আমি জানি মুকুট কোথায়’, শান্ত কণ্ঠে বলল গোয়েন্দা প্রধান।চট করে চার জোড়া চোখ ঘুরে গেল তার দিকে।
‘তুমি জান?’, অবাক হল জন।

উত্তর দিল না জাহিদ।সবচেয়ে বড় বুকশেল্ফের দিকে এগিয়ে গেল সে।তাক থেকে কিছু বই নামিয়ে দেয়ালে টোকা দিয়ে পরিক্ষা করতে লাগল।একটা জায়গায় ফাপা আওয়াজ হল।হাতুরি আনার নির্দেশ দিল ও।জন গিয়ে একটা হাতুরি নিয়ে আসল।সামান্য একটা আঘাত করতেই ভেঙে গেল দেয়ালের অংশটা।এদিকে সবাই অবাক হয়ে জাহিদের কান্ড দেখছে।একটা ছোট মত গুপ্ত শেল্ফ ওটা।ভেতরে হাত ঢুকিয়ে বের করে নিয়ে আসলো একটা রাজকিয় মুকুট।লাইটের আলো পরে মুকুটের হিরেগুলো চকচক করে উঠল।চোখ ধাধিয়ে দিল সবার মুখট থেকে প্রতিফলিত আলো।এখনো জ্ঞান ফেরেনি জেনাতুলের।সেদিকে কারও মনও নেই।চকচক করছে ডেভিড আর জেনাতুলের চোখ।

‘এটা আমাদের দিয়ে দাও’, মুকুট থেকে চোখ সরাতে পারছে না ডেভিড।’আমরা চলে যাই।’
‘আপনারা চাইলেও যে নিতে পারবেন না এটা’, বলল জাহিদ।
‘কেন?’
‘কারণ আপনারা আসল ডেনি ডেভিড নন।’
জাহিদের কথা শুনে হা হয়ে গেল জন আর রিনকের মুখ।
‘সেটা তুমি প্রমাণ করতে পারবে?’, শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল ডেভিড।

‘অবশ্যই’, জাহিদ বলল।’রাজা ডিউক যেদিন অবৈধ ভাবে সিংহাসনে বসে তখন ডেভিড, ডেনি আর ডিগ মানে জনের দাদা তার বিরুদ্ধে যান।যাতে করে সে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকতে না পারে সে জন্য পরদিন সকালেই জনের দাদা মুকুটটা নিয়ে পালিয়ে আসে আইসল্যান্ডে।আর সেদিনি ডিউক ডেনি আর ডেভিডকে হত্যা করে।আর আপনারা সে খবর কোনোমতে জানতে পেরে জনের দাদাকে অপহরণ করে নকল ডেনি আর ডেভিড সেজেছেন মুকুটটার লোভে।’

‘কি’, চেচিয়ে উঠল জন।’আমার দাদাকে এরা অপহরণ করেছে?’
‘হ্যা।আর তোমার দাদা এখনও জীবিত।কি ঠিক বলছিতো নকল ডেভিড?’

‘তুমি বেশ চালাক ছেলে’, ডেভিড বলল।’ঠিক ধরেছো জনের দাদা এখন আমাদের কাছেই।যদি মুকুট না পাই তাহলে জনের দাদা আর তোমরা কেউ বাঁচবে না।’

পকেট থেকে চট করে দুজন দুটো পিস্তল বের করে ওদের দিকে ধরল।
‘আরেকটা গেল কোথায়’, চেচিয়ে উঠল ডেভিড।’এখানেতো দুটো।’

আর ডেভিডের উত্তর পাওয়া গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই।একদল পুলিশকে নিয়ে রিনক ঘরে প্রবেশ করল।ওদেরর কথাবার্তার সময় সুযোগ বুঝে সরে পরেছিল রিনক যখন জানতে পারল লোকদুটো নকল।সোজা গিয়ে পুলিশকে নিয়ে এসেছে।কাজেই আর কিছু করার সুযোগ পেল না নকল ডেনি আর ডেভিড।ধরা পরল পুলিশের হাতে।

সাতাশ

এর দু-সাপ্তা পর।দুইগোয়েন্দা ওদের কেস “অপারেশন আইসল্যান্ড” এর ফাইল লিখে জমা দিল চিফ সাইফুলের কাছে।

‘বাহ দুইগোয়েন্দা আরও একটা রহস্য সমাধান করল তাহলে’, ফাইলের উপর থেকে মুখ সরালেন চীফ।’এখানে জাহিদ বেশ তীক্ষ্ণ বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে।কিন্তু জাহিদ তুমি এটা কি করে বুঝলে যে বুকশেল্ফের পেছনেই মুকটটা রয়েছে?’

‘ধাধার সমাধান থেকে’, জাহিদ বলল।’জনের দাদা রহস্যভান্ডারের কথা বলেছেন।আর লাইব্রেরি ভর্তি রহস্যেরর বইয়ে ভর্তি বুকশেল্ফ থেকে বড় রহস্যভান্ডার আর কি হতে পারে’।
‘তা বুঝলাম।কিন্তু লেকদুটো যে নকল সেটা বুঝলে কি করে?’

‘ওদের বয়স থেকে।যদি ওরা আসল ডেনি আর ডেভিড হত তাহলে তাদের বয়স ৬০ হত কিন্তু তাদের বয়স মাত্র ৩০।আর বাকী তথ্যটা আমি অন্ধকারে ঢিল ছুড়েছি।’

‘আর তা ঠিক নিশানাতেও লেগে গেল’, বলল রিনক।
‘তাহলে ডিগ ভার্ণার এখনো বেঁচে আছে।’, চীফ বললেন।’মুকুটটার কি হল?’
‘ওটা আইসল্যান্ডের জাতীয় যাদুঘরে দিয়ে দিয়েছে মি.ফেরেন্টি সন।ওটা এখন জাতীয় সম্পদ।’
‘হু বুঝলাম।আর জেনাতুলকে কি করেছে পুলিশ?’

‘তাকে আমেরিকার পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে আইসল্যান্ডের পুলিশ।’ রিনক বলল।এরপর চীফের সাথে দরকারি আরও দুয়েকটা কথা বলে বাড়ীর দিকে রওনা দিল দুইগোয়েন্দা।বাড়ীতে এসেই ওরা একটা চিঠি পেল।জন পাঠিয়েছে।চিঠিতে লেখা,”প্রিয় দুইগোয়েন্দা।তোমাদের প্রতি রইল আমার অশেষ ভালোবাসা।তোমাদের জন্যই আমি সঞ্চয় করতে পেরেছি অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা।কোনো রহস্যের সমাধান পেলে আমাকে জানিও।আমি চলে আসবো তোমাদের সাথে।”

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত