নদীর পাড়ে বসে আছে রিফাত। পাশে তার প্রিয় সাইকেলটা স্টান্ড করা। সূর্য ডুবছে। পশ্চিমাকাশে লাল আভা সৃষ্টি হয়েছে। পাখিগুলো ডানা মেলে তাদের নীড়ে ফিরছে। দূরে পাল তুলে ছোট ছোট নৌকা যাচ্ছে। সাদা কাশফুলগুলো বাতাসে দুলছে। এখন অবশ্য ওগুলোকে আর সাদা দেখাচ্ছে না। কালো ছায়ার মতো দেখাচ্ছে। আস্তে আস্তে সূর্যটা নদীর ওপারে হারিয়ে গেলো। গোধুলির শেষ আলোটুকু যখন মুছে গেলো তখন উঠে পড়লো রিফাত। নিজের সাইকেলে চড়ে বসলো। নদীর পাড় ধরে চলতে শুরু করলো। এমন সময় মাগরিবের আজান শোনা গেলো। মসজিদের দিকে রওয়ানা দিলো সে।
প্রতিদিন বিকালে এখানে আসে ও। এসে বসে থাকে। সূর্য ডোবা দেখে। পাখিদের নীড়ে ফেরা দেখে। বাতাসে কাশফুলের দৌল খাওয়া দেখে। গোধুলির শেষ আলোটুকু দেখতে ভিষণ ভালোলাগে ওর।
নামাজ শেষে বাসায় ফিরলো রিফাত। সাইকেলটা যথাস্থানে রেখে নিজের রুমে চলে গেলো। বায়োলজি বইটা বের করে পড়া শুরু করলো। আগামীকাল ক্লাস টেষ্ট। কিন্তু কোনো পড়াই মাথায় ঢুকছেনা ওর। আসোলে সাইন্সের সাবজেক্টগুলো মোটেও ভালো লাগেনা ওর। অনেকটা জোর করেই পড়ে। জেএসসিতে গোল্ডেন এ+ পেয়েছিলো। ক্লাস নাইনে ওর বাবা-মা ওকে জোর করে সাইন্স দিয়ে দিলো। তাদের ইচ্ছা ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার হবে । কিন্তু ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা কোনোকালেই ছিলো না রিফাতের। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতো বড় হয়ে দুঃসাহসিক অভিযাত্রী হবে। এভারেষ্ট জয় করবে, আমাজনের গহীন অরণ্যে ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে যায়। বাবা-মায়ের ওপরে আর কিছুই বলতে পারেনা। তারা যা বলে সেটাই মাথা পেতে নেই।
অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত কখনো নিজের মনের ওপর জোর করে পড়েনি রিফাত। মনের আনন্দে পড়েছে। পড়ে মজা পেয়েছে। কিন্তু নবম শ্রেণী থেকে বিদ্যা গেলা শুরু করলো। কোনোকিছু না বুঝে সেটা মুখস্থ করা আর গলধকরণ করা একই কথা । নবম ও দশম শ্রেণী, এই দুইবছর যেটুকু বিদ্যা গিললো সেটাই উগড়ে দিলো এসএসসি পরীক্ষায়। পরীক্ষার ফলাফল ভালো হলো কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কিছুই শিখলো না। এই দুইবছর পড়তে কোনো আনন্দ খুঁজে পায়নি রিফাত। ভালো জিপিএ অর্জনের জন্য বিদ্যা গিলেছে শুধু। আসোলে বর্তমানে সবাই এটাই করে। প্রকৃতপক্ষে কেউ কিছু শেখে না। পরীক্ষায় ভালো জিপিএ পাওয়ার জন্য বিদ্যা গেলে শুধু ।
এখন ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে পড়ছে রিফাত। এখানে এসেও বিদ্যা গিলছে শুধু। যেটা আবার এইসএসসি পরীক্ষায় উগড়ে দিয়ে ভালো জিপিএ অর্জন করবে। আসোলে বর্তমানে এই ভালো জিপিএ টাই মূখ্য বিষয়।
বায়োলজি বইটা রেখে তিন গোয়েন্দার বই বের করে পড়া শুরু করলো রিফাত। তিন গোয়েন্দা পড়তে ভিষণ ভালোলাগে ওর। তিন গোয়েন্দার চরিত্র রবিনের সাথে নিজের মিল খুঁজে পায়। তবে মাত্র একটা দিক দিয়ে। সেটা হলো বই পড়া। রবিন যেমন বইয়ের পোকা রিফাতও তেমনি বই পড়তে ভালোবাসে। বিশেষ করে তিন গোয়েন্দা পড়তে একটু বেশিই ভালোবাসে।
মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ নেই রিফাতের। একবার অবশ্য মোবাইলের জন্য আবদার করেছিলো , তবে ওর বাবা বলে দিয়েছে এখন কোনো মোবাইল দেওয়া হবেনা। তারপর আর জোড়াজুড়ি করেনি ও।
কিছুক্ষণ তিন গোয়েন্দা পড়ার পর আবার বায়োলজি বইটা নিয়ে বসে রিফাত। জোর করে হলেও কয়েকটা চ্যাপ্টার শেষ করে। ইতিমধ্যে এশার আজান ভেসে আসে ওর কানে। বই রেখে নামাজ পড়তে যায় ও। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই জামায়াতের সাথে পড়ার চেষ্টা করে। কোনো কারনে এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা হলে সারাদিন কেমন একটা অপরাধবোধ কাজ করে ওর মনের ভেতরে।
নামাজ পড়ে এসে আবার পড়তে বসে। এর মাঝে ডিনারের ডাক পড়ে ওর। ডাইনিংএ যেয়ে দেখে ওর খাবার সাজানো আছে টেবিলে। কাজের বুয়া দাঁড়িয়ে আছে পাশে।
সবাই খেয়েছে? “রিফাত জিজ্ঞেস করলো।
খালাম্মা আর আফাই খাইছে । খালু এখনও বাসায় ফেরেনি। “কাজের বুয়া জানালো তাকে।
অহ! “ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো রিফাত।
একটা প্লেটে ভাত আর তরকারি নিলো। মাখাতে লাগলো সেটা।
ভাইজান আমি যায়? “কাজের বুয়া বলল।
-আচ্ছা যাও।
কিছু লাগলে ডাক দিয়েন। “বলেই ডাইনিং রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো কাজের বুয়া আমেনা।
এদিকে রিফাত শুধু ভাত মাখতেই লাগলো। মুখে আর দিলো না। আনমনে কিছু একটা ভাবতে লাগলো সে।
যখন ও নিজে নিজে খেতে পারতো না তখন ওর আম্মু ওকে খাইয়ে দিতো। কখনো বা ওর আব্বুও খাইয়ে দিতো। এখন ও বড় হয়েছে। নিজে নিজে খেতে পারে। এখন কেউ আর ওকে খাইয়ে দেই না। এমনকি শেষ কবে পরিবারের সবাই মিলে একসাথে খেয়েছে সেটাও মনে নেই ওর।
আসোলে সত্যিই কি আমি বড় হয়ে গেছি? “নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো রিফাত। হয়তো বা । বড় হয়ে গেলে সবকিছু একা একা করতে হয় । হয়তো একা একাই খেতে হয় । কিন্তু ও তো এটা চায় না । একা একা খেতে ভাল্লাগেনা ওর । ভাতগুলো মেখে রেখে দিলো । খেলো না আর । হাত ধুয়ে একটা আপেল নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো । বায়োলজি বইটা বের করে আবার পড়ার চেষ্টা করলো । কিন্তু পড়াতে একটুও মন বসাতে পারলো না । হঠাৎ এক ফোটা নোনা জল মুখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো বইয়ের ওপরে । বুঝতে পারলো নোনা জল টুকু তার অবাধ্য চোখ থেকেই পড়েছে ।
বইটা বন্ধ করে জানালার কাছে যেয়ে দাড়ালো রিফাত। মস্তবড়ো এক চাঁদ উঠেছে আকাশে। নিজের ইচ্চে মতো আলো ছড়াচ্ছে সেটা। কিছুক্ষণ চাঁদ দেখে আবার পড়ার টেবিলে বসে পড়লো। গতকাল পাওয়া অদ্ভুত কার্ডটির দিকে নজর গেলো তার । বাংলা বইয়ের পাশে পরে রয়েছে সেটা। ইলেকট্রনিক বাতির আলো পরে চকচক করছে । কার্ডটি হাতে নিয়ে নাড়িয়ে চারিয়ে দেখতে লাগলো রিফাত। সাদা চারকোণা কার্ডটি কাচ নাকি অন্যকিছু দিয়ে তৈরি ঠিক বোঝা গেলো না। তবে আবছা একটা প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে কার্ডটির ভেতরে । অনেকটা আয়নার মতো।
গতকাল রাস্তায় কার্ডটি কুড়িয়ে পায় রিফাত। দেখতে অদ্ভুত লাগাতে কৌতুহল বশত সঙ্গে করে নিয়ে আসে। আসোলে ছোটখাটো জিনিসগুলোর প্রতি ওর একটু বেশি কৌতুহল। যেমনটা এই কার্ডের ক্ষেত্রে হয়েছে।
কার্ডটি মুখের সামনে ধরে সেটার ভেতরে নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে লাগলো রিফাত। তবে স্পষ্ট দেখা যায়না। অস্পষ্ট ঘোলাটে দেখাচ্ছে। অনেকটা সাদা রঙের টাইলসে যেমনটা দেখায়। হঠাৎ করে কার্ডের ভেতরে থাকা প্রতিবিম্বের পরিবর্তন হতে শুরু করলো। রিফাতের অবয়বের বদলে সেখানে একটা বাচ্চা ছেলের অবয়ব ফুটে উঠলো। প্রথমে অস্পষ্ট ঘোলাটে দেখালেও কিছুক্ষণের মাঝেই সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠলো। রিফাত এতক্ষণ অবাক হয়ে সেটা দেখছিলো। তাকে অবাক করে দিয়ে কথা বলে ওঠে ছেলেটা। বলল: “আমাকে দেখে অবাক হচ্ছো তাইনা?
জবাবে শুধু মাথা ঝাকালো রিফাত । মানে অনেক অবাক হয়েছে সে।
তারপর ছেলেটি স্ফিত হেসে বলল: অবাক হইয়ো না। আমি এখানেই থাকি। আমার নাম পিকু। তোমার নাম কী?
আমার নাম রিফাত। “রিফাত জানালো। কিন্তু তুমি এখানে থাকো মানে?
জবাবে আবার হাসলো পিকু। তারপর বলল: “আমি এই কার্ডের ভেতরেই থাকি।
কিন্তু কার্ডের ভেতরে কীভাবে থাকো তুমি? “রিফাত জিজ্ঞেস করলো।
সেটা তুমি বুঝবে না। “পিকু বলল । আচ্ছা তোমার চোখ লাল কেনো? তুমি কী কান্না করেছিলে?
হঠাৎ এমন প্রশ্নে ঘাবড়ে গেলো রিফাত। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “কই না তো আমি কান্না করবো কেনো। এমনিই লাল হয়েছে বোধহয়। আচ্ছা এখন আমি ঘুমাবো। কাল সকালে কথা বলবো তোমার সাথে।
কার্ডটাকে দেরাজের ভেতরে রেখে শুয়ে পরলো রিফাত । ঘুমিয়ে পরলো কিছুক্ষণের মাঝে। সকালে ফজরের নামাজ পড়ে এসে আবার কার্ডটি বের করলো রিফাত। দেখলো সেই রাতের মতোই ছেলেটা একটা চৌকির ওপরে বসে আছে। রাতে সবকিছু ঠিকভাবে দেখতে পায়নি রিফাত। এবার সবকিছুর খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলো সে। দেখলো একটা কাঠের চৌকির ওপরে বসে আছে পিকু। বয়স বড়জোর দশ কি এগারো হবে। লাল একটা গেঞ্জি গায়ে। প্যান্টের রঙ সাদা। পিকুকে দেখতে অনেকটা জাপানিজদের মতো। ছোটো ছোটো চোখ। চুলগুলো খাড়া খাড়া।
পিকু হেসে জিজ্ঞেস করলো: “এমনভাবে কী দেখছো?
-তোমাকে দেখছি। আচ্ছা তুমি রাতে ঘুমাওনি?
আবার হাসলো পিকু। তারপর বলল: “আমি কখনোই ঘুমাই না।
পিকুর এমন কথা শুনে অবাক হলো রিফাত। “সবসময় জেগে থাকো তুমি? “জানতে চাইলো সে।
আচ্ছা তোমরা কই ভাইবোন? “প্রসঙ্গ পালটে জানতে চাইলো পিকু ।
আমরা তিনভাই বোন। “জানালো রিফাত”। বড়বোনের নাম জান্নাতুল বাকিয়া, ছোটবোনের নাম সাদিয়া। আপু ভার্সিটিতে পড়ে। সাদিয়া ক্লাস সিক্সে পড়ে। আর আমি ইন্টারমিডিয়েট ১ম বর্ষে পড়ি।
আচ্ছা তুমি পড়ো না? “জিজ্ঞেস করলো রিফাত।
নাহ। “পিকু জানালো। আমার পড়া লাগেনা। “হাসলো সে”।
আমি এখন খেতে যাবো। “রিফাত বলল। আচ্ছা তোমার ক্ষুধা লাগে না? “জানতে চাইলো সে।
জবাবে পিকুর মুখ মলিন হয়ে গেলো। “লাগে তো”। জানালো সে।
-তুমি খাও না?
-কোথায় পাবো?
-কেনো, তোমার ওখানে কোনো খাবার নেই?
-আমার এখানে কিছুই নেই।
ওহ। “ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো রিফাত”। মন খারাপ হয়ে গেলো তার। তারপর বলল: “আচ্ছা তাহলে থাকো তুমি। আমি এখন কলেজে যাবো। রাতে আবার কথা হবে।
জবাবে শুধু মাথা কাত করলো পিকু । মুখে কিছু বলল না।
রেডি হয়ে কলেজে গেলো রিফাত।
প্রথম ক্লাসটাই বায়োলজি ক্লাস। তবে আজ ক্লাস হবে না। ক্লাস টেষ্ট হবে আজ । পরীক্ষাটা তেমন ভালো হলো না রিফাতের। মন খারাপ করে ক্যাম্পাসে বসে থাকলো। ওর কোনো বন্ধু নেই। আসোলে কারোর সাথে মিশে না ও। তাই কোনো বন্ধুও নেই। একা একাই একটা বেঞ্চিতে বসে থাকলো। হঠাৎ পিকুর কথা মনে পড়ে গেলো রিফাতের। ভাবলো কার্ডটি সঙ্গে করে আনলে ভালো হতো। তাহলে পিকুর সাথে এখন কথা বলা যেতো। বেচারা বোধহয় একা একা বসে আছে।
কলেজ ছুটি হলে বাসায় ফিরলো রিফাত। বাসায় ফিরে দেখলো তার ছোটবোন সাদিয়া বাসাতেই আছে। তাকে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে গেলো রিফাত। কার্ডটি তার হাতে দিয়ে বলল, “দেখ তো ভেতরে কিছু দেখা যায় কিনা।
সাদিয়া কার্ডটি হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলো। শেষে জানালো কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা সে।
রিফাত বলল, “আচ্ছা তুই এখন যা।
চলে গেলো সাদিয়া। সাদিয়া চলে গেলে কার্ডটির দিকে তাকালো রিফাত। দেখলো চুপচাপ বসে আছে পিকু। কোনো কথা না বলে কার্ডটি আবার টেবিলের ওপরে রেখে দিলো রিফাত। ভাবতে লাগলো, “পিকুকে অন্যকেউ দেখতে পাচ্ছেনা। শুধু সে কেনো দেখতে পাচ্ছে?
আচ্ছা আমি পাগল হয়ে যায়নি তো? হয়তো ওটার ভেতরে কিছুই নেই। মানুষের মাথা খারাপ হয়ে গেলো তো কতকিছুই দেখে। হয়তো আমারও মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাই এমন উল্টাপাল্টা দেখছি। আমি যদি সত্যিই পাগল হয়ে যায় তাহলে তো সবাই আমাকে পাগল বলে খেপাবে। পাগলা গারদে পাঠানো হবে আমাকে। নাহয় রুমের ভেতরে তালাবদ্ধ করে রাখা হবে। তাহলে আর কখনো নদীর পাড়ে যেতে পারবো না আমি। সূর্যাস্ত দেখতে পারবোনা আর কখনো। নাহ! এসব কী উল্টাপাল্টা ভাবছি আমি। “আর ভাবতে চাইলো না রিফাত। নিজেকে বোঝালো পিকু বলে আসোলে কেউ নেই। সবই তার মনের কল্পনা। কিন্তু যখনই আবার কার্ডটি বের করলো, দেখলো কাঠের চৌকিটার ওপরে বসে আছে পিকু। মুখটা মলিন, শুকনো। রিফাত বুঝতে পারলো অনেক ক্ষুধা লেগেছে পিকুর। কতক্ষণ কিছু খায়নি ছেলেটা। দৌড়ে ডাইনিং রুমে গেলো সে। দুটো আপেল নিয়ে আসলো। জানেনা পিকুকে কীভাবে খাওয়াবে সে। সত্যিই পিকু নামে কেউ আছে কিনা সেটাও জানেনা সে। তারপরেও আনলো।
কার্ডটি নিয়ে বেলকনিতে গেলো রিফাত। তাকিয়ে থাকলো পিকুর দিকে। আগের মতোই চুপচাপ বসে আছে ছেলেটা।
সেটা দেখে রিফাত বলল: “তুমি এমন চুপচাপ বসে আছো কেনো? মন খারাপ তোমার?
-হুম।
-কেনো?
-তুমি আমার সাথে কথা বলছোনা তাই।
-ওহ এই বেপার। আচ্ছা এই দেখো তোমার জন্য আপেল নিয়ে এসেছি। “বলেই পিকুকে আপেল দেখালো রিফাত।
-কিন্তু ওটা আমি খাবো কী করে?
-হু তাই তো। এটা তোমাকে দিবো কি করে।
আবার মন খারাপ হয়ে গেলো রিফাতের। এমন সময় হাত ফসকে কার্ডটি নিচে পরে গেলো। পরলো গিয়ে একেবারে ডোবার ভেতরে। চোখের পলকে ডুবে গেলো অতল পানির ভেতরে। বিমূঢ় হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকলো রিফাত। বিশ্বাস করতে পারছেনা কার্ডটি পানির ভেতরে হারিয়ে গেছে। আর কখনো পিকুকে দেখতে পারবেনা সে। কথা বলতে পারবেনা আর কখনো।
বুকে চিনচিনে একটা ব্যথা অনুভব করলো রিফাত। বেলকনিতে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। দৌড়ে রুমে চলে গেলো। জানে পিকু বলতে আসোলে কেউ নেই। সবই তার মনের কল্পনা। তারপরেও কেনো জানি পিকুর জন্য তার খুব খারাপ লাগলো। শেষে সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে উঠলো সে। চিৎকার করে বলল, “পিকু! বন্ধু তুমি কোথায় হারিয়ে গেলে?
এমন সময় কাধে কারোর হাতের স্পর্শ পেলো রিফাত। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখলো সেখানে পিকু বসে আছে। হাসছে ওর দিকে ফিরে।