অভিশপ্ত কফিন

অভিশপ্ত কফিন

মেয়েটা আর দশটা মেয়ের মত নয়, অদ্ভূধ কিছু আলৌকিক ক্ষমতা ছিল মেয়েটার। ইংল্যান্ডের এক রাজ্যের এক ছোট্ট গরীব গ্রামে বাস করত মেয়েটা। সময়টা তখন সতের শতকের কোন এক সাল। সেই সময়ে এক রহস্যগল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিল, যা আজো এক অধরা রহস্য হয়ে রয়েছে রহস্যপ্রেমীদের মনে।

মেয়েটা যে রাজ্যে বাস করত সেই রাজ্যে শাসন করত এক অত্যাচারী রাজা। সেই রাজা খাজনা আদায় করার জন্য প্রজাদের উপর নানা রকম অত্যাচার করত। সেই রাজা নানা চাপ প্রয়োগ করে সব গ্রাম থেকে খাজনা আদায় করলেও মেয়েটা যে গ্রামে থাকত, সেই গ্রাম থেকে অত্যাচার করে ইচ্ছেমত খাজনা আদায় করতে পারত না।তার কারণ ছিল মেয়েটার আলৌকিক ক্ষমতা !! মেয়েটা ভবিষ্যত বলতে পারত

(কিনবা মেয়েটার অনুমানশক্তি খুব তীব্র এটাও বলা যায়)!

রাজার সৈনিকরা কখন আক্রমণ করবে মেয়েটা তার আলৌকিক ক্ষমতাবলে আগে থেকে জেনে যেত, আর সেটা সে গ্রামবাসীকে বলে দিত, ফলে গ্রামবাসী প্রস্তুত থেকে রাজার সৈনিকদের মোকাবেলা করতে পারত। যার কারণে ঐ গ্রামে রাজার সৈনিকদের একের পর এক আক্রমণ ব্যর্থ হতে লাগল। ঘটনা জানতে পারে রাজা মিটিং এ বসলেন সবাইকে নিয়ে,
সেইখানে সবাই মত দিল মেয়েটাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। সিদ্ধান্ত অনুসারে মেয়েটাকে মেরে ফেলতে গুপ্ত
ঘাতক পাঠানো হল। মেয়েটা এটা বুঝতে পেরে সে তার প্রতিবেশীদের বলল তার নিজের উপর বিপদ আসতেছে।

কিন্তু কেউ তো আর মেয়েটাকে পাহাড়া দিয়ে রাখে নাই, তাই ঘাতক মেয়েটাকে ঠিকই মেরে ফেলল। মেয়েটার কফিন মাটিচাপা দেওয়া হল গ্রামের পাশে এক বনে। মেয়েটা মারা গেল, ঘটনা এইখানেই শেষ হতে পারত, কিন্তু নাহ ! আসল ঘটনা মূলত শুরু হল !! কিছুদিন পর দেখা গেল
যেখানে মেয়েটার মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে, তার চারপাশের বিশাল একটা জায়গার সব ঘাস পুড়ে গেছে! সবাই ভয় পেয়ে গেলেও অবাক হল না,কারণ সবাই জানত মেয়েটা সাধারন কেউ না। তাই ঐদিকে কেউ আর ভয়ে যেত না। এরপর বছরের পর বছর চলে গেল।

মেয়েটার কাহিনী সবার মুখে মুখে হয়ে গেল। একশ বছর পর, আঠার শতকের কোন এক সময়ে লন্ডনের তিন সাংবাদিক বন্ধু,যারা নাকি মেয়েটার গল্পটা জানে, তারা সিদ্ধান্ত নিল সেই গ্রামে গিয়ে মেয়েটার কফিন তুলে আনবে, মেয়েটার রহস্য ভেদ করবে। তারা যখন মাটি খুড়ে মেয়েটার কফিনটা তুলল, দেখল কফিনের গায়ে হিব্রু বাসায় লেখা আছে, ‘স্পর্শ কর না’। তারা কফিনটাকে শহরে নিয়ে আসল, তিনজনের মধ্যে একজন কফিনটা নিজের কাছে রাখল।

এক সপ্তাহ পর দেখা গেল সে মারা গেল (যার বাসায় কফিন ছিল)। মানুষের মৃত্যু হতেই পারে, তাই ঘটনাটাকে সবাই স্বাভাবিকভাবে নিল। তার মৃত্যুর পর কফিনটা আর এক সাংবাদিক তার বাসায় রাখল, কিছুদিন পর সেও মারা গেল, একইভাবে তৃতীয় সাংবাদিকও মারা গেল! তিনজনই যখন মারা গেল, এরপর শোরগোল পড়ে গেল, ডাক্তাররা অবাক হয়ে দেখল যার বাসায় কফিন গেছে সেই মারা গেছে এক অজ্ঞাত রোগে !! এরপর কেউ আর কফিনটা ভয়ে নিতে চায় না, তাই স্থানীয় প্রশাসন সেটা এক যাদুঘরে রাখল.. কিছুদিন পর হঠাৎ করে অজ্ঞাত কারণে আগুন ধরে সম্পূর্ণ যাদুঘরটাই পুড়ে গেল, শুধু কফিনটা অক্ষত রইল !!

এরপর প্রশাসন অভিশপ্ত কফিনটা আর নড়াচরা না করে ঐ অবস্থায় রেখে দিয়ে যাদুঘরসহ জায়গাটাকে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে যাদুঘরটা সিলগালা করে দিল। এরপর আরো অনেকগুলো বছর চলে গেল…প্রায় একশত বছর গেল। উনিশ শতকের শুরু হল, প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই সময়ে বিজ্ঞান সব আলৌকিক ঘটনাকে challenge জানাচ্ছে।

আমেরিকা সেই আলৌকিক কফিন নিয়ে গবেষণার আগ্রহ দেখিয়ে ব্রিটিশ সরকারের কাছে কফিনটা চাইল। ব্রিটিশ সরকার কফিনটা দেওয়ারসিদ্ধান্ত নিল।ইংল্যান্ডের রাজকীয় কমান্ডার এডওয়ার্ড জন স্মিথের নেতৃত্বে টাইটানিক নামের একবিশাল জাহাজ ১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কেরউদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। সেই জাহাজে করে সেই অভিশপ্ত কফিনটা পাঠানো হয়।

তারপরের ইতিহাস সবার জানা। যাত্রার মাত্র কয়টা দিন পরই বিশাল এই জাহাজ এক বরফখন্ডের সাথে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়,মারা যায় ১৫১৭ জন যাত্রী !! রহস্যবাদীদের দাবি, টাইটানিক ডুবে যাওয়ার অন্যতম একটা কারণ ঐ
অভিশপ্ত কফিন,সেই মেয়েটা !!

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত