চেয়ারে বসে বসে সারাদিনের ঘুষ এর উপার্জন গুনছেন সমীর বাবু। কেউ দিয়ে গেছে পাঁচশো টাকার বান্ডিল
– কেউ দিয়ে গেছে ১০০০ টাকার বান্ডিল।উল্টো পালটা নোট গুলো গুছাতে গুছাতে মনে মনে গালি দিতে থাকলেন সেই টাকা যারা দিয়েছে তাদের।
মনে মনে বললেন- “শালা মানুষ গুলো ভাল মত টাকা গুলো গুছিয়ে ও দিতে পারেনা। ওরা জানেনা যে এখন ব্যাংকে উল্টা পালটা টাকা নেয় না?
টেলার কাউন্টারে ভটকু মেয়েটা প্রতিদিন ঘ্যন ঘ্যাঙ করে উল্টা পালটা টাকা দিলে ” মনে মনে বলতে বলতে মুখে আরেক খিলি পান ঢুকিয়ে দিল সমীর বাবু।
নিজের মনে মনে টাকা গুলো আবার গুনতে শুরু করবেন
– এমন সময় ঘড়িতে ঢং ঢং করে পাঁচটা বাজার সংকেত দিল। দেয়ালে একটা পুরানো আমলের ঘড়ি লাগানো সমীর বাবুর সামনে। পুরনো একটা রাজবাড়ির দালানে এই সরকারী বিদ্যুৎ উন্ন্যনের এই অফিসে আজ প্রায় ৬ বছর হতে চলল সমীর বাবুর। এখানে ঢোকার সময় পুরো দশ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে নেতা কে খুশি করে তারপর নেতার সেক্রেটারিকে দুই মাসের বেতনের সমান টাকা দিয়ে তারপর চাকরি টা পেয়েছেন তিনি। এজন্য অবশ্য সমীর বাবুর সকল জমিজমা বন্ধক দিতে হয়েছে উনাকে। আর এখানে চাকরি পেয়েই প্রথম মাস থেকে শুরু করেছেন পুরো
-দমে ঘুষ খাওয়া। পুরো বারোলাখ টাকা দিয়ে সমীর বাবুর বাপের দিনের জমি ছাড়াতে ছয় বছর লেগে গেছে। এর মাঝে উনার মা ও মারা গেছেন। বিয়ে করেছে একটা। মেয়ে ও আছে
– ক্লাস টু তে পড়ে।কিন্তু আজ উনার মন খুব ভাল- কারণ আজ প্রথম বার নিজের জন্য ঘুষ খেয়েছেন তিনি। এর আগে জমি ফেরত দিতে আর নতুন ফ্লাট কেনার জন্য খেয়েছেন। চিন্তা করেছিলেন ছেড়ে দেবেন ঘুষ খাওয়া। কিন্তু কিছুই করার নেই। অভ্যাস হয়ে গেছে। ঘুষ ছাড়া একটা ফাইল ও ছাড়েন না তিনি। পাঁচশো টাকার বান্ডিল টা গোনা প্রায় শেষ এমন সময় ঘরে এসে দরজার আড়ালে মুখ ঢেকে চিৎকার করে বেয়ারা নিখিল বলল- “ সার এক জন বুড়া লোক আসছে একটা ফাইল নিয়ে।অনেক বার বলেছি আজ অফিস শেষ
– কিন্তু বেটা কিছুতেই শুনবেনা- সার উনাকে কি আসতে বলবো?” ফাইলের কথা শুনে সমীর বাবুর চোখ দুটো চকচক করে উঠল-
বললেন- “পাঠা পাঠা
– ভেতরে পাঠিয়ে দে শিগগির
– হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলতে নেই রে” শুনেই নিখিল দৌড় দিল বুড়োকে আনতে। সমীর বাবু তাড়াতাড়ি সামনে পড়ে থাকা নোট গুলো পাশে পড়ে থাকা কালো ব্যাগে ভড়ে একটা ভারিক্কি চাল নিয়ে বসে থাকলেন
– খদ্দেরের সামনে হাসি মুখ নিয়ে থাকলে আবার কেউ টাকা দিতে চায়না। টাকা দিতে গড়িমসি করে। টাকা নিয়ে কি কি করবেন কি কি কিনবেন এটা চিন্তা করতে করতে প্রায় চোখ বুজে ফেলেছিলেন সুখে
– এমন সময় খুক করে কাশি শুনে সামনে তাকালেন তিনি- তাকিয়ে পুরো থ মেরে গেলেন। দেখেই মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেল উনার
– কারণ সামনে দাঁড়িয়ে আছেন উনার স্কুলের নিতেশ সার। উনার সাহায্য ছাড়া কোন ভাবেই সরকারী স্কুলে চান্স পেতেন না সমীর বাবু। সার কে দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল সমীর বাবুর। মনে করেছিলেন এতদিন পর সার হয়ত উনাকে চিনবে না। অনেক দিন পর দেখা
– সার কি চিনবে? এর মাঝে সমীরের সঙ্গী হয়েছে দের মনি একটা পেট। চেহারায় জেল্লা এসেছে। পান খান রীতিমত। মুখের পাশে পানের পিকের একটা গাড় দাগ চেহারাটাকে পুরোপুরি সরকারী চাকুরের বানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সমীর বাবুকে পুরো অবাক করে দিয়ে নিতেশ সার বলে উঠলেন-
“আরে সমীর না? কেমন আছিস? আমাকে চিনেছিস? আমি তোর সেই হাই স্কুলের নিতেশ সার। আমাকে যে তুই পরীক্ষা পাশ করে টুক করে প্রণাম করেছিলি মনে আছে? ওই যে তোর বাবা মারা গেল যে বছর তুই পরীক্ষা দিতে পারলিনা… যাক যে কথা তুই বাবা এখানে অফিসার কবে থেকে রে? আমাকে একবার ও জানাস নি। সায়েন্স নিয়ে পড়ে ও বিবিএ পড়লি। তারপর তোর তো কোন খোঁজ নেই। আমাকে অনেক গুলো অফিসে ঘুরিয়ে তোদের সেকেন্ড অফিসার আমাকে বলেছে তোর কাছে আসতে। আমাকে আরও বলল তুই নাকি ঘুষ খাস
– যেন বেশ কিছু টাকা নিয়ে যাই। আমি ভাবলাম আগে সাক্ষাত করি। তারপর না হয় ভাবা যাবে। কিন্তু এখন তোকে দেখে মনে বল এলো রে- আমি তো আর কোন ঘুষ খোঁড়ের সার হতে পারিনা রে …” বলে আনন্দে গোল গোল চোখ পাকিয়ে সমীর বাবুর দিকে তাকাল। মনে মনে গাল পাড়তে পাড়তে বলল-
“হ্যাঁ সার কেমন আছেন? বসুন বসুন-বলুন কি করতে পারি?” এবার নিতীশ সার খুব কষ্ট পেলেন। সমীর উনার প্রিয় ছাত্রদের মাঝে অন্যতম। আগে প্রতিদিন প্রাইভেট পড়ে বাসায় যাবার আগে একবার করে প্রণাম করত। আর আজ কিনা উঠে সম্মান পর্যন্ত দেখাল না। আস্তে আস্তে চেয়ারটা টেনে নিয়ে ফাইলটা সামনে রেখে বসলেন নিতীশ সার। কষ্ট পেলেও মুখের ভাব ঠিক রেখে বললেন-
“বাবা- দেখ না
– এই ফাইলটা
– আমার পেনশনের ইনক্রিমেন্ট বাড়ানোর ব্যাপারে একটা সাইন লাগবে
– সামনের মাসে আমার মেয়ে নমিতার বিয়ে
– এখন যদি বেতন না বাড়ে তাহলে নমিতার বিয়ে যে হবেনা রে” চোখ মুখ শক্ত করে বসে ছিলেন সমীর বাবু
– সামনে ফাইলটা নিয়ে নেড়ে চেরে দেখ লেন একটু
– মনে মনে গুনে নিলেন কত টাকা খেতে পারবেন
– ভেবেই ফাইলটা বন্ধ
করে রেখে সামনে ডানে রেখে বললেন- “ হুম বুঝেছি- এটার জন্য আপনাকে দুই মাস পড়ে আসতে হবে”।
অবাক হয়ে গেলেন নিতীশ বাবু।
পাকা ভ্রু গুলো বাকিয়ে বললেন- “মাত্র একটা সই বাকি আছে রে
-এটা করতেই দুইমাস?”
“আহা বুঝছেন না কেন- দেখছেন না চারদিকে কত ফাইল
– এখানে সিরিয়াল বলে একটা ব্যাপার আছে। আর আমার তো কাজের অভাব নেই
– এত কাজের মাঝে কত ফাইল আসবে
– তাই কমসে কম দুইমাস লাগবে”। বলেই মুখে পান চিবাতে চিবাতে ব্যাগ গুছাতে শুরু করে দিলেন সমীর বাবু। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন নিতীশ সার।
এই ছেলে কি থেকে কি হয়ে গেল। কোন ভাবেই নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছেন না। তিনি অনেক কষ্টে বললেন- “বাবা সমীর- তোমাকে কি ঘুষ দিতে হবে?” উত্তরে সমীর বাবু যা বললেন তাতে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল
নিতীশ সারের
– সমীর বাবু বললেন- “ দেখেন- এখান থেকে ফাইল সাইন করিয়ে নিয়ে যেতে দুটো বান্ডিলে ৫০০ টাকার ১০০ টা নোট লাগে।
আসলে এটা হল উপহার। এটাকে ঘুষ বলবেন না। আমাকে আপনি কিছু দেবে
-আমি আপনাকে কিছু দেব। এই তো। আপনি আমার পরিচিত এজন্য আপনার জন্য কনসেশন আছে
– আপনি ৫০০ টাকার ৫০ টা নোট নিয়ে আসলেই হবে। আপনার ফাইল এ সাইন হয়ে যাবে”
– বলেই খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে উঠলেন সমীর বাবু।
নিতীশ বাবুর বুকের কাছটায় কেমন যেন ব্যথা করে উঠল। আস্তে আসতে নিজেকে সামলে নিয়ে পলি থিনের ব্যাগ থেকে টাকা বের করলেন তিনি। উনাকে আজ টাকা টা দিতে হবে ভেবেই সাথে এনেছিলেন। নিজের আদর্শকে বলি দিয়েই নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু উনার আদর্শ এভাবে বলিদান হবে উনি ভাবতেই পারেন নি। ফাইলে সই করিয়ে উনি আসতে আসতে সিঁড়ি দিয়ে নে মে রিক্সায় চেপে চলে গেলেন সেখান থেকে। যাবার সময় কান্না কান্না চোখে তাকিয়ে ছিলেন সমীর বাবুর দিকে। সমীর বাবু তখন টাকা গুনায় বাসত। কিছু ক্ষণ পর সমীর বাবু বের হলেন অফিস থেকে। সারা দিন বসে থেকে থেকে ওজন বেড়ে চলেছে। ডাক্তার বলেছে প্রতিদিন একবেলা করে হাটতে। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে নটা বেজে যায়। তারপর মেয়েকে স্কুলে দিয়ে এসে তাড়াহুড়াকরে অফিসে চলে আসেন তিনি। তাই ওজন বাড়ানো থামাতে পারছেন না তিনি। রাস্তায় নেমে একটা রিক্সা ডাক
দিলেন তিনি-“এই যাবি? ফার্মগেট?”
রিক্সা ওয়ালা মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল। আজকাল কার রিক্সা ওয়ালা দের তুই করে বললে রেগে যায়। সমীর বাবু অবশ্য এসবের ধার ধারেন না। সামনে হাটতে শুরু করে দিয়েছেন তিনি দাঁড়িয়ে না থেকে। এমন সময় এক বুড়া রিক্সা ওয়ালা আসতে আসতে রিক্সা চালিয়ে আসছিল
– উনাকেই বললেন- “কি হে যাবে নাকি? ফার্মগেট?”
বুড়ো ৩০ টাকা ভাড়ায় রাজি হলেন। রিক্সা ওয়ালাকে এক গাল গালি দিতে দিতে উঠে বসলেন রিক্সায়। রিক্সা চলতে শুরু করল। আজকাল রাস্তায় অনেক জ্যাম। ভালমতো রিক্সায় ও ঘুরা যায়না। এমন একটা সময় এসেছে। রিক্সা অনেক অলি গলি ঘুরে গ্রিন রোডে এসে নামল। এমন সময় বৃষ্টিও নামল। সন্ধ্যায় বৃষ্টি নামতেই বৃষ্টিকে একচোট গালি দিলেন সমীর বাবু। রিক্সা ওয়ালা রাস্তায় থেমে রিক্সার সিটের নিচ থেকে পলিথিন বের করে দিলেন।হুড তুলে পলিথিন টা গায়ে ভালভাবে জড়াতে জড়াতে আরও একচোট গালি দিলেন তিনি। বৃষ্টি ভালই নেমেছে। জ্যাম মুহূর্তেই ফাঁকা হয়ে গেল।বুড় চালক আসতে আসতে চালাচ্ছে। সামনে অনেক রিক্সা
–তাই রিক্সার গতি ও ধীর।এমন সময় ঘটল ঘটনাটা। সমীর বাবু যেন হার্টের একটা বিট মিস করলেন। সামনে দিয়ে একটা রিক্সা যাচ্ছিল বিপরীত রাস্তায়
– সেখানে বসে ছিল মাঝ বয়সী এক লোক। পুড়ো শরীর নীল পলিথিন দিয়ে ঢাকা। শুধু মুখ দেখা যাচ্ছিল-কিন্তু সেই মুখেই ছিল যত বিপত্তি। লোকটার মুখ ছিল- কিন্তু মুখে আর কিছু ছিলনা। মানে চোখ মুখ কিছু নেই। সেখানে সাদা চুনের প্রলেপ দিয়ে চোখ মুখ আকা। মসৃণ একটা তেলতেলে মুখে চোখ মুখ আঁকা
– আর কিছু নেই। দেখেই প্রচণ্ড ভয় পেলেন সমীর বাবু। রিক্সা উনাকে কাটিয়ে চলে গেছে- কিন্তু নিজের চোখ কে কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি। এটা কিভাবে সম্ভব?এই ভর সন্ধ্যায় এখনো চারপাশ আলোকিত। এখন কিভাবে তিনি ভুল দেখবেন? নিজের চোখ কে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি। ঘোরের মাঝে চলে গেছেন বুঝি তিনি। এমন সময় রিক্সার ঝাঁকুনি খেয়ে ঘোর থেকে জেগে উঠলেন যেন তিনি। সামনে একের পর এক রিক্সা যাচ্ছে
– বাকি কাউকে এরকম না দেখে মনে মনে চোখের ভুল ভেবে আবার ভুলে যেতে চাইলেন ঘটনা। ভুলেই যেতেন
– কিন্তু একটু পর সামনে আরেকটা রিক্সা এলো। সেখানে বসেছিল এক মহিলা-আর সাথে একটা বাচ্চা মেয়ে-সেই মহিলার ন্যাড়া মুখের উপর সেই সাদা চুনের প্রলেপ দেখে ভয়ে আত্মারাম কেঁপে উঠল সমীর বাবুর। কি দেখছেন উনি? এভাবে দুইজন মানুষ গেল সামনে দিয়ে দুইজনের ই একই অবস্থা। ঠোট-নাক মুখ কিছু নেই
– সেখানে সাদা চুন দিয়ে চোখ মুখ আঁকা। ভাবতেই ভয়ে শরীরের সব লোম দাড়িয়ে গেল সমীর বাবুর। রিক্সা বাসার সামনে থামতেই তিনি তাড়াতাড়ি নেমে পড়লেন ভাড়া দিয়ে।সোজা বাসার গেইট দিয়ে ঢুকে দৌড় মারলেন লবি দিয়ে। মাত্র এক মাস হল এই ফ্লাট কিনেছেন তিনি। এখনো কিস্তির টাকা দেয়া বাকি। লিফট দিয়ে না উঠে তাড়াতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে উ ঠতে শুরু করে দিলেন তিনি। এর মাঝেই ঘামতে শুরু করে দিয়েছেন তিনি। ব্যাপারটাকে মনের ভুল ভেবে ভেবে উঠছেন সিঁড়ি দিয়ে
– এমন সময়
– নীল সার্ট আর লুঙ্গি পড়ে এক লোক সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে সামনে এসে দাঁড়াল। দাড়িয়েই সালাম ঠুকে বলল
-“সার শরীর ডা ভালা নি”
সমীর বাবু নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলেন
– সিঁড়ি বেয়ে চার তলায় উঠছিলেন আনমনে
– কথাটা শুনেই সামনে তাকালেন
– আর জমে গেলেন যেন
– সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নীল সার্ট আর লুঙ্গি পড়া লোক টা আর কেউ নয়- এই বাড়ির দারোয়ান মালিক মিয়া। কিন্তু সব ঠিক থাকলেও মালিক মিয়ার মুখ টা ঠিক নেই। মুখের যায়গায় ছিদ্র গুলো ভরাট করে দিয়েছে কেউ যেন। আর সেখানে চুনের প্রলেপ দিয়ে কেউ চোখ মুখ একে দিয়েছে। দেখে বুকের বাম পাশে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়ে গেল সমীর বাবুর। তিনি দৌড় দিয়ে উঠে গেলেন মালিক মিয়াকে পাশ কাটিয়ে। বাসার কলিং বেল টিপছেন তিনি
– কেউ খুলছেন
– ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ পেয়ে আরও ভয় পেয়ে গেছেন তিনি। নকল চাবি দিয়ে তালা খুলে ঘরে ঢুকতেই উনার বুকের উপর আছড়ে পড়ল নিতি
– সমীর বাবুর বৌ। উনি বুঝতে পারছেন না কেন নিতি কাঁদছে
– অনেক লম্বা চুল নিতির। চুল ছেড়েই দিয়ে থাকে বাসায় নিতি। সেই চুলের জন্য দেখতে পাচ্ছেন না তিনি নিতির সুন্দর মুখটা। কাঁদছে নিতি। কাঁদতে কাঁদতেই মুখ তুলে তাকাল নিতি। আর তাতেই প্রচণ্ড ভয়ে পেছনে পিছিয়ে আসলেন সমীর বাবু। কারণ নিতির সেই সুন্দর মুখের যায়গায় এখন রাস্তায় দেখা সেই মহিলার মত চুন দিয়ে চোখ মুখ আঁকা। নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছেন না সমীর বাবু। এটা কিভাবে সম্ভব? উনি কি ভুল দেখছেন? নাকি সবার মুখ এরকম হয়ে যাচ্ছে? উনি কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই হাতে একটা ছোট আয়না ধরিয়ে দিল নিতি সমীর বাবুকে।
“আয়না দিয়ে কি হবে?” জিজ্ঞেস করতেই
– নিতি বলল- আগে নিজের দিকে তাকাও
– বলে দৌড়ে চলে গেল বেডরুমের দিকে। এক দৃষ্টিতে নিতির দিকে তাকিয়ে থাকলেন সমীর বাবু
– কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। এটা কিভাবে সম্ভব? কোন মানুষের মুখ কিভাবে কয়েক ঘণ্টার মাঝে পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। ভাবতে ভাবতে আয়নাটা তুলে নিয়ে নিজ ের দিকে ধরলেন তিনি- আর দেখলেন- আয়নায় দেখা যাচ্ছে একটা গোলগাল নাদুস নুদুস মুখ-যাতে কোন ছিদ্র নেই
– চোখ নেই-নাক নেই-কান নেই-ঠোট নেই
– ঠোটের উপর প্রিয় গোঁফ নেই- শুধু সাদা চুনের প্রলেপ দিয়ে চোখ মুখ মোটা মোটা করে আঁকা- যেন অন্য কোন প্রাণীর মুখ |