খুন করাটা একটা শিল্প, একটা আর্ট!
অন্তত এটাই ভাবে রফিক। তার কাছে মনে হয়, একজন খুনীকে খুনী বলার চেয়ে শিল্পী বললেই বেশী মানায়। যে খুনী তার কাজটাকে যত নিখুঁতভাবে সারতে পারে, সে তত বড় শিল্পী!
তারচেয়ে বড় শিল্পীও আছে অবশ্য! মানুষ বলে নিজের সমালোচনা যে করতে পারে, সেই না কি সবচেয়ে চালাক! রফিকের মনে হয় সেই খুনীই সবচেয়ে ভালো, যে নিজের খুনের প্লটটাকে খুব ভালোভাবে সাজাতে পারে।
হাতের রিষ্টওয়াচটার দিকে চাইলো রফিক। নির্দিষ্ট সময় থেকে আট মিনিট দূরে আছে সে এখন। আর আট মিনিট, তারপরই পর্দা পরে যাবে তার এই জীবনের। এই জীবনের শেষ দৃশ্যে চলে এসেছে সে। নতুন জীবন ডাকছে তাকে।
“কত হইছে কাকু?”
দোকানীর দিকে না চেয়েই প্রশ্নটা করে মাসুদ। আলগোছে পেছনের পকেট থেকে বের করলো মানিব্যাগ। একটা একশো টাকার নোট বের করে বাড়িয়ে ধরলো দোকানীর দিকে।
টাকাটা না নিয়ে উল্টো খেঁকিয়ে উঠলো দোকানী। “ভাংতি নাই?”
“থাকলে কি আর এই নোট দিতাম?” পাল্টা গলা চড়ালো মাসুদ।
এবার চুপচাপ টাকাটা নিলো দোকানদার। চেঞ্জ ফেরত দিয়ে অন্যদিকে মনোযোগ দিলো।
ভাংতি টাকাগুলো মানিব্যাগে রেখে জিনিসটা আগের স্থানে পাঠিয়ে দিলো মাসুদ। সামনের দিকের পকেট থেকে বের করলো নিজের সেলফোন। দোকান থেকে বের হতে হতেই ফোন করলো একটা নাম্বারে।
“ঐ খানকির পোলার তো কোন খবরই নাই কা!” ওপাশে কল ধরতেই চাপাস্বরে চেচালো সে। “হালার মাল আনতে এতক্ষণ লাগে ক্যান? কখন পাঠাইছো?”
কিছুক্ষণ ওপাশের কথা শোনার পর আবারও একইভাবে চেচালো, “আবে বেশ্যা মাগীর পুত, ভালা কইরা ক, হালারে পাঠাইছোস?… পাঁচ মিনিটের মইধ্যে যদি মাল না পাই, তাইলে তোর খবর আছে, কথাডা মাথায় রাখিস!”
কলটা কেটে দিয়ে নিজের মনে কিছুক্ষণ গজ গজ করলো সে। বানচোতটার কারণে সব প্ল্যান ভেস্তে যেতে বসেছে। ঠিক সময়মতো ময়নাল হারামীটা মাল নিয়ে এলে এতক্ষণে কাজটা শেষ হয়ে যেত।
সেলফোনে সময় দেখলো মাসুদ। সময় বেশী নেই আর। মাত্র ছয় মিনিট! তিন মিনিটের ভেতর ময়নাল যদি মালটা না নিয়ে আসে, তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে। পাখি উড়ে যাবে।
রিষ্টওয়াচ জিনিসটা খুবই অপছন্দ আলমের। অথচ বার বার সেই রিষ্টওয়াচটাই তার চোখের সামনে নাড়াচ্ছে পাগলা রফিক। অবশ্য রফিককেও যে খুব একটা পছন্দ করে আলম, তাও নয়।
মনে মনে কিছুটা খুশী আজ আলম। জালটা পেতেছিলো আরও তিন মাস আগে, এতদিনে সেটা গুটিয়ে নেবার সময় হয়েছে। রফিকের রিষ্টওয়াচে একটু আগেই সময়টা চোখে পড়েছে আলমের। আর মাত্র পাঁচ মিনিট আছে, তারপরই জালটার দড়িতে ধরে টান দেবে সে। একা একা অবশ্য পুরো জালটা তুলবে না, আরও লোক আছে।
নিজের চারপাশে তাকালো আলম। আলগা রাইসুল, কিপটা ইদ্রিস, হোন্ডা নাসির- সবাই হাজির এই আড্ডায় আজ। বাকি আছে শুধু মাসুদ, বাইট্টা মাসুদ। সে এলেই সবাই মিলে জালের দড়িতে টান দেবে সে। পাল্টে যাবে পাশার দান!
তারপর বাকিদের কল্লা ধর থেকে একটা একটা করে ফেলে দিলেই খেল খতম, দোকান বন্ধ! মনে মনে ভাবলো আলম। পুরো শহরের নেটওয়ার্ক চলে আসবে তার হাতে।
“খানকির পোলা,” গলাটা কর্কশ শোনালো মাসুদের। “এত সুময় লাগে মাল আনতে?”
“সরি বাই, দিকদারী অইয়া গ্যাছে বাই,” বাইক থেকে নেমে আসে মতিন। “খানকির বাল টেরাফিকে ধরছেলো! মাল নিয়া আর এট্টু হইলেই মারা খাইয়া গেতাম বাই। বেশ্যার পোলা ফটিকরে কইছিলাম ভালা দেইখা একখান বাইক দিতে, আর হালায় গছাইয়া দিছে এই বাল! টেরাফিকে ধইরো না কি চুম্মা খাইছো?”
“যা হওয়ার হইছে,” নিজেকে ঠান্ডা করার চেষ্টা চালালো মাসুদ। হাত বাড়ালো মতিনের দিকে। “মালডা দে।”
“এই যে বাই,” কোমর থেকে র্যা্পিং পেপারে মোড়ানো একটা প্যাকেট বের করে মাসুদের দিকে এগিয়ে দিলো মতিন।
“খাসা তো?” প্যাকেটটা হাতে নিতে নিতে প্রশ্ন করলো সে। “কি মাল ইউজ করছোস এইখানে?”
“প্লাষ্টিক এক্সপ্লোসিভ,” দেঁতো হাসি হাসলো মতিন। “পেষ্টগুলা এক্কেরে নতুন আছেলো। এক্কেরে পিওর জিনিস।”
“তোমার বাল!” প্যাকেটটা নিজের কোমরের পেছনের দিকে রাখতে রাখতে খেঁকাল মাসুদ। “যদি কাম না হইছে, তাইলে তোরে তোর বাপের পেছন দিয়া ঢুকাইয়া দিমু। কথাডা মাথায় রাখিস!”
হাসিটা বিস্তৃত করে মতিন। “আইচ্ছা!”
দ্রুত উল্টো ঘোরে এবার মাসুদ। সময় নেই আর বেশী। আর তিন মিনিটের মাথায় শুরু হবে ফেয়ারওয়েল। এবং সেই সাথেই শেষ হবে পাগলা রফিকের অধ্যায়।
পাগলা রফিক যে এভাবে হঠাত করেই পাগলের মতোন আচরণ করবে, তা ভাবতেও পারেনি ওরা কেউ। হঠাত মাথায় কি ঝোঁক উঠলো, আন্ডারওয়ার্ল্ডের এতদিনের বিজনেস ছেড়ে চলে যেতে চাইছে সে। অথচ সে না থাকলে পুরো নেটওয়ার্কের ভেতরকার সব খবর পাচার হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
জীবিত থাকলে কখন কার কাছে কি ফাঁস করে দেবে, বলা তো যায় না! তাই এই ব্যবস্থা। যদি এই পাগলামীটা না করতো রফিক, তাহলে শুধু শুধু মরতে হতো না তাকে।
নিজের সেলফোনের দিকে মনযোগ দিলো আলম। আর মাত্র আড়াই মিনিট আছে। এরপরই শুরু হবে ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠান। খুব বেশীক্ষণ হবে না অনুষ্ঠানটা। বড়োজোর পনেরো মিনিট। এর ভেতর রফিকের জায়গায় নতুন যে দায়িত্ব নেবে, তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করা হবে, সেই সাথে রফিককে যথাযথ সম্মান এবং বিভিন্ন উপহারের সাথে বিদায় জানানো হবে।
মাসুদের কাছ থেকে যে উপহারটা পাবে রফিক, সেটা আসলে একটা ছোট আকারের বোম। ম্যাকানিজমটা এমনভাবেই সেট করা আছে যাতে এখানে বসেই আলম নিজের সেলফোন থেকে ব্লাষ্টটা করতে পারে। আর ব্লাষ্টটা হবে তখন, যখন রফিক এই অনুষ্ঠান শেষ করে নিজের গাড়িতে গিয়ে বসবে।
ছোট্ট, কিন্তু ইফেক্টিভ প্ল্যান! মনে মনে ভাবে আলম। সেই সাথে কিছুটা আত্নসন্তুষ্টিতেও ভুগছে সে।
এমন সময় ওদের এই আসরে প্রবেশ করে মাসুদ। তার হাতে র্যা পিং পেপারে মোড়ানো একটা প্যাকেট।
ওটাই সবকিছুর চাবিকাঠি! ভাবে আলম। ওটার সাহায্যেই সে শেষ করবে রফিককে, এবং তারপর একে একে এখানে
উপস্থিত সবাইকে। পুরো নেটওয়ার্কের একচ্ছত্র মালিক বনে যাবে সে।
উঠে দাঁড়ায় আলম এবার। এগিয়ে গিয়ে হাত মেলায় মাসুদের সাথে। তারপর তাকে নিয়ে এসে বসে এক পাশের কোণায়।
মনে মনে কিছুটা খুশী মাসুদ নিজেও। রফিকের ফেয়ারওয়েলের আগে আলমকে তার জায়গাটা আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হবে। আর আলম ঐ জায়গায় যাওয়া মানে মাসুদেরও লাভ। গত ছয় বছর ধরে আলমের সাথে কাজ করছে সে, আলমের বড় কিছু একটা হওয়া মানে মাসুদেরও কিছু হওয়া। সেই সাথে নগদ লক্ষ্ণী তো আছেই!
হঠাত করে গম্ভীর একটা কাশি শুনে রুমের বাকি সবার দিকে চাইলো মাসুদ। কাশিটা এসেছে বিশালদেহী আলগা রাইসুলের গলা থেকে।
উঠে দাঁড়িয়েছে আলগা রাইসুল। রুমের সবার দিকে একবার চাইবার ফাঁকে চোখে চোখ রাখলো আলমের। ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো দুজনেরই। তারপরই ধীরে ধীরে রাইসুলের হাসিটা মুছে যেতে দেখলো আলম।
কি ব্যাপার? দ্রুত ভাবতে চাইলো আলম। কি হলো এটা? আলগা রাইসুলের চেহারা হঠাত করেই কালো হয়ে যাচ্ছে কেন?
ব্যাপারটা এবার নজরে এলো তারও। এইমাত্র আসরে প্রবেশ করেছে গোটা আটেক লোক। ইউনিফর্ম পড়া লোকগুলোকে চিনতে কষ্ট হলো না আলমের।
পুলিশ! অবাক হতেও বেগ পেতে হলো আলমকে। “ঐ বানচোতদেরকে খবরডা দিছে কোন বালে?”
“অনেক ধন্যবাদ আপনাকে,” রফিকের হাতটা ধরে হালকা ঝাঁকি দিলেন অফিসার মাহমুদুল হাসান। “আপনি রাজসাক্ষী হতে রাজী না হলে এবং এভাবে প্ল্যান না করলে পুরো শহরের এই জঞ্জালদেরকে সরানো সম্ভব হতো না আমাদের পক্ষে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।”
মুচকি হাসি রফিকের ঠোঁটে। অমায়িক চেহারায় দাঁড়িয়ে আছে সে পুলিশদের সামনে।
এইমাত্র শহরের আন্ডারওয়ার্ল্ডের বড় বড় কয়েকটা মাথাকে ধরতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। একে একে তাদের সবাইকে ঢোকাচ্ছে প্রিজন ভ্যানে। একেবারে প্রস্তুত হয়েই এসেছিলো পুলিশরা। এবং সেটা সম্ভব হয়েছে রফিকের কারণেই।
“আমি কি এখন যেতে পারি স্যার?” হাসি হাসি চেহারায় প্রশ্ন করলো রফিক। অবশ্য প্রায় সাথে সাথেই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা চালালো। “দেখতেই পাচ্ছেন, বয়েস হয়ে গেছে। বেশী রাত জাগাটা আমার শরীরের জন্য ঠিক ভালো নয়।”
“একা একা যেতে পারবেন আপনি?” ভদ্রতা রক্ষার জন্যই প্রশ্নটা করেছেন অফিসার।
মাথা নেড়ে না করে দিলো রফিক। উল্টো বললো, “আপনার জন্য আরেকটা উপহার আছে স্যার।”
চোখে প্রশ্ন নিয়ে তার দিকে চাইলো মাহমুদুল হাসান।
জবাব না দিয়ে উল্টো ঘুরলো রফিক। দুজন লোক একটা ট্র্যাঙ্ক নিয়ে এগিয়ে আসছে। তাদের ভেতর একজনের চেহারাটা কিছুটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। মতিন!
“মজনুরে না কি খুজতেছিলেন আপনেরা,” হাসিটা বিস্তৃত করলো এবার রফিক। “ওরে জিন্দা ধরতে পারি নাই। তাই ভাবলাম, মুর্দাই সই!”
অবাক চেহারায় হাসিটা ঠিক জমলো না অফিসারের।
নিজের গাড়িতে গিয়ে বসলো রফিক। তার পাশে মতিন। গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে আছে মতিনের সাথে আসা অন্য লোকটা।
গাড়িটা স্টার্ট করতেই রাস্তার ওপাশে মিলিয়ে গেলো পুলিশের প্রিজন ভ্যানের লাল রঙের টেইল লাইটগুলো। এদিকে হাসি ফুটে উঠলো রফিকের চেহারায়।
“গুরু,” ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা লোকটা এই প্রথম কথা বললো, “ভাগ্য ভালো আমার চেহারা পুলিশের কেউ চিনতো না। নইলে বাঁশ খায়া যাইতাম এই চান্সে!”
“টেনশন নিস না মজনু,” পকেট থেকে সেলফোন বের করতে করতে জবাব দিলো রফিক। “তোরেও কেউ চেনে না, জ্বলন্ত অবস্থায় আমার বডিটাও কেউ আইডেন্টিফাই করতে পারবো না।”
বলেই সেলফোনের একটা অ্যাপ ওপেন করলো রফিক। দুটো অপশন দেখা যাচ্ছে সেখানে। “এক্সিকিউট” নামের অপশনটায় চাপ দিলো সে এবার।
অনতিবিলম্বে বড় ধরণের একটা বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে এলো একটু দূর থেকেই। দু সেকেন্ডের মাথায় একটা আগুণের গোলা পাক খেয়ে উঠে গেলো আকাশের দিকে।
অবশ্য ওদিকে নজর নেই ওদের কারও। মজনু ঝড়ের গতি তোলার চেষ্টা করছে গাড়িতে। অন্যদিকে রফিক আর মতিন ব্যস্ত হয়ে পায়ের কাছে থাকা ব্যাগ দুটো থেকে বের করছে মুখোশ এবং অস্ত্র।
প্ল্যানটা সহজ, খুব সহজ ছিলো।
কিছুদিন ধরেই এই ঝক্কিপূর্ণ আন্ডারওয়ার্ল্ড ভালো লাগছিলো না রফিকের। শুধুমাত্র নেটওয়ার্ক কন্ট্রোলারের দায়িত্ব পালন করতে মন সায় দিচ্ছিলো না। তার দরকার ছিলো অন্য কিছু। তার দরকার ছিলো সর্বময় ক্ষমতার। আর সেটা করতে গেলে ঢেলে সাজাতে হবে আন্ডারওয়ার্ল্ডকে।
সেটা করতে গেলে তিনটি কাজ করা খুব জরুরী হয়ে গেছিলো রফিকের জন্য।এক, আগের যত মাথা ছিলো, সবাইকে সরানো। আন্ডারওয়ার্ল্ড সব সময়ই কিছু না কিছু নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য। কাজ দু’ নম্বর হলেও নিয়মের দিক থেকে হতে হয় এক নম্বরের। না হলে কোন ব্যবসাই খুব বেশীদিন টিকবে না। এই কারণেই প্ল্যানের প্রথম ফেইজটা এভাবে তৈরী করেছে সে। সবাইকে বিদায় করে দিয়েছে একই ঢিলে। এখন আর এই শহরের কোন ভাই বেঁচে নেই, তাদের সঙ্গ দিচ্ছে এখানকার সবচেয়ে বড় ঘুষখোর অফিসার মাহমুদুল। এক ঢিলে দুই পাখি বলা যায় কাজটাকে।
দুই, অন্যদের সাথে সাথে নিজেকেও মেরে ফেলা। এটা নিয়েই সমস্যা দেখা দিয়েছিলো। অন্যদেরকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করাটা সহজ নয় মোটেও। এখনকার মানুষদের মাথা খুবই খারাপ। রিভেঞ্জ-টিভেঞ্জ বা এই টাইপের বালময় চিন্তাভাবনা ঘোরে তাদের মাথায় শুধু।
যে সব ভাই মারা গেছে, তাদেরও বাচ্চাকাচ্চা আছে। তারা বড় হয়ে মাথা গরম করে রিভেঞ্জের প্ল্যানও করতে পারে। সেটা হতে দিতে পারে না রফিক।
তবে এগুলো হচ্ছে গৌণ সমস্যা। মূল সমস্যাটা অন্য জায়গায়। একই লোক একই ডিপার্টমেন্টে থাকলে যা হয়, মানুষ খুব বেশী সম্মান দেবার কথা চিন্তা করে না। নতুন বস, নতুন ভাই এলে ব্যাপারটা সে রকম হবে না। এক লাফে সবকিছুর রেট বাড়িয়ে দিলেও কেউ কিছু বলতে পারবে না। সেই সাথে সম্পূর্ণ নতুন রুলস জারি করতেও সুবিধা হবে। অন্তত এটাই আপাতত মনে করছে রফিক। পরেরটা পরে দেখা যাবে।
তৃতীয় এবং মূল সমস্যাটা হচ্ছে টাকা। পুরো ব্যবসাটা ঠিকঠাকভাবে করতে হলে দরকার প্রচুর পরিমাণে টাকা। এবং নেটওয়ার্ক কন্ট্রোলার হিসেবে পুরো আন্ডারওয়ার্ল্ডের টাকার পুরো ব্যাপারটা দেখতে হয় তাকে। এটা একদিক থেকে যতটা সম্মানের, অন্যদিক থেকে তেমনই ঝামেলার।
ফেয়ারওয়েল উপলক্ষ্যে পুরো টাকাটা একাট্টা করতে হয়েছিলো রফিককে। ফেয়ারওয়েলের নিয়ম অনুসারে সব হিসেব বুঝিয়ে দেবার কথা ছিলো নতুন কন্ট্রোলারের হাতে। টাকার পরিমাণটা নেহাত কম নয়, এবং এত টাকা অন্য কারও হাতে তুলে দিতেও রাজী নয় রফিক।
টাকাগুলো একটা নির্দিষ্ট জায়গায় একাট্টা করে রেখেছিলো রফিক। আপাতত সেটার দখল নিতে হবে। এবং সেটা যত দ্রুত সম্ভব। কারণ, যারা সেই টাকার রক্ষকের দায়িত্বে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের মূল নেতারা সব মারা গেছেন জানার পর ভক্ষকে পরিণত হতে তাদের সময় লাগবে না মোটেও।
অন্যদিকে শহরের সমস্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লেগে যাবে এই ঘটনার পেছনে। গোলমালের ভেতর নিজের বাকি কাজটাও সেরে ফেলতে বেগ পেতে হবে না রফিককে।
গাড়িটা খ্যাচ করে ব্রেক কষতেই সিটে পিঠ সোজা করলো রফিক। জানালা দিয়ে চাইলো বাইরের দিকে।
জায়গামতো পৌঁছে গিয়েছে তারা।
গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো রফিক। তার পাশে এসে দাঁড়ালো মজনু এবং মতিন।
তিনজনে গাড়ি থেকে নামতেই চারপাশ থেকে এগিয়ে এলো আরও চারজন। লোকগুলোকে ভালো করেই চেনে রফিক। পরীক্ষিত লোক ওরা। এই কাজের জন্য প্রস্তুত হয়েছে গত পনেরোদিন ধরে।
ধীরে ধীরে দল বেঁধে এগুলো ওরা। জায়গাটা এখান থেকে পাঁচ মিনিটের হাটা পথ।
লোকগুলো এগিয়ে এসেছে তাদের দিকে। সবার হাতেই হ্যান্ডগান।
হঠাত করেই অবাক হলো মতিন। এইমাত্র আসা লোকগুলোর ভেতর একজন পিস্তল তুলেছে তার দিকে। ঝট করে সে তাকালো মজনুর দিকে। কিছু বুঝে উঠার আগেই ট্রিগার চাপলো লোকটা।
“যাক, অন্তত একজন কমলো,” স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো রফিক। “ঐ ব্যাটাকে ভাগ দিতে হবে না আর।”
“ভাগ কাউকেই দিতে হবে না,” গম্ভীর শোনা গেলো এ সময় মজনুর গলা। “এবং কারণটাও তুমি জানো।”
পাশার দান উল্টে গেছে, স্পষ্ট বুঝতে পারছে রফিক। মজনু এবং মতিন, দুজনকেই মারার প্ল্যান করেছিলো সে। কিন্তু লোভ জাঁকিয়ে বসেছিলো মজনুর মনেও, এটা বুঝতে সময় লাগলো না তার।
সময় নষ্ট করলো না সে। ঘোষণার সুরে বললো, “এই বেঈমানটাকে মেরে ফেলো তোমরা, প্রত্যেকে পাঁচ লাখ করে পাবে।”
খেঁকিয়ে উঠলো মজনু। “খানকির পোলা! আমাকে মারা জন্য ওদেরকে বলতেছিস? তোরে আমি…”
“দশ লাখ,” মজনুর কথাটা শেষ করতে দিলো না রফিক। “আর পনেরো পাবে যে ওকে প্রথম গুলি…”
কথাটা শেষ করতে পারলো না এবার রফিক, তার আগেই ঝলসে উঠলো একজনের হ্যান্ডগানের মাজল। সেকেন্ডের ভেতর তিনটে বুলেট ছুটলো মজনুকে লক্ষ্য করে।
তবে সমস্যা হয়েছে অন্যখানে। প্রায় একই সময়ে ট্রিগার টেপার কারণে মিস হয়ে গেছে আরেকটা হ্যান্ডগানের শব্দও। দ্বিতীয় হ্যান্ডগান থেকে বের হওয়া বুলেট রওনা দিয়েছে রফিকের দিকে।
………………………………………………………………..(সমাপ্ত)………………………………………………………….