অভিশপ্ত কটেজ

অভিশপ্ত কটেজ

২৮.০৬.১৯৯৮,রাত ১১.৩০
আজ উঠলাম নতুন বাড়িটায়।নিজের পরিশ্রমের টাকায় কেনা যেকোনো কিছুই অমূল্য সেটা যত কম মূল্যের ই হোক।বাড়ি না বলে কটেজ বলায় শ্রেয়।কটেজ টাতে প্রায় ১৫টার মতো ঘর আছে।সামনে বাগান পিছনে ঝোপ ঝাড়ের মতো।প্রকৃতির খুব কাছে।কোলাহল মুক্ত।আহা শান্তি।আশে পাশে বাড়ি ঘর নেই বললেই চলে যেগুলো আছে সেগুলো বেশ দূরে দূরে।তাই বেশ শান্তি। বলতেই হয় খুব কম দামে পেয়েছি কটেজ টা।সবচেয়ে ভালো বেপার হল বিশাল একটা লাইব্রেরি ভর্তি বই পেয়েছি কটেজ টায়।আজ গোছগাছ তো কিছু হল না।এখন ঘুমাই শুভ রাত্রি ডিয়ার ডায়েরি।

২৯জুন,১৯৯৮,রাত ১২.০০
কাল রাতে ভাল ঘুম হয়নি হয়ত নতুন জায়গা বলেই।কেমন একটা অস্বস্তি।বার বার ঘুম ভেঙে যাচ্ছিল।আজ আশা করি খুব ভাল ঘুম হবে।আজ অফিস এ তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটেনি।মোটামুটি সব ঝাড়ামোছা কম্পলিট।কাল একজন মেইড যোগাড় করতে হবে।আজ অন্তুর সাথে কথা হয়নি খারাপ লাগছে।
শুভ রাত্রি সোনা।

৩০জুন,১৯৯৮ রাত ১১.৩০
অ্যা পার্ফেক্ট ডে।অনেক ভালো কেটেছে দিন।মেইড যোগাড় হয়ে গেছে ওর নাম আয়েশা।লাইব্রেরিতে প্রচুর বই।মজার বেপার সর্টিং করায় আছে।বেশ ভাল কাটবে দিন আশা করি।

১জুলাই,১৯৯৮
ছুটিটা ভাল কাটবে আশা করি।অনেকদিন পর ছুটি নিলাম।মানসিক প্রশান্তির ও দরকার আছে খুব দরকার।আর তার জন্য পার্ফেক্ট সঙ্গী বই।হোপ ফর দ্যা বেস্ট।আয়েশা বেশ চটপটে ভাল রান্না করে।রাতের অস্বস্তিটা কাল রাতে আবার উদয় হয়েছে।

প্যাসেজের শেষ ঘরটায় থাকে ও।ওহ বলায় হয়নি তোমায় কটেজটা এক জমিদারের ছিল তাই এতো বড়।আজ ই জানলাম।

২জুলাই,১৯৯৮ রাত ১২.৩০
ছুটির প্রথম দিন বেশ ভালো গেল।লাইব্রেরিটা বেশ।অনেক অনেক বই।বই গুলা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে আজ।লাইব্রেরিতে তাকে রাখা নীল রঙের ডায়েরি টা টান দিয়ে নিতে যেতেই তাক টা সরে গিয়ে একটা ঘর দেখতে পেলাম।ঘরের ভিতরে ঢুকব কাল।এডভেঞ্চার ইজ অলওয়েজ মাই ফেভরিট।কাল ফুল এনার্জি নিয়ে ঢুকব।উইথ আয়েশা।

৩জুলাই,১৯৯৮রাত ১.৩০
আসলে তারিখটা কি ৩জুলাই হবে? হবে না হয়ত।যাক সে কথা।ঘরটাতে ঢুকেছিলাম।ধুলা আর মাকড়শার জালের আস্তরণ জিনিস পত্র নেহাৎ কম নয় আর ঘরটাও বেশ বড়।মনে হল কারো ল্যাবরেটরি ছিল।অথবা লাইব্রেরি।সেখানে একটা টেবিলে বিকার আর টেস্ট টিউব এর মতো কিছু জিনিস আর তরল পদার্থ ভরা বোতল পেয়েছি।আর সাথে পেয়েছি অনেক পুরোনো পুঁথি আর বই।আর গোটাতিনেক বাক্স।সুন্দর কারুকাজ করা।ঘরটা পরিষ্কার করতে বলেছি আয়েশাকে।কোনো কিছু না সরিয়ে শুধু ধুলো সরাতে বলেছি।দেখি কাল আবার যাব একবার।ঘরটার প্রতি আকর্ষণ বোধ করছি।যাক শুভ রাত্রি।কাল আবার অফিস আছে।

৫জুলাই,১৯৯৮রাত ১.০০

বাবা এসেছিল।তাই ব্যস্ত ছিলাম লিখতে পারিনি।বেশ ভালো দিন কেটেছে।খুশি ছিলাম। চলে গেলেন আজ বাড়িতে।আবার একা

একা না একা না আয়েশা আর আমি।

৬জুলাই,১৯৯৮ রাত ১০.৩৫
অবশেষে আজ ঘরটাতে ঢুকলাম।ঢোকার সময় হল আর কি!পুঁথি গুলা লাইব্রেরিতে এনেছি আর বাক্স গুলোকে ওখান থেকে বের করে এনেছি।কিন্তু ঘরটায় একটা গুমোট ভাব আছে।অস্বস্তিকর।যাক এবার লাইব্রেরিতে….

রাত ১.০০
তখন আয়েশার চিৎকার শুনে বেরিয়ে গেছিলাম।গিয়ে দেখি ভয়ে কাঁপছে রান্নাঘরে।জানালায় না কি ছায়া দেখেছিল বাইরে আমি বাইরে গিয়ে শুধু একটা কালো বিড়াল ছাড়া কিছু দেখলাম না।তারপর তাকে শান্ত করে কিছু রান্না করে খেয়ে আসলাম।ঘুম ঘুম লাগছে।
কাল অনেক কাজ আছে তাই ডিয়ার ডায়েরি গুড নাইট।

৭জুলাই,শুক্রবার,রাত১০.০০
আজ বেশ আগে ভাগেই শুবো বেশ ক্লান্ত লাগছে। আজ যে অনেক পরিশ্রম করেছি।যাক এবার আসল কথায় আসি।কাল রাতের ঘটনার কোনো রেশ আজ আয়েশার মধ্যে ছিল না।
বেশ স্বাভাবিক ছিল।

পুঁথি গুলো ঘেটে যা বুঝলাম তা হল এগুলো জমিদার পরিবারের জীবনী বলা যায়।আর তাদের শৌর্য গাঁথা,প্রজা বৎসল জমিদার যাকে বলে।আর কিছু লেখা পড়ার অযোগ্য।পুঁথি পড়তে পড়তে বাক্স গুলো খোলার সময় ই হল না।এই জায়গা টায় বেশ শান্তি তে আছি।
লিখে ফেলি যা যা জানলাম

এই জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা বদরুদ্দিন মোহাম্মদ বদর।তিনি সুদূর পারস্য দেশ হতে এখানে এসেছেন।এবং ব্যবসা বাণিজ্য করে টাকা।এবং কূটনীতি করে রাজ্য দখল করেছেন।এই কটেজ টা তার স্টাডি প্রাসাদ প্লাস বাইজি খানা ছিল।

তার কোনো ছেলে সন্তান হচ্ছিল না ছেলের আশায় তিনি ৫টা বিয়ে করেন শেষ তথা পঞ্চম নারীর গর্ভে জন্মে তার প্রথম পুত্র সন্তান।

পুত্র সন্তান টি প্রজাদের সুখ দুঃখের খেয়াল রাখত।তাদের যেকোনো সমস্যায় সাহায্য করত এককথায় পারফেক্ট জমিদার।

নাম ছিল তার ফখরুদ্দীন মোহাম্মদ ফখর।

একবার তিনি শিকার করতে জঙ্গলে যান। সেখানে কুটিরে এক অপূর্ব সুন্দর কৃষক পুত্রী দেখেন।এবং তাকে বিয়ে করে নিজের রাজপ্রাসাদে নিয়ে আসেন কয়েক ছর পর তাদের ঘর আলো করে আসে এক পুত্র সন্তান।
এর পরের পুঁথির লেখা গুলো অস্পষ্ট।

এরপর আবারো স্পষ্ট ভাবে ভ্যাম্পায়ার দের নিয়ে লেখা।
লিখা থেকে জানতে পারি।ফখর এর পুত্র

সবরুদ্দিন মোহাম্মদ সবর ভ্যাম্পায়ার তথা রক্তচোষা দের নিয়ে গবেষণা করেছেন।তার ভাষ্যমতে ভ্যাম্পায়ার ছিল বাদুর জাতীয় কিছু একটা যারা ট্যালিপোর্টেশন এ খুব দক্ষ ছিল।অর্থাৎ চোখের নিমিষে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারত।তারা ছিল শেপ শিফটার যেকোন সময় যেকোন আকার ধরতে পারত তারা।রোদ সহ্য ক্ষমতা শূন্যের কাছাকাছি ছিল তাদের।তবে হ্যাঁ তারা শিকারের রক্ত নালী ছিঁড়ে খেতে পছন্দ করত।সবচেয়ে বেশি পছন্দ করত যুবতী মেয়েদের রক্ত।

যাক বাঁচলাম ভ্যাম্পায়ার থাকলেও আমার কিছু হত না আমি তো ছেলে।হাহহাহা।
তারপর আর কিছু পড়ার অবস্থায় ছিল না।

প্রায় ১১.৩০ বাজে এবার ঘুমানো যাক।

৮ জুলাই, ১৯৯৮ রাত ১২.৩০

এবার মনে হয় বিয়েটা করতেই হবে হাহ। বাবার পছন্দ আমার মতামত এর খুব একটা মূল্য নাই, বুঝলাম।যাক সেকথা।

আজ বাক্স গুলো খুলেছি।বাক্সটা মনে হয় কোনো মেয়ের ছিল।একটা অপূর্ব সুন্দরীর ইসস আমি যদি তখন জন্মাতাম তবে নিশ্চয় তাকে বিয়ে করতাম।ছবিটা অতিরিক্ত প্রাণোজ্জ্বল।মনেই হয়না পুরোনো কোনো ছবি।আর ঠোঁট অসম্ভব লাল।রক্ত টক্ত খাইত না কি আল্লাহ জানে।

দ্বিতীয় বাক্সে ছিল আর ও অনেক পুঁথি।

তৃতীয় বাক্সে কিছু রাউন্ড টাইপ চিঠি আর একটা মেয়ের ড্রেস ঘুঙুর একটা ফাঁকা বোতল, একটা কয়েন আছে একটা বোতলে কিন্তু ওইটা ঢুকল কিভাবে বুঝলাম না।অনেক চেষ্টায় ও বের করতে পারিনি।ওহ কিছু গয়নাও ছিল বাক্সটায়।পুঁথি গুলো কাল পড়ব।লেখাগুলো মেয়েলি কারণ অনেক সুন্দর লেখা।গোটাগোটা।বেশ বেশ।
আর না কাল আবার দ্রুত উঠতে হবে।সুরাত্রি জানু।

৯জুলাই,১৯৯৮রাত ১২.০০
কাল রাতের বিভীষিকা এখন ও ভুলতে পারি নি ।আসলে এতোটা ভয় কখনো পাইনি।রাতে শোয়ার একঘন্টার মধ্যে বাজে একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেল।

স্বপ্নে দেখলাম সেই ছবিতে দেখা মেয়েটা একটা ছেলেকে খুন করছিল। প্রথমে তার গলার রক্ত নালী ছিঁড়ে রক্ত খেল।চোখ দুটো অন্যরকম ভয়ধরানো।

ছেলেটাকে মেরেই শান্ত হল না।তার মাংস কামড়ে কামড়ে খেল।উফফফ অসহ্য।ভাগ্যিস ঘুমটা ভেঙে গেল না হলে ওখানেই মারা যেতাম।

পানি খেয়ে শুলাম অস্বস্তিটা কাটল না।ঘরটা অতিরিক্ত ঠান্ডা।নাহ আবার উঠে জানালা টা লাগাতেই হচ্ছে।কিন্তু একি জানালা তো বন্ধ তাহলে ঘর যে ঠান্ডা দেখি কাঁথা মুড়ি দিয়েই শুই।কিন্তু বাইরের ঘুঙুরের শব্দ ঘুমাতে দিল আর কই।নাহ নাজরি(ডায়েরির নাম) পাস্ট টেন্স ঠিক জজমছে না তোমায় প্রেজেন্ট টেন্স এই শুনাই কাহিনি।বললাম বাইরে

কে!!!

কোনো জবাব এলো না।

“আয়েশা তুমি কি ঘুঙুর পরেছো??? তোমার কি কিছু লাগবে?”

নাহ কোনো জবাব নেই।

অগত্যা উঠে যেতেই হল বেড়িয়ে দেখলাম কেউ নেই বেলকনি থেকে একটা ছায়া মূর্তি সরে যেতে দেখলাম।বড় ঘড়িটা ঢং ঢং করে জানান দিল রাত দুটা বেজে গেছে।আমি ঘরে ঢুকলাম আর অমনি দরজা টা আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেল।আর ঘর জুড়ে বেলি ফুলের সুবাস মাদকতাপূর্ণ মেয়েলি গন্ধ।আচ্ছা কেউ কিভাবে জানবে আমার বেলি ফুলের সুবাস ভালো লাগে!

যাক ঘরটা শীতল হচ্ছে কারো উপস্থিতি আর গুনগুন করে সুমধুর গান শুনতে পাচ্ছি।কে আসলে সে!কি চায় এখানে!যাই চাক আমি তার ঘ্রাণের প্রেমে পরে গেছি।যাক বিছানায় কে যেন বসে আছে সে ই কি ঘ্রাণের উৎস!!!

আমিঃএই মেয়ে এখানে কি করো!

সেঃআগে বসো।আমি সুনন্দা।এখানেই আমার বাস।তোমার প্রেমে পরেছি তাই তোমার কাছে আসলাম।

আমার ভয় করছিল কিন্তু ভয়ের ভাবটা মুখে না ফুটিয়ে

আমি ঃতোমাকে দেখতে চাই।তোমার ঘ্রাণের প্রেমে পরেছি কন্যে একবার দেখা দাও আমায়।

সুনন্দাঃ ঠিকাছে দেখা দেব প্রিয়।

তাকে দেখে তো আমি….. বুঝে নাও।খুব পছন্দ হয়েছে।কিন্তু তার চোখ দুটো অতিরিক্ত জ্বলজ্বল করছে।কিন্তু কি যেন একটা সম্মোহনী শক্তি আমার চিন্তা ভাবনাকে অবশ করে দিল।আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম সে আমার কাঁধে মাথা রাখল হঠাৎ কাঁধে একটু চিমটি কাটার মতো ব্যথা পেলাম।তারপর কি হল আর কিছু মনে নেই সকালে উঠে দূর্বল লাগছিল নিজেকে।তেমন একটা গুরুত্ব দিলাম না।রাতের ঘটনাটা স্বপ্ন মনে হল কিন্তু আমি রাতের অপেক্ষা করছি।এখনো অপেক্ষা করছি কখন আসবে আমার নন্দা!

দিনে একটাই উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে।সেটা হল আমি যখন অফিস যাচ্ছিলাম তখন এক পাগল আমার কাছে এসে বলতেছে ও ফিরে এসেছে তুই চলে যা চলে যা তুই।বাড়ি ছেড়ে চলে যা।

কে আসছে কেন চলে যাব!কিসের কথা বলল পাগল্টা!হাযারো প্রশ্ন মনে উত্তর কই!নাই উত্তর।অপেক্ষা শুধুই অপেক্ষা।

১০জুলাই,১৯৯৮

রাত ১০ টা

ভালোবাসি সুনন্দা।

বড্ড বেশি বাসি।

১১জুলাই,১৯৯৮

আগে কেন পেলাম না তোমায়।

১২জুলাই,১৯৯৮ রাত ১১টা।

আয়েশা কে ছুটি দিয়ে দিলাম।সব বেতন চুকিয়ে দিলাম।এখন শুধু আমি আর সুনন্দা।

১৩জুলাই,১৯৯৮ রাত ১২টা

শরীর বেশ খারাপ।

সুনন্দা তুমি শুধু আমার।

১৪জুলাই,১৯৯৮রাত১.০০

খুব দূর্বল লাগছে এসেছিল সুনন্দা সেই চিনচিনে ব্যথা।

১৫জুলাই,১৯৯৮রাত ১০.০০

সুনন্দার প্রেম আমায় অন্ধ করে দিয়েছিল। এখন আমি মৃতুয়্র পথে।কেউ এই ডায়েরি পেয়ে থাকলে বেরিয়ে যাও কটেজ ছেড়ে।

এতোক্ষনে পড়া শেষ হল ডায়েরিটা।জুঁই কালই উঠেছে কটেজে।আর আজ বেডরুমের ড্রয়ারে পেয়েছে ডায়েরি টা।ডায়েরির মালিক আফাজ আহমেদ।ডায়েরির শুরুটা সুন্দর ছিল।যাক সেসব।

আজ প্রথম রাত থাকছে এখানে আগের রাতে অফিসের কাজেই আটকে গেছিল।লাইব্রেরি তে গিয়ে ডায়েরির বর্ণনা মত ঘর আবিষ্কার করতে তার সময় লাগল না।ভেতরে উল্লেখ যোগ্য কিছুই নেই।শুধু একটা আলমারি।খুলতে পারল না সে।

আর লাইব্রেরিতে পেয়ে গেল বাক্স তিনটা।

আরেকটা ছবি পেল তাতে।তৈলচিত্র একটা ছেলের দীপ্তিময়।

আর একটা হাতে লেখা চিঠি পেল বইয়ের নিচে সাথে একটা অদ্ভুত দর্শন মাদুলী।তাতে লেখা ছিল,
“যে এই চিঠি এখন পড়ছো তার কাছে অনুরোধ মাদুলী টা যেন নিজের কাছে রাখে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কটেজটা ছেড়ে যায়।আমি ভুল করেছিলাম মাদুলীটা ব্যবহার না করে তুমি এই ভুল্টা করো না অতিথি এই আমার অনুরোধ।এখন আর মাদুলীটা আমার উপর কাজ করবে না আমিই যে পিশাচ।

আমি আফাজ আহমেদ বেডরুমে রাখা ডায়েরিটা পড়ে থাকলে সুনন্দার কথা জানার কথা।আসলে সে ভ্যাম্পায়ার ছিল।একইসাথে সে এই জমিদার বংশের রাজ মাতা ছিল।তার ছেলেই ছিলেন শেষ শাসক।সেই প্রথম দিনের ঘাড়ে চিনচিনে ব্যথার কারণ তার রক্ত খাওয়া।আমি দিন দিন দূর্বল হয়ে পরছিলাম।প্রাণশক্তি কেউ শুষে নিচ্ছিল।খুব তেষ্টা পেতে লাগল রাত ১২টার পর পানির তেষ্টা রক্তের তেষ্টায় পরিণত হত।প্রথম প্রথম প্রাণিদের রক্ত খেতাম।দুদিন থেকে নিজের শরীর কামড়ে কামড়ে খাচ্ছি।এই তেষ্টার শেষ কোথায় জানি না।

সাবধানে থেকো অজানা অতিথি।তোমার জীবনে অনেক বড় ঝড় আসতে চলেছে!””

চিঠি পড়া শেষ করে জুঁই খুব একচোট হাসল।এই ২০১৫ সালে কেউ এসব গাঁজাখুরি বিশ্বাস করে??? লাইব্রেরি রুম বন্ধ করে নিজের ঘরে গেল ঘুমাতে।

কেমন গুমোট ভাব ঘরটায় অস্বস্তি লাগে।পাত্তা দিল জা জুঁই।শুয়ে পড়ল।খেয়াল করলই না একজোড়া রক্ত চক্ষু খোলা জানালা দিয়ে লক্ষ রাখছে তার দিকে।

খেয়াল করলেই বোধহয় ভালো করত মেয়েটা।

রাত ১.৩০ এ সে জাগা পেল।সাধারণত এক ঘুমেই তার রাত কেটে যায়।সে ভাবল নতুন জায়গাটায় হয়ত তার অস্বস্তির কারণ।তাই সে ভাবল একটু হাঁটাহাঁটি করা যাক প্যাসেজ এ যেই ভাবা সে ই কাজ।হাঁটতে হাঁটতে প্রকৃতির সৌন্দর্যে তার মন ভরে উঠল ঠিক সেই সময় কারো হাঁটার আওয়াজ পেল সে।ঠক ঠক ঠক ঠক….ঘুরে দেখল কিন্তু কিছুই খুঁজে পেল না।হয়ত মনের ভুল।সারাদিনের পরিশ্রম এর জন্যেই হয়ত এমনটা।পাত্তা না দিয়ে ঘরে গেল ঘুমাতে।

এক ঘন্টাও ঘুমিয়েছে কিনা সন্দেহ।একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে জেগে উঠল সে।সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়েছে হাতের আঁচড়ের দাগ দেখে স্বপ্ন আর বাস্তবের এতো মিল! কি করে সম্ভব!!!একটা মেয়ে দাঁত চেহারায় মায়া আছে,একটা টান।সে কিছু একটা নিয়ে খুব খুশি ছিল।তারপর হঠাৎ অন্ধকার নেমে এলো একটা জঙ্গল দেখতে পেলাম কিছুক্ষণ আগে দেখা মেয়েটাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কিছু লোক।তারপর তাকে একটা বেদিতে শোয়ানো হল তার হাতের রগ হাড্ডি জাতীয় কিছু দিয়ে ঘষে ঘষে কাটা হল সে ব্যথায় ছটফট করছিল তার চেহারা নীল বর্ণের হয়ে গেছে,প্রচুর ভয় পেয়েছে বুঝায় যায়।তারপর আবার অন্ধকার।অদ্ভুত আলখেল্লা পরা এক মানুষ আসল তার ঘরে।কিন্তু সে তো দরজা ঠিকভাবে লাগিয়েছিল তবে!জুঁই নড়ার শক্তি পাচ্ছে না।সে জানে এখন না নড়লে তার মৃত্যু নিশ্চিত তবুও সে

নড়তে পারছে না।আলখেল্লাটা যেনো হাওয়ায় ভাসছে।লোকটার মুখ দেখা যাচ্ছে না।আলোতে আসতেই মুখ দেখা গেলো।কি বীভৎস চেহারা।এখানে মাংস খুবলানো চোখ দুটো কোটরের বাইরে ঝুলে আছে,গাল থেকে পঁঁচা গলা মাংস খসে পরতে চাচ্ছে কিন্তু পরছে না।হাতের অনেক্টাতে মাংস নেই।তার জিভ দিয়ে অদ্ভুত ভাবে জিভ চেটে এগিয়ে আসছে।ভয়ে জুঁই চোখ বন্ধ করে ফেলল আবার খুলে আলখল্লা টা নাই কিন্তু একি তার নিঃশ্বাস নিতে এতোকস্ট হচ্ছে কেন!মনে হচ্ছে বুকে ৭০ কেজি ওজনের পাথর চেপে আছে।তার হাতে কিছু একটা হল খুব ব্যথা পেল সে হঠৎই ওজন টা নেমে গেল ঘুম ভেঙে গেল তার।জেগে উঠে দেখে হাতে গভীর ক্ষত।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১.৫৯ বাজে কেবল।মানে রাতের এখনো অনেক বাকি।জুঁই লাইব্রেরিতে দৌড়ালো সেখানেই রাখা আছে মাদুলীটা।

যদিও সে কখনোই এসবে বিশ্বাস করত না।কিন্তু আজ বিশ্বাস না করলেও তার সিক্সথ সেন্স বলছে মাদুলীই পারে তাকে বাঁচাতে।যদিও তার ধারণা এটা তবুও এটা ছাড়া তার আর কোনো পদ্ধতি জানা নেই।বেডরুম থেকে লাইব্রেরির পথটা তার কাছে অনন্ত মনে হচ্ছে শেষই যেন হচ্ছে না।ভয় পাচ্ছে সে খুব ভয়।হঠাৎ সে কিছু একটার অস্তিত্ব অনুভব করল।তার পিছনে কেউ একটা আসছে সন্তর্পণে।কিন্তু পিছনে তাকিয়েও সে কাউকে দেখতে পেল না।কাউকে দেখলে হয়ত ভয়টা কমত।কিন্তু না দেখতে পাওয়ায় ভয় বাড়ল।সে সামনে একটা ছায়ামুর্তি দেখল।তার দিকে এগিয়ে আসছে ধীর পায়ে। কিন্তু লাইব্রেরি থেকে দূরে। জুঁই কি করবে বুঝতে পারল না।হঠাৎ কেউ একটা তার মাথার ভেতর থেকে বলল দৌড়াও জুঁই।মাদুলীটাই প্পারে তোমাকে বাঁচাতে।যাও।কি হল জুঁই জানে না।আবেশেই

দৌড়াতে লাগল সে।লাইব্রেরিতে ঢুকে গেল সে।কিন্তু একি ভেতরে যে অন্ধকার তবুও হাতড়ে হাতড়ে চলে গেল টেবিলের কাছে।মাদুলীটা কোথায় টেবিলেই তো ছিল।কোথায় গেল সেটা।হঠাৎ কিছু একটার সাথে হোঁচট খেয়ে পরে গেল সে।নরম লাগল পিচ্ছিল তরল কিছু একটাতে পা ফসকেছে তার।কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে হঠাৎ তার হাতে এসে ঠেকল মাদুলীটা।সে তাড়াতাড়ি উঠে মাদুলীটা পরে নিল এবং হাতড়ে হাতড়ে সুইচ বোর্ড খুঁজে লাইট জ্বালিয়ে দিল।লাইট জ্বালিয়ে যা দেখল তাতে তার জ্ঞান হারানোর অবস্থা।আর সহ্য করতে পারে না জুঁই ঘর থেকে বেরিয়ে প্যাসেজে মাথা ঘুরে পরে যায়।সেন্সলেস হয়ে যায় জুঁই।

পরদিন সকালে বাড়ির কেয়ারটেকার আসে জুঁই কেমন আছে তা দেখতে।অনেক ডাকাডাকির পর ও দরজা না খোলায় তিনি ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে জুঁইকে খুঁজতে খুঁজতে উপরে যান এবং জুঁইকে অজ্ঞান অবস্থায় পান।তার হাতে বেশ গভীর ক্ষত ছিল।তিনি আর সময় নস্ট না করে জুঁইকে হাসপাতালে নিয়ে যান।দুদিন পর জ্ঞান ফিরে জুঁই এর।নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করে যারপরনাই অবাক হয়।কিছু মনে করতে পারে না কিছুক্ষণ সে।হঠাৎ তার সবকিছু মনে পরে।ভয় পায় সে খুব।কেয়ারটেকার তাকে দেখতে আসলে জুঁই তাকে সব খুলে বলে।আর জানতে চায় এই স্বপ্নগুলোর সম্পর্ক কি??

সব শুনে কেয়ারটেকার বললেন,আমার তোমাকে আগেই সাবধান করা উচিৎ ছিল মা।আমি বুঝিনি আমার এতোটুকু ভুলের এতোবড় মাশুল দিতে হবে তোমার,তা বুঝিনি মা। আমায় ক্ষমা করে দাও।তোমাকে সব জানাতে হবে আমার, সবটা। আমার বাবার দাদা ছিলেন এই জমিদার পরিবারের খানসামা।আমরা বংশপরম্পরায় এই রাজবাড়ির দায়িত্ব পালন করছি।আমি জানি এই বাড়িতে অতৃপ্ত খারাপ আত্মারা ঘুরে বেড়ায়।

জমিদার বাড়ির শেষ বংশধরের মা ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারি ছিলেন।তার বিশেষ ক্ষমতায় তার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।যদিও তার ক্ষমতাগুলো প্রচ্ছন্ন ছিল।একদিন তিনি কোন এককাজে রাজ্যের বাইরে গিয়েছিলেন। তখন তাকে একদল অপশক্তির মানুষ যারা ছিল পিশাচ দেবতার উপাসক।তারা তাকে একটা জঙ্গলে নিয়ে যায় তুমি স্বপ্নে যে জঙ্গল টা দেখেছো সেখানে।তাকে শয়তানের বলি দেয়া হয়। তার হাত কেটে রক্ত খাওয়ানো হয় এক ভ্যাম্পায়ার কে। আর তার মৃত্যুর পর সে জেগে ওঠে ভ্যাম্পায়ার রূপে।তার দুই রূপ একটা অপুরূপ সুন্দরী সুনন্দা আর অপরটা ভয়ঙ্কর পিশাচীমূর্তি। তিনি সুনন্দা রুপে ফিরে আসেন।কিন্তু প্রতি আমাবশ্যায় তার শক্তি বৃদ্ধি পেতে লাগল আর রাজ্যের প্রজারা তাদের প্রিয়জনদের হারাতে লাগল।রাজা দুশ্চিন্তায় পরে গেলেন।এদিকে রাণী সুনন্দা আর ও দূর্বল হয়ে যাচ্ছে।বৃদ্ধি পাচ্ছে ভ্যাম্পায়ারদের আক্রমণ। শেষে এক অমাবশ্যার রাতে হঠাৎ রাজার ঘুম ভেঙে যায় এবং

দেখেন রাণী তার দিকে এগিয়ে আসছে রাণীর দাঁতগুলো অস্বাভাবিক রকম বড়।কিছু করার আগেই রাণী রাজার রক্তনালী ছিড়ে সব রক্ত শুষে নেয়।কিন্তু রাণী জানত না যে তাকে লক্ষ্য রাখছে রাজার গুপ্তচর।সেই গুপ্তচর যে একজন তান্ত্রিক জোগাড় করে আনে এবং রাণী রুপী পিশাচীকে এই জমিদারবাড়ির ই একগোপন কুঠরীতে বন্দি করে যে খানে অনেক বস্তু ছিল।বৈজ্ঞানিক গবেষণার পুঁথির আর ও অনেক কিছু কারণ রাণী ছিলেন এসবে আসক্ত।তার ব্যবহৃত সব জিনিস ওই ঘরে রেখে তা বন্ধ করে দেওয়া হয় মন্ত্র দিয়ে।তখন ও সম্পূর্ণ পিশাচী হতে, সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হতে তার দরকার ছিল একজন পুরুষসঙী যে তাকে মুক্ত করবে এই বন্দী গৃহ থেকে।পরবর্তীতে ইংরেজ শাসনামলে এটি অত্যাচার খানায় পরিণত হয়।পরবর্তিতে এটি অনেকদিন বন্ধ থাকে পরে এক ধনী ব্যক্তি এটা কেনেন।পরবর্তীতে অনেক হাতবদল এর পর এটি আসে আফাজ আহমেদের কাছে। পরের ঘটনা তুমি জানো।এসবই আমি জেনেছি আমার দাদুর থেকে।

জুঁই বলল, তাহলে ওই পচাগলা লাশ টি কার ছিল?

কেয়ারটেকার বলল,আমি তো কোনো লাশ পাইনি মা।আজ তোমায় আমার বাড়িতে নিয়ে যাব।আজ রিলিজ করে দিবে হাসপাতাল থেকে।

সব শুনে জুঁই সিদ্ধান্ত নিল সে আর ওইবাড়িতে থাকবে না।শুধু একদিন গিয়ে তার জিনিসপত্র নিয়ে আসবে আর থাকা যাবে না ওই বাড়িতে।কাল সকালেই যাবে সে সেখানে।

যেমন ভাবা তেমনি কাজ পরদিন সকালে জুঁই ওই কটেজ থেকে সব জিনিস নিয়ে নিজে ড্রাইভ করে শহরে ফিরছিল।কটেজের গেট পেরিয়ে রাস্তায় যেতেই সে গাড়ির ব্যাকভিউ মিররে একটা মহিলার ছবি দেখল সুন্দরী যুবতী থেকে ধীরে ধীরে বৃদ্ধায় পরিণত হচ্ছে।এটা দেখতে গিয়ে জুঁই গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পরে গেল।কি হল জুঁইয়ের! কেউ জানে না।হয়ত সে নেই।হয়ত সে কটেজটাই বন্দী।

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত