ক্যানভাসের মুক্তিদাতা

ক্যানভাসের মুক্তিদাতা

ইদানীং পত্রিকার খবরগুলো পড়লে মনে হয় সাংবাদিকতার দায়িত্বে যারা ছিলো হয় তারা নেশাগ্রস্থ হয়ে রিপোর্ট লেখে নইলে তাদের সবার ই ইচ্ছে ছিলো কাল্পনিক গল্পের লেখক হবার। তা নাহলে কেউ অমন খবর পত্রিকায় ছাপায়? লন্ডনের বিখ্যাত “দ্যা নেশন” পত্রিকার শেষের পাতায় একটা খবর দেখে সকাল থেকেই মেজাজটা বিগড়ে আছে। শেষের পাতায় প্রথম কলামের লেখাটা অনেকটা এরকম ।

“জাপানের একটা পাহাড়ি অঞ্চলে একদল শিকারি পাখি শিকার করতে গিয়েছিলো। পাহাড়ের চূড়ায় তাদের ক্যাম্প। জাপানের অতি প্রাচীন পর্বত “মাউন্ট নরিকুরা” তে বেশকয়েকদিন কাটিয়ে ওরা বিভিন্ন জাতের পাখি শিকার করেছে। শেষ দিন গন্তব্যের তুলনায় একটু বেশী ওপরে উঠে গিয়েছিলো চার সদস্যের শিকারির দল। ওপরে পৌঁছে দেখে শিকার করার জন্য পাখির সংখ্যা এখানে ঢের বেশী । মনের আনন্দে পাখি শিকার করতে করতে প্রায় সন্ধ্যা নেমে এসেছিলো পর্বতের চূড়ায়। সন্ধ্যার তরল অন্ধকার যখন ধীরেধীরে ঘনীভূত হচ্ছে তখন তারা দেখে তাদের কাছ থেকে খানিকটা দূরে একটা বিশালাকার প্রানী ভেসে ভেসে চলে যাচ্ছে আরো দূরে। প্রথমে পাখি মনে করে ভুল করলেও পরে তাদের দৃষ্টিগোচর হয় এক অদ্ভুত দৃশ্য। শিকারি দের একজনের ভাষ্যমতে ওটা পাখি ছিলোনা বরং অন্ধকারে যতটুকু চোখে পড়েছে তাতে মনে হয়েছে সাদা লোমশ কোন ডানাবিহীন প্রানী পিঠের ওপর আরেকটা

প্রানীকে নিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে পর্বতের আনাচেকানাচে। লোমশ প্রানীটা দেখতে অনেকটা শ্বেতভাল্লুক এর মতন। তবে আকার শ্বেতভাল্লুকের তুলনায় তিনগুন বড়। ওর পিঠে অপেক্ষাকৃত ছোট একটা প্রানী ছিলো যা ঐ প্রানীটাকে নিয়ন্ত্রণ করছিলো। আরেকজন শিকারির মতে ওটা মানুষ ছিলো। উনি নাকি স্পষ্ট দেখেছেন দোপেয়ে কোন জীব ভাল্লুকের মত প্রানীটার ওপর বসে ওটার ঘাড়ে লাগানো লাগামজাতীয় কিছু ধরে টানছিল। এই দৃশ্য বেশীক্ষণ দেখার সৌভাগ্য হয়নি শিকারিদের। কারন মিনিট পাঁচেক পরেই ঐ অদ্ভুত প্রানীদুটো ভাসতে ভাসতে পর্বতের আড়ালে মিলিয়ে যায়। শিকারিদের কাছে ক্যামেরা ছিলো কিন্তু ফ্লাশ বালব না থাকায় অন্ধকারে ছবি তুলতে পারেনি। তাছাড়া এরকম দৃশ্য দেখার পর উত্তেজনা দমন করা কঠিন হয়ে পড়েছিল ওদের জন্য। তাই কি করবে কি না করবে ভাবতে না ভাবতেই ওদের চোখের আড়ালে চলে যায় ঐ প্রানীগুলো। একজন শিকারি নাকি গুলিও ছুড়েছিল ওদের দিকে কিন্তু গুলিটা লেগেছে কিনা তারা জানেনা। তবে একটা বিকট চিৎকার শুনেছে ওদের প্রায় সবাই।প্রানীটা যদি আবার ফিরে আসে এই ভয়ে তারা দ্রুত পর্বত ত্যাগ করেছে। তারপর স্থানীয় সংবাদদাতা কে জানিয়েছে।

স্থানীয় অধিবাসীরা বলছে শিকারির দল সম্ভবত ড্রাগন দেখেছে। মাউন্ট নরিকুরাতে যারা থাকে তারা নাকি প্রায়ই দেখেছে একটা কালোমতো ড্রাগন উড়ে বেড়াচ্ছে পর্বতের ধারঘেষে। আর ওদের শ্বাসপ্রশ্বাস থেকে বেরুনো আগুনে পাহাড়ি জন্তুজানোয়ার কে পুড়ে খেতে দেখেছে কেউ কেউ। কিন্তু ড্রাগন সাদা হওয়ার কথা না। তাছাড়া কেউ ড্রাগনের ওপর চড়ে বসে ওটাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকলে উনি নিশ্চয় দেবতাদের কেউ হবেন।
ড্রাগনদের পুণ্যভূমি এই জাপান। ফলে ব্যপারটা নিয়ে এলাকাবাসী কেউ মাতামাতি করেনি। ”

খবরটা পড়ার পর থেকেই অযথা রাগ উঠে যাচ্ছিলো। রাগটা মূলত খবরের সাথে সম্পৃক্ত নয়। আমার কাজের সাথে সম্পৃক্ত। কাজ বলার আগে আমার পরিচয়টা দিয়ে নিচ্ছি। আমি জাকি। চারুকলার ছাত্র। বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে এসেছি দুবছর হলো। এখানকার লোকজন আমায় জ্যাক নামে চেনে। এখানে এসেই চাকরী পেয়েছি লন্ডন মিউজিয়ামের কিউরেটর স্যার গ্যালভি মিলারের অধীনে। খুবই ছোট কাজ। মিউজিয়ামের যত বিখ্যাত পেইন্টিংস আছে সব গুলো একটা বিশেষ ইনগ্রেডিয়েন্ট দিয়ে স্প্রে করে পলিশিং করতে হয় আমাকে। মিউজিয়ামে থাকতে থাকতে পেইন্টিং এ ময়লা জমে গেলে সেগুলো খুব সাবধানে পরিষ্কার করে আবার রাতারাতি ফেরত পাঠাতে হয় কিউরেটর মিলারের কাছে।

কাজটা গোপনীয়। মিলার ও মিউজিয়াম কতৃপক্ষ ছাড়া এ ব্যপারে তেমন কেউ জানেনা। জানাটা বিপদজনক। কারন আসল আর্টিস্ট যদি জানে যে তাদের পেইন্টিংস আমরা নাড়াচাড়া করি তবে বিপদ হতে পারে। কারন ক্ষেত্রবিশেষে পলিশ করার সময় কোন জায়গায় রঙ উঠে গেলে আমাকেই নতুন রঙ বসিয়ে কাজটা সারতে হয়। যদিও বেশীরভাগ পেইন্টিং এর স্রষ্টা এখন মৃত।

আমার রাগের কারন হচ্ছে কয়েকদিন আগে ড্রিংকস করতে করতে একটা পেইন্টিং এর পলিশিং এর কাজ করছিলাম। এর আঁকিয়ে মিস্টার থম্পসন। নতুন আর্টিস্ট।খুব ভালো আঁকেন এবং এখনো বহাল তবিয়ৎ এ বেঁচে আছেন।

আমি কাজ করছি, হঠাৎ ধাক্কা লেগে হাতের গ্লাসটা পড়ে গেলো টেবিলে শোয়ানো পেইন্টিংটার ওপর। গ্লাসের সমস্ত রেড ওয়াইন ঢেলে ছড়িয়ে পড়লো পেইন্টিং এর পুরো ক্যানভাসে। নিজের বোকামির জন্য নিজের ই রাগ হচ্ছিলো।রাগে দুঃখে মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। কি দরকার ছিলো ওয়াইন ভর্তি গ্লাস নিয়ে পলিশিং এ বসার। এখন হলোতো?

এলকোহল পড়ে পেইন্টিং এর রঙ গলতে শুরু করেছে। রেড ওয়াইনের লাল রঙ পেইন্টিং এর রঙের সাথে মিশে অদ্ভুত রঙ ধারন করেছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যপার হচ্ছে আমি এই পেইন্টিং দেখতে কেমন ছিলো সেটা মনেও করতে পারছিনা। অথচ প্রত্যেকটা পেইন্টিং নিয়ে এসে একটা করে ছবি তুলে মোবাইলে সেভ করে সেটার একটা কপি কম্পিউটারে রেখে প্রিন্ট আউট করি। তারপর সেটা দেয়ালে টানানো নোটিশবোর্ডে পিন দিয়ে আটকে দিই। যতক্ষণ কাজ শেষ না হয় ততক্ষণ ওটা ঝুলতে থাকে বোর্ডে। আর সেইদিন কিনা এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটা করতে ভুলে গেছিলাম। সত্যিই মদ জিনিসটা মানুষকে চরম ক্ষতি করতে পারে। নেশা বড় ভয়ানক জিনিস।

এখনো পর্যন্ত মিউজিয়াম কিউরেটর মিলারকে কিছুই জানাইনি।আজ সকালে ঐ একটা পেইন্টিং এর কি হলো সেটা জিজ্ঞেস করে ফোন দিয়েছিলেন মিলার।মিস্টার থম্পসন নাকি সপ্তাহখানেক বাদে তার কোন বন্ধুকে নিয়ে সেটা দেখাতে আনবেন।

চাকরীটা বোধহয় আর টেকানো যাবেনা। উলটো ক্ষতিপূরণ দিতে হয় কিনা সেই ভয়ে আছি।

বেশ দামী পেইন্টিং নষ্ট করেছি আমি। আমার লন্ডন এসে কামানো অর্ধেকের বেশী টাকা ই চলে যাবে ক্ষতিপূরণ দিতে হলে।

যে মদ আমার এত বড় ক্ষতি করেছে সেই মদের গ্লাস নিয়েই বসে আছি ড্রইংরুমে। আর চিন্তা করছি কি করা যায় । পেইন্টিং টা সম্ভবত একটা ফ্যান্টাসি ক্রিয়েচার কে নিয়ে আঁকা। দু একটা মানুষ জাতীয় প্রানীও কি ছিলো ওটাতে? সম্ভবত তবে একেবারে নিশ্চিত নই। থম্পসন মূলত ফ্যান্টাসি ক্রিয়েচার নিয়ে আঁকা আঁকি করে। আর বলাই বাহুল্য যে ভালো আঁকে। নইলে সদ্য আঁকা পেইন্টিং লন্ডন মিউজিয়ামে প্রদর্শন করাটা যেনতেন ব্যপার নয়।

আমি একা মানুষ। দুই রুমের একটা ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকি। কোন ফ্ল্যাট মেট নেই আমার। স্বাধীনচেতা মানুষ আমি। কারো সাথে ঘর ভাগাভাগি করে থাকতে ইচ্ছা করেনা।তাই পেইন্টিং নষ্ট হয়ে যাওয়ার ব্যপারটা আপাতত আমি ছাড়া কেউ জানেনা।

আজ আরো একটা এসাইনমেন্ট আসবে আমার জন্য। মিলার ফোনে জানিয়েছে। এই পেইন্টিংটাও মিস্টার থম্পসনের আঁকা। বরাবরের মত এটাও নাকি ফ্যান্টাসি ড্রয়িং।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হবার আগেই পেইন্টিং আমার হাতে পৌঁছে দিয়ে গেলো মিলারের বিশ্বস্ত দুজন কর্মচারী। আজ ঠিক করেছি দিন থাকতেই কাজ সেরে রাখবো। রাত হলেই মদের নেশা চাপতে পারে। যেটা এড়িয়ে যাওয়া আমার জন্য অস্বস্তিকর। কিন্তু দিনের বেলায় হ্যাং ওভার তুলনামূলক কম হয়। তাই এই সিদ্ধান্ত।

কভার খুলে পেইন্টিংটা বের করে পলিশিং টেবিলের ওপর রাখলাম। টেবিলটা জানালার কাছে। বাইরের মৃদুমন্দ বাতাস ভেসে আসছে জানালা দিয়ে। মাঝেমধ্যে আসছে ঠান্ডা দমকা হাওয়া। টেবিলে বেছানো পেইন্টিং এর ওপর নজর দিলাম। জলরঙে আঁঁকা পেইন্টিং এর মেইন থিম হচ্ছে একটা বিশাল পৌরাণিক ড্রাগনের সাথে যুদ্ধ হচ্ছে এক সমরাস্ত্রে সজ্জিত এক দুঃসাহসী যোদ্ধার। দুজনের চেহারার মধ্যেই যুদ্ধজয়ের উল্লাস। তবে কে জিতবে বলা যাচ্ছেনা। মিস্টার থম্পসন ছবিটার নাম দিয়েছেন “ফেট” অর্থাৎ নিয়তি। তারমানে প্রবল প্রতাপশালী ড্রাগন বা মারাত্মক সাহসী যোদ্ধার লড়াইয়ের মধ্যকার জয় নির্ধারণ করে দিতে পারে একমাত্র “নিয়তি “! সঠিক নামকরন।

আমি পেইন্টিং টার কিছু ছবি তুলে সযত্নে আটকে দিলাম পিনবোর্ডে। এখন ঈশ্বর না করুন ছবির কিছু হয়ে গেলেও আমি সামাল দিতে পারবো। আমার এতটুকু আত্মবিশ্বাস আছে। একসময় নিজের আঁকা ছবি দেখতে ইচ্ছে করতো লন্ডন মিউজিয়ামের পোট্রেট রুমে। কিন্তু বাঙালী যুবককে কে সুযোগ দেবে?
ধীরেধীরে ইচ্ছেটা নষ্ট হয়ে গেছে।

পলিশিং টুলগুলো পরিষ্কার করার দরকার। পেইন্টিং পড়ে রইলো টেবিলে। আর আমি টুলস পরিষ্কার করার জন্য পাশের রুমের সিরামিক বেসিনের কাছে গেলাম। বাইরে কখন বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে জানিনা। টুলসগুলো সাফ করে নিয়ে টেবিলে এসে দেখি আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে! জানালা গলে বৃষ্টির জল এসে জলরঙে আঁকা পেইন্টিং টা পুরো ভিজিয়ে দিয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে মিস্টার থম্পসনের আরেকটা পেইন্টিং! আর্টপেপার থেকে টপ টপ করে চুইয়ে পড়ছে জল রঙগোলা জল।

এখন কি হবে? আমাকে আঁকতে হবে থম্পসনের মত করে। আগের পেইন্টিং এর কোন ছবি ছিলোনা। এটার আছে। কিন্তু হুবুহু থম্পসনের মত হবে কিনা কে জানে। তার ওপর আমার মাথায় আগের পেইন্টিং এর চিন্তাটা বারবার উঁকি দিচ্ছে। দুশ্চিন্তা নিয়ে কাজ করলে ভালোমতো ফিনিশিং দিতে পারবোনা। কি যে করি।

চিন্তা করতে করতে একসময় আঁকার কাজ নিয়ে বসলাম। পুরো সন্ধ্যা কেটে গিয়ে রাত হলো। ভোর হয়ে ওঠার পর কাজ শেষ হয়ে গেলো। ছবির সাথে ড্রয়িং মিলিয়ে দেখলাম ঠিক আছে। অনেকটা মিল আছে নষ্ট হয়ে যাওয়া পেইন্টিং এর সাথে। মন কিছুটা শান্ত হলো। সকাল সাতটার দিকে খবরের কাগজ এলো। এক কাপ কফি নিয়ে কাগজ পড়ছি। হঠাৎ “বিচিত্র খবর”কলামে একটা খবর দেখে আমার চক্ষুস্থির হয়ে গেলো। গতকাল রাতে নাকি দাবানলে পুড়ে গেছে মাউন্ট নরিকুরার বনাঞ্চলের একটা বড় অংশ। কিন্তু স্থানীয়দের দাবী ওটা দাবানল নয়” ড্রাগন ফায়ার”! ওরা নাকি কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখেছে একটা বিশাল কালো ড্রাগন একজন যোদ্ধার সাথে প্রানপনে লড়াই করতে করতে শেষমেশ যোদ্ধাকে ড্রাগন ফায়ারে পুড়িয়ে দিয়ে কোথায় যেন উড়ে চলে গেছে!

আমি তাড়াতাড়ি কাগজটা ফেলে একলাফে আর্টের স্ট্যান্ডটার দিকে গেলাম। ক্যানভাসে আমার থম্পসনের অনুকরনে আঁকা ছবিটার পাশে পিনবোর্ডে ঝুলছে আসল পেইন্টিং এর স্যাম্পল। সেটাতে যে ড্রাগনটা আছে পত্রিকার খবরে সেই একইরকম ড্রাগনের বর্ননা আছে। তাহলে কি? না না! এটা কি করে সম্ভব। আমি নিশ্চয় একটু বেশী মাতাল হয়ে পড়েছি। নইলে পেইন্টিং এর চরিত্র পেইন্টিং ফুঁড়ে বাইরে বেরুবে কিভাবে?এও কি সম্ভব। হঠাৎ বিদ্যুতের একটা ঝলকের মতো আগের পেইন্টিং এ কি আঁকা ছিলো তা মনে পড়ে গেলো। গত দিনের পত্রিকায় যে শ্বেতভাল্লুকের মত প্রানীটার কথা বলা হয়েছিলো সেই একইরকম ছিলো পেইন্টিং টা!

থম্পসনের আর্টে কি এমন কোন জাদুকরী কিছু আছে যা পেইন্টিং নষ্ট হয়ে যাবার পর ওর সৃষ্ট চরিত্র গুলোকে মুক্ত করে দিচ্ছে? নাকি সবকিছুর মূলে আমার অসাবধানতা কাজ করেছে। থম্পসন হয়তো নিজেও জানেনা।
দুদিন পর।

আমার মিউজিয়ামের চাকরীটা চলে গেছে। মিলার আমার পেইন্টিং সংরক্ষনের ব্যপারে উদাসীনতা মেনে নেয়নি। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে থম্পসন আমায় ওর সহকারী হিসেবে কাজ করার জন্য অফার করেছে। আমি ওর বাসার নিচের একটা কফিশপে এপয়েন্টমেন্ট লেটারের জন্য অপেক্ষা করছি। ও জানিয়েছে দশ মিনিটের মধ্যে আসবে। দশ মিনিট পার হয়ে গেছে। আমি দ্বিতীয়বার কফির অর্ডার দিতেই দেখলাম ওর গাড়ি এসে থামলো পার্কিং লটে। গাড়ি পার্ক করে হাসিমুখে এগিয়ে এসে আমার পাশে বসলো থম্পসন। তারপর পকেট থেকে একটা সিগার বের করে সেটাতে আগুন ধরিয়ে একটা টান দিয়ে একরাশ ধোয়া ছেড়ে বললো “তোমায় অসংখ্য ধন্যবাদ জ্যাক। তুমি জানোনা আমার কতবড় উপকার তুমি করেছো। জানো তো ছোটবেলা থেকেই আমার রিয়েলিস্টিক অর্থাৎ একদম বাস্তবের মত করে জীবন্ত ছবি আঁকা আমার শখ। বিভিন্ন সাক্ষাতকারে সেটা আমি বলেছিও। কিন্তু আমার সব পেইন্টিং ই শতকরা নিরানব্বই ভাগ জীবন্ত হলেও শেষের এক ভাগের জন্য সাধারণ পেইন্টিং এর মতই দেখাতো। বহু মানুষ আমার কাজ পছন্দ করেছে। কিন্তু আমি মন থেকে তৃপ্ত হতে পারিনি কখনো। কোথায় যেন একটা অপূর্ণতা থেকেই গেছে। পেইন্টিং এর চরিত্রগুলোতে প্রান প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা ইচ্ছাই থেকে গেছে। কিন্তু আজ তোমার কল্যানে আমার বহুদিনের ইচ্ছা পূরণ হতে চলেছে। তুমিই শিখিয়েছো কিভাবে প্রান প্রতিষ্ঠা করতে হয় ক্যানভাসে। শুধুমাত্র সৃষ্টিতে আনন্দ নেই ধ্বংসেও আনন্দ আছে তা তোমার কাছে জেনেছি। তুমি আমার পেইন্টিং নষ্ট করে বুঝিয়েছো কিভাবে প্রাণহীন জড়বস্তুকে কাগজের ক্যানভাস থেকে পৃথিবীর ক্যানভাসে মুক্ত করে দিতে হয় প্রানরস নিয়ে।

গতকাল রাতে একটা বিশাল প্রানীকে আগুনের ফুলকি ছড়াতে ছড়াতে উড়ে যেতে দেখেছি আমার জানালার পাশে। আমি ভালো ড্রাগন আঁকতে পারিনা। তাই ওর মুখের গড়নটা নিখুঁত ছিলোনা। আমি আরো ভালো করে আঁকবো এখন থেকে। আর তুমি হবে আমার ক্যানভাসে বন্দী প্রানীগুলোর মুক্তিদাতা। পারবে তো?

আমি শুধু মুচকি হাসলাম। সেই হাসি দিয়েই বুঝিয়ে দিলাম যে আমার কোন সমস্যা নেই। কারন পৌরানিক প্রানীগুলোর মুক্তির হাসি আমি দেখতে পারছি।

……………………………………………………………..(সমাপ্ত)…………………………………………………………..

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত