আবহাওয়া ভাল নয়, হিমশীতল বাতাস বইছে আর গায়ে কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে। বৃষ্টি পড়ছে, তবে এই বৃষ্টির ধরণ খুবই খারাপ, প্রচণ্ড বাতাস বৃষ্টির ছাঁট একদিক থেকে আর একদিকে তেরছা করে দিচ্ছে। নিতান্ত প্রয়োজন না থাকলে কেউ বেরুচ্ছে না, কারণ ছাতা খোলার উপায় নেই। বর্ষাতি গায়ে দিয়ে কয়েকজন দ্রুত নিজের ডেরায় ফিরে যাচ্ছে। প্যাঁচপ্যাঁচে কাদাটে পরিবেশ মন খারাপ করে দেয়, এমন এক বিষণ্ণ রাতে তার আবির্ভাব ঘটেছিলো ছোট্ট শহরটিতে। একের পর এক ভয়াবহ ঘটনায় সবাইকে সন্ত্রস্ত করে দিয়েছিল এই মানুষটি। মানুষ? সাধারণভাবে তাই মনে হয়, কিন্তু লোকটা চলাফেরা করতো বেড়ালের মত নিঃশব্দে, যার ঘাড়ে তার গরম নিঃশ্বাস একবার পড়েছে সে-ই জীবনের শেষ দেখে নিয়েছে, পেঁচার মতোই তার চোখ জ্বলে উঠত রাতের আঁধারে।
প্রথম ঘটনা যাঁকে নিয়ে, সেই মিস্টার শ্যানডন যাবেন অনেক দূর। রাতে বেরিয়ে পড়েছেন একটা জরুরী কাজে, নিজের শেভ্রোলে গাড়ি নিয়ে গ্যারেজে বসে ইঞ্জিন গরম করে নিলেন। কিন্তু এই দুর্যোগের রাতে যাওয়াই হবে মুশকিল, বহুদূরে সাগর হয়ে উঠেছে উত্তাল, সরকার জারী করেছে সতর্কতা, তার চোট এসে লেগেছে এখানে, খারাপ হয়ে গেছে আবহাওয়া, সারাদিন বৃষ্টি, ঘরের বাইরে বেরুবার উপায় নেই, সূর্যের দেখা নেই, সারা শহর যেন স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেছে। এমন দিনে ফায়ারপ্লেসের গনগনে আগুনের ধারে বসে গরম কফি খেতে খেতে ফুটরেস্টে পা রেখে আরাম করার কথা, কিন্তু তাঁর কাজটাই এমন, রাত তিনটেয় যদি বস ফোন করে বলেন যে চলে এসো, তোমাকে আমার দরকার, তবে না করার উপায় নেই। সরকারের গোপন নথিপত্র বাহকের পদে অনেক দিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছেন শ্যানডন, অভ্যাস হয়ে গেছে।
ভোঁ ভোঁ শব্দ করে গ্যারেজ ছাড়ল গাড়িটা, ওয়াইপার চালু করে দিয়েছেন তিনি, বৃষ্টির ছাঁট এসে আঘাত হানছে সামনের কাঁচে, ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে কাঁচ, ওয়াইপার সেটা সরিয়ে সারতে পারছে না। কড়াৎ কড়াৎ শব্দে বাজ পড়ছে, তার আগে আলোকিত করে দিয়ে যাচ্ছে, সেই বিদ্যুতের আলোয় দূরের যতটা দেখা যাচ্ছে, কোন জনমানুষ নেই, তিনি একা বেশ ধীরে ধীরে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন, পিচ্ছিল রাস্তায় গাড়ি স্কিড করলে মহাবিপদ হবে।
দেখতে দেখতে শহরতলীতে পৌঁছে গেলেন তিনি, রাস্তা এখান থেকে ঢালু হয়ে নেমে গেছে ফক্স ক্যানিয়নের দিকে, কি নির্জন! পেছনে ফেলে এসেছেন ঘুমন্ত শহর, সামনের রাস্তায় সোডিয়াম লাইট জ্বলছে, কিন্তু আঁধার দূর করতে পারছে না। সাঁ করে উল্টো দিক থেকে একটা কাবার্ড ভ্যান এলো, তাঁকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।
খড়খড় করে উঠলো তাঁর রেডিও, শ্যানডন, তোমার অবস্থান বল। তিনি জানালেন, আর আধঘণ্টার দূরত্বে আছেন তিনি, পথে কোন ঝামেলা না হলে ঠিকই পৌঁছে যাবেন। তবে জানিয়ে দিলেন, তাঁর গাড়ির তেল ফুরিয়ে এসেছে, সামনের পেট্রোলপাম্প থেকে ভরে নিতে হবে, সেখানে কয়েক মিনিট দেরী হবে। দুই শহরের মাঝে সংযোগ রক্ষা করছে এই রাস্তা, মাঝামাঝি আছে এই পেট্রোলপাম্প, বিপদগ্রস্ত অনেক যাত্রী উপকৃত হয় এখান থেকে, কারণ সাধারণত বেকায়দা জায়গাতেই তেল ফুরিয়ে যায় গাড়ির।
দূর থেকে নীল আলো দেখতে পেলেন তিনি, বুঝে গেলেন তেল নেবার জায়গা এসে গেছে, চব্বিশ ঘণ্টা খোলা থাকে জায়গাটা। হাতঘড়ির লুমিনাস কাঁটা দেখলেন, জ্বলজ্বল করে ঘড়িটা বলছে, রাত বাজে আড়াইটা। খোলা রাস্তায় শোঁ শোঁ করে বাতাস বয়ে যাচ্ছে, ওভারকোটের কলার তুলে দিলেন তিনি। বৃষ্টি কমে এসেছে, তবে থামেনি, গুঁড়ি গুঁড়ি পড়েই যাচ্ছে। ঠাণ্ডা লাগলো নাকি ছাই? নাকটা সুড়সুড় করছে তখনই, হঠাৎ সার সামলাতে পারলেন না, হ্যাঁচচো করে হাঁচি দিয়ে উঠলেন। সুরুত করে নাক টেনে নিলেন, উফ, জ্বালাবে মনে হচ্ছে।
রাস্তার বামদিকে চোখ পড়লো তাঁর। আরে, এত রাতে লোকটা এখানে কী করছে?
হ্যাঁ, একটা ল্যাম্পপোস্টের ঠিক নিচে দাঁড়িয়ে আছে লোকটা, বুড়ো আঙুল তুলে, লিফট চাইছে। মনে মনে বিরক্ত হলেন তিনি, সাধারণ লোক হলে ভাল, তবে রাত বিরেতে রাস্তায় ওঁত পেতে থাকে কিছু দুর্বৃত্ত, গাড়ি থামিয়ে একেবারে ভেজাবেড়াল হয়ে ঢোকে, তারপর হঠাৎ কায়দামত ঝাড়া দিয়ে উঠে সর্বস্ব লুটে নেয়। তবে মিস্টার শ্যানডনের এমন ভয় নেই, তাঁর কোমরে হোলস্টারে গোঁজা আছে পিস্তল, তাঁর সাথে হাঙ্কিপাঙ্কি করার সুযোগ পাবে না।
গাড়ির গতি কমিয়ে আনলেন তিনি, বাঁ দিকে এসে লোকটার পাশে দাঁড় করালেন। জানালা দিয়ে মুখ বের করে বললেন, আমি যাচ্ছি উডস হেরাল্ডে, আপনিও কি … …? দরজা খুলে দিলেন তিনি।
লোকটা ওভারকোটের কলার তুলে দিয়েছিল মাথা ঢাকার জন্য, বৃষ্টি থেকে কিছুটা হলেও বাঁচার চেষ্টা। শীতে কাঁপছে রীতিমতো, বেশ ভিজে গেছে, অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চয়ই। এবার মাথা থেকে নামাল কলারটা, চেহারা দেখা গেল। কৃতজ্ঞতার হাসি ফুটেছে লোকটার মুখে, উঠে বসলো। আমিও সেদিকে যাবো, মাইলখানেক দূরে আমাকে নামিয়ে দিলেই চলবে। পকেটে হাত দিল লোকটা, স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখেই সতর্ক হয়ে উঠলেন মিস্টার শ্যানডন, বদ মতলব নেই তো?
না, পকেট থেকে বেরুলো একটা বড় রুমাল, মাথার পানি মুছছে লোকটা। ভাল কথা, ধন্যবাদ।
ইট’স ওকে, বললেন শ্যানডন।
নাম বিনিময় হল, লোকটার নাম রেভারেন্ড প্রিসলি, কাজ করে একটা রেস্টুরেন্টে। আড়চোখে লোকটাকে দেখলেন মিস্টার শ্যানডন, লম্বা, সুপুরুষ এক তরুণ। চোখ দুটো গভীর নীল, আর মুখে একটা বিনয়ের হাসি ঝুলে আছে। বাঁ গালে কাটা দাগ, অবিকল একটা ক্রস।
সামনে পেট্রোল পাম্প, তেল নিতে হবে, বললেন তিনি।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।
গাড়িটা পাম্পে ঢুকে গেল। এত রাতে তিনি ছাড়া আর কোন গ্রাহক নেই, ছোট্ট অফিসঘরে বসে ঝিমুচ্ছে একজন অ্যাটেনডেন্ট। মুখ হাঁ করে আছে লোকটা, দেখতে পেলেন তিনি।
নজলটা গাড়ির তেলের ট্যাংকারে লাগালেন তিনি, মৃদু গুঞ্জন তুলে তেল ভরতে লাগলো ট্যাঙ্কে, কিছুক্ষণ অপেক্ষা। লোকটা দাঁড়িয়ে আছে মিস্টার শ্যানডনের পেছনে, শেডের নিচে আছেন তাঁরা, তাই বৃষ্টি গায়ে লাগছে না।
নড়েচড়ে উঠলো লোকটা, নিচু হয়ে উঁচু গামবুটের ভেতরে হাত দিল। ঝিকিয়ে উঠলো রূপোলী ফলা।
মিস্টার শ্যানডন যখন ঘাড়ে গরম নিঃশ্বাস টের পেলেন, তখন কিছুই করার সুযোগ পেলেন না, শুধু টের পেলেন, একটা প্রচণ্ড উত্তপ্ত কিছু তাঁর ঘাড়ের পেছন দিয়ে সুষুম্নাকাণ্ড ভেদ করে ঢুকে যাচ্ছে, তীক্ষ্ণ একটা ব্যথা। মুখ চেপে ধরে আছে শক্ত একটা হাত, একটা ভোঁতা আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই বেরুলো না, হোলস্টারে হাত দেবার সুযোগ পেলেন না।
গলগল করে রক্ত বেরিয়ে আসছে গলার ফুটো দিয়ে, লোকটা তাকিয়ে আছে। বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে রক্ত, ভাল করে পরিষ্কার করে দিল সে ছুরির ফলাটা, শ্যানডনের গায়ের ওভারকোট দিয়ে। তারপর যখন সন্তর্পণে সরে গেল, তখনও হাঁ করে ঘুমোচ্ছে পাম্পের লোকটা।
শ্যানডনের পকেটে একটা কার্ড গুঁজে দিল সে। তাতে লেখা ছিল, “শুধুই আনন্দের জন্য”।
যখন তীব্র শীতল হাওয়া শ্যানডনের মাথার পেছন থেকে বের হওয়া রক্ত জমাট বাঁধিয়ে দিল, ততক্ষণে লোকটা বহুদূরে চলে গেছে।
সকাল হয়েছে, টিপটিপ করে এখনো বৃষ্টি পড়ছে, আকাশের মুখ গম্ভীর। আরেকটি বিষণ্ণ দিনের শুরু।
পেট্রোলপাম্পের লোকটার ঘুম ভেঙেছে, গা মোড়ামুড়ি করলো, আড়মোড়া ভেঙে ঘুম তাড়ানোর চেষ্টা করলো, বিকট হাই তুলল। ঘুম ঘুম চোখে এসে যখন সে বাইরে দাঁড়ালো, চক্ষু ছানাবড়া হয়ে গেল তার, ঘুম কর্পূরের মতো উবে গেল।
নীরবতা ভেঙে দিল তার বিকট চিৎকার। পরের কয়েক মিনিট যেন ঘোরের মধ্যে কাটল তার, দ্রুত হাতে ডায়াল করলো পুলিশ স্টেশনের নম্বর, জানালো, মারাত্মক একটা খুন হয়েছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ছোট্ট পেট্রলপাম্পটা ভরে গেল পুলিশের গাড়িতে, নীল রঙয়ের আলোতে পরিপূর্ণ হয়ে গেল জায়গাটা। কালো রঙয়ের সেডান থেকে যখন একটা পা বেরিয়ে এলো, তখন ঢোক গিলল পেট্রলপাম্পের মালিক হ্যারি।
এই রাশভারী পুলিশ অফিসারকে সবাই একনামে চেনে, তিনি হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের সার্জেন্ট লুক। বয়স হয়েছে চল্লিশের ওপরে, কিন্তু এখনো চামড়ায় একটা ভাঁজও পড়েনি। নিজের অবস্থান সম্পর্কে খুবই সচেতন তিনি, সবসময় তাঁকে ফিটফাট দেখা যায়। যখন তিনি ধারেকাছে এসে দাঁড়ান, পাঁচ হাত দূর থেকেও তাঁর মার্কামারা দামী আফটার শেভ “জেন্টস” এর ভুরভুরে গন্ধ পাওয়া যায়। মজার ব্যাপার হল, তিনি যতটা ভাব নিয়ে চলাফেরা করেন, ততটা কিন্তু তাঁর রেকর্ড বলে না। লোকে তামাশা করে বলে, লুকের হাতে কেস পড়লে খুনি তাঁকে একবার দেখার জন্য নিজেই ধরা দেয়, কারণ তিনি অপরাধস্থলে গিয়ে নিজের জুতোর পালিশ ঠিক আছে কীনা তা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তারপরও তাঁকে সবাই সমঝে চলে, বলা যায় না, রাশভারী অফিসার খেপে গিয়ে কী করে বসে। তবে তাঁর একটা নাম আছে, আড়ালে তাঁকে সবাই মিনিয়েচার শার্লক হোমস বলে ডাকে। কারণ তিনি হাইটে মাত্র সাড়ে পাঁচ ফুট।
কোনদিকে না তাকিয়ে সার্জেন্ট লুক হেঁটে গেলেন পড়ে থাকা মিস্টার শ্যানডনের দিকে, উপুড় হয়ে পড়ে আছেন তিনি, নজলটা এখনো কনসোল থেকে খোলা অবস্থায় তাঁর পাশেই পড়ে আছে, বোঝা যায় তেল ভরার সময়ই ঘটেছে ঘটনাটা। কয়েক গজ দূর থেকেও দেখা যাচ্ছে গলার পেছনের ফুটোটা, রক্ত ওটাকে ঘিরে জমাট বেঁধে আছে, কালচে খয়েরী বর্ণ ধারণ করেছে।
লুকের চেহারা গম্ভীর, দেখে বোঝার উপায় নেই। বহু বছরের অভিজ্ঞ হাতে তিনি জানেন রুটিন কাজ কীভাবে করতে হয়। হাতে তাঁর গ্লাভস পরা, তাঁর সহকারী, যাকে সবাই লুকের ডান হাত বলে জানে, সেই রিচার্ড এসে চিৎ করে শোয়ালো শ্যানডনকে, লুক সারা শরীর সার্চ করতে লাগলেন, চারিদিকে ছোট্ট ভিড় জমেছে এই সকালেও, তবে হলুদ ফিতে দিয়ে জায়গাটা আলাদা করে ফেলা হয়েছে, সেখানে কালো অক্ষরে লেখা, পুলিশ লাইন। ডু নট ক্রস। যেকোনো খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে এখানে, ছোট্ট শহর, গোপনে তদন্ত চালানো মুশকিল, সবাই সবকিছু জেনে যায়।
পকেট হাতড়াতেই বেরিয়ে এলো সাদা কার্ডটা। লেখাটা পড়ে ভুরু কুঁচকে গেল লুকের। গম্ভীর মুখে রিচার্ডের দিকে বাড়িয়ে দিলেন তিনি। কার্ডে কারো নাম ঠিকানা লেখা নেই, শুধু ছাপার অক্ষরে লেখা, “শুধুই আনন্দের জন্য”।
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে লুকের দিকে তাকাল রিচার্ড। তার চোখের ভাষা পড়তে পারলেন লুক। কয়েক বছর আগে এই শহরে দেখা দিয়েছিল এক খুনী, কয়েদ ভেঙে পালিয়েছিল সে, কড়া পাহারাকে ফাঁকি দিয়ে। পুলিশের ঘুম হারাম করে দিয়েছিল, রাতদিন তার পেছনে ছুটে বেরিয়েছিলেন লুক, কোন লাভ হয় নি। আটটা খুন করে হঠাৎই বেমালুম গায়েব হয়ে গিয়েছিল সে, কোন কিনারা করা যায় নি। সে কি আবার ফিরে এসেছে? মাথা নাড়লেন লুক, না, সে নয়। সেই খুনী সব খুন করেছিল গুলি করে, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে সে ছিল দক্ষ। আর সে কোন নোট রাখতো না। এই লোক অন্য কেউ।
জিজ্ঞাসাবাদ করলেন তিনি, পেট্রোলপাম্পের সবাইকে। কেউ জানে না, কিচ্ছু না।
কে খুন করেছে, কেনই বা করেছে, মাথায় কোন আইডিয়া আসছে না লুকের।
প্রায় পঞ্চাশ মাইল দূরের শহর ডিউক হার্বার। এখানে দাঁড়ালে দেখা যায় পোতাশ্রয়, জাহাজ ধোঁয়া ছেড়ে বন্দর ছেড়ে যাচ্ছে, আবার বন্দরে এসে ভিড়ছে। দূরে দেখা যায় সী-গাল উড়ছে, আরও দূরে দেখা যায় পোর্টিসচ মাউন্টেইনের নীল রেখা, সেখানে তুষার জমে আছে পাহাড়ের মাথায়। মাঝে মাঝে অলপাইন ক্লাবের ছেলেমেয়েরা এই পাহাড় বাইতে যায়, আরও মানুষ আসে ঘুরতে। সব মিলিয়ে একটা সুন্দর উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে এখানে, সবসময়, সারাবছর।
কিন্তু শ্যানডনের খুনের খবর এখানে এসে পৌঁছে যাবার পর চাপা একটা অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়লো, সবাই যেন ভয় পেয়ে গেল, দোকানীরা দেখল, বিক্রিবাট্টা পড়ে যাচ্ছে দ্রুত, একটা খুন কেন যেন সবকিছুর তার কেটে দিয়েছে।
বারো বছরের ছেলে মর্গান। সে এখানে, ডিউক হার্বারের এক স্কুলে পড়ে। স্বাস্থ্য ভাল, খেলাধুলায় আগ্রহ আছে। আইস হকিতে সে নাম করেছে কয়েক বছরেই, জুনিয়র কম্পিটিশনে নাম লেখায় প্রতি বছরেই। গত বছর ফাইনালে হেরে গিয়েছিল তার দল, এ বছর ট্রফিটা জিততেই হবে। লেখাপড়াতেও মন্দ নয়, চনমনে একটা ছেলে, সবার প্রিয়। অনেক বন্ধুবান্ধব তার, সূর্য বের হওয়ার অপেক্ষায় আছে, তারা সবাই মিলে সাইকেল নিয়ে বেরুবে।
তখন সন্ধ্যা। আজ সকালে বেরিয়েছে মিস্টার শ্যানডনের খবরটা, আর সবার মতো চোখে পড়েছে মর্গানেরও। মায়ের উপর মহা বিরক্ত সে, মা বলেছেন, দিনকাল ভালো নয়, যখন তখন খুন হয়ে যাচ্ছে মানুষ, অনুমতি ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরুনো চলবে না। সারাদিন তাই পপকর্ন খেয়ে, টিভি দেখে, ভিডিও গেম খেলে আর বই পড়ে কাটিয়েছে সে, আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, বন্ধুরা ফোন করেছিল তাকে, কিন্তু বের হতে পারেনি। এমন একটা উইকএন্ড সে আশা করেনি। দূর! সোফায় শুয়ে পা দাপালো সে, কোন মানে হয়?
দিন ফুরিয়ে এলো, দূরের পোর্টিসচ মাউন্টেইন অদৃশ্য হয়ে গেল, এখন আর বৃষ্টি নেই, আকাশে উঠলো একফালি চাঁদ। সাগরের নিম্নচাপ নিশ্চয়ই কেটে গেছে, আকাশেরও গোমড়া মুখ বোধহয় আর থাকবে না।
পিয়ানো নিয়ে বসেছে মর্গান, অনেক কাজের মধ্যে যখন কিছুই ভালো লাগে না, তখন টুংটাং করে সে। নতুন শেখা সুরটা তোলার চেষ্টা করলো সে। বড় জানালাটা খোলা, সেখান দিয়ে চাঁদের আলোর খানিকটা এসে পড়ছে ঘরের ভেতর। ঘরে অন্য কোন আলো নেই, পিয়ানো বাজাতে হয় ঘর অন্ধকার করে।
খোলা জানালায় একটা বড় ছায়া পড়লো, এক মুহূর্তের জন্য ঢেকে গেল বড় জানালাটা। সেদিকে খেয়াল করে নি মর্গান, তার তখন চোখ বন্ধ, সে একমনে বাজিয়ে চলেছে পিয়ানো।
যখন শক্ত একটা হাত চেপে ধরল তার মুখ, তখন কেন যেন সবকিছু শুন্য ঠেকল তার কাছে, কিছু করতে সে ভুলে গেল। নাকে এসে ঠেকল একটা অচেনা গন্ধ। কীসের? ভয়ার্ত চোখ দেখল তার, ভারী সুপুরুষ একটা চেহারা, গভীর নীল চোখ দুটো যেন জ্বলছে। সারা শরীর কালো পোষাকে ঢাকা লোকটিকে সে কিছু বলার সুযোগ পেল না। শেষ মুহূর্তে চোখে পড়লো শুধু, লোকটার বাঁ গালে একটা কাটা দাগ, অবিকল একটা ক্রস। ঘাড়ে এসে পড়লো লোকটার গরম নিঃশ্বাস।
মিসেস হাডসন, মর্গানের মা, দুধ নিয়ে এসেছেন ঘরে। ছেলেটাকে তখন থেকে ডেকে হয়রান হচ্ছেন, জবাব দিচ্ছে না। এই একটা সমস্যা তার, পিয়ানো বাজানো শুরু করলে সব কিছু ভুলে যায়। জনসনের কথা মনে পড়লো তাঁর, মর্গানের বাবা। ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার আগে প্রতি রাতে ঘুমোতে যাবার সময় কিছুক্ষণ ধরে সে-ও বাজাতো। বাবার পথে গেছে ছেলেও, বাধা দেন না তিনি।
দরজা ভেজানো, তিনি আস্তে করে খুলে ঢুকলেন। আরে, বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে আছে মর্গান, মুখ ঢেকে রেখেছে বই দিয়ে। ঘুমিয়ে পড়লো নাকি?
বইটা সরিয়েই চিৎকার করে উঠলেন মিসেস হাডসন। দিশেহারা হয়ে পিয়ানোটার দিকে চোখ পড়লো তাঁর। মাথার মধ্যে হালকা ঠেকল, নিখুঁতভাবে কাটা মাথাটা বসিয়ে রাখা আছে পিয়ানোর ওপর। বিছানায় পড়ে আছে মর্গানের ধড়টা শুধু। চোখে অন্ধকার দেখলেন তিনি, মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন।
লুক হানা দিলেন এখানেও, শহরে খবর ছড়িয়ে পড়েছে, এক খুনীর আবির্ভাব ঘটেছে, দু’দুটো খুন ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। সবাই নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে, একদিনেই সব টুরিস্ট যেন হাপিস হয়ে গেছে।
পুরো বাড়ি ভালোভাবে সার্চ করলেন সার্জেন্ট লুক, প্রতিবেশি কার্ল এসে দাঁড়িয়েছেন মিসেস হাডসনের পাশে, সান্ত্বনা দিচ্ছেন। বিড়বিড় করে বলছেন, গাধার বাচ্চা গাধা!
গালিটা লুককে দেয়া, কারণ তিনি পুরো বাড়ি ওলটপালট করে ফেলেছেন। বিছানার কভার তুলে দেখাও বাদ দেন নি। বিছানার চাদরের নিচে যে খুনী লুকিয়ে থাকতে পারে, এমন ধারণা লুক কোথায় পেয়েছেন ভেবে পেলেন না কার্ল। লাভের মধ্যে পাওয়া গেছে আরও একটা কার্ড, সেটাতেও লেখা, “শুধুই আনন্দের জন্য”।
মাথায় চিন্তা উঁকি দিয়ে গেল লুকের, পেশাদার কোন খুনী নয় এই লোক। নির্ঘাত কোন সাইকোপ্যাথ, যে শুধু আনন্দের জন্য বীভৎস সব উপায়ে খুন করে চলেছে। শহরের প্রতিটি মানুষকে তিনি সন্দেহ করা শুরু করেছেন, কে জানে, হয়তো খুব ভালো মানুষের বেশ ধরে আশেপাশেই সে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এই ধরণের লোকেরা খুব বুদ্ধিমান হয়। সব মানসিক হাসপাতালে আর কারাগারে খবর পাঠানো হল, না, কেউ পালায় নি, কোন মানসিক অসুস্থ লোকের সন্ধান পাওয়া গেল না, যে এভাবে খুন করে বেড়াবে। কয়েকদিন ধরেই নিজেকে খুব বোকা মনে হচ্ছে লুকের, মনে হচ্ছে, সবাই তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। কাউকে কিছু বলতেও পারছেন না।
সব খোঁজা শেষ হলে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেন লুক, কাল রাতে কে কে এখানে ছিল, কাউকে সন্দেহ করেন কীনা। মিসেস হাডসনের জবাব দেয়ার অবস্থা নেই, কড়া স্বরে বলে দিলেন কার্ল। অগত্যা পরে আসবেন বলে চলে গেলেন লুক। খুনী যেন অদৃশ্য কেউ, কখন আসছে, কোথায় আসছে, কী করছে কিছুর হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
শহর থেকে বেরুনোর প্রতিটি রাস্তায় চেকপোস্ট বসানো হল, বিশেষ ফোর্স বেরিয়ে পড়লো সাদা পোষাকে, কাউকে সন্দেহ হলেই আটক করবে। শহরে সতর্কতা জারী করা হয়েছে, অবশ্য দরকার ছিল না, শহরের সব বাসিন্দা ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে, সন্তানদের বুকে চেপে ধরে বসে আছেন সব মা।
মিসেস হাডসন পাগলের মত হয়ে গেছেন, তাঁকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। একা থাকতে ভয় পাচ্ছেন তিনি, সন্তানের মৃত্যুতে তিনি শোকের চেয়েও যা বেশি পেয়েছেন, তা হল ভয়।
কেউ তাকে দেখে নি, কিন্তু খুনীর একটা নাম তৈরি হয়ে গেছে, “ব্ল্যাক ডেথ”।
লুকের অনুমান সঠিক, মানুষটি খুব সাধারণ বেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর সবার সাথেই। এই তো, সে বারে বসে বিয়ার খাচ্ছে, দ্বিতীয় ক্যান খালি করে দিল। টিভির সামনে ছোট একটা জটলা, খুনের খবর প্রচার হচ্ছে। সাধারণত খুব মর্মান্তিক দৃশ্য হলে টিভিতে দেখানো হয় না, দেখালেও রেখেঢেকে। মর্গানের মৃতদেহটাও দেখানো হল না। হন্যে হয়ে ঘুরছে পুলিশ, কিন্তু কার পেছনে? যাকে দেখেই নি পুলিশ, তাকে খুঁজে বের করবে কীভাবে? সে এখন বরফঠাণ্ডা বিয়ার খেতে খেতে চিন্তা করছে।
দানে দানে তিন দান, ভাবল সে। দুটো কাজ হয়েছে, এরপর তৃতীয় এবং শেষ। সে নিজের অবস্থা জানে, কোন কাজেই বেশিদিন উৎসাহ থাকে না, এক কাজ তিনবার পর্যন্ত করতে ভাল লাগে, তারপরই বিরক্ত লাগে। এবার শেষ কাজটা করে দূরে চলে যেতে হবে, শহর থেকে নয়, এই দেশ থেকে। অন্য কোন খানে। শেকড় গেড়ে বসা চলবে না, শেকড় গাড়া তার ধাতে নেই।
বিল মিটিয়ে দিল সে, কাউন্টারে গিয়ে। খুচরো পয়সা রেখে দিন, বলল। দোকানী ধন্যবাদ দিল। বাইরে তখন প্রচণ্ড শীত, রোদটাও যেন ঠাণ্ডা, নিঃশ্বাসের সাথে বাস্প ধোঁয়া হয়ে উড়ে যাচ্ছে।
শহরের শেষ প্রান্ত, সেখানে পাহারা দিচ্ছে স্পেশাল ফোর্সের দুজন লোক, হেনরি এবং জ্যাকসন। এক একটা গাড়ি বেরুচ্ছে, আর চেক করে দেখে দিচ্ছে তারা। একটা বিএমডব্লিউ গাড়ি এগিয়ে এলো, হাত বাড়িয়ে থামতে ইশারা করলো জ্যাকসন।
দুই অফিসার গাড়ি থামিয়ে ভেতরে সময় নিয়ে ভাল করে দেখল, বাদ দিল না ডিকির ভেতরেও। না, কিছু নেই, একটা তেলাপোকাও না।
হাত নেড়ে যেতে ইশারা করলো জ্যাকসন, চোখেমুখে বিরক্তি নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলেন গাড়ির ভেতরের ভদ্রলোক। নিশ্চয়ই খুব তাড়া ছিল।
আচ্ছা হেনরি, মানুষ আমাদের ওপর এত বিরক্ত কেন বল তো? ফুস করে নিঃশ্বাস ফেললো জ্যাকসন, মুখ থেকে বেরিয়ে এলো বাস্প, শীত করছে তার।
ওসব নিয়ে মাথা ঘামিও না। পুলিশের চাকরি মানেই লোকের বিরক্তি।
ভালো বলেছ।
আমাদের সার্জেন্ট লুকের কী খবর?
সে এখন জুতোর পালিশ নিয়ে ব্যস্ত। ব্যাটা কখনো কিছু করতে পেরেছে?
হা হা করে হাসল হেনরি। লুককে নিয়ে সবাই রসিকতা করে, স্বয়ং পুলিশ ডিপার্টমেন্টও বাদ যায় না।
মন খারাপ জ্যাকসনের, ছোট্ট মেয়েটার কথা মনে পড়ছে। কতদিন যে মেয়েটার সাথে খেলা করা হয় না।
হেনরি কাছে এগিয়ে এলো, কাঁধে হাত রাখল জ্যাকসনের। অনেক দিনের বন্ধু তারা, একজন আরেকজনকে বোঝে খুব ভালোভাবে।
তোমার বাঁ গালে কাটা দাগ কীসের, হেনরি? জ্যাকসন অবাক হয়ে গেছে, এতদিন তো এটা দেখি নি? লক্ষ করলো সে, হেনরির চোখ দুটো গভীর নীল, এতদিন তো বাদামী দেখে এসেছে।
হেনরি জবাব দিল না, খুব কাছে এসে দাঁড়ালো। কাঁধে পড়ছে নিঃশ্বাস, জ্যাকসনের মনে হল, নিঃশ্বাসটা খুব গরম।
হলুদ ফিতে দিয়ে জায়গাটা আলাদা করা আছে। তাতে কালো অক্ষরে লেখা, পুলিশ লাইন। ডু নট ক্রস।
সার্জেন্ট লুক সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা মৃতদেহটা দেখলেন। হতাশ চোখে তাকিয়ে মাথা নাড়লেন। পেছন থেকে শুনতে পেলেন, রিচার্ড মৃদু স্বরে বলে উঠলো, জেসাস।
অনেক বীভৎস খুন দেখতে হয় হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টকে, কিন্তু এমনটা দেখা শক্ত মানুষের পক্ষেও কঠিন। অফিসার জ্যাকসনের ঘাড় ভাঙা, আর মুখটা ঠিক মাঝখান থেকে চিরে দু’ভাগ করে ফেলা হয়েছে, ভেতর থেকে উঁকি দিয়ে আছে লাল মাংস।
জ্যাকসনের খোলা চোখ দুটো যেন লুককে বলেছে, কখনো কিছু করতে পেরেছিস? গাধার বাচ্চা গাধা! যেন স্পষ্ট শুনতে পেলেন লুক, গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো।
অভ্যাসবশত জ্যাকসনের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিলেন তিনি, হাতে ঠেকল একটা কার্ড। তাতে কী লেখা আছে পড়ার প্রয়োজন বোধ করলেন না।
অফিসার হেনরিকে হাত-পা-মুখ বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গেল একটা পরিত্যক্ত বাড়িতে। প্রচণ্ড বলশালী একজন মানুষ এসে তাঁকে বেঁধে ফেলে, তারপর এখানে ফেলে যায়। হেনরির গায়ে কোন কাপড় ছিল না, কারণ সেই লোকটা তার ইউনিফর্ম খুলে নেয়। কেন তাকে মেরে ফেলেনি এটাই রহস্য।
তিনটা তথ্য পাওয়া গেছে হেনরির কাছ থেকে। লোকটার চোখ গভীর নীল, বাঁ গালে একটা কাটা দাগ, অবিকল ক্রসের মতো দেখতে, আর লোকটার নিঃশ্বাস খুব গরম। তৃতীয় তথ্যটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবুও কেন হেনরি বলল তা সে নিজেও জানে না।
কার কাজ এটা, তা অবশ্য বুঝতে অসুবিধা হয় না। হেনরির পাশেই পড়ে ছিল একগাদা সাদা কার্ড। সবগুলোতেই লেখা, “শুধুই আনন্দের জন্য”।
পুনশ্চঃ
হিথ্রো এয়ারপোর্ট থেকে একটা প্লেন ছেড়ে যাচ্ছে, ইমিগ্রেশন পার হলেন মিস্টার রোনাল্ড রবসন। সুদর্শন যুবকটির চোখে চোখ পড়লেই খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকতে হয়। লাল কার্পেট বিছানো আছে, সেখান দিয়ে হেঁটে গিয়ে উড়োজাহাজে উঠলেন তিনি। উদ্দেশ্য দুবাই, সেখানে গিয়ে কিছুদিন রিল্যাক্স করতে হবে, ব্যবসার কাজ আর ভালো লাগছে না। তরুণ এই ব্যবসায়ী যখন প্লেনের সীটে গা এলিয়ে দিয়ে বসলেন, তখন সন্ধ্যা নামছে।
উড়াল দিল প্লেন, নিচের শহরটা এখান থেকে গোধূলির আলোয় খুব সুন্দর দেখায়।
নিজের লাল চুলে হাত বুলোলেন তিনি, ওয়ালেট খুলে একটা সাদা কার্ড বের করলেন। আর একটাই অবশিষ্ট আছে। তাতে লেখা, “শুধুই আনন্দের জন্য”।
ডিউক হার্বারে আর কোন রহস্যময় খুন হয় নি, তার আশেপাশের কোন শহরেও না। সার্জেন্ট লুক “জোর তদন্ত ” চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে তিনি লক্ষ করেছেন, শহরের মানুষজন আজকাল তাঁর দিকে কেমন যেন করুণার দৃষ্টিতে তাকায়।
…………………………………………………(সমাপ্ত)…………………………………………