কথায় আছে না। ভাগিনা মানে বাঁশ। কিন্তু বাঁশ নাকি বাঁশের ঝাড় সেটা আমার থেকে ভাল কেউ জানে না।
আমার মুড়ির টিনের কপাল যে, রিওর মত একটা ভাগিনা জুটেছে। আসলে কপালের আর দোষ দিয়ে লাভ কি?কাজের কথা আসি।
অনেক টায়ার্ড হয়ে বিকাল চারটা নাগাদ বাসায় এসে মেজাজ বিগড়ে গেল।কারণ বাসায় ঢুকে প্রথমে ভেবেছিলাম ভাগিনা দিনের বেলায় মশার কয়েল জালিয়েছে।কিন্তু পরক্ষনে বুঝলাম, মশার কয়েল নয়।
নিজের কয়েল জ্বালাচ্ছে।সিগারেটের গন্ধে সারা বাড়ি সুভাষ ছড়াচ্ছে।
অনেকটা রেগেই রিওর রুমে ঢুকলাম।আজ এর একটা হেস্ত নেস্ত করতে হবে।কিন্তু রুমে আমাকে ঢুকতে দেখে সে যা বলল তাতে
চুপশে না গিয়ে আর উপায় ছিল না।
আমায় দেখেই হেসে দিয়ে বললঃ আরে প্রফেসর।তোমার অপেক্ষা করছিলাম।এই যা, তোমার দেখি মন খারাপ। ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে
তুলির বাসায় গিয়েছিলে নিশ্চয়?
আর মামির এত আবেগ কেন?
আহারে, অতি সামন্য বিষয়ে তোমায় জড়িয়ে ধরে কান্না কাটি করেছে মেয়েটা।
কোথায় ভাগিনাকে আজ বকা দিব বলে আসলাম।আর সে আমায় উল্টে ঘোল খাইয়ে দিল।কিন্তু আমি প্রতিদিন এই সময়ে ভার্সিটি থেকেই আসি।আজ কি দেরি হয়েছে?ঘড়িতে সময় ঠিকই আছে।এই সময়ে প্রতিদিন আসি।কিন্তু ভাগিনা কি করে বুঝল।ঘরের বিষয় পরে জানলে কি ভাল লাগে?
অনেকটা হেসে দিয়ে বললামঃ এই ১৫ মিনিটেই নিউজ পেপারে এসে গেল খবরটা?
-নিউজ পেপারে নয়।তোমায় গায়ে।(রিও)
-মানে?
-বুঝেও না বোঝার ভান কর মামা?
-সত্যি বলছি, বুঝতে পারিনি।
-তার মানে, স্বীকার করছ। আমি তোমায় চমকে দিতে পারছি?
-হুম।
-কিন্তু একটু পর যখন আমি সব বুঝিয়ে দিব। তখন বলবে এটা অনেক সোজা ছিল।
-আরে বল না।
-ওকে।
-দেখ! তুমি প্রতিদিন বাসায় আস ভার্সিটির গাড়ি দিয়ে।কিন্তু আজ এসেছো হেটে।কারন তোমার কালো জুতা পুরো ধুলাময় হয়ে গেছে।মেইন রোডে এত ধুলা নেই।তার মানে গলি রোডে হেটেছো?আর আমার মামা গলির রোডে কার বাড়ি যায়, সেটা আমি ভাল করে জানি।
-হতে পারে আমি আমার বন্ধু সাইফের বাসায় গিয়েছিলাম।
তুলির বাসায় নয়।কারন তুলির বাসার পাশেই সাইফের বাসা।
-হতে পারত কিন্তু হয়নি যে মামা।
-কেন?
-নিশ্চয় তোমার বন্ধুর বউ তোমায় জড়িয়ে ধরে কাদবে না।
-কি যে বলিস এসব?
-আরে তোমার শার্টের দিকে কি খেয়াল করেছ?নাকের পানি আর চোখের পানির মিশ্রনের দাগটা কি
স্পস্ট দেখা যাচ্ছে।
-নিজের দিকে খেলায় করে দেখলাম। সত্যি।তুলি যখন কাঁদছিল তখন
ও আমার বুকেই ছিল।আর সাদা শার্টে নাকের পানির দাগ দেখা যাচ্ছে।
আবার বললামঃকিন্তু ভাগিনা। কান্নার কারণ যে, অতি অল্প সেটা কি করে বুঝলে?
-আরে প্রফেসর। এত প্রশ্ন করনা তুমি?শোন, মেয়েরা যদি ছোট খাট বিষয়ে কষ্ট পায় তবে আপন মানুষটা এভাবে ধরে কাদে।যা তুলি করেছে।
-আর বেশি রাগলে?
-পুরো উল্টা, তোমার কাছে আসাতো দূরের কথা।তোমার দিকে তাকাবেও না।
-বুঝলাম রিওর কথার লজিক আছে।
একে নিয়ে কোন কালেই পারা যাবে না।আমার বাঁশ খেতে খেতেই জীবন যাবে।
ফ্রেশ হয়ে রিওর পাশে গিয়ে বসে টিভি অন করব এমন সময়
একটা চিঠি বের করে আমার হাতে দিয়ে বললঃপড়।
কত রকমের পাগল আছে
দুনিয়ায়?
-পাগল মানে?বললাম আমি
-যে দেশে ৩৪ভাগ মানুষ তিন বেলা ঠিক মত খেতে পারে না।সে দেশের মানুষ শখ করেওএত কিছু করে।
আজব পাবলিক, মামা।
চিঠিটা হাতে নিয়ে পড়া শুরু করলাম।
সেখানে লেখাঃ-
জনাব রিও,
ডাইমন্ড ভ্যালি রহস্য পড়ে আপনার কথা জানতে পারলাম।আমি আমার অতি গোপনীয় কিছু বিষয়ে আপনার পরামর্শ কামনা করছি।যদি আমাকে সাহায্য করেন, অতি উপকার হয়।
দেখা করার সময়টা নিচের মেইলে জানিয়ে দিবেন।
ইতি
আর, এক্স
mail:rx@——–.com
চিঠিটা পড়া শেষ করতেই
রিও বললঃকি বুঝলে?
-বুঝলাম তিনি তুষারের কেসটার কথা বলেছেন।
-আরে সেটাতো একটা পাগলও বুঝবে।চিঠির লেখক সম্পর্কে কিছু বল?
-আজব!লেখকের নাম পর্যন্ত স্পষ্ট নয় চিঠিতে।আর তুই বলছিস লেখক সম্পর্কে কিছু বলতে।আজ কি সিগারেটের সাথে অন্য কিছু খেয়েছিস নাকি?
-মামা। ভাল করে চিঠিটা দেখ সব পাবে।
-আমি প্রায় দশ মিনিট ধরে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখলাম চিঠিটা।কিন্তু কিছুই পেলাম না।
শুধু দেখলাম, চিঠিটাতে বেশ কিছু নকসা করা।সেটা অনেকটা নকশি কাঁথার নকশা হবে হয়ত।
এরপর রিওর হাতে চিঠিটা দিয়ে বললামঃকিছু বুঝলাম না।
_-মামা আমি কিন্তু অনেক কিছু দেখতে পাচ্ছি।(রিও)
-কি দেখতে পাচ্ছিস?
-যিনি চিঠিটা লিখেছেন তার আর্থিক অবস্থা বেশ ভাল।পুরানো জিনিস সংগ্রহের বাতিক আছে।বয়স সম্ভবত ৬০+।আর হ্যাঁ তেমন কোন দরকারি বিষয় নিয়েতিনি আসছেন না।
হুদায়, অকাজ আর কি?
ওহ হ্যাঁ, তিনি একজন মহিলা।
আর, আর, আর, দেখতে পাচ্ছি তিনি চিঠিটা গ্রামে বসে লিখেছেন।
-আমি অবাক হয়ে রিওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
কারন ভাগিনা চাপা বাজিও শিখে গেছে।আর সহ্য করতে পারছিলাম না।
তাই বললামঃ কি করে বুঝলি?
-আসলে মামা তুমিতো জানো
আমি যা বলি সেটার ভিতরে লজিক থাকে।লজিক ছাড়া কোন কথা আমি বলি না।
কাগজটা দেখ। এটা একটু আলো সামনে ধরলে এর ভিতর
একটা জল ছাপ দেখতে পাবে।
যেটাই লেখা আছে AKH.
মানে বাংলাদেশের বিখ্যাত কাগজ উৎপাদন কোম্পানি।
-তাতে কি?কথাটা শেষ করতেই রিও কাগজটা জগের পানির ভিতর
ছেড়ে দিলো।
এবং সাথে সাথে তুলেও নিলো।
এবার কাগজটা ঝাকি দিল।
আমি অবাক হয়ে গেলাম।
কারন কাগজ থেকে আপনা আপনি পানি ঝরে গেল।
আমি হেসে দিয়ে বললামঃআরে এটা কাগজ নাকি কচুর পাতা?
-এই জন্য বললাম মামা চিঠির লেখকের আর্থিক অবস্থা ভাল।
কারন প্রায় বিশ বছর আগে AKH এই কাগজ বাজারে লঞ্চ করে।
কিন্তু সখের তোলা আশি টাকা মামা।
তাই কিছু দিনের মাঝে ঊৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয়।কারন কেউ একটা ডাইরির পিছে দশ হাজার খসাতে চাইবে না।আর যে চাইবে তিনি সোখিন এবং বিশ বছর আগের কাগজ যার কাছে যার কাছে পাওয়া যায় তিনি পুরানো জিনিস সংগ্রহ করে এটা বলা যায়।কেননা, চিঠিটা বলপেন নয় দোয়াত কালি দিয়ে লেখা।দোয়াতের কালি দিয়ে এখন কেউ লেখেন না।আর যে লিখে সে শখে এটা করে।
-হুম। বুঝলাম। এই যে বললে, তিনি মহিলা।সেটা কি করে বুঝলে?
-দেখ। চিঠির চার পাশে হাতে নকশা করা।নকশাটা প্রাচীন কালের নকশি কাথায় করা হত।এই যুগের ছেলে মেয়েরা এত নিখুত ভাবে এটা আকতে পারবে না।আর যিনি এঁকেছেন তিনিঅনেক পারদর্শী।
কাঁথাও সেলাই করেছে, তাই এত নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন হয়ত।
তাই বলেছি তিনি মহিলা আর
বয়সে প্রাচীন।অন্তত ৬০ তো হবে ই।
-বেশ। চমৎকার। আসলে ভাগিনা তুইও পারিস বটে।কি বলব ভেবে পাচ্ছি না। তাই বললামঃ
কিন্তু বললি যে, চিঠিটা গ্রামে বসে লেখা।আর তিনি যে কাজটা নিয়ে আসছেন।সেটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।
_হ্যাঁ।
দেখ। চিঠির এক কোনে একটা দাগ দেখা যাচ্ছে।ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে দেখলে বুঝবে সেটা মোমের দাগ।
তার মানে তিনি মোম বাতি জালিয়ে এটি লিখেছেন।সেটা শহরেও হতে পারত।কিন্তু শেষ এক মাস এক মুহুর্তের জন্য লোডশেডিং হয়নি শহরে।এটা গ্রাম অঞ্চলে হয় মামা।
আর যিনি একটা চিঠি পনের দিন আগে লিখে এখন সেন্ড করতে পারেন।তার প্রয়োজনটা কতটা গুরুতপুর্ণ সেটা বোঝায় যাচ্ছে।
এবার চিঠির খামের দিকে তাকিয়ে দেখলাম। সত্যিইতো তারিখটা ১৫ দিন আগের।ভাগিনার ইনভেস্টিগেশন দেখে মনে হল আসলেই জিনিয়াস।আমি আবার বললামঃকেসটা কি নিবি?
-আগে মহিলাকে দেখি।তারপর বিষয়টা জানি।তখন যদি মনে হয়, বিষয়টা ইন্টারেস্টিং।তাহলে নিব নতুবা নিব না।(রিও)
-সেটা তোর ইচ্ছা। কিন্তু আমার কেন যেন ইন্টারেস্ট ফিল হচ্ছে।
-ওকে। একটা মেইল করে দাও যে, আগামী পরশু সন্ধা ছয়টায় এপায়েন্টমেন্ট।
-ওকে।
ভুলেই গেছিলাম যে, কাওকে এপায়েন্টমেন্ট দেওয়া হয়েছিল।
সন্ধায় বাসায় বসে বসে সংবাদ দেখছিলাম।
এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠল।
দরজা খুলে দিতেই একজন ভদ্রমহিলা প্রবেশ করল।
বয়স ৬৫ বা ৭০।পুরা সাদা মুখের চামড়া, কুচকিয়ে গেছে।সাদা শাড়ি আর গহনার বাহার দেখে মনে বেশ আভিজাত্য আছে মহিলার।আমি বললামঃকি চাই?
-আসলে আমি এসেছি রিও স্যারের সাথে দেখা করতে।আমায় মেইল করা হয়েছিল।
-মেইলের কথা শুনে
মনে পড়ল।
বললামঃও হ্যাঁ। আসুন।
মহিলা আমার হাতের লাঠি আর আমার খোড়া পা দেখে বললঃআপনি নিশ্চয় প্রফেসর?
-জি, ঠিকি ধরেছেন।
-রিও স্যার আছেন?
-হ্যাঁ। আপনি বসুন।
৫ মিনিট বাদে রিও এসে বসল তার চির চেনা আরাম কেদারায়।
কি কারনে জানি না।
মক্কেলের কথা শোনার সময় রিও, এই চেয়ারে আরাম করে বসে।
হয়ত অনেক প্রিয় বলেই।
এবার ভদ্র মহিলা সালাম দিয়ে রিও কে বললঃআসলে প্রফেসরের লেখা সকল গল্প আমি পড়ি।প্রফেসরের থ্রিলার দিয়ে শুরু করেছিলাম।
ওনি অনেক ভাল লিখেন। ভেবেছিলাম হয়ত, রিও তার লেখা কল্পনা মাত্র।কিন্তু ডাইমন্ড ভ্যালি রহস্য কেস যখন সলভ করলেন
তখন তুষারের বাবার কাছেই
জানতে পেলাম রিও কল্পনা নয়, বাস্তব।তখন থেকে আপনার সাথে দেখা করার ইচ্ছা হয়েছিল।
কিন্তু সুযোগ হয়নি।চিঠিটাও অনেক আগে লিখে ছিলাম।কিন্তু সময় করে উঠতে পারছিলাম না।
-হ্যাঁ। কাজের কথায় আসি।(রিও)
-আসলে, আপনার কাজের ধরন দেখে অনেক অবাক হয়েছি।
তাই ভাবছি,যদি বলতেন, আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে আপনার?
-আপনি কি আমার পরিক্ষা নিচ্ছেন?
-না। আসলে আপনার জ্ঞানের বহর দেখে আমি অবাক হই।তাই যদি কিছু মনে না করেন।
-ওকে।
কথাটা বলে রিও ভদ্রমহিলার দিকে একটা ভাল করে দেখে নিয়ে বললঃ হা হা হা, আপনি থাকেন গ্রামে।
সোখিন একজন মানুষ।
পুরনো জিনিস সংগ্রহের বাতিক আছে।এসেছেন নিজের গাড়িতে করে।আসার পথে গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।নিজে ড্রাইভ করেন গাড়ি।
কোন ড্রাইভার নেই আপনার।
আর কিছু বলব?
-দেখলাম ভদ্রমহিলা প্রসংশায় পঞ্চ মুখ হয়ে উঠলেন।
তারপর গম্ভীর হয়ে বললেনঃকি করে বুঝলেন?
-আসলে আপনার সম্পর্কে প্রথম যে তথ্য গুলো বলেছি।
ওটা চিঠি দেখে বুঝেছি।
-তারপর চিঠির ব্যাখ্যা শুনিয়ে দিল, রিও।
এরপর হাসতে হাসতে বললঃহা হা হা, আপনার হাতের নখের ভিতর অস্পষ্ট কালি দেখা যাচ্ছে।
ওটা যে গাড়ির কালি সেটা বোঝা যাচ্ছে।তাই বুঝলাম গাড়ি নষ্ট হয়েছিল।আর আপনার ড্রাইভার নেই তাই নিজেকেই গাড়ি মেরামত
করতে হয়েছে।
এটা কি খুব কঠিন বলা?
-আরে। আপনি তো অসম্ভব জিনিয়াস, মিস্টার রিও।
-কাজের কথায় আসি।
-জি হ্যা। আমি মিসেসঃরাজভি জোহান।থাকি নড়াইলের একটা প্রত্যন্ত অশ্চলে।আমার পুর্ব পুরুষেরা তখনকার জমিদার ছিল।এখন আর সে গুলি নেই।শুধু জমিদার বাড়িটা খা খা হয়ে পড়ে আছে।আমার স্বামী কর্নেল জোহান গত হয়েছেন বিশ বছর হল।আমার তিন ছেলে মেয়ে।
দুই ছেলে আর্মিতে ছিল।
ছিল মানে BDR বিদ্রোহের সময় বড় ছেলে মারা যায়।ছোট ছেলে এখন থাকে সপরিবার সিলেটে।
এক মেয়ে আর্পা, সে তার স্বামীর সাথে আমাদের জেলা শহরে থাকে।
জামাই ওখানকার সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাসের প্রফেসর।মেয়ে অবশ্য সরকারি স্কুলের ম্যাথ টিচার।আসলে মিস্টার রিও একগুলো আমি বলছি। কারন প্রথমে আমি আমার সম্পর্কে আপনাকে একটা স্পষ্ট ধারনা দিতে চাই।না হলে আপনি বিষয়টা বুঝে উঠতে পারবেন না।
-হ্যাঁ। বলুন। আমি অনেক ভাল একজন শ্রোতা, বলল রিও
-আসলে জমিদারবাড়িতে আমি একাই থাকি।বাপ দাদার নিবাস ফেলে রেখে যেতে পারি না।
আমার অবশ্য কোন ভাই বোন ছিল না।তাই এ বিশাল জমিদারবাড়ির সকল সম্পতির মালিক আমি।
আমার বাড়িতে আমার সাথে থাকে একজন কেয়ার টেকার।দুইজন মালি আর একজন রান্নার মেয়ে।
মোট পাচজন লোক এই বিশাল বাড়িতে থাকি।
-তো?
-এবার আসি আসল ঘটনায়।
আমি আমার জন্মের পর থেকে
এ বাড়িতে থাকি।কিন্তু কোন দিন কোন অস্বাভাবিক কিছুই দেখিনি।
-আপনি অস্বাভাবিক মানে কি বোঝাতে চাচ্ছেন?(রিও)
-আপনি কি ভুত প্রেত বিশ্বাস করেন? মিস্টার রিও।
-সেটা, পরেই বলি। আপনার ঘটনাটা বলুন।
_হ্যাঁ। বিষয়টা এমন যে কেউ কে কিছু বলতেই পারছি না।
আবার সমাধান করতে পারছিনা।
আসলে কোন জমিদারই তুলশি পাতা ছিলেন না।
আমি আপনাকে বুঝাতে পারব না যে, আসলে জমিদাররা আত্যাচারি হয়, নাকি জমিদার হলে অত্যাচার করতে হয়।তবে আমার পুর্ব পুরুষে ডাইরি পড়ে যা পেয়েছি তাতে
অত্যাচারে তারাও কম ছিলেন না।
আমাদের জমিদার বাড়ির পাশে একটা গোলা ঘর আছে।
যে খানে মানুষ বন্ধি করে রাখা হত।
অনেক অত্যাচার করাও হত তাদের উপর।এমনকি কখনো কখনো মেরেও ফেলত।সেই থেকে অনেকেই নাকি সেখানে রাতে কান্নার আওয়াজ ছাড়াও অনেক কিছু শুনতে পেয়েছে।
কিন্তু আমি কখনো কিছু দেখিনি।
কারণ,কথা গুলো লোক মুখে শোনা।
তাই সেটা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা ছিল না।কিন্তু শেষ ছয় মাসে যা ঘটেছে তাতে আমাকে বিশ্বাস করতেই হচ্ছে ভুত বা আত্ত্বা বলে কিছু আছে।যা আমাদের জমিদার বাড়িতেই আছে।
-ইন্টারেস্টিং। বলুন
-আসলে, প্রথম ঘটনা ঘটে আমার দারয়ানের সাথে।
তাকে সকাল বেলায় অজ্ঞান অবস্থায় আমার মালি ফুল বাগানের ভিতর আবিস্কার করে।জ্ঞান হলে জানতে পারি, সে রাতে কিশের শব্দ শুনে বাগানের দিকে গিয়ে যায়।
তারপর তার সে নাকি দেখেছে
গুদাম ঘরের ভিতর থেকে কেউ বের হয় আসছে।চোর মনে করে সে, এগিয়ে যায়।কিন্তু কাছে যেয়ে দেখে সেটা একটা রক্তাক্ত মানুষ।
তার সারা শরির রক্তে ভিজে আছে।
লম্বায় প্রায় সাড়ে পাচ ফুটের মত।
কিন্তু তার নাকি মাথা ছিল না।
গলার ওই খান থেকে কাটা।
আর সে জায়গা দিয়ে রক্ত ঝরে পড়ছে।ভয়ে সে দৌড় দেয়।
তারপর আর কিছু তার মনে নেই।
দুই দিনেই এলাকায় সাড়া পড়ে যায়।
এরপর আবার অভিশাপ পড়ে যায় বাড়িতে।প্রায়ই বাড়ির আশে পাশে দুই এক জনকে অজ্ঞান অবস্থাতে পাওয়া যেত।একই কাহিনী ভুত দেখেছে তারা।আমার বাড়ির কাজের মেয়েটাও একদিন অজ্ঞান হয়েছিল।
সে নাকি বাড়ির পাশে আগুনের মত কিছু একটা দেখেছে।যেটা নাকি দোড়ে বাড়ির এপাশ ওপাশ করছিল?
-আগুনের সাইজটা কেমন ছিল?
-একটা আস্ত কুকুরের মত।
-ওকে, বলুন।
-আসলে বাসার মালি থেকে শুরু করে যখন সবাই ভয় পেয়ে চাকুরি ত্যাগ করতে চাইছিল।তখন মনে হল এর একটা সমাধান করা উচিত।
তাই অনেক তান্ত্রিক, উজা এনেছিলাম।আর ফলা ফল শুন্য।
এর পর আপনার কথা জানতে পারলাম।তাই আপনার কাছে আসার প্ল্যান করেছিলাম।কিন্তু ঠিক সময় করে উঠতে পারছিলাম না।
কিন্তু গত এক সপ্তাহ আগে
যা ঘটল তাতে আর বসে থাকতে পারলাম না।
-ঠিক কি ঘটেছিল।
-আসলে রাত আনুমানিক দুইটা হবে।
একটা শব্দে আমার ঘুম ভেংগে যায়।
উঠে আমি শুধু দেখলাম আমার ঘর থেকে একটা ছায়া মুর্তি দৌড়ে চলে গেল।ভুল দেখেছি মনে করতে পারতাম।কিন্তু দরজা খোলা ছিল।
আর আমার স্পষ্ট মনে আছে
আমি দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে ছিলাম।আবার দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে যাই।আবার একই ঘটনা ঘটল।
বিশ্বাস হবে না হয়ত আপনার মিস্টার রিও।আমি এক রাতে তিন বার একই ঘটনার মুখো মুখি হয়েছি।
তাই আর দেরি না করে আপনার কাছে এসেছি।এমন একটা সেন্সেটিভ মেটার যে বাইরের কাওকে বলতে পারছি না।আবার মেনেও নিতে পারছি না।
-পুলিশে গিয়েছিলেন?
-এঘটনায় পুলিশ কি করবে বলুন?
-তা হলে আমি কি করব বলুন?
আমি তো তান্ত্রিক নই।জাস্ট গোয়েন্দা।
-সেটা জানি। তারপরও কেন জানি মনে হচ্ছে আপনি এর একটা কিনারা করতে পারবেন।
-এমন মনে হওয়ার কারন?
-আসলে, বললে গাজা খুরি গল্প মনে হবে।তাও বলছি, আমার পুর্ব পুরুষের ডাইরি পড়ে প্রায় তিন বছর আগে জানতে পারি। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, আমাদের পুর্ব পুরুষেরা প্রজাদের যে সব সোনা দানা কেড়ে নেয়
তার কোন হদিস পাওয়া যায় নি।
তার ধারনা এগুলো এই বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছেন।তাই যদি আপনাকে এটা খুজে দেওয়ার জন্য ডাকি নিশ্চয় যাবেন?এতে এক কাজে দুই কাজ হয়ে যাবে।
-হা হা হা,,, তার মানে আপনি চাইছেনই, আমি সেখানে যাই।
-অনেকটা তাই।
-কোন সমস্যা নেই। তবে আমার হাতে কিছু কাজ আছে।
সে গুলো শেষ করতে সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে।তারপর আমি আপনার বাড়ির ভুত দেখতে আসছি।
_-ন্যবাদ, মিঃ রিও।
-ভদ্রমহিলা চলে যেতে হো হো করে হেসে দিয়ে বললামঃজমিদার বাড়িতে অভিশাপ থাকে।
এটা অনেক ভুতের ফ্লিমে দেখেছি।
কিন্তু বাস্তবে কি ভুত আছে রে পাগলা?
-থাকতেও পারে। তবে সে ভুত
তোমার মত মাথা মোটা
লোকের সামনে আসবে কিসের দুঃখে?
-মানে?
-ভুতেরা জিনিয়াস হয়, মামা।
-মানে?তুই বিশ্বাস কর ভুত আছে ভাগিনা?
-একটা কমপ্লিকেটেড প্রশ্ন হয়ে গেল মামা।আসলে আমি ভুত বিশ্বাস আমি করি না।তবে জ্বীন, পরী বিশ্বাস করি।
আল্লাহ যেমন আছেন, তেমন ডেভিলও আছে।আপাতত এই ডেভিলকেই ভুত মনে করি আমরা?
-হ্যাঁ।তারমানে তুই নড়াইল যাচ্ছিস?
-শুধু কি রিও যাচ্ছে?প্রফেসর যাবে না?
-না। আমার এই ভুত দেখার ইচ্ছা নেই।
-আরে চল প্রসেসর।
আমার গ্রামের বাড়ি ওখানে।তুমিতো কোন দিন যাও নি।একবার চল।
পাগল করে দেওয়া প্রাকৃতিক
দৃশ্য দেখতে পাবে।তুমি তো চিত্র কলা পছন্দ কর।তাহলে এস, এম সুলতানের জন্ম ভূমি দেখার সু্যোগ কেন হাত ছাড়া করবে?
-হুম। তা হলে যাওয়া যেতে পারে।
-কিন্তু এই যে তিনি বললে গুপ্ত ধনের কথা। সেটা কি আসলে সত্য?
-নট সিওর। তবে হতে পারে আমায় নেওয়ার একটা ফন্দি।
তবে যিনি আমায় ফন্দি এটে হলেও নিতে চান তার ডাকে সাড়া দেওয়া শ্রেয় নয় কি?
-হুম। ভাববার বিষয়।একসপ্তাহ আছে।একটু ভেবে দেখ কি হতে পারে।
-হুম।
দুই দিন পর
রিওর ডাকে ঘুম ভাঙলো।
এত সকাল সকাল কেন যে আমার ঘুম ভাঙালো বুঝলাম না।এমনিতে ছয় মাস পর এমন লং ছুটি পেয়েছি।
ভার্সিটি বন্ধ তাই আরামে ঘুমচ্ছি।
কিন্তু রিওর কি হল?ফ্রেস হয়ে রিও কাছে যেতেই বললঃ খবর শুনেছ?
এখনি নড়াইল যেতে হবে।
-কেন?
-মিসেসঃরাজভি জোহান খুন হয়েছে
গত রাতে।
-কি বল?
-হ্যা। বাবাকে কাল রাতে
নড়াইল যাবার কথা বলেছিলাম।
কেসটার ব্যাপারেও বলেছিলাম।
তিনি বলেছিলেন তিনিও আসবেন।
কারন তিনিও অনেক দিন গ্রামের বাড়ি যাননি।কিন্তু একটু আগে বাবা কল দিয়ে বললেন, রাজভি জোহানের লাশ পাওয়া গেছে ঘরের মেঝেতে।শরীরে নাকি তেমন আঘাতের চিহ্ন নেই।
শুধু পিঠে একটা চিহ্ন পাওয়া ছাড়া ।
সেটা প্রথমিক ভাবে বাঘের থাবার মত মনে হয়েছে।বাবাকে বলেছি লাশ যেন,না সরানো হয়।আমি যাবার পর পোস্টমর্টেমে পাঠানো হবে।বাবাও পোছে যাবে আমি পোছানোর আগে।
-হুম।কমিশনার যাবে কেন?
-রাজকীয় পরিবার প্রফেসর।পুরো দেশে তোলপাড় শুরু হয়ে যাবে।
তাই আগে থেকেই প্রশাসন
উঠে পড়ে লেগেছে।
-কি আর করা ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে গাড়িতে চেপে বসলাম।রিও ড্রাইভ করছে।সাধারণত আমরা বাইকে যেতেঅভ্যস্ত।কিন্তু কমিশনার ওখানে আছে।তাই ইচ্ছা থাকা সত্বেও বাইকে যেতে পারলাম না।গাড়িই নিতে হল।
দুপুর দেড়টা নাগাদ লোহাগড়া পোছে লাঞ্চ সেরে নিলাম।রিও আবার গাড়ি চালাতে লাগল।
বললাম কত সময় লাগবে?
-এইতো বিশ মিনিট; বলল রিও।
যখন বাড়ির গেটের সামনে পৌঁছালাম তখন ঠিক তিনটা বেজে গেছে।খুবি অবাক এই বাড়ির বর্ণনা মহিলা যা দিয়েছিল তার থেকেও অনেক বেশি সুন্দর।ছবির মত সুন্দর কথাটা এই বাড়ি এবং চারপাশ দেখে বলা যায়।গেটের সামনে যখন গাড়ি থামল দেখলাম প্রাচীন কালের গেট।
পুরোটাই পাথরের তৈরি।
পাশে দুটা স্বেত পাথরের বাঘের মুর্তি।
গেটের গায়ে লেখা, ১৭০০ খৃঃ।
গেটের বয়স যা অনুমান করেছিলাম তার থেকেও দেখি অনেক বেশি।
গেটে গিয়ে রিও হর্ন বাজালো।
বাড়ির ভিতর থেকে দেখলাম দারোয়ান আর একজন পুলিশের হাবিলদার গোছের একজন বেরিয়ে আসল।রিও গাড়ি থেকে মুখ বাড়িয়ে বললঃ কমিশনার সাহেব এসেছেন?
_না। তিনি থানাতে আছেন।
তবে ওসি সাহেব আছেন;বলল হাবিলদার ভদ্রলোক।
_যাও, ওসি সাহেব কে বল রিও এসেছে।
_জি স্যার।
লোকদ্বয় প্রস্থান করল।
আমি গাড়ি থেকে বের হয়ে সারা বাড়ি ঘুরে দেখতে লাগলাম।
কেননা, অনেক সুন্দর করে সাজানো গুছানো বাড়ি।
জমিদার বাড়ি বলতে আমার কাছে মনে হয় ভাংগা, ইট ঝরে পড়া, বাগান টাইপের একটা ভুতের বাড়ি হয়ত।
কিন্তু এটা কে বাড়ি না বলে স্বর্গ পুরী বললেই একটুও ভুল হবে না।
গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকলে বাড়ি পর্যন্ত সোজা একটা রাস্তা।পাথর দিয়ে এত সুন্দর করে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে
যেটা রাস্তা না বলে অন্য কিছু বললেই ভুল হত না।রাস্তার দুই ধারে ফুলের বাগান।এত প্রকার ফুল এখানে সেটা মনে হচ্ছে বাস্তব নয়, কল্পনা।
যারা শাপলাকে জাতীয় ফুল করেছিল তারা এই বাগানের গোলাপ দেখলেইংল্যান্ড এর মত আমাদের দেশের জাতীয় ফুল হয়ত গোলাপ হত।কি আর করা একটু এগিয়ে গিয়ে বিশাল আকৃতির একটা ঘর দেখতে পেলাম।এই ঘরটার কথাই হয়ত মিসেস জোহান বলেছিলেন।
কল্পনা করতে গা শিওরে উঠল।
এই ঘরে মানুষকে আটকিয়ে রেখে অত্যাচার করা হত।না জানি কত মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়া হয়েছে এই ঘরে।একটু এগোতেই দেখলাম। বিশাল অট্টলিকা দেখা যাচ্ছে।
বুঝলাম, এটাই জমিদার বাড়ি।
জমিদারের রুচি ছিল বলতেই হবে,,না হলে এমন বাড়ি কেন
তিনি বানাবেন।
রিওর ডাকে ঘোর কাটল।
_আরে প্রফেসর। বাড়ি দেখার অনেক সময় পাবে।
চল ভিতরে গিয়ে দেখি।
আসল ঘটনা টা কি?
________ রিও এবার তার সাথে থাকা একজন পুলিশের সাথে আমায় পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললঃএই হল আমাদের সদর থানার ওসি মিস্টার সাদেক।
আমি হ্যালো বলতেই রিও আবার বললঃহ্যাঁ, সাদেক সাহেব এই হল আমার মামা এবং সহকর্মি ইফতি।
তারপর আমরা তিন জন মিলে সামনে এগিয়ে গেলাম।
তখন রিওর ফোনটা বেজে উঠল।
রিও ফোন বের করে রিসিভ করল।
ওপাশ থেকে কি বলেছিল না শুনতে পারলে আন্দাজ করতে পারলাম এটা রিওর বাবার কল ছিল।
তিনি হয়ত বলেছেন তিনি আসছেন।
তাই ইনভেস্টিগেশন পরে শুরু করতে।
কারন, আমি যত বার রিওর কাজের স্টাইল রিওর বাবার কাছে বলেছি তত বার তিনি আফসোস করেছে।
তার নাকি অনেক ইচ্ছা রিওর কাজের স্টাইল দেখবেন।
তাই আজ যখন চান্স পেয়ে গেছেন।
তখন হাতছাড়া করবেন না এটাই স্বাভাবিক।
আমরা গিয়ে একটু সামনে দেখলাম বেশ সুন্দর একটা বসার ঘর আছে।
তিন জন বসলাম।
দেখলাম একটু পরে একজন পুলিশ ফ্লাক্স এ করে আমাদের জন্য চা নিয়ে এসেছেন।চা বেশ সুন্দর হলেও রিওর পেট দিয়ে নামবে না।
কারন চিনি দেওয়া আছে চায়ে।
আর রিও ডোন্ট লাইক সুগার।
চায়ে চুমুক দেওয়ার পর রিওর মুখ দেখার মত হয়েছিল।
তাই সে চা সাইড করে পকেট থেকে সিগারেট বের করে ওসির দিকে এগিয়ে বললঃ মাইন্ড করার কিছু নেই।ওসিও এক পিস তুলে নিল।
তারপর রিও সিগারেট ধরিয়ে দুই টান দিয়ে বললঃসাদিক সাহেব।
পুরো ঘটনাটা বলেনতো আপনি কি জানেন।
_আসলে স্যার। তখন রাত তিনটা বাজে।আমি বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি।তখন ফোনের শব্দে ঘুম ভেংগে গেল।দেখলাম থানা থেকেই কল দেওয়া হয়েছিল।তাই কল ব্যাক দিলাম।অন ডিউটি অফিসার বললঃস্যার জমিদার বাড়িতে
কর্নেল জোহানের স্ত্রীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
আপনি কি একবার আসবেন.?
আমি তাদের দ্রুত ফোর্স নিয়ে সেখানে যেতে বলে আমিও চলে গেলাম।ফোর্স যাবার আগে আমি পৌঁছে গিয়েছিলাম।
কারন থানা থেকে আমার বাসা এই বাড়ির অনেক কাছে।
ভিতরে ঢুকে দেখলাম বেশ অনেক মানুষ জড় হয়ে গেছে এই রাতে।
মিসেস জোহান পড়ে আছেন তার শোবার ঘরের ফ্লোরে।
রক্ত তেমন বের হয়নি শরীর থেকে যদিও উপুড় হয়ে পড়ে আছেন তিনি আর পিঠে চার আংগুলের ছাপ।
আমার কাছে বাঘের ছাপের মত মনে হয়েছে।
তবে আইএম নট সিওর।
আমি তখনই আমার উপরের অফিসার কে কল দিই।
কারন বুঝেনিতো বেশ বড় মাপের জমিদার ফ্যামিলি তাই আমার একার পক্ষে কোন ডিসিশন দেওয়া সম্ভব না।
একটু পর কল ব্যাক এল পুলিশ কমিশনার স্বয়ং আসছেন।
লাশের ঘরটা লক করে রেখে দেওয়া হয়েছে।
বাড়ির অন্য মেম্বার বলতে থাকে একজন কেয়ার টেকার, দুজন মালি আর একটা কাজের মহিলা।
অবশ্য কাজের মহিলা মালি করিমের স্ত্রী।রাত দুইটা নাগাদ কাজের মহিলা মিসেস জোহানের ঘরর কিছু পড়ার শব্দ শুনতে পায় এবং সেটা অনেক জোরে।তাই তার স্বামীকে ডেকে তুলে। তারপর দুজন মিলে এগিয়ে যায় জোহানের ঘরে।দরজা খোলা ছিল। যদিও তিনি সব সময় দরজা বন্ধকরে ঘুমোতেন।ভিতরে ঢুকে আলো জ্বেলে দেখতে পান তাদের ম্যাডাম ফ্লোরে পড়ে আছেন এবং তিনি মৃত।
তারপর মহিলার চেঁচামেচিতে অন্য মালি উঠে আসে।
আর দারোয়ান বাড়ির ভিতর চেঁচামেচি শুনে দ্রুত ভিতরে চলে আসেন।তারপর তারা থানায় ফোন দেন.।
রিও এতক্ষনে কথা বললঃহুম। কিন্তু মিস্টার সাদেক আপনি কত সময় পরে এসেছিলেন?
_এই ধরুন আড়াইটা নাগাদ।
_এসে কি সবাইকে বাড়ির ভিতর নাকি বাহিরে দেখেছিলেন?
_বাহিরে। কারন কাজের মহিলা এক্ষেত্রে বেশ বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন।
তিনি পুলিশকে কল দিয়ে মিসেস
জোহানের ঘর লক করে দেন।
_কিন্তু কেন?রিওর এমন প্রশ্নের জবাবে শুধু আমি নয় ওসিও অবাক হয়ে গিয়ে ছিলেন।
_সেটাতো জিজ্ঞাসা করা হয়নি,স্যার।
_হুম। করবেন না। সেটা বুঝেই ছিলাম।আসলে আপনি যা ইনভেস্টিগেশন করেছেন।
তাতে আমার মনে হয় আপনার থেকে একজন সাধারন মানুষ আরো ভাল পারত।
যাই হোক রিও এসে গেছে।
মনেহয় বেশি সময় লাগবে না।
তা,, কাকে কাকে আটক করেছেন এ পর্যন্ত?
_সাবাইকে।
_ওকে। মামা, চল। ঢাকা ফিরে যাই। কেসটা ওসি সাহেব সলভ করে ফেলেছেন।
ওসি সাহেব অবাক হয়ে রিও দিকে তাকিয়ে বললঃকি বলেন স্যার আপনি চলে যাবেন?
_কি আর করব? আপনি সবাইকে আটক করেছেন।
না জানি কখন আমাকেও আটকিয়ে দেন।
_ইয়ে মানে সরি স্যার। দুই মালি, দারোয়ান আর কাজের মহিলাকে আটক করা হয়েছে।
_গুড। যা বলব স্পষ্ট উত্তর দিবেন।
না জানলে, না বলবেন।
মিথ্যা আর পেচানো কথা আমি
পছন্দ করি না।
_জি, স্যার।
রিও হয়ত আরো কোন প্রশ্ন করত।
কিন্তু কমিশনার অব পুলিশ এসে গেছেন।
দেখলাম বেশ সিকিউরিটি দিয়ে কমিশনারকে আনা হয়েছে।
আর হবেই বা না কেন।
রাতেইতো এখানে একটা খুন হয়েছে।
রিও তার বাবার সাথে এমন সব এটিচুড করে যেন, এরা বাপবেটা নয়,ক্লোজ বন্ধু।
রিও ওর বাবাকে বাবা কম বলে।
ওই স্টাইল কমিশনার বলা।
আর কমিশনার বাধ্য হয়ে রিওকে বাবা বলে ডাকে।
রিও কমিশনারকে বললঃকমিশনার কি থানায় বসে বসে চা খাচ্ছিল?
_না। কাজ ছিল কিছু।(কমিশনার)
_আসছেনতো কেস সলভ করতে, নিশ্চয় থানা ভিসিটিংয়ের জন্য নয়।
_সরি। বাপ দেরি হয়ে গেল।
_রিও ঢাকা থেকে পোঁছে গেল আর আপনি?
_বলছিতো ভুল হয়েছে।
_ওকে, চলেন।
_________ কমিশনারের সাথে এরুপ ব্যাবহার দেখে ওসি সাদেক আমায় কানে কানে বললঃপ্রফেসর। গোয়েন্দা আর কমিশনারের মাঝে কি কোন সম্পর্ক আছে?
আমি হেসে দিয়ে বললামঃওরা বাপ_বেটা।
_হুম। ঘুলিয়ে যাচ্ছিল।
_________ যাই হোক বাড়ির কাছে গিয়ে দেখলাম বিশাল আকৃতির বাড়ি।
একটা ছোট গেট পেরিয়ে ঘরের ভিতর প্রবেশ করলাম।
প্রথম দিয়ে বেশ কয়েকটা রুম লক করা রয়েছে। বুঝলাম থাকার মানুষ নেই তাই হয়ত।
দরজা গুলো কাঠের হলেও
মনে হল বেশ শক্ত হবে।
প্রচান কাঠ দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা সেকুন কাঠ হবে হয়ত।
বেশ কয়েকটা বন্ধ রুম পাস করে
একটা ঘরের সামনে এসে থামলাম।
বেশ কয়েক জন পুলিশ পাহারায় দাড়িয়ে আছে।
দেখেই বোঝা এই ঘরেই ভিকটিম আছে।
পাশের একটা রুম থেকে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম।
বুঝলাম এটা ভদ্রমহিলার মেয়ে হবে হয়ত।
রিও ওসি সাদেকের দিকে তাকিয়ে বললঃ মহিলার মেয়ে আর জামাই এসেছেন?
_জি স্যার।
_ওনার ছোট ছেলে?
দেখলাম অবাক হয়ে ওসি সাহেব রিওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
কারন তিনি হয়ত ভাবছেন, রিও এত কিছু জানল কি করে?
অস্পষ্ট স্বরে ওসি সাহেব বললেনঃনা। এখনো পৌঁছাননি।
তবে চলে আসবেন এখনি হয়ত।
_________দরজা খোলা হল।
বেশ গোছালো ঘরটা।
এত বড় রুমটাও তিনি যে ভাবে সাজিয়ে রেখেছেন।
তাতে মনে হচ্ছে রুচি ছিল মহিলার।
আর তিনিযে কতটা সোখিন তার স্পস্ট ছাপ আছে বাড়িটাতে।
বেশ কিছু তাক আছে ঘরটাতে
সেখানে সাজানো বেশ কিছু মুর্তি।
বই খাতা, অনেক ধরনের কলম, পুরানো ডাইরি ইত্যাদি।
পাশে কয়েকটা সোফা।
যার উপরে দেওয়ালে কিছু ছবি।
বুঝলাম এগুলোই এদের পুর্ব পুরুষ।
কারন এদের পোশাকে জমিদারিত্ব স্পস্ট।
পাশে একটা টেবিলে সেখানে
রয়েছে বেশ কিছু বই।
অবাক হলাম আমার লেখা থ্রিলার আর ডিটেকটিভ বইও আছে।
তার পাশে একটা চেয়ার।
চেয়ারের স্টাইল দেখে বোঝাই যাচ্ছিল এটি জমিদার আমলের।
কারন বেশ নকশা করা।
পাশে বেড।বালিশ, চাদর দেখে বোঝা যাচ্ছে সেটা হাতে নকশা করা।
পাশে একটা জানালা।
যেটা দিয়ে দক্ষিনা বাতাস আসছে।
আর ফ্লোরে পড়ে আছে মিসেস রাজভি জোহান।
_________এবার দেখলাম রিও তার কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে নিয়ে তার থেকে হ্যান্ড গ্লাভস বের করে পরে নিল।
এর পর ব্যাগ থেকে ম্যাগনিফ্লাইং গ্লাস বের করে নিল।
আমার দিকে ব্যাগ দিয়ে বললঃ ফটোগ্রাফির কাজটা শেষ করে ফেল, প্রফেসর।
আর ব্যাগ ও ক্যামেরা হাত ছাড়া করো না।
খুব সেয়ানা পাপীর পাল্লায় পড়েছি।
অনেক ভোগাবে মনে হচ্ছে।
এই এত টুকু সময়ের মাঝে কি বুঝল রিও,জানি না।
তবে রিও মুখ দিয়ে যা বের করে কখনো মিথ্যা হতে পারে না।
এবার রিও ভদ্রমহিলার ক্ষত পরীক্ষা করল।
তারপর ব্যাগ থেকে মেজারমেন্ট টেপ দিয়ে সারা ঘর মাপল।
টেবিল আর তাক থেকে গুনে গুনে সব বই গুলে বের করে
বেডের উপর রাখল।
মাঝে মাঝে কমিশনার কথা বলার চেষ্টা করলেও রিও কিছু বলল না।
আমি বাধ্য হয়ে কমিশনারকে বললামঃভাইয়া, কাজটা শেষ করতে দেন।
কাজ না শেষ করে ভাগিনা কোন কথা বলে না।
এরপর রিও বই গুলো বান্ডিল বেধে একজন পুলিশকে বলল সে গুলো আমাদের গাড়িতে রেখে আসতে।
এর মাঝে আমার ছবি তোলা শেষ।
এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললঃতোমার কাজ শেষ?
_হুম। ছবি নিয়ে নিয়েছি।
_গুড।
এরপর ১৫ মিনিটের মত
মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকল।
বুঝলাম ওর মাথায় চলছে সাইক্লোন।
কানের কাছে হাত দিলে স্পস্ট গরম হাওয়া পাব।
এরপর উঠে আবার ক্ষতটা ভাল করে পরীক্ষা করল।
তারপর হো হো করে হেসে দিয়ে বললঃ ওসি সাহেব। আমার কাজ শেষ।
আপনি আপনার মত কাজ করতে পারেন;কথাটা বলেই রিও আমাকে বললঃচল বাহিরে যাই।
এমন সময় কমিশনার বললঃকি বুঝলে?সেটাতো বললে না?
_আসলে বাবা যদি আমি এখানে কিছু বলি তাহলে
প্রশাসনের লোকের কাজের সমস্যা হবে।
তারা তাদের কাজের স্টাইল অ্যাপ্লাই করতে পারবে না।
তাতে করে খুনিকে ধরা সম্ভব হবে না। তারপরও বলি, যিনি এ কাজ ঘটিয়েছেন , তার বয়স ৩০ আথবা ৩৫ হলেও মাথায় পাকা চুল আছে।
মারার আগে হাতাহাতিও হয়েছে মহিলার সাথে
যিনি খুন করেছেন তিনি
B&H সুইচ পান করেন।
আর লেফট হ্যান্ডেড।
গ্রিপলেস সু পরেন।
খুন করার কোন ইচ্ছা তার ছিল না।
আনফরচুনেটলি খুন হয়ে গেছে।
খুনি বাহির থেকে অস্ত্র নিয়ে এখানে এসেছিলেন না।
যেটা দিয়ে খুন করা হয়েছে, সেটা এই ঘরেই আছে বলে আমার ধারনা।
আর খুন হয়েছিল রাত দুটাই নয় ১১ অথবা ১২ টায়।
আর মজার ব্যাপার হল
খুনি হাতে গ্লাভস পরে এসেছিল।
আর কিছু বলব না।
পারলে এবার বের করে নেন।
না পারলে রিও প্রেজেন্টস হেয়ার।
________ কথাগুলো হয়ত সবার অবিস্বাশ্য মনে হল।
কিন্তু রিওর সেদিকে খেয়াল নেই।
সে তার বাবার দিকে তাকিয়ে বললঃআমি যাচ্ছি।
ভাল একটা হোটেল হবেতো?
_হ্যাঁ। আছে।
ইচ্ছা হলে গ্রামের বাসায় যেতে পার।(কমিশনার)
_না। এতে কাজের কাজ কিছু হবে না।
_ওকে। ডল্ফিন আছে।
_ওকে। সন্ধায় চলে এস।
_________ আর কারো সাথে কোন কথা আমাদের হল না।
সোজা মেইন শহরে চলে এসে
ডলফিনে একটা রুম পেয়ে গেলাম।
দিনটা বড়ই গোলমেলে কাটল।
আমি সরাসরি বেডে।কারণ বেশি দাড়িয়ে থাকলে পা প্রচুর ব্যাথা করে।
তাই বিছনায় শুয়েই রিও কে বললামঃভাগিনা। কি বুঝলে?
কে খুন করতে পারে?
_সেটা যদি জানতাম তাহলে তো তাকে ধরে নিয়ে আসতাম।
কিন্তু খুনের কোন মোটিভ পাচ্ছি না।
_কি বল? খুন যে করেছে তার বর্ণনা দিয়ে দিলে।
আর এখন বল মোটিভ
পাচ্ছ না। অদ্ভুত?
_আরে মামা ওটাতো ইনভেস্টিগেশন এর ফল বললাম।
দেখ খুনির দুটি পায়ের দুরত্ব, মানে স্টেপ বাই স্টেপ মাপলে তার উচ্চতা, বয়স বলে দেওয়া যায়।
তবে এর জন্য পায়ের মাপ লাগে। আর সে জন্য গ্রিপলেস
জুতার মাপটা নিতে বেশ কষ্ট হয়েছিল।
কিন্তু খেয়াল করে দেখলে তোমারও মনে আছে মিসেস জোহানের মাথার চুল পুরোটাই পাকা ছিল।
কিন্তু ভিকটিমের দেহের পাশে
বেশ কিছু কাচা পাকা মিশ্রিত চুল পেলাম।
যেগুলো টানা টানি করার দরুন উঠেছে।তাই বললাম খুনির বয়স ত্রিশ বা পঁয়ত্রিশ হলেও মাথায় কাঁচা পাকা চুল আছে।
_হতে পারে এটা ভিকটিমের চুল? আমার প্রশ্ন
_না। ছেলেদের চুল ছোট আর স্মুথ হয়।
আর মেয়েদের হয় সিল্কি আর বড়।
চুল গুলো সব ছোট ছিল।
আর ভিকটিমের সাথে মিলিয়েও দেখেছি।
এটা ভিকটিমের চুল নয়।
_তা হলে তো খুনি এক জন নয় দুই জন?বললাম আমি
_ কি ভাবে?
_দুই ধরনের চুল? কাচা আর পাকা.
_এই তো প্রফেসর তোমারও মাথা খুলতে শুরু করেছে।
কিন্তু দুই জন নয়।
কারন আমি প্রতিটা চুল মেপে দেখেছি।
সব গুলোর সাইজ এক। তাই
সব গুলোই এক জনের চুল।
এটা হয়ত মিসেস জোহানের সাথে হাতা হাতির সময়
উঠে গিয়েছিল।
কিন্তু কথা হল, যদি খুন করতে আসে।
তাহলে খুন না করে লোকটা সারা ঘর কেন পায়চারি করবেন?
কেনই বা মহিলার সাথে হাতা হাতিও করবেন?
কারন ঘরময় তার পায়ের ছাপ ছিল।
গ্রিপ ছাড়া একটা জুতা পরা ছিল তার।
তার মানে তিনি খুন করতে এসেছিলেন না।
এসেছিলেন অন্য কোন উদ্দেশে।
তাই ভদ্রমহিলাকে জাগাতে বাধ্য হয়েছিলেন।
ভদ্রমহিলার তার কথায়, রাজি না হওয়ায় হাতাহাতি হয়।
এক পর্যায়ে মহিলাকে আঘাত করলে তিনি মারা যান।
কিন্তু কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে খুনির?
কি নিতে এসেছিলো খুনি?
কিছু যদি নিতে আসে নিয়ে চলে যাবে।
তাতে করে হাতে গ্লাভস পরার কোন সমাধাম পাচ্ছি না।
কারন যা দিয়ে আঘাত করে থাকুন না কেন।
জিনিসটা বেশ ভার এবং এবড়ো থেবড়ো ছিল।
তাই হ্যান্ড গ্লাভসের কিছু একটা আংশ ছেড়াও পেয়েছিলাম।
এটাই চিন্তার বিষয়।
কি নিতে এসেছিল খুনিএই জমিদার বাড়ি থেকে?
_আর সময়ের কথা বলেছিলে। কি করে বুঝলে খুন দুইটার দিকে নয়, খুন হয়ে এগার থেকে বার টার মাঝে?আমার প্রশ্নর জবাবে রিও বললঃ
মামা। ভদ্রমহিলার হাতের ঘড়িটা দেখনি নিশ্চয়?
_হ্যা। দেখেছি। ৯৩/২ তে যখন গিয়ে গিয়েছিলেন তখনও ঘড়িটা হাতে ছিল।
_হ্যা। ঘড়িটা দেখে বুঝলাম।
কারন আঘাতের পর যখন তিনি পড়ে গিয়েছিলেন। তখন হাতটা হয়ত নিচে পড়ে যায়।
তাই ঘড়ির গ্লাস ভেংগে ঘড়ির ভিতর দিয়ে ঢুকে যাওয়ায় ঘড়ির কাটার চলন বন্ধ হয়ে যায়।
আর ঘড়িটার কাটা ১১.১৯.৩৭ এ বন্ধ হয়ে আছে।
তাই বলায় যায় তিনি এগার থেকে বারটার মাঝে মারা গেছেন।
_তার মানে আঘাতের পরও তিনি জিবিত ছিলেন?
_সে আশা কম।
তবে থাকলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
_কিন্তু ভাগিনা।
তিনি তো বলেছিলেন বাড়িতে নাকি ভুত থাকে?
_তোমার মাথা থাকে।আজাইরা কথা।
_তাহলে পুলিশতো সহজে খুনিকে ধরে ফেলতে পারবে।
কারন ফিজ্ঞার প্রিন্ট দিয়ে সহজে খুনিকে সনাক্ত করা যাবে।
_ কিন্তু খুনিকে না পেলে কার ফিংগার প্রিন্টের সাথে মিলাবো?
_মানে?
_তুমি কি ভাবছ খুন ওই বাড়িতে বসে আছে?
এখান থেকে ৩৫ কি মি হল যশোর।
তার একটু এগিয়ে গেলে
বেনাপোল বর্ডার।
কিছু বুঝেছ মামা।
ধরা পড়ার ভয় সবার আছে।
হোক সে খুনি আর হোক সে খুনের মদদ দাতা।
_মদদ দাতা মানে? তুমি কি মনে কর খুনের পিছে অন্য কারো হাত আছে?
_মনে করার মত কিছু পায়নি।
আবার মনে না করার মত কিছুও পায়নি।
________ হয়ত রিওর সাথে আরো কিছু কথা হত।
কিন্তু রিওর বাবা এর মাঝে এসে গেলেন।
তার সাথে দেখলাম একটা লোক এসেছে।
বয়স ২৫ এর মত।
সাদা সার্ট আর কালো প্যান্ট ইন করা।
পায়ে ব্লাক সু।
কমিশনার রিওর বেডের উপর বসে লোকটিকে বসতে বলল।
তারপর রিও আর আমাকে উদ্দেশ্য করে বললঃএই হল সাফিন।
আমাদের জিনিয়াস ডিটেকটিভ অফিসার।
সরকারি ভাবে এ মামলা তিনিই হ্যান্ডেল করবেন।
তোমাদের কোন হেল্প লাগলে
তাকে বলতে সংকোচ করবে না।
তোমার সাফিনের সেল নাম্বার রেখে দিতে পার।
রিও তার বাবার কথা উত্তর না দিয়ে হো হো করে হেসে দিয়ে বললঃ আসলে বুঝলেন কমিশনার।
আল্লাহ আমার জ্ঞান এখনো কমিয়ে দেননি।
তাছাড়া বিফল করেন নি।
আপনি সাফিনকে বলেন রিওর সেল নাম্বার নিয়ে যেতে।
যদি কখনো জমিদার বাড়িতে বাঘ_ছাগল কিছু দেখেন।
তবে যেন আমায় নক দেন।
কারন ভুতের বাড়িতে বাঘ থাকতেও পারে।
________ ভাগিনার হেয়ালি বোঝা বড় দায়।
তবে এত টুকু বুঝেছি ভাগিনা বাপের কথায় অপমান বোধ করেছে।
কারন ওবলে নিজের জ্ঞান যেখানে থেমে যায়।সে জায়গা
থেকে প্রস্থান করাই ভাল।
কারন ধার করা জ্ঞান দিয়ে আর যাই হোক ইনভেস্টিগেশন পসিবল না।
যদি তাই হত চাঁদ রাতে নয়
দিনে আলো দিত।
কারন সূর্য থেকে চাঁদ পৃথিবীর অনেক অনেক কাছে।
ভেবেছিলাম ওসি সাফিন হয়ত
রিওর কথার কোন উত্তর দিবেন।
কিন্তু কিছুই বললেন না।
কারন মনে হয় বড় আফিসার হাজির থাকলে ছোট অফিসারেরা কথা বলেন না।
আর সেখানে স্বয়ং পুলিশ প্রধান উপস্থিত।
দেখলাম মাথা নেড়ে রিওকে সালাম দিয়ে বিদায় নিল সাফিন।
এরপর শুরু হল বাপ_বেটার
গল্প।
কথায় কথায় রিওর কাজের ধরন শুনে কমিশনার বললঃআমি যদি কমিশনার না
হতাম।
তাহলে রিও হতে চাইতাম।
রিও তার উত্তরে বললঃরিওর বাপ কমিশনার ছিল তাই রিও ইজ ইর।
আর আপনি রিও হতে পারবেন না। কারন আপনার বাপ কমিশনার নয়, স্কুলের মাস্টার ছিল।
_হুম। তাই বলি আমি পারি না কেন? বলল, কমিশনার।
__________ আমাদের শুভ সন্ধ্যা জানিয়ে কমিশনার যখন চলে গেল তখন সাড়ে সাতটার মত বেজে গেছে।
রিও দরজা লক করে দিয়ে
জমিদার বাড়ি থেকে নিয়ে আসা বই খাতা গুলো বেডের উপর ছড়িয়ে বসল।
আমি কি করব কিছু বুঝতে পেলাম না।
তাই রিওকে বলে বাহিরে আসলাম।
আশ্রম রোড দিয়ে এগিয়ে কলেজের পাশে একটা বড় মাঠ দেখতে পেলাম।
দেখলাম সেখানে বেশ মেলার মত বসেছে।
ভিতরে ঢুকে জানতে পেলাম
এটা কুড়ির ঢোপ মাঠ বলে।
আর মেলা টা হল পাশের এক সরকারি স্কুলের বার্ষিক কি সব অনুষ্ঠান হচ্ছে। ভিতর দিয়ে
একটু এগিয়ে যেতেই
একটা রাস্তা পেলাম।
এ রাস্তা টা নাকি চিত্রা সেতুতে গেছে।
পূর্ব দিকে কিছুদুর এগিয়ে যেতেই দেখলাম বাম পাশে ভিক্টোরিয়া রেখে রাস্তা একটা সোজা দক্ষিন আর একটা উত্তরে ঢুকেছে।
পাশে বেশ কিছু মুদি এবং ফটোকপির দোকান আছে।
ভাগিনার জন্য একপ্যাকেট B&H নিয়ে টাকা দিতে যাব এমন সময় দেখলাম একটা হকার চিৎকার করে বলছেঃএই সন্ধ্যার খবর, সন্ধ্যার খবর।
টাকা দিয়ে কৌতুহল বশত কাছে গিয়ে দেখলাম এখানেও ইভিনিং নিউজ বের হয়।
তিনটা পেপার কিনে নিলাম।
কারন দেখলাম প্রতিটা পেপারেই ঘটা করে জমিদার বাড়ির খবর দিয়েছে।
এবং সেটা প্রথম পাতাতেই।
নিউজ পেপার হাতে নিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলাম ১০০ ফিট দুরেই নদী দেখা যাচ্ছে।
রিওর মুখেই অনেক শুনেছি
ভিক্টোরিয়া কলেজের পাশেই এস, এম, সুলতানের চিত্রা নদী।
কৌতুহল বশত এগিয়ে গিয়ে দেখি। আরে বাহ। বেশ সুন্দর করে ঘাট বাধানো।
একজনের কাছে জানতে পারলাম এটাকে নাকি বান্ধা ঘাট বলা হয়।
বেশ কিছু কপোত_কপোতিও বসে ছিল।
ভাবছিলাম যাব না।
বিদ্যুৎ আলোয় সব স্পস্ট দেখা যাচ্ছিল।
ফিরে যাব এমন সময়
একটা ছেলে, বয়স ১৮ হবে।
টিসার্ট আর ট্রাওজার পরা।
আমায় ডাক দিলঃএই ভাইয়া।
আমি ঘুরে তাকাতে বললঃ
হ্যাঁ আপনি।
সিড়ি দিয়ে নিচে নামা আমার পক্ষে সম্ভব না খোড়া পায়ের জন্য।
দেখলাম ছেলেটা আমার কাছে এগিয়ে এসে আমায় ধরে নিচে নামিয়ে নিয়ে গেল।
তারপর বললঃযদি মাইন্ড না করেন কিছু কথা বলি?
_হ্যাঁ। বলো।(আমি)
_আপনি কি এলাকায় নতুন?
_হুম। কেন?
_যদি কিছু মনে না করেন আপনার চশমার পাওয়ার কি
– ২.৫?
_হ্যাঁ।
_ তার মানে আমি আপনাকে চমকে দিতে পেরেছি?
_হুম। বাট কেন?
_আপনিই তো প্রফেসর ইফতি?
_হ্যাঁ। কি ভাবে বুঝলে.?
_ ভাইয়া আমি আপনার সব বই গূলো পড়েছি।
বলতে পারেন আপনার ডিটেকটিভ স্টোরি যদি না পড়তাম তাহলে আমি হয়ত এত বই পাগলা হতাম না।
তাছাড়া আপনার ভাগিনাতো জিনিয়াস।
_তুমিও কম নও।
_না। ঠিক সেটা নয়।
আপনি সকালে ফেসবুক পেইজএ লিখেছিলেন নড়াইল আসতেছেন।
তাই আপনাকে দেখে বুঝে গেলাম।
কারন আমি গত দুই বছর ধরে সন্ধ্যায় এখান বসে বসে আড্ডা দেই।
আপনার মত কেউ কে দেখিনি।
তাই রিওর শিষ্য হিসাবে
একটা চান্স নিয়ে নিলাম।
যদি লেগে যায়।
ফাইনালি লেগে গেল।
_নিশ্চয় জমিদার বাড়ির ব্যাপারে এসেছেন?
রিও স্যার কি আছেন উপরে নাকি ইনভেস্টিগেশন এ বের হয়েছেন?
_ও বাসায়। কিন্তু কি করে বুঝলে?
আপনার হাতের পেপার আর
আপনারা কি কাজে আসতে পারেন সেটা আমি ভাল করেই জানি।
_ওহ। গুড।
এমন সময় রিওর কল এল।
আমি রিসভ করতেই বললঃমামা কোথায়?
_বান্ধা ঘাট।(আমি)
_থাকো। আসছি।
_____ রিও আসছে শুনে ছেলেটা দেখলাম আনন্দে লাফিয়ে উঠল।
রিওর আসতে সময় লাগল ১০ মিনিট।
গাড়ি উপরে রেখে সোজা আমার কাছে এসে বললঃএখানেও দেখি বন্ধু জুটিয়ে নিয়েছ।
পারও বটে তুমি মামা।
_না। আমার বন্ধু নয়।
তোর ফ্যান;বললাম আমি।
তারপর ছেলেটার ইনভেস্টিগেশন এর কথা শুনিয়ে দিতেই রিও বললঃচালিয়ে যাও বৎস।
তুমি পারবে একদিন রিওকেও টক্কর দিতে।
ছেলেটা দেখলাম খুব আনন্দ পেল।
তারপর বলল স্যার আমি, অরন্য।
এই কলেজে ইন্টার ২য় বর্ষ।
এখানকার কাউসিল মেম্বার আমার বাবা।
যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলি?
_হ্যাঁ। বল, বলল রিও
_আসলে আপনার সহচার্য পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
তাই যদি এই কেসটা তে আপনি আমায় সাথে নিতেন
তাহলে চির কৃতজ্ঞ থাকতাম।
রিও খানিকটা চুপ থেকে বললঃ চল। এখন থেকেই লেগে পড়।
যদি ভাল কিছু দেখাতে পার তবে ৯৩/২ তে ওয়েল কাম।
ছেলেটার চোখে মুখে উত্তেজনার ছাপ স্পষ্ট।
গাড়িতে যেতে যেতে কি করতে হবে সেটা রিও, অরন্যকে বুঝিয়ে দিয়ে জমিদার বাড়ির পাশে নামিয়ে দিল।
আমরা সোজা জমিদার বাড়ি ঢুকলাম।
প্রথমে গেটে একজন দারোয়ান পেলাম।
রিও তার পরিচয় দিয়ে
সকল ঘটনা জেনে নিল।
কিন্তু নতুন কিছু পেলাম না।
ওসি যা বলেছিল সেটাই বললেন তিনি।
রিও বললঃ মালি দুই জন আর কাজের মহিলাকে কি ছেড়েছে?
_হ্যাঁ। আমরা সবাই থানায় জবান বন্ধি দিয়ে এসেছি।
_______ ভুতের ব্যাপারটা জিজ্ঞাসা করতেই ভদ্রলোক যেন চুপসে গেলেন।
বললেনঃকি বলব স্যার, সব অভিশাপ।
জমিদাররা বড় অত্যাচারী ছিল।
তার পূর্ব পুরুষের অভিশাপ পড়েছে বাড়িটার উপর।
না হলে বাঘে খায় মিসেস জোহানের মত ভাল মানুষকে?
_বাঘ?
_আপনি জানেন না স্যার গত কয়েক দিন আগেই তো আমরা ঐ গুদাম ঘরের পিছু থেকে বাঘের গর্জন শুনেছি।
_আমরা মানে?
_আমি প্রথম শুনি। তারপর মালিদের ডেকে নিয়ে আসি।
তিন জন মিলেও ডাক শুনেছি।
কিন্তু কাছে গিয়ে কিছুই পায়নি।
_কুকুর দেখেন নি? রিওর প্রশ্ন
_আগুনের কুত্তারে অহরহই দেখি স্যার।
_আর কিছু?
_মাঝে মাঝে মায়া কান্না শুনতে পাই।
একদিন গিয়েছিলাম। ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে সারা রাত পড়ে থাকি বাগানে।
_হুম। ভুত। (অনেটা তাচ্ছিল্য স্বরে বলল রিও)
_বিশ্বাস করেন স্যার সত্যি বলিছি।
_লেখা পড়া করেছ? রিওর প্রশ্ন
_কি যে কন স্যার।
লেখা পড়া করলে কি দারোয়ান হতাম?
পুলিশ হতাম পুলিশ।
আমার বাবাও পুলিশ ছিল।
গন্ডগোলের বছর তিনি আর ফিরে আসেন নি।
তাই আর লেখা পড়া হয়ে উঠে নি।
_থাক। আর বাঘ দেখলে আমাকে খবর দিও।
_জি স্যার।
_______ এবার আমরা সোজা বাড়িটার ভিতরে ঢুকে গেলাম।
আমাদের দেখে একজন ভদ্রমহিলা এগিয়ে এলেন।
বয়স চল্লিশের কাছা কাছি।
কালো ড্রেসিং গাউন পরা।
মুখে স্পস্ট শোকের মাতম।
বললেনঃকি চাই?
রিও তার পরিচয় দিয়ে বললঃআমি প্রাইভেট ডিটেকটিভ রিও। ভিকটিম আপনার কি হন?
_আমার আম্মা;বললেন মহিলা।
_আপনার আম্মাই আমাকে মরার আগে অ্যাপয়েন্ট করে গেছেন?
_হোয়াট?
_জি, উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই;ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে বলল, রিও।
ভদ্রমহিলা অবাক হয়ে গেলেন রিওর কথা শুনে।
কারন একজন মৃত মানুষ কিভাবে তার
নিজের খুনের গোয়েন্দা অ্যাপয়েন্ট করেন?
এবার রিও হেসে দিয়ে সব বুঝিয়ে বলল।
তারপর ভদ্রমহিলা আমাদের নিয়ে গেলেন বাড়ির ভিতরে।
বেশ বড় সড় একটা ওয়েটিং রুমে নিয়ে বসানো হল আমাদের।
অনেক পরি পাটি করে সাজানো ঘর টা।
অভিজাত্যের কোন কমতি নেই বাড়িতে।
সোফার উপর নকশা দেখে বোঝা যাচ্ছে এটাই স্পস্ট জমিদারিত্বর চাপ আছে।
বেশ কিছু বুদ্ধ মুর্তি আছে।
একটি একুরিয়াম আছে।
বেশ হলুদ কালারের মাছও আছে সেখানে।
এক পাশে বিকট আকৃতির একটা চেয়ার আছে।
হয়ত এটাই জমিদারের স্মৃতি।
সোফায় বসা একজন ভদ্রলোক।
বয়স আনুমানিক ৪০+ হবে।
সাদা সার্ট, প্যান্ট পরিহিত।
উচ্চতা আমার মত মানে ৫.৯”। গঠন বেশ গোল গাল।
তবে ভদ্রমহিলার মত
চোখে ওতটা শোক প্রকাশ পাচ্ছে না।
আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে মহিলা বললেনঃ ইনি আমার স্বামী মিস্টার জহির।
গভমেন্ট কলেজের ইতিহাস প্রভাষক।
রিও সালাম দিয়ে বললঃ আমি জানি।
আসলে মিসেস জোহান সবার কথাই আমাকে বলেছিলেন।
আপনার ভাইকে একটু ডাকবেন প্লিজ?
_________ ভদ্রমহিলা উঠে গেলেন।
জহির সাহেবের সাথে কথায় কথায় জানতে পারলাম।
তার স্ত্রীর নাম এলিনা।
একটু পরে একটা কাজের মহিলা কিছু চা, নাস্তা
নিয়ে আসল।
খেতে খেতে আমি বললামঃআসলে মিস্টার জহির, আপনার কি জানা আছে এই বাড়িতে নাকি ভুত দেখা যেত?
ভেবেছিলাম ভদ্রলোক হয়ত আমার কথা হেসে উড়িয়ে দিবেন।
কিন্তু না।
তিনি আমার কথা সিরিয়াস ভাবে নিলেন।
এবং বললেনঃআমি ভুত প্রেত বিশ্বাস করতাম না।
কিন্তু শ্বাশুড়িকে শেষ ছয় মাস
ভয় পেতে দেখে বিষয়টা আমার কাছে একটু আজব লাগে।
তাই আমি প্ল্যান করি এইবাড়িতে কিছু দিন কাটাবো।
তারপর দেখব কি হয়।
কিন্তু সত্যিই যে ভুত বলে কিছু
আছে সেটা বলব না।
তবে অতিপ্রাকৃতিক বলে কিছু
একটা আছে এই বাড়িতে।
_ মানে? বলল রিও
_আমি সেদিন রাতে খেয়ে অপেক্ষা করছি।
এমন সময় ডাকা ডাকির শব্দে
পেলায় ।
ভাল করে শুনতেই বুঝলাম দারোয়ান মালিকে ডাকছে এবং সেটা ভয়ার্ত ভাবে।
তাই উঠে বের হলাম।
গিয়ে শুনলাম দারোয়ান নাকি
গুদাম ঘরের পাশে
বাঘের গর্জন শুনতে পেয়েছে।
তাই আমিও এগিয়ে গেলাম।
বিশ্বাস করতে পারবেন না, মিস্টার রিও।
গুদাম ঘরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এ গর্জন আমরা শুনেছি।
কিন্তু ঘরে যেতে সব স্বাভাবিক।
সারা ফুল বাগান তন্ন তন্ন খোজার পরেও কিছু পায়নি।
এর পর অরো অনেক বার
নাকি দারোয়ান আর মালি মিলে এ শব্দ শুনেছে।
ইভেন আশে পাশের লোক গুলোও নাকি বাঘটাকে কয়েক বার দেখেছে বলে শোনা গেছে।
_অহ। তাহলেতো ঘটনাটা জটিল।
তা আপনার কি মনে হয়?
আপনার শ্বাশুড়িকে কি মানুষ মেরেছে না কি বাঘে মেরেছে?রিওর এমন প্রশ্নের জবাবে জহির বললেনঃসেটা আমি বলতে পারব না।
বাট পুলিশ আছে তদন্ত করলে সব বেরিয়ে যাবে।
আমি যা জানি সেটাই বললাম।
_______ এমন সময় একজন ভদ্রলোক ঘরে ঢুকলেন।
বয়স আন্দাজ ৪৩ এর কোঠায়।
বেশ শক্ত সামর্থ লোক।
দেখে বোঝা যাচ্ছিল ডিফেন্সে
কর্ম রত আছেন।
বুঝলাম এটাই মিসেস জোহানের একমাত্র জিবিত ছেলে।
তিনি প্রথমে সোফায় বসলেন তারপর রিওর দিকে এক দৃষ্টি তাকিয়ে থেকে বললেনঃহ্যাঁ মিস্টার রিও।
কিভাবে হেল্প করতে পারি?
_আসলে আপাতত আপনার নাম টা জানার ইচ্ছা ছিল।(রিও)
_আমি, আমিন জোহান।
_আপনি কি এখানে প্রায়ই আসেন?
_ দেখুন। ছুটি হয়ে ওঠে না।
আর হলেও স্ত্রী ছেলে_মেয়েকে সময় দিতে গিয়ে ওভাবে আর আসা হয় না।
_লাস্ট কত দিন আগে এসেছিলেন?
_এই ধরুন বছর দুই আগে।
যদিও এর আগে বছর একবার আসা হত।
কিন্তু এখন আর সময় হয়ে ওঠে না।
_হুম। কিন্তু আপনার আম্মাকে একা রেখে?
_আসলে তাকে অনেক বার আমার সাথে নিয়ে যেতে চেয়েছি।
কিন্তু তিনি রাজি হননি।
_ওকে। আপনি কি জানেন আপনাদের বাড়িতে ভুতের একটা আতংক ছিল।
_আসলে ভুতে বিশ্বাস আমার কোন কালেই নেই।
হ্যাঁ। অবশ্য আম্মার কাছে
শুনেছিলাম।
কিন্তু যা বিশ্বাস করিনা।
ওটা নিয়ে মাথা ব্যাথা ছিল না।
_আপনি আপনার পুর্ব পুরুষের ইতিহাস জানেন?
_বাবা মায়ের কাছে যেটা শুনেছি।
ওটার বাইরে আর কিছু জানি না।
_আপনি কি জানেন, আপনার পুর্ব পুরুষের লেখা কিছু ডাইরি থেকে জানা যায় আপনাদের
বাড়িতে গুপ্ত ধন লুকিয়ে রাখা আছে?
_বাবা_মা বলেছে।
কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনা।
কারন ডাইরিতে নাকি ওটার স্পস্ট কোন উল্লেখ করা হয়নি।
শুধু ধারনা করা হয়েছে।
_আপনি কি কখনো ডাইরিটা পড়েছেন?
_আসলে আমার ইচ্ছা জাগেনি।
কারন মায়ের সম্পদের লোভ আমার ছিল না।
কেননা যদিও আপনি আমার পুর্ব পুরুষের কথা বলেছেন তাই বলছি, ওটা আমার পুর্ব পুরুষ না।
আমার মায়ের পুর্ব পুরুষ।
আমার বাবা কর্নেল ছিলেন।
কোন ভাবে বাবা মায়ের পরিচয় হয়।
তারপর তাদের বিয়ে হয়।
আমার পৈত্রিক ভিটা সিলেটে।
তাই আমি সেখানেই থাকি।
_কিন্তু সে ডাইরিটা কোথায় আছে আপনি কি কিছু জানেন?
_আমি যত দুর জানি সেটা মায়ের কাছেই থাকত।
তবে …………………
_হ্যাঁ বলুন।
_গত দুই দিন আগে আম্মা আমাকে কল দিয়ে বলেছিলেন
আমি যেন একবার আসি।
_কারন কিছু কি উল্লেখ করেছিলেন?
_আমায় কয়েকটা জিনিস দিবে
বলেছলেন।
তবে যখন বললেন সেটা ডাইরি।
তখন আর ইচ্ছা জাগেনি।
কেননা এই সম্পদকে আমি ঘৃনা করি।
_কারনটা কি বলা যাবে?
_হ্যাঁ। এই সম্পদের জন্য আম্মা কোন দিন এই বাড়ি ছেড়ে যাননি।
তাই বাবার সাথে শেষ দিকে
তার সম্পর্ক ভাল যায় নি।
কেননা বাবা থাকতেন সিলেটে আর আম্মা এখানে।
_হুম। কি মনে হয়?
আপনার আম্মাকে কে খুন করতে পারে?
_আজব। আমি সেটা জানব কি করে?
_ধারনা দিতে পারেন তো?
_আসলে দেখুন। আমি এখানে থাকতাম না।
মায়ের সম্পর্ক কার সাথে ভাল ছিল।
আর কার সাথে মন্দ ছিল
সে কথা আমি জানি না।
_আপনাদের বাড়িতে চাকর বাকর কয় জন?
_চার জন।
_তার কত দিন ধরে আছে এখানে?
_আমি যত দুর জানি, দারোয়ান আছেন বছর পচিশের মত।
মালি দুই জন আর রান্নার মহিলা আছে বেশ ১০ বছরের মত।
_ধন্যবাদ আপনাকে বিরক্ত করলাম।
_না। ঠিক আছে।
_______ এবার আমার দিকে তাকিয়ে রিও বললঃচল প্রফেসর। আমাদের যেতে হবে।
আমি উঠে পড়লাম।
বের হয়ে দেখলাম মালিদুই জন আর কাজের মহিলাটার
কথা বলল রিও।
এর পর গাড়ি নিয়ে বের হয়ে
একটা বাজার গোছের জায়গায়
থামলাম আমরা।
এমন সময় দেখলাম শিস দিতে দিতে
অরন্য এগিয়ে এল।
রিও বললঃকি খবর?
_একদম খাসা ভুতের গল্প শুনেছি স্যার ;বলল অরন্য।
_কেমন ভুত?
_বাঘিনি ভুত স্যার।
_এর মাঝেই রটে গেল?
_না, স্যার। বেশ ছয়মাস হল।
তবে কেউ নিজের চোখে বাঘ দেখেছে বলে মনে হল না।
তবে ডাক শুনেছে এমন
অনেকেই আছে স্যার।
_দারুন। আর কিছু পেলে?
_হ্যাঁ স্যার।
_কি পেলে বল?
_অভিশাপের কথা শুনেছি।
_what?
_yeah sir, কাহিনী হল এই ভিকটিমের বাবাকে নিয়ে ।
_কেমন কাহিনী?
_ভিকটিমের বাবা আর এক চাচা ছিলেন।
দুই ভায়ের মাঝে সম্পর্ক নাকি তেমন ভাল ছিল না।
কারন ছোট ভাইছিল একটু নরম স্বভাবের।
তাই সবার সাথে মিশত।
রাস্তার মজুরেরাও নাকি তার বন্ধু ছিল।
কিন্তু বড় ভাই পুরোই উল্টা ছিল।
দুই ভায়ের বনাবনি হত না।
ছোট ভাই একদিন নাকি বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
যদিও অনেকেই বলে ছোট ভাইকে খুন করা হয়েছিল।
কিন্তু খুনের কোন ভিত্তি নেই।
সেই থেকে নাকি এই বাড়ির উপর অভিশাপ আছে।
কেউ বলে বড় ভাই ছোট ভাইকে খুন করেছে।
আবার কেউ বলে ছোট ভাইকে মারার ভয় দেখিয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।
তবে আবার কেউ কেউ বলেছে, ছোট ভাইকে নাকি
কয়েক বার বরিশাল এ দেখা গেছে প্রায় দশ বছর পর।
তবে এ কথা সত্যি যে, ছোট ভাই কোন দিন ফিরে আসেনি এই বাড়িতে।
সবই ভিত্তি হীন ধারনা স্যার।
_গুড। অরন্য।
carry on. তুমি একদিন সফল গোয়েন্দা হতে পারবে।
চল। এবার বাসায় যাওয়া যাক।
বাসায় ফিরে শুয়ে পড়তে হল।
কারন খোঁড়া পা নিয়ে আজ
অনেক বেশি পরিশ্রম করা হয়ে গেছে।
ব্যাথায় পা টন টন করছিল।
রিও এসে বললঃইমন কে বেশি দরকার ছিল মামা এখানে।
_কেন অরন্যকে দিয়ে তো ভালই হল কাজ।(আমি)
_ভালই হয়েছে বাট ভাল নয়।
ভালই আর ভাল দুটা আলাদা জিনিস।
তারপর দেখলাম ভাগিনা আমার আনা পেপার গুলো বেশ মনযোগ দিয়ে পড়ে
ছুড়ে ফেলে দিয়ে বললঃযতসব আজাইরা সাংবাদিক।
_কি হল ভাগিনা?
_দেখেছো। ক্রাইম রিপোর্ট করেছে নাকি ভুতের কাহিনী
লিখেছে?
যতসব ফালতু।
এই বিজ্ঞানের যুগে ভুতে খুন করেছে।
আর অভিশাপ।
আরে আল্লাহ। অভিশাপ থাকতে পারে।
আর তার জন্য মানুষ খুন হতে পারে সেটা অস্বাভাবিক নয়।
তাই বলে খুনি তো খুনি।
তাকে ধরতে হবে।
কিন্তু তাই বলে খুনের সমাধান না করে অভিশাপের ইতিহাস
উদ্ধার করে কি লাভ পাচ্ছে এরা।
_ছেড়ে দাও ভাগিনা গ্রামের মানুষ।
কত কিছুইতো এরা বিশ্বাস করে।
দেখলে না bcs পাওয়া প্রভাষক সাহেবও নাকি বাঘের গর্জন শুনেছেন।
______ রেগে মেগে আগুন হয়ে রিও চিতকার করে বলে উঠলঃসেটা আর পারছি কোথায় মামা?
যখন, যখন দেখছি আমার জন্ম ভুমিতে একটা খুন হয়েছে।
আর সেটা নিয়ে সবাই উপহাস করছে।
ভুত ভুত করে বিনেদন নিচ্ছে।
ইভেন ভিকটিমের বাড়ির একটা লোকও সত্য কথা বলছে না।
বাড়ির চাকর বাকর থেকে শুরু
করে ভিকটিমের ছেলে মেয়ে পর্যন্ত সবাই ডাহা মিথ্যা কথা বলে চলেছে।
তখন কাকে ছেড়ে দেব প্রফেসর।
কাকে ছেড়ে দেব।
_মিথ্যা কথা বলছে সবাই মানে কি?
_আরে খুন হয়ে ১১ টাও ওরা বলে ২টাই।
চাকর বলে বাঘ দেখা গেছে
ফুল বাগানের পাশে।
জহির বলে গুদাম ঘরে।
কে সত্য বলছে আর কে মিথ্যা বলছে সেটা বুঝিনা।
_তাহলে কেসটা ছেড়ে দেও।
_আমি জীবনে এত বড় বড় রহস্যর সমাধান করলাম।
আর আজ নিজের জেলায় এসে হাল ছেড়ে দেব?
আমি হাল ছেড়ে দেওয়ার মত মানুষ নই।
একবার যখন এসেছি তখন ভুতের গুস্টির পিন্ডি না দিয়ে যাচ্ছি না।
_______ এমন সময় একটা গ্লাস ভাংগার শব্দ হল।
সাথে সাথে আমার ক্রেসটাতে আওয়াজ হয়ে ফ্লোরে পড়ে গেল।।
রিও আমাকে ধাক্কা দিয়ে বেড থেকে নিচে ফেলে দিয়ে নিজে সটাং ফ্লোরে শুয়ে পড়ে বললঃ বুলেট।বেডের নিচ চলে যাও প্রফেসর। আমি না বলা পর্যন্ত বের হবে না।
আর তোমার পকেটে দেখ
মোবাইল আছে।
বাবা কে কল দিয়ে বল আমাদের উপর আক্রমন হয়েছে।
রিও এবার নিজের কোর্টের পকেট থেকে বন্দুক বের করে
আমাদের রুমের বাল্বে গুলি করে সারা ঘর অন্ধ কার করে দিল।
আমি পকেট থেকে মোবাইল বের করে কল করতে গিয়ে দেখি আমার সামনে পড়ে রয়েছে
একটি বুলেট।
ভয়ে গা শিউরে উঠলঃকারন,আর একটু হলে ভাগিনার লাশ নিয়ে আজ আমার ফিরতে হত।
সাঙ্গ হত রিও, দ্যা প্রাইভেট ডিটেকটিভের লাইফ স্টোরি।
কি ভয়ে ছিলাম যে, ১৫ মিনিট সেটা বলে বুঝানোর মত নয়।
পুলিশের গাড়ির হর্ন শুনে বুঝলাম পুলিশ এসে গেছে।
এবার রিও বললঃমোবাইলের টর্চ জ্বেলে বের হয়ে এস প্রফেসর।
টর্চ জেলে দেখলাম ভাগিনা বেডের উপর বসে আছে।
আমায় দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে দিয়ে বললঃ ভয়ে দেখি আধা মরা হয়ে গেছ প্রফেসর।
_ভয় পাব না? কি সাংঘাতিক রে বাবা।
বুলেট যদি গায়ে লাগত তাহলে সোজা উপরে চলে যেতে হত।
আর তুই হাসছিস্?
_মরতে একদিন হবে মামা।
কিছু দিন আগে আর কিছু দিন পরে এই আরকি।
_তাই বলে গুলি খেয়ে?
_সেটা যে ভাবেই হোক।
যে ভাবে মৃত্যু লেখা আছে সেভাবে মরতে হবে।
_চল। ঢাকা ফিরে যাই।
মামলা চুলায় যাক।
_কি যে বল মামা? খুনের সমাধান প্রায় করেই ফেলেছি।
এখন পালিয়ে যাব?
_মানে?
_মানে হল আমি যে খুনি পর্যন্ত পৌঁছে গেছি সেটা খুনি জেনে গেছে।
তাই আমাকে সরানোর পায়তারা শুরু করেছে।
_একটা কাজ কর তাহলে।
_কি প্রফেসর?
_সুমন কে ডাক এখানে। তোর বের হওয়া মটেও বিপদ মুক্ত নয়।
_কিন্তু সুমনতো এখন সিলেটে।
_সিলেট কেন?
_আহারে তুমি কি ভাবছ?
আমি কেসটা নিয়ে একদম বসে আছি?
_তাহলে?
_সুমন সকালের ফ্লাইটে সিলেট গেছে।
ওখানে মিসেস জোহানের ছেলে আমিন জোহান সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে
এত সময় যশোর চলে এসেছে।
_মানে?
_হ্যাঁ মামা, আমি একা কাজ করতে গেলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। তাই সুমনকে লাগিয়ে দিয়েছি।
_তুই তে মিসেস জোহানের ছেলে আমিন জোহানের কাছে তার নাম জানতে চেয়েছিলে?
তাহলে, সুমন কিভাবে আমিন জোহানের পরিচয় পেল?
_মামা। তুমি ভুলে যাচ্ছ এটা একটা রয়েল ফ্যামিলি।
এর পরিচয় জানার জন্য গুগোল করাই যথেষ্ট।
_তাহলে নাম জানতে চেয়েছিলি কেন?
_আমি চাই আমি সব সময় সন্দেহের বাহিরে থাকি।
তাই এই মিথ্যা টুকু বলতে হয়েছিল।
_________ এমন সময় দরজায় নক পড়ল।
স্পস্ট কমিশনারের গলার আওয়াজ পেলাম।
দরজা খুলতেই তিনি বললেনঃ তোমরা ঠিক আছতো?
_হ্যা বাবা; বলল রিও।
_চল। আর এক মুহুর্ত এখানে থাকার দরকার নেই। সার্কিট হাউজে থাকার ব্যাবস্থা হয়েছে।
________ আমরা আমাদের মাল পত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
বুঝলাম কমিশনার খুব চিন্তিত।
হবেনই বা না কেন?
নিজের ছেলের এমন বিপদ কোন বাবা মেনে নিতে পারে।
_______ সারা রাত দেখলাম রিও একবারের জন্য বেডে যায় নি।
চেয়ারের উপর বসে খাতায় কি সব লিখছে আর কাটা কাটি করছে।
কখনো হেটে, কখনো বসে শুধু ভাবছে আর ভাবছে।
আর আমার আনা B&H এর বারটা বাজাচ্ছে।
রাত তিনটা নাগাদ একটা কল আসল রিওর ফোনে।
ফোন রিসিভ করতেই বুঝলাম এটা সুমনের ফোন ছিল।
_হ্যাঁ। সুমন? (কানে ফোন দিয়ে বলল রিও)
_………..
_ওকে। দাঁড়াও লোক পাঠাচ্ছি।
এর পর রিও ল্যান্ড ফোনে
গেট রক্ষির সাথে কথা বলল।
একটু বাদেই সুমনকে আমাদের রুমে দিয়ে এল একজন পুলিশ।
রিও বললঃবললাম যে, এত রাতে না এসে যশোর থেকে সকালে আসতে পারতে।
_কি যে বলেন স্যার। আপনার উপর এটাক হয়েছে সেটা জেনে আর থাকতে পারলাম না;বলল সুমন।
_তা, কি খবর আছে বল?
_স্যার।
আমিন জোহানের ব্যাপারে তেমন কিছু নেই। তবে তিনি এক মাস ছুটি নিয়েছেন গত পনের দিন আগে।
এলাকায় নাকি বেশ প্রভাব আছে লোকটার।
পাখি শিকারের বাতিক আছে।
_আর কিছু
_স্যার। আমিন জোহান সম্পর্কে আপনি যা বলেছিলেন ওটাই।
কিন্তু খবর আছে জহির সম্পর্কে।
_কেমন খবর?
_উনি না কি এলাকায় পাগলাটে ছিলেন।
_কেমন?
_ইতিহাস পড়েছেন এম এম কলেজে।
তখন থেকে নাকি প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে গবেষনা শুরু করেন।
তাই যেখানে সেখান মাটি খোড়া খুড়ি করতেন।
একারনে অনেকেই তাকে হাফ ম্যাড বলে ডাকত।
_এতে অস্বাভাবিক কি আছে?
_অস্বাভাবিক নয়? এই পাগল কি করে বি সি এস পেয়ে
প্রভাষক হতে পারে?
_______ আমি বললামঃজহিরের বাসা কোথায়?
_যশোর। মামা , বলল রিও
_জানলে কি করে?
_গোয়েন্দা হতে হলে গন্ধ শুকে
মানুষের পরিচয় বের করতে হয়।
যদি ভুলে না যাও, তাহলে মনে করে দেখ।
খুন হওয়ার দুই দিন আগে মিসেস জোহান আমার কাছে গিয়ে ছিলেন।
তখন তিমি বলেছিলেন তার মেয়ে জামাই ইতিহাসের প্রভাষক।
তাই ঢাকা থেকেই তার সম্পর্কে খবর নিয়ে ছিলাম।
কারন মহিলা চলে আসার পর দুই দিন ছিল আমার হাতে।
_কিন্তু একটা ডিপার্টমেন্ট এ কি একজন প্রভাষক থাকে?
_সেটা থাকেনা। তবে রয়েল ফ্যামিলির জামাতা একজন ছিল।
_হুম। বুঝলাম
_কিন্তু খবর নেওয়ার কারন?
_যেহেতু আমি আসব বলে কথা দিয়েছিলাম মিসেস জোহানকে।
তাই তার ফ্যামিলিচিত্র একটু ঘেটে দেখছিলাম।
তা ছাড়া তুমি মনে হয় জান না।
বাংলার প্রতিটা জমিদার বাড়ির ইতিহাস লেখা বই তুমি পাবে নিল ক্ষেত এর লাইব্রেরী গুলোতে।
বিশ্বাস না হলে দেখ, আমার ব্যাগের মধ্যে নড়াইলের জমিদার বাড়ির ইতিহাস নিয়ে
লেখা দুটা বই আছে।
_তারমানে খুনের আগেই ভুতের তদন্ত শুরু করে দিয়েছিলি?
_জি, মামা।
আমাকে কি মনে হয় তোমার।
_যাক এসব। ঘুম পাচ্ছে। আমি গেলাম।
♪
রিওর ডাকে ঘুম থেকে উঠে দেখি আটটা বেজে গেছে।
ভাগিনার চোখ লাল দেখে বুঝলার সে রাতে ঘুমোয়নি।
বললামঃএত সকালে ডাকলি কেন?
রিও তামাশা করে বললঃগুপ্ত ধনে ভয় থাকে জানো মামা?
_এগুলো আবার কোথায় শুনলি?
_শুনি নাই। পড়েছি।
_কোন বইয়ে?
_বইয়ে নয়, জমিদারদের ডাইরিতে।
তবে কি জানো মামা। এই একটি কথায় সারা রাত ভাবছিলাম।
গুপ্ত ধনে ভয় আছে। কেন এই কথা টা প্রতিটা জমিদারের ডাইরিতে লেখা?
_কি পেলি?
_কি পেলাম আর? মিস্টার জোহানের ডাইরি পেলে সব পেয়ে যেতাম।
কিন্তু জোহানের ডাইরি পেলাম না।
_কেন? সব ডাইরিই তো আমরা নিয়ে এসেছিলাম।
নেই সেগুলোর মাঝে?
_না, প্রফেসর।
_তাহলে মিস্টার জোহান হয়ত ডাইরি লিখত না।
_কি ভাবে সিওর হলে?প্রফেসর।
_তিনি যে, ডাইরি লিখতেন সেটা তুই কি করে শিওর? ভাগিনা।
_কারন, মিসেস জোহান তার নিজের ডাইরিতে মিস্টার জোহানের ডাইরির কথা
অনেক বার উল্লেখ করেছে।
_হুম। তাহলে সেটা গেল কোথায়?
_সেটা আমি কি করে জানব মামা?
_একটা চিন্তা মাথায় এসেছে।
বলল?
_হুম বল।
_তাহলে খুনি কি সেদিন ডাইরি নিতে এসেছিল?
_সেটা ভাবার কারন?
_আহারে। তুমি না সেদিন বলেছিলে খুনি ঠিক খুন করার উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিল না।
_হা হা হা, প্রফেসর। বলতেই হবে। ইদানীংকাল তোমার মাথাও খুব ভাল কাজ করছে।
কিন্তু একটু দেরিতে।
ওকে, চালিয়ে যাও। তুমিও রিও হতে পারবে আগামি দেড়শ বছরের মাঝে।
_হা হা হা। তত দিন আমি মরে ভুত।
_তাহলে আর কি করা? আমি যেটা রাতে ভেবেছি সেটা তুমি এখন ভাবছ প্রফেসর।
চল বের হতে হবে।
এতক্ষন হয়ত সবাই পোছে গেছে।
_মানে?
কারা পৌঁছাল?
_গেলেই দেখতে পাবে।
অভিযান গুপ্ত ধন উদ্ধার।
_মানে। গুপ্ত ধনের হদিশ পেয়ে গেছিস?
_পেয়েগেছি বললে ভুল হবে।
তবে হোপ দ্যাট পেয়ে যাব।
_চল তাহলে। আর তর সইছে না।
এই প্রথম বার সুমন, রিওর কোন কাজ সরাসরি দেখার সুযোগ পেল।
তাই তার এক্সসাইটমেন্ট এর লেবেলটা দেখার মত ছিল।
বাহিরে নাস্তা করে যখন
জমিদার পাড়ির গেটে পৌঁছালাম।
তখন প্রায় দশটা বেজে গেছে।
দেখলাম কয়েক গাড়ি পুলিশ আর কিছু সাংবাদিকও এসেছে।
রিও কে দেখে কমিশনার আর ওসি সাহেব এগিয়ে আসলেন।
রিওকে ওসি সাহেব বললঃস্যার।
পুরো প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি।
_কিন্তু সাংবাদিক কেন? রিওর প্রশ্ন,। ওদের কি বলা হয়েছে কিছু?
_জি না, স্যার।
আসলে খুনের পর থেকেই পুলিশের গাড়ি এদিকে দেখলেই
সাংবাদিকরা আঠার মত পিছু লেগে থাকে।
_ রিও সম্পর্কে কেউ কিছু জানে?
_কি যে বলেন না, স্যার।
আপনাকে কেউ চিনে না নাম ছাড়া।
আর তাই সকালেই বলে দেওয়া হয়েছে আপনাকে ফ্লাইটে গত রাতেই ঢাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
_গুড জব। তাহলে এখন আপনার কাজ হলো সাংবাদিকদের অন্য দিকে নিয়ে যাওয়া।
_______ ওসি সাহেব চলে গেলন।
রিও তার বাবার দিকে তাকিয়ে বললঃকমিশনার, আপানার স্পেশাল গয়েন্দা অফিসার সাফিনের কি খবর?
_আরে বইলোনা। ও নাকি ভুতের কি সব প্রমান পেয়েছে বাড়িতে।
তবে কেস সলভ।
_তাই নাকি?
_কেন বিশ্বাস হয় না?
_না হওয়ার কি আছে?
_তুমিতো হেরে গেলে, রিও বাবা।
_তাই? আপনার সাফিন গোয়েন্দা কি এখানে আছেন?
_হুম।
_ডাকা যাবে তাকে?
_____ রিওর বাবা চলে যাবার দশ মিনিট পর সাফিন এল।
তত সময় রিও দেখলাম দারয়ানের সাথে কথা বলছিল।
আমি পাশে গিয়ে একটা চেয়ারে বসে ছিলাম।
কারন খোঁড়া পা নিয়ে বেশি দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব আমার জন্য।
তবে রিও কেন যেন বার বার
দারোয়ানের উপর চটে যাচ্ছিল।
যদিও আমি জানি ভাগিনার রাগ একটু বেশি হলেও সেটা সব সময় সে কন্টোল করে।
কিন্তু দারোয়ান এমন কি করল যে, রিও তার উপর চটে গেল?
সাফিন আসতেই রিও সাফিন কে নিয়ে আমার পাশে এসে বসল।
তারপর রিও বললঃকি খবর সাফিন সাহেব?
_আমার কাজ শেষ ;বলল সাফিন। আপনার কত দুর?
শুনেছি আপনি নাকি দেশের এক নাম্বার কনসাল্টিং ডিটেকটিভ।
কিন্তু কি যে, করলেন?
বুঝলাম না।
_কেন। আপনি মনে হয় খুনি ধরে ফেলেছেন?
_জি হ্যাঁ।
_কে করল খুন?
_সেটা যখন গ্রেফতার করব তখন দেখবেন। মিস্টার, রিও, দ্যা প্রাইভেট ডিটেকটিভ।
_হা হা হা। ইনসাল্ট করে লাভ নেই।
আমার রক্ত টিকটিকির থেকেও ঠান্ডা।
তবে শুনলাম নাকি ভুতের সন্ধান পেয়েছেন?
_হ্যা। মিস্টার, রিও, ভুতের কথা ঠিক বলব না।
তবে গুদাম ঘরে কোন একটা ঘাপলা আছে।
সেটাআমি নিশ্চিত।
কারন এ পর্যন্ত যত লোক ভয় পেয়েছে সব এই গুদাম ঘরের আশে পাশে।
_হুম। গুড।
__________ এমন সময় দেখলাম ওসি সাহের দুজন লোককে হাতে কড়া পরিয়ে বের হলেন।
আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে এলঃ একি কাজের মহিলা আর তার স্বামী?
রিও মুখ ঘুরিয়ে বিষয়টা দেখল।
তারপর জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দিয়ে সাফিনের দিকে তাকাতেই
সাফিন বললঃ এরাই হল আসল পাপি।
আসি, রিও সাহেব। আমার কাজ শেষ।
রিও এবার হো হো করে হেসে দিল। তারপর বললঃগাজার নৌকা, পাহাড়তলী যায়।
ও মীরাবাঈ। হা হা হা…….
ভাগিনার এসব কথার কোন অর্থ খুজে পাইনা।
এমন সময় সাফিন বলে উঠলঃমিস্টার,রিও।
এখানে গাজার কি হল?
_হা হা হা। গাজা খেলে মানুষ ভুল বকে কি না?
_মানে?
_আপনার কাজ তো শেষ। দাড়িয়ে আছেন কেন?
_আপনার কাজ দেখব বলে?
_ওহ। বাট সাফিন সাহেব, রিও কিন্তু এখানে খুনি ধরতে আসেনি।
_কি জন্য এসেছে তাহলে।
_নিতান্তই মিসেস জোহান আমার ৯৩/২ তে গিয়েছিলেন
আমাকে ভুত দেখাবেন বলে।
তাই এসেছি মৃত মানুষের শেষ ইচ্ছা
পুরণ করতে।
_খুনি না ধরতে পারলে অনেকেই অনেক কিছু বলে নিজের ব্যর্থতা ঢাকার প্রচেষ্টা করে, মিস্টার রিও।
_হুম। বাট অনেকেই আছে নিজের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য
একজনের দোষ অন্য জনের
ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিজে সটকে পড়ে।
_আপনি মনে হয় জানেন না যে, ভিকটিমের হাতে, পায়ে, গায়ে কাজের মহিলা কমলা বানুর হাতের ছাপ পাওয়া গেছে।
আর তার স্বামীর হাতের ছাপ
ঘরে বেশ কয়েক জায়গায় পাওয়া গেছে।
_তাতে কি প্রমান হয় তারা খুন করেছে?
_হ্যাঁ। হয়।
_আপনি বাংলাদেশের বাঘা উকিলদের চিনেন না।
আপনার এই প্রমান তারা প্রথম তোপে স্বর্গে পাঠিয়ে দিবে।
_কি ভাবে?
_আপনি কি জানেন ভিকটিম ভদ্র মহিলার পুর্ব পুরুষ জমিদার ছিল?
_এটা কেমন প্রশ্ন? সেটা সবাই জানে।
_তাহলে এটাও জানেন নিশ্চয়, ভিকটিমের বাত রোগ ছিল।
_না।
_ তাহলে আর কি বলব?
_কমলা বানু প্রতিরাতেই মিসেস জোহানের হাত পা টিপে দিতেন। সেটা কমলা বানু প্রথম দিনেই আমায় বলেছে।
_বুঝলাম। কিন্তু তার স্বামী?
_আপনার তো বাংলা মুভির স্ক্রিপ্ট রাইটার হওয়ার কথা ছিল।
কেন যে গোয়েন্দা হতে গেলেন?
_আপনি কিন্তু আমায় অপমান করছেন।
_এখানে অল্প মানুষ আছে।
কোর্টে শত মানুষের মাঝে হওয়ার
এখানে অল্প কয়েক জনের মাঝে
হওয়া কি শ্রেয় নয়?
_মানে?
_আপনার বাড়ির আসবাব পত্র
পরিস্কার করার সময়
আপনার চাকরের হাতের ছাপ
ছাড়া কি আপনি ফেলুদার
হাতের ছাপ আশা করেন?
_হুম। বুঝেছি।
কিন্তু খুন করল কে?
_সেটা আমি কি করে বলব? আমিতো এসেছি ভুত দেখতে ভুত।হা হা হা…..
______ এবার দ্রুত সাফিন প্রস্থান করল।তারপর দেখলাম
কমলার আর তার স্বামীর হাত কড়া খুলে দিলো।
এদৃশ্য দেখে আমার সাথে সুমনও হো হো করে হেসে দিল।
এবার আমরা তিন জন মিলে গুদাম ঘরের পাশে গেলাম।
চার পাশে ফুলের বাগান ঘেরা
ঘরটা।
যা লম্বায় প্রায় তিনশো ফুটের মত হবে।
আর প্রস্থ তার অর্ধেক।
উচচতা প্রায় ত্রিশ।
পাথরের দেওয়াল।
উপরেও পাথরের ছাদ।
আধা ঘন্টা ধরে রিওকে দেখলাম
টেপ দিয়ে এদিক ওদিক মেপে দেখে বললঃ জানো মামা।
টাকার জন্য যত গুলো খুন হয়েছ এ সমাজে।
তার থেকে বেশি খুন হয়েছে
না দেখা গুপ্ত ধনের আশায়।
আসলে কেউ সিওর ছিল না গুপ্ত ধন আছে কিনা।
তারপরও খুন হতে হয়েছে অনেককেই।
_এ কথা বলছিস কেন? বললাম আমি।
_যাই হোক প্রফেসর।
ওসি সাহেব আর সাফিনকে আসতে বল।
_____ আমার আর যাওয়া লাগল না।
ঠিক তখনি কমিশনারকে সাথে নিয়ে সাফিন আর ওসি সাহেবসহ কয়েক জন পুলিশ হাজির হল।
_এটা কোন কিছু হল? বলল কমিশনার। তুমি নিজেও খুনি ধরছ না। আবার
আমার সদস্যরা কাওকে আটক
করলে তাতে বিগড়ে দিচ্ছ?
_আমি কিন্তু বিগড়ে দেইনি।
জাস্ট কোর্টে উকিল বাবুরা যে লজিক দেখাবেন সেটাই বলেছি।
তাতে যদি সাফিন সাহেব তার
কাজের হাল ছেড়ে দেন। তাহলে আমার কি করার আছে?বলল রিও।
_এখন কি করবে?
_ভুত ধরছি বাবা।
_মানে। আর ইউ গন টু ম্যাড?
_সেটা হতে পারলে কবেই হয়ে যেতাম।
কিন্তু পারছি কোথায়?
যাই হোক বাড়ির চাকর চাকর আর ভিকটিমের মেয়ে_জামাই এবং ছেলেকে এখানে ডাকুন।
_ওদের দিয়ে কি করবেন? বলল সাফিন।
_ভুতের নৃত্য দেখাবো। ,,, একটু খেপেই বলল রিও। যেটা বলছি সেটা করুন।
_______ পাঁচ মিনিটে সবাই এসে হাজির।
রিও সবাইকে লক্ষ্য করে বললঃআপনারা সবাই কোন না কোন ভাবে এই বাড়ির সাথে জড়িত।
কিন্তু এই বাড়ির সম্মান আজ রাস্তায় নেমে এসেছে।
কিন্তু কেন জানেন?
_কি কারনে,? বললেন আমিন জোহান।
_কারন আপনারা হয়ত শুনে থাকবেন গুপ্ত ধনে ভয় থাকে?
_-______সবাই সবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল।
কারো মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।
নিরবতা ভেংগে জহির সাহেব বললঃ হ্যা। জানি।
_বাড়ির ইতিহাস সবাই হয়ত কম বেশি জানেন।
কিন্তু ছাগলের ইতিহাস কেউ জানেন?
বুড়ো দারোয়ান বললঃ ছাগলের ইতিহাস আমি জানি।
_কি জানেন? বলেন।
_আমি যতদুর আমার দাদার মুখে শুনেছি।
তাতে এটা বলা যায়, পুর্ব জমিদারেরা ছাগ দুগ্ধ খেতে
পছন্দ করতেন।
তাই এই বাড়ির গোদাম গরের পিছুটাতে
একটা ছাগল রাখার ঘরও নাকি ছিল।
_হুম।দারুন, বলে যান। শুনতে বেশ ভালই লাগছে; বলল রিও।
_______ আমার মাথা এবার গরম হয়ে আসছে।
আরে বাপ এসেছি খুনের সমাধান করতে।
সেখানে কি সব আজাইরা ছাগলের গল্প শুরু করেছে।
দারোয়ান বলেই চলছেঃ আমি যত দুর জানি কি একটা অসুখে
সব ছাগল এক রাতেই মারা যায়।
তারপর সব গুলো ছাগল নাকি
ছাগল রাখা ঘরেই পুতে ফেলা হয়।
এর পর থেকে নাকি জমিদার আর কখনো ছাগ দুগ্ধ পান করেন নি।
আমার দাদার বাপ জমিদারের নায়েব ছিল।
তাই দাদা নাকি এ কথা তার বাপের মুখে শুনেছে।
_বেশ। মজা পেলাম;বলল রিও। ছাগল পুতে রাখা যায়গাটা কি জমিদারেরা সংরক্ষন করে ছিল।
এমন কিছু কি জানেন?
_না। তবে আমি যখন প্রথম চাকুরি নেই তখন দেখেছি এই গুদাম ঘরের পিছে একটা বড় ছাগলের মুর্তিছিল।
আবশ্য ১২/১৫ বছর আগে সেটা ভেংগে সেখানে ফুলের চাষ করা হয়েছে।
তবে আমি ঠিক জানি না ছাগল গুলো ঠিক কোথা পুতে রাখা হয়েছিল।
_ মুর্তিটা ঠিক কোথায় রাখা হয়েছিল সেটা নিশ্চয় মনে আছে আপনার?
_হ্যা স্যার।
সেটা আছে।
_চলুন সেটাই দেখিয়ে দিবেন।
_জি স্যার।
বুক জোড়া রুদ্ধস্বাস।
আমরা যেন হিপটোনাইজ হয়ে গেছি।
কেউ মুখদিয়ে কিছু বলছি না।
শুধু দেখে চলেছি কি হচ্ছে আর
কি হতে যাচ্ছে।
একটু এগিয়ে গিয়ে দারোয়ান একটা গোলাপ ফুলের গাছ দেখিয়ে বললঃসম্ভাবত এখানেই একটা ছাগলের আর
তার পাশে একটা বাঘের মুর্তি ছিল।
রিও বললঃআপনি নিশ্চিত তো?
_জি স্যার।
রিও দেখলাম এবার হো হো করে হেসে দিয়ে বললঃওসি সাহেব, এবার জায়গা খুড়ে দেখুন। গুপ্ত ধনে কি ভয় আছে?
ওসি সাহেব এর অর্ডারে কয়েক জন এসে জায়গাটা খোড়া শুরু করে দিল।
বেশ ঘন্টা খানেক মাটি খোড়ার পর কিছুই পাওয়া গেল না।
এবার দেখলাম সাফিনের মুখে হাসি ফুটেছে।
সাফিন বললঃগাজার নৌকা পাহাড় তলি না গিয়ে
দেখি জমিদার বাড়ি এসে গেছে,মিস্টার রিও।
অবশ্য কথাটা সাফিন শেষ করতে পারল না।
তার মাঝে কোদাল মাটিতে
চাপ দেওয়ার সাথে সাথে
টুং করে একটা শব্দ হল।
_একটু আস্তে কুড়ো;বলল রিও।কোদাল ভেংগে যাবে তো।
সাবধানে কাজ শেষ কর।
এবার সাফিনের মুখ মলিন হয়ে গেল।
আধা ঘন্টা খোড়ার পর বেরিয়ে আসল তিনটা
বক্স।
পুরু লোহা।
পারদ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া।
ততক্ষনে সাংবাদিক সাহেবেরাও চলে এসেছে।
পাঁচ মিনিটের মাঝে জমিদার বাড়ির পাশে ভিড় জমে গেলে।
রিও আমায় বললঃ চল। প্রফেসর। আমাদের কাজ শেষ।
এখন সরকারি জিনিস
সরকারি কামলারা সামলাক।
আমি কিছু বলার আগেই দেখলাম সাফিন বলে উঠলঃআসলে রিও স্যার।
বলতে কোন বাধা নেই।
আপনাকে প্রথমে আমার
মোটেও ভাল লাগেনি।
কিন্তু সত্য বলতে কি স্যার, আপনি গ্রেট।
_ওকে। ব্যাপার না; বলল, রিও।
এগুলো মনে রেখে কোন
লাভ নেই। ভুলে যান।
_স্যার। যদি খুনিকে………!
_ধরে দিতেই হবে তাইতো?
_জি, স্যার। বড্ড গোল মেলে।
খুনের কোন মোটিভ পাচ্ছি না।
_হুম।
আর কি করা?
দেখি কি করা যায়।
ও হ্যা মিস্টার আমিন; বলল,রিও।
আমিন জোহান মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বললঃজি, বলেন স্যার।
_আপনি গত পনের দিন ধরে ছুটিতে আছেন।
একমাসের ছুটি নিয়েছেন শুনলাম।
_জি, স্যার।
_কিন্তু, কেন? বলবেন কি.।
_আপনি কি বলতে চাইছেন
একটু ক্লিয়ার করে বলুন তো?
আপনি কি মনে করছেন, আমি আমার আম্মাকে খুন করেছি?
_এত রেগে যাবার কি আছে?
আমি কি সেটা বলেছি?
_জি না। আমি প্রায়ই এরুপ লং ছুটি নিয়ে থাকি।
রিও এবার হো হো করে হেসে দিয়ে জহিরের দিকে তাকিয়ে বললঃ কি ছোট জমিদার? এত হাসি পাচ্ছে কেন আপনার?
আমি অবশ্য অবাক হয়ে গেলাম।
কারন, জহির জমিদার হবে কেন?
সে তো জমিদার বাড়ির জামাতা মাত্র।
অবশ্য কথাটা আমার বলা লাগল না।
জহির নিজেই বললঃ আমি জমিদার বংশর জামাই।
জমিদার নয়, মিস্টার গোয়েন্দা।
_কি যেন বললেন শেষ শব্দটা ?বলল রিও।
_কেন, গোয়েন্দা?(জহির)
_হ্যা। নিজেই তো গোয়েন্দা বলছেন। আবার নিজেই সত্যটাকে মিথ্যা বলে চালিয়ে দিতে চাইছেন?
_মানে?
_আপনার খেল সেই গত রাতেই শেষ হয়ে গেছে;বলল রিও। নিজের হাতে খুন করেন নি।
তাই ভেবেছিলাম আপনাকে কিছু বলব না।
তাছাড়া আপনার খুনের ইচ্ছাও ছিল না।
আপনার ইচ্ছা ছিল শুধু ডাইরি হাতানো।
কিন্তু খুনিকে পালাতে হেল্প করাও কিন্তু খুনের শামিল।
_ইয়ে মানে।
_লুকিয়ে আর কি লাভ বলুন?
কি ঘটেছিল সেটা বলে দিলে
মনে হয় বেটার হয়।
_কি প্রমান আছে আপনার কাছে?
আমি খুনের সাথে জড়িত।
_আচ্ছা মানুষতো আপনি। ওকে।
আপনি জহির।
আপনার বাবা জাফর।আর আপনার দাদার নামও জহির।
আমি কি ভুল বলেছি?
_না। তাতে কি?
_এখানেইতো সব।
আমার কথা গুলো মনযোগ দিয়ে শুনেন বুঝে যাবেন সব।
আপনি জহির, আপনার বাবা জাফর, দাদা জহির, আর আপনার দাদার বাবা জসিফ।
আর জসিফের বড় ভাই জিহান।
এবার দেখলাম জহির যেন থত মত খেয়ে গেল।
পাশ থেকে তার স্ত্রী বলে উঠলেনঃজিহান?
_জি ম্যাডাম। আপনার আম্মার দাদা জিহান; বলল রিও।
_কি বলেন এসব? বলল ভিকটিমের মেয়ে।
_হ্যা। উনিই হলেন জিহানের পালিয়ে যাওয়া ভাই জসিফের বংশধর।
আমি কি রাইট মিস্টার জহির?
জহির তার মুখ কাঁচুমাঁচু করে বলল জিঃআমিই জমিদার বাড়ির একমাত্র উত্তরসুরী।
এই সম্পদের একমাত্র বৈধ মালিক।
_হা হা হা, তাহলে আর কি?
এবার সব খুলে বলুন।
সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
_শয়তান,,, মুর্তমান শয়তান আপনি মিস্টার রিও।
আমার সকল প্ল্যান ভেস্তে দিলেন।
মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি এসে গিয়েছিল।
বাট ইউ আর দ্যা ডেভিল, যে আমার বৈধ সম্পদের মালিক
আমাকে হতে দিল না।
_হা হা হা, রিও ইজ রিও মিস্টার জহির।
জহিরের কথা শুনে শুধু আমি নই বরং উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে গেল।
রিও বললঃ হ্যা, মিস্টার জহির বলেন।
আসলে আমার হাতে সময় কম।
এবার জহির বলা শুরু করলঃ আসলে আমি ছোট বেলা থেকেই প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে অনেক আগ্রহী ছিলাম।
এর পর একদিন বাবার কাছে থেকে জানতে পেলাম আমাদের পুর্ব পুরুষের ইতিহাস।
তখন তিনি এও বলেছিলেন
তাদের ধারনা ছিল যে, এই জমিদার বাড়িতে অনেক গুপ্ত ধন লুকিয়ে রাখা আছে।
কিন্তু সেটা কোথায় কেউই
জানে না।
এরপর আমি আমার বাবার থাকা কিছু ডাইরি থেকে জানতে পারি, আমাদের পুর্ব পুরুষ মিস্টার জোসিফ আর জিহান দুই ভাই।
জিহান ছিল বড়।
সম্পদের লোভে জিহান তার ছোট ভাই জোসিফ কে খুন করার প্ল্যান করে।
কিন্তু জোসিফ সেটা বুঝে
বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
এদিকে তিনি কয়েক বছর বরিশাল পালিয়ে থাকেন।
তারপর তিনি যশোর এসে স্থায়ী ভাবে বসবাস করে।
আর জিহান ভেবেছিল
জোসিফ মারা গিয়েছিল।
এদিকে জিহানের ছেলে ছিল একজন এবং সেই ছেলের
একমাত্র মেয়ে হল মিসেস রাজভি।
তার মানে জমিদারির একমাত্র
বৈধ মালিক বলতে আমি আছি।
কারন আমিন জোহান জমিদার বংশের কেউ নয়।
নিতান্তই এটা তার নানা বাড়ি।
বাবা যদিও কখনো এখানে আসেননি।
তারপরও তিনি নিয়মিত
জমিদার বাড়ির খোঁজ খবর রাখতেন।
এরপর বাবা মারা যান গত বিশ বছর আগে।
তখন আমি প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে আবার লেগে পড়ি।
এরপর একদিন বাবার ডাইরি পড়ে জানতে পারি তিনি বার বার লিখেছেন,, তার ধারনা
জমিদার বাড়িতে কিছু একটা
লুকিয়ে রাখা আছে।
কিন্তু সেটা কি বা কোথায় তিনি কিছুই জানেন না।
শুধু উল্লেখ করেছেন, পুর্ব পুরুষের ডাইরিতে বার বার লেখা আছে, গুপ্ত ধনে ভয় আছে।
এরপর চলে আসলাম এখানে।
পরিচয় হয়ে গেল কর্নেল জোহানের মেয়ের সাথে।
কিছু দিনের মাঝে বিয়ে করে ফেলি।
কারন আমি জানি আমার পরিচয় দিলে।
হয়ত এরা কেউ মেনে নিবে না।
তাই বিয়েটা করতে হয়, যাতে জমিদার অবাধ গমনের
কোন বাধা থাকে না।
কিন্তু কোন লাভ হল না।
গত পনের বছর ধরে অনেক চেষ্টা করেও গুপ্ত ধনের হদিশ
পেলাম না।
এদিকে আমার কার্য কালাপে মিসেস জোহান আমায় সন্দেহ করা শুরু করেন।
হয়ত আমার পিছে লোক লাগিয়ে তিনি আমার পরিচয়
পেয়ে যান।
তাই তিনি আমায় সব সময়
চোখে চোখে রাখতেন।
আমি বিষয়টা বুঝে তাকে আমার পরিচয় দেই।
আমি এও বলে ছিলাম আমি জমিদার বাড়ির কিছু চাইনা।
চাই শুধু চাই জমিদার গুপ্ত ধনের সন্ধান।
তিনি প্রথমে রাজি হলেন।
কিন্তু পরক্ষনে যখন বললামঃ গুপ্ত ধন খুজে পেলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে।
তখন তিনি বললেনঃএটা তার বাপ দাদার সম্পদ।
তিনি কেন রাষ্ট্রীয় কোষাগারে
জমা দিবেন।
অনেক বুঝিয়েছি এটা জনগনের সম্পদ।
এখন রাষ্ট্রর প্রাপ্য।
কিন্তু তিনি রাজি হলেন না।
ইভেন কোন রুপ সাহায্য তো দুরের কথা আমি জমিদার বাড়িতে আসলে সেটাও ভাল ভাবে নিতে পারতেন না।
কিন্তু মিস্টার রিও,,,আমি প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে অনেক পড়েছি।
তাই আমার ধারনা, এই বাড়িতে সোনা দানা কিছু নেই।
আছে অন্য কিছু।
রিও এবারঃ তিব্বত থেকে আনা মুর্তিতো?
চিতকার করে বললঃইয়েস। এক একটা
মুর্তির দাম হবে কয়েক কোটি টাকা।
ঠিক কত গুলো মুর্তি আছে সেটা আমি জানি না।
অনেক বার প্ল্যযান করেছি মিসেস জোহানের ঘর থেকে কিছু ডাইরি চুরি করার জন্য।
কারন আমার ধারনা, গুপ্ত ধনের হদিস একমাত্র এই ডাইরিতেই আছে।
কিন্তু বিফল হলাম।
শেষমেষ ভিন্ন প্ল্যান আটলাম।
রিও বললঃ ভুতের নাটিকাটা অনেক জোশ ছিল কিন্তু মিস্টার জহির।
_কি আর করার ছিল?
আমার কাছে দুটি উপায় একটা
হল ডাইরি হাতানো।
অন্যটা মিসেস জোহান কে
বাড়ি থেকে বের করানো।
তাই টাকার লোভ দেখিয়ে দারোয়ানকে দিয়ে একটা ভুতের গল্প এলাকায় প্রচার করে দিলাম।
এমনিতে জমিদার বাড়ি, তারপর গ্রামের লোক,
সবটা মিলে অল্পতেই আমার কাজ হাসিল।
মাঝে মাঝে ভয় দেখানোর
জন্য লেজার, আর বাঘরে গর্জন শোনানোর জন্য টেপরেকর্ডার যথেষ্ট ছিল।
আর একটা জিনিস আপনি
নিশ্চয় জানেন মিস্টার রিও,
নিজের মনের মাঝে যদি বিন্দু মাত্র ভয় থাকে। তাহলে আপনাকে ভয় দেখানো পুরোটাই নসসির ব্যাপার।
মালি আর কাজের লোকের
ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা বেশ কাজে দিয়েছে।
অবশেষ প্ল্যযান যখন
পুরো সাক্সেস।
তখন এক রাতে করে চলে আসলাম ডাইরি চুরি করে নিতে।
দারোয়ান আমার সাথে ছিল।
কিন্তু ঘরে ঢুকতেই দেখলাম
মিসেস জোহান একটা লোকের সাথে বেশ উত্তেজিত ভাবে কথা বলছেন।
আমাকে দেখে তাদের আলাপ বন্ধ হয়ে গেল।
তবে দুর থেকে যা শুনে ছিলাম।
তাতে মনে হয়েছে এই লোকটার সাথে মিসেস জোহানের একটা অবৈধ সম্পর্ক ছিল।
এবং সেটা অল্প বয়স থেকেই।
তিনিও আমার মত গুপ্ত ধন খুজছিলেন।
কিন্তু মিসেস জোহান ডাইরি কেউকে দিতে রাজি নয়।
কিন্তু আমি জানতাম ডাইরিটা কোথায় রাখা আছে।
তাই একটা দেরাজ থেকে যখন আমি ডাইরি বের করতে উদত্য তখন মিসেস জোহান আমাকে বাধা দিলেন।
ডাইরি দেখে সিংহের মত গর্জন দিয়ে লোকটি আমার
পিঠের উপর লাঠি দিয়ে আঘাত করলেন।
ভাগ্য ভাল আমি সরে যেতেই
আঘাতটা পড়ল
মিসেস জোহানের পিঠে।
মুখ দিয়ে শব্দ করার সময়ও পেলেন না তিনি।
মারা গেলেন মিসেস জোহান।
এবার রিও বললঃআঘাতটা কি চেয়ারের হাতল দিয়ে করা হয়েছিল?
_জি, কি ভাবে বুঝলেন?
_সেটাতো প্রথম দিনেই বুঝেছিলাম।
কারন হাতলেই একমাত্র চারটা আংগুলের মত একটা নকশা ছিল।
আর সেটা যে চেয়ার থেকে বের করা যায়
সেটা বুঝেছিলাম যখন ওটা ধরে পরিক্ষা করেছিলাম।
কিন্তু মালি সাজেদ সাহেবকে আপনি কেন রক্ষা করতে চাইলেন?
_______ আমার বুক ধপাশ।
কি বলে ভাগিনা।
বৃদ্ধ মালি সাজেদ তাহলে এই খুন করেছে?
জহির বললঃআসলে আমার খুন নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা ছিল না।
খুনের পর সাজেদ আমার হাত পা জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না কাটি করেছিল।
তাই তার উপর আমার দয়া পড়ে গিয়েছিল।
কেননা, মিসেস জোহান সারা জীবন লোকটা কে গুপ্ত ধনের আশা দেখিয়ে
নিজের কাজে ব্যাবহার করেছেন।
আর এই বুড়ো বয়সে, তাকে
এখন মালি বানিয়ে রেখেছে।
জহির থামলেন।
এত মানুষ এক সাথে দাড়িয়ে থাকার পরও চারিদিক
যেন নিরাবতাই ছেয়ে আছে।
রিও বললঃহুম। তবে জানেন কি মিস্টার জহির, খুন করা আর খুনিকে সাহায্য করার মাঝে তেমন পার্থক্য নেই।
এবার দেখলাম ওসি সাহেব জহির আর সাজিদ কে গ্রেফতার করল।
যাবার আগে জহির বললঃমিস্টার রিও, যে সম্পদের খোজ আমি গত
১৫ বছরে পাইনি।
আর আপনি সেটা দুই দিনেই
বের করে ফেললেন।
একটু জানার ইচ্ছা ছিল কি করে পারলেন?
_হা হা হা,, মিস্টার জহির।
আগে মামা বাড়ি থেকে ঘুরে আসুন।
তারপর না হয়, একদিন আলোচনা করা যাবে
জমিদার বাড়ি থেকে বের হচ্ছি এমন সময় রিও হেসে দিয়ে মিস্টার আমিন কে বললঃওহ হ্যা মিস্টার আমিন, বন্দুকের নিশানা কিন্তু দারুন আপনার।
মিস্টার আমিন দেখলাম অবাক হয়ে রিওর দিকে তাকিয়ে রইল।
রিও তাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বললঃ যাক সে কথা,
আমি সব ভুলে গেছি।
আপনিও ভুলে যান সব।
শুভ বিদায়।
_______ ভাগিনার এহেন আচরণ দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
তবে বুঝলাম রিওকে আক্রমন নিয়ে কিছু করতে গেলে
নিছক আমাদের কোর্টে যেতে হবে।
তারপর বিচার।
রিও বলে আমার এক একটা দিনের অনেক মুল্য আছে।
কারন আমাকে আল্লাহ যে জ্ঞান দিয়েছেন সেটা সঠিক
কাজে ব্যবহার না করে
যদি নিজের জন্য ব্যয় করি।
তাহলে শেষ বিচারের দিন
শ্রষ্ঠার কাছে
কি জবাব দিব।
তাই আর আমিনের বিষয়টা এগোল না।
আমি অবশ্য চেয়েছিলাম।
কিন্তু মাঝ পথে রিওই আমায় থামিয়ে দিয়েছিল।
তিন দিন পর।
আমি আর রিও বসে আছি
রিওদের গ্রামের বাড়িতে।
এমন এক সন্ধায় ওসি সাহেব আর সাফিন এসে হাজির।
চা খেতে খেতে এক পর্যায়ে
ওসি সাহেব বললেনঃ মালি নাকি সব স্বীকার করে নিয়েছে।
তিনি আরো বললেনঃআচ্ছা মিস্টার রিও আপনি কি করে বুঝলেন এত কিছু?
হাসতে হাসতে রিও বললঃদেখুন মিস্টার। যখন মিসেস জোহান আমার ৯৩/২
এর বাড়িতে গেলেন।
তখনি তার কথার মাঝে
কিছু গোলমাল লক্ষ্য করি।
কারন তার মুখে স্পস্ট ভুতের ভয় ছিল।
এ কারনে আমি আসতে রাজি হই।
আর যখন শুনলাম তিনি খুন হয়েছেন তখন আসতে বাধ্য হলাম।
এসে ঘর পরিক্ষা করে যেটা পেলাম সেটা নিতান্তই সাজানো জিনিস।
তবে স্বীকার করতেই হবে
খুনি এই একটি জায়গায় আমাকে চমক দেখিয়েছে।
কারন আমার অনুমান থেকে
খুনির বয়স অনেক বেশি ছিল।
তবে হ্যা আমি যে জুতার মাপ পেয়েছিলাম সেটা মালির নয়
জহিরের।
তবে চুল মালির।
আমার ভুল ছিল আমি দুই জনকেই একজন মনে করে
ফেলেছিলাম।
কি আর করব বলুন
ইনভেস্টিগেশন একটু ভুল হলে
সম্পুর্ন মামলাটা যে বদলে যায়।
সেটা এই মামলা থেকে শিখে নিয়েছি।
আশা করি এমন ছেলে মানুষি ভুল আমার আর হবে না।
কাজের কথায় আসি, যখন দেখলাম ভিকটিমের গায়ে বাঘের থাবার মত ছাপ।
তখন ভেবে নিলাম মারার অস্ত্রটা এই ঘরেই আছে।
কারন জমিদার বাড়িতে সে সব আসবাব পত্র আছে
তার সব গুলোয় আগের যুগের
ভিন্ন প্রানির আদলে তৈরি।
একটু খুজতে পেয়ে গেলাম
চেয়ারের হাতল যেটা বিশেষ কায়দা করে বানানো।
সহজে খুলে নেওয়া যায়।
কিন্তু ঘর ময় একটা পায়ের ছাপ ছিল।
তাই বলে বলেছিলাম খুনি খুন করতে নয়,,অন্য উদ্দেশ্য এসেছিল।
কারন খুন করতে আসলে
খুন করে চলে যেত।
এত দেরি করত না।
আমি বললামঃহ্যান্ড গ্লাভসের আংশ বিশেষ পেয়েছিলে কেন?
_আসলে প্রফেসর। খুন হয়েছিল সাড়ে এগারটার কিছু আগে।
কিন্তু সবাই জানল রাত দুটা
কেন?
কারন অনেক প্রমান ছিল ঘরে।
সেটা মালি লুটপাট করার সময় এই গ্লাভস পরে নিয়েছিল।
কিন্ত তিনি জানতেন না রিও আসবে এখানে।
যদি জানত তাহলে ইন্ডিয়া বেশি দূরে ছিল না।
এখন খেয়াল করলে বুঝবে
রাত দুটায় একটা শব্দ হল।
আর সে সব্দ পেয়ে কমলা আর তার স্বামী উঠে এল।
কিন্তু খুন হল সাড়ে এগারটায়
শব্দ তখন কেন?
কে করল এ শব্দ?
তা হলে ভেবে নেওয়া কি কঠিন যে খুনি এই শব্দ করে ছিল।
তাই ভাবলাম খুনি এ বাড়িতে আছে বা ছিল রাত দুটা পর্যন্ত।
এবার দারোয়ানের সাথে কথা বলে ভুতের গল্প শুনতে পেলাম।
কিন্তু মিসেস জোহানের গল্পের সাথে তার গল্প মিলে না।
তাই দারোয়ানের কথা আমার বিশ্বাস হল না।
এবার তাই আবার এই জমিদার বাড়িতে আসি।
তখন পেয়ে যাই ভিন্ন তথ্য।
জহির বলেছিল সে বাঘের গর্জন শুনেছিল এবং দারোয়ান আর মালির সাথে গিয়ে ছিল দেখতে।
কিন্তু কথা হল দারোয়ান তাহলে জহির সাথে ছিল এ কথা চেপে গেল কেন?
নিশ্চয় এই দুইটার মাঝে সাদৃশ্য আছে।
তাই তোমার অরন্যকে সেই রাতেই যশোর পাঠিয়ে দেই।
জহির সম্পর্কে যা বলেছি সব
অরন্যর দেওয়া তথ্য।
খুনের সমাধান করেই ফেলেছিলাম অরন্যর দেওয়া তথ্য থেকে।
কিন্তু যার জন্য খুন হল সেই গুপ্ত ধন কোথায়?
ডাইরি ঘেটে একটা তথ্যই পেয়েছিলাম।
তা হল “গুপ্ত ধনে ভয় আছে”।
যখন এই একটা বাক্য নিয়ে ভেবে ভেবে মাথা হ্যাং হয়ে আসছিল তখন একটা বিষয় দেখে একটু চমক লাগল।
তা হল সবাই বাংলাতে বাক্যটা লিখলেও
সর্ব প্রথম যিনি কথাটা লিখেছিলেন তিনি লিখেছেন
ইংরেজিতে।
সেটা হলঃGupTo dhOn_A voy ache.
একটু খেয়াল করে দেখলাম
এখানে চারটা ক্যাপিটাল আক্ষর আছে।
তা হল GTOA.
কিন্তু gtoa এর কোন আর্থ নাই।
তাই লিখাটাতে একটু উল্টাতে পেলাম toga।
যার মানে দাড়াই আলখেল্যা।
এটা প্রাচিন রোমানদের একটা পোষাক বিশেষ।
কিন্তু এই পোশাক পরে ভুত সেজে ভয় দেওয়ার কি আছে?
ভালকরে ডাইরি আবার পড়ে
এই পোশাক এর কোন ছিটে ফোটা ডাইরিতে পেলাম না।
কি আর করা আবার উল্টাতে শুরু করলাম আক্ষর গুলো।
এবার পেলাম Goat মানে ছাগল।
মাথায় খেলে গেল একটা জিনিস।
নীল ক্ষেত থেকে জমিদার বাড়ি সম্পর্কে যে বইটা কিনেছিলাম।
সেটায় লেখাছিল প্রাচিন এই জমিদারেরা ছাগদুগ্ধ পছন্দ করতেন।
কিন্তু অকারনে এক রাতের মাঝে সব ছাগল মারা যায়।
এবং তাদের এই জমিদার বাড়িতেই পুতে ফেলে
সেখানে একটা ছাগলের মুর্তি করে রাখা হয়।
কিন্তু কেন?
একরাতেই কেন?
কি রোগ হতে পারে যে, একরাতে সব ছাগল মারা যায়।
আবার সেগুলি কেন রাতেই পুতে রাখা হয়?
কেন আবার ছাগল কেনা হয় না?
সমস্যার কোন সমাধান পাচ্ছিলাম না।
তখন মনে হল পরিকল্পিত ভাবেই ছাগলগূলো মারা হয়।
এবং সেটার সাথে সাথে গুপ্তধনও পুতে দেওয়া হয়।
আমি বললামঃ নিজের সম্পদ পুতে রাখার কি কারন থাকতে
পারে? ভাগিনা।
_কারনতো আছেই প্রফেসর।
ঠিক ওই সময়টাতে ব্রিটিশকোম্পানি গুলো এ দেশে আগমন করে।
হয়ত জমিদারের ধারনা ছিল
ব্রিটিশরা তার এই জিনিসের উপর লোভ দেখাতে পারে।
এতক্ষনে সাফিন মুখ খুললঃসত্য বলতে কি মিস্টার রিও।
গোয়েন্দা বই পড়েছি।
নিজেও এত গুলো কেসের সমাধান করেছি।
কিন্তু আপনার কাজের স্টাইল আমায় মুগ্ধ করে দিয়েছে।
মাত্র সীমিত কিছু তথ্য দিয়ে আপনি এমন বড় এবং জটিল কেসের সমাধান যে, কি ভাবে করলেন?
আল্লাহ আপনাকে কঠিন ট্যালেন্ট দিয়েছে।
_ট্যালেন্ট কি না জানি না; বলল রিও।তবে এটা মানতেই হবে আমার দেখার ক্ষমতা আল্লাহ অনেক ভাল দিয়েছে।
_কিন্তু মিস্টার রিও, বললেন ওসি সাহেব। আপনার উপর যে আক্রমন হল সেটার কিছু করলেন না যে?
_বেচে আছি এটাই শুকরিয়া নয় কি? বলল রিও।
_কিন্তু অপরাধী?
_সে না হয় বাহিরেই থাক।
_তারমানে আপনি বলছেন জহির আপনার উপর আক্রমন করেনি?ওসির প্রশ্ন।
_জি হ্যা।
তবে এত টুকু জেনে রাখেন।
যিনি আক্রমন করেছিলেন
তিনি ভেবেছিলেন আমি জহিরের হয়ে এখানে এসেছি।
তাই চেয়েছিলেন আমাকে সরিয়ে দিতে।
_তার মানে আমিন জোহান? অবাক হয়ে ওসির প্রশ্ন।
_আরে ছেড়ে দিননা এসব।
আসেন চা খাই আর এককাপ।
_আপনি জনাব, আসলেই যে কি?
এটাই বুঝলাম না।
_হা হা হা, আমিও একজন মানুষ।
(সমাপ্ত)