সকাল নয় টা।নাইনথ ফ্লোরের বালকনিতে বসে একমনে খবরের কাগজ পড়ছিল টনি।শীতের সকাল,মিষ্টি সূর্যের আলো সাথে এক কাপ ধুমায়িত কফি।সব মিলিয়ে এক মনোরম পরিবেশ।খবরের কাগজের একটা কলামে হঠাৎ করে চোখ আটকে যায় টনির।”সুন্দরগড় গ্রামে আবারো একটা খুন।এই নিয়ে পনের টা।এই খুন টিও আগের গুলির মতো।হাত পা সব দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং মাথাটা নিখোজ।পুলিশ এখোন এই হত্যা রহস্যের কোন কূলকিনারা করতে পারিনি।এই হত্যা যজ্ঞের শেষ কবে হবে??কারো কাছে কী আছে এর জবাব?? ”
কলামটা পড়ে চিন্তার জগতে চলে গেল টনি।এমন সময় হঠাৎ রুম থেকে একটা চিৎকার এর আওয়াজ পেল সে।একটা ভারি পুরুষালি কন্ঠ বলছে,
“উফফফ এ ভাবে চলতে থাকলে আমি পাগল ই হয়ে যাবো। মাছ কী জল ছাড়া বাঁচে??আমিও এভাবে চলতে থাকলে মরেই যাবো। একটা কেস চাই,মনের মতো একটা ভালো কেস চাই।ওউফফ কী অসহ্য যন্ত্রনা..!!”
টনি মনে মনে ভাবল”পাগল আবার খেপেছে..!”
সে কাগজ টা ভাজ করে রেখে দৌড়ে গেল রুমের ভেতর,
“কী রে বিডি,ব্যাপার টা কী?তুই আজও সকাল সকাল শুরু করলি??নিজে যখন প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর হয়েছিস,একটু তো ধৈর্য্য শক্তি রাখবি না কী?সবাই কী তোর জন্য আকর্ষনীয় কেস নিয়ে বসে আছে নাকি?আর যা ও কয়েকটা কেস আসে তুই ফিরিয়ে দিস..আর এখন পাগলের মত করছিস,এটা কী ঠিক??”
“কোন কেসের কথা বলছিস তুই?ওই সেদিন রমাকান্ত সেন নামে একজন এসেছিল গয়না চোর কে ধরে দিতে হবে।তার কেস?নাকি তার দু দিন আগে অনিমেষ বসু নামে একজন এসেছিল, তার ভায়ের খুনি কে ধরে দিতে হবে। সেই কেস?বিডি দ্যা গ্রেট এইসব কেস নিয়ে মাথা ঘামাবে তুই ভাবলি কী করে?আমি এমন কেস চাই যেই কেসে আমার মাথার উপযুক্ত ব্যাবহার হবে।”
“হ্যা মানছি যে তুই আসলেই গ্রেট।সাভাবিকদের থেকে তোর মাথা এক্টু বেশিই কাজ করে।তাইবলে কী মাথা খাটানোর কেস সব সময় পাওয়া যায়??ওই দু জনের অফার মিলিয়ে মোট পঁচিশ লাখ টাকা পকেটে ঢুকত তোর।তাও তুই কেস দুটা নিলিনা।বস সেলুট তোকে..!!”
“তুই যাই বলিস পছন্দের মত কেস না হলে আমি নেবোনা,সে যত টাকারই অফার পায় না কেন…”
“বুঝেছি,দাড়া তোকে এক্টা জিনিস দেখায়…..পেপারের এই কলাম টা পড়।”
বিডি কলামটি মন দিয়ে পড়ল
“হুম ইন্ট্রেসটিং নিউজ।এই রকম কেস ই তো চাই।”
“তাহলে যাবি নাকি সুন্দরগড়? শুনেছি ওর চারিপাশে নাকি অনেক সুন্দর পরিবেশ।হয়ত তোর কেসের নেশাও পুরন হতে পারে,আর আমার শীত কাল উপলক্ষে একটা ছোট্ট টুর ও হয়ে যাবে।”
একটা ছোট্ট হাসির মাধ্যমে টনির কথায় সম্মতি জানালো বিডি।
কাঞ্চনপুর স্টেশন এসে দাড়াল ট্রেন।টনি আর বিডি দু জনেই প্লাটফরম এ পা রাখল।বিডি বলল,
“হুম দারুন পরিবেশ।কেস যদি না পাই তবুও ছুটিটা বেশ ভালোই কাটবে।”
“তা যা বলেছিস।এখন তাড়া তাড়ি পা চালা।এখান থেকে সুন্দর গড় আরো চল্লিশ কিলোর রাস্তা।রাস্তাও নাকি ভালো নয়।যেতে অনেক সময় লাগবে।তাই চল তাড়া তাড়ি।”
দুজনে এসে উঠল একটা ভিড় বাসে বাসে।প্রায় দু ঘন্টা ধরে ধরে এবড়ো থেবড়ো পথ অতিক্রম করে এক স্থানে এসে কন্টাক্টর বলল সুন্দরগড় কে কে আছেন নেমে পড়ুন”
ওরা ব্যস্ত পায়ে নেমে এল।তখন বাজে রাত আটটা।টনি বলল,
“এ কোথায় এলামরে??চারি পাশে তো শুধু অন্ধকার।মানুষ জন চোখেই তো পড়ছেনা।”
“চল আরেকটু সামনে গিয়ে দেখি।”
এমন সময় এক লোক সাইকেল চালাতে চালাতে এসে ওদের সামনে এসে ব্রেক কষল।সে বলল,
“মশাই এত রাতে এখানে কী করছেন??আপনারা কারা?”
“আমরা শহর থেকে এসেছি।এখানে কয়েকদিন থাকবো “(বিডি)
“ওহ তা ভালো।তা কোথায় থাকা হবে শুনি?”
“আসলে যায়গা তো ঠিক করিনি,দেখি কেউ যদি আশ্রয় দেয়..”
“অহ..ওই সোজা চলে যান।ওইদিকেই গ্রাম।যেয়ে রামু সরকারের বাড়িতে চলে যান উনি ব্যবস্থা করে দেবে।গ্রামের সবাই ওকে চেনে।”
“ওহ ধন্যবাদ।তা আপনার পরিচয় টা তো পেলামনা।”(টনি)
“আমি গিরিশ সর্দার।পেশায় কৃষক।এই গ্রামেই থাকি।”
“আপনি আমাদের সাহায্য করেছেন বুঝলাম।কিন্ত শুধু শুধু নিজের ভুল পরিচয় কেন দিচ্ছেন পাঁচু বাবু??”(বিডি)
“ইয়ে মানে..আপনি আমার আসল নাম জানলেন কী করে??”
“ইচ্ছে থাকলেই জানা যাই।হেরিকেনের আলোয় দেখা যাচ্ছে,সাইকেলের পেছনে লেখা পাঁচু ঘোষ।আপনি পেশায় মনে হয় অন্য কিছু।আর আপনি খেজুরের রস চুরি করে পালাচ্ছেন।পেছেনে কলসি ঝুলানো।কিছুটা খেয়েছেনও।মুখে এখোন লেগে আছে।আর আপনি এই গ্রামের না।পাশের গ্রামের।সেখানেই এখোন ফিরে যাচ্ছেন।”
“আমি এখোন আসি”
বলেই জোরে জোরে প্যাডেল মারতে মারতে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল পাঁচু।
বিডি হাসতে হাসতে বলল,
“ব্যাচারা ছিচকে চোর হলেও মন টা ভালো। ”
ওরা উল্ট দিকে হাটতে শুরু করল,আর এমন সময় আসল একটা বিকট আর্ত চিৎকার।থমকে দাড়াল ওরা দুজন।বিডি বলল,
“টনি তাড়া তাড়ি চল।ফ্লাস লাইট টা অন কর।”
ওরা চিৎকার টি অনুসরন করে ছুটতে লাগল।এক বিশাল আম বাগানের কাছে এসে থমকে দাড়াল,দেখল পাঁচুর সাইকেলটি মাটিতে পড়ে আছে।রসের ভাড় দুটি ভেঙ্গে চারিদিকে রস ছিটিয়ে আছে।কিন্ত কোথাও পাঁচু কে দেখা যাচ্ছেনা।এমন সময় হলো আরেকটা চিৎকার,একি গলা।সেই দিকে ফিরে আবার ছুটতে লাগল তারা।এবার তারা উভয়ই এক ভয়ংকর দৃশ্যদেখে আড়ষ্ট হয়ে গেল।পাঁচু মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে আর গোঙাচ্ছে।তার দেহে দুই পা দুই হাত কোনটাই নেই।এক কালো আলখেল্লা আবৃত ব্যক্তি বা হাত দিয়ে ওর চুলের মুঠি ধরে দেহের বাকি অংশ শূন্যে উঠিয়ে রেখেছে।ওর ডান হাতে এক অদ্ভুত অস্ত্রের ন্যায় কিছু।সেটা যে যথেষ্ট ধারালো তা বোঝা যাচ্ছে।সে মুখে গুন গুন করে কিছু একটা আওড়াচ্ছে।আর তারপরি এক কোপে পাঁচুর দেহ থেকে মুন্ডুটি আলাদা করে ফেলল।ঘটনার আকস্মিকতায় টনি আর বিডি পুরো জমে গেল।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সেই কালো আলখেল্লা ধারি লোকটি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল সাথে লোকটির হাতে ধোরে থাকা পাঁচুর কাটা মুন্ডু টিও।
সূর্যের আলো মুখে পড়তে চোখ মেলে তাকাল বিডি।দেখল টনি জানালার কাছে চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে।বিডি বলল,
“কী ব্যাপার?এত সকাল সকাল ঘুম ভেঙ্গে গেল?আর ওখানে ও ভাবে দাড়িয়ে আছিস কেন?”
“তুই সারারাত নিশ্চিন্তে ঘুমালি কী ভাবে এটাই ভাবচ্ছিলাম..!!একেতে গত কাল রাতের ওই ভভয়ংকর দৃশ্য আর তার পর গ্রামের লোকের জেরা। আরেকটু হলেই জেলে পুরে দিত।ভাগ্যিস অঘোর বাবু নেহাতি ভাল লোক।ওনার জন্যই বেচে গেলাম।না হলে কপালে দুক্ষ ছিল।”
এমন সময় বাইরে থেকে একটা গলার আওয়াজ আসলল,
“আপনাদের ঘুম কী ভেঙ্গেছে?ভেতরে আসতে পারি?”
বিডি বললল,
“আরে অঘোর বাবু যে..আসুন আসুন।”
“তা আপনাদের কাল রাতে কোন অসুবিধা হয়নি তো??”
“নানা অসুবিধা কিসের।আপনি আমাদের কাল রাতে যে ভাবে সাহায্য করলেন..আর তারপরে আবার থাকারও ব্যবস্তা করে দিলেন।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।”
“দয়া করে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবেননা।এটা আমার কর্তব্য। আর আপনাদের আগে সচক্ষে না দেখলেও আপনাদের অনেক নাম ডাক শুনেছি।পুলিশ যেখানে ভাবনা ছেড়ে দেয় আপনি সেখান থেকেই ভাবতে শুরু করেন।আর এ ভাবেই অনেক রহস্যময় কেস আপনারা সলভ করেছেন।বর্তমানে আমাদের গ্রামের যা অবস্থা,আর এই সময়ই আপনার আগমন।কিছু মনে করবেন না,গ্রামের এই হত্যা রহস্যের কেস টা আমি আপনার হাতে দিতে চাই।আপনার যা ফি লাগবে আমায় বলবেন।আমি দেব।কিন্ত এই হত্যা রহস্যের একটা সুরাহা আপনাকে করতেই হবে।দয়া করে না করবেননা।”
বিডি বলল,”আমি আপনার কেস টা নিচ্ছি।আমার দ্বারা যতটুকু সম্ভব তা দিয়ে আমি এটা সলভ করার চেষ্টা করব।”
“অনেক ধন্যবাদ।আপনার আগাম ফি কত দিতে হবে?”
“পুরোটাই কাজ হওয়ার পরে নেব।”
“ঠিক আছে।একটা কথা,আপনার নামটা ভারি অদ্ভুত। বিডি এর পুরো অর্থ কী?”
“আসলে বা মা নাম দিয়েছিলেন বিমলেশ্বর দেব।নামটা আমার পছন্দ ছিল না।তাই কেটে বিডি করে নিয়েছি।আচ্ছা যেই খুন গুলি হয়েছে এখোন পর্যন্ত, থানায় সব গুলির ডায়রি করা হয়েছে তো??”
“হ্যা হয়েছে।আমি লোক পাঠিয়ে দিচ্ছি।ও এসে আপনাকে থানায় নিয়ে যাবে।আমি তাহলে এখোন উঠি..নমস্কার।”
রাত সাড়ে আটটা।অঘোর বাবুর জিপ এ করে বিডি আর টনি তাদের বাসস্থানে ফিরে যাচ্ছে।সাথে ড্রাইভার।চারিপাশ ঘুটঘুটে অন্ধকার।গাড়ির হেড লাইট দুটিই ভরসা।টনি বলল,
“তো আজকের তদন্ত শেষে কী অনুধাবন করলি তুই?”
“বিশেষ কিছু পাইনি তবে যা পেয়েছি নেহাতি মন্দ নয়।”
“যেমন??”
“যেমন ধর খুন গুলি হচ্ছে আট দিন অন্তর অন্তর,সকলেই পুরুষ এবং সব খুন গুলিই হয়েছে রাতে আর সব খুন গুলির ধরন এক।”
“তোর কী মনে হয়?”
“এ গুলো কী কোন সাইকো প্যাথ কিলারের কাজ??”
“হতেউ পারে আবার নাও পারে”
হঠাৎ করে জিপের ড্রাইভার একটি হার্ড ব্রেক কষল।সবার একেবারে মুখ থুবড়ে পড়ার অবস্থা।বিডি বলল,
“কী ব্যাপার ড্রাইভার এভাবে ব্রেক কষলে কেন??”
“মাফ করবেন সাহেব,কিন্ত গাড়ির সামনে রাস্তার উপর যেন কী একটা পড়ে আছে..”
“নেমে দেখোত কী?”
“আমি নামতে পারবোনা।আমার ভয় করছে।”
“আচ্ছা আমিই দেখছি।”
টনি বলল,
” দাড়া আমিও আসছি।”
ওরা দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেল।আর এমন সময় গাড়ির হেড লাইট দুটি নিভে গেল।চারিপাশ ডুবে গেল ঘুটঘুটে অন্ধকারে।টনি বলল,
“কী ব্যাপার ড্রাইভার হেড লাইট কেন নেভালে??”
…কোন উত্তর নেই…
“ড্রাইভার….ড্রাইভার..”
বিডি বলল,
“দাড়া আমার কাছে টর্চ আছে।”
টর্চ জ্বালাবার পর জীপের দিকে তাকিয়ে দেখে জীপ টি আর সে জায়গায় নেই।এমনকি তার আশেপাশেও নেই।বিডি বলল,
“কী ব্যাপার জীপ টি গেল কোথায়?রাস্তা টা তো অনেক সরু চাইলেই এত সহজে অন্ধকারের ভেতর গাড়ি ঘোরান সম্ভব নয়।দু পাশে ঘন গাছপালা আর আমরা সামনে দাঁড়িয়ে।কোন রকম শব্দ না করে জীপ টি গেল কোথায়??”
টনি কাঁপা স্বরে বলল,
“বিডি সামনে দেখ..!!”
এতক্ষন পর ওরা খেয়াল করল,সামনে যেই জিনিসটি পড়ে আছে সেটি একটি গরুর মৃত দেহ।মাথাটা নেই।বিডি বলল,
“টনি পিছিয়ে আয়।”
হঠাৎ করেই মুন্ডু হিন গরুটা উঠে দাড়াল।মাটির সাথে কিছুক্ষন খুর টি ধার দিয়ে ছুটে গেল তদের দিকে!! বিডি বলল,” টনি পালা।”
ওরা দু জনেই দৌড়াতে দৌড়াতে জংগলের মধ্যে ঢুকে পড়ল।অনেকটা পথ দৌড়ে আসার পর ওরা দু জন পাশা পাশি দাঁড়িয়ে হাঁপাতে লাগল।টনি বলল,
“এ সব কী হচ্ছে এই গ্রামে??আগের দিন সেই কালো আলখেল্লা ধারি লোক আর আজ এই মুন্ডু হীন গরু..না জানি সামনে আরো কী কী আছে..কীরে বিডি তুই কিছু বলছিস না কেন??বিডি…বিডি…উত্তর দিচ্ছিস না কেন??”
টনি বিডির হাত ধরে একটা টান দেয় আর সাথে সাথে হাত টা খুলে চলে আসে..টনি একটা চিৎকার দিয়ে হাতটা ফেলে দুপা পিছিয়ে আসে।বিডি মাটির দিকে তাকিয়ে আছে,মুখ দিয়ে ভেসে আসছে এক অদ্ভুত গজরানির আওয়াজ।যেন কোন খুধার্ত পিশাচ অনেক দিন পর একটা শিকারের উৎস পেয়েছে।বিডি ধিরে ধিরে টনির দিকে তাকাল।চোখ দুটি অন্ধকারের ভেতর ভাঁটার মতো জ্বলছে..ধিরে ধিরে সে এগিয়ে আসছে টনির দিক।টনি আর সহ্য করতে পারলনা।উল্ট দিকে ফিরে আবার ছুটতে শুরু করল।কিন্ত বেশি দূর এগোতে পারল না।পেছন থেকে একটা শক্ত ঠান্ডা হাত তার ঘাড় চেপে ধরল।..
এদিকে বিডি পাগলের মত খুজে চলেছে টনিকে।প্রায় চল্লিশ মিনিট যাবৎ তাকে খুজে পাচ্ছে না সে।হঠাৎ সে দেখতে পেল একটা বিশাল গাছের গোড়ায় কে যেন গুটিসুটি মেরে বসে আছে।বিডি টর্চের আলোটা সেই দিকে ফেলল,দেখতে পেল তার পোশাক কিছুটা টনির মতো।বিডি ডাক দিল,
“টনি..”
লোকটি তার মুখ উপর দিকে তুলল।বিডি বলল,
” কীরে টনি তুই এখানে বসে কী করছিস??তুই জানিস তোকে কতক্ষন ধরে খুঁজছি?? ”
“আমায় নিয়ে চল এখান থেকে,ও আমায় মেরে ফেলবে।”
এটা বলেই টনি কাঁদতে শুরু করল।তার কাঁন্নার শুর টা ধিরে ধিরে পরিবর্তন হতে শুরু করেছে..সে হাসছে..খিল খিল করে হাসছে..প্রথমে আস্তে এবং ধিরে ধিরে অট্ট হাসিতে পরিনত হল তার হাসি।
“বাচবেনা.. এই গ্রামের কেউ বাঁচবেনা..সে আসছে..আর মাত্র কয়েকটা দিন..”
বিডি টনির গায়ে হাত দিল,আর তখনি টনি একটি ভয়ংকর চিৎকার দিয়ে বিডি র গলা চেপে ধরল,আর বিশ্রি ভয়ংকর গলায় বলল,
“চোলে যা এখান থেকে..চলে যা।না হলে তোর ও পরিনতি এই গ্রাম বাসির মতোই হবে।”
বিডি আর সহ্য করতে পারল না।জ্ঞান হারিয়ে ফলল সে।
আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকাল বিডি।সে নিজেকে একটা খাটে আবিষ্কার করল।খাট ছেড়ে সে ওঠার চেষ্টা করল..
“আরে আরে করছেন কী?আপনি অসুস্থ এভাবে খাট ছেড়ে উঠবেন না”
“আমি কোথায়?আপনি কে?”
“আমি বিশ্ব নাথ দত্ত,পেশায় হোমিও চিকিৎসক। আপনি আমার বাড়িতে আছেন।এখানেই এই দুই দিন ধরে আপনার ট্রিটমেন্ট চলছে”
“দুই দিন??!!!”
“হ্যা,আপনি দুই দিন ধরে অজ্ঞান ছিলেন।কাল রাত থেকে আপনার সেন্স আসা শুরু হয়।আর আজ সকালে পুরোপুরিভাবে আসল।”
“আমার বন্ধু টনি কোথায়?”
“সেই রাতে অঘোর বাবু শহর থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন।জংগলের ভেতরের রাস্তা দিয়ে আসার সময় আপনাকে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।আর উনিই আপনাকে আমার কাছে নিয়ে আসেন।আজ আপনার জ্ঞান না ফিরলে আপনাকে শহরে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।সেই দিন রাতের পর থেকেই আপনার বন্ধুকে আর খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা।”
বিডি মুখ নিচে করে ফেলল,আসলে সে নিজের চোখের জলকে লোকাতে চাই।মনে মনে সে নিজেকে দোষারপ করছে।আজ সে এখানে না আসলে এমন কিছুই হতোনা।অন্তত তার প্রিয় বন্ধুটি আজ জীবিত থাকত।সে নিজের মন কে বোঝাচ্ছে, যে নাহ টনির কিছু হয়নি ও এখোন জীবিত আছে।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল সে,যে এই হত্যা রহস্যের সমাধান আর টনিকে যত দিন না পর্যন্ত সে খুজে বের করছে ততদিন অবদি সে এই গ্রাম ছেড়ে কোথাও যাবেনা।
তিন দিন হয়ে গেছে।গ্রামের বাসিন্দা,মৃত ব্যক্তিদের পরিবারে সাথে কথা বলে,আরো বিভিন্ন অনুসন্ধান করে বিডি তার তদন্তের নব্বই ভাগ সমাধান করে ফেলেছে।এখন সে তার বাকি অসম্পূর্ন দশ ভাগ নিয়ে ভাবছে।কী লাভ এই খুন গুলোর পেছনে??এই প্রশ্ন টাই ওকে ভাবিয়ে চলেছে।এমন সময় হঠাৎ করে লোডশেডিং হলো।সে হারিকেন টা জ্বালাবে বলে টেবিলের দিকে হাত বাড়াল।হারিকেন জ্বালাবার পর মৃদু আলোতে সে তার ঘরে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করল।আস্ত আস্তে সে বুঝল তার ঘরে কোন আসবাবপত্রই নেই যা দশ সেকেন্ড আগেউ ছিল সাথে ঘরের জানালা দরজা গুলোর জায়গা তেউ নিরেট দেওয়াল উঠে গেছে।ঘরের তাপমাত্রা হঠাৎ করেই অনেক কমে গেছে।সে এতক্ষনে বুঝতে পারল যে তার পাশে কেউ বসে আছে।ভয়ে ভয়ে সে তার ডান দিকে ঘাড় ঘোরাল আর দেখতে পেল হুবহু তারি মতই দেখতে একজন তার দিকে তাকিয়ে খিল খিল করে হাসছে,
“বলেছিলাম না চলে যেতে?শুনলিনা।এবার বুঝবি..”
কথাটি বলতে বলতে সেই মুর্তিটি একটি ব্লেড দিয়ে তার নিজের গলা চিরে ফেলতে লাগল।আর সেই সাথে অট্ট হাসি।ক্ষত স্থান থেকে দর দর করে রক্ত পড়তে লাগল।বিডি বিছানা থেকে নামতে গিয়ে হোচট খেয়ে পড়ে গেল।সাথে হেরিকেনটাও।সে অনুভব করল যে সে নরম আর ভেজা কিছুর উপর বসে আছে।হেরিকেনের আলোয় সে দেখতে পেল সারা ঘর ময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রক্তাক্ত কাটা হাত আর পা।চারিপাশের দেওয়ালে লেগে আছে
রক্তে মাখা হাত ও পায়ের ছাপ।এবার সেই কাটা হাত ও পা গুলি তির তির করে নড়তে শুরু করল।যেন তাতে প্রানের সঞ্চার হয়েছে।এবার নড়তে নড়তে কাটা হাত পা গুলি বিডি র দিকে সরে আসতে লাগল।ও বুঝতে পারল যে ওর সময় হয়ে এসেছে।সে পেছনে সরতে সরতে এক সময় তার পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেল।এবার সেই মূর্তিটি অন্ধকার চিরে এক ভয়ংকর চিৎকার দিয়ে সেই অদ্ভুত ধারাল অস্ত্রটি তার গলা বরাবর চালিয়ে দিল….”
একটা আর্তচিৎকার দিয়ে একলাফে বিছানায় সোজা হয়ে উঠে বসল বিডি।বাইরে সূর্যের
আলো দেখা যাচ্ছে।ঘরের আসবাবপত্র সব জায়গা মতই আছে।ও বুঝতে পারল যে এটা স্বপ্ন ছিল।তবে হারিকেন টা এখোন টিম টিম করে জ্বলছে।অর্থ্যাৎ কাল রাতে লোডশেডিং সত্যিই হয়েছিল।সে তাড়া তাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল।অনেক কাজ করতে হবে আজ।
আকাশের সূর্য অস্ত গেছে।গ্রামের চারিপাশে আবারো নেমে এসেছে সেই চিরচেনা শুনসান নিরাবতা সাথে অন্ধকার।গ্রামের সকল মানুষ বুড়বটতলার নিচে জড়ো হয়েছে।সাথে পুলিশ।সবার মনেই একটা চাপা উৎকন্ঠা।বিডি তার তদন্ত সম্পূর্ন করেছে।এখন সে সবার সামনে এই রহস্যে যবনিকা টানতে চাই।তাই সবাই একসাথে হাজির হয়েছে।বিডি শুরু করল,
“গত আট দিন ধরে আমি আছি এই গ্রামে।অথচ এই গ্রাম সম্বন্ধে আট দিন আগে আমি কিছুই জানতামনা।আমার বন্ধুই আমাকে এই গ্রাম আর এই রহস্যময় হত্যা গুলি সম্বন্ধে জানাই। আমার আগ্রহ হয়।আর চলে আসি।আমাদের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা আপনারা সবাই জানেন। পুরো ঘটনা টা আমরা নিজ চোখে দেখি।ভেবেছিলাম হয়ত এটা কোন মানুষের ই কাজ।কিন্ত ওই যে মহান কবি শেকসপিয়র তার অমর সৃষ্টি হ্যামলেট এ বলে গেছেন,
‘There are more things in heaven and earth,Horatio, Than are dreamt of in your philosophy..’
আসলেই তাই।এই হত্যা যজ্ঞ লোকিক নয়।এটা অলৈকিক।যা আস্তে আস্তে বুঝতে শুরু করলাম।আমরা দুই বন্ধু অঘোর বাবুর আশ্রয়ে থেকে গেলাম এবং ওনার কথাতেই আমি এই কেস টা হাতে নিলাম।শুরু করলাম তদন্ত।প্রথম দিন তদন্ত শেষে বুঝলাম যে প্রত্যেক টা খুনই রাতে হয়েছে আর সবগুলিই আট দিন অন্তর অন্তর।আর ওই দিনই রহস্যময় ভাবে আমার বন্ধু নিখোজ হয়।যার খোজ এখোন পাওয়া যায়নি। আমি আবার আমার তদন্ত শুরু করলাম।পাশের গ্রামে এক বৃদ্ধ আছেন।প্রায় একশ বছর বয়স।নাম নগেন তপাদার।তার কাছ থেকে শুনি এই গ্রামের পূর্ব ইতিহাস।আজ থেকে প্রায় ষাট বছর আগে এই গ্রামে ছিল এক জমিদার। নাম বিজেন্দ্র নাথ রায়।তার নায়েবের নাম ছিল হরিনারায়ন দত্ত।জমিদার মশাই খুব ভাল মানুষ ছিলেন।তার জমিদারীতে প্রজাদের কোন দুঃখ কষ্ট ছিলনা।কিন্ত হঠাৎ করেই একদিন তার রাজ্যে ঘটতে শুরু করল বিপর্যয়।একে একে গ্রামের শিশুরা নিখোজ হতে শুরু করল আর পরে পাওয়া যেত তাদের খন্ড বিখন্ড দেহ।ধিরে প্রকাশ পেল এটা নায়েব হরিনারায়ন দত্তের কাজ।সে ভেতরে ভেতরে কালো জাদু চর্চা করত।শিশু গুলিকে নাকি সে শয়তানের উদ্দেশ্যে বলি দিত।জমিদার তাকে আর তার স্ত্রী সাথে এক ছেলেকে তাদের বাড়িতে বন্দি করে আগুন লাগিয়ে দেয়।তারা সেখানেই মারা যায়।কিন্ত নায়েবের নাকি দুটো ছেলে ছিল। সেই ২য় ছেলেটিকে আর খুজে পাওয়া যায়নি।আর আজ ষাট বছর পর আবারো সেই কাহীনির পূনরাবৃত্তি ঘটছে।কেন?উত্তর খোজার জন্য আমি খুন হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের বাড়ির লোকদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করি। প্রত্যেকটা খুনের সাথেই একটা জিনিসের মিল পায়।যারা খুন হয়েছে সবারই কপালের ডান পাশে একটা তিল আছে।ঠিক একি রকম তিল ডাক্তার বিশ্বনাথ বাবুর কপালেও আছে।আমার মনে সন্দেহ জাগে যে আততায়ীর পরবর্তী শিকার বিশ্বনাথ বাবু নন তো?কিন্ত না..আমার ধারোনা ভুল।উনি শিকার নন,উনি শিকারি।”
“কী জাতা বলছেন?আমি শিকারি মানে?”
“জাতা বলছিনা। আপনি শিকারি মানে এতদিন ধরে যত গুলি খুন হয়েছে সব আপনারি ক্রিয়া করম।অপেক্ষা করুন।আমি খুলে বলছি। সেদিন রাতে আমি আপনার বাড়িতে যাই।বাড়িতে আপনি তখন ছিলেন না।
আপনার শোবার ঘরে আমি একটি সাদা কালো ছবি দেখতে পাই।সেই ছবিতে ছিল এক জন পুরুষ, একজন মহিলা আর দুটো ছেলে।একটা বড় আর একটা ছোট।আমি আমার ফোনে ছবিটির একটি ফটো তুলে নিই আর সেই বৃদ্ধকে দেখায়।সেই শনাক্ত করে এটা সেই জমিদারের নায়েব আর তার পরিবারের ছবি।আমার আর বুঝতে বাকি থাকলোনা যে আপনিইই নায়েব মশাইয়ের সেই ছোট ছেলে।হরিনারায়ন দত্তের ছেলে বিশ্বনাথ দত্ত।এবার আপনি আমায় কিছুটা সহয়তা করুন বিশ্বনাথ বাবু।”
“আপনি সব মন গড়া কথা বলছেন।কোন ভিত্তিতে আপনি আমায় এই ভাবে দোষারপ করছেন?”
“ওই যে দেখুন..!! ওই ভিত্তিতে।”
বিডি ভিড়ের মধ্যে একজনের দিকে আঙ্গুল দিয়ে নির্দেশ করল।লোকটি এতক্ষন চাঁদর মুড়ি দিয়ে ছিল।বিডির আঙ্গুল তোলার সাথে সাথে লোকটি চাঁদর সরিয়ে ফেললল।তাকে দেখে সকলের চক্ষু চড়ক গাছ।
“এদিকে আয় টনি।বল সবাইকে যা যা তুই শুনেছিস আর দেখেছিস।”
টনি বলতে শুরু করল,
“সেই রাতে ঘটনার পর আমার যখন জ্ঞান হলো,আমি তাকিয়ে দেখলাম আমি একটি বদ্ধ রুমে বন্দি।হাত পা বাঁধা।আর আমার থেকে কিছুটা সামনে একটা তাকে সারি সারি করে সাজানো ষোলটি কাঁচের বৈয়াম, আর তারমধ্যে আছে পনের টি কাটা মাথা।সবগুলি মাথাই একটি তরলে চোবান। যার মধ্যে একটি মাথাকে চিনতে পারলাম।পাঁচু ঘোষ।হঠাৎ কেচ কেচ শব্দ করে ঘরের এক্টি মাত্র দরজা খুলে গেল।দেখলাম একটা লোক শিড়ি বেয়ে নেমে আসছে।আলোর কাছে মুখ আসতেই চিনতে পারি এটা আর কেউ নয় আমাদের বিশ্বনাথ বাবু।”
বিডি বলতে শুরু করল,”আমার বিশ্বনাথ বাবুর উপর সন্দেহ হওয়ার পর ওনাকে ফলো করি।দেখি পর পর দুই রাতে ঠিক একি সময়ে উনি ওনার বাড়িতে পেছনে চলে যান। কালরাতে ওনাকে ফলো করতে গিয়ে জানতে পারি ওনার মাটির নিচের গোপন কক্ষ সম্বন্ধে।যেখানে উনি কালো জাদু চর্চা করতেন।সেখানেই আমি টনিকে পাই।আর কী জন্য জানিনা কাল রাতেই কালো জাদুর মাধ্যমে বিশ্বনাথ বাবু আমাকে মারতে চয়েছিলেন।বাকিটা আপনি বলুন বিশ্বনাথ বাবু।”
বিশ্বনাথ দত্ত বলতে শুরু করল,”হ্যা আমিই সেই নায়েবের ছোট ছেলে।সেই দিন আমি বাড়িতে ছিলাম না বলে আমি বেচে যায়।আমি বাড়ির পুড়ে যাওয়া অংশ থেকে একটা বাক্স পাই।তাতেই আমার পরিবারিক ছবি আর কিছু জিনিস ছিল।আমি শহরে চলে যায়।সেখান থেকে অনেক কষ্টের মধ্যে বড় হয়ে উঠি। হোমিওপ্যাথির উপর ডিগ্রী অর্জন করি।আবার ফিরে আসি এই গ্রামে।অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে এই কদিনে।আমার পূর্বের বাড়ির যায়গাই জমি কিনে আমার নতুন বাড়ি তুলি।একদিন বাড়ির পেছনের বাগান পরিষ্কার করতে গিয়ে পেলাম আমার বাবার সেই কালো জাদু চর্চা করার ঘর।মাটির পাচ হাত নিচে।যার সন্ধান কেউ পাইনি।ঘরটি ষাট বছর ধরে বন্ধ ছিল।ওই ঘর থেকে পাওয়া বাবার লেখা ডায়রি গুলো পড়ে কালো জাদু সম্বন্ধে সব কিছু জানতে পারি।নিজে থেকে শুরু করি আস্তে আস্তে।একটা ডায়রি তে উল্লেখ পাই,যদি সতের জন পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ যাদের কপালের ডানপাশে তিল আছে,তাদের কাটা মাথা দিয়ে যদি শয়তানের আরাধনা করা হয় তবে সেই আরাধক পাবে এক বিশেষ শয়তানি শক্তি।শয়ং শয়তান নেমে আসবে পৃথিবীর বুকে।তবে মাথা গুলি আনতে হবে আটদিন অন্তর অন্তর।আমার ষোল টি খুন সম্পূর্ণ করি এক শক্তিশালি শয়তানি আত্মার মাধ্যমে।আত্মাটি এতটাই হিংস্র ছিল যে প্রত্যেকটা খুন করার সময় সে প্রত্যেকের হাত পা কেটে ফেলত আর মাথাটা আমায় এনে দিত।এর মধ্যে এসে পড়লেন আপনারা। আমার নজর পড়ল আপনার বন্ধুর উপর।ওর ও ডান কপালে তিল আছে।একসাথে দুই পাখি মারব ভেবে আপনাদের ওই দিন রাতে কালো জাদুর মাধ্যমে আক্রমন করি।যাতে আপনিও ভয়ে পালিয়ে যান সাথে আপনার বন্ধুকেউ আমি পেয়ে যাত।কিন্ত আপনি পালালেন না।তাই কাল রাতে আবার আপনাকে মারার চেষ্টা করি।কারন আমি বুঝতে পেরেছিলাম আপনি আমায় সন্দেহ করছেন।কিন্ত আবারো ব্যর্থ হলাম।আজকে আট দিন পূর্ন হচ্ছে।আজই আপনার বন্ধুকে মারার কথা ছিল।আর আমি পেয়ে যেতাম মহা শয়তানি শক্তি।কিন্ত আমার সব চেষ্টায় আপনি জল ঢেলে দিলেন।”
বিডি বলল,
“শয়তানি শক্তি যতই শক্তি শালি হোক না কেন,শুভ শক্তির কাছে সে কিছুই না।ইন্সপেক্টর, নিয়ে যান এনাকে।”
বিশ্বনাথ বলল,
“তার আর দরকার হবেনা।কালো জাদুর এই রিচুয়াল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন না হলে যে এই রিচুয়াল করে তার জীবন হানি ঘটে।আর আমার সেই নির্দিষ্ট সময় শেষ।”
সাথে সাথে যেন আবহাওয়া পরিবর্তন হতে শুরু করল।পরিবেশ ধিরে ধিরে আরো ঠান্ডা হচ্ছে।ঝড় বাতাস বইতে শুরু করেছে।উপরের দিকে ধিরে ধিরে তৈরি হচ্ছে একটি কালো কুন্ডলি।এটি দেখে উপস্থিত সকলে হাহাকার করতে শুরু করে, যে যেদিকে পারছে ছুটে পালাচ্ছে।কুন্ডলিটি ধিরে ধিরে বিশ্বনাথ দত্ত কে তার ভেতরে টেনে নিল।নিয়ে কিছুটা উপরে উঠে শূন্যে মিলিয়ে গেল।তারপর সব শান্ত।
বিডি বলল,”শয়তানের শেষ হলো।অঘোর বাবু,নিন আপনার কেস সলভ।সুন্দরগড় গ্রামে আর কোন খুন হবেনা ”
অঘরর বাবু বললেন,”আপনার খুরধার বুদ্ধি দেখে আমরা সকলেই মুগ্ধ।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।হয়ত আপনি ছাড়া এই রহস্যের সমাধান কোন দিনি হতোনা।”
“এটা আমার কর্তব্য ছিল।অঘোর বাবু হিস্ট্রি রিপিটস ইট সেল্ফ।বিশ্বনাথ বাবুর কালোজাদি চর্চার ঘরটি সহ ওনার বাড়িটও জ্বালিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।শুনেছি উনি অবিবাহিত। সুতরাং ওনার কোন পরিবার নেই।শয়তানের শেষ রাখতে নেই।”
রাতের আধার চিরে দাও দাও করে জ্বলে উঠল বিশ্বনাথ ডাক্তারের বাড়ি।সুন্দরগড় গ্রাম এখোন বিপদমুক্ত।
সুন্দরগড়ের ঘটনার পর কেটে গেছে তিনটা মাস।টনি বালকনিতে বসে পেপার পড়ছে।এ সময় বিডি তার পাশে এসে বসল, বলল,
“ফিলিং বোরিং।বোহুত দিন ভালো কেস পাচ্ছিনা।”
টনি একটা হাসি দিয়ে বিডিকে পেপার টা দিয়ে একটা কলাম পড়তে বলল,
“কাশিয়া হিল স্টেশনে আতঙ্ক।এ নিয়ে ঘটল তৃতীয় রহস্যময় খুন।সব গুলো লাশের ই চোখ ওপড়ানো।আর শরিরে অজস্র ক্ষতের দাগ।এক জন আঞ্চলিক ব্যক্তির দাবি এটা নাকি কোন এক পাহড়ি দানোর কাজ যে হাজার বছর পর আবার জেগে উঠেছে।পুলিশ ঘটনাটিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে কিন্ত তারাও এই খুন গুলির কারন সম্বন্ধে জ্ঞাত নয়”
কলামটি পড়ে বিডি টনির দিকে তাকিয়ে সেই বহুল পরিচিত হাসিটি দিল,টনিও প্রতি উত্তরে মুচকি হাসি হাসল।
………………………………………………….(সমাপ্ত)………………………………………………….