মনিং ওয়ার্ক সেরে বাড়ি পৌঁছাতে চৌকিদার সেলাম ঠুকে, হাতে চিঠি তুলে দেয়। দেখলাম প্রনয় চাচার চিঠি । লিখেছে খোকা কেমন আছিস, আমি খুবই অসুস্থ এক বার দেখা করতে চলে আই। তাই সময় নষ্ট না করে রওনা দিলাম। মা-বাবা মারা যাওয়া পর যে ভাবে বড়ো করেছে ভাবলেই কাঁটা দেয়। আমার কারনে বিয়ে-টিয়ে করেনি। পঞ্চান্নটা বছর একা কাটিয়েছে । এইচ.এস পাশ করে প্রনয় চাচা কে ছেড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ঢাকা চলে যাই । ঢাকায় আসার কিছু দিন পরে প্রনয় চাচা সিলেট থেকে বদলি হয়ে মৌলভীবাজার চলে আসেন । এই সব কথা ভাব’তে ভাব’তে ট্রেনে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। শ্রীমঙ্গল আসতেই এক ভদ্র লোক ডাক দেয় দাদাবাবু আপনার স্টেশন চলে এসেছে। ভদ্র লোক কে ধন্যবাদ জানিয়ে,একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম। স্টেশন থেকে প্রায় ১০,১৫ মাইল রাস্তা।
রাত অনেক হয়েছে, তা ছাড়া পাহাড়ি রাস্তা।কোন গড়ি না পেয়ে অটোরিকশা ঠিক করলাম॥ ড্রাইবার কাতর কন্ঠে বলে “আজকের রাত আতঙ্কের রাত” আর এমনি ওই রাস্তা দিয়ে কেউ যাবেনা। ঝামেলা না করে রিকশায় উঠে পড়লাম। কিছু দূর আসতেই চোখে পড়লো ঘন জঙ্গল। বহুবার এসেছি তবু এত সুন্দর জঙ্গল আমার চোখে পড়েনি। কৌতূহল বসত রিকশা থামিয়ে জঙ্গলে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করি। ওই পথে না যাওয়ার জন্য অনুনয়-বিনয় করতে থাকে। আর বলতে লাগলো আজ এর দিনে এই “জঙ্গল তৈরি হয় , পরের দিন লুপ্ত হয়ে যায়” উচ্চকন্ঠে বলে উঠলাম যত সব আজ গুবির গল্প একদিনেই “এত সুন্দর ঘন জঙ্গল তৈরি হয় , আর পরের দিন লুপ্ত হয়ে যায়”।
দু’জনের কথপোকথনের মধ্যে কিছু কুকুর বিদ্রুপ আচরণ করতে তাকে সামনে।দেখে রিকশাচালক বলে নিশ্চয় ভয়ের আশাঙ্কা বিরক্ত হয়ে অবশেষ বলে উঠলাম “তুমি ফিরে যাও” ।বাবু এই জঙ্গল একা ফেলে কি ভাবে চলে যায় ।
শুনেছি গ্রামের লোকের মনটা ভালো হয়। তার আচরণে আনন্দের সাথে দু’জন জঙ্গলের দিকে অগ্রসর হলাম। ড্রাইবার মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকে।কিছু দূর যাওয়ার পরে বলে উঠে “স্থানটি সুবিধের নয়”। সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠলাম “কোন স্থানটির কথা বলছেন” ওই দিকের পুকুরের কথা। ওখানে অনেক রকম মাছ আর বিভিন্ন ধরনের ফুল আছে। ইতিমধ্যে আকাশটা কালো মেঘে পরিণত হয়েছে। চাঁদ প্রায় বিলুপ্ত। পুকুর দেখে মনে হচ্ছিল হাতের কাছে স্বর্গ পেলাম। পুকুর পাড়ে বসে পকেট থেকে সিগারেট ও দেশলায় বার করে, সিগারেট ধরিয়ে মিষ্টি টান দিয়ে দেখতে থাকি পাখি দের মাছের সাথে লড়াই। নানা ধরনের ফুল। তৎখনাত ঠান্ডা বাতাসের সাথে মুসলধারে বৃষ্টির সৃষ্টি করলো। নিরুপায়ে দৌড়াতে শুরু করলাম। অদূরে একটি জীর্ণ বাড়ি দেখতে পেলাম। সে খানে আশ্রয় নিলাম। আমনি একদল জন্তুর গর্জন কানে এসে পৌঁছালো , ভয়ে ভয়ে জিঞ্জাস করলাম এটা কিসের শব্দ। রিকশাচালক বলে বাবু এই খান থেকে চলুন নয়তো ওরা যে কোনো সময়ে “ঝাপিয়ে পড়তে পারে”। ফলে স্থানটি থেকে সরে গিয়ে শিমুল গাছের কবর স্থানে আশ্রয় নিলাম। আশ্রয় নেওয়ার সাথে সাথে রিকশাচালক এর দিকে আর তাকাতে পারছিনা। তার “চোখ দিয়ে জ্বালন কাঠের আগুন বেরুতে থাকে। “কিরন বলেছিলাম আজকের রাতটা খুবই বিপদ জনক” এই বলে উধাও।আমি নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছি না। একটু আগে যা দেখলাম সেটা কি সত্যি আমার সাথে ঘটেছে।
আমি নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছি না। একটু আগে যা দেখলাম সেটা কি সত্যি আমার সাথে ঘটেছে।তার কয়েক মিনিট পরে ঝড় বৃষ্টি কমলে সেই খান থেকে বেরিয়ে পড়ি। বেশ কয়েক বার এসেছি বলে রাস্তা ভুলের সম্ভবনা ছিলোনা। ঘুট ঘুট অন্ধকারে জনহীন এলাকাতে একা তাই বুকটা দুরু-দুরু করে কাঁপছিলো। একটু আগে যাকে দেখলাম সে কি মানুষ , না দানব। দানব হলেই বা আমাকে ছেড়ে দিল কেন???
পরে অনেক কষ্টে বাসায় পৌছালাম
সেই রাতে ঘুমটা ঠিক মতো হয়নি। মিষ্টি চা এর সাথে ঘুমটা ভাঙ্গলো। চাচা কে দেখে মনে হচ্ছে না সে অসুস্থ তবে অসুস্থের নাম করে চিঠি পাঠালেন কেন। বলাম তোমার কি হয়েছে।কিছু না কেন, কেন আবার কি আমাকে চিঠি তে লিখে ছিলে তুমি অসুস্থ। আমি তোকে কোন চিঠি পাঠাইনি। এই শুনে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলাম তার মুখের দিকে।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে। বারান্দায় বসে গল্প পড় ছিলাম। আবার সেই কন্ঠ ভেসে ওঠল। এবার ভয় না পেয়ে উচ্চ কন্ঠে বলে উঠলাম “কে তুমি ?? আমাকে ভয় দেখাচ্ছো কেন ?? সাহস থাকলে সামনে এসো।”
কয়েক মিনিট নিস্তব্দ থাকার পর,আমার চারপাশে যেন ভূমিকম্প শুরু হয়েছিল। দরজা গুলো বাতাসের সাথে ধাক্কা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার পাশে উপস্থিত হল কঙ্কাল দেহ। “কে তুমি” আমি তো তোমার কোন ক্ষতি করিনি। ক্ষতি করোনি বটে। তবে এই ভাবে ভয় দেখাচ্ছো কেন। ভয় নেই আমি তোর কোন ক্ষতি করবো না। আমি তোর কাছে সাহায্য চাইতে এসেছি। কাজের মেয়ে রীতা আসতেই সে উধাও। “দাদাবাবু আপনার ঔষধ” মৃদু কন্ঠে বলাম টেবিলের উপর রেখে যা।
তারপর বেশ কয়েক দিন ওই আত্মা না আসলেও ঘুমের মধ্যে বেশ কয়েক বার গেছি সেই “শিমুল গাছের কবর স্থানের কাছে”।
সেখানে গিয়ে তাকিয়ে থাকলাম কবরটার দিকে। কবরটা কিছু যেন বলতে চাইতো। এই ভাবে কয়েক দিন যাওয়ার পর।ওই কবর স্থানে একা গিয়েছিলাম। “কে তুমি”? আর আমার কাছে কি সাহায্য চাই। তীব্র বেগে বাতাসের সাথে এসে উপস্থিত কঙ্কাল দেহ। কঙ্কাল দেহটা আমার বন্ধু রাহুলের রূপ নেয়। মাথায় হাত রেখে বলাম “তুই, এই অবস্থা কি করে হয়েছে।” আমি তোকে অনেক “চিঠি পাঠিয়েছি কিন্তু কোন উওর পায়নি।” সে বলে উঠল “কর্মের চাপে বিরক্ত হয়ে, শ্রীমঙ্গল ঘুরতে বেরিয়ে পড়লাম।” বেশ অনন্দে কাটছিল। এক রাএিবেলা বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে কয়েকটা লোক “টাকা ছিনতাই তাদের বাধা দিলে আমায় হত্যা করে। কবরে পুঁতে দেয়।” তবে বিশ্বাস কর আমি মরে “ভূত হলেও, আমার হত্যাকারি দের ছাড়া কখনো কারো ক্ষতি করিনি।” তুই আমাকে সাহায্য করতে পারবি। তাই ওই চিঠি প্রনয় চাচার নামে তোকে পাঠায়। আমতা আমতা করে বলে উঠলাম কি সাহায্য। “কবর থেকে কঙ্কাল দেহটা পুড়িয়ে, অস্থি বিসর্জন করলে আমার আত্মা মুক্তি পাবে।” পরের দিন তাঁর কথা মতো সব কিছু করি। ফলে তাঁর অাত্মা আর আর কোনো দিন আসেনা। আর “আতঙ্কের রাত” থেকে শ্রীমঙ্গলের এই পাহার মুক্তি পায়।