নাম কি আপনার?
-হামিদুর রহমান।
বয়স ?
-৫০।
না ৫৫।
এবার বলুন হামিদ সাহেব আপনার সমস্যার কথা বলুন?
হামিদ সাহেব ইতস্তত করছেন।যে লোক সামনে বসে আছে সে পেশায় একজন সাইক্রিয়াটিস্ট।
এমন এক জনের কাছে আসতে কেমন জানি লাগে।আমাদের সমাজ এখনো এ রোগটাকে কটাক্ষ করে বলেই হয়তো আপনি নিসংকোচে বলতে পারেন।
-আমি পেশায় একজন শিক্ষক ।বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে আগ্রহ আছে।ছাত্রদের বিজ্ঞান এর সাথে পরিচয় করিয়ে দি।কিন্তু আজ আমি নিজে খুব বিভ্রান্ত।
বলুন,বলতে থাকুন।
-আমি মানুষের কথা বুজতে পারি।
মানুষ তো মানুষের কথা বুজতে পারেই তাই নয় কি?
-না।আমি আসলে মানুষের মনের কথা বুজতে পারি।শুধু তাই নয় ,আমি আসলে ,আসলে তাদের কে সে কথা বলতেও দেখি।
মিজান চমকে যায় ।এই নিয়ে আজ দিনে দ্ধিতীয় বার একই কেসের সম্মুখীন হতে হলো।আগের জন একটা মেয়ে।
কখন বিষয়টা ধরতে পারলেন।
-কয়েক মাস আগ হতে।
আমি প্রথমে পার্থক্য করতে পারতাম না।বিভ্রান্ত হতাম একই ব্যক্তির দুই কথায়।প্রথম ঘটে এক ছাত্রের সাথে।
সে আমার বাসায় আসে।এক দিন না আসার কারন হিসাবে সে বললো জ্বর ছিল,আবার বললো ফ্রেন্ড রা মিলে সিনেমা দেখতে গেছে।
আমি ধরতে পারলাম না।
-পরে কখন বুজলেন যে আপনি আসলে যা শুনছেন তা মনের কথা?
আমি কয়েকটা পরীক্ষা করলাম।কয়েকটা ছাত্রকে পড়ায়। তাদের দিয়ে শুরু ।ব্যাপারটা বুজতে পারলাম।
আস্তে আস্তে পার্থক্য বুজতে পারলাম।মজা লাগত ।এখন বিষয়টা মজা লাগছে না।কারন আমি এখন সারাক্ষন মনের কথা বুজতে চেষ্টা করি।
জিনিসটা করতে গিয়ে অনেক বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।
কাল মেয়েটা কে জিজ্ঞেস করলাম তার কোন পছন্দ আছে কিনা বিয়ের কথা বার্তা চলছে।মেয়ে মুখে বলে নাই মনে মনে বলে অন্য কথা।
একটা বাপের জন্য লজ্জা!!!!
মিজান নিশির কথা ভাবলো ।সেও সকালে একই কথা বলে গেছে। কলেজ জীবনের ফ্রেন্ড।
আজ অনেক দিন পর দেখা।প্রথমে দেখার পর মিজান ভেবেছিল সদ্য পাশ করা মিজানের সাথে দেখা করতে এসেছে নিশি।
নিশির সাথে শেষ সেশনটার কথা ভেবে বিব্রত হলো।
-নিশি কে ?
আজ মিজান এর চমকানোর দিন ।নিশির পর একই ভাবে চমকে দিয়ে চলেছে হামিদ সাহেব।
-নিশিকে আপনি ভালবাসেন।কথাটা ঠিক ?
মিজান হামিদ সাহেবকে কালকে আসতে বললো।আজ আর ভাল লাগছে না তার।
আজ সিগারেট বেশি খাচ্ছে মিজান।ফুল মেসরুম ধোঁয়াচ্ছন্ন।ঢাকায় একা থাকে।মা ,বাবা গ্রামে থাকে।এখনো বিয়ে করে নি সে।
আজকের দুইটা কেস নিয়ে চিন্তা করছে সে।বিষয়টা কি কাকতালীয় ।
একই রোগ -মনের কথা বুঝতে পারা।প্রথমে কলেজ লাইফের সুন্দরী বান্ধবী নিশি। যাকে একসময় ভাল লাগতো ।
আজ বহুদিন পর দেখা ।এক সমস্যায় পড়ে আবার তাদের সাক্ষাত।নিশিকে আজও ভাল লাগলো ।আগের চেয়েও বেশি।
নিশি তুমি কি আমার মনের কথা ধরতে পারো ?
-তুমি রাগ করবে?
না , আমি তোমার ডাক্তার নয়,বন্ধু।
তোমার মন বলছে তুমি আমায় ভালবাসো।
তারপর হামিদ সাহেব ।একই রোগ । আবারও একই কথা ।নিতান্ত কাকতালীয়??
মিজান দুজনের ফাইল চেক করলো ।বাসার ঠিকানায় চোখ আটকে গেলো। কাকতালীয় নয় তাহলে।
বাবা মেয়ে বসে আছে সামনে।মিজান কি বলবে বুঝতে পারছে না।নিশি মুখ চেপে হাসছে।
নিজের মেয়ের পছন্দের ছেলেকে বিয়েতে রাজি করাতে এমন অভিনব ফন্দি এঁটে এখন হামিদ সাহেব গম্ভির হয়ে আছেন।
আজ ২৬শে সেপ্টেম্বর ।হামিদ সাহেবের বাড়ি আজ আলোকৎজ্জ্বল ।তার একমাত্র কন্যা নিশির আজ বিয়ে।বর সাইক্রিয়টিস্ট মিজানুর রহমান।
-নিশি , আইডিয়াটা কার ছিল ?
বাবার ।
-উনি জানতেন তুমি একজনকে পছন্দ করো?
আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল ।আমি তো তখন ভাবলাম তুমি আমায় ভুলেই গেছো ।বাবাকে বললাম না পছন্দ নাই।
বাবা বললেন না তুমি একজনকে পছন্দ করো ।এমনকি তোমার নামও বল্লো।বাবা বোধ হয় খোঁজ নিয়েছিল ।
মিজান হামিদ সাহেব এর দিকে তাকালো ।অতিথিদের নিয়ে ব্যস্ত মানুষট বোধ হয় আসলেই মনের কথা বুজতে পারেন।
হামিদ সাহেব হঠাত মিজানের দিকে তাকিয়ে হাসলেন।