“নিলয় বাবু..! নিলয় বাবু..!
অফিসে বসে পত্রিকা পড়ছি। আর গরম ধোয়া ওঠা কফি খাচ্ছি। প্রথম পাতা পড়া শেষ করেই দ্বিতীয় পাতা উলটিয়ে যেই পড়া শুরু করতে যাবো তখনি আমার নাম ধরে কেউ ডাকলো। আমি পেপার থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি একজন সাদা পান্জাবি ও ধুতি পরিহিত দাঁড়িওয়ালা লোক। আমি ভদ্রতার সহীত তাকিয়ে বললাম…
– কে আপনি? আর এভাবে হাফাচ্ছেন কেনো?
– এক গ্লাস পানি হবে নিলয় বাবু?
– হুমম অবশ্যই হবে। এই মধু, ভদ্রলোকটাকে এক গ্লাস পানি দে। সাথে কিছু শুকনো খাবার আর কফি পাঠিয়ে দে।
.
লোকটা হাফাতে হাফাতে পানিটুকু এক চুমুকেই খেয়ে নিল। আমি ওনাকে বসতে বললাম। আমার দিকে তাকিয়ে বেশ ভয়ার্ত দৃষ্টিতে বললো..
– আমাকে বাঁচান নিলয় বাবু। আমাকে প্লীজ বাঁচান।
– কি হয়েছে আর আপনার নাম?
– আমি হলাম, শম্ভুনাথ। আপনি তো এখন নতুন মানুষ তাই আমাকে হয়ত চিনবেন না। আমিই সেই শম্ভুনাথ যে কি না একসময় সিনেমা করতাম।
– আরে আপনি, আপনার নাম আমি শুনেছি। আর আসলে এই শহরে নতুন তো তাই খুব একটা কাউকে চিনি না। এখন বলুন কি হয়েছে? এভাবে হাঁপাচ্ছেন কেনো?
শম্ভুনাথ বাবু চুপ হয়ে বসে আবারো তাড়াতাড়ি করে বলতে লাগল..
– আমাকে বাঁচান বাবু, ঐ কুমির আমাকে মেরে ফেলবে।
– কুমির? (অর্ক)
আমি বলার আগেই অর্ক এসে কথাটি বললো। আমিও সাথে সাথে বললাম..”কুমির”?? কিন্তু কথাটার মানে বুঝলাম না।
– হুম নিলয় বাবু, ঐ কুমির, ঐ কুমির দেবতা আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে বাঁচান বাবু। আমাকে প্লীজ বাঁচান।
– আচ্ছা আচ্ছা, আমি দেখছি ব্যাপারটা। এখন বলুন তো কি হয়েছে?
.
আমি আর অর্ক বাংলাদেশ হতে কলকাতায় এসেছি। ঢাকা অফিস আমাদের এখানে বদলি করে দিয়েছে। BDC (বাংলাদেশ ডিডেকটিভ কমিটি) অফিস হতে ইন্ডিয়ার শহর কলকাতাতে পাঠিয়েছে মাত্র দুইমাস হল। তাই এখানকার অনেককিছুই চিনিনা।
.
– শম্ভুনাথ বাবু বলুন কি হয়েছিল? (আমি)
– আসলে নিলয় বাবু, সেদিন ছিল রাত নটা নাগাদ। বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। রঘুনাথ কে বললাম..
“রঘুনাথ, আমাকে এক কাপ চা করে দিয়ে যা বাবা”
“ঠিক আছে বাবু, আমি এখনি নিয়ে আসছি”
রঘুনাথ চা করে আনল। ও চা করে দিয়ে চলে যাবার পর বৃষ্টিটা একটু বেড়ে গেল। আমি উঠে পাশের টেবিলে থাকা রেডিওটা চালু করে দিয়ে আবার চেয়ারে এসে বসলাম। রবীন্দ্র সঙ্গীত একটা শেষ হতেই পরেরটা শুরু হবে ঠিক সেসময় রেডিওতে শুনলাম..
“শম্ভুনাথ, কাজটা তুই ঠিক করিসনি। তোকে তার জন্য এই কুমির দেবতাকে খেসারত দিতে হবে”
নিলয় বাবু, আমি কথাটি শুনেই চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠি। সঙ্গে সঙ্গে রেডিওটা অফ করে দিই। আমি তখন ভয় আর হতভম্ভ হয়ে চারিদিকে তাকিয়ে দেখছি। ঠিক তখনি দেখি আমার বাড়ির উঠানে একটি বড় কিছুর ছায়া। পর্দা সরাতেি চোখ আমার ছানাবড়া। আমি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলাম একটি কুমির আমার বাড়ির উঠানে এসে দাঁড়িয়ে আছে। আমি একটি চিৎকার করে অঙ্গান হয়ে যায়।
তারপর যখন ঘুম ভাঙে তখন দেখি আমার আমার বিছানাতে শুয়ে আছি। পাশে রঘুনাথ দাঁড়িয়ে ডাকছে আমাকে।
“বাবু কি হয়েছে আপনার”
“কুমির? সেই কুমির কোথায়?”
“কিসের কুমির বাবু”
“কাল রাতে এসেছিল”
“জানিনা বাবু আমি তো আপনার চিৎকার শুনেই এসেছি। ওহ আপনার জন্য কেউ একজন উপহার পাঠিয়েছে”
“উপহার? কিসের উপহার? আচ্ছা নিয়ে আসো”
রঘুনাথ দৌড়ে উপহারের বাক্সটি আনতে গেল। আমি কাল রাতের কথা ভাবছি। তখনি রঘুনাথ ডাকলো..
“বাবু এই নিন আপনার উপহার”
আমি উপহারের বাক্সটি খুলেই ভয় পেয়ে যায়। কারন সেখানে ছিল কুমিরের দাঁত। যা কাল রাতে আমি আমার বাড়ির উঠানে আসা কুমিরটাতে দেখেছিলাম। তারপরই আপনার কাছে আসা। আপনার নাম অনেক শুনেছি। প্লীজ আমাকে বাঁচান।
.
আমি আর অর্ক দুজন দুজনার দিকে তাকালাম শম্ভুনাথ এর কথা শুনে। দুজনেই অবাক হলাম। মাথায় কিছুই আসছে না। অর্ক তো আজগুবি কথা ভেঁবে হাসার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনি আমি ইশারাতে থামিয়ে দিয়ে বললাম…
– আচ্ছা বুঝলাম শম্ভ বাবু। কিন্তু কুমির কোথা থেকে আসবে?
– আসলে বেশ কিছুদিন আগে আমরা এক জঙ্গলে পিকনিক করতে যায়। আর সেখানে একটি ছোট জলাশয় থাকে। সেই জলাশয়ে একটি কুমির ছিল যা আমি আমার বন্দুক দিয়ে গুলি করে মেরে ফেলি। (শম্ভুনাথ)
– ওহ আচ্ছা বুঝলাম। ঠিক আছে চলুন তাহলে আপনাদের বাসায় যাওয়া যাক।
আমি আর অর্ক শম্ভুনাথ এর বাসায় গেলাম। বাড়ির উঠানে আসতেই চোখ গেল কাল রাতে বৃষ্টি হওয়া কাঁদার দিকে। কারন ঐ কাঁদায় কুমিরের পায়ের ছাপ পড়ে আছে। অর্ক তার ছবি নিলো। আমরা ভিতরে প্রবেশ করলাম।
– ওটাই কি সেই রেডিও? (অর্ক)
– হুমম, কাল রাতে ওটাই বেজে উঠেছিল।
অর্ক কোনো কথা বললো না। সোজা হেটে রেডিওটি চালু করতেই রবীন্দ্র সঙ্গীত বেজে উঠল।
– কই সেই আওয়াজ? (অর্ক)
– কাল রাতেই তো এটা বেজে উঠেছিল।
– আচ্ছা বাড়িতে আর কে কে থাকে? (আমি)
– কেউ না। আমি আর রঘু থাকি। ও আমার বাড়িতেই কাজ করে।
– রঘুকে ডাকুন।
রঘু আসলো। সাজগোজ দেখে বুঝলাম এ পান্জাবি। এর মু্খেও কালো দাঁড়ি। পা থেকে মাথা অবদি ভালো করে দেখে নিলাম।
– তোমার নামই রঘু? (অর্ক)
– হুমম বাবু।
– কতদিন হল এখানে কাজ করো?
– ৬ বছর হল। কেনো বাবু?
– কাল বৃষ্টি হচ্ছিলো সেসময় কোথায় ছিলে? (আমি)
– আমি তো আমার ঘরে কেবল শোবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি তখনি বাবু চিৎকার করে ওঠে। তারপর এসে দেখি উনি অঙ্গান হয়ে পড়ে যান। বাইরে তাকিয়ে দেখি একটি ইয়া বড় কুমির চলে যাচ্ছে হেঁটে হেঁটে।
– স্ট্রেন্জ। কুমিরও আজকাল বৃষ্টি হলে চলে আসে? তা রেডিওতে একটা ভয়েস রেকর্ড ছিল তুমি কি জানো? (অর্ক)
– নাহ বাবু, রেডিও কি ঠিক ভালোভাবে বুঝিনা আমি। আমি তো কাজ করেই খাই।
– এখানে কাজ করার আগে কি করতে? (আমি)
– কিছু না। সুখেয় ছিলাম কিন্তু কলেরায় সবাই মারা যাওয়াতে আমি কাজ করে খাই।
– ওহ আচ্ছা ওকে যাও।
ভালোভাবে দতদারকি করার পর কুমিরের দাঁতগুলো সাথে নিয়ে চলে আসলাম। ব্যাপারটা কেমন যেন। এটা নেহাত মানুষের কাজ সেটা বেশ বুঝতে পারছি। কারন সহজ ব্যাপার, কুমির কখনও কথা বলতে পারে না। কুমির কখনো বাড়িতে এসে ভয় দেখাতে পারে না। কুমির কখনও ওর দাঁত গিফট করে চমকে দিতে পারে না।
– অর্ক, এটা কিন্তু মানুষেরই কাজ। (আমি)
– হুমম তা ঠিক। কারন মানুৃষই পারে এমন করতে।
– কিন্তু কে হতে পারে?
– কে আবার? শম্ভুনাথ এর কোনো শত্রু হবে। কেউ হয়ত তার প্রতিশোধ নেবার জন্যই এমন করছে।
– ঠিক বলেছিস। চল খোজ লাগায়।
কথাগুলো বলতে বলতে আবারো শম্ভুনাথ এর বাড়িতে আসলাম। ওনাকে এসেই প্রশ্ন করলাম..
– আচ্ছা আপনার কি কোনো পূরোনো শত্রু আছে?
– পূরোনো শত্র? আমি তো সিনেমা করতাম তো আমার শত্রু কে থাকবে শুনি?
– কেউ নাই। মনে করার চেষ্টা করুন এমন কেউ আছে নাকি?
– নাহ তো এমন কেউ নেই। না না মনে পড়েছে..রমেশ ভট্টাচার্য বলে একজন নায়ক ছিলো। তার সাথে আমার ছোট খাটো বিষয় নিয়ে ঝামেলা হতো। কিন্তু সে তো আজ ৮ বছর নিরুদ্দেশ। মানে তার খোজ কেউই জানে না।
– আচ্ছা। বুঝলাম। (অর্ক)
আমরা আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসলাম। আসার আগে শম্ভুনাথ কে বললাম..
– আচ্ছা আপনার কোনো পার্সোনাল ডায়েরি আছে। যেটাতে রোজকার কথা লিখে রাখেন? (আমি)
– হুমম আছে তো।
– দিন আমাদের। হয়ত এমন কিছু শত্রুর খোজ পেতে পারি যা আপনার মনে নেই।
– ওকে আনছি দাঁড়ান।
.
আমরা ডায়েরি নিয়ে চলে আসলাম। এ দিকে দুপুর হয়ে গেছে। অফিসে এসে অর্ক ফ্রেশ হতে চলে গেল। মনে মনে ভাবলাম কে হতে পারে এমন? যে কিনা কুমির সেজে আসছে। আচ্ছা ইন্টারনেট ঘেটেও তো দেখতে পারি এমন কোনো কুমির আছে নাকি?
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে গুগলে যেয়ে “কুমির দেবতা” বলে সার্চ দিতেই আমি বেশ অবাক হলাম। কারন কুমিরের দেবতা আছে নাকি সেটা জানার জন্য সার্চ দিলাম কিন্তু আসলো কুমির দেবতা মুভি? ১৯৮৯ সালে তৈরী করা হয়েছে মুভিটা। মুভিটা প্লে করতেই দেখলাম শম্ভুনাথ তাতে নায়ক। তার মানে? শম্ভুনাথই এসব বানিয়ে বোকা বানিয়েছে আমাদের?
ফোন রেখে সাথে আনা শম্ভু বাবুর ডায়েরিটা ঘাটলাম। ডায়েরি পড়তে পড়তে প্রায় শেষের দিকে এসে আমি আরো চমকে উঠলাম। কারন সেখানে লেখা..
“আজ কুমির দেবতা নামক ছবি করতে যাচ্ছি। বিষয়টা আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ আর মজাদার। এতটা উত্তেজিত কখনো হয়নি এর আগে। তাই আমি আমার সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করবো।
আজ শুটিং শেষ করে চলে আসলাম। খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করেছি। ছবিটার কিছু পার্ট খুব ভালো লাগল। তা হল..
আমি রুমে থাকবো। বাইরে বৃষ্টি হবে। সেসময় জঙ্গলে হত্যা করা সেই কুমিরটা এসে আমাকে ভয় দেখাবে। গিফট দিবে। রেডিওতে আমাকে ভয় দেখাবে রেকর্ড পাঠিয়ে। আহ এসব কত মজার ঘটনা।
.
কথাগুলো পড়েই কেমন মনে হলো। অর্ককে ডাকলাম। ও আর আমি ছুটলাম আবার শম্ভু বাবুর বাড়ির দিকে। তাড়াতাড়ি বাড়িতে এসেই শম্ভু বাবুকে বললাম.
– ডাকুন তো আপনার রঘুকে।
– জ্বি বাবু বলুন। (এসে কথাটি বললো)
– ঘরে তুমি ছাড়া আর কেউ থাকে না। তাহলে বলো গিফট কে দিয়েছে?
– জানিনা বাবু। আমি তো সকালে যেয়ে দেখি দরজার সামনে এটা পড়ে আছে।
– আচ্ছা..ওকে। তা রেডিওতে ভয়েস রেকর্ড কে করে পাঠিয়েছে?
– তাও জানিনা।
কেমন সন্দেহ হলো রঘুর উপর। কারন কথা বলার সময় সে আমতা আমতা করছে। তাই শুধু মাত্র সন্দেহে বশে বললাম…
– এসব তুমিই করেছো।
– আমি?? না বাবু আমি কেনো করবো?
– হুমম তুমিই করেছো। বাড়ির পাশের একটা ফ্ল্যাটের সিসি ক্যামেরাতে দেখেছি আমরা। ঘটনাটা যখন ঘটে তখন তুমি বাড়ির ছাদে ছিলে। হাতে ছিল তোমার ধারালো অস্ত্র। তারমানে তুমি খুন করতেও চেয়েছিলে? চলো থানাতে।
– না বাবু না। আমি ছাঁদে? সেটা কি করে সম্ভব? আমি তো ঐ সময় উঠানেই শম্ভু বাবুকে ভয় দেখচ্ছিলাম কুমির সেজে।
– হিহিহি..
শম্ভুনাথ অবাকের চোখে তাকিয়ে আছে রঘুর দিকে। আমি আর অর্ক হাসছি। কোনো প্রমান ছাড়াই আজ অপরাধী তার অপরাধ স্বীকার করে নিল।
– এটাই হল আপনার অপরাধী শম্ভুনাথ দেব বাবু।
– রঘু…? তুই..কি করে করলি? কেনো করলি এটা?
– সেটা ঐই বলবে। তার আগে বলুন, ১৯৮৯ সালে আপনি কি ছবি করে ছিলেন? মানে কি নাম ছিলো ছবিটার?
– কেনো নিলয় বাবু? ছবি দিয়ে কি করবেন?
– সবই বলবো। আচ্ছা ছবিটার নাম কি “কুমির দেবতা” ছিল?
– আরে হ্যা তো? ছবিটার নাম কুমির দেবতা ছিল।
– হুমম, সেখানে একটি সিন ছিল যা আপনার সাথেই ঘটেছে। তাই না?
– ঠিক ঠিক, এতদিন কেনো পড়েনি নিলয় বাবু? আর..
– আর কি?
– আর ছবিটা তো রমেশকে করতে দেয়া হয়নি। তাই ঐ দিন আমাকে সে ধাক্কা দিয়ে চলে আসে।
– মানে?
– রমেশ হলো আরেকজন নায়ক। সেও আমার মত ছবি করতো। আমি ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন যাওয়াতে স্বাস্থ্য ভালো আর চেহারা ভালো হওয়াতে সবার নজর আমার উপরেই ছিল। তাই পরিচালক আমাকে দিয়ে কুমির দেবতা নামক ছবিটা করাতে ছেয়েছিল। কিন্তু রমেশ এসে তা বাধা দেয়। সে চেয়েছিল আমি যেন ছবিটা না করি। সে এটা করবে। তাই আমাকে ধাক্কা মেরে হুমকি দিয়ে চলে আসে। তারপর আর তাকে পাওয়া যায়নি।
– হুমম,তার দুই বছর পরই হঠাৎ উদয় হয় আপনার কাছে রঘুনাথ। যে কিনা দুটো রোল করছে। সেই রমেশ আর সেই রঘু আমি কি ঠিক বললাম নাকি ঠিকই বললাম মি. রমেশ?
খানিক্ষন রাগি দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বললো..
– কি করতাম আমি? ছবিটার পরিচালক প্রথমে বলেছিল আমাকে দিয়ে ছবি করাবে। গল্পটা আমারো বেশ পছন্দ হয়। করার জন্য প্রস্তুতও হয়েছিলাম। কিন্তু ব্যাগড়া দেয় এই শম্ভনাথ। সব ছবি যেন ওকে দিয়েই করানোটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে ছিল। তাই সেদিন থেকেই তাকে ভয় দেখানোর জন্য প্ল্যান করে ছদ্মবেশী হয়ে ওর বাড়িতেই কাজ করি। কিন্তু এই আপনারা এসে সবই ঘাটিয়ে দিলেন। আর আপনার সেই সিসি ক্যামেরা। আর কি করতাম আমি? অপমান আর সহ্য হচ্ছিল না। সবার সামনে এই শম্ভুনাথ আমাকেও ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়।
– হিহিহি,,রমেশ বাবু ওখানে কোনো সিসিটিভি ছিল না। সকালে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার সময় আপনার ঘরে উঁকি দিয়েছিলাম। আর সেখানে দেখেছিলাম কুমিরের কস্টিউম। সহজ ভাবে রেখে দিয়েছিলেন আপনি। কারন আপনার ঘরে কেউই আসবে। আর এটাই ছিল আপনার বড় ভূল। আপনিই শম্ভুবাবুর রেডিও তে গানের ফাকে মোটা গলায় রেকর্ড করে চালিয়ে দেন। তারপর গিফট আপনিই নিয়ে আসেন।
– কিন্তু নিলয় বাবু, আপনারা এসব বুঝলেন কি করে?
– কারন কোনো প্রমান ছিল না এর ব্যাপারে। তাই কেবল বাড়িতে দুজন লোক। সেই অনুযায়ী সন্দেহ করাটা স্বাভাবিক। আর গোয়েন্দারা কখনই সন্দেহ ছাড়া থাকে না। তা সে যেয়ই হোক না কেন। আপনাকেই সন্দেহ করেছিলাম। তবুও রঘুর ঘোরে কোনো কারন ছাড়ায় উঁকি দিতেই কুমিরেন কস্টিউম দেখে সন্দেহটা ওর দিকেই বেশি যায়। তায় সেরকম প্রমান না থাকায় ছাদের গল্পটা বানাতে হলো।
– আপনারা না থাকলে যে কি হতো? (শম্ভুনাথ)
– ঠিক আছে। এটাই তো আমাদের দায়িত্ব। আর দেখুন ব্যক্তিগত শত্রুতা আমাদের কতটা হিসমৌন করে তোলে। আপনিও তাকে অপমান করেছিলেন আর সেও আপনাকে ভয় দেখালো। তাই বিষয়টা এখানেই শেষ করুন। সামান্য ব্যাপার নিয়ে পুলিশি ঝামেলাতে না যেয়ে আবার মিলে মিশে থাকুন।
আর নকল পান্জাবি স্টাইল আর দাঁড়িগুলো খুলে ফেলুন রমেশ বাবু।
কথাগুলো বলে চলে আসলাম। কেসটা বেশি জটিল না। কিন্তু এখানে পরিলক্ষিত হয়েছে মনের শত্রুতা। আর এই মনে মনে পুষে রাখা কারো প্রতি রাগ, অভিমান একসময় বড় রকমের শত্রুতা ডেকে আনে। যা খুনের মত খারাপ কাজ করতেও দ্বিধা বোধ কেউ করে না। তাই আমাদের উচিৎ সবার সাথে ভালো ব্যাবহার করা। এতে অজানা শত্রুতা কমে যাবে।
………………………… ………………… (সমাপ্ত) …………………………………