মধ্যরাতের অশরীরী

মধ্যরাতের অশরীরী

মধ্যরাত ।

ঘুটঘুটে অন্ধকার চারদিকে ।
আর সেই অন্ধকার দূর করার জন্য চাদঁটা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে ।

চাঁদের কিঞ্চিৎ আলো জানালা দিয়ে আমার রুমে ঢুকছে । হ্যারিকেনটা মিট মিট করে জ্বলছে টেবিলে । ডায়েরীতে লিখছি আমি । ইদানিং হরর গল্প লেখার খুব ঝোঁক এসেছে মাথায় । অর্ধেক লিখেছি গল্পটা । শেষের দিকটা কিভাবে লিখবো সেটা ভাবতে গিয়ে হঠাৎ মাথায় একটা প্রশ্ন আসলো অশরীরী বলতে আসলেই কি কিছু আছে ? প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাক খেলেও সঠিক উত্তর আমার জানা নেই । মানুষ বলে মধ্যরাতে নাকি শ্মশানে ভূত, প্রেত, অশরীরীরা হেঁটে বেড়ায় । কথাটা কি আদৌ সত্য ?

আমার বাড়ি থেকে একটু দূরেই নদীর পাড়ে একটা শ্মশান আছে । ধীর পায়ে শ্মশানের দিকে হাটঁতে লাগলাম । একটু শীত শীত অনুভূত হচ্ছে বলে একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে নিলাম ।

সম্পূর্ণ জনমানবহীন রাস্তা ।
নদীর পাড় ঘেষেঁ ছোট একটা শ্মশান । কোন রকমে বেড়া দিয়ে বুঝানো হয়েছে এতটুকু শ্মশানের জায়গা । দু’একটা শিয়ালের হাঁক শোনা যাচ্ছে । মানুষ পোড়ার আঁশটে গন্ধ পুরো শ্মশান জুড়ে । দশ মিনিট ধরে হাটঁছি শ্মশানে ।
“নাহ্ , কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি না । তাহলে কি অশরীরী বলে কিছুই নাই?”

বাড়ি ফিরে গেলাম ।

পরদিন দুপুরে কবিরাজ দাদুর সাথে দেখা হল পথে ।
– দাদু , অশরীরী বলতে কি কিছু আছে ?
– আছেই তো ।
– কাল তো মধ্যরাতে আমি শ্মশানে গেলাম । কিছুই তো দেখতে পেলাম না ।
– ওদের কি সবসময় দেখা যায় ? তবে পূর্বপাড়ার পুরাতন ঐ বাড়িটাতে গিয়ে দেখতে পারো ।
দাদু চলে গেলেন ।

সেদিন মধ্যরাত ।
চারিদিক নিশ্চুপ । কালকের মতো আজও চাদর গায়ে জড়িয়ে হাটঁতে লাগলাম । পুরাতন বাড়িটার আশেপাশে আর কোন বাড়ি ঘর নেই । ঝোঁপ জঙ্গলে ভরা চারপাশ । আমি ঝোঁপ জঙ্গল পেরিয়ে বাড়িটাতে ঢুকলাম । বাড়িটার বেড়া, জানালা আর দরজা ভাঙ্গা । বাড়ির ভিতরে কিছুই নেই । শুধু ভাঙ্গা একটা চেয়ার পড়ে আছে । চেয়ারটাতে গিয়ে বসলাম । সম্পূর্ণ নীরব জায়গা । একটা পাখির ডাকও শোনা যাচ্ছে না । দিনের বেলাতেই এই বাড়ির চারপাশ দিয়ে কেউ হাটেঁ না ভয়ে । আর আমি এত রাতে বাড়ির ভিতর ঢুকে বসে আছি । মানুষ শুনলে নির্ঘাৎ আমাকে পাগল বলবে ।
“নাহ্ , বিশ মিনিট তো হয়ে গেল । অদ্ভুত বা ভয়ংকর কিছু তো দেখতে পাচ্ছি না ।”

অগ্যাত বাড়ি ফিরে আসলাম ।
অশরীরী দেখার চিন্তা বাদ দিয়ে অসম্পূর্ণ গল্পের দিকে মন দিলাম । কিন্তু অনেক ভেবেও গল্পের শেষ অংশটা মিলাতে পারলাম না ।
কোন একজন সাহিত্যিক বলেছিলেন,”অনেক সময় লেখার মন মানসিকতা নাকি পরিবেশের উপর নির্ভর করে ।”

কথাটা মনে পড়তেই ভাবলাম যাই নদীর পাড়ের ঐ বট তলাতে যাই । জায়গাটা অনেক নির্জন । তার উপর বটতলা । সম্পূর্ণ ভৌতিক একটা পরিবেশ । ওখানে গেলে হয়তো গল্পের শেষ অংশটা মাথায় আসতে পারে । হ্যারিকেন আর ডায়েরী হাতে গায়ে চাদর জড়িয়ে বটতলার উদ্দেশ্যে হাটঁতে লাগলাম ।

গিয়ে দেখি বটতলাতে চাদর গায়ে দিয়ে বসে কে যেন ডায়েরীতে লিখছে । অবাক হলাম খুব । এত রাতে উনি বটতলায় কি লিখছেন ?
জোর গলায় জিজ্ঞাসা করলাম,”এই যে, আপনি কে ভাই ? এত রাতে এখানে কি করছেন ?”

লোকটা কিছু না বলে সোজা হাটঁতে লাগলো । আমিও লোকটার পিছনে হাটঁতে লাগলাম । হাটঁতে হাটঁতে শ্মশানে চলে আসলাম । কিন্তু লোকটাকে আর দেখতে পেলাম না । হঠাৎ-ই গায়েব হয়ে গেছে যেন । এদিক সেদিক তাকিঁয়ে দেখলাম শ্মশানে নতুন একটা চিতা বানানো হয়েছে ।
আরে আজ আবার কে মরলো ? কারও মৃত্যু সংবাদ তো শুনি নি !! কিন্তু আমার লেখা অসম্পূর্ণ গল্পটা নতুন এই চিতা নিয়েই । চিতাটার দিকে কিছুক্ষণ তাকাতেই গল্পটার শেষ অংশ মাথায় আসতে লাগলো ।

হঠাৎ আমার মনে হল আমার পিছনে কেউ দাড়িঁয়ে আছে । তার নিঃশ্বাসের শব্দ আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি । কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য তার অনুভূতিগুলো কেন যেন আমার অনুভূতিগুলোর সাথে মিলে যাচ্ছে । এই প্রথম ভয়ে আমার শরীর কেপেঁ উঠলো । ধীরে ধীরে পিছনে ফিরে তাকালাম । তাকিঁয়ে দেখি আমার সামনে আমিই ডায়েরী হাতে হাসিমুখে দাড়িঁয়ে আছি । কাপঁতে কাপঁতে আমার হাত থেকে হ্যারিকেন আর ডায়েরীটা পড়ে গেল । আর আমি জ্ঞান হারিঁয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম ।
জ্ঞান ফিরলে চোখ খুলে দেখি আমি আমার ঘরে ।

আজ চাঁদ উঠে নি ।
মেঘে ঢেকে আছে আকাশ ।
ঝিঁ ঝিঁ পোকারা অনবরত ডেকে যাচ্ছে । বাতাস হুঁ হুঁ করে বইছে ।

আর আমি হ্যারিকেনের মৃদু আলোতে লিখছি অসম্পূর্ণ সেই গল্পের শেষ অংশ ; লিখছি মধ্যরাতের অশরীরী গল্পের শেষ অংশ যা আমার চোখের সামনেই ঘটেছে ।

সমাপ্ত……..

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত