ভুড়ি

ভুড়ি

– চিনতে পারছেন আমাকে ?

আলো-আঁধারিতে আমি বিড়বিড় করে তাকাই। ইঁদুরের মতো। মুখ থেকে ‘স্যরি’ শব্দটা ফসকে বের হয়ে যায়। বন্দুকের গুলিকে যেমন ফেরানো যায় না তেমনি মুখ ফসকে বের হওয়া শব্দকেও ফেরানো যায় না।

– চিনবেন কিভাবে ! চোখে পড়েছেন হাজার পাওয়ারের চশমা। সব কিছু তো ঝাপসাই লাগবে।

পা দুটা যেন লিকলিক করছে আমার। কচুর লতির মতো।

– এই আপনি আমাকে Avoid করেছেন। অজুহাত দেখিয়েছেন- মেয়ে কালো,খাটো। অথচ দেখেন চটিজুতো পড়েও আমি আপনার সমান। নিজেইতো বেটে, তাই অন্যকেও বেটে ভাবেন। এক কাজ করেন, পূজোর মেলা থেকে বড় একটা আয়না কিনেন তারপর নিজের গণেশমার্কা ভুড়িটা দেখেন। তখন নিজের সম্পর্কে একটা ধারনা পাবেন। বুঝছেন।

কথা শেষ করে অথবা না করে আমাকে ধুম্রজালে আটকে ফেলে শনশন করে চলে যায় সে। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। পূজামন্ডপ জুড়ে বাদ্যধ্বনির ঝংকার আর ধুপ-ধোঁয়ার মাঝে সে যেন বিলীন হয়ে যায়। আমি বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে থাকি। ভাবি- এ কেমন অপমান, এ কেমন অপবাদ।

আমার কনিষ্ঠা ধরে ‘বাবা’ বলে টান দেয় নির্ঝর। আমার একমাত্র ছেলে। পূজার অঞ্জলী শেষে তার মাকে বলে – মা, একটা অান্টি এসে বাবাকে বলে বাবার নাকি গণেশমার্কা ভুড়ি।

সোহানীর শ্বেতমুখ লাল হয়ে উঠে। বিড়বিড় করে বলে- ছিঃ বাবা, এমন বলতে নেই।
-ঐ আন্টি যে বললো।
-উনি মিথ্যে বলছে বাবা।

সোহানী আমার দিকে টগবগ চোখে তাকায়। যেন এখনই অসুর বধ করবে।

আর যাই হোক মেয়েরা তার স্বামীর অপমান সহ্য করতে পারে না। নিজেরা জ্বালাবে, পোড়াবে, কিন্তু পরনারীর অবজ্ঞা মেনে নিবে না। এই না পারার মাঝে ভালবাসা জড়িত। ভাললাগা জড়িত। দুর্বলতা জড়িত।
না হয় যে সোহানী আমার ভুড়ি নিয়ে টিটকারি করে সেই সোহানী কেন আমার অপমানে এমন রক্তিমবর্ণ ধারন করবে !

বাসায় এসে বড় একটা আয়নার সামনে দাঁড়াই। নড়েচড়ে কালো শরীর আর ভুড়িটা দেখার চেষ্টা করি। কই, আমার শরীর তো কার্ত্তিকের মতোই চিপচাপ । যত্তসব মিথ্যে অপবাদ ! কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ঐ মেয়েটার রুদ্রমূর্তি ভেসে উঠছে আয়নায় !

ঐ পাশ থেকে তীব্র আওয়াজ কানে আসছে- কত করে বলি শরীরের দিকে একটু নজর দাও। না, আমার কথা কানে যায় না। এভাবে ঘাটে ঘাটে অপমানিত হলে বুঝবে, ভুড়ির কী জ্বালা।

আমি সোহানীকে বলি, তবে শোনো আসল ঘটনা। তোমার সাথে যখন আমার মন দেয়া-নেয়া চলছে তখনই আসে ঐ মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব। আমি ক্যামনে রাজি হই বলো ? একটা অজুহাতে তো প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়া দরকার। না হয় তোমাকেই যে হারাতে হবে। আমি যেভাবে মেয়েটাকে ফিরিয়ে দিলাম তাতে সে আমাকে রাগে-‍দুঃখে ভুড়িয়ালা বলবে নাকি হাল আমলের থ্রীপ্যাক বডির নায়ক বলবে- তুমিই বলো।

সোহানী হাসে। মিটমিট করে হাসে।হাসিতে যেন মুক্ত ঝরছে। এই হাসির কাছে পূজামন্ডপের লাইটিংও যেন হার মানবে আজ।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প · হাস্যরস
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত