তোমাকেই ফিরে পাওয়া

তোমাকেই ফিরে পাওয়া

( এটা কোন গল্প নয় যেন তোমাকেই ফিরে পাওয়া )

সূর্য ডুবে ডুবে ভাব। সন্ধার আবির্ভাব। ইট পাথরের শহরের লাইটগুলো জলতে শুরু করেছে। আমি অফিস শেষ করে ছুটে চলেছি আমার গন্তব্যে। ফুটপাত ধরে হেটে যেতে মন্দ লাগছে না। আগে এ পরিবেশটা আমার কাছে একদম ভালো লাগতো না। তবে বেচে থাকার তাগিদে মানিয়ে নিয়েছি।
এসব ভাবতে ভাবতে কিছুটা আনমনা হয়ে গেছিলাম হঠাৎ কারো চিতকার শুনতে পেলাম

=ওই দেখে চলতে পারেননা?
ভাবনার জগতে এতটাই ডুবে ছিলাম যে একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খেয়েছি বুঝতেই পারিনি।
আমি=সরি সরি সরি আমি আসলে বুঝতে পারিনি।
=আবির তুমি????
মেয়েটার মুখে আমার নাম শুনে খানিকটা অবাক হলাম। কারন এখানে আমার কোনো মেয়ের সাথে পরিচয় নেই। আর আমার অফিসে কোনো মেয়ে কলিগও নেই। তাই ভালো করে মেয়েটাকে দেখার চেষ্টা করলাম।ওর মুখের দিকে তাকিয়েই আমি যেন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।

আমি:অধরা তু—তু—-তুমি!!!
=চিনতে পেরেছো তাহলে।আমিতো ভাবলাম হয়ত চিনবে না?
নিজেকে একটু সামলে নিলাম,
=আরে নাহ,, চিনবো না কেন? তা কেমন আছো?
=ভালো। তুমি কেমন আছো?
=এইত চলছে। তা এখানে কবে এলে?
=৪-৫দিন হলো এসেছি। তুমি কতদিন থেকে এখানে।
=এইত বছর দুই। তা বেড়াতে এসেছো না কি?
=না বাবার বদলি হয়েছে তাই স্ববপরিবারে এখানে চলে এসেছি। তুমি কি করো এখানে?
=এইত প্রাইভেট কম্পানিতে একটা চাকরি পেয়েছি বর্তমান সেটাই করছি।
=তা সেদিন কিছু না বলে চলে এসেছিলে কেন?
=ওই কথাগুলো না হয় পরে একদিন বলব। এখন খুব ক্লান্ত আমি বাসায় যেতে হবে। তোমারর ফোন নাম্বারটা কি পাওয়া যাবে?
=আরে এভাবে বলছো কেন? তোমার ফোনটা দাও।
মোবাইলটা নিয়ে নাম্বার সেভ করে অধরা চলে গেল। আমিও চলে আসলাম বাসায়।

রাতে শুয়ে শুয়ে সেই ৪ বছর আগের স্মৃতি গুলো ঘেটে চলেছি।

আমি তখন ইন্টার শেষ করে অনার্সে নতুন ভর্তি হয়েছি।

কলেজে প্রথম দিনই লাইব্রেরিতে দেখা হয় অধরার সাথে। আমার গল্পের বই পড়তে খুব ভালো লাগতো তাই সবসময় গল্পের বই পড়তাম।
আমি একটা বই পড়ছিলাম অধরা এসেই সেই বইটা আমার হাত থেকে নিয়ে নিলো।
আমি:বইটা নিলেন কেন?
সে:বইটা আমি অর্ধেক পড়েছি আর অর্ধেক পড়ব তারপর বইটা পাবে।
আমি কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসি।
আসলে কারো সাথে ঝগড়া করতে আমার একদম ভালো লাগেনানা।

পরের দিন একা একা ক্যাম্পাসে বসে আছি। কোথা থেকে মেয়েটা এসে আমার পাশে বসল। আমি উঠে আসতে যাব তখনি
সে:আসলে কালকের জন্য আমি দুঃখিত।
আমি:না না ঠিক আছে।
=আমি জানি আপনি আমার উপর রেগে আছেন
=না আমি রেগে নেই।
=তাহলে আমরা আজ থেকে বন্ধু (হাত বাড়িয়ে দিলো)
=আচ্ছা।
=আমি অধরা
=আমি আবির।

এভাবেই শুরু হয় অধরা আর আমার বন্ধুত্ব।
সব সময় আমার পিছনে লেগে থাকা ছিলো ওর কাজ। সারাক্ষন আমাকে জালালাতন করত।আমি কিছু বলতাম না কেন যানি ওর জালাতন গুলোই ভালো লাগত আমার।

এভাবেই কেটে যায় ২ টা বছর। আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারি আমি অধরার মায়ায় আটকে গেছি। কিন্তু বন্ধুতের কারনে সেটা আমার মনের মাঝেই চাপা। আর অধরাকে ভালোবাসার কথা বললে ও অন্য কিছু ভেবে বসতে পারে। তাই চুপচাপ ছিলাম। ভেবে ছিলাম অনার্স শেষ করে তারপর বলব।

দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরোও একটি বছর।
অনার্স শেষ বছরে এসে বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর আমার লেখাপড়া বন্ধপ্রায় হয়ে পড়ে। অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করে পরিক্ষা দেই।
পরিক্ষা দিয়েই শহর ছেড়ে চলে আসি এই আজনা গন্তব্যে। তখন আমার মাথায় শুধু একটা চিন্তাই ছিলো কিভাবে আমার পরিবারটা রক্ষা করব।

এরপর অধরা অনেকবার আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। কিন্তু আমিই আর ওর সাথে কোন যোগাযোগ রাখিনি।

আজ ৪ টি বছর পর আবার দেখা।ওকে দেখেই বুকের ভিতর যেন কেমন একটা করে উঠেছিলো। হয়তয়ত সেই ভালোবাসাটা আবার আমার ভিতর জেগে উঠেছে।

সকাল বেলায় হঠাৎ মোবাইলের শব্দে ঘুম ভাঙল। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখি অচেনা নাম্ম্বার। তাই প্রথমবার আর ধরলাম না।
একটু পর আবার ফোনটা বাজতে শুরু করলো। এবার রিছিব করে কানে ধরলাম।
আমি:হ্যালো কে?
ওপাস: ওই তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো অফিস যাবেনা?
=আজকে অফিস ছুটি। কিন্তু কে আপনি?
=আমি অধরা
অধরা নাম শুনেই শুয়া থেকে উঠে বসলাম।
=তুমি এত সকালে কল দিয়েছো!
=হুম দেখছিলাম জেগে আছো কি এখনো ঘুমাচ্ছো।
=উঠে পড়ি সকালে কিন্তু আজকে অফিস নেই তাইই ঘুমাচ্ছিলাম।তুমি কি করছো?
=এইত বসে আছি। আজক কি একটু দেখা করতে পারবে। কালকেতো ঠিক মত কথাও বলতে পারলাম না।
=আচ্ছা তুমি রেডি হয়ে হও আমি আসছি।
=ওকে।

অধরার প্রতি আমার সেই ভালোবাসার টানটা আবার জেগে উঠেছে । কিন্তু ও কি তাহলে এখনো বিয়ে করেনি। যাইহোক গিয়েতো শুনতে পাব। তবে কেন যেন ওকে পাওয়ার নেশাটা খুব চেপে বসছে আমার উপর।

অধরা আর আমি এখন একটা পার্কে বসে আছি।
অধরা:তখন কিছু না বলেই হঠাৎ করে হারিয়ে গেলে কেনো?
আমি:আসলে বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে তাই সংসারের হাল আমাকেই ধরতে হয়। তখন কি করব কিছু বুঝতে পারছিলাম না।তাই কাউকে কিছু ন। জানিয়েই চলে আসি।
=ও তা বিয়ে করেছো না কি?
=না। তুমি?
=না
=কেনো?
=কারো অপেক্ষা করছি যদি সে তার না বলা কথাটা বলে। তুমি কেনো করোনি?
=ভালোবেসেছিলাম একজনকে তবে বলা হয়নি।ভেবেছিলাম অনার্স শেষ করেই তাকে মনের কথাটা বলব। কিন্তু হঠাৎ করেই সবকিছু কেমন এলেমেলো হয়ে গেলো তাই আর বলা হয়নি।
=তো এখন বলো।এখনতো আর কোনো সমস্যা নেই।
অধরা করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তার চাহনি একটি কথাই বলছে বলো ভালোবাসো!

=কিন্তু সে কি আমায় ভালোবাসবে?
=একবার বলেই দেখ
=তুমি কি আমার ঘুম ভাঙাবার সাথি হবে?সকাল বিকাল শাসন করবে?গভীর রাতে অন্ধকারে চাদের সাথে গল্প করবে? আমাকে তোমার মত করে একটু ভালোবাসবে?
=যদি তুমি সুযোগ দাও
=তবে তোমার মায়ায় আমাকে জড়িয়ে নাও।
বলতেই অধরা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আর বলল
=আর আমাকে দুরে সরিয়ে দিওনা। ৪ টি বছর তোমার আসায় ব্যাকুল হয়ে আছি। আমাকে ছেড়ে যেওনা।
=আমিওতো আজ তোমায় ফিরে পেয়েছি। আর কোথাও হারাতে দেবনা। বিয়ে করে সারাজীবনের জন্য আমার জীবনের পাসওয়ার্ড বানিয়ে রাগবো।

পাগলীটা বিয়ের কথা শুনেই লজ্জা পেয়েছে মুখ লাল করে আমার বুকে মুখ লুকালো।

এটা কোনো গল্প নয়,
যেন তোমাকেই ফিরে পাওয়া।
নয় কোনো মিথ্যে আশা
সেত আমার স্বপ্নে দেখা ভালোবাসা।

……………………………………………..(সমাপ্ত)………………………………………………….

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত